#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-০৪|
হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় ধারা আর সম্রাট। ধারা বাড়ি থেকে বের হবার সময় অতটা খেয়াল করেনি কিন্তু বাড়িতে ফেরার সময় চোখ জোড়া যায় বাড়ির দরজায়। এখনো সাজানো বাড়ির বাইরের দিকটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধারা সম্রাটের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এখানে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো ভাইয়া? চলো বাড়ির ভিতরে যাই।’
সম্রাট ধারার এমন নিজেকে সামলে নেওয়া দেখে মৃদু হেসে বলল,
‘ চল।’
ধারা সম্রাটের আগেই বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। বাড়িতে ফেরার পথে পাড়া-প্রতিবেশীর কয়েকজন আড়চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল। কেউ কেউ তো ওদের দেখে জোরে জোরে ওদেরকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছে। এসব ভাবতে ভাবতে সম্রাট বাড়ির ভিতরে ঢুকে।
ধারা বাড়িতে ঢুকে সোজা রান্না ঘরে চলে যায়। ধারা জানে এই সময় বাড়ির সবাই রান্না ঘরে খাবার টেবিলে থাকে। ধারা কে রান্না ঘরে আসতে দেখে সবাই ওর দিকে তাকায়। ধারা কাউকে কিছু না বলে ওর আব্বাজানের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। এতক্ষণে লুকিয়ে রাখা জিলিপির প্যাকেট বের করে টেবিলের উপরে রাখে। ধারা ওর ভাবিকে ডাক দিয়ে বলল,
‘ ভাবি একটা প্লেট দিয়ে যাও তো। ভাইয়া গরম গরম জিলিপি কিনে দিয়েছে।’
ধারা কথা শুনে ধারার দাদি আম্মা বলল,
‘ ও সতীন, তুই কি একা একা এগুলো খাইবি? আমারে একখান ও দিবি না?’
ধারা মুখ বাঁকা করে বলল,
‘ দেখো বুড়ি আমার এই জিলিপিতে একদম নজর দিবে না। কই ভাবী কোথায় গেলে তুমি, একটা প্লেট দিয়ে যাও এখানে!’
জোনাকি প্লেট নিয়ে আসতে আসতে বলল,
‘ আরে বাবা এইতো আমি। আর এই নে তোর প্লেট।’
ধারার দাদি আম্মা মন খারাপের অভিনয় করে বলল,
‘ লোকে এ ঠিকই কয়, সতীনের ঘর করার থেকে বিয়ে না করা ঢের ভালো। কি এমন চাইছি আমি? একটু জিলিপি তো, দিলে কি এমন ক্ষতি হতো সতীনের। এই দুঃখ আমি রাখুম কোথায়!’
ধারা চোখ গুলো ছোট ছোট করে ওর দাদি আম্মার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আর অভিনয় করতে হবে না। এই জিলিপি গুলো আমি আপনার জন্য এনেছি। বাবা গো বাবা কি অভিনয়! আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি তোমাকে যাত্রাদলের খলনায়িকা করে দিতাম। খুব নামডাক হতো তোমার। সেই সাথে আমাদেরও একটু নামডাক হতো। চিন্তা করে দেখো বুড়ি আমি বা ভাইয়ারা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই বলতো, ওই দেখো, ওই দেখো, বিখ্যাত কুখ্যাত যাত্রাদলের খলনায়িকা লায়লার নাতি-নাতনিরা যাচ্ছে।’
ধারার কথা শেষ হওয়ার আগেই সবাই হাসতে শুরু করে। ধারার দাদি আম্মা রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ধারার আব্বাজান কে বলল,
‘ এই রফিক তুই তোর এই বান্দর মেয়েটাকে কিছু বলবি না? আমাকে বলে কিনা আমাকে বিখ্যাত কুখ্যাত যাত্রাদলের খলনায়িকা করে দেবে।’
রফিক দুলাল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করে বলল,
‘ আম্মাজান আপনি এসব কি কথা বলছেন?’
ধারা ওর আব্বাজান কে চুপ করে দিয়ে বলল,
‘ আব্বাজান তুমি চুপ করে আমার কথা শোনো। একবার চিন্তা করে দেখো, তুমি আর চাচা জান একসাথে দোকানে যাচ্ছো, তোমাদের দেখে যদি পাড়া-প্রতিবেশীরা বলতো ওই দেখো বিখ্যাত কুখ্যাত যাত্রাদলের খলনায়িকা লায়লার দুই ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। তখন তোমাদের মধ্যে….
ধারা ওর কথা শেষ করার আগেই ধারার চাচাজান বিষম খায়। কোনমতে পানি খেয়ে কাশতে কাশতে বলল,
‘ ধারা মা এবার তুই থাম না হলে হাসতে হাসতে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’
ধারা উত্তরে কিছু না বলে মুখ ভেংচি দিয়ে ধারা ওর আম্মার কাছে চলে যায়। ধারা চলে গেলে সবাই আবার মৃদু হাসে। অভি ওর দাদি আম্মা কে খোঁচা দিয়ে বলল,
‘ চাচাজান তুমি যাই বলো না কেনো? দাদি আম্মা কিন্তু আমাদের নামডাক হওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে।’
দাদি আম্মা অভির দিকে রাগী চোখে তাকালে। অভি হেসে দিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে যায়।
সম্রাট খাওয়া-দাওয়া করে রান্নাঘর থেকে বেরোলে। অভি সম্রাটকে ডাক দিয়ে বলল,
‘ ভাইয়া!’
সম্রাট অভির দিকে তাকায়। অভি একদম তৈরি হয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে। সম্রাট মৃদুস্বরে বলল,
‘ কিছু বলবি?’
অভি সম্রাটের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ভাইয়া আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারবে?’
সম্রাট অভিকে কিছু জিজ্ঞেস না করে বলল,
‘ তুই দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি এখুনি।’
সম্রাট গিয়ে ওর রুমে থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে আসে। অভির হাতে টাকা দিয়ে সম্রাট বলল,
‘ আর লাগলে বলিস আমায়!’
অভি টাকাগুলো পকেটে রেখে সম্রাট কে বলল,
‘ ভাইয়া আমি একটু শহরে যাচ্ছি ফিরতে সন্ধ্যা হবে। তুমি চিন্তা করো না আমি আম্মা কে বলেছি।’
সম্রাট চোখগুলা ছোট ছোট করে বলল,
‘ কাজটা কি খুব জরুরী? না হলে বলতাম আজকের দিন টা ধারাকে সময় দে।’
অভি মৃদু স্বরে বলল,
‘ হ্যাঁ ভাইয়া কাজটা খুব জরুরী। না হলে আজ আমি যেতাম না। তুমি চিন্তা করো না আমি তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করব।’
এইটুকু বলে অভি না দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে ধারা এসে ওদের পুকুরপাড়ে সিঁড়িতে বসে। দুপুরবেলা এই জায়গাটা বেশ ঠান্ডা থাকে। পুকুরের ওপারে ঘাটে রহিমা চাচির মেজো মেয়ে গোসল করছে। আজ সারা দিনটা ভালোই কেটেছে ধারার। ভাবি ওকে এক মিনিটের জন্যও একা ছাড়েনি। সারাক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে ছিল। ভাবি হয়তো মনে করছে কালকের ঘটনাটার জন্য ওর মন খারাপ। ধারা আরো কয়েকটা সিঁড়ি নেমে পুকুরের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে। আনমনে পুকুরের পাশে তাকিয়ে আছে ধারা। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আশেপাশে দেখছে ধারা। হঠাৎ করে এক জোড়া পা দেখতে পায় ধারা ওর পায়ের পাশে। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে জোনাকি ভাবি ওর পাশে বসে আছে। ধারা মিষ্টি হেসে বলল,
‘ তুমি? তুমি কখন এলে ভাবি? আমিতো টেরই পাইনি।’
জোনাকি ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ টের পাবি কীভাবে? তুইতো গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন ভাবছিলি!’
ধারা চোখ সরিয়ে নিল জোনাকির চোখের উপর থেকে। জোনাকি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ আর কতক্ষণ বসে থাকবি এখানে চল বাড়ি যাবি এখন।’
ধারা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ চলো তাহলে।’
জোনাকি উঠে দাঁড়ালে, ধারা আর জোনাকি পা বাড়ায় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
চলবে….