অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-২১

0
990

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-২১|

দুপুরে গরমের মধ্যে ধারার আম্মা মানে শাপলা রান্নাঘরে গরম চুলার পাশে বসে, চুলার উপরে বসিয়ে রাখা তরকারি খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করছে। তার ছোট জা রিতু পুকুরপাড়ে গিয়েছে বাকি সব কেটে রাখা তরকারি ধুয়ে আনতে। বাড়ির সমস্ত কাজ দুই জা এবং সম্রাটের বউ মিলে করে। তার শাশুড়ি আম্মার বয়স হয়েছে। তাকে আর তারা রান্না ঘরে আসতে দেন না। জোনাকি বাড়ির সকলের কাপড়-চোপড় নিয়ে বসেছে বাড়ির কল তলায়। জোনাকি এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে ধারা কে কোন কাজ করতে দেয় না জোনাকি। ধারা রান্নাবান্না বা ঘরের সমস্ত কাজে পারদর্শী। ধারা খুব ছোট বয়সে শখের বশে রান্নাটা শিখে নিয়েছে। মাঝেমধ্যে বাড়ির সবাইকে রান্না করে খাওয়ায় ধারা। রিতু পুকুরপাড়ে থেকে কেটে রাখা সব তরকারির ধুয়ে এনে রেখে শাপলার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,

‘ আপা আজকে ভাইজানের শরীর খারাপ?’

শাপলা রান্না করার মাঝে রিতুর কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে রিতুর দিকে তাকায়। কপালে চিন্তার ভাঁজ তুলে বলল,

‘ কই না তো, তার শরীর-স্বাস্থ্য তো ঠিকই আছে। হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে যে কিছু হয়েছে?’

রিতু শাপলার দিকে তাকিয়ে সব কথা শুনে বলল,

‘ না মানে ভাইজানকে তো কখনও অসময় বাড়িতে দেখিনি তাই। বিয়ের এত বছর হতে চললো আমাদের কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া ভাইজানকে তো কখনো বাড়িতে দেখি নি এই দুপুরবেলা। তাই চিন্তা হচ্ছে ভাইজানের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা।’

রিতুর কথা শুনে শাপলার চিন্তা আরো মনের মধ্যে জেকে বসে। শাপলা চিন্তিত সুরে বলল,

‘ বলিস কি তোর ভাইজান এখন বাড়িতে? কখন ফিরেছে তিনি বাড়িতে? জানিস কিছু?’

রিতু মৃদু স্বরে বলল,

‘ আমি তরকারি ধুতে পুকুরপাড়ে যাওয়ার সময় দেখলাম ভাইজান বাড়ির দিকে আসছে। মুখচোখের অবস্থা কেমন থমথমে লাগছিল। আমার তো তার মুখ চোখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, হয় তিনি অসুস্থ, না হয় কোন বিষয় নিয়ে তিনি চিন্তিত আছেন।’

কথাটুকু শুনে শাপলা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। রিতুর দিকে তাকিয়ে আহত গলায় বলল,

‘ তুই একটু এদিক টা সামলে নে। আমি তোর ভাইজানের কাছে যাচ্ছি। না জানি মানুষটার কি হয়েছে? দুঃখ-কষ্ট তো কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে না।’

রিতু আশ্বাস দিয়ে বলল,

‘ আপা তুমি চিন্তা করো না, আমি এদিকটা সামলে নিতে পারবো। তুমি এখন ভাইজান এর কাছে যাও। গিয়ে দেখো তার কি হয়েছে!’

শাপলা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। আর না দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায় শাপলা।

মানুষ টা খাটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। বৈদ্যুতিক পাখা না চালিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে তিনি। শাপলা ভালো করে একবার মানুষ টার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত পায় গিয়ে বিদ্যুতিক পাখার সুইচ অন করে। খট করে শব্দ হয়ে মাথার উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরতে শুরু করে। হাত পাখার বাতাস থামিয়ে চোখ খুলে মাথার উপরে তাকায়। ফ্যান টা নিজ গতিতে ঘুরছে। কিন্তু সে তো ফ্যান ছাড়েনি। তাহলে? নাকি অতিরিক্ত চিন্তার কারণে সে যে ফ্যান ছেড়ে ছিল সেটাও ভুলে গেছে। কিন্তু এই শীতের মধ্যে তো তার ফ্যান ছাড়ার কথা নয়। সে যাই হোক এখন আর এসব কথা চিন্তা না করে ফ্যানের বাতাসে শরীর শীতল করছে তিনি। সিলিং ফ্যান থেকে চোখ সরাতে দেখতে পায় শাপলা কে। খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে তার দুশ্চিন্তার ছাপ। সোজা হয়ে বসেন তিনি। গলা পরিষ্কার করে শাপলা দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কিছু বলবে তুমি?’

শাপলা এগিয়ে এসে তার পাশে বসে। তার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে মৃদু স্বরে বলল,

‘ কি হয়েছে আপনার? আপনার চোখে মুখে অবস্থা এমন কি করে হলো? আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন? নাকি কোন বিষয় নিয়ে আপনি চিন্তিত?’

রফিক দুলাল চিন্তার মাঝে মৃদু হেসে বলল,

‘ বাহ! বাহ! একসাথে এতগুলো প্রশ্ন? কোনটা রেখে কোনটা উত্তর আগে দেই।’

শাপলা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ আপনি আমার সাথে এখন মজা করছেন? এদিকে আপনার চিন্তায় এই শীতের মধ্যে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। বলুন না কী হয়েছে আপনার?’

শেষের কথাগুলো মোলায়েম গলায় বলল শাপলা। রফিক দুলাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ বলবো তো, তোমাকে বলবো না তো আর কাকে বলবো।’

এইটুকু বলে থামে রফিক দুলাল। শাপলা তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সব টা শোনার জন্য। তিনি আবার বলল,

‘ আজ সকালে দোকানে যাওয়ার পরে আমার ধারা আম্মাজানের জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে সে। ছেলের বাবা বেঁচে নেই। বিরাট অবস্থা তাদের। ছেলের বড় দুই ভাই আছে। তারা বিয়ে থা করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত।’

শাপলা অবাক গলায় বলল,

‘ এই গ্রামে আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া ছেলে পেলে কোথায়? এই গ্রামের সবথেকে শিক্ষিত বাড়ি হল চেয়ারম্যান বাড়ি। চেয়ারম্যানের এক ছেলে ডাক্তার। কিন্তু সে তো শহরে থাকে। আপনার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেলে পেলেন কোথায়?’

রফিক দুলাল ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ ছেলে আমাদের গ্রামের নয়। দেশে ঢাকা শহরের বাসিন্দা। ছোট থেকে লেখাপড়া করেছে বিদেশে। শুনেছি ছেলের বাপ দাদার অনেক নামডাক আছে। ঐ যে আফজাল আছে না? তার মামাতো বোনের ছোট ছেলে হলো পাত্র। সেই ছেলে নাকি জন্মের পর কখনো গ্রাম দেখেনি তাই তাকে সাথে নিয়ে গ্রাম দেখাতে এসেছে আফজালের মামাতো বোন মানে ছেলের মা। তখনই নাকি ছেলের মা রাস্তায় আম্মাজান কে দেখে পছন্দ করে ফেলে তার ছেলের বউ হিসেবে। আজ ছেলের মা আফজালকে পাঠিয়েছি আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য।’

শাপলা বিস্ময় গলায় বলল,

‘ আপনি শাহেদা চাচির বড় ছেলে আফজাল ভাই এর কথা বলছেন? দুইদিন আগে শাহেদা চাচি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, সঙ্গে ছিলো একজন ভদ্রমহিলা। পরে জানতে পারি সে না কি শাহেদা চাচির ভাতিজি। ধারা তাদের রাস্তায় সাহায্য করেছিল বলে ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল সে। আপনি কি তার ছোট ছেলের কথা বলছেন?’

রফিক দুলাল ছোট করে বলল,

‘ আমি তো তাকে দেখেনি তাই নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছিনা। তবে আমার মনে হচ্ছে উনি ছেলের মা। আর তোমার বর্ণনা অনুযায়ী তো একদম মিলে যাচ্ছে সবকিছু।’

শাপলা রফিক দুলালের দিকে তাকিয়ে। সে গভীর চিন্তায় মগ্ন। শাপলার এতদিন রাতে ঘুম হত না। তার আদরের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে লোকের অনেক নিন্দা মন্দ কথা শুনেছেন তিনি। কোনো ভালো মনের ছেলের হাতে তার মেয়েকে তুলে দিতে পারবেন কিনা তাই ভেবে তার রাতের ঘুম চলে গেছিলো। কিন্তু আজ হঠাৎ করে এতো ভালো সম্বন্ধে পেয়ে কী করবেন তিনি বুঝতে পারছেন না। শাপলা তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ আপনি আফজাল ভাই কে এই বিষয়ে হ্যাঁ বা না কিছু বলেছেন?’

রফিক দুলাল মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ না বলেছি ভেবে তাকে জানাবো। শফিক আর সম্রাট জানে এই বিষয়ে। অভি আর হাবিব কে ফোন করা হয়েছে তারা আজ সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবে। পরে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের।’

চলবে….

পরের পর্ব লেখা শুরু করেছি। যত দ্রুত সম্ভব লেখা শেষ করে গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here