#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৩৯|
ইভান চোখ ছানাবড়া করে ধারার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেও ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কোন দিক দিয়ে ওকে ভূতের মত লাগে? ও কী দেখতে ভূতের মত? তাহলে এত এত মেয়ে ক্রাশ কী করে ইভান হয়? তাহলে তারা কী দেখে ইভানের উপর ক্রাশ খেয়েছে? কোন হিসেব ইভান মিলাতে পারছে না। তবে এইটুকু হিসেবে মিলাতে পারছে যে, তার বউ যে অতিরিক্ত ছোট মেয়ে। একদম পিচ্চি। তাঁকেই তার বউ কে সামলে রাখতে হবে। ধীরে ধীরে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অর্থ থেকে শুরু করে তাকে সবকিছু বোঝাতে হবে। এসব ভেবে ইভান ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ সবকিছু ই বুঝেছি। এখন তুমি আমার কথা শোনো। এখন যদি তুমি খাবার না খাও নাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ওই ভূতের বাড়িতে দিয়ে আসব। এখন তুমি বলো তুমি খাবার খাবে, না ঐ ভূতের বাড়ি যাবে। নাউ চয়েস এইচ ইউর।’
ধারা কিছুক্ষণ ভেবে মুখ গোমড়া করে বলল,
‘ ভূতের বাড়ি যাওয়ার থেকে খাবার খাওয়া অনেক ভালো। খাবো আমি কিন্তু আমার তো এখন নিজের হাতে খেতে একদম ইচ্ছে করছে না। আপনি একটু কষ্ট করে আম্মা বা ভাবি কে ডেকে দিতে পারবে। তারা এসে আমাকে খাইয়ে দিবে।’
ইভান ধারার কথা শুনে এক ফালি হাসে। ঠোঁটে হাসি নিয়ে ধারার পড়ার টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেট এবং পানির গ্লাস নিয়ে এসে বিছানায় বসে। ইভান খাবারের প্লেটে হাত দিতে দিতে বলল,
‘ এত রাতে তাদের বিরক্ত করার দরকার নেই। আজ সারাদিন অনেক খাটাখাটনি গেছে তাদের। এখন তাদের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। তারচেয়ে বরং আমি তোমাকে খাইয়ে দেই। তুমি লক্ষী মেয়ের মত আমার হাতে খেয়ে নাও।’
ধারা গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলল,
‘ ঠিক আছে, খাইয়ে দিন আপনি আমাকে।’
ইভান তার ঠোঁটের হাসি আর একটু প্রসারিত করে ধারা কে খাইয়ে দিতে শুরু করে। ধারা সে লক্ষী মেয়ের মত চোখ বন্ধ করে খাবার খাতে শুরু করে। অর্ধেকেরও কম খাও হলে ধারা চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল,
‘ আর খেতে পারবো আমি।’
ইভান ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এখনো অর্ধেকেও খাওয়া হলো না, আর এখনি বলছো খাবো না।’
ধারা পিটপিট করে তাকিয়ে করুন গলায় বলল,
‘ আমার পেটে আর এক ফোঁটাও কোথাও জায়গা নেই। সন্ধ্যার পরে ভাবির সাথে অনেক কিছু খাওয়া হয়েছে। আর খেতে পারবো না আমি।’
ইভান নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ ঠিক আছে, তুমি পানি খেয়ে একটু বসো। ততক্ষণে আমি প্লেটের খাবারগুলো খেয়ে শেষ করে, তোমার মুখ পরিস্কার করে দিচ্ছি।’
ইভানের কথা শুনে ধারা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। ইভান একনজরে ধারার দিকে তাকিয়ে পরে প্লেটের খাবারগুলো খেতে শুরু করে।
ইভান তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করে, ধারার দিকে তাকায়। ধারার দিকে তাকিয়ে বিষ্ময় হয়ে যায়। ধারা বিছানার এক কোণে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। এইটুকু সময়ের মধ্যে কেউ কি করে এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে পারে? মুখে খাবারগুলো লেগে আছে এখনো। ইভান প্লেটে হাত ধুয়ে ধীরে ধারার মুখ পরিষ্কার করে দেয়। খাবারের প্লেট গ্লাস টেবিলে রেখে এসে, বিছানার পাশে দাড়িয়ে ধারা কে সোজা করে ঘুম পাড়ায়। লেপ টা ভাল করে পেঁচিয়ে দেয় ধারার গায়ে। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পরে, গায়ে থাকা জ্যাকেট টা খুলে বিছানার পাশে রাখা ধারার পাশ দিয়ে লেপের নিচে ঢুকে পড়ে। পরপরই ধারা কে জাপটে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কপালে গালে অনবরত চুমু খায় ইভান। ধারার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
ধীরে ধীরে চোখ করে তাকায় ধারা। গতকাল সকালের মত আজকেও সে তার বরের বুকে ঘুমিয়ে আছে। খুব শক্ত করে জাপটে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে সে তাকে। ধারার হাড়গোড় মনে হয় এখনই ভেঙে যাবে। ধারা ঠেলেও ইভান তার কাছ থেকে সরাতে পারিনি। এমন শক্তপোক্ত ছেলের সঙ্গে কী ওর মত বাচ্চা মেয়ে কখনো পারে? ধারা ইভানের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘ এই আপনি ছাড়ুন আমাকে। আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন কেন? আমি কি আপনার কোলবালিশ নাকি?’
ইভানের কোন হেলদোল না দেখিয়ে ধারা কে জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমিয়ে আছে। তা দেখে ধারা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলল,
‘ এই আপনি আমাকে ছাড়বেন না কি আমি আপনাকে কামড় দিয়ে দেবো। তখন বুঝবেন এই ধারা কি জিনিস।’
না এতো দেখছি আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। এবার কিছু একটা করতেই হবে। না হলে এই বদের হাড্ডি লোকটা তাকে ছাড়বে না। ধারা আর একটু ইভানের দিকে এগিয়ে কাছে ঘেঁষে, ইভানের ঘাড়ে একটা হাত দিয়ে ওর মুখের একদম কাছে চলে আসে। ইভানের প্রতিটা নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে ধারার মুখে। ধারা এক পলক তার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইভানের চিবুকে ঠোঁট ছুঁইয়ে দাঁত বের করে কামড় দেয়। কয়েক মুহূর্ত পরে ইভান চোখ খুলে তাকায়। ধারা কে এমন অবস্থায় দেখে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে ইভান। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় ইভানের। চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেছে তার। তার প্রিয়সি তার এত কাছে তার চিবুকের ঠোঁট ছুঁইয়ে আছে। এ যেন কল্পনা অতীত ইভানের কাছে। এদিকে ধারা যে ওকে কামড়ে ধরে আছে সেদিকে কোন হুশ নেই ইভানের। সে বিস্ময় চোখে তার প্রিয়সি কে দেখতে ব্যস্ত। ইভানের হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়। উফ কি নিদারুন দৃশ্য। ইভান সে দিশেহারা। ভীষণ ভাবে দিশেহারা। অনেকটা পাগলের মত হয়ে ধারার দিকে তাকিয়ে আছে। ধারার এমন নিদারুণ অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ইভান। ইভান সে কাঁপা কাঁপা শরীরের শুধু তার প্রিয়সি কে আরো শক্ত করে জাপটে জড়িয়ে ধরে। ইভান ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলল,
‘ তুমি এত অত্যাচারী কেনো?’
হঠাৎ করে ইভানের কথা শুনে ধারা চমকে উঠে ইভানের উপর থেকে লাফিয়ে উঠে। ইভান ধারা কে তার উপর থেকে সরতে না দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আবার ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলল,
‘ বললে না যে তুমি এত অত্যাচার কেন? সকালবেলা আমাকে বিড়ালের বাচ্চার মত কামড়াচ্ছে কেন? আমি জানি তোমাকে দেখতে বিড়ালের মত কিন্তু তোমার স্বভাব চরিত্র যে বিড়ালের মত তা তো জনতার না। একদম বিল্লি রানি মত।’
চলবে…