রংবদল পর্বঃ০৫

0
171

গল্পঃ রংবদল
পর্বঃ০৫
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

ঊর্মিলা আর আবীর নিহালকে ফাঁদে ফেলার এক সুক্ষ্ম পরিকল্পনা করে। যেখানে ঊর্মিলার জীবনেরও রিস্ক রয়েছে..
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঊর্মিলাকে আগে নিহালের কাছে পাঠানো হবে তারপর হবে আসল খেলা!কিন্তু আরাফ কোনভাবেই ঊর্মিলাকে নিহালের কাছে পাঠাবে না। এ নিয়ে আবীরের সাথে আরাফের সাথে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঊর্মিলা আবীরকে চলে যেতে বলে। আবীর চলে যাওয়ার পরে ঊর্মিলা আরাফের সামনে দাঁড়ায়।

–কি সমস্যা তোর আরাফ? আমাকে একটু খুলে বলবি?

–ওই আবীরই প্রধান সমস্যা। ওকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না।ও তোকে বিপদে ঠেলে দিতে চায়। না হয় ও তোকেই কেন নিহালের কাছে পাঠাবে, আর কেউ কি নেই? এতো রিস্ক নিয়ে আমি আবীরের কথা শুনে তোকে নিহালের কাছে পাঠাতে পারব না।

— মানুষকে এত বেশি সন্দেহ করিস কেন? আবীর আমাকে বিপদে ফেলবে কেনো? ও আমাকে সাহায্য করছে আর আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী এছাড়া কোন উপায় নেই। আমাকেই যেতে হবে।

— আমি তোকে কিছুতেই যেতে দিব না। তোর কোন বিপদ হলে এর দায়ভার কি আবীর নিবে? এই ছেলেটা তোর মাথা খারাপ করে দিচ্ছে তোকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে। ওকে গুন্ডা দিয়ে আমি যদি না পিটিয়েছি, তাহলে আমার নামও আরাফ না।

— শোন আরাফ লিমিট ক্রশ করবি না। বন্ধু আছিস বন্ধু হয়ে থাক আমাকে নিয়ে তোর না ভাবলেও চলবে। আমি তোর কিছু হই না যে আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে। ভালো-মন্দ বুঝার জ্ঞান আমার আছে। এখন আমার চোখের সামনে থেকে যা।

ঊর্মিলার কথা শুনে আরাফ পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ও কীভাবে পারল আমাকে এতগুলো কথা বলতে? আমি কি শুধুই ঊর্মিলার বন্ধু। ও কি বোঝে না আমি ওকে কতটা ভালোবাসি! ছলছল নয়নে ঊর্মিলাকে ‘সরি’ বলে চলে গেল আরাফ।
.
আরাফ চলে যাওয়ার পরে ঊর্মিলার মনের ভিতর ভীষণ অনুশোচনা লাগলো।আরাফের সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত হয় নি। আমাকে ভালোবাসে বলে আমার ক্ষতি হতে দিতে চায় না বলেই হয়ত আরাফ আমাকে সেখানে নিষেধ করেছে।
এর মাঝেই ঊর্মিলার ফোনটা বেজে উঠল।ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল একটা আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে। কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ বলল,

–আপনি কি সাংবাদিক অর্পিতা মুন?

–জ্বি। কেনো বলুন তো? (চোখেমুখে হালকা দুশ্চিন্তার ছায়া)

–আমার নাম সারা।আপনি আমাকে চিনবেন না।আমি আপনার বিশস্ত কলিগ রাতুল ভাইয়ের কাজিন। ওর কাছে জেনেছি আপনি নাকি নিহালের বিরুদ্ধে প্রমান জোগাড় করছেন? যদি তাই হয়ে থাকে তবে আমি আপনাকে সাহায্য করব। আপনি বিকেলে আমার সাথে দেখা করবেন।

বিনা স্বার্থে তিনি আমায় কেনো সাহায্য করবেন সেটাই বুঝলাম না। এই দুনিয়ায় ভন্ড মানুষের অভাব নেই। তাই কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম,

–আমি রাতুল ভাইয়ার সাথে আগে কথা বলি।তারপর আপনাকে আমি সব জানাচ্ছি।

–হ্যাঁ,নিশ্চয়ই।
.
.
মিলিকে পাঠালাম আরাফকে ডেকে আনতে কিন্তু আরাফ এলো না। কল দিলাম কলও রিসিভ করলো না।বাধ্য হয়ে আমিই গেলাম আরাফের ফ্ল্যাটে। দরজা লক করা ছিল না,তাই সরাসরি ওর বেডরুমে চলে যাই।গিয়ে দেখি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, শুয়ে শুয়ে নিশব্দে কাঁদছে। কখনো কোনো পুরুষ মানুষকে কাঁদতে দেখি নি।মায়ের কাছে শুনতাম পুরুষ মানুষেরা মন থেকে অনেক স্ট্রং হয়, কষ্ট সহজে প্রকাশ করে না। ওর কান্না দেখে আমার নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট লাগছিল,অপরাধী লাগছিল। আমি জানি আমার ওমন ব্যবহারেই ও কাঁদছে। আমি ‘আরাফ’ বলে ডাকতেই ও হকচকিয়ে উঠলো। চোখের পানি তাড়াতাড়ি মুছে হালকা হাসি দিয়ে এমন ভান করলো যেন কিছু হয় নি। আমি না দেখার ভান করলাম।আরাফকে বললাম,

–কিরে! মিলিকে পাঠালাম আমার রুমে যেতে,গেলিনা। কলও দিলাম রিসিভ করলি না।

–এমনিই রে, ভালো লাগছিল না। কোনো দরকার ছিল?

–সরি রে আরাফ! আ’ম রিয়েলি সরি। তোর সাথে তখন অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।

আরাফ আমার হাত দুটো ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

–তুই কেনো আমার মনের কথা বুঝিস না ঊর্মিলা।
ইদানীং তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় লাগে। আমি শুধু তোকে শুধু বন্ধু নয়,বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবি। তুই কি পারবি না আমাকে তোর জীবনের সুখ-দুঃখের সাথী বানাতে? এতদিন বলিনি কারণ যদি তুই আমার মনের কথা শুনে আমার বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিস সেজন্য। কিন্তু আবীরের তোকে অন্য চোখে দেখে,যেটা আমি খেয়াল করে দেখেছি। যেটা আমার সহ্য হয় না। বল না, ঊর্মিলা তুই আমাকে তোর জীবনের সুখ-দুঃখ সাথী বানাবি?

ঊর্মিলা আরাফের কথা শুনে চুপ করে আছে। ও তো সবসময় আরাফকে বন্ধুর চোখে দেখেছে, ঊর্মিলা তো কখনোই আরাফকে প্রেমিক হিসেবে কল্পনাও করে নি। ওর এই মুহূর্তে কি উত্তর দেওয়া উচিত তা জানা নেই!

–কি হলো? কিছু তো বল ঊর্মিলা?

— আচ্ছা, এ বিষয় নিয়ে আমি পরে কথা বলবো।তোর প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।

ঊর্মিলা কথার প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্য বলে,
–সারা নামের একটা মেয়ে ফোন করেছিল আমাকে। ও আমাদের নিহালের ব্যপারে সাহায্য করবে বলছিল। আমার কলিগ রাতুল ভাইয়ার কাজিন। সারার সাহায্য নেওয়া উচিত হবে কিনা ভাবছি?

–রাতুল ভাইয়ের সাথে কথা বলে শিওর হয়ে নে সারা মেয়ে হিসেবে কেমন? (আরাফ)

–ফোন করেছিলাম, রাতুল ভাইয়া বলল যে আমি তাকে যেমন বিশ্বাস করি সারাকেও তেমন বিশ্বাস করা যাবে। সারাও নিহালের ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়। কিন্তু কেনো চায়, সেটা এখনো জানি না। রাতুল ভাইয়া খুলে বলে নি। আজকে বিকালে আমার ফ্ল্যাটে সারাকে আসতে বলেছি।

–রাতুল ভাইয়া যেহেতু বলেছে তাহলে সারাকে বিশ্বাস করাই যায়। বাই দ্য ওয়ে, বিকালে আমি থাকতে পারব না রে, আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তুই একটু কষ্ট করে সামলে নিস।বাড়ি এসে তোর কাছে সবটা শুনব।

–আচ্ছা।
.
.
বিকালে সারা এলো আমার বাসায়। আবীরকেও আসতে বলেছিলাম। আবীরও এলো আমার বাসায়
হালকা গোলাপি রঙের শার্ট আর নীল জিন্স পড়ে,সাথে চুলগুলো জেল লাগিয়ে সেট করা। এই লুক দেখে যেকোনো মেয়ে নিশ্চিত প্রেমে পড়ে যাবে।
আমার নিজেরও ক্রাশ খাওয়ার উপক্রম। যাইহোক, সেইসব চিন্তা বাদ দিয়ে কাজের কথা শুরু করলাম। আবীর আর ঊর্মিলা সব কাহিনি বলার পর সারাকে জিজ্ঞেস করে,

— সারা, নিহালের বিরুদ্ধে তুমি কেনো এতো ক্ষ্যাপা? (ঊর্মিলা)

–নিহাল আমার জীবনটা শেষ করে দিছে। কলেজে যখন পড়ি তখন আমাকে…
সারা আর কথা বলতে পারল না।হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। আমি বেশ ভালো করে বুঝতে পারলাম সারার সাথে নিহাল কি করেছে?আমি ওকে বললাম,

— হ্যাঁ,সারা বুঝতে পেরেছি। তোমার সাথে কি হয়েছে। কষ্ট পেও না। নিহালের শাস্তি পাওয়ার দিন চলে এসেছে। ও শুধু তোমার একার না, বহু মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।

–জ্বি, আপু। নিহালের শাস্তি দেখার অপেক্ষায়ই বেঁচে আছি। না হয় বারবার সু/ই/সা/ইড করতে গিয়েও ফিরে এসেছি। মনে হতো আমি সু/ই/সা/ই/ড করল সমাজের মানুষের কাছে হেরে যাব। তারাই তাদের কুৎসিত কথা শুনিয়ে জিতে যাবে।

–হ্যাঁ,ভালো কাজ করেছো। আ/ত্ম/হ/ত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। প্রতিটি মানুষেরই এই ভালোভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।কিছু মানুষের কথা শুনে কেন সুন্দর জীবনটা নষ্ট করবে। জীবনকে সুন্দর ভাবলেই জীবন সুন্দর।
ছোটবোন হিসেবে একটা উপদেশ দিই, জীবনে হাজার কষ্ট হলেও কখনোই নিজেকে শেষ করার কথা চিন্তা করবে না। খুব বেশি কষ্ট হলে হাসপাতালে একবার ঘুরে আসবে ; দেখবে তারা হাজার কষ্ট হলেও রোগের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকে পৃথিবীতে একটি দিন বেঁচে থাকার জন্য। (আবীর)

–জ্বি,ভাইয়া। আমার কথাগুলো অনেক মূল্যবান।
কিন্তু জীবনে যাই করি নিহালকে শাস্তি না দিয়ে মরব না। আমি একটা প্ল্যান বানিয়েছি যেটাতে নিহালও মরবে আর ওর মরার কোনো প্রমানও থাকবে না। যদিও অনেক টাকার ব্যায় হবে।

–টাকা চিন্তা তুমি করো না। সেই ব্যবস্থা আমি করব।
.
.
.
শহরে এক হোটেলে বিশাল পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বড় বড় বিজনেস ম্যানদের ইনভাইট করা হয়েছে। যার আয়োজন করেছে আবীর। সেখানে নিহালকেও ইনভাইট করা হয়েছে। নিহাল জানে না এই পার্টির আয়োজন করেছে আবীর।
নির্ধারিত সময়ে নিহাল এলো পার্টিতে। পার্টিতে বেশ ফূর্তি করছে নিহাল। নিহালের ফূর্তি করা দেখে ওরা তিনজন (আবীর,ঊর্মিলা,সারা) শব্দ করে হেসে উঠলো। নিহাল নিজেও জানে না কিছুক্ষন পর ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে! ওয়েটারের মাধ্যমে ঊর্মিলা নিহালের জন্য ওয়াইনের বোতল পাঠালো।
ওরা তিনজন ছাড়া কেউ জানে না ওয়াইনের সাথে কি মেশানো আছে!
.
নিহাল যখন পুরোপুরি মাতাল হয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো মুখোশ পড়া এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,বোঝাই যাচ্ছে বেশ সুন্দরী। নিহালের ইচ্ছা হলো মেয়েটাকে নিজের করে পেতে। নিহাল এক মুহূর্ত না ভেবে মেয়েটাকে টেনে একটা রুমের দিকে টেনে নিতে লাগলো। নিহাল তো আর মেয়েটা যে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ওর কাছে এসেছে।
মেয়েটা আর কেউ না,মেয়েটা হচ্ছে সারা।
সারা হালকা ধস্তাধস্তি করার চেষ্টা করলো,তবে শক্তির জোরে না। সারা চেয়েছিল যাতে নিহাল এমনই কিছু একটা করে যাতে ওদের প্ল্যানটা আরো ভালোভাবে সফল হয়। নিহাল ওকে হোটেলের রুমে নিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দরজা লাগিয়ে দিল। সেখানে আগে থেকেই আবীর-ঊর্মিলা লুকানো ছিল। দরজা লাগানোর পর শুরু হয় আবীর, ঊর্মিলা আর সারার খেলা। সারা ওর মুখ থেকে মুখোশ খুলে ফেলল।
প্রথমে ওরা নিহালকে ইলেকট্রিক শক দিল। তিনজনের মনের ঝাল মিটিয়ে নিহালকে মেরে ফেলা হলো। তবে এমনভাবে হ*ত্যা করলো যেখানে কোন প্রমান ছিল না।
.
পরদিন খবরের হেডলাইন হলো, ” বিশিষ্ট শিল্পপতি আজিজ খানের পুত্র নিহাল খাঁম এক মেয়েকে
ধর্ষ/ণ করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। ”

পুলিশরাও নিহাল যেই মেয়েকে ধর্ষ/ণের চেষ্টা করেছে তার পরিচয় পায় নি। সিসিটিভি ফুটেজে নিহাল যে মেয়েটাকে টেনে রুমে নিয়ে গেছে সেই পর্যন্ত আছে, এর পরের সময় ক্যামেরা অফ ছিল।তাছাড়া পার্টিতে এমনভাবে লাইটিং করা ছিল যে চেহারা বোঝার উপায় ছিল না,তার ওপর মেয়েটির মুখে মুখোশ ছিল। নিহালের মৃ*ত্যুতে লোকজন বিশেষ করে মেয়েরা বেশি খুশি হয়েছে। ওর মৃ*ত্যুর পরে পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে নিহাল এরকম বহু মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।
.
আজ ঊর্মিলা,আবীর,সারা তিনজন কফিশপে বসে আছে। তিনজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি দেখা যাচ্ছে। আবীর সারার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

–সারা আমাদের দুইজনের ছোট হলেও কুটিল বুদ্ধিতে ভরপুর ওর মাথা। আমরা এত প্ল্যান করেও যেখানে নিহালকে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হই নি সেখানে সারার প্ল্যান মাফিক একসপ্তাহেই আমরা সফল। কোনোভাবে ধরাও পড়ি নি।

–আমার পরিস্থিতিতে থাকলে বুঝতেন ভাইয়া। আজ চার-চারটা বছর ওই নরপশুটার জন্য পরিবারের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন আমার।প্রতিটা রাতে কেঁদে কেঁদে পার করেছি আর প্ল্যান করেছি কীভাবে ওকে মা*রা যায়? তবে আপনাদের ছাড়া আমার এত সাহস হতো না। যাইহোক, এবার টার্গেট নিহালের বন্ধু রায়হান। ওর কি অবস্থা? শুনেছিলাম ও আপনার কাছে আটক রয়েছে ভাইয়া?

–তোমার কি মনে হয় ওকে হাতের কাছে পেয়ে আমি এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি? কবে ওর শরীর এসিডে ঝলসে দিয়েছি যেমনটা ওরা আমার শর্মিলার সাথে করেছিল। মে*রে গুম করে দিয়েছি।

–কিহ! আপনি রায়হানকে মে*রে ফেলেছেন? আমাকে তো একবারও বললেন না।

–যেদিন আপনি আমাদের কাছে ধরা পড়েছিলেন সেইদিনই আপনি আসার পরে আমি ওকে চিরতরে শেষ করে দিয়েছি। বলা তো যায় না যদি কোনভাবে পালিয়ে যেত,তাহলে আমাদের সব প্ল্যান ভেস্তে যেত।

______________________________

সব ঝামেলা মিটিয়ে আজকে ঊর্মিলাকে আবীর ওর মনের কথা জানাবে।
এ কয়টা দিনে আবীর বুঝতে পেরেছে ও ঊর্মিলাকে ভালোবেসে ফেলেছে। ঊর্মিলার সামনে থাকলে যেন ও শর্মিলার উপস্থিতি অনুভব করে। তাই ঊর্মিলাকে সন্ধ্যায় একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলেছে। রেস্টুরেন্টের ভিতরে সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে। নিজেও চকলেট কালার একটা পাঞ্জাবি পরে হিরো সেজে এসেছে। অপেক্ষা শুধু ঊর্মিলার আসার..
.
আরাফের ব্যাক্তিগত কিছু কাজের জন্য নিজের গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। এজন্য ঊর্মিলা একা একাই আবীরের সাথে দেখা করতে এসেছে। রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকে ঊর্মিলা বেশ অবাক হলো। ভিতরে মানুষ নেই দেখে ঊর্মিলার একটু ভয়ও লাগলো। আবীর একটা কোনে বসে আছে। সেখানে অনেক সুন্দর করে মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঊর্মিলা কিছুই বুঝতে পারল না। ঊর্মিলা আবীরের সামনে যেতেই আবীর মুচকি হাসি দিয়ে ওকে বসতে বলল। আবীরের হাসির বিনিময়ে ঊর্মিলাও মুচকি হাসি হাসলো। লাজুক চোখে ঊর্মিলা আবীরকে দেখলো।আজকেও ক্রাশ লুক নিয়ে এসেছে। এর মাঝেই আবীর বলে উঠলো,

–ঊর্মিলা, আমি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?

–জ্বি,অবশ্যই।

— আজকে তোমাকে আমি শাড়ী পড়ে আসতে বলেছিলাম,আসো নি কেনো?

— আমি শাড়ী পড়তেও পারি না আবার সামলাতেও পারি না।

–আচ্ছা সে যাইহোক, তোমাকে আমি আমার মনের মানুষের কথা বলবো? যাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।

–কিহ! মনের মানুষ (অবাক হয়ে)
এই কয়দিনেই আমার বোনটাকে ভুলে গেলেন? (হালকা নাক ফুলিয়ে)

–আরে না না, শর্মিলাকে ভুলি নি আর কখনো ভুলব না। ও সারাজীবন আমার হৃদয়ে থাকবে।

–আচ্ছা, বুঝলাম। তা আপনার মনের মানুষটা কই? আজকে কি তার আসার কথা?

–হ্যাঁ,আসার কথা।সে এসেও পড়েছে। আসলে আনি ঘুরি-প্যাঁচিয়ে কথা বলতে পারি না।তাই সরাসরিই বলছি আমার মনের মানুষটা তুমি! তোমাকে আমি ভালোবাসি ঊর্মিলা। তোমার মাঝেই আমি শর্মিলাকে খুঁজে পাই। আমার কাছে মনে হয় তোমরা দুজনেই একজন। তোমাকেই আমি আমার জীবনসঙ্গী বানাতে চাই।

ঊর্মিলা আবীরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। আরাফ তাহলে ঠিক কথাই বলেছিল যে আবীর আমাকে পছন্দ করে! তখন আরাফের কথা বিশ্বাস করি নি।
তবে সত্যি কথা বলতে আবীরকে আমারও বেশ ভালো লাগে,ওর প্রতি আমিও কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছি। তবে ভালোবাসি না। কিন্তু আজ যদি আমি আবীরের প্রস্তাবে রাজি হই তাহলে আরাফের সাথে অন্যায় করা হবে।বেচারা আমাকে প্রায় দুইবছর ধরে ইনডিরেক্টলি বোঝানোর চেষ্টা করছে, আমি বুঝেও না বোঝার ভান ধরেছি।কয়দিন আগে তো আমাকে সরাসরিই ওর ভালোবাসা নিবেদন করলো। যদিও কখনো আমি ওকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে ভাবি নি তবুও…

–কি হলো ঊর্মিলা? কিছু বলবে না?

–আপনাকে এর উত্তর আমি দিতে পারব না আবীর। কারন আমি আরাফকে পছন্দ করি আর ও আমাকে পছন্দ করে।

–মিথ্যে কথা!! তুমি মিথ্যে বলছো ঊর্মিলা। আমি মিলির কাছে সব জেনেছি, আরাফ তোমাকে পছন্দ করলেও তুমি ওকে শুধু বন্ধুই ভাবো। তুমি ওকে পছন্দ করো না।

–হ্যাঁ,মিলির কাছে ঠিক জেনেছেন। তবে আগে বন্ধু ভাবলেও এখন থেকে অন্য কিছু ভাববো। ওকে আমি ঠকাতে পারব না।

–কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি…

–পরের কথা শোনার আর প্রয়োজন নেই। আমি আসছি।

–ঊর্মিলা প্লিজ আমার কথাটা একবার ভাবো। (করুন স্বরে)

ঊর্মিলা কোন কথা না শুনে হনহন করে হেঁটে চলে গেল। ঊর্মিলা জানে না ও এখন কি সিদ্ধান্ত নিবে!
একদিকে আরাফ অন্যদিকে আবীর…

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here