অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-২৬

0
989

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-২৬|

অভি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলে বাড়ির সবাই চলে আসবে। অভি তাদের আপ্যায়নের জন্য বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির ভিতরে শেষের প্রস্তুতি খুব জোর কদমে চলছে। ধারা কে যে আজ ছেলে বাড়ির লোকজন দেখতে আসছে তা এখনো সে জানে না। জোনাকি ধারার জন্য একটা ভালো দেখে থ্রি-পিস বের করে রেখেছিল কিন্তু ধারা তাকে শতাধিক প্রশ্ন করে পেরেশানি করে রেখেছিলে। জোনাকি ধারার প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচার জন্য থ্রি পিস টা বিছানার উপর রেখে কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে আসে। ধারার ছোট্ট মনে বাড়ির সকলের হাবভাব দেখার পরে একটার পর একটা কৌতুহল বাসা বাঁধতে শুরু করে। অভি খোলা মাঠের ওপাশের রাস্তার দিকে তাকায়। ঐতো কিছু লোকজন এদিকেই আসছে। পোশাক আশাক দেখে মনে হচ্ছে শহরের লোকজন। তাহলে তারাই হবে। আরে ঐ টা শাহেদা দাদি না? পিছনে ছোট ছেলে গুলোর মধ্যে মনে হয় কায়েস কেও দেখলাম। তাহলে এরাই হবে ছেলে বাড়ির লোকজন। অভি বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় তাদের দিকে। তাদের কাছাকাছি গেলে শাহেদা বানু অভি কে দেখে বলল,

‘ আরে অভি যে? তা তুই করবে এলি শহর থেকে?’

অভি মৃদু স্বরে বলল,

‘ এইতো দাদি অল্প কিছুদিন হলো।’

এইটুকু বলে অভি ঘাড় ঘুরিয়ে মিতা বেগমের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

‘ আসসালামু আলাইকুম, আন্টি। কেমন আছেন আপনি?’

মিতা বেগম ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বলল,

‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ বাবা, ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?’

অভি ধীর গলায় বলল,

‘ আলহামদুলিল্লাহ আমি এবং আমার পরিবারের সবাই ভালো আছি। চলুন আন্টি বাড়িতে গিয়ে না হয় বাকি কথা বলবো ওদিকে আব্বাজান আপনাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।’

মিতা বেগম উত্তরের ছোট করে বলল,

‘ চলো তাহলে।’

অভি আর কিছু না বলে তাদের নিয়ে বাড়ির দিকে যায়।

বাড়ির সামনের উঠানে সবাই বসে বসে গল্প করছে। মিতা বেগম একে একে তার ছেলেদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সবার সাথে। আর এদিকে ইভানের খুশি দেখে কে? যখন থেকে দেখেছে ওরা ধারার বাড়িতে এসেছে তখন থেকে ওর খুশি দেখে কে? ওর হাস্যজ্জল চেহারা দেখে মিতা বেগম তা বেশ বুঝতে পারছে। মিতা বেগম ধারার আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ভাইজান তাহলে এবার মেয়ে নিয়ে আসুন, অনেকক্ষণ হলো আমরা এসেছি।’

এরমধ্যে ধারার চাচি জান নাস্তার ট্রে নিয়ে এসে ওদের সামনে রেখে বলল,

‘ মেয়ে কে আনা যাবে, তার আগে হালকা কিছু খাবার মুখে দিন।’

মিতা বেগমের সাথে ধারার চাচি জানের পরিচয় করিয়ে দেয় ধারার আব্বাজান। ধারার চাচি জান মিতা বেগমের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল,

‘ আপনারা নাস্তা শুরু করুন আমরা মেয়ের নিয়ে আসছি।’

মিতা বেগম খাবারের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আজকে এত সব আয়োজনের প্রয়োজন ছিল না। এমন এলাহি কান্ড না করলেও পারতেন আপনারা!’

ধারার চাচা জান মিতা বেগমর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কোথায় এলাহি আয়োজন। এতো সামান্য কিছু খাবার। নিন এবার আপনারা খাওয়া শুরু করুন। আর তুমি গিয়ে ধারা মাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো।’

শেষের কথাগুলো ধারার চাচা জান তার স্ত্রী রিতুকে বলল, রিতু তার স্বামীর কথা শুনে হালকা ঘাড় নেড়ে বাড়ির ভিতরের দিকে চলে যায়।

জোনাকি তার শাশুড়ির কথা মত আবার ধারার ঘরে যায়। ধারা তার পড়ার টেবিলের চেয়ারে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন। জোনাকি যে তার ঘরে ঢুকেছে সে তা টের পাইনি। জোনাকি গিয়ে ধারার ঘাড়ে হাত রেখে বলল,

‘ কী রে, কী এত চিন্তা করিস?’

ধারার ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে ধারা লাফিয়ে ওঠে। চমকে উঠে চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় জোনাকির দিকে। জোনাকি কে দেখে স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলে ধারা বলল,

‘ ওহ, ভাবি তুমি? কিন্তু এভাবে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে কেনো? আরেকটু হলেই তো আমারে জান-পাখি ফুরুত করে উড়ে যেত।’

জোনাকি হেসে বলল,

‘ আমি থাকতে তোর জান পাখি কোথাও উড়ে যেতে পারবে না। এবার ঝটপট রেডি হয়ে নে।’

ধারা উঠে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘ ভাবি কী হয়েছে তুমি আমাকে খুলে বলতো? সেই দুপুরের পর থেকে তুমি আমাকে রেডি হতে বলছ কেন?’

জোনাকি আমতা আমতা করছে। ওকে তো ছেলে বাড়ির কথা বলতে নিষেধ করেছে তাহলে কি বলবে জোনাকি? জোনাকি কিছু বলার আগেই ধারার দাদি আম্মা ঘরে ঢুকে বলল,

‘ কী লুকাবে নাত বৌ তোর থেকে? আমি বলছি তোকে ছেলে বাড়ি থেকে আজ তোকে দেখতে এসেছে। তাই নাত বৌ তোকে তৈরি হতে বলছে। নে এবার কথা না বলে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।’

ধারা বিষ্ময় চোখ ওর দাদি আম্মার দিকে তাকায়। কিছুদিন আগের ওতো বড় কান্ডের পরে আবার সেই একই ঘটনা…. ধারা হাত পা কাঁপছে। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে খাটের কোনায় ধরে ধপ করে বসে পড়ে বিছানায়। জোনাকি এগিয়ে এসে ধারা কে ধরে। জোনাকি বুঝতে পারছে ধারার মনের অবস্থা। একটা মেয়েকে কখনো পরাপর এতগুলো ধাক্কা সামলাতে পারে না। কিছুদিন আগে বিয়ে নিয়ে ওমন একটা কান্ড, আর এখন আবার… জোনাকি ধারার কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘ ধারা শোন আমার কথাটা!’

ধারা কিছু বলার আগেই বাইরের ঘর থেকে ধারার আম্মা ধারা দাদি আম্মা কে ডাক দেয়। ধারার দাদি আম্মা ধারা আর জোনাকির দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,

‘ নাত বৌ তুমি ওকে জলদি করে তৈরি করে দাও। ওদিকে ছেলে বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে।’

এইটুকু বলে আর দাঁড়ায় না ধারার দাদি আম্মা, চলে যায় ধারার ঘর থেকে। জোনাকি ধারার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ ধারা তুই আমার কথা তো শোন।’

ধারা মলিন হেসে বলল,

‘ ভাবি মেয়ে হয়ে জন্মানো টাই কি দোষের?’

জোনাকি ধারার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,

‘ কী সব বলছিস তুই?’

ধারা কৃত্রিম হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘ না ভাবি কিছু না। তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে? আব্বাজান এ বিষয়ে জানো কিছু?’

জোনাকি থমথমে গলায় বলল,

‘ বোকার মত কথা বলিস কেন? এ বাড়িতে আব্বাজান এর কথা ছাড়ো কখনো কিছু হয়েছে যে আজ হবে? আব্বাজান এ ব্যাপারে সবকিছুই জানেন। শুধু আব্বাজান ই নয় তুই ছাড়া এ বাড়ির সকলেই এ বিষয়ে জানে। আমি এ বিষয়ে প্রথমে কিছু জানতাম না দুদিন আগে তোর ভাইয়ের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে পারি। পরে বাড়ির বড়রা আমাকে নিষেধ করে তোকে এ বিষয়ে কিছু জানাতে। তাই আমি আর তোকে বিষয়ে কিছু বলিনি।’

ধারা কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,

‘ আমি আগেরবার আব্বাজানের মুখের ওপর কিছু বলেনি, এবারের ও বলবো না। ভাবি নেও তুমি আমাকে তৈরি করে দাও। ওদিকে ছেলে বাড়ির সবাই এসে আমাকে দেখার জন্য হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করছে। নেও, নেও তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি করে তৈরি করে দাও। কী গো ভাবি বসে আছো কেন? তাড়াতাড়ি করো।’

শেষের কথাগুলো বলে ধারার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি করে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে জোনাকির দিকে মলিন হেসে তাকায়। ধারার অবস্থা দেখে জোনাকির বুক ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু ওর যে হাত-পা বাঁধা সংসারের বেড়াজালে।

চলবে….

কিছুদিন ধরে আমি গল্প দেওয়া নিয়ে অনেক অনিয়ম করছি। অনেকেই জানেন আমার আম্মু অসুস্থ। এতদিন আম্মু কে নিয়ে হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করে ঠিকমতো গল্প লেখা হয়ে ওঠেনি। ইনশাল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত গল্প দেওয়া চেষ্টা করবো। কিছুক্ষণ পরে আবার এক পর্ব গল্প পোস্ট করা হবে। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here