#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-২৫|
ধারা দেখছে বাড়িতে সকাল থেকে জমজমাট পরিবেশ। কেমন অনষ্ঠান অনুষ্ঠান আমেজ পাচ্ছে ধারা। এ বিষয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সবাই ওকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছে। সকাল সকাল গ্ৰামের হাট থেকে বাড়িতে রকমারি বাজার করে নিয়ে এসেছে চাচা জান আর আব্বাজান একসাথে। ধারা সুযোগ বুঝে রান্না ঘরের ভাবিকে একা পেয়ে, ধারা রান্না ঘরে ঢুকে ভাবিকে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ভাবি বাড়িতে কী কোন অনুষ্ঠান কিংবা কোনো মেহমান আসবে? এত আয়োজন কিসের বাড়িতে? বাজার ঘাট দেখে মনে হচ্ছে তো এলাহি আয়োজন করা হচ্ছে। তুমি অন্তত আমাকে বল কি হয়েছে বাড়িতে এসব।’
জোনাকি কোন উত্তর দেওয়ার আগেই ধারার চাচি জান ধারা কে ধমকের সুরে বলল,
‘ তুই এখনও এখানে কি করছিস? আমি সেই কখন তোর জন্য কাঁচা হলুদ বেটে তার সঙ্গে কাঁচা গরুর দুধ মিশিয়ে রেখে এসেছি। যা গিয়ে ভালো করে সেগুলো হাতে মুখে মেখে নে। ওগুলো মেখে যেন তোর চেহারা চকচক করে।’
ধারা মুখ ফুলিয়ে বসে বলল,
‘ সবাই বলে আমাকে টোকা দিলে নাকি রক্ত পড়বে, এতটাই নাকি ফর্সা আমি। আরো তুমি ঐ সব মেখে আমার মুখ চকচকে করতে বলছ, তাহলে তো আমাকে একেবারে বিদেশীদের মত।’
ধারার চাচি জান চুলায় বড় একটা পাতিল তুলে দিয়ে বলল,
‘ বিদেশি স্বামীর জন্য বিদেশী বউ ই দরকার। এখন কথা না বলে তাড়াতাড়ি যা। না হলে এখন আমি তোকে এমন বকব না। তাড়াতাড়ি যা বলছি এখান থেকে।’
ধারা মুখ গোমরা করে বিড়বিড় করতে করতে রান্না ঘর থেকে চলে যায়। ধারার চাচি জান জোনাকির দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ বৌমা ধারা কে যে আজ ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসছে এসব এখনি কিছু বলার দরকার নেই ওকে। এমনিতেই ছোট মনে একবার আঘাত পেয়েছে। এর মধ্যে বাড়ির কর্তা গুলো কেন এমন একটা সিদ্ধান্ত নিল তাই বুঝতে পারছি না আমি।’
জোনাকি ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ ঠিক আছে চাচি জান আমি ধারা কে এসব বিষয়ে আগে কিছু বলব না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।’
ধারার চাচি জান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, রান্নাবান্নার কাজে মন দেয়।
রুমি লাবিদের সামনে এসে ওয়ালেট বাড়িয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
‘ আচ্ছা আম্মু এত জরুরি তলব আমাদের গ্রামের ডেকে পাঠালে কেন? তুমি আবার বললে বড় ভাইয়া ও যাচ্ছে আমাদের সাথে। বড় ভাবিকে এসব বিষয় জানাতে নিষেধ করেছি আম্মু। কোন কিছু কি হয়েছে তুমি জানো কিছু?’
লাবিদ ওয়ালেট প্যান্ট এর পিছনের পকেটে রেখে রুমির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ না গো আমিও কিছু জানি না এ বিষয়ে। আম্মু শুধু বলল বিকেলের আগেই যেন আমরা তিনজনে গ্রামে পৌঁছে যাই। নেও কথা বলার অনেক সময় পাবে এখন ঝটপট করে তৈরী হয়ে নাও। আমি ভাইয়া কে ফোন দিয়ে দেখি তার কতদূর।’
রুমি আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে মাথায় হিজাব বেদে নেয়। তৈরি সে অনেকক্ষণ আগেই হয়ে গেছিল শুধু হিজাব বাঁধা বাকি ছিল। তৈরি হয়ে ঘরদোর ভালো করে আটকে বেরিয়ে পরে তারা। লাবিদ তার বড় ভাই কে ফোন করলে সে জানায়, লাবিদ আর রুমি যাওয়ার পথে তাকে অফিস থেকে নিয়ে যেতে। জুয়েল জানে এখন বাসায় গিয়ে তৈরি হয়ে বেরলো ওর স্ত্রী লামিয়া ওকে সন্দেহ করবে। তাই অফিসের পোশাকে রওনা দেবে গ্রামের উদ্দেশ্যে।
অভি আর হাবিব তাদের কাজগুলো করে এসে সম্রাটের পাশে দাঁড়ায়। সম্রাট ধারার আব্বাজান এবং চাচা জানের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তাদের কথা এর মাঝে সম্রাট অভি এবং হাবিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ যে কাজগুলো দিয়েছিলাম সে কাজগুলো করা শেষ তোদের?’
হাবিব মৃদু স্বরে বলল,
‘ হ্যাঁ ভাইয়া আমাদের সব কাজ করা শেষ। কার্তিক কাকার দোকান থেকে তিন চার ধরনের স্পেশাল মিষ্টি নিয়ে এসেছি। এদিকে আসার সময় মিষ্টির প্যাকেট গুলো ভাবির কাছে দিয়ে এসেছি।’
সম্রাট আর কিছু না বলে আর আগের আলোচনায় মন দেয়।
সবার মুখের বিস্ময় চিহ্ন। বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ইভানের দুই ভাইয়ের এবং ভাবির। গ্রামে আসার পর ওদের আম্মুর কাছ থেকে জানতে পারে, সে গ্রামের এক মেয়েকে ইভানের জন্য পছন্দ করেছে। মেয়ে তো তার আগেই পছন্দ হয়েছে। আজ যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে আজকেই আংটি পড়িয়ে আসবেন মিতা বেগম। এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি মিতা বেগমের সাথে। জুয়েল আর লাবিদ জানে তাদের আম্মু খুব বিচক্ষণ একজন মানুষ। তিনি কোন কারণ ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নিবেন না। নিশ্চয়ই ঐ মেয়ের মধ্যে কিছু এমন দেখেছে যার জন্য তিনি তাকে তাদের ভাইয়ের বউ করে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এত উতলা হয়ে পড়েছেন। এসব ভেবে তারা সকলেই চুপ থাকবে।
একটু পরে বাড়িতে মেহমান এসে পড়বে, অথচ ধারা কে এখনো তৈরি করতে পারেনি জোনাকি। জোনাকি তার শাশুড়ির ঘরে গিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
‘ আম্মা মেহমান তো আসার সময় হয়ে গেলো, কিন্তু ধারা কে তো এখনো তৈরি করতে পারলাম না। ওকে আমার কোনো নতুন শাড়ি পড়েরি দিবো না কী থ্রি পিস।’
ধারার আম্মা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,
‘ এখনি শাড়ি পড়ানোর দরকার নেই। আগে তারা আসুক তাদের কথাবার্তা এর হালচাল দেখে তারপর না হয় বলবো খন। এখন আপাতত ওকে ভালো দেখে একটা থ্রি পিস পড়ে থাকতে বলো।’
জোনাকি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানায়। আর না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে….
আজকের পর্ব ছোট হয়েছে। তাই কালকের পর্বের সাথে এক্সট্রা পর্ব দেওয়া হবে।