#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-২৪|
হাসি আনন্দের মধ্যে দিয়ে কিভাবে যে দুই দিন পার হয়ে গেছে টের পাইনি ধারা। হাবিব আর অভির সাথে এখানে ওখানে ঘুরে বেরিয়েছে। ধারা ওদের কাছে যা যা আবদার করেছে সব পূরণ করেছে ওরা। আর করবে নাইবা কেন? একমাত্র বোন ওদের। ওরা তো পারলে ওদের বোন কে মাথায় করে রাখে। ধারা তো যখন পেরেছে দুই ভাইকে কিছু না কিছু বলে খেপিয়ে গেছে। আর অভি কে তো সুযোগ পেলেই বান্ধবীর বর বলে খেপানো শুরু করে। অভি মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ করার অভিনয় করলেও মনে মনে ধারার খ্যাপানো টাকে বেশ উপভোগ করে। জান্নাত গ্রামে নেই। অভি গ্রামে আসার পরের দিনই সে তার দাদার বাড়িতে চলে গেছে। অবশ্য যাওয়ার আগে অভি কে আড়াল থেকে দেখে গেছে বেশ কয়েকবার।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে হাবিব আর অভি ধারার আব্বাজানের ঘরে যায়। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে তিনি ঘন্টা দুয়েক বাড়িতে বিশ্রাম করে তারপরে দোকানে যান। অভি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল,
‘ ভিতরে আসব আব্বাজান।’
ধারার আব্বাজান শোয়া থেকে উঠে বসে। মনে হয় তিনি অভির গলা শুনেছেন। তিনি বিছানায় চোখ বন্ধ করে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আন্তাজে তিনি বলল,
‘ অভি তুই কি বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস?’
অভি উত্তরে বলল,
‘ হ্যাঁ, আব্বাজান।’
ধারার আব্বাজান মৃদু স্বরে বলল,
‘ ওহ, কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয় ভিতরে আয়।’
অভি আর হাবিব ঘরে ঢুকে। অভি গিয়ে ওর আব্বাজানের পাশে বসে। হাবিব একটা চেয়ার টেনে ওদের মুখোমুখি বসে। হাবিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ চাচা জান তুমি আমাদের যে কাজ দিয়েছিলে মানে ওই যে ছেলের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেছিলে তা আমরা নিয়ে ফেলেছি।’
ধারার আব্বাজান হাবিব আর অভির দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ এত তাড়াতাড়ি?’
অভি বলল,
‘ হাবিব ভাইয়ার এক কলিগ পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে ইতালির শহর আছে। তার কাছ থেকেই ভাইয়া সব খবর পেয়েছে।’
ধারার আব্বাজান ছোট করে বলল,
‘ ওহ, বল তাহলে এবার সবকিছু।’
হাবিব মৃদু স্বরে বলল,
‘ পুরো নাম জুনায়েদ ইভান। ইউনিভার্সিটি অফ ট্রেন্টো (University of Trento) ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। এই ইউনিভার্সিটি তে যারা তারা লেখাপড়া করে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ছেলের কোন খারাপ অভ্যাস নেই। ছেলের বাবার কেনা বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে। পাড়া-প্রতিবেশী, ইউনিভার্সিটির বন্ধুবান্ধব সবাই ইভানের নামে খুব সুনাম করেছে। ইভানের মতো নাকি এই যুগের ছেলে হয় না। তুমি এখন অভির থেকে বাকি কথা শুনে চিন্তা করে দেখো তুমি কি করবে?’
ধারার আব্বাজান অভির দিকে তাকায়। অভি ধীর গলায় বলল,
‘ আব্বাজান আমি ছেলের কোন খারাপ দিক দেখছি না। সবদিক থেকেই পারফেক্ট সে। ছেলেরা তো তিন ভাই। তারা তিন ভাই তার মায়ের অনুমতি ছাড়া নিঃশ্বাস ও নেয় না। এক কথায় বলতে গেলে তারা তিন ভাই তার মা কে পাগলের মত ভালোবাসে। আর্থিক অবস্থায় আমাদের থেকে কয়েক গুণ উপরে আছে তারা। আমার সবথেকে ভালো লেগেছে ছেলের মাকে। এত বড় সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হয়েও তার ভিতরে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। তুমি শুনে অবাক হবেন তিনি এতবছর একটা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। বছর কয়েক হয়েছে তিনি রিটায়ার্ড করেছেন। আমি প্রথমে এই বিয়ের সম্বন্ধ তে না করলেও, এখন আমি বলছি তুমি চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারো। এখন বাকিটা তুমি আর চাচাজান মিলে সিদ্ধান্ত নাও। তুমি আমাকে আর ভাইয়া কে বলে ছিলে ছেলে এর বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। এবার তোমরা ভেবে দেখো তোমরা কি করবে?’
ধারার আব্বাজান কিছুক্ষন ভেবে হাবিব আর অভির দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল,
‘ তোরা এখন যা, আমি আবার পরে তোদের ডাকবো।’
অভি আর হাবিব আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ধারার আব্বাজান এখন মহা চিন্তায় পড়েছে। ছেলে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট। তার মেয়ের জন্য তো এমন ছেলে আর পাবেন কী না তা তিনি জানেন না।
ইভান আজ বাড়িতে নেই। কায়েসের ছোট ভাইয়ের জন্য ইভান শহরের দিকে গেছে আজ। ইভান ওর আম্মুর সাথে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারিনি। ঐ ঘন্টার কিছুক্ষণ পরেই এসে সরি বলে ওর আম্মু কে। মিতা বেগম ও হাসি মুখে ছেলে কে বুকে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যার বেশ খানিকটা সময় পরে ইভান আর কায়েসের ছোট ভাই শহর থেকে ফিরে আসে। ইভান শহরে গেছিলো কায়েসের ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু বই কিনতে। কল তলায় গোসল করে, খাবার টেবিলে গিয়ে কায়েসের ছোট ভাইয়ের সাথে নিয়ে খেতে বসে ইভান। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইভান ওর আম্মুর ঘরের দিকে যায়। আজ সারাদিনে দেখা হয়নি ওর আম্মুর সাথে। শাহেদা বানু আর মিতা বেগম কিছু একটা নিয়ে হাসিহাসি করছে। ইভান ওর আম্মুর হাসিমুখ দেখে ইভানের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। ইভান মৃদু হেসে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আম্মু।’
মিতা বেগম কিছু বলার আগেই শাহেদা বানু বলল,
‘ ইভান ভাই যে। আসো, আসো এতক্ষণ তোমাকেই নিয়ে কথা হচ্ছিল।’
ইভান গুটি গুটি পায়ে এসে তাদের পাশে বসে। ইভান কিছু বলার আগেই শাহেদা বানু আবার বলল,
‘ খাওন দাওন হইছে তোমার ভাই।’
ইভান মৃদু হেসে বলল,
‘ হ্যাঁ, একটু আগে আমি আর মিরাজ একসাথে খেয়েছি। তা আমাকে নিয়ে কী কথা হচ্ছিল তোমাদের মাঝে।’
শাহেদা বানু কিছু বলার আগে মিতা বেগম তাড়াতাড়ি করে বলল,
‘ তেমন কিছু না, কাল তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি তাই নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা।’
ইভান নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ কোন মেয়ে? নাম কী তার? বাড়ি কোথায়?’
মিতা বেগম চোখ বড় বড় করে তাকালে, তা দেখে ইভান নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
‘ না মানে আমি শুধু মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইলাম আর কী।’
মিতা বেগম মৃদু স্বরে, দুষ্টুমি সুরে বলল,
‘ সে না হয় কাল বিকেলেই দেখে নিস মেয়ে কে। আর মেয়ের কাছ থেকে জেনে নিস মেয়ের সম্পর্কে সব কিছু।’
ইভান আর কিছু না বলে চুপচাপ বসা থেকে উঠে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়। মিতা বেগম ইভানের যাওয়ার দিকে তাকায়, কিন্তু কিছু বলে না ইভান কে। শাহেদা বানু ঠাট্টার ছলে বলল,
‘ তোর ছেলে মনে হয় লজ্জা পেয়েছে বিয়ের কথা শুনে। তবে যাই বলিস না কেনো? আমাদের ধারার সাথে কিন্তু ইভান কে বেশ মানাবে।’
মিতা বেগম হাসে শাহেদা বানুর কথা শুনে। মিতা বেগম শুরু অপেক্ষায় আছে কাল ইভান কে চমকে দেওয়ার।
চলবে…