গল্পঃ রংবদল
পর্বঃ০৪
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
শর্মিলা রিনির মৃত্যুর খবর শুনে আমাকে কিছু না জানিয়ে একা একাই শর্মিলা রওনা দেয়..
শর্মিলা বেরুনোর সাথে সাথে মা ফোনে জানায়। আমি তখন রাফির বাসায়।মায়ের কথা শুনে শর্মিলাকে ফোন দিই। কিন্তু শর্মিলা বারবার আমার কল কেটে দেয়।আমি তো দুশ্চিন্তায় আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। ইচ্ছে করছিল ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারি।
আমার বন্ধু রাফির কাছে জানতে পারি নিহাল নাকি শর্মিলার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ওরা নাকি জানতে পেরেছে শর্মিলাকে আজ আমি বিয়ে করেছি। বিয়ে জিনিসটা কখনোই গোপন করা যায় না। খবর একভাবে না একভাবে ছড়ায়।
— আপনি শর্মিলাকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু এই ঘটনাটা আমি জানতাম না। অনেক খবর নিয়েছি আপনার সম্পর্কে বাট বিয়ের ব্যাপারটা শুনি নি।(ঊর্মিলা)
–হ্যাঁ, কাজী অফিসে দশ- বারোজন ফ্রেন্ডের সামনে আমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম। এখনো আমার আত্মীয়-স্বজনরা জানে না যে আমি বিয়ে করেছি। আমার বাবা-মা শুধু জানে আমি বিয়ে করেছি।
–ওহহ,আচ্ছা। জ্বি, ঘটনাটা বলুন।
— নিহালের ধারণা ছিল রিনির বেস্টফ্রেন্ড শর্মিলা, রিনি মৃত্যুর আগে নিশ্চয় শর্মিলাকে কিছু বলে গেছে,হয়ত নিহালের ফোনটাও দিয়ে গেছে।
.
শর্মিলাকে আবারও কল দিলাম,ও রিসিভ করলো না। রিসিভ করার আগপর্যন্ত কল দিতেই থাকলাম। অবশেষে আমার কল রিসিভ করল,আমি ওকে কিছু বলার আগেই ও আমাকে বিরক্তিভরা কন্ঠে বলল,
–সমস্যা কি তোমার? আমাকে বিরক্ত করছো কেন?
–তুমি কোথায় শর্মিলা? ফোন রিসিভ করছিলে না কেনো?? তোমার জন্য আমার কত চিন্তা হচ্ছিল সেটা কি তুমি জানো? (রাগী সুরে)
–থাক,আমার জন্য এত দরদ দেখাতে হবে না। আমি রিনিদের বাড়িতে এসেছি সায়মার সাথে।
রাখছি এখন।
.
শর্মিলার কথা শুনে আমি আবার রিনিদের বাড়িতে গেলাম। শর্মিলা ওর আরেক বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমারও অনেক খারাপ লাগছিল। সুইসাইড রিনির পরিবার আশেপাশে ভালো করে খবর ছড়ানোর আগে-আগেই ওর দাফন করে ফেলল।পুলিশ আসলে নাকি ঝামেলা হতে পারে।
দাফনের পর প্রায় রাত দশটার দিকে আমি শর্মিলাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হই।গাড়ীতে শর্মিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে রিনির জন্য অনেকক্ষন কান্না করে।
রাত প্রায় এগারোটার দিকে বাড়িতে ফেরার পরে বাবার সাথে আমার বিয়ে নিয়ে অনেক তর্কাতর্কি হয়। পরে বাবা শর্মিলার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে আমাদের রুমে পাঠিয়ে দেয়।
.
রুমে এসে শর্মিলা তাড়াতাড়ি রিনির দেওয়া খামটা খুলে। খামের ভিতর একটা চিঠি পায়। চিঠিতে শর্মিলাকে নিয়ে অনেক আবেগীয় কথা লিখা ছিল।
যদিও অতকথা আমার মনে নেই।কিন্তু চিঠিতে রিনি রায়হান আর নিহালের শাস্তি দিতে বলেছিল। চিঠির নিচে মোবাইলের পার্সওয়াডটা দেওয়া ছিল। শর্মিলা তাড়াতাড়ি ফোনটা চালু করে পাসওয়ার্ড দিয়ে মোবাইলটা আনলক করে।ভিতর থেকে সব ভিডিও ডিলেট করে দেয়। ফোনটা ঘাটাঘাটি করতে করতে শর্মিলা নিহালের ই-মেইলে ওর কুকীর্তির অনেক তথ্য পেয়ে যায়। ওদের মাদকের ব্যবসা, নারী পাচার, আরো অনেক কিছুর। শর্মিলা সিদ্ধান্ত নেয় এইসব তথ্য র্যাবকে জানাবে। আমিও ওর কথায় সায় দেই।
সে রাতে আমাদের দুজনের আর তেমন কথা হয় না।
.
পরদিন সকালে প্রায় দশটায় আমার ঘুম ভাঙে তাকিয়ে দেখি রুমে শর্মিলা নেই। ভেবেছি হয়ত শর্মিলা মায়ের কাছে গেছে। কিন্তু মায়ের রুমে গিয়েও দেখি শর্মিলা নেই। মায়ের কাছে জানতে পারি ভোরের দিকে বেরিয়েছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে। গুরুত্বপূর্ণ কাজটা কি সেটা আমি বেশ ভালো করেই জানি।ও নিশ্চয়ই মোবাইলের প্রমানের ভিত্তিতে নিহালের নামে মামলা দায়ের করতে গেছে। এত সকালে গেল কেন সেটাই বুঝতে পারলাম না,আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেই পারত।অবশ্য গতকাল থেকে আমার ওপর শর্মিলা রাগ করে আছে। ওকে ফোন দিলাম, কল রিসিভ করলো না।আমি কিছু না ভেবেই রেডি হওয়া শুরু করি।কারন শর্মিলা হয় ওদের বাড়িতে যাবে নয়ত থানায় যাবে। এর মাঝেই শর্মিলা নম্বর থেকে কল আসলো, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
–তোর নয়াবউয়ের তো কলিজা ভরা সাহস রে আবীর!আমার নামে মামলা করতে যাচ্ছিল। তাই তোর বউটাকে তুলে এনেছি।
যেই ভয়টা পেয়েছি ঠিক সেটাই হলো।শর্মিলা ওরা তুলে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসলো,রিনির মতো শর্মিলার সাথেও যদি ওরা এমন করে।না, না তার আগেই কোন ব্যবস্থা করতে হবে।
–কিরে আবীর? ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলি নাকি?(নিহাল)
–দেখ,শর্মিলার কোন ক্ষতি তুই করবি না। তোর যত শত্রুতা আমার সাথে, ও তো কিছু করে নি।
— তোর কোনো উপদেশ চাই নি। তোর প্রানপ্রিয় বউকে এখনো কিছু করি নি।তুই আমার আস্তানায় তোর সামনেই যা কিছু করার করি।
–ঠিকানা দে,আমি এখুনি আসব।
–আরে এতো তাড়াহুড়ো করছিস কেনো? রিল্যাক্স..
আর খবরদার পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করবি না; কাউকে নিয়েও আসবি না।তাহলে এর পরিণতি ভালো হবে না
ওর গাঁ জ্বালানো কথা শুনে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল।ওর দেওয়া এড্রেসে আমি তাড়াতাড়ি রওনা দিলাম।
আমি রাফি আর তামিমকে কল করে পরামর্শ চাই এই মুহূর্তে কি করা উচিত? ওরা আমাকে নিহালের দেওয়া এড্রেসে একা যেতে নিষেধ করে। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরতে পারছিলাম না। আমি একাই গেলাম।
.
নিহালের আস্তানায় যাওয়ার পর ওর লোকেরা নিহালকে ফোন দেয়। নিহাল তখন ওদের আস্তানায় ছিল না। আমাকে ওর লোকেরা একটা রুমে নিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখে। রায়হান এসে আমাকে ইচ্ছেমত স্টিক দিয়ে পেটায়।
পুরো শরীরে কিছুক্ষণের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে যায়।পায়ে প্রচন্ড ব্যথা করছিল, নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছে দম আটকে এখানেই মরে যাব। আমাকে মেরে শর্মিলাকে আমার সামনে নিয়ে আসে ওরও হাত-পা,মুখ বাঁধা। ওকে অক্ষত অবস্থায় দেখে আমার দেহে প্রাণ ফিরে আসে। রায়হান আমার দিকে কুটিল হাসি দিয়ে বলে,
–মন ভরে দেখে নে। একটু পর নিহাল ভাই আসছে। আজকেই তোদের দুইজনের জীবনের শেষদিন।
বলে ও চলে গেলো।
শর্মিলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে।হয়ত কিছু বলতে চাইছে। যতক্ষণ আমরা একসাথে ছিলাম ততক্ষণ আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
.
অনেকক্ষন পরে রায়হানের সাথে নিহাল আসলো। আমাদের দেখে কুটিল হাসি দিয়ে বলল,
–প্রাণের প্রিয় বউকে নিতে নিজের জানের মায়া না করে একাই চলে এলি? বাহ! আজকে তোর বউয়ের হাতেই তোর মরণ লিখা।
বলে শর্মিলার হাত-পা খুলে দিয়ে ওর হাতে একটা বড় ছুরি দিয়ে আমাকে মা*রতে বলে৷
শর্মিলা ছুরিটা হাতে নিয়েই সরাসরি নিহালের দিকে আক্রমন করে। নিহাল যেন এমন আক্রমণের জন্য রেডিই ছিল। ও খপ শর্মিলার হাত থেকে ছুরি নিয়ে যায়। তারপর ওকে অনেক জোরে কষে একটা থা*প্পড় মারে। থা*প্পড় খেয়ে শর্মিলা ফ্লোরে পড়ে যায়, ওর চুলগুলো ধরে এমন জোরে টান দেয় যে শর্মিলার মাথার অর্ধেক চুল ছিড়ে নিয়ে আসে। ব্যথায় শর্মিলা চিৎকার দেয়, নিহাল ওর বুট জুতা দিয়ে ওর মুখে চেপে ধরে যাতে আওয়াজ বের না হয় ওর মুখ থেকে তারপর হাতের ছুরি দিয়ে শর্মিলাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।
— জানতাম তুই এই কাজটাই করবি। খুব বড় কলিজা তোর, নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস তাই না? আমার নামে মামলা করতে চাস ; এখন আবার আমাকে খু*নও করার চেষ্টা করিস।আজকে তোর বড় কলিজা কেটে ছোট করব। তোকে তো কোনভাবেই বাঁচতে দিব না তুই আমার গোপন সব খবর জেনে গেছিস।
শর্মিলার রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। রক্ত দেখে আমার মাথা ঘোরাচ্ছে ।। শর্মিলার শ্বাস জোরে জোরে ওঠা-নামা করছে,ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারলাম। আমারও ওর জন্য অনেক খারাপ লাগছিল। শর্মিলাকে রেখে নিহাল এবার এলো আমার কাছে, এসে আমার বুক বরাবর লাথি দিল।আমি ছিটকে মেঝেতে পড়লাম। ও আমার চুল ধরে শর্মিলার কাছাকাছি নিয়ে বলল,
–দুজনেই জীবনের শেষ দেখা দেখে নে,একটু পর তোদেরকে চিরবিদায় দিব। আমার গোপন খবর জানা লোকেদের কখনোই আমি বাঁচিয়ে রাখি না।
.
শর্মিলা চোখ বন্ধ করে রক্তাক্ত অবস্থায় একপাশে শুয়ে আছে। শুধু নিঃশ্বাসটুকু আছে। আমি কয়েকটা ডাক দেওয়ার পর ও চোখ খুলল। ঠোঁটগুলো কাঁপছে হয়ত কিছু বলার চেষ্টা করছে। শোনা যায় না এমন কন্ঠে শর্মিলা আমাকে বলল,
–আমাকে মাফ করে দিও আবীর।তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি।
অনেক করে ওর বাম হাতটা স্পর্শ করি, ও আমার দিকে তখনো করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল।বুঝতে পারি ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি কিছু বলার আগেই রায়হান শর্মিলাকে লাথি দিয়ে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
–আহ! কি মনোমুগ্ধকর সিনেমা চলছে এখানে।
নিহাল কিছু একটা তো ভাই করেন।
নিহাল যখন দেখলো শর্মিলা তখনো বেঁচে আছে, শর্মিলা পানি খাওয়ার অনেক আকুতি জানাচ্ছে। নিহাল হা হা করে হেসে বলে,
— তোমাকে এই জন্মের মত পানি খাওয়াবো।
বলে শর্মিলার গলায় পাড়া দেয়।শর্মিলার জিহবা বেরিয়ে আসার উপক্রম তখন নিহাল ওর মুখের মধ্যে এসিডের ঢেলে দেয়।
শর্মিলার গো/ঙ্গা/নির আওয়াজে চারপাশের বাতাস যেন বাড়ি হয়ে আসছিল।আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না,এগুলো দেখার আগে ম/র/ণও মনে হয় ভালো। বারবার মনে হচ্ছিল জ্ঞান হারিয়ে ফেলব। ওরা শর্মিলার পুরো শরীরে এসিড ঢেলে দেয়। মুহুর্তেই শর্মিলার দেহ পুড়ে ঝলসে ভয়ংকর হয়ে গেছে। ওর শরীরের মাংসগুলো যেন পুড়ে খসে যাচ্ছে।শর্মিলা তখনো বেঁচে ছিল।। আমি ভয়ংকর এই দৃশ্য আর সহ্য করতে পারি না। এরমধ্যেই নিহালকে পরিচিত কেউ ফোন করে জানায়, আমার বন্ধুরা চলে এসেছে পুলিশ নিয়ে।তখন ওরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সেদিন আমি বেঁচে যাই হয়ত ওই নরপিশাচগুলোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
.
আমাদের দুইজনকে উদ্ধার করতে আমার বন্ধুরা পুলিশ নিয়ে আসে। আমাদের দুইজনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝ রাস্তায় শুনি শর্মিলা আর নেই। তখন আর সহ্য করতে পারি নি।সেখানেই জ্ঞান হারাই। তিনদিন পরে আমার জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরার পরে আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। চোখের সামনে এতবড় একটা ঘটনা আমি সহ্য করতে পারি নি। একসপ্তাহের মত আমি কারো সাথে কোনো কথা বলি নি। আমার এমন অবস্থা দেখে আমার মায়েরও পাগল হওয়ার দশা হয়ে যায়। একসপ্তাহ পরে আমি তামিমকে শর্মিলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি ওরা আমায় কিছুই বলে না।
ঘুমাতে পারতাম না বারবার শর্মিলার সাথে ঘটা কাহিনিগুলো ভেসে উঠত। জেগে থাকলেও যেন এগুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠত। আমাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো। দুইটা মাস আমি মানসিক ট্রমার মধ্যে পাড় করি। বাবা আমার নিরাপত্তার জন্য বাড়িতেই আমার চিকিৎসা করান। সকলের প্রচেষ্টায় আমি আবার একটু একটু করে স্বাভাবিক হই। কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমি ভীষণ জেদী হয়ে উঠি।
সুস্থ হয়ে শর্মিলার মৃ/ত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরপর ওরা দুই বান্ধবীর মৃ/ত্যুতে বিশেষ করে শর্মিলার মৃত্যুতে ফেসবুকে অনেক তোলপাড় হয়। শর্মিলার মৃ/ত্যুর কথা শুনে তোমার হার্টের রোগী বাবা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদিকে নিহালের বাবা প্রচুর টাকা দিয়ে শর্মিলার হ/ত্যার ঘটনাটাকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। তোমার পরিবার থেকেও তেমন কোন কঠোর স্টেপ নেওয়া হয় নি।
তোমার পরিবার, আত্মীয়- স্বজন সকলে আমার দিকে আঙুল তোলে, তারা ভেবেছে আমিও হয়ত নিহালের সাথে কোন না ভাবে শর্মিলার হ/ত্যায় জড়িত। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমান পায় নি। এখনো হয়ত তোমার পরিবার এটাই ভাবে।
একমাস ধরে আমি সুস্থ হয়েছি। ভালো ছেলে হয়ে সমাজে বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে খারাপ বানিয়েছে। আমিও এখন নিহালের মতো মাফিয়া টিম গঠন করেছি। যদিও আমি ওর মত নারী-শিশু পাচারকারী না,ড্রাগের ব্যবসাসহ কোনো অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত না। আমার মাফিয়া টিম গঠনের উদ্দেশ্য রিনি-শর্মিলার মতো নির্দোষ দুটি জীবনকে কেঁড়ে নেয়ার জন্য নিহালকে শাস্তি দেওয়া।
চোখের পানি মুছে আবীর কথাগুলো বলল।
–আমিও আমার ওদেরকে শাস্তি দিতেই এদেশে এসেছি। আশা করি, দুজন মিলে একসাথে কাজ করলে নিহালকে ধরতে পারব। (ঊর্মিলা)
–জানেন যেদিন আপনাকে দেখেছি সেদিন আমার মনে একটাই প্রশ্ন জেগেছিল, কোনোভাবে কি শর্মিলা বেঁচে আছে? কল্পনা করেছি হয়ত কোনভাবে বেঁচে গিয়েছে, এখন হয়ত নিহালের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। কল্পনা করা যত সহজ বাস্তবতা তার চেয়ে কঠিন। বাড়ি এসে যাকে আপনার কথা বলেছি সেই আমাকে পা/গল বলেছে।
বলাটাই স্বাভাবিক কারন সকলে জানে শর্মিলা যে বেঁচে নেই।।
— আমার ওর কথা মনে পড়লে ভীষণ কষ্ট হয়।ওর সাথে সেই যে ছয়বছর আগে বিদেশে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছিল এরপর আর দেখা হয় নি। আর কখনো দেখতেও পাব না। আমরা দুজনে আর কখনোই খুনসুটিতে মেতে উঠতে পারব না।
— যাইহোক, এখন ওর টপিকে কথা বলা অফ করি। সেই টপিকে গেলে অনেক বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়ি।মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়।
–আচ্ছা, ঠিক আছে।
কাহিনি শুনতে শুনতে তো অলমোস্ট দুপুর তো হয়েই গেলো। লাঞ্চ করে যাবেন।
ঊর্মিলার কথা শুনে আমার বেশ ভালো লাগলো।কারণ ওর সাথে যতক্ষণ সময় কাটাই ততক্ষণ আমার অনেক ভালো লাগে।মনে হয় শর্মিলার সাথেই আছি। আমি হ্যাঁ বলার আগেই আরাফ বলে উঠল,
— কিন্তু আজকে তো আমাদের বাইরে লাঞ্চ করার কথা!
আরাফের কথা শুনে আবীর চলে গেল। বলা যায় একটু মন খারাপ করেই।
.
আবীর চলে যাওয়ার পর ঊর্মিলা আরাফকে জিজ্ঞেস করে,
–তুই আবীরের সামনে মিথ্যাকথা বললি কেন? আজকে তো বাইরে লাঞ্চ করার কোন প্ল্যানই নাই।
(ভ্রু কুঁচকে)
–ওকে বাড়িতে পাঠানোর জন্য মিথ্যা বলেছি।সেই সকালে এসেছে, এখন আবার লাঞ্চ করার থাকবে দেখা যাবে রাতে বলবে একবারে ডিনার করেই যাই।
ওকে আমার ভালো লাগে না।তোর দিকে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। ওর চাহনিতে অন্য কিছু আছে।
–তুইও না আরাফ। খালি মানুষকে সন্দেহ করিস।কই আমি তো একবারও আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম না?
— সন্দেহ না ঊর্মিলা, আমি যা বলছি সত্যি।
শোন আমি একমাত্র তোকে ভালোবাসি। তোর দিকে কে কেমন করে তাকায়? সব আমি খেয়াল করি।
–তোর ভালোবাসা নিয়ে এখন আমার সামনে থেকে যা। যত্তসব! বেস্টফ্রেন্ড ভেবেছিলাম তোকে,তুইও এখন এসেছিল ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে। (রাগী সুরে কথাগুলো বলল ঊর্মিলা)
.
.
এরপরের দিনগুলোতে ঊর্মিলা,,আবীর নিহালকে ফাঁদে ফেলার এক সুক্ষ্ম পরিকল্পনা করে। যেখানে ঊর্মিলার জীবনেরও রিস্ক রয়েছে..
#চলবে