পথান্তরে_প্রিয়দর্শিনী #মম_সাহা পর্বঃ চুয়াল্লিশ

0
470

#পথান্তরে_প্রিয়দর্শিনী
#মম_সাহা

পর্বঃ চুয়াল্লিশ

শুকনো পাতার স্তুপের পাশে তিনটি মানুষ বিরস মুখে দাঁড়িয়ে আছে। গুমোট করা বাতাস গুলো মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাসের মতন ছুটে যাচ্ছে মানুষ গুলোর মস্তিষ্ক নাড়িয়ে। দর্শিনী বেশ ভদ্র কিন্তু কঠিন মুখে তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“তা কাকাবাবু, আমাদের বাড়ির মেয়েদের চরিত্র খারাপের কী দেখলেন শুনি?”

ভদ্র লোকের মুখ থমথমে, হাসির মাঝেও কেমন যেন তাচ্ছিল্য মাখা একটা ভাব। সেই তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেই বললো,
“আমাকে আবার নতুন করে তোমাদের চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে হবে মেয়ে? নিজেদের গুনগান শোনার এত ইচ্ছে?”

দর্শিনী কিঞ্চিৎ হাসলো। লোকটা যে তার সাথে এভাবেই কথা বলবে সেটা যেন তার ঢের জানা ছিলো। তাই তত অবাক না হয়েই বরং প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আমার তো ইচ্ছে ছিলো না শোনার ৷ অথচ আপনি ছুটে এসেছেন গুনগান শুনাতে। যতই হোক আপনি আমার বড়, তার উপর মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা, কিছু তো সম্মান দিতেই হয়। তাই নাহয় একটু শুনলামই আমার গুনগান।”

ভদ্রলোক দর্শিনীর গা ছাড়া ভাব দেখে ক্ষানিকটা ভড়কালো। এপাশ-ওপাশ হাতড়ে কিছু বাক্যের সমাহার সাজিয়ে অস্পষ্ট ভাবে বললো,
“একটা নারীর সম্পদ আর সম্মান কিন্তু তার চরিত্র। মেয়ে হিসেবে সেটা তোমাদের মাথায় রাখা উচিত।”

“আচ্ছা! চরিত্র কেবল নারীদেরই সম্পদ? পুরুষদের কিছু না, তাই না? তাই বুঝি পুরুষরা নিত্যনতুন রটছে নারীদের সম্মান লুটার ইতিহাস! বাহ্। আপনার কাছে অন্তত এরকম দৃষ্টিভঙ্গি আশা করি নি, কাকাবাবু।”

ভদ্রলোকের ভদ্রতায় যেন কিছুটা কালি ছিটকে দিলো দর্শিনী। ভদ্রলোক আর কিছু বললেন না, কিছুক্ষণ নিরব থেকে পথ ধরলেন চলে যাওয়ার। হয়তো চক্ষু লজ্জা লুকানোর চেষ্টা।

হিমাদ্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দর্শিনীও ফিরছে বাড়ির পথে। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। শরীরের অবসাদের অবসান প্রয়োজন। আর কত!

_

ভীষণ ক্লান্ত, নিরেট একটা অপরাহ্ন কাটানোর পর দর্শিনীর শরীরটা ফুরফুরে। ঘরের লাইট বন্ধ করা, বাহিরেও সন্ধ্যা ঝিমিয়ে রাত এসেছে, কখনো ঝিঁঝি ডাকছে, কখনো বা ডাহুক। ভালো লাগছে অন্ধকারটা দর্শিনীর, কেমন যেন একটা শীতল শীতল ভাব। গবাক্ষ গলিয়ে কিছু অস্বচ্ছ জোৎস্নার আলো লুটোপুটি খাচ্ছে দর্শিনীর ঘরের মেঝেতে। ঘর নয় যেন স্মৃতির পাতায় ঝিমিয়ে থাকা কিছু গোপন ঝাপসা সুখের রাজ্য।

ভারী শরীরটা টেনে ধীর গতিতে বিছানা ছাড়ে সে। এক পা দু’পা করে হেঁটে ঠিক পঞ্চম পায়ের পদক্ষেপ টা রাখে জোৎস্না ভরা মেঝেতে। শিরশির করে উঠে শরীর। মনে হলো জোৎস্নার স্রোত জাপ্টে ধরলো সুন্দর, শুভ্র, মোলায়েম পা গুলো। মাটির মাঝে জোৎস্নার রঙ মিলে কেমন অদ্ভুতে এক রঙ সৃষ্টি হয়েছে, যে রঙ দেখলে তৃপ্তি মেলে।

দর্শিনী খিল খিল করে হাসলো। কত দিন পর এমন করে হাসলো সে! হাসতে হাসতেই স্থির,অচঞ্চল পা গুটিয়ে বসে পড়লো মাটির মেঝে খানায়। আজ একটু জোৎস্নার স্নান হয়ে যাক? আজ একটু নাহয় দুঃখ উড়ানোর গল্প লেখা যাক?

এক, দুই, তিন করে খুব নিরবে কিছু মিনিট অতিক্রম হলো। সশব্দে বেজে উঠলো দর্শিনীর মুঠোফোন। দর্শিনী আগ্রহ দেখালো না ফোনটা তোলায়। বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে মুঠোফোন তার চিৎকার বন্ধ করলো। মিনিট এক পেরুতেই আবারও সশব্দে বেজে উঠলো সে নতুন উদ্যমে। না চাইতেও দর্শিনী উঠলো মাটি থেকে। আলসে ভঙ্গিতে ফোনটা উঠিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই জ্বলজ্বল করলো স্মৃতির পাতার খুব আদুরে নামটা, ‘তৃণশয্যা’।

দর্শিনী ভেবে পায় না, এই মেয়েটার এমন রোমাঞ্চকর নাম রাখার কারণ কী? মেয়েটা আগাগোড়া পুরোটাই যেন খোলা বইয়ের মতন। যার যেমন ইচ্ছে, সে তেমন করেই বুঝতে পারবে। তবুও কত রহস্যময় নাম সে নারীর!

এবার ফোনের রিং কাটার আগেই রিসিভ করলো দর্শিনী। ফোন রিসিভ হতেই অপর পাশ হতে করুণ স্বরে মেয়েটা বললো,
“বিয়েটা এগিয়ে আনা হয়েছে, প্রিয়দি। পরশু দিনই বিয়ে। আসবে না?”

হঠাৎ এমন কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো না দর্শিনী। সে তো ভেবেছে এমন একটা বিরূপ ঘটনা হয়তো তৃণার বিয়েটা আটকাতে পারবে, অথচ অবস্থা আরও বেগতিক!

তৃণার মিহি স্বরে আবারও ধ্যান ভাঙলো দর্শিনীর। মেয়েটা কাঁদছে না তবে অবসন্ন স্বরে বলছে,
“আমার তো জীবিত ভাবে মৃত্যুর সুযোগ এসেছে। দেখবে না সে মৃত্যু প্রিয়দি? লাল কাপড়ের কাফন দেখেছো কখনো! আমার বিয়ের বেনারসি টা আমার লাল কাপড়ের কাফন। সব কাফন কি আর সাদা হয় গো! আর না সব মৃত্যু চোখে দেখা যায়। আসবে না আমার জাঁকজমকপূর্ণ মৃত্যু দেখতে?”

দর্শিনীর বুক কাঁপলো। নিউরনে ছড়িয়ে গেলো কিছু চঞ্চল আতঙ্ক। উৎকণ্ঠিত হলো তার মস্তিষ্ক, কণ্ঠ কেঁপে উঠার পরেও সে বহু কষ্টে স্বান্তনার বাণী পাঠ করলো,
“কাঁদছিস কেনো তৃণা! আমরা তো আছি। কিছু একটা ঠিক ব্যবস্থা করে নিবো।”

“কিছুই করতে পারবে না দি,কিছুই না। আমি আর আশাও রাখছি না। কি আর হবে আশা রেখে? বাবার বিশাল চ*ড়,থাপ্পড় ছাড়া কিছুই যে জুটবে না। আমার কেবল মায়া হচ্ছে দৃষ্টান্তের জন্য। ছেলেটা ভালোবেসে কী নিদারুণ ঠকেই না গেলো! সে তো ভালোবাসতে চায় নি, এই আমি, আমি বাধ্য করেছিলাম তাকে ভালোবাসতে। তাকে ভরসা দিয়েছিলাম, ভালোবাসলে কেউ ছেড়ে যায় না। অথচ আমি ছেড়ে যাচ্ছি। আচ্ছা প্রিয়দি, আমি কী তবে ভালোই বাসি নি?”

শেষের দিকের কথাটা বলার সময় কাঁপলো তৃণার কণ্ঠটা। মেয়েটা কী কান্না গিলে ফেলার চেষ্টা করলো? মেলায় একবার তাকে মাটির পুতুল কিনে দেওয়া হয়নি বলে দশ বছরের কিশোরী ঠোঁট ফুলিয়ে সে কি কান্না! অবশেষে তার গগণ ফাটানো কান্নার জন্য তাকে পুতুল কিনে দেওয়া হয়েছিলো। অথচ সেই মেয়েটা আজ মানুষ হারিয়ে ফেলার আতঙ্কে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে না বরং কান্না গিলে ফেলছে! মেয়ে মানুষ এমন হুট করে কীভাবে বড় হয়ে যায়? কান্না গিলে ফেলার মতন বড় না হলেই তো পারে। আকাশ-পাতাল উজাড় করে চিৎকার করে কান্না করে যদি বড় বেলাতেও আবদার করতো তাহলে হয়তো ছোট বেলায় পুতুল কিনে দেওয়ার মতন বড় বেলার আবদার গুলোও পূরণ হতো। হতো না?

বিরাট এক প্রশ্ন উত্তর বিহীন ঘুরে বেড়ালো দর্শিনীর মস্তিষ্কে। সময়ের বিবর্তনে সবই বদলায়, ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করা কিশোরী বদলায়, কিশোরীর বায়না পূরণ করা বাবা-মাও বদলায়। তাই হয়তো ছোট বেলায় আবদারের পুতুল পেলেও বড় বেলায় ভালোবাসার মানুষটা পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না।

তৃণা ফোন কেটে দিয়েছে মিনিট দশ তো হবেই কিন্তু দর্শিনী ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। কি করবে, কি করবে ভেবেও কিছু করার সুযোগ পেলো না। স্মৃতির পাতায় অগোছালো ভাবনা মেলতেই হঠাৎ তৃণার বলা কথাটা তার মস্তিষ্কে শিহরণ জাগালো। ‘ভালোবাসলে কেউ ছেড়ে যায় না’। দর্শিনীর মাথায় প্রশ্নরা আঁকিবুঁকি আঁকলো, সত্যিই ছেড়ে যায় না! অথচ এক আকাশ ভালোবাসা থাকা শর্তেও তো নিপা বৌদি ছেড়েছিল দৃষ্টান্তকে, সে ছেড়েছিল বিপ্রতীপকে। তাহলে কী কথাটা ভুল? হ্যাঁ, ভুল। বাস্তবতার কষাঘাতে কত ভালোবাসাই পিষে যায়, তাই বলে তাদের ভালোবাসায় প্রশ্ন তোলার সাধ্যি কারো নেই।

দর্শিনী নিজের ঘর ছেড়ে বের হলো। উঠোনে কত গুলো কাঁঠাল পাতা ছড়িয়ে আছে। আজ মা-বৌদিরা কী সন্ধ্যার উঠোন ঝাড়ু দেয় নি! ভীষণ অবাক ভাব নিয়ে দর্শিনী উঠনো নামলো। হলুদ রঙের বাল্বটাও আজ সদর দরজার সামনে জ্বালানো হয় নি। অদ্ভুত ব্যাপার! এত বছরের জীবনে এমন অলুক্ষণে কাণ্ড সে দেখে নি।

বড়দার ঘর থেকে ধৃষ্টের গলার স্বর ভেসে আসছে। সে বার বার আওড়াচ্ছে, ‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’।

বাড়িতে ধৃষ্ট বাদে আর কারো উপস্থিতি পাওয়া গেলো না। অদ্ভুত ভাবে আজ বাবাকেও দেখা গেলো না। সারাদিনের ক্লান্তিতে খোঁজ নেওয়া হয় নি অথচ এখন কত গুলো ধূসর ভাবনা উড়ে বেড়াচ্ছে।

দর্শিনী বড়দার ঘরে পা রাখতেই দেখলো ধৃষ্ট পড়ার টেবিলে বসে অনবরত দুলে দুলে পড়ছে। বড়দা ডান হাত কপালের উপর ফেলে শুয়ে আছে। বড় বৌদি জামা-কাপড়ের আলনা গুছচ্ছে।

ধৃষ্টের পড়ার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেই ছেলেটা পড়া থামিয়ে দিলো। নিধিও খেয়াল করেছে দর্শিনীকে তবে বিশেষ কোনো হেলদোল দেখালো না।

হঠাৎ ছেলের পড়া শুনতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো প্রদীপ। চোখের উপর হাত রেখেই ধমকের স্বরে বললো,
“পড়ছো না কেন ধৃষ্ট?”

“পিসি মণি এসেছে, বাবা।”

ছেলের কথা শুনে প্রদীপ কপাল থেকে হাত সরালো। বোনকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে উঠে বসলো বহু কষ্টে। পা দুটো অচল প্রায়। তেমন একটা জোর নেই। সারাদিন বাড়িতে শুয়ে বসেই কাটে তার।

দর্শিনী ধৃষ্টের মাথায় হাত বুলিয়ে ভাইয়ের খাটে গিয়ে বসলো। ধীর কণ্ঠে শুধালো,
“শরীর কেমন আছে, বড়দা?”

প্রদীপ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে সহজ সরল কণ্ঠেই বললো,
“ভালো আছি। তোর কী অবস্থা? বিকেলের দিকে তোর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম ঘুমিয়ে আছিস। শরীর ঠিক তো?”

“হ্যাঁ, বড়দা, একদম দারুণ আছে। তুমি ডাক্তার দেখাচ্ছো তো ঠিক মতন?”

প্রদীপের হাসি হাসি মুখ খানে অমাবস্যার দেখা মিললো। হাসি উড়ে গেলো দীর্ঘশ্বাসে। আমতা-আমতা করে বললো,
“তুই বস, আমি বাথরুম থেকে আসছি।”

বড়দার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার ধরণটা ভাবালো দর্শিনীকে। প্রদীপ বের হয়ে যেতে যেতেই নিধি মুখ খুললো, দর্শিনীর তখনকার করা প্রশ্নের মুখ ঝামটি মারা উত্তর দিয়ে বললো,
“ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য তোমার বড়দার আছে নাকি নেই সে খবর রাখো? কত মাস যাবত ঘরে বসে আছে, ডাক্তার দেখানোর টাকা টা কে দিবে শুনি? সবাই কী আর তোমার মতন সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়!”

বড় বৌদির কথার ধরণে অবাক হলো দর্শিনী। অবাক কণ্ঠে বললো,
“বড়দার কাছে ডাক্তার দেখানোর টাকা নেই!”

নিধি হাতের জামাটা ছুঁড়ে ফেললো। রুষ্ট কণ্ঠে বললো,
“টাকাটা থাকবে কীভাবে শুনি, অকেজো মানুষের টাকা কোথা থেকে আসবে? কে দিবে টাকা?”

“কেনো, বাবা দিবে।”

দর্শিনীর উত্তরে হাসলো নিধি। তাচ্ছিল্য করে বললো,
“অকেজো ছেলে এবং সে ছেলের স্ত্রী-সন্তানকে পালছে উনি, আর কত দিবে? খোঁজ তো রাখো না সংসারের, জানবে কীভাবে? বাবাকে আমি দোষ দিবো না। সুমনেরও দোষ নেই, সংসারের পুরো দায়িত্ব তার ঘাড়ে। কিন্তু তোমার মা, মানে আমার শাশুড়ী, তার মতন মহিলা দুটো হয় না। যখন তুমি অসহায় ছিলে তখন তোমাকে কথা শুনাতে সে ভাবে নি। আজ আমরা অসহায়, আমাদের সাথে অগোচরে কত কিছুই হচ্ছে জানবে না তা কেউ। আমার ছোট ছেলেটা, আগে দুধ খেয়ে ঘুমাতো রোজ। এখন দুধ খেতে পারে না, দাম বেড়েছে নাকি, কেবল সকাল-বিকেল চা খাওয়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই আনা হয় এখন। মাছের বড় টুকরো এখন নিপা পায়, নিপার দোষ নেই, মেয়েটা এসব কুট কাঁচালিতে নেই কিন্তু এগুলো শাশুড়ি মায়ের কাজ। নিপার স্বামী রোজগার বেশি করে তাই সে মাছের টুকরো বড় পায়। সংসারের রীতিমতো দুই-তৃতীয়াংশ কাজ আমিই করি। স্বামী সংসারে টাকা দেয় না, তাই শ্রম দিয়ে সব ঋণ কমাতে চাচ্ছি। সেসবের ধারণা আছে তোমার কাছে? নেই। তুমি যদি বাবাকে জায়গা নিয়ে উসকানি না দিতে আজ আমার স্বামী পঙ্গু হতো না আর আমরাও এমন ভাবে থাকতাম না। তোমাকে আমি ক্ষমা করবো না কখনো।”

প্রথম কথা গুলো দর্শিনীর মনে ধিক্কার তুললে। সত্যিই সংসারের খবর সে রাখে না, অথচ কত কি ঘটে যাচ্ছে সংসারে! মা কখনো ভালো হবে না? কোন সন্তানের টাকা বেশি, কোন সন্তানের টাকা কম, এসব দিয়ে আজকাল সম্পর্ক মাপা হয়! কিন্তু নিধির বলা শেষ কথাটার তীব্র প্রতিবাদ করলো সে, কঠিন কণ্ঠে বললো,
“তোমাদের সাথে এমন হচ্ছে আমি জানতাম না। কিন্তু এসবের দায়ভার কখনোই আমার না। ভুল কিছু ধারণা নিয়ে আমাকে দোষারোপ করবে আর আমি মেনে নিবো তা না বৌদি। চোখ খুলে অন্তত বিচার টা করো।”

নিধি উত্তর দিলো না তবে কান্না করলো। দর্শিনীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। দর্শিনী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। ততক্ষণে প্রদীপও দরজায় এসে উপস্থিত হয়েছে। দর্শিনী মাথা নামিয়ে নিজের ঘরে দিকে পা বাড়ালো। প্রদীপ নিধিকে এই প্রথম বকলো না। কেবল জড়িয়ে ধরলো খুব নিরবে। নিধির শেষ কথা টুকু বাচ্চামো হলেও প্রথম কথা গুলো মিথ্যে না। টাকার কাছে মাঝে মাঝে মা-সন্তানের ভালোবাসা ও হার মানায়। নিজেকে না দেখলে বুঝতোই না।

ছোট্ট ধৃষ্ট কি যেন বুঝলো, হুট করে সেও বাবা-মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরলো। ক্রন্দনরত মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“আমরা আবার কবে আগের মতন হবো, মা?”

অবুঝ ছেলের উত্তর দিতে পারে না মা। কেবল হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। দর্শিনী দূর হতে এই পরিবারটাকে দেখে যায় নিরলস। কি অসহায় মানুষ গুলো! খোঁজ না নিলে তো জানাও হতো না।

_

চারদিকে সন্ধ্যা বিরজমান। একটু পর তৃণার গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান। সবাই যখন সে অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত, তখন দর্শিনীর গালে সপাটে চ*ড় পড়লো। কিন্তু কেনো!

#চলবে

[গল্প কেনো নিয়মিত দিচ্ছি না অভিযোগ পাঠকমহলের। জানিয়েছি আমি অসুস্থ, অনেকেই তখন বললো, এত গ্যাপ দিলে নাকি গল্প পড়ার ইচ্ছে থাকে না। অবাক হলাম আমি, হাসলামও। একজন মানুষের অসুস্থতার চেয়েও তাদের ইচ্ছে বড়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ অব্দি আমি অসুস্থ। নানান রকমের রোগ। যাই হোক সেই কথা থাক। অসুস্থতার কথাও বলতে ভালো লাগে না, লজ্জা হয়, তবুও আপনাদের বলতে হয় নিয়মিত গল্প দিতে না পারার ব্যর্থতার কারণ জানানোর জন্য। কিন্তু আপনাদের আচরণে হতাশ আমি। আজ খোলামেলা একটা কথা বলি, পাঠকদের আমি অনেক ভালোবাসি। তাই বলছি, আপনাদের এত অপেক্ষা আমার খারাপ লাগে। এত অনিয়ম করার ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও করে ফেলছি, তাই আপনারা আপাতত আমার এই গল্পটা একদম শেষ হওয়ার পর পড়বেন দয়া করে। কারণ আমি এখনো অসুস্থ, নিয়মিত হতে পারবো কিনা জানিনা, ক্ষমাপ্রার্থী তার জন্য। অসুস্থতার উপর আমার হাত নেই, তাকে আটকাতে পারবো না কিন্তু আপনাদের তো বলতে পারবো। যাদের কাছে একজন মানুষের থেকেও গল্প বড় তারা প্লিজ শেষ হওয়ার পর পড়বেন। ভালোবাসা নিবেন আর দোয়া রাখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here