অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৫১

0
981

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৫১|

ইভান কোনো মতে ধারা কে শান্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখে। ধারা ইভানের বুকে মাথা রেখে এখনো মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে উঠে। ইভান একনজর রুমে সবার দিকে তাকায়। সবার চোখে বিস্ময়ের ছাপ। ইভান সবার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ তোরা এই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? আমাকে কী আগে কখনো আমাকে দেখিনি? নাকি এক্সিডেন্ট করার পর আমার চেহারার উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে?’

রাহুল অবাক গলায় ওদের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলল,

‘ তার থেকেও বেশি কিছু। তুই একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছি। মেয়েটার কান্না দেখে উতলা হয়ে তার কান্না থামানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস। এটা তো কম বিস্ময়ের না আমাদের কাছে?’

মিহু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ তোর সঙ্গে মেয়েটার কিসের সম্পর্ক ইভান? মেয়েটা তোকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে কেন?’

রোজা এক নজর হেরির দিকে তাকিয়ে পরে নজর ঘুরিয়ে ইভান দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ দেখে বুঝতে পারছি মেয়েটা তোর পরিচিত। কিন্তু হেরি যদি মেয়েটাকে চিনে তাহলে আমরা মেয়েটাকে চিনি না কেন?’

ইভান মাথাটা হালকা তুলে ধারার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,

‘ বউ, বউ ও আমার।’

বিস্ফোরিত চোখে সবাই ইভানের দিকে তাকায়। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ইভান বিয়ে করেছে অথচ তারাই জানেন না। আদৌও কী এটা সম্ভব? এক নজর ধারার দিকে তাকাচ্ছে আবার আর এক নজর ইভানের দিকে তাকাচ্ছে সবাই। ওদের মধ্যে কোনও হেলদোল নেই। নিজেদের মতো ভালোবাসা প্রকাশের ব্যস্ত। রোজা বিষ্ময় গলায় বলল,

‘ হোয়াট? আর ইউ ম্যারিড? তুই আমাদের সঙ্গে মজা করছিস না তো? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না তুই বিয়ে করেছিস? কবে কখন কিভাবে বিয়ে করেছিস তুই? ক্লিয়ারলি সব কিছু বল, তোর কথা শুনে মাথা আমার ঘুরছে এখন।’

হেরি মিন মিন করে বলল,

‘ ইভান সত্যি বলছে। প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল ওদের বিয়ের বয়স।’

মুহুর্তে আবারো চমকে উঠে সবাই। একের পর এক ঝটকায় খেয়ে যাচ্ছে সবাই। পাঁচ বছর? সে তো কম সময় নয়! এতগুলো বছর ধরে তাদের বন্ধু বিবাহিত অথচ তারা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। রাহুল মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ কী? পাঁচ বছর? কিভাবে সম্ভব এটা? পাঁচটা বছর ধরে ইভান বিবাহিত অথচ আমরা কেউ টের পায়নি!’

ওদের কথা শুনে ইভান ভাব নিয়ে বলল,

‘ আমি যদি কাউকে ধরা না দেই। তাহলে আমাকে ধরার সাধ্য কারও নেই।’

মিহু ইভান কে ধমকের সুরে বলল,

‘ তুই চুপ থাক। এখনো তোর ভাব নেওয়া শেষ হয়নি? আমি তোকে আগে খুব সাদাসিদে ভাবতাম, কিন্তু তুই যে এত গভীর জলের মাছ তা আগে আমি বুঝতে পারিনি। পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেছিস, আমাদের সবার থেকে তুই তোর বউকে লুকিয়ে রেখেছিস, কেন আমরা কী তোর বউকে চুরি করে নিয়ে যেতাম?’

ইভান মৃদু স্বরে বলল,

‘ আরে আগে আমার কথাটা তো শুনবি, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমি তাদের কাউকে জানাতে পারিনি। কিন্তু ঘটনাচক্রে হেরি সব কিছু জেনে যায়।’

ধারা সকলের কথাবাত্রা শুনে ইভানের বুক দেখে মাথা তুলে তাকায়। রুমে উপস্থিত সবার মুখে কৌতূহলের ছাপ। দেখে মনে হচ্ছে তারা সকলে বড়ো সড়ো ধরনের ঝটকা খেয়েছে। ধারা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কী হয়েছে?’

ইভান ধারার মাথায় হাত রেখে বলল,

‘ ওহ কিছু না, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলাম।’

রোজা এসে ধারার হাত ধরে বসা থেকে উঠিয়ে বলল,

‘ কিছু হয়নি মানে? বিয়ে হয়েছে তোমাদের পাঁচ বছর। অথচ তোমার হাসবেন্ড আমাদের তা জানায়নি। শুধুমাত্র হেরি ইডিয়েট টা কে জানিয়েছে।’

হেরি তেতে উঠে বলল,

‘ খবরদার রোজা ভাবিজির সামনে আমার নামে উল্টাপাল্টা কিছু বলবি না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।’

রোজা মুখ বাঁকা করে বলল,

‘ কী করবি তুই আমাকে? কিছু করার সাহস আছে তোর? এমন মার মারবো না তোকে সোজা হয়ে হাঁটতে পারবি না। তখন এই বড় বড় ডায়লগ কোথায় যায় তা আমি দেখব!’

হেরি বিড় বিড় করে বলল,

‘ এই মেয়ের যন্ত্রণায় আমার মান সম্মান বলে কিছু থাকবে না। কী ডেঞ্জারাস মেয়ে সকলের সামনে আমাকে থ্রেট দেয়। ওহ গড তুমি আমাকে রক্ষা করো এই গুন্ডি মেয়ের হাত থাকে।’

রোজা হেরির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ কিছু বললি আমাকে?’

হেরি অবোধ বালকের মতো মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ না!’

রোজা ইভানের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল,

‘ এবার আপনি কী আমাদের বলবেন আপনাদের বিয়ের কথা? না কী আরো কয়েক বছর পরে বলবেন?’

ইভান রোজার কথা শুনে হেসে বলল,

‘ বলবো না কেনো? অবশ্যই বলবো। আমাদের বিয়ে হয়েছে এখনো পাঁচ বছর পূর্ণ হয়নি। সামনের ডিসেম্বরে পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। আমাদের বিয়ে টা অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে হয়েছে যায়। আমি বা ধারা দুজনের কেউই জানতাম না যে ঐদিন আমাদের বিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু হয়ে গেছে। তোদের মনে আছে পাঁচ বছর আগে আমি আম্মুর সঙ্গে গ্রামে ঘুরতে গেছিলাম, আম্মুর ছোট ফুপির বাড়িতে। ওখানেই আম্মুর ধারা কে দেখে অসম্ভব ভালো লাগে। আম্মুর ছোট ফুপির মাধ্যমে ওর খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে। আম্মু তার ছোট ফুপির কাছ থেকে ধারার ব্যাপারে সবকিছু শুনে ধারা কে আরো ভালো লাগে তার। প্রথমে আম্মু যখন আমাকে জানায় আমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছে, তখন আমি আম্মুর সঙ্গে রাগারাগি করি। রাগারাগি করে আম্মুর ছোট ফুপির বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। তোরা তো জানিস আমি আম্মুর সঙ্গে রাগারাগি করে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না কিছুক্ষণ পরে গিয়ে আম্মু কে সরি বলি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই ওই মেয়েটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ওর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে বিয়ে ভেঙে দেবো। তাহলে আর কোনো ঝামেলাই হবে না। আম্মু ও জানতে পারবে না এসব বিষয়ে। কিন্তু ওই যে নিয়তি বলে একটা কথা আছে না? সেই নিয়তি এসব কিছুই হতে দেয়নি। উল্টে এই মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমি আরো এই মেয়েটি কে ভালোবেসে ফেলি। এদিকে আম্মু আমার হাবভাব বুঝতে পেরে আমার মনে ধারার জন্য একটা আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। আম্মু বিচক্ষণ মানুষ সে আমাকে পরীক্ষা করার জন্য জানায় সে এই মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবে না অন্য কোথাও আমার বিয়ে ঠিক করেছে। বুঝতে পারছিস তখন আমার অবস্থা কেমন ছিল? নিজের এ কেমন পাগল পাগল মনে হচ্ছিল। তখন দম বন্ধ হয়ে মারা যায়নি তার জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। ধারা নামের মেয়েটার প্রতি তখন আমি আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। আম্মু কে কিছু বলতে পারছিলাম না। মেয়েটার বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম একনজর দেখার জন্য তাকে। দিশেহারা হয়ে একা একা ভাবছিলাম কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় তখন আম্মু ভাইয়াদের ডেকে পাঠায় গ্ৰামে। দুপুরের পরে ভাইয়ারা গ্রামে এলে আম্মু আমাদের সবাইকে নিয়ে ধারা দের বাড়িতে যায়। আম্মুর তো আগে থেকেই ধারা কে পছন্দ। ব্যাস, ওই দিনই আম্মু আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি বা ধারা কেউ ভাবতেই পারিনি আমাদের ঐদিন বিয়ে হয়ে যাবে। যাইহোক আল্লাহতালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। ধারা নামক ভালোবাসার বাতাসে উঠছিলাম আকাশে। আমি বলে প্রকাশ করতে পারবো না আমি ঠিক কতটা খুশি ছিলাম ওই দিন। ওই দিন বাসর রাতের ধারা কে নিয়ে আমি ওই ভিডিওটা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করি। আমি ইতালিতে ফেরার পর তোরা আমাকে যে ভিডিওটার জন্য গোয়েন্দার মত জেরা করেছিল সেই ভিডিওটা। আর ওই ভিডিওটার মেয়েটা আর কেউ ছিল না আমার বউ ছিল। তখন পরিস্থিতির কারণে আমি তোদের এসব কথা জানাতে পারিনি তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।’

মিহু ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল,

‘ শালা হারামী বিয়ে করেছিস পাঁচ বছর আগে, আর এখন আমাদের জানিয়ে বলছিস তোদের পরিস্থিতির কারণে জানাতে পারেনি তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমার এখন মনে চাইছে তোকে ইচ্ছামত কিছুক্ষণ ক্যালাতে পারতাম তাহলে যদি রাগটা একটু কমত। কিন্তু আফসোস তুই আগে এক্সিডেন্ট করে হাত-পা ভেঙে বসে আছিস। তবে তুই চিন্তা করিস না আগে সুস্থ হয়ে নে তারপর আমরা সবাই মিলে তোকে ইচ্ছামত ক্যালানি দেবো।’

ইভান শব্দ করে হেসে বলল,

‘ তা দিস কেউ তোকে বারণ করেনি। হেরি তুই এক কাজ কর তোর ভাবি কে নিয়ে বাসায় যা। ক্লান্ত সে এখন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপরে না হয় হসপিটালে আসবে।’

ধারা এতক্ষণ ওদের বন্ধুদের খুনসুটি দেখছিল। ইভানের কথা শুনে ধারা স্পষ্ট ভাবে বলল,

‘ আমি কোথাও যাচ্ছি না এখন। আমি আপনার সঙ্গে আপনার কাছে থাকবো।’

ইভান কঠোর গলায় বলল,

‘ মানে কী? এত ঘণ্টা জার্নি করে এখন আবার তুমি আমার সেবা করবে? কক্ষনো নয়। হেরির সঙ্গে বাসায় যাও তুমি, পড়ে এসে আবার আমাকে দেখে এসো তুমি।’

ধারা ইভানের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

‘ আমি আপনার উপর এমনিতেই রেগে আছি। এখন আবার এমন কিছু করবেন না, যাতে আমার রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই আমি যা বলছি চুপচাপ শুনুন না হলে আপনার একদিন কী আমার একদিন।’

ইভান ধারার কথা শুনেন দমে যায়। ইভান জানে ধারা একবার রেগে গেলে কত ভয়ানক হতে পারে। শান্তশিষ্ট মানুষ যখন রেগে যায় তখন তাদের সামলানো মুশকিল হয়েছে। ইভানের এখনো মনে আছে ধারা একবার রাগ করে ওর সঙ্গে সাত দিন কথা বলিনি। তখন ইভান কত কষ্ট করে ফোনের পর ফোন দিয়ে ধারার রাগ ভাঙ্গিয়েছে। ইভানের অবস্থা দেখে ওর বন্ধুরা সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। ধারা ইভানের দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল,

‘ ওয়াশরুম কোন দিকে?’

ইভান হাতের ইশারায় ধারা কে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেয়। ধারা ইভানের হাতের ইশারা অনুসরণ করে তাকিয়ে পরে ইভানের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল,

‘ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তারপরে আপনার খবর নিচ্ছি খুব বার বেড়েছে না আপনি তাই না? এক্সিডেন্ট করে মাথা ফাটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে পড়ে আছেন অথচ সেই খবর আমাকে আপনি জানানি। আজ আপনার হচ্ছে। আজ হাড়ে হাড়ে টের পাবেন এই ধারা কী জিনিস। আমার কাছে কথা লুকানো তাই না?’

এইটুকু বলে ধারা হনহনিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়। ধারা ওয়াশ রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই ইভানের সব বন্ধুরা শব্দ করে হাসতে শুরু করে। ইভান ওদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ ছাগলের মত হাসছিস কেন তোরা? এখানে কী কোন সার্কাস চলছে?’

রাহুল হাসতে হাসতে বলল,

‘ তার থেকেও বড় কিছু বন্ধু। দ্য গ্রেট ইভান তার বউকে ভয় পাচ্ছে। এটা তো সার্কাস এর থেকেও বড় কিছু।’

রাহুলের কথা শুনে ইভান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে একগাল হেসে দেয়।

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-স্পেশাল|

ধারা গম্ভীর মুখ করে ইভান কে চিকেন সুপ খাইয়ে দিচ্ছে। ইভান ধারার চোখে মুখে রাগের ছাপ দেখে সে আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। ধারা পরপর কয়েক চামচ চিকেন সুপ ইভানের মুখে তুলে দিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ এক্সিডেন্ট কিভাবে হল আপনার? আর এত বড় কান্ড হয়ে গেছে আপনি আমাকে জানাননি কেন?’

এবার বুঝি ইভানের দেহে প্রাণ এল। তার সামনে তার প্রিয়সি বসে আছে, আর ইভান তার প্রিয়সির সঙ্গে কথা না বলে চুপ করে ছিল। ইভান ধারার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,

‘ সম্রাট ভাইয়া যেদিন তোমাদের বাড়ির ঘটনা আমাকে জানায় সেদিন আমি তোমার সঙ্গে কথা বলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। ওদের সঙ্গে দেখা করে টিকিট কনফার্ম করতে যাব বলে মনস্থির করি। ওদের সঙ্গে দেখা করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় উল্টো দিক দিয়ে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়। পরে আর কিছু আমার মনে নেই। প্রায় দুই দিন পরে জ্ঞান ফিরে আমি নিজেকে হসপিটালে দেখতে পাই। পরে জানতে পারি রাহুল ওরা আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। তোমাকে জানাই নি এমনিতেই তুমি তোমার আব্বাজানের কাজের জন্য সারাদিন চিন্তিত থাকো। এরপরে যদি তুমি আবার আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনতে, তাহলে তুমি সুস্থ শরীরে ইতালি আসতে পারতে কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তুমি যখন হেরি কে ফোন করো, তখন আমি সেন্সলেস ছিলাম, বেচারা ঘাবড়ে গিয়ে তোমাকে উল্টোপাল্টা কী সব বলছে একমাত্র আল্লাই জানে। আমি বুদ্ধি করে লাবিদ ভাইয়াকে আমার এক্সিডেন্টের কথা জানাই। ভাইয়া শোনা মাত্র ইতালিতে আসতে চেয়েছিল। আমি ভাইয়াকে বলি ভাবি কে বাড়িতে একা রেখে আসার দরকার নেই। তার উপরে রোহান এখনো ছোট। ভাইয়ার সাহায্য নিয়ে তোমাকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসি। এরপরের ঘটনা তো তুমি সব জানো।’

ধারা চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়ে বলল,

‘ সরি, আজ আমার জন্য আপনার এই অবস্থা। আমাকে নিয়ে আপনি চিন্তা করে রাস্তা পার হওয়ার সময় এমন দুর্ঘটনা ঘটে। এর জন্য একমাত্র আমি দায়ী।’

ইভান যত্নসহকারে ধারার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,

‘ দূর বোকা মেয়ে এখানে তুমি কোথা থেকে দায়ী? আমি তো বললাম একটা গাড়ি উল্টো দিক দিয়ে সে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। এখন কান্না বন্ধ করে আমাকে খাইয়ে দাও বড্ড খিদে পেয়েছে আমার।’

ধারা ইভানের কথায় মাথা নাড়িয়ে বাকি খাবারটা খাইয়ে দিয়ে, টিসু দিয়ে ইভানের মুখ মুছে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বলল,

‘ আপনি একটু বসুন আমি ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে আসি।’

ধারা উঠে গেলে ইভানের ফোন বেজে ওঠে। ইভান বালিশের পাশ দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি লাবিদ ভাইয়া ফোন করেছে। ইভান ফোন রিসিভ করে বলল,

‘ হ্যাঁ ভাইয়া বল।’

লাবিদ মৃদু স্বরে বলল,

‘ ধারা ঠিকভাবে পৌঁছে গেছে?’

ইভান ছোট করে বলল,

‘ হুম।’

লাবিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ ঘন্টাখানেক আগে ধারার বড় ভাই আমাকে ফোন করেছিল। ধারা পৌঁছে গেছে কিনা তা জানার জন্য। কিছুক্ষণ পরে আমি ফোন করে জানিয়ে দেবো খবরটা। ওদিকে আবার ধারার বাবা আর কাণ্ড ঘটিয়েছে। ধারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই তিনি সবাইকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে, ধারার সঙ্গে যে যে যোগাযোগ করবে তাদের সে মুখদর্শন করবে না। একপ্রকার কসম কেটেছে বলতে পারিস। কী একটা অবস্থা। কেন যে তিনি এমন করছেন আল্লাই জানে। অভি ছেলেটা এয়ারপোর্টে বসে ধারা কে জড়িয়ে ধরে তো অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। তিন ভাইয়ের আদরের বোন, কষ্ট তো হবেই। এসব কথা আবার ধারা কে বলিস না মেয়ে টা কষ্ট পাবো। সাবধানে থাকিস তোরা দুইজন। একটু পরে একটা মিটিং আছে আমার রাখি এখন, রাতে বাসায় ফিরে ফোন দিব তোদের।’

ইভান ধীর গলায় বলল,

‘ ঠিক আছে।’

ধারা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলে ইভান ধারার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ বিল্লু রানী আমি এতক্ষণ তোমার সব কথা শুনেছি। এখন যদি তুমি আমার কথা না শুনো, তাহলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাব।’

ধারা চোখগুলা ছোট ছোট করে বলল,

‘ কী কথা শুনবো আপনার?’

ইভান বেডের এক কোণায় সরে গিয়ে আর এক কোণায় জায়গা করে দিয়ে বলল,

‘ এখানে এসে লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পরো।’

ধারা ইতস্ত বোধ করে বলল,

‘ আপনি ব্যথা পাবেন। তার থেকে বরং আমি এখানে সোফায় বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছি।’

ইভান ধমকের সুরে বলল,

‘ তোমার কাছে আমি জিজ্ঞেস করেছি? করিনি তো তাই না! তোমাকে আমি যা বলেছি তাই করো।’

ইভানের ধমক শুনে ধারা গাল ফুলিয়ে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে ইভানের ডান পাশে পাশে শুয়ে পড়ে। ধারা ইভানের বুকের উপর এক হাত রাখলে ইভান ব্যান্ডেজ করা বাম হাতের আলতো করে ধারার হাত ধরে বলল,

‘ বুকের উপর একটু মাথা রাখবে বিল্লু রানী?’

ধারা ইভানের আড়ালে মৃদু হেসে আস্তে করে ইভানের বুকে মাথা রাখে। ইভান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নেয়।

চলবে…

কমেন্টে যারা বোনাস পর্ব চাইছিলেন, তাদের জন্য স্পেশাল পর্ব বা বোনাস পর্ব দেওয়া হয়েছে। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here