হৃদ_মাঝারে_তুমি,১৫,১৬

0
515

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,১৫,১৬
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৫
,,
,,
-“রুহি, আব্বু তো উনার এক বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।”

-“কিহহ! সিরিয়াসলি? আরশি তুই আমার সাথে ফান করছিস না তো?” রুহি বেশ চমকে উঠে কথাটা বললো।

-“আরে আজব! তোর সাথে আমি ফান করতে যাব কেন? আর তুই এতো অবাক হচ্ছিস কেন? আমার তো আর এখনই বিয়ে হয়ে যাবে না। তবে আব্বু আর উনার এক বন্ধু মিলে নাকি ঠিক করেছেন আমাদের বিয়ে দিবেন।”

-“তা ছেলে দেখতে কেমন? আর বর্তমানে কোনো জব টব করে নাকি?”

-“ছেলেকে আমি এখনো দেখিনি। আর ছেলে কোনো জব করে বলে মনে হয়না। কেননা আব্বু বলেছেন ছেলে নাকি আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিদেশ চলে যাবে। তাই আব্বু চাচ্ছেন ওর সাথে আমার আকদ করিয়ে দিতে।”

-“ছেলে ৬ মাস পর বিদেশ চলে যাবে! তাহলে তুই আর অপেক্ষা করছিস কেন? আংকেলকে বল এখনই ওর সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিতে। যাতে ছেলেটা পরেরবার দেশে আসলে তোকেও সাথে করে নিয়ে যেতে পারে। আর একবার বিদেশ চলে গেলে তো তোর লাইফটাই স্যাটেল হয়ে যাবে।”

-“কি পাগলের মতো কথা বলছিস তুই। আমি ওই ছেলেটাকে এখন অবধি সামনা-সামনি দেখিই নাই, আর ওর সম্পর্কে তো কিছু জানিও না। আর তুই বলছিস আমি আব্বুকে বলবো ওর সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিতে!”

-“আরে তো কি হয়েছে? একদিন সময় করে ছেলেটার সাথে সামনা-সামনি দেখা করে নে। তারপর বিয়ের জন্য…”

-“হ্যাঁ করে দিব তাইতো? এই তোর যদি বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে ওই ছেলেটাকে বিয়ে করে নে যা।”

-“হ্যাঁ আব্বু যদি আমায় কখনো এমন ছেলের কথা বলে তাহলে তো আমি তাকে বিয়ে করবোই। আমি কি তোর মতো গাধি নাকি যে এমন ছেলে হাত ছাড়া করবো।”

-“রুহির বাচ্চা তোকে আমি… কোথায় ভাবলাম তোর সাথে এই বিষয়টা একটু শেয়ার করে দেখি তুই কি বলিস। কিন্তু তুই তো এক ডাল ছেড়ে অন্য ডালে চলে গেলি। যা তোর সাথে আর কথাই বলবো না, গেলাম আমি।”

-“আরে আরে কোথায় যাবি? আচ্ছা আমি সরি তুই বস। আমি আর কিছু বলবো না যা, যা বলার তুই-ই বল। মানে আংকেল যেহেতু চাচ্ছেন উনার বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিবেন তা তুই আংকেলকে কি বলেছিস?”

-“তোর কাছে যা যা বলেছি আব্বুকেও তাই বলেছি।”

-“তোর আংকেল কি বললেন?”

-“বলেছেন ওর সাথে তাহলে একদিন কোথাও দেখা করতে। দেখা করে ওর ব্যাপারে টুকটাক জেনে নিতে।”

-“তখন তুই কি বললি?”

-“বলেছি একদিন দেখা করে টুকটাক জানলেই কি হবে নাকি। বিয়েসাদীর ব্যাপার, ছেলেটার সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে না।”

-“আচ্ছা তোকে একটা প্রশ্ন করি?”

-“হ্যাঁ কর।”

-“তুই কি আংকেলের বন্ধুর ছেলেকে বিয়ে করতে চাস মানে ওই ছেলেকে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে তোর?”

-“দেখ এখন আমার বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। আগে পড়াশোনা তারপর বিয়ে। এই কথাটা আমি আব্বুকেও বলেছি। আর আব্বুও নাকি উনার বন্ধুকে বলেছেন আমি যেটা চাইব সেটাই হবে। তবে একটা সময় তো বিয়ে করতেই হবে কিন্তু একটা অচেনা অজানা ছেলেকে কীভাবে নিজের জীবনসঙ্গী বানাবো বল?”

-“কথাগুলো ঠিক বলেছিস। আর আংকেল যেহেতু তোকে বিয়ের জন্য এতো চাপ দিচ্ছেন না তাহলে তুই ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ কি করবি। তবে আমার মতে তুই ওই ছেলেটার সাথে একদিন সামনা-সামনি দেখা কর আর ওর ব্যাপারে টুকটাক কিছু জেনে নে আর আসার সময় ওর নাম্বারটাও নিয়ে আসিস। তারপর কি করবি সেটা আমি বলে দিব নে।”

-“তাহলে তোকেও আমার সাথে যেতে হবে আমি একা একা যেতে পারবো না।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে যাব নে। তুই তাহলে একবার আংকেলকে বলিস তুই ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে চাস আর এটাও বলিস আংকেল যেন ওই ছেলেটাকে রাজ রেস্টুরেন্টে আসতে বলে।”

-“আচ্ছা বলবো নে।”

এতক্ষণ যাবত আরশি আর রুহি ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে বসে এইসব গল্প করছিল। রুহির কথায় আরশি সিদ্ধান্ত নিল তার আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে একবার দেখা করে দেখবে ছেলেটা কেমন। আরশি এটাও ঠিক করে নিল যে আজকেই সে বাসায় গিয়ে তার আব্বুকে ওই ছেলেটার সাথে দেখা করার বিষয়টা জানাবে।

.
-“স্যার আমার আম্মু অনেক অসুস্থ। আমার এক্ষুণি বাসায় যাওয়া লাগবে। আজকে কি…”

-“আপনার আম্মুর কি এমন হয়েছে যে উনি দু’দিন পর পর-ই অসুস্থ হয়ে পরেন? উনার কোনো সমস্যা থাকলে উনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান না কেন?”

-“না মানে স্যার…”

-“দেখুন ইদানীং আপনি অফিসে প্রায়ই লেইট করে আসেন, আবার কোনোদিন তো আসেনও না। আসলে আবার মাঝেমধ্যে আপনার আম্মুর অসুস্থতার কথা বলে চলে যান। এইভাবে চলতে থাকলে হবে নাকি?”

নীলা কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। নীলার নিরবতা দেখে ফারহান বলে উঠলো, “যান আজকের জন্য আপনাকে ছুটি দিলাম। তবে নেক্সট টাইম আমি আর আপনার কোনো অজুহাত শুনবো না, কথাটা যেন মনে থাকে।”

-“Thank You Sir.” বলেই নীলা ফারহানের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে গেল।

.
-“স্যার কি তোমায় ছুটি দিয়েছে আপু?”

নীলা ফারহানের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেক্সে আসতেই তার পাশের কলিগ মিতু নীলাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। মিতুর কথা শুনে নীলা তার দিকে তাকিয়ে বললো, “হ্যাঁ দিয়েছেন তবে নেক্সট টাইম উনি আর আমার কোনো অজুহাত শুনবেন না বলেছেন।”

-“ইদানীং তুমি ঘন ঘন ছুটি নিচ্ছ তাই স্যার তোমাকে এই কথাটার দ্বারা একটা ওয়ার্নিং দিলেন আর কি। আচ্ছা আপু আমায় একটা কথা বল, আন্টির কি এমন হয়েছে যে কয়দিন পর পর-ই তোমাকে ছুটি নিতে হয়?”

-“এখন আমার বাসায় যেতে হবে, তোমাকে আমি এই বিষয়ে অন্য একদিন বলবো নে আজকে আমি যাই।” কথাটা বলেই নীলা হনহন করে অফিসের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।

.
-“আব্বু তোমার বন্ধুর ছেলের সাথে আমি দেখা করতে চাই।”

রাতেরবেলা আমজাদ হোসেন উনার পরিবারের সাথে খাবার খেতে বসেছেন। এমন সময় হঠাৎ আরশি তার আব্বুকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। আমজাদ হোসেন আরশির কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হলেন বটে। কেননা উনি গতকালই আরশিকে সাকিবের কথা বলেছিলেন আর আরশি গতকাল বলেছে সে কিছুদিন ভেবে জানাবে। কিন্তু সে আজকে বলছে সে সাকিবের সাথে দেখা করতে চায়, বিষয়টা আমজাদ হোসেনের কাছে একটু অদ্ভুতই লাগছে।

-“তুমি না গতকাল বললে কিছুদিন ভেবে জানাবে। তো একদিনেই ভেবে নিলে নাকি?”

-“হ্যাঁ। ভেবে দেখলাম একটা অচেনা ছেলেকে নিয়ে অযথা কিছু ভেবে লাভ নেই। তার চেয়ে ভালো ছেলেটার সাথে একদিন দেখা করি তারপর আস্তে আস্তে ছেলেটার ব্যাপারে সবকিছু জানা যাবে।”

-“ঠিক আছে আমি তাহলে সাকিবকে একবার কল করে বলবো নে যে তুমি তার সাথে দেখা করতে চাও। তা ওকে কোথায় আসতে বলবো?”

-“আমাদের ভার্সিটির দিকে একটা রেস্টুরেন্ট আছে রাজ রেস্টুরেন্ট। উনাকে সেখানে আসতে বলিও দুপুর ৩ টার দিকে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে বলবো নে।”

-“এখনই বলে দাওনা। নাহলে পরে যদি উনি বলেন উনি দেখা করতে পারবেন না। তখন তো আমাদের শুধু শুধু রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে হবে।”

-“আচ্ছা দাঁড়াও আমি সাজ্জাদকে কল দিয়ে বলছি।” বলেই আমজাদ হোসেন উনার ফোনটা নিয়ে উনার বন্ধু সাজ্জাদকে কল দিলেন।

কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর উনার বন্ধু সাজ্জাদ কল রিছিভ করলেন।

-“হ্যালো সাজ্জাদ?”

-“হে আমজাদ বল?”

-“তোকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলাম। আরশি সাকিবের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। তুই একটু সাকিবকে জিজ্ঞেস করে দেখ তো সে কাল দুপুর ৩ টার দিকে ____ এই জায়গার একটা রাজ রেস্টুরেন্টে আসতে পারবে কি না।”

-“আচ্ছা দাঁড়া আমি সাকিবকে জিজ্ঞেস করে দেখছি।” কথাটা বলে উনি উনার ছেলেকে ডাক দিয়ে কথা বলতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ কথা বলে উনি আবার আমজাদ হোসেনকে বললেন, “হ্যালো আমজাদ, সাকিব দেখা করতে পারবে বলেছে।”

-“আচ্ছা তাহলে এখন রাখছি।” বলেই আমজাদ হোসেন কল কে*টে দিলেন। কল কে*টে দিয়ে উনি আরশির দিকে তাকিয়ে বললেন, “সাকিব দেখা করতে পারবে বলেছে। তুমি তাহলে কাল ভার্সিটি শেষে তার জন্য সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে অপেক্ষা করিও।”

-“আচ্ছা আব্বু।”

তারপর আরশি আর কোনো কথা না বলে নিজের খাবার শেষ করে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে আরশি রুহিকে কল করে বলে দিল সে কাল সাকিবের সাথে দেখা করবে। সে যেন কাল ভার্সিটিতে আসে। এই কথা বলেই আরশি কল কে*টে দিয়ে বিছানায় পরে ঘুমিয়ে পরলো।
.
.
Loading…….

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৬
,,
,,
ভার্সিটি শেষে আরশি আর রুহি ভার্সিটির পাশের রাজ রেস্টুরেন্টে এসে বসে আছে আর সাকিবের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে তারা দু’জন একটা টেবিলে বসে আছে কিন্তু সাকিবের আসার কোনো নামই নেই। আরশি আর রুহি দু’জনে শুধু একটু পর পর রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর সাকিবের আসার অপেক্ষা করছে। হঠাৎ রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে একটা শার্ট-প্যান্ট পরা ছেলে রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকলো। ছেলেটা ভিতরে ঢুকেই রেস্টুরেন্টের চারদিকে চোখ বুলিয়ে কাকে যেন খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ ছেলেটার আরশি আর রুহির দিকে চোখ পরল অতঃপর কি যেন ভেবে ছেলেটা আরশি আর রুহির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ছেলেটার আসার দৃশ্য দেখে রুহি আরশিকে বললো,

-“কিরে এই ছেলেটা তো আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এটা ওই ছেলেটা নয়তো?”

-“আমি কি জানি, আমি কি কখনো তাকে দেখেছি নাকি।”

-“আচ্ছা দেখি ছেলেটা আমাদের কাছেই আসে নাকি অন্য কোথাও যায়।” বলেই রুহি আর আরশি চুপ করে বসে রইলো।

এদিকে সেই ছেলেটা হেঁটে হেঁটে আরশি আর রুহির কাছাকাছি এসে থেমে গেল আর বলে উঠলো, “এক্সকিউজ মি? আপনাদের মধ্যে কি আরশি নামের কেউ আছেন?”

ছেলেটার কথা শুনে রুহি একবার আরশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “এইতো সে আরশি।” আরশিকে দেখিয়ে।

-“ওহ তাহলে আপনিই আরশি! হাই আমি সাকিব। সরি আসতে অনেক দেরি করে ফেললাম।” আরশির দিকে তাকিয়ে।

-“সমস্যা নেই। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন না।”

-“জি।” বলেই সাকিব ছেলেটা আরশি আর রুহির অপরপ্রান্তে বসে পরল। “আপনি তো একা আসবেন শুনেছিলাম। তাহলে উনি কে?” রুহির দিকে তাকিয়ে।

-“ও আমার ফ্রেন্ড নাম রুহি। আসলে লাইফের ফার্ট টাইম কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছি। একা একা আসলে আনইজি ফিল করতাম তাই সাথে করে আমার বান্ধবীকে নিয়ে এসেছি। কেন ও থাকাতে কি আপনার কোনো প্রব্লেম হবে?”

-“না না প্রব্লেম হবে কেন। উনাকে সাথে নিয়ে এসে ভালোই করেছেন। নাহলে দেখা যাবে আমি যদি কিছু জিজ্ঞেস করি আপনি শুধু সেটার উত্তর দিচ্ছেন নিজ থেকে কিছুই বলছেন না। তাহলে আমাদের দেখা করাটা বিফলে চলে যাবে।”

সাকিব ছেলেটার কথাগুলো শুনে আরশি শুধু একটু হাসির ভঙ্গ করলো।

-“আপনারা মেবি অনেক্ষণ যাবত এইখানে এসে বসে আছেন। ক্ষুধা লাগলে কিছু অর্ডার দেন।”

-“না না আমরা কিছু খাব না।”

-“আরে খাবেন না কেন? অর্ডার দিন। দাঁড়ান আমি ওয়েটারকে ডাক দিচ্ছি।” বলেই সাকিব ছেলেটা ওয়েটারকে ডাকতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর সেখানে একটা ছেলে এসে উপস্থিত হলো আর বললো, “জি স্যার, আপনাদের কি লাগবে?”

-“দাঁড়ান বলছি। বলেন আপনারা কি খাবেন?” আরশির দিকে তাকিয়ে।

-“আমরা কিছু…”

-“ভাইয়া আমাদের জন্য দুইটা কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে দেন। আসলে ও একটু লাজুক টাইপের মেয়ে তো তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।” আরশিকে থামিয়ে রুহি বললো কথাগুলো।

-“আচ্ছা তাহলে আপনি আমাদের জন্য তিনটা কোল্ড কফি নিয়ে আসেন।” ওয়েটারকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো সাকিব ছেলেটা।

-“আচ্ছা স্যার আপনারা একটু বসুন আমি ৫ মিনিটের মধ্যেই আপনাদের জন্য কোল্ড কফি নিয়ে আসছি।” বলেই ওয়েটার ছেলেটা সেখান থেকে চলে গেল।

-“এই তুই এমন নির্লজ্জের মতো কোল্ড কফি অর্ডার দিতে বললি কেন?” আরশি রুহির কানে কানে বললো কথাটা।

-“তুই নিজেও তো একসময় না পেরে কিছু একটা আনার জন্য বলে দিতি। কিন্তু ততক্ষণে তুই অনেক সময় নষ্ট করতি তাই আমিই তোর বদলে অর্ডার দিয়ে দিলাম। ভালো করি নাই বল?”

-“হ্যাঁ খুব ভালো করেছিস। এখন চুপ করে বসে থাক।” খানিকটা রেগে বললো কথাটা।

-“আচ্ছা আপনি তো এইবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছেন তাইনা?” আরশিকে উদ্দেশ্য করে।

-“জি। আপনি?”

-“আমি এইবার অনার্স লাস্ট ইয়ারে। তবে ৪ বছরের কোর্সটা শেষ করতে পারবো না মেবি। কেননা তার আগেই আমার আমেরিকা যাওয়ার ভিসা চলে আসতে পারে।”

-“ওয়াও আপনি তাহলে আমেরিকা যাচ্ছেন!” রুহি বললো কথাটা।

-“জি আমেরিকা যাওয়ার কাজ চলছে আরকি।”

-“আচ্ছা আপনাকে কথা জিজ্ঞেস করি?” আরশি বললো।

-“জি করেন।”

-“আব্বুর মুখে যতটুকু শুনেছি তাতে বুঝতে পারলাম আপনার আব্বু আর আমার আব্বু দু’জনে বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু হঠাৎ করে আংকেলের চাকরি বদলি হওয়াতে আপনাদের অন্য শহরে চলে যেতে হয়। কিন্তু আপনি এই শহরে কি করছেন মানে আপনি কি এইখানে কোনো জব টব করছেন নাকি?”

-“আংকেল কি আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেননি?”

-“না আসলে আমি আব্বুকে আপনার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। ভাবলাম আপনার সাথে যেহেতু দেখা করবো তাহলে আপনার থেকেই নাহয় সবকিছু জেনে নিব।”

-“আচ্ছা তাহলে শুনেন। আমি আসলে এই শহরের একটা ভার্সিটিতে পড়ি। _____ এই নামে একটা ভার্সিটি আছে _____ এই জায়গায়। সেখানে আমার এক ফুপি থাকেন আমি উনার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করি।”

-“ওহ। আচ্ছা আরেকটা কথা আমার আব্বু আর আপনার আব্বু মিলে নাকি আমাদের আকদ করানোর কথা ভেবেছেন যেহেতু আপনি ৬ মাস পর বিদেশ চলে যাবেন। তো এই ব্যাপারে আপনার কি মত?”

-“আমি কখনো আমার আম্মু-আব্বুর কথার অবাধ্য হইনা। আব্বু আপনাকে আমার জন্য পছন্দ করেছেন, এখন আব্বু যদি চান আমি বিদেশ যাওয়ার আগে আপনার সাথে আমার আকদ করিয়ে দিতে তাহলে আমার এইখানে কোনো না নেই। তবে এইখানে আপনারও মত থাকতে হবে। কেননা আপনাকে জোর করে রাজি করানোর কোনো অধিকার তো আমার নেই।”

-“আচ্ছা আপনি যদি আমেরিকা চলে যান তাহলে তো আর ৪-৫ বছরের মধ্যে দেশে ফিরবেন না তাইনা?”

-“মেবি।”

-“আচ্ছা আপনার কি…”

-“আরে আরশি তুই এইখানে! আরে রুহিও যে! কি খবর তোমাদের?” হঠাৎ কোথা থেকে জানি ফারহান সেখানে উপস্থিত হয়ে কথাগুলো বললো।

আরশি আর রুহি ফারহানের গলার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালো। দেখল ফারহান তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহানকে এই জায়গায় দেখে আরশি আর রুহি দু’জনেই বেশ চমকে উঠলো।

-“আরে ভাইয়া তুমি এইখানে! তুমি এইখানে কি করছ?” আরশি বললো কথাটা

-“এইতো অফিসের একটা কাজে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। এখন কাজ শেষ চলে যাচ্ছিলাম তখনই তোকে আর রুহিকে এইখানে বসে থাকতে দেখলাম। তা তোরা এইখানে…” কথাটা বলার আগেই ফারহানের চোখ পরল সাকিব ছেলেটার দিকে। আরশি আর রুহির টেবিলে একটা অচেনা ছেলেকে বসে থাকতে দেখে ফারহান বেশ অবাক হলো। আর সাথে আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “এই ছেলে কে আরশি?”

-“আরে ভাইয়া আপনি জানেন না উনি কে? এই আরশি তুই ফারহান ভাইয়াকে কিছু বলিসনি নাকি? আর বলবিও বা কি। তোদের তো এখনো আকদ’ই হয়নি হলে তো ভাইয়াদের ফ্যামেলিকে ইনভাইট করতিই।”

-“মানে!”

-“আসলে ভাইয়া আংকেল মানে আরশির আব্বু আরশির জন্য উনাকে (সাকিবকে দেখিয়ে) পছন্দ করেছেন। কিন্তু উনি নাকি ৬ মাস পর আমেরিকা চলে যাবেন তাই আংকেল চাচ্ছেন আরশি আর উনার আকদ করিয়ে দিতে।”

রুহির মুখে এইসব কথা শুনে ফারহানের যেন চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো। ফারহানের মনে হচ্ছে কেউ যেন তার কলিজা ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছে। ফারহান কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারছে না। সে যেন পুরাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তবুও ফারহান আরশির দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে একটা কথা বললো, “রুহি যা বলেছে তা কি সত্যি আরশি?

-“হ্যাঁ ভাইয়া আসলে আ…”

-“আচ্ছা তোমরা তাহলে কথা বল আমার একটু কাজ আছে আমি গেলাম।” বলেই ফারহান দ্রুত পা চালিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল।

আচমকা ফারহানের চলে যাওয়াতে সেখানে উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হলো। তবে আরশি ছাড়া কেউ আর বিষয়টাকে অন্যভাবে নিল না। তারপর আরশি আর সাকিব দু’জনে মিলে আরও বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো। এক পর্যায়ে তাদের যাওয়ার সময় হয়ে এলে আরশি সাকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আচ্ছা আপনার নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে?”

-“জি অবশ্যই। আপনার ফোনটা দেন আমার নাম্বার উঠিয়ে দিচ্ছি।”

-“এই নেন।” সাকিবের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে।

তারপর সাকিব আরশির ফোনটা নিয়ে তার নাম্বার উঠিয়ে দিয়ে বললো, “এই নেন।”

-“Thank You. আচ্ছা আমরা তাহলে আজ যাই।”

তারপর আরশি আর রুহি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে তাদের বাসার দিকে রওনা দিল। ওদিকে সাকিবও রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here