হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ১৭ (ভালোবাসা প্রকাশ)

0
511

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ১৭ (ভালোবাসা প্রকাশ)
#লেখকঃ- Tamim Ahmed

আরশির জন্য ছেলে পছন্দ করা হয়েছে এটা শুনে ফারহানের মন মেজাজ প্রচন্ডরকম খারাপ হয়ে আছে। ফারহান অফিসে বসে বসে ভাবছে, ” আরশির জন্য যেহেতু ছেলে পছন্দ করা হয়েছে তাহলে তাকে বিয়ে দেওয়ার কথা চলছে নিশ্চয়ই। আর রুহি তো বললো আরশির আব্বু ওই ছেলেটার সাথে আরশির আকদ করিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আরশি যদি মত দেয় তাহলে নিশ্চয়ই মামা ওই ছেলেটার সাথে আরশির আকদ করিয়ে দিবেন। কিন্তু আরশিকে তো আমি সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবেসে আসছি। ওর বিয়ে হয়ে গেলে আমার কি হবে? আমি কাকে নিয়ে ঘর বাঁধব? আর আরশি যেহেতু ছেলেটার সাথে দেখা করতে গিয়েছে তাহলে ছেলেটাকে ভালো লাগলে নিশ্চয়ই সে মামাকে বলবে ছেলে তার পছন্দ হয়েছে। কেননা আরশির তো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই বা সে কাউকে পছন্দ করে বলেও তো মনে হয়না। তাহলে তার ছেলেটাকে পছন্দ না হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে আরশি ওই ছেলেটাকে পছন্দ করার আগে যদি আমি তাকে নিজের মনের কথাগুলো বলে দেই তাহলে হয়তো আরশি ওই ছেলেটাকে নাও পছন্দ করতে পারে। হ্যাঁ এটাই উপযুক্ত সময় আরশিকে নিজের মনের কথাগুলো বলে দেওয়ার। তা না হলে আরশিকে আমি যেকোনো সময় হারিয়ে ফেলতে পারি। আমি কালকেই একবার আরশির সাথে দেখা করে তাকে নিজের মনের কথাগুলো বলে দিব।”

টুক… টুক…

-“May I Come In Sir?”

ফারহান একা একা নিজের ক্যাবিনে বসে আরশির বিষয়টা নিয়ে ভাবছিল এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন তার ক্যাবিনের দরজায় নক করে উক্ত কথাটা বললো।

-“Yes Come In.”

ফারহানের অনুমতি পেয়ে ক্যাবিনের দরজা ঠেলে নীলা ভিতরে ঢুকলো আর ফারহানের টেবিলের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে তার দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো, “স্যার এই ফাইলটায় আপনার একটা সাইন লাগবে?”

ফারহান কিছু না বলে নীলার থেকে ফাইলটা নিয়ে কিছুক্ষণ পড়ে সেটায় একটা সাইন দিয়ে দিল। ফারহানের থেকে সাইন নেওয়া হয়ে গেলে নীলা ফাইলটা নিয়ে “আসি স্যার” বলে চলে যেতে লাগলো। ফারহানও সাথে সাথে পিছন থেকে ডাক দিয়ে নীলাকে দাঁড়াতে বললো। ফারহানের কথায় নীলা দাঁড়িয়ে গেল আর তার সামনে ফিরে বললো, “কিছু বলবেন স্যার?”

-“আপনার আম্মু সুস্থ হয়েছেন?”

-“জি স্যার কিছুটা।”

-“কি হয়েছে আপনার আম্মুর?”

-“মাঝেমধ্যে প্রচন্ডরকম মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় স্যার।”

-“একটা ডাক্তারের কাছে গিয়ে উনার চেকআপ করালেই তো হয়।”

-“জি স্যার আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে করবো ভাবছি।”

-“আচ্ছা তাহলে আপনি এবার যান।”

তারপর নীলা কিছু না বলে ফারহানের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে গেল। নীলা চলে যাওয়ার পর ফারহান একটা ফাইল নিয়ে একটু কাজ করতে লেগে পরল।

.
রাতেরবেলা ফারহান বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দিতেই কিছুক্ষণ পর তার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন। আজ এতো সহজে দরজা খেলাতে ফারহান বেশ অবাক হলো বটে কিন্তু এর কারণ জানতে গিয়ে তার আম্মুকে কোনো প্রশ্ন করলো না। কেননা এতে যদি তার আম্মু পুনরায় তার সাথে তার বিয়ে নিয়ে কথা তুলে বসেন। তাই ফারহান চুপচাপ ভিতরে ঢুকে তার রুমের দিকে যেতে লাগলো। ফারহান করেন পা এগুতেই তার আম্মু পিছন থেকে বলে উঠলেন, ” কাল তোর খালা-খালু আমাদের এইখানে বেড়াতে আসছেন। কাল অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস।”

রোকসানা বেগমের কথা শুনে ফারহান সাথে সাথে পিছনে ঘুরে দাঁড়ালো আর বলে উঠলো, “শুধু খালা-খালু’ই আসবেন আর কেউ আসবে না?” মানে ওরা দু’জনই আসবেন আর কেউ তো আসবে না তাইনা?”

-“ওদের সাথে তো তানিশাও আসবে। তানিশাকে একা রেখে ওরা আসবে নাকি?”

-“ওহ আচ্ছা তার মানে আমার জন্য একটা বিপদ আসতে চলেছে।” আস্তে আস্তে।

-“কিছু বললি নাকি?”

-“না কই কি বললাম। বললাম আমি তাহলে এখন রুমে গেলাম।” কথাটা বলেই ফারহান সেখান থেকে তার রুমে চলে আসলো।

.
রাতেরবেলা খাবার খেয়ে আরশি তার রুমে আসতেই দেখলো তার ফোন বেজে চলছে। তাড়াতাড়ি করে ফোনটা হাতে নিতেই দেখল ফারহান কল দিয়েছে। আরশি কিছু না ভেবে কলটা রিছিভ করলো।

-“হ্যালো।”

-“হে আরশি? কি করছিস?”

-“এইতো বসে আছি।”

-“রাতের খাবার খেয়েছিস?”

-“হ্যাঁ খেয়ে মাত্র রুমে আসলাম। তুমি খেয়েছ?”

-“না আরেকটু পরে খাব। আচ্ছা তোকে যে কারণে কল দিলাম শুন। কাল একবার ভার্সিটি শেষে _____ এই পার্কে চলে আসিস তো। তোর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”

-“তো পার্কে কেন আসা লাগবে? ফোনেই বলে দাওনা কি বলবা।”

-“না ফোনে বলা যাবে না। তুই কাল ৩ টার দিকে ওই পার্কে চলে আসিস। আমি তোর জন্য পার্কের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো। আসিস কিন্তু আর সাথে কাউকে নিয়ে আসিস না আবার। এখন তাহলে রাখি বাই।” বলেই ফারহান কল কে*টে দিল।

আরশিকে কিছু বলতে না দিয়েই ফারহান কল কে*টে দিল। আরশি তার ফোনটা একপাশে রেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো, “ভাইয়া আমায় কি এমন কথা বলবেন যার জন্য আমায় সেই পার্কে আসতে বলেছেন? জরুরি কথা কি ফোনে বলা যায়না নাকি? কাল পার্কে গেলেই বুঝতে পারব ভাইয়া আমায় কি বলার জন্য ডেকেছেন। এখন আর এইসব নিয়ে এতো ভেবে লাভ নেই।”

এদিকে ফারহানও কল কে*টে ভেবে যাচ্ছে কাল আরশি সেই পার্কে আসবে কি-না। আরশি তো কখনো তার কথা অমান্য করেনি। যেগুলো করেছে সেগুলো খুবই সাধারণ বিষয়। তবে ফারহানের মনে হচ্ছে আরশি কাল সেখানে আসবেই। ফারহান এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে, কাল আরশিকে কীভাবে কি বলবে এইসব। সব পরিকল্পনা করার পর ফারহান একটা কথাই ভাবছে তার কথাগুলো শুনে আরশি কেমন রিয়েক্ট করবে। আদৌও কি আরশি তাকে বোঝার চেষ্টা করবে নাকি আরশি কোনো একটা কারণ দেখিয়ে বলবে তার পক্ষে এমনটা করা সম্ভব না। এইধরণের নানান ভাবনা ফারহানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

.
পরেরদিন দুপুর ৩ টার দিকে ফারহান সেই পার্কে চলে গেল আর গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরশির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর আরশি সেখানে এসে উপস্থিত হলো। আরশিকে দেখেই ফারহানের মুখটা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এদিকে আরশি ফারহানের কাছে এসে বললো, “ভাইয়া এবার বল কি বলবা।”

-“এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? আয় ভিতরে গিয়ে এক জায়গায় বসে তারপর বলছি।” বলেই ফারহান সেই পার্কের ভিতরে ঢুকে পরল।
ফারহান ভিতরে ঢোকার পর আরশিও ভিতরে ঢুকে তাকে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু যেতে লাগলো। তারপর ফারহান আরশিকে নিয়ে একটা খালি ব্রেঞ্চে গিয়ে বসে পরল। বেশ কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ করে বসে রইলো। নিরবতা কা*টিয়ে ফারহান আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আচ্ছা মামা যেই ছেলেটাকে তোর জন্য পছন্দ করেছেন সেই ছেলেটাকে উনি কীভাবে চিনেন?”

-“উনি আব্বুর বন্ধুর ছেলে।”

-“গতকাল কি মামার বলাতে সেই ছেলেটার সাথে তুই দেখা করতে গিয়েছিলি?”

-“না আমি নিজেই আব্বুকে বলেছিলাম আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই। আর আব্বুকে দিয়ে বলে দিয়েছি উনি যেন এই জায়গায় চলে আসেন।”

-“তা ছেলে কি তোর পছন্দ হয়েছে?”

-“একদিনেই কাউকে পছন্দ করে ফেলা যায় নাকি? আর এটা যেহেতু বিয়েসাদীর ব্যাপার তাই আমি চাচ্ছি আগে ওর ব্যাপারে ভালো করে সবকিছু জেনে নিতে। তার ব্যাপারে সবকিছু জেনে যদি মনে হয় ছেলেটা ভালো তাহলে তার সাথে বিয়ের সম্পর্ক…”

-“বিয়ের সম্পর্ক অবশি যাওয়া লাগবে না। তুই হয়তো জানিস না একটা মানুষ তোকে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভালোবেসে আসছে এবং এখনো বাসে। আর ওই ছেলেটার সম্পর্কে তুই খুব ভালো করেই জানিস। ছেলেটার চরিত্র কেমন, ছেলেটার মেন্টালিটি কেমন, ছেলেটার চালচলন কেমন সবকিছুই তুই ভালো করেই জানিস। আমার মনে হয়না এই ছেলেটাকে রেখে অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করে তুই জীবনে সুখী হতে পারবি। তাই শুধু শুধু মামার পছন্দের ছেলের লাইফ স্টাইল ঘেটে কোনো লাভ নেই।” একদমে কথাগুলো বলেই ফারহান থামলো।

এদিকে ফারহানের কথাগুলো শুনে আরশি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরশি নিজেও ভেবে পাচ্ছে না ফারহান কার কথা বলছে যে তাকে বিগত ১০ বছর ধরে ভালোবেসে আসছে। আরশি আর তর সইতে না পেরে বলে উঠলো, “সেই ছেলেটা কে ভাইয়া? নাম কি তার?”

-“সে তোর সামনেই বসে আছে।”

-“আমার সামনে তো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। ভাইয়া ফাজলামি কর না তো। সত্যি করে বল কে সে?”

-“আমি ফাজলামি করছি না আরশি। আমিই সেই ছেলেটা যে তোকে বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভালোবেসে আসছি। তাইতো আমি তোকে ছোটবেলা থেকেই সবসময় শাসিয়ে রাখতাম আর নজরে নজরে রাখতাম যেন তুই আমার থেকে হারিয়ে না যাস। ভেবেছিলাম তোর পড়াশোনা শেষ হলে তোকে নিজের মনের কথাগুলো বলবো। কিন্তু গতকাল যখন শুনলাম মামা তোর বিয়ের জন্য একটা ছেলেকে পছন্দ করেছেন তখন থেকেই আমার মনে হতে লাগলো কে যেন আমার শরীর থেকে আমার কলিজা ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস কর আরশি আমি একটা কথাও মিথ্যা বলছি না। আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।”
.
.
Loading……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here