রঙিন_দূত – ১৮,১৯

0
421

#রঙিন_দূত – ১৮,১৯
লাববা ওয়াহিদ
১৮
———————————-
–“আমায় মিস করছিলেন বুঝি?”

হৃধি হতভম্ব দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মাহিনের পানে। মাহিনের সম্মোহনী দৃষ্টি হৃধিকেই পর্যবেক্ষণ করছে। হৃধি তড়িৎ দৃষ্টি নত করে সামনে ফিরে ব্যস্ত শহরকে দেখায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। পাশে দাঁড়ানো মানবের জন্যে বক্ষঃস্থলে তোলপাড়ের আবির্ভাব ঘটেছে। তার সাথে সেই কড়া পারফিউম। হৃধি মিনমিন করে আওড়ায়,
–“আজ কী আঁটঘাঁট বেঁধে নেমেছে নাকি আমায় তার ফাঁদে ফেলার জন্যে?”
–“কিছু বললেন হৃধি?”

হৃধি ঘাড় বাঁকিয়ে মাহিনের পানে দৃষ্টি দেয়। অতঃপর নেতিবাচক মাথা নাড়িয়ে আবারও দৃষ্টি ব্যস্ত শহরে নিবদ্ধ করে। মাহিন তো পলকহীন তাকিয়ে হৃধির পানে। মাহিন আপনমনেই আওড়ায়,
–“ধন্যবাদ হৃধি, আমার নির্দেশনা শোনার জন্য।”

হৃধির গালে লাল আভা স্পর্শ করলো। চেয়েও পারলো না মাহিনের কথাকে অস্বীকার করতে। আচ্ছা মাহিনের কন্ঠে “ধন্যবাদ” শব্দটা এত মধুর শোনালো কেন? হৃধির আনচান করা মন এক নিষিদ্ধ আকাঙ্খা করে বসলো। মাহিনের সুমধুর কন্ঠে গান শোনার আকাঙ্খা। পরমুহূর্তে বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরলো, সাথে নিজের প্রতি বিরক্তিও হানা দেয়। হৃধির চাওয়াটা আর পূরণ হবে না ভাবতেই তার মস্তিষ্কে যেন আগুনের গোলা সৃষ্টি নিলো। হৃধি কিড়মিড় দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকিয়ে আওড়ায়,
–“আমি আপনার কথা শুনে শাড়ি পরিনি বুঝলেন? আর আমার সাথে আপনার কী? যান গিয়ে রাইসা আপুর আত্নীয়দের কাছে যান। এখানে তো আপনার সুন্দরী রমনী দিয়ে ভরা। ওদের না চাইলে রাইসা আপুর পাশে গিয়েই বসে থাকুন না, একেবারে তাকে বিয়ে করে ফেলুন!”

হৃধির তড়তড় করে ওঠা রাগ যেন কমছেই না। হৃধি কখনোই মাহিনের সাথে এমন বেপরোয়া আচরণ করেনি, তাই মাহিনও কিছুটা হতভম্ব। হৃধি কোন কথার কী মানে দাঁড় করালো! আর রাইসার কথা হৃধিকে কে বললো? শাফীন? মাহিন কী ভেবে হেসে ওঠে। যাকে বলে অট্টহাসিতে তার চোখ কিছুটা বুজে এসেছে। হৃধি মুহূর্তে-ই থমকে যায়। পিটপিট নয়নে মাহিনের সেই নজরকাড়া হাসি দেখতে লাগে। মাহিনকে সবসময় বাঁকা হাসিতে দেখেছে হৃধি। আজ সেই মাহিন কি না প্রাণখুলে হাসছে? কিছুটা স্তব্ধ তো হবেই। তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না, দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। মাহিন হাসি থামিয়ে হৃধির গাল টেনে বলে,
–“ওরে আমার বোকারাণী টাহ! আপনার কোথায় জেলাসি আমার বুঝতে বাকি নেই হৃধি। তবে চিন্তিত হবেন না, বিয়েতে আমার পাশের আসনসহ আমার জীবনের প্রতিটি পাশের আসনে সম্পূর্ণ অধিকারের সাথে আপনি থাকবেন। এটা আপনার এই প্রেমিক পুরুষের ওয়াদা থাকলো।”

হৃধি তটস্থ হাতে মাহিনের হাতটা গাল থেকে সরিয়ে দিলো। একটা টু-শব্দও করলো না। অদ্ভুত, অজানা কারণে বিয়ে শব্দটা তাকে ভালো রকম অস্বস্তিতে ফেলেছে। মাহিন মুচকি হাসলো। হঠাৎ পিছে শব্দ হতেই দুজন-ই পিছে ঘুরে দাঁড়ায়,
–“আরে হৃধি যে, কেমন আছো?”

ফাতিমা বেগমের মুখে সৌজন্যমূলক হাসি। হৃধিও উত্তরে মুচকি হেসে বলে,
–“ভালো আন্টি, আপনি কেমন আছেন?”
–“ভালো। তোমার মা কোথায়? তখন যে দেখলাম আর তো পাচ্ছি-ই না!”
–“মনে হয় বাসায় চলে গেছে আন্টি। আপনি চিন্তিত হবেন না!”
–“ওহ। আচ্ছা আব্বু, আমি না গিফট বক্সটা বাড়িতে ফেলে এসেছি। তুমি গিয়ে কষ্ট করে নিয়ে আসবে আব্বু? আমার এতো উঠা-নামা করতে ভালো লাগছে না!”

মাহিন একপলক হৃধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“আচ্ছা মা, তুমি কোনো একটা চেয়ারে গিয়ে বসো। হৃধিকেও সাথে নিয়ে যাও, যেহেতু ওর মা নেই।”

বলেই মাহিন আড়ালে এক চোখ টিপ মেরে চলে যায়। ফাতিমা হৃধির উদ্দেশ্যে বলে,
–“তাহলে চলো, কোথাও গিয়ে বসি। এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই!”

হৃধি সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে অনুষ্ঠানের মধ্যে চলে যায়। এখন গানের শব্দটা কম আছে, কারণ অনেক মুরব্বি’রাই এসে বসেছে। হৃধি ফাতিমা বেগমের সাথে একপাশে যেতেই তাঁরার সাথে হৃধির দেখা হয়ে গেলো। হৃধি মুচকি হাসতেই তাঁরাও উত্তরে মুচকি হাসলো।
–“হৃধি, এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”
–“এইতো আশেপাশেই। তোমাকেও তো দেখিনি!”
–“আমি রাইসার পাশাপাশি-ই ছিলাম। আন্টি, ভালো আছেন?”
–“তাঁরা না?”
–“হ্যাঁ আন্টি!” লাজুক কন্ঠে বলে ওঠে তাঁরা।
–“ওহ, তুমি তো এই এপার্টমেন্টেই থাকো! কেমন আছো? এখানে এসে তো দেখলাম না!”
–“ভালো আছি আন্টি। আমিও জানতাম না যে আপনারা এই বিল্ডিং এই উঠেছেন। নানুর বাড়িতে ছিলাম তো এতদিন। যাইহোক, আপনি থাকুন আমি হৃধিকে নিয়ে যাই!”
–“হ্যাঁ যাও, আমাদের মতো মুরব্বিদের সাথে থেকে মজা করতে পারবে নাকি? তোমার সাথেই নিয়ে যাও। হৃধি মা, টেক ইওর টাইম!”

হৃধি মুচকি জেসে তাঁরার দিকে তাকাতেই তাঁরার অদ্ভুত দৃষ্টি নজরে এলো। এই দৃষ্টি হৃধির জন্যে সম্পূর্ণ অচেনা। মুহূর্তে-ই তাঁরা হেসে হৃধিকে নিয়ে স্টেজের দিকে চলে গেলো। হলুদ লাগানো হবে আরও দেরীতে। এখন রাইসার কাজিন’রা সহ এপার্টমেন্টের ছেলে-মেয়েরা চেয়ার টেনে তাকে ঘিরে বসেছে। হৃধির তো এতো ছেলেদের দেখে প্রাণ বেরিয়ে যাবার উপক্রম। তাঁরা আপুর হাত ছেড়ে ওড়নাটা মাথায় ভালোভাবে পেচিয়ে নিলো। ওদের মাঝে শাফীনকেও দেখা গেলো। শাফীনকে দেখে হৃধির কিছুটা ভয় কাটলো।
তাঁরার সাথে হৃধি নিরাপদ স্থানে বসলো। হৃধি অস্বস্তিতে জামার এক অংশ খামচে ধরেছে। ছেলেগুলো তার দিকেই তাকিয়ে। তাঁরা সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
–“মিট উইথ হার। ও হৃধি!”

হৃধি হাসার চেষ্টা করে একপলক রাইসার দিকে তাকালো। রাইসা মুচকি হেসে ওর দিকে-ই তাকিয়ে। প্রশাধনীর মাঝে রাইসার দুঃখে ভরা মুখশ্রী হৃধির নজর এড়ায় না। প্রত্যেকেই হৃধির উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে হাই জানালো। হৃধি শুধু মুচকি হাসলো, কিছু বলে না। তাঁরা তো বকবক করে-ই চলেছে। সাথে কিছু ছেলেও তার সাথে যোগ দিয়েছে। এর মাঝে একটা ছেলে বলে ওঠে,
–“আরে তাঁরা, এই সুন্দরী যে আমাদের এপার্টমেন্টেই থাকতো আগে কেন জানাওনি? আমি তো দেখিওনি কখনো!”
–“হৃধি সবসময় বাসাতেই থাকে, তাই হয়তো দেখিসনি!”

হৃধি কোণা চোখে সেই ছেলের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো। কেমন ইডিয়েট মার্কা চাহনি দিয়ে রেখেছে ছেলেটা। হৃধির অস্বস্তিতে এবার যেন হাত-পা নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে গেলো। মনে মনে আল্লাহ’কে স্মরণ করছে যেন মাহিন আসে অথবা সে যেন এই স্থান ত্যাগ করতে পারে। এদের কথা-বার্তা তার মোটেও ভালো লাগছে না। হৃধি শাফীনের দিকে তাকাতেই শাফীন ইশারায় ওকে শান্ত থাকতে বললো। কিন্তু হৃধির অশান্ত মন শান্ত হবার নয়। হুট করে কই থেকে মাহিন চেয়ার হাতে এসে হৃধির পাশেই বসলো। মাহিনের হঠাৎ আগমনে উপস্থিত প্রত্যেকেই চমকে যায়। গান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চারপাশ এখন এশার আযানে মুখোরিত। মাহিন পায়ের উপর পা তুলে সকলের সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। হৃধি যেন এতক্ষণে শান্তি এবং স্বস্তি পেলো। অস্বস্তি এবং আতঙ্ক কোথায় ছুটে যেন পালালো। মাহিনের উপস্থিতি যেন হৃধির সুরক্ষা কবজ। মাহিন যেন তার সকল স্বস্তির ওষুধ। হৃধি কোণা চোখে মাহিনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। পরমুহূর্তেই হৃধির স্টেজে চোখ যেতেই দেখলো রাইসা কেমন ব্যথিত নয়নে মাহিনের পানে তাকিয়ে আছে। হয়তো মাহিনকে আগুনে ঘি ঢালার মতো লাগছে তার। তাঁরার পাশের মেয়েটি বলে ওঠে,
–“এতো জায়গা থাকতে তুমি হৃধির পাশে বসলে কেন?”

মাহিন একপলক হৃধির দিকে তাকাতেই দৃষ্টি আদান-প্রদান হয়। হৃধি এরকম প্রশ্ন একদমই আশা করেনি। মাহিন পাঞ্জাবির কলার নাচিয়ে গরম লাগার ভঙ্গিতে বলে,
–“গরম লাগছে তাই ফ্যান বরাবর বসেছি। দেখছো না?”

হৃধি সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখে ওদের বরাবরই এক বড় টেবিল ফ্যান দাঁড় করানো। তবে হৃধি মেয়েটির প্রশ্নে ব্যাপক অসন্তুষ্ট! এভাবে বলার মানে কী? কী হয় বসলে? এর মাঝে আবারও চললো আড্ডা। দুইজন লোক ওদের সবাইকে “মোজো” দিয়ে গেলো। এই ট্রিট’টা ছিলো রাইসার এক কাজিনের পক্ষ থেকে। হুট করে রাইসার এক কাজিন বোন বলে ওঠে,
–“আমাদের রাইসা আপুর পছন্দ আছে বলতে হবে, এমন সুদর্শন যুবককে পছন্দ না করে থাকা যায় নাকি?”
–“হ্যাঁ! এখন আবার এটা বলিস না রাইসা বিয়ে করলে তোর রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাবে!”
–“শাট আপ! আমি এরকম কিছু বলেছি নাকি?”

মেয়েটির কথায় সকলেই হু হা করে হেসে দেয়। হাসলো না শুধু রাইসা, হৃধি এবং মাহিন। রাইসা মাথা নিচু করে রইলো। দেখে বোঝা যাচ্ছে এরকম মজা তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। এর মাঝে মাহিনও যেন বোম ফাটালো,
–“রাইসা আমায় পছন্দ করতো, ইট’স নট এ বিগ ডিল। উঠতি বয়স, পছন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক বৈ কিছু নয়। তবে সব পছন্দের ভবিষ্যৎ থাকে না। সেটা রাইসা এবং তোমাদের বোঝা উচিত। রাইসার নসিব যার সাথে জুড়ে ছিলো তার সাথেই আগামীকাল জুড়বে। নাও, আই উইশ এই টপিক নিয়ে কেউ কথা উঠাবেন না!”

হৃধি পাশে বসা মানুষটার দিকে নজর দিলো। মুখশ্রীতে কেমন গভীর্য ফুটিয়ে তুলেছে মাহিন। যেন সকলের মাঝে তার হাসা বারণ! হৃধি চুপ মেরেই রইলো।
হৃধি যখন বুঝলো এদের কথাতে সে আর থাকতে পারছে না তখনই সে উঠে দাঁড়ায়। তাড়াহুড়ো করে চলে যেতে নিলে মাঝপথেই তার একটি জুতা ছিঁড়ে যায়। এতগুলো মানুষের সামনে এমন লজ্জিত কাজ-কারবার হৃধি মোটেও আশা করেনি। লজ্জায়, অস্বস্তিতে এবার তার কান্না পেতে শুরু করলো। আড়চোখে সকলের দিকে দৃষ্টি ঘুরায় সে। হঠাৎ অট্টহাসির শব্দ শোনা যায়। লজ্জায়, অপমানে হতভম্ব হয়ে হৃধির চোখ জোড়া লাল হয়ে ওঠে। চোখে পানিও জমে যায়। পলক ফেললেই যেন অশ্রু’রা তার বাঁধ ভাঙবে। হৃধি সেভাবেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ পায়ে কারো স্পর্শ পেতেই হৃধির ধ্যান ভাঙ্গে। হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় মাহিনের পানে। মাহিন হৃধির পা থেকে স্ব-যত্নে জুতো খুলছে। কোটর হতে চোখ দুটো যেন বেরিয়ে যাবার উপক্রম তার। ভিষণরকম হাঁটু জোড়া কাঁপছে হৃধির। এতগুলো মানুষের সামনে মাহিনের এরূপ যত্ন এখনই হজম করার মতো নয়।
হৃধি মাহিনের হাত থেকে নিজের পা ছাড়াতে নিতেই মাহিন শক্ত করে ধরলো। এতে হৃধির কম্পন যেন আরও বেড়ে যায়।
–“কী দরকার এসব জুতো পরার? ছাদে তো আমি বালি দেখছি না। যাইহোক, খালি পায়ে থাকুন। ঠান্ডা লাগলে বলুন, আমার জুতো জোড়া আপনাকে খুলে দিচ্ছি!”

মাহিনের কথাগুলো খুব-ই ধীরে ছিলো। আশেপাশে কেউ শুনেছে কিনা হৃধি জানে না। তবে মাহিনের কথাগুলোর মাঝেই তার অশ্রু’রা নিজস্ব বাঁধ ভেঙ্গে বেরিয়ে এলো। পারছে না সে এতো যত্ন গ্রহণ করতে। হৃধি একপ্রকার জোর করে মাহিনের থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে জুতো জোড়া হাতে নিয়ে নেয়। অতঃপর কোনো দিকে না তাকিয়েই ছাদের দরজার দিকে ছুট লাগায়। পথিমধ্যে রিনাকে হৃধি পেলেও ডাকে না। একপ্রকার ছুটি সিঁড়ি বেয়ে নেমে বাসায় চলে যায়। অপমানে এখনো কান গরম হয়ে আছে তার। সশব্দে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজার সাথে লেপ্টে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে হৃধি। দু’হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো।

~চলবে, ইনশাল্লাহ।

#রঙিন_দূত – ১৯
লাবিবা ওয়াহিদ

——————————–
দরজার খটখট শব্দে হৃধির ঘুম ভেঙ্গে যায়। পিটপিট করে তাকায় হৃধি। চোখ খুলতেই বাল্বের তীক্ষ্ণ আলো তার দৃষ্টিতে তীরের মতো বিঁধলো। চোখ আবারও বুজে এলো। হৃধি চোখ কচলে উঠে বসে। দরজার কাছেই ঘুমিয়ে গেছিলো হৃধি। চোখ কচলে আবার তাকাতেই সেই আলোড়ন পুণরায় চোখে বিঁধলো। বিরক্তিতে ভ্রু-দ্বয় কুচকে এলো তার। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজ থেকেই সব স্বাভাবিক হলো। পুণরায় দরজায় কড়াঘাতের শব্দ। তবে অবাক বিষয় হচ্ছে তার পেছনের দরজা থেকে শব্দটি আসছে না। শব্দটি বারান্দার দরজা থেকে আসছে। হৃধি সেদিকে নজর বুলিয়ে তড়িৎ দেয়াল ঘড়ির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। ঘড়ির কাঁটা দেড়টায় ছুঁয়েছে। অজানা আতঙ্কে হৃধির গা ছমছমে হয়ে গেলো। এতো রাতে কে তার বারান্দায় অবস্থান করছে? ভয়ে ছোট করে ঢোঁক গিললো হৃধি। কম্পিত গলায় আওড়ায়,
–“ক..কে?”
–“আমি হৃধি! দরজা খুলুন!”

পুরুষালি কন্ঠস্বরটি হৃধির অচেনা নয়। এই কন্ঠস্বর যে হৃধির চেনা, খুব চেনা। ধীরে ধীরে অনুষ্ঠানের সকল ঘটনা হৃধির মস্তিষ্কে তরঙ্গিত হলো। হৃধি কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়ায়। উঠে দাঁড়াতেই পায়ে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়। হৃধি পা কিঞ্চিৎ উঁচু করে পায়ের তলায় চেক করলো। কাঠির মতোন কী একটা বিঁধে আছে। এছাড়াও পায়ের কিছু অংশে কাটা-ছেঁড়ার দাগ। সেসবেও কেমন যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা। হৃধি কোনো রকমে হেঁটে বেলকনির দরজাটি খুলে বিছানার দিকে যেতে অগ্রসর হয়। বিছানায় বসে ধীরে-সুস্থে পা হতে সেই ছোট কাঠিটা বের করলো। কাঠিটি বের করার এক পর্যায়ে হৃধি ব্যথায় অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে উঠলো। মাহিন তখনই হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করেছে। হৃধির আর্তনাদ শুনে দ্রুত পায়ে হৃধির নিকট আসলো এবং উত্তেজিত ভঙ্গিতে আওড়ায়,
–“কী হয়েছে হৃধি? আপনি এখনো একই পোশাকে? চোখ-মুখ এমন ফুলে আছে কেন?”

হঠাৎ মাহিনের দৃষ্টি হৃধির পায়ে নিবদ্ধ হয়। পায়ের তলার সেই শুভ্র স্থানের ক্ষুদ্র অংশে কেমন রক্ত জমাট বেঁধেছে। মুহূর্তেই হৃধির পা হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে যায় মাহিন। হৃধি হকচকালো, ভড়কালো। পা টেনে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই মাহিন হৃধির সেই ক্ষত স্থানে আলতো স্পর্শ করলো। হৃধি কেঁপে উঠলো। বেলকনির দরজা দিয়ে হিম হাওয়া প্রবেশ করছে। সেই শীতল হাওয়া যেন আরও কাঁপিয়ে তুললো হৃধিকে। হৃধি অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
–“মা..মাহিন! কী করছেন!”
–“পা কীভাবে কাটলো হৃধি? এনিহাউ খালি পায়ে দৌড়ে আসার সময় এমনটি হয়নি তো?”

হৃধি নিশ্চুপ। কেন যেন গলা দিয়ে কোনো শব্দ আসছে না তার। বেশ সময় নিয়ে হৃধি আধো আধো বুলিতে আওড়ায়,
–“হয়তো!”
–“দেখি, ফাস্ট এইড বক্স কোথায় বলুন!”
–“ওসবের প্রয়োজন নেই। ঠিক হয়ে যাবে!”
–“আপনার কাছে জানতে চাইনি। বলুন!”
–“ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে!”

মাহিন হৃধির পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় এবং ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার চেক দেয়। হৃধি ততক্ষণে পা গুটিয়ে বসে এবং বলে,
–“আপনি এত রাতে আমার রুমে কেন এসেছেন? বিয়ে বাড়িতে এভাবে আসাটা কী ঠিক হলো? কেউ দেখে ফেললে?”
–“আপনাকে আমি ফোনে পাইনি। দুশ্চিন্তা তো হওয়ার কথা তাই না হৃধি? আর অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে সাড়ে বারোটা নাগাদ। এতক্ষণে সকলে নাক ডেকে ঘুমোতে ব্যস্ত। আর আপনি কী মনে করেছেন? আপনার খবর না নিয়ে আমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে আমি ঘুমাবো? এটা আদৌ কোনদিন সম্ভব হৃধি?”

হৃধি চোখ জোড়া ছোট ছোট করে নির্বিঘ্নে তাকিয়ে রয়। ফোন কোথায় রেখেছে হৃধি নিজেও জানে না। তখন কান্নার মাঝে কখন চোখ লেগে গিয়েছিলো ঠিক খেয়াল নেই। উদ্বিগ্ন মাহিনকে হৃধি অনুভব করতে পারছে, প্রগাঢ় ভাবে! এই ছেলেটা তাকে না দেখার অস্বস্তিতে টিকতে না পেরে মই বেয়ে বারান্দায় এসেছে। হয়তো নিচে মই পাহারায় ব্যস্ত রাফিদ এবং সাব্বির। মাহিন মলম আর তুলো পেতেই সেটা নিয়ে হৃধির সামনে আসলো। হৃধি বেশ জড়তার সাথে বলে ওঠে,
–“নিচে বসার প্রয়োজন নেই। ফ্লোর ঠান্ডা!”

হৃধির চিন্তিত বাক্যে মাহিনকে কিছুটা চমকাতে দেখা গেলো। হৃধি তার খেয়াল রাখছে এবং পাশে বসার অনুমতি দিচ্ছে? আদৌ স্বপ্ন দেখছে সে? মেয়েটার মতি-গতি কখন বদলে যায় মাহিন বুঝে উঠতে পারে না। তবে হৃধির এই ছোট্ট কথায় হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেলো। রংধনু দেখা দেয় মন আকাশে। মাহিন হৃধির থেকে কিছুটা দূরত্বে বসে হৃধির পা স্পর্শ করলো। হৃধি শক্ত করে চোখ-মুখ কুচকে ফেলে। মাহিন আড়চোখে তা লক্ষ্য করে আপনমনে হাসলো। বড্ড আদুরে লাগছে হৃধিকে। নাকটা এখনো লাল হয়ে আছে। লজ্জায় গাল জোড়াতেও রক্তিম ভাব ফুটে উঠেছে। মলমটা লাগাতেই হৃধি ভুলবশত এক চিৎকার দিয়ে উঠে। ভিষণ জ্বালা করছে ক্ষতগুলো, যার ফলস্বরূপ হৃধি নিজেকে থামাতে পারেনি। মাহিন দ্রুত বেগে হৃধির মুখ চেপে ধরে। হৃধি ভিষণরকম ঘাবড়ে যায় এবং চোখ মেলে তাকায়। গোল গোল আঁখিতে মাহিনের মুখশ্রী দেখছে সে। তখনই বাহির থেকে শব্দ এলো, রিনার কন্ঠস্বর।
–“আপা, আপনে ঠিক আছেন? চিল্লানি দিলেন ক্যান? দরজা খুলেন। আপনি কী সজাগ আপা?”

হৃধি একবার দরজার দিকে তো একবার মাহিনের দিকে তাকায়। রিনা যদি ভুলক্রমেও টের পায় যে মাহিন তার ঘরে, তাহলে তো সর্বনাশ! চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পুরো বিল্ডিং মাথায় তুলবে। রিনাকে বলার মতো ভুল হৃধি কস্মিনকালেও করবে না। মাহিন ফিসফিস করে বলে,
–“কিছু বলুন, নয়তো মেয়েটির সন্দেহ হতে পারে। তবে নিজেকে আগে সামলে নিন! আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছি!”

মাহিন ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নিয়ে দূরত্বে গিয়ে বসলো। হৃধির এতক্ষণে খেয়াল হলো মাহিন তার কতোটা নিকটে ছিলো। অজানা শিহরণে তার কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। হৃধি দৃষ্টি নত করে ফেলে অবলীলায়। হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির শব্দ শুনতে খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না তার। আবারও রিনার কন্ঠস্বর এবং কড়াঘাত শ্রবণ হয়। হৃধি গলা খাকারি দিলো এবং শীতল গলায় বলে,
–“আমি ঠিক আছি রিনা। তুমি ঘুমাও!”
–“তাহলে দরজা কেন খুলতাছেন না?”

হৃধি মাহিনের দিকে কোণা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অতঃপর ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,
–“আমি বিছানায় রিনা। উঠতে ইচ্ছে করছে না। তুমি বরং যাও, আমার ঘুম পাচ্ছে!”
–“আইচ্ছা। কিন্তু আপনে তো কিছুই খান নাই আপা।”
–“খুদা পায়নি তাই খাইনি। বিরক্ত করো না তো!”
–“আচ্ছা, তইলে আপনে ঘুমান। সকালে কথা হইবো!”

রিনা চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হৃধি৷ মাহিনের ততক্ষণে মলম লাগানো শেষ৷ হৃধি পা গুটিয়ে মিনমিন করে বললো, “ধন্যবাদ!”
–“খাননি কেন?”
–“এমনি!”
–“আমি চলে গেলে খেয়ে নিবেন!!”
হৃধি নিশ্চুপ।
–“আর কাল আপনি বিয়েতে যাবেন!”
–“না, যাবো না!”
–“আমি বলেছি যাবেন মানে আপনাকে যেতে হবেই। অন্যের দুঃখে বিনোদন নেয়া হচ্ছে বাঙালির স্বভাব। গুটিয়ে থাকা মানুষ’রা হচ্ছে ভীতুর ডিম, এরা মানুষ নামক কিছু প্রাণীকে ভয় পায়। আপনি তো স্ট্রং গার্ল, আপনার নামের পাশে ভীতু শব্দটা আমি কখনোই বসাতে দিবো না!”
–“আপনার কথা শেষ হলে আপনি আসতে পারেন!”

মাহিন তৎক্ষনাৎ হৃধির দু’পাশে হাত রেখে হৃধির দিকে ঝুঁকে পরলো। হৃধি সমান তালে ভড়কালো এবং চমকালো। আতঙ্কে নিজেও কিছুটা সরে যায়। মাহিনের দিকে হতভম্ব দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মাহিন হৃধির দৃষ্টিতে নিজ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আওড়ায়,
–“আগামীকাল যদি আপনি না আসেন, তাহলে আমি আপনাকে তুলে নিয়ে নিজে বিয়ের পিঁড়িতে বসবো। এতো শীঘ্রই বিয়ে নিশ্চয়ই আপনার জন্যে কল্যাণকর নয়? আজকের রাতটা ভেবে নিন। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিন যে বিয়ে খাবেন নাকি করবেন!”

বলেই মাহিন উঠে দাঁড়ায়। হৃধি সেখানেই পাথরের ন্যায় বসে রয়। মাহিন সরতেই সুদীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেললো। এতক্ষণ যেন নিঃশ্বাস ফেলতেও ভুলে গেছিলো। মাহিন মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বাই বুঝালো।
–“শুভ শান্তিময় রাত্রি হৃধি! ঘুমটা আজ ভিষণ গভীর হবে!”
–“আপনি মই দিয়ে এসেছেন, গেটের চাবি কী আপনার কাছে আছে?”
–“নেই!”
–“তাহলে বাসায় যাবেন কীভাবে?”
–“আপনার বারান্দা থেকে নেমে আমার বারান্দায় উঠবো!”

বলেই মাহিন বারান্দায় চলে গেলো। হৃধি কী ভেবে ধীরে-সুস্থে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর এটা ওটা ধরে বেলকনিতে চলে যায়। বেলকনিতে গিয়ে তার ভাবনাই সত্য হলো। নিচে রাফিদ, সাব্বির এবং সিফাত দাঁড়িয়ে। মাহিন অভিজ্ঞ পায়ে মই দিয়ে নেমে পরলো অবিলম্বে। গতবারের মতো হৃধি অভিশাপ দেয়নি। তবে অভ্যন্তরে কোথাও একবার বলেছিলো, মাহিন যেন সাবধানে নামে। হৃধি নিজেও জানে না তার এই ভাবনার প্রকৃত কারণ! মাহিন এবার ওদের দিয়ে মই নিয়ে মাহিনের বারান্দার দিকে চলে গেলো। দু’তলা হওয়ায় মাহিনের জন্যে ভালোই হয়েছে। যখন তখন বারান্দা টপকে হৃধির নিকট চলে আসতে পারে। আরও উপরে উঠলে তো রিস্ক বেশি।

মাহিন যেতেই হৃধির পেট মোচড় দিয়ে উঠলো খুদায়। সে বারান্দার দরজা বন্ধ করে রুমে চলে আসে এবং দরজা খুলে বাহিরে চলে যায়। বৈঠক ঘরের দিকে আসতেই আবছা আলোয় দেখলো রিনা সোফায় ঘুমিয়ে আছে। রিনার সে কী নাক ডাক। হৃধি বুঝলো না কিছু সময়ের ব্যবধানে মেয়েটা কেমনে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে? এ যেন হৃধির ঘুমকেও টেক্কা দিয়ে পেছনে ছুঁড়েছে। হৃধি তপ্তশ্বাস ফেলে ডাইনিং এর দিকে এগুলো। কিচেনের বাল্বের আলোয় আবছা বোঝা যাচ্ছে সেখানে কিছু ঢেকে রাখা। হৃধি দেরী না করে সেদিকেই পা চালালো। প্লেটটা উল্টোতেই খাবার দৃশ্যমান হলো। খাবারটাকে গরম করার মতোন ধৈর্য হৃধির নেই, তাই সে চেয়ার টেনে বসে পরলো। তৃপ্তি করে খেয়ে সুখের ঢেঁকুর তুললো হৃধি। অতঃপর হাত ধুঁয়ে প্লেটটা পরিষ্কার করে ধীর পায়ে রুমে চলে আসলো। মলমটা যেন কোথাও না লেগে যায় তাই হৃধি সেই পা কিছুটা আলগিয়ে আলগিয়ে হেঁটেছে। দরজা বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুতেই ফোনের অবস্থান অনুভব করলো হৃধি। বালিশের নিচে হাতড়ে ফোনটা হাতে নিলো। অনুষ্ঠানে ফোনটা নিতে ভুলে গেছিলো সে।
হৃধি প্রথমেই সোশ্যাল মিডিয়ার বড় প্লাটফর্ম অর্থাৎ ফেসবুকে প্রবেশ করলো। অতঃপর কাঙ্খিত পেজ খুঁজে সেটা থেকে মাহিনের গান বের করলো। কানের সামনে ফোনটি নিতেই মাহিনের স্নিগ্ধ, মাধুর্যময় কন্ঠস্বরে গাওয়া গান শ্রবণ হলো। মুহূর্তে-ই হৃধির গায়ের প্রতিটি লোম খাঁড়া হয়ে যায় অদ্ভুত শিহরণে। আবেশে হৃধির চোখ জোড়া বুজে যায়। গানের প্রতিটি লাইনকে হৃধি অনুভব করছে, নিবিড়ভাবে অনুভব করছে।

হৃধি যেন এক মুহূর্তের জন্যে ভুলে গেলো সন্ধ্যা রাতের সম্পূর্ণ ঘটনা। সে এখন মাহিনকে ভাবতে ব্যস্ত, মাহিনকে কল্পনা করতে ব্যস্ত, মাহিনকে শুনতে ব্যস্ত। আচ্ছা, তার এই ভাবনা গুলো আদৌ ভালোবাসার রূপ নিবে নাকি ইতিমধ্যে ভালোবাসার রূপ নিয়েছে! হৃধির হৃদয় কী চায়? কাকে চায়?

—————————–
গতকাল হুট করে দরজা বন্ধ করে রুমে বন্দি থাকায় হৃধি কম বকা শুনেনি রাবেয়া খাতুনের থেকে। রিনা তো সকালেই ছুটেছে বাজারের উদ্দেশ্যে। হৃধি মায়ের কথা শুনতে শুনতে টিভি দেখছে। পা এখন বেশ ভালো আছে। সামান্য কাটা জায়গা ক্ষণস্থায়ী ছিলো। মাহিন যা যত্ন করেছে তাতে হয়তো ভোরের দিকেই ব্যাটা ক্ষত জানালা দিয়ে পালিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিনা আসলো। কোনরকমে বাজারের ব্যাগটা রান্নাঘরে রাবেয়া খাতুনের হাতে দিয়ে এসে সোজা হৃধির নিকট চলে আসে। রিনার সমস্ত মুখশ্রীতে সুখের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। হৃধি কিছুটা ভড়কালেও প্রকাশ করে না। হৃধি ভ্রু কুচকে তাকাতেই রিনা চোখ-মুখ চিকচিক করে বলে,
–“আপা গোহ! মাহিন ভাই কতো ভালা। আমারে বাজারের ব্যাগ উঠাইতে সাহায্য করসে। আমি তো হাওয়ায় ভাসতাসি। এডা কোনো পুরুষ না, সাক্ষাৎ পক্ষীরাজ। আপা! আমারে ধরেন। আমি অজ্ঞান হইয়া যাইতাসি!”

~চলবে, ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here