#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-২২|
একা একা নদীর পাড়ে মন খারাপ করে বসে আছে ধারা। আজ ওর মনটা ভালো নেই। মন খারাপ। ভীষণরকম মন খারাপ। কিছুই ভালো লাগছে না ওর। সবকিছু কেমন হয়ে গেছে বিষাদের মত লাগছে। দুপুর থেকে দেখছে বাড়ির লোকজন মুখ ভার করে চলাফেরা করছে। ধারা কিছু জিজ্ঞেস করলে সবাই এড়িয়ে চলে যাচ্ছে ওকে। এদিকে জান্নাত কে সেই কখন আসতে বলেছি কিন্তু এখনো তার কোন হদিস নেই। এখানে আর কতক্ষণ বসে থাকবে একা একা। অন্যদিকে আবার একা একা বসে থাকতে ভালো ই লাগছে। শীতের শেষ বিকেলে মৃদু বাতাস। ভিশন রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ। ওর অন্য পাশে স্কুলে পড়ুয়া কয়েকটা ছেলে বসে আছে। তাকিয়ে দেখে, বন্ধুদের সাথে বেশ মজা করছে ছেলেগুলো। ধারা বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ধারা। বাড়ি ফেরার রাস্তার দিকে তাকায়। না এখনো জান্নাতের কোন হদিস নেই। বিরক্ত লাগছে সবকিছু। আর কতক্ষণ বসে ও। ভেবেছিলো জান্নাতের সঙ্গে মন খুলে কথা বলে মনটাকে হালকা করে। কিন্তু তা বোধহয় হবে না। প্রায় ঘন্টা খানিক সময় হল বসে আছে ও। আর দাঁড়িয়ে না থেকে ধারা বাড়ির পথ ধরে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। সূর্য অস্ত যাবে যাবে অবস্থা। বাড়ির অনেকটা কাছাকাছি চলে গেলে দেখা পায় জান্নাতের। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করছে। তা দেখে ধারার মেজাজ চারশো ডিগ্রী খারাপ হয়ে যায়। ওর জন্য এতক্ষণ নদীর পাড়ে বসে অপেক্ষা করছিল আর ও কিনা এখানে নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে আছে। ধারা ওকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পরে জান্নাত ধারা কে দেখতে। পিছন থেকে ডাকতে শুরু করে জান্নাত। ধারা নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জান্নাত পিছন থেকে দৌড়ে ধারার সামনে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
‘ কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাসনি।’
ধারা উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। জান্নাত অবাক হয়। আবার ধারার সামনে গিয়ে বলল,
‘ কী হয়েছে? কথা বলছিস না কেন?’
ধারা মুখ খুলে। ভেবেছিলো ওর সঙ্গে কথা বলবে না। ধারা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
‘ কে আপনি? আর মাঝরাস্তায় বিরক্ত করছেন কেন আমাকে?’
জান্নাত অবাক গলায় বলল,
‘ ও বাবা এখন আমাকে চিনতে পারছেন না। তা আমার উপর রাগ করে আছিস কেন? তা কি জানতে পারি?’
ধারা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ আমি কেন রাগ করতে যাবো? আমি কে রাগ করার? প্রায় ঘন্টাখানেক বসেছিলাম নদীর পাড়ে কারো জন্য, কিন্তু তার তো সময় ই হয়নি আমার সঙ্গে দেখা করার।’
জান্নাতের নদীর পাড়ে যাওয়ার কথাটা টা মনে পড়তেই দাঁত দিয়ে জিব কাটে। মাথায় হালকা থাপ্পড় দিয়ে করুন গলায় জান্নাত বলল,
‘ জানু প্লিজ রাগ করিস না! আসলে হয়েছে কি…
জান্নাতের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ধারা বলল,
‘ বললাম তো আমি রাগ করিনি। এবার আপনি আমার পথ ছাড়ুন। বাড়ি যেতে হবে আমাকে।’
জান্নাত নিজের কান ধরে করুন গলায় বলল,
‘ মাফ করে দে না। আসলে আসার সময় একটা বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটেছিলো তাই নদীর পাড়ে যাওয়ার কথা একদম ভুলে গেছিলাম।’
ধারা জান্নাতের দিকে তাকায়। ওর এমন বাচ্চাদের মত কান ধরা দেখে জান্নাত নিজের হাসি লুকিয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে, এবারের মত মাফ করে দিলাম। পরে এমন করলে তোর সাথে আর জীবনেও কথা বলবো না।’
জান্নাত ধারা কে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ না, না জানু আমি আর কখনো এমন করব না। চল এখন কোন জায়গায় বসে কিছুক্ষণ গল্প করি।’
ধারা জান্নাত কে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘ এখন আর বসে গল্প করার সময় নেই। সূর্য ডুবে গেছে প্রায়, এখন আমাদের দুজনকে ই বাড়িতে ফিরতে হবে।’
জান্নাত ছোট করে বলল,
‘ কিন্তু তুই আমাকে কি জন্য ডেকেছিলি তা তো জানাই হয়নি।’
ধারা কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্য বলল,
‘ তেমন কিছু না এমনি।’
ওদের কথা বলার মাঝে গ্রামের এক বয়স্ক চাচা ওদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ধারা কে দেখে সে দাঁড়ায়। ধারার দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল,
‘ ধারা তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। ওদিকে তোর ছোট ভাই এতক্ষণে বোধহয় বাড়িতে পৌঁছে গেছে।’
ধারা অবাক হয়েছে যায় চাচার কথা শুনে, অবাক গলায় বলল,
‘ কি বলেছে চাচা ছোট ভাইয়ার তো আরো দুই সপ্তাহ পরে বাড়ি আসার কথা।’
চাচা ব্যস্ত গলায় বলল,
‘ সেসব কথা আমি তো আর কিছু জানি না। আমি বাজারে গিয়েছিলাম বাজার থেকে ফেরার সময় দেখলাম, তোর ছোট ভাই তোদের দোকানে ঢুকছে তাই বললাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে এখন। তোরাও আর এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকিস না, বাড়ির পথ ধর। আমি যাই আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চাচা কথাগুলো বলে আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে। ধারা চিন্তার মাঝেও জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির সুরে বলল,
‘ ভাবি চলেন দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের। ওদিকে আমার ছোট ভাইয়া না জানি কতক্ষন বাড়িতে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ভাবি একটু তাড়াতাড়ি চলুন।’
জান্নাত ধারার কথা শুনে লজ্জা পায়, কিন্তু তা ধারার সামনে প্রকাশ না করে ওর দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
‘ তবে রে দাঁড়া তুই। আজ তোর হচ্ছে।’
ধারা সে কী আর দাঁড়ায়, সে দৌড়ে কিছুদূর এগিয়ে যায়। আবার দাঁড়িয়ে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,
‘ ভাবি এইভাবে রেগে ননদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক না, আমি কিন্তু ভাইয়ার কাছে তোমার নামে নালিশ দিবো।’
এইটুকু বলে ধারা আর দাঁড়ায় না। দৌড়াতে শুরু করে। জান্নাত ও ধারার পিছন পিছন ধারা কে গালি দিতে দিতে দৌড়াতে থাকে। জান্নাত একবার ধারা কে আজ হাতের নাগালে পেলে ওর খবর আছে।
জান্নাত ধারা কে ধরতে পারে না। সে দৌড়ে বাড়ির সামনে চলে আসে। ধারা ঝুঁকে নিজের হাঁটুতে দুই হাত দিয়ে হাঁফাতে শুরু করে। দুই তিন মিনিট পরে ধারার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলে সে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আনমনে রাস্তার দিকে তাকায়। অভি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে এদিকে আসছে। ধারার মধ্যে দুষ্টুমি সত্তা উদয় হয়। লুকিয়ে পড়ে গাছের পিছনে। অভি যেই গাছটার পাশ কাটিয়ে চলে যাবে ঠিক তখনই ধারা অভির সামনে লাফিয়ে পড়ে ভয় দেখায়। এমনিতেই সন্ধাবেলায় তার ওপরে ধারার এমন উদ্ভট কান্ড। অভি ভয় পেয়ে যায়। ধারা লাফিয়ে ওর সামনে পড়ার সময় কয়েক কদম পিছিয়ে যায় অভি। ধারা কে দেখে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে অভি কপট রাগ করে বলল,
‘ ওই পেত্নী ওই তোর কি খেয়েদেয়ে আর কোন কাজ নেই? সারাক্ষণ শুধু আমার পিছনে লাগা তাই না। বাড়িতে আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে তোর বাদরামি।’
ধারা অভির দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
‘ ওই বান্দর ওই। আমি পেত্নী না বুঝলি। পেত্নী তোর বউ।’
অভি মুখ বাঁকা করে বলল,
‘ শোন পেত্নীদের মতো দেখতে হবে না আমার বউ। দেখে নিস খুব মিষ্টি দেখতে মেয়ে আমার বউ হবে। তখন তুই দেখবি আর লুচির মত ফুলবি।’
ধারা রেগে গিয়ে অভির চুলগুলো দুই হাত দিয়ে ধরে মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,
‘ তোর এত বড় সাহস তুই বলিস কিনা আমি লুচির মতো ফুলবো তোর বউকে দেখে। তুই বাড়িতে চল আমার সঙ্গে, আজ আব্বাজান কে বলে তোকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি।’
অভি করুন গলায় বলল,
‘ বোন আমার তুই আমার চুলগুলো ছাড়, মাথায় ভীষণ ব্যথা পাচ্ছি আমি।’
ধারা অভির চুলগুলো ছেড়ে দেয়। অভির দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বাড়ির দিকে চলে যায়। অভি ধারার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে হাসে।
চলবে….
পর্ব টা লিখতে-লিখতে কাল প্রায় অনেক রাত হয়ে যায়। তাই আর গল্পটা পোস্ট করেনি। আর আজকের পর্ব সন্ধ্যার পরে পাবেন।