#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-২০|
মধ্য দুপুর। সূর্যমামা নিজ গতিতে মাথার উপরে চড়ে তাপ ছড়াচ্ছে। আজ সূর্যমামার তাপে কোন তীব্রতা নেই। শীতের আমেজ আছে। এই ডিসেম্বর মাসে দু’দিন আগে কি গরম টাই না পড়েছিল। কিন্তু এসব রোমাঞ্চকর পরিবেশের দৃষ্টি দেওয়ার সময় নেই ধারা। মেজেসটার ভীষণ রকম খারাপ হয়ে আছে ধারা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল কার্তিক কাকার দোকানের পাশের দোকানে থেকে ফোনে রিচার্জ করিয়ে নেবে। কিন্তু তার কী আর জো আছে। রিচার্জ এর দোকানের ছেলেটা বলেছে, ফোনে রিচার্জ এর টাকা না কি শেষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে এলে না হয় কিছু একটা ব্যবস্থা করা যেত। সকালের দিকে একটা ছেলে এসে তার ফোনে হাজার তিনেক টাকা রিচার্জ করিয়ে নিয়েছে। ছেলেটার যেমন বিবরণ দিয়েছে তাতে মনে হয় শহরের কোন ছেলে হবে। ছেলেটার উপর ধারার রাগ হচ্ছে। ভীষণ রকম রাগ হচ্ছে। কি দরকার ছিল এত টাকা রিচার্জ করিয়ে নেওয়ার। তাহলে তাকে এত রোদের মধ্যে হাটে বাজারে যেতে হতো না। বজ্জাত ছেলে কোথাকার। ছেলেটাকে হাজার রকম গালাগালি করতে করতে গ্রামের সরু পথ ধরে ধারা এগিয়ে যাচ্ছে বাজারের উদ্দেশ্যে। গুটি গুটি পায়ে বাজারের দিকে হেটে যাচ্ছে ধারা। ধারার আম্মা নানা নানির সঙ্গে ফোনে কথা বলবে। কিন্তু এই মুহূর্তে ফোনে টাকা নেই ওর। আর বাড়িতে আব্বাজান, ভাইয়া কিংবা চাচা বাড়িতে উপস্থিত নেই। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে ধারা বাড়ি থেকে বের হওয়া ফোনে টাকা রিচার্জ করানোর জন্য।
বাজারে যখন এসেছে একবার ওদের দোকান থেকে ঘুরে যাবে ধারা। তাছাড়া ফোনে টাকা রিচার্জ করার শেষ। ধারাদের বাজারে একটা বড় কাপড়ের দোকান আছে। লোকে বলে ওদের দোকান টাই নাকি বাজারে সব থেকে বড় দোকান। ধারাকে দোকানের দিকে আসতে দেখে সম্রাট দোকান থেকে বেরিয়ে খানিকটা এগিয়ে আসে। ধারা সম্রাটের সামনে এলেই সম্রাট চিন্তিত গলায় বলল,
‘ তুই এই সময়ে এখানে? সবকিছু ঠিক আছে তো? আল্লাহ না করুক কোন বিপদ-আপদ হয়নি তো কারো!’
ধারা ভুরু কুঁচকে বলল,
‘ কেন আমি কি আসতে পারি না দোকানে? নাকি এটা কোন অলিখিত নিয়ম যে দোকানে বাড়ির মেয়েদের আসা যাবে না!’
সম্রাট চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ আমি কখন বললাম যে বাড়ির মেয়েদের দোকানে আসা যাবে না! আমিতো শুধু জানতে চেয়েছি তুই এই অসময়ে এইদিকে তাই।’
ধারা মুখ বাঁকা করে বলল,
‘ ফোনে রিচার্জ করাতে এসেছিলাম, পরে ভাবলাম বাজারে যখন এসেছি একবার দোকান থেকে ঘুরে যাই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এখানে না আসলে হয়তো ভালো হতো।’
সম্রাট মৃদু হেসে বলল,
‘ হয়েছে চল দোকানে, আব্বাজান ও আছে এখন দোকানে!’
ধারা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
‘ আপনি না বললেও আমি এখন দোকানে যেতাম। দেখি সরুন তো আমাকে সাইট দিন আমি দোকানে যাবো।’
ধারা কথা শুনে সম্রাট হাসে। সম্রাট জানে ধারা যে মাঝেমধ্যে এমন কথাবাত্রা বল। ধারা দোকানের দিকে হাঁটা শুরু করলে। সম্রাট ও ধারার পিছন পিছন আসে।
ঘন্টা খানিক দোকানে থাকার পর ধারা বাড়ির পথ ধরে আবার। ধারার হাতে সিঙ্গারা প্যাকেট। সম্রাট কিনে দিয়েছে। বাড়ির কাছাকাছি এসে ধারার দেখা হয় ওদের স্কুলের একটা মেয়ের সাথে। ক্লাসে ওর থেকে দুই ক্লাস ছোট। কিন্তু ওদের দুজনের মধ্যে বেশ ভাব আছে। ধারা ওকে দেখে মিষ্টি হেসে বলল,
‘ আরে শিমু তুই এই সময়ে এইদিকে? কোন প্রয়োজন ছিল?’
শিমু ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
‘ আরে আপু তুমি কেমন আছো? অনেক দিন পরে তোমার সাথে দেখা হলো। তোমার পরিক্ষার পর তো আর তোমার দেখাই পাইনি। আর আমি বাজারের দিকে যাচ্ছি, ফুফু আসছে বাড়িতে। তাকে এগিয়ে আনতে যাচ্ছি।’
ধারা হালকা হেসে বলল,
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি। তুই কেমন আছিস? আর পরিক্ষার পরে তোদের ওদিকে আর আমার যাওয়া হয়নি।’
শিমু ছোট করে বলল,
‘ আমিও ভালো আছি আপু। তা তুমি কোথায় গিয়েছিলে এখন?’
ধারা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ বাজারে গিয়েছিলাম। কাজ ছিল কিছু।’
শিমু একটু হেসে বলল,
‘ ওহ, আপু আমি এখন তাহলে আসি। পরে তোমার সাথে জমিয়ে আড্ডা দেবো। ওদিকে ফুফু আমার জন্য অপেক্ষা করছে হয়তো।’
ধারা হেসে বলল,
‘ ঠিক আছে।’
শিমু আর না দাঁড়িয়ে ব্যস্ত পায়ে বাজারের পথ ধরে। ধারা এক নজর তার দিকে তাকিয়ে, ধীর পায়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে।
ইভান ওদের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আশেপাশের পরিবেশ টা দেখছে। গ্রামের পরিবেশ যতই দেখছৈ ততই মুগ্ধ হচ্ছে ইভান। ইভান চোখ জুড়িয়ে যায় এসব দেখে। শহরের জীবনে এসব দেখার সুযোগ হয়নি ইভানের। তাই সুযোগ পেয়ে দুচোখ ভরে এসব দেখে যাচ্ছে ইভান। কায়েস এসে ইভানের পাশে এসে দাঁড়ায়। ইভান এক নজর তাকায়, পরে আবার খোলা মাঠের দিকে তাকায়। কায়েস মৃদু হেসে বলল,
‘ ভাইয়া তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আজ ঘুরতে যাবে না তুমি?’
ইভান মৃদু স্বরে বলল,
‘ এখন ইচ্ছে করছে না, বিকালের দিকে ঘুরতে যাবো।’
কায়েস ছোট করে বলল,
‘ আচ্ছা ভাইয়া বিকেলে নদীর ওপারের যাবে? ওখানে ঘুরে দেখার অনেক জায়গায় আছে। ভালো লাগবে তোমার!’
ইভান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ সে বিকেলে দেখা যাবে। আম্মু কোথায় এখন?’
কায়েস ধীর গলায় বলল,
‘ তাঁকে তো দেখলাম আমায় মায়ের সাথে কথা বলছে। কেনো?’
ইভান ছোট করে বলল,
‘ এমনি, চলো সামনের দিক থেকে হেঁটে আছি।’
ইভানের কথা শুনে কায়েস মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। কায়েস আর ইভান একসাথে হাঁটতে শুরু করে।
চলবে…
সরি এতদিন গল্প অনিয়ম করে দেওয়ার জন্য। ইনশাল্লাহ কাল থেকে নিয়মিত গল্প পোস্ট করা হবে। ধন্যবাদ।