হৃদ_মাঝারে_তুমি,১৩,১৪

0
366

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,১৩,১৪
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৩

-“তোমার হাতে ব্যান্ডেজ কেন ফারহান?”

ক্লাস টিচার আব্দুল মান্নান ক্লাস করাতে এসে প্রথম ব্রেঞ্চে বসে থাকা ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে উক্ত কথাটা বলে উঠলেন। আব্দুল মান্নানের কথাটা শুনে ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রীরা ফারহানের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। এদিকে স্যারের কথাটা শুনে ফারহান কিছু না ভেবেই বলে উঠলো,

-“মা*রামা*রি করতে গিয়ে স্যার।”

-“মা*রামা*রি করতে গিয়ে মানে! কাদের সাথে মা*রামা*রি করেছ?” আব্দুল মান্নান কপাল কুচকে বললেন কথাটা।

-“এইতো ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারের ছেলেদের সাথে।”

-“তা মা*রামা*রি করেছ কেন?”

-“ভার্সিটিতে নতুন এসেই সাধারণ স্টুডেন্টদের রেগিং করা শুরু করেছিল ওরা। প্রথমদিন ওদেরকে এই কাজ করতে নিষেধ করাতে ওরা কিছুটা ক্ষেপে যায়। তার কয়েকদিন পর অর্থাৎ গতকাল ওরা একটা ফাঁদ পেতে আমায় একটা জায়গায় নিয়ে যায়। তারপর সেখানে গিয়ে দেখি ওরা আমাকে মা*রার জন্য অপেক্ষা করছে। তারপর আর কি, ওরা আমাকে মা*রতে এগিয়ে আসলো আর আমি নিজেকে ওদের থেকে বাঁচাতে হালকা করে ওদেরকে ধোলাই দিয়ে দিলাম।”

-“তুমি একা ছিলে?”

-“জি স্যার একাই ছিলাম।”

-“এইসব স্টুডেন্টরা ভার্সিটিতে আসেই অন্যদেরকে উত্ত্যক্ত করার জন্য। এদের সাথে তো আর আমরা টিচাররা কথা বলে পারবো না। তাই এদেরকে এইভাবেই শায়েস্তা করা উচিত। ভালো একটা কাজ করেছ তুমি। আচ্ছা তোমার হাত কি বেশি কে*টেছে নাকি?”

-“না স্যার অল্প একটু কে*টেছে।”

-“ওকে ফাইন। অনেক কথা হয়েছে এবার ক্লাস শুরু করছি সবাই ক্লাসে মন দাও।”

ফাস্ট ইয়ার থেকেই আব্দুল মান্নান স্যারের সাথে ফারহানের বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ভার্সিটিতে আসার পর থেকে ফারহান ভার্সিটির মধ্যে হওয়া অনেক দূর্নীতি, খারাপ কাজ বন্ধ করিয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে যখন ফারহান এক ক্লাস করে উপরে উঠতে লাগলো তখন থেকে তার পিছনের ক্লাসের ছেলেরা এসে তার সাথে সখ্যতা তৈরি করতে লাগলো। কিন্তু ফারহান কখনো এতো ছেলেপেলে পেয়ে ভার্সিটিতে নিজের পাওয়ার দেখায়নি। তবে যেখানেই খারাপ কাজ হতে দেখেছে সেখানেই সে বাধা প্রদান করেছে। আবার মাঝেমধ্যে তার পিছনের ক্লাসের ছেলেরাই নিজেদের দ্বারা খারাপ কাজ দমন করিয়েছে। ফারহানের এইসব কাজের জন্যই মূলত সে আব্দুল মান্নান স্যারের একজন প্রিয় ছাত্র।

.
-“বলিস কি! ফারহান ভাইয়া একাই ওদের সাথে ফাইট করেছিলেন!” রুহি বেশ অবাক হয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো কথাটা।

-“তোর কি মনে হয়, আমি তোর সাথে মিথ্যা বলছি?”

-“আরে সেটা নাহ। তবে একাই এতো মানুষের সাথে উনি কীভাবে পেরে উঠলেন এটাই ভেবে পাচ্ছি না।”

-“আমি তো সবকিছু নিজের চোখে দেখেছি তারপরও আমার কাছে সবকিছু সপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। আর মুখে শোনা কথা তো একটু অবিশ্বাস্যকর মনে হবেই।”

-“আচ্ছা সবই তো বললি কিন্তু ওরা তোকে গতকাল কোথায় নিয়ে গিয়েছিল সেটা তো বললি না।”

-“জানি না কোথাকার একটা গোডাউনে নিয়ে গিয়েছিল।”

-“ওদের যখন ফারহান ভাইয়ার সাথেই শত্রুতা তাহলে ওরা তোকে কেন ধরে নিয়ে গেল?”

-“যাতে ফারহান ভাইয়া আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ওদের কাছে গিয়ে ধরা দেন।”

-“ইশ তোর জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে ফাইট শেষে উনাকে একবারের জন্য হলেও একটু জড়িয়ে ধরতাম। কিন্তু এমনটা আমার সাথে না হয়ে হলো তোর সাথে।” রুহি মন খারাপ করে বললো কথাগুলো।

-“তুই শুধু শুধু ফারহান ভাইয়াকে নিয়ে সপ্ন দেখা বন্ধ কর। উনি তোকে পছন্দ করেন না এটা তো তোর প্রপোজাল রিজেক্ট করেই বুঝিয়ে দিলেন। তারপরও তুই কেন উনাকে মনে নিয়ে বসে আছিস বলতো?”

-“দেখ উনি মোটেও আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করেননি। তবে উনি আমার প্রপোজালের উত্তরও দেননি। তাহলে তুই কীভাবে বলছিস যে উনি আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে দিয়েছেন? হতেও তো পারে উনি আমার প্রপোজাল একচেপ্ট না করে আগে আমাকে ভিতরে ভিতরে ফিল করার ট্রাই করছেন। তারপর যখন উনি বুঝতে পারবেন উনি আমাকে…”

-“উনার এই বুঝা কখনো বাস্তবে রূপ নিবে না। কেন’না উনি তোকে কোনোকালেই পছন্দ করবেন না। তুই শুধু শুধু উনাকে নিয়ে সপ্ন দেখছিস।”

-“তুই আমার বান্ধবী নাকি শত্রু বলতো? সবসময় তুই নেগেটিভ কথা বলিস কেন হে?”

-“কই নেগেটিভ কথা বললাম? যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম।”

-“চুপ থাক আর কিছু বলা লাগবে না।”

রুহির কথা শুনে আরশি চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তাদের বাকি বান্ধবীরা ক্লাসে চলে আসলো। তারা এসেই রুহিকে দেখে বললো, “কিরে রুহি, তোর কপাল কা*টলো কি করে?”

-“আর বলিস না গতকাল একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”

-“কি ঘটনা?”

-“শুন তাহলে।” তারপর রুহি সবাইকে গতকালের ঘটনাটা বললো।

-“আরে ওই ছেলেটা তো সাংঘাতিক মানুষ। একটা চ*ড়ের প্রতিশোধ নিতে কেউ এমন কাজ করে নাকি! আর ফারহান ভাইয়াও কীভাবে এতগুলো ছেলের সাথে পেরে উঠলেন! এই আরশি, ফারহান ভাইয়া কি কখনো কোনো জায়গা থেকে ফাইটের ট্রেনিং নিয়েছিলেন নাকি?” ফারিহা বললো কথাগুলো।

-“আমার জানামতে এমন কিছু উনি করেননি।”

এইভাবে তাদের মধ্যে নানানরকম কথা চলতে লাগলো। একসময় ক্লাসে স্যার চলে আসলে সবাই কথা বন্ধ করে দিল। ওইদিনের মতো সবকটা ক্লাস করে সবাই যার যার বাসায় চলে গেল।

এক সপ্তাহ পর…

-“এই আরশি, আজ তোর জন্মদিন না?”

ভার্সিটিতে এসে আরশি তার ফ্রেন্ডদের সাথে ক্লাসে বসে বসে গল্প করছিল। এমন সময় হঠাৎ রুহি আরশিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে উঠলো।

-“হ্যাঁ কিন্তু তুই কীভাবে জানলি?”

-“আরে তুই-ই তো একদিন বলেছিলি যে ২০ তারিখে তোর জন্মদিন। তা জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় কোনো পার্টি দিবি না?”

-“না রে, আমার এইসব করতে ভালো লাগে না।”

-“ওকে তাহলে আজ তুই আমাদেরকে ভার্সিটি শেষে ট্রিট দিবি।”

-“কিন্তু আমি তো আজ বেশি টাকা আনি নাই।”

-“আমরা কিছু শুনতে চাইনা। আমাদেরকে তুই আজ ট্রিট দিবি মানে ট্রিট দিবি ব্যস।”

-“হ্যাঁ রুহি কিন্তু ঠিকই বলেছে। আজকে তোকে আমাদের ট্রিট দিতে হবে।” জেরিন বললো কথাটা।

-“কিন্তু…”

-“কোনো কিন্তু না। ট্রিট দিবি মানে দিবি।”

সবার জোরাজুরিতে শেষমেশ আরশি তাদেরকে ট্রিট দিতে রাজি হলো। কিন্তু মনে মনে আরশি একটা কথাই চিন্তা করছে ট্রিট দিতে গেলে তো অনেক টাকাই লাগবে কিন্তু সে তো আজ বেশি টাকা নিয়ে আসেনি। সবাইকে খাওয়ালে সেই খাবারের বিল সে কীভাবে দিবে?

.
ভার্সিটি শেষে আরশিকে নিয়ে তার বান্ধবীরা একটা রেস্টুরেন্টে চলে আসলো। কিন্তু রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢোকার আগে রুহি পিছন থেকে আরশির চোখ চেপে ধরলো আর আরশিকে একদম চুপ করে থাকতে বললো। আরশিও কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে তাদের সাথে ভিতরে গিয়ে ঢুকলো। অতঃপর সবাই আরশিকে নিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় দাড় করিয়ে তার চোখ থেকে হাত সরিয়ে সবাই একসাথে বলে উঠলো, “হ্যাপি বার্থডে আরশি।”

আরশির চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই আরশি সামনে তাকিয়ে দেখে একটা টেবিলের মধ্যে একটা জন্মদিনের কেক রাখা যার মধ্যে ‘হ্যাপি বার্থডে আরশি’ লিখা। আবার কেকের চারপাশে কিছু মিষ্টি, চিপস, কোক ইত্যাদি রাখা। আরশি এসব দেখে অবাক হয়ে তার বান্ধবীদের দিকে তাকালো আর বললো, “এসব কি?”

-“কেন দেখতে পাচ্ছিস না?”

-“আরে তোরা আমায় কি বলে এইখানে আনলি আর আমার সামনে এইসব কি রাখলি কিছুই তো বুঝতেছিনা।”

-“তোমার কিছু বুঝাও লাগবে না। এখন কেক কা*ট সময় হলে সবই বুঝতে পারবি।”

তারপর সবাই মিলে আরশিকে দিয়ে কেক কা*টালো। এরপর আরশি একে একে তার সকল বান্ধবীদেরকে কেক খাইয়ে দিল। কেক কা*টার পর সবাই একে অপরের গালে কেকের ক্রিমও লাগিয়ে দিল। এইভাবে রেস্টুরেন্টের মধ্যে তারা অনেক্ষণ মজা করলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর পার্টি শেষ করে সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই আরশি বলে উঠলো, “আচ্ছা এই প্লেনটা কার ছিল শুনি? আর আমরা আসার আগেই টেবিলে সবকিছু সাজিয়ে রাখল কে?”

-“সবকিছু আমাদের রুহির প্লেন ছিল। আর রুহি রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে কথা বলে ওয়েটার দিয়ে আগে থেকেই সবকিছু রেডি করে রেখেছিল। সো ধন্যবাদ দেওয়ার হলে আগে রুহিকে দে।”

-“না না শুধু ধন্যবাদ দিলে হবে না। তোমাকে এই সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই আমাকে একদিন আলাদাভাবে ট্রিট দিতে হবে।”

-“এই তোর অনেক টাকা খরচ হয়েছে মানে? টাকা কি শুধু তুই একাই দিয়েছিস নাকি? আমরাও তো সবাই টাকা দিয়েছি। তবে তুই হয়তো একটু বেশিই দিয়েছিস তাই বলে তোকে আলাদাভাবে ট্রিট দিতে হবে কেন? তোকে ট্রিট দিলে আমাদের সবাইকেই ট্রিট দেওয়া লাগবে।” ফারিহা বললো কথাগুলো।

-“আরে আরে তোরা থাম। রুহি বললো আর আমি ওকে আলাদাভাবে ট্রিট দিয়ে দিলাম এটা হলো নাকি? তোদের সবাইকেই একদিন ট্রিট দিব যা, এখন আর ট্রিট ট্রিট করে আমার মাথা খাস না। যাইহোক বিকাল হয়ে আসছে এবার আমাদের বাসায় যাওয়া উচিত।”

-“আচ্ছা তাহলে সবাই যার যার বাসায় চলে যা। কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।”

-“আচ্ছা।”

তারপর আরশি আর রুহি তাদের বাকি বান্ধবীদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসার দিকে হাঁটা ধরলো।

.
সন্ধ্যাবেলা ফারহান অফিস থেকে বেরিয়ে তার ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে ২০ আগষ্ট দেখেই কিছুটা চমকে উঠলো। আজ আরশির জন্মদিন অথচ সেটা ফারহানের মনেই নেই। সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে কা*টাতে আজকের তারিখটার ব্যাপারে ফারহানের কোনো লক্ষ্য ছিল না। ফারহান আর দেরি না করে প্রথমে একটা কসমেটিকস এর দোকানে গিয়ে আরশির জন্য এক জোড়া চুড়ি কিনে নিল। তারপর একটা ফুড গ্যালারিতে চলে গেল। সেখান থেকে আরশির জন্য কিছু চকলেট আর আইসক্রিম কিনে নিল। এরপর একটা রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু ফুচকা কিনে সেগুলো নিয়ে আরশিদের বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই রোজিনা বেগম দরজা খুলে দিলেন।

-“কেমন আছ ফারহান? আর তোমার হাতে…”

-“জি মামি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন তো? আর হাতে তেমন কিছু হয়নি, বাইক চালাতে গিয়ে একটা জায়গায় স্লিপ খেয়ে পরে একটু কে*টে গেছে ওই আর কি।”

-“হ্যাঁ আমিও ভালো আছি। বাইক একটু সাবধানে চালাবা না। আর তোমার হাতে এইসব কি?”

-“আজ আরশির জন্মদিন তো তাই ওর জন্য একটু…”

-“বুঝেছি আর বলা লাগবে না। আরশি ওর রুমেই আছে যাও।” মুচকি হেসে কথাটা বললেন রোজিনা বেগম।

তারপর ফারহান আর কিছু না বলে সেখান থেকে আরশির রুমে চলে আসলো। রুমে এসে দেখে আরশি বসে বসে পরছে। ফারহান আরশির ধ্যান তার দিকে আনার জন্য একটু কাশি দিয়ে উঠলো। আচমকা রুমে কারও কাশির আওয়াজ পেয়ে আরশি খানিকটা চমকে রুমের দরজার দিকে তাকালো। দেখল ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। এইসময় ফারহানকে তার রুমে দেখে আরশি কিছুটা চমকে উঠে বললো, “ভাইয়া তুমি!”

-“হ্যাপি বার্থডে আরশি।”

-“Thank You. তা এইবার আমার জন্য কি নিয়ে আসলে?”

-“প্রতিবছর যা আনি। তবে এইবার সাথে ভিন্ন একটা জিনিসও এনেছি।”

-“কি সেটা?”

-“দাঁড়া দেখাচ্ছি।” বলেই ফারহান তার পকেট থেকে একটা চুড়ির প্যাকেট বের করে আরশির হাতে দিল আর বললো, “এটা তোর জন্য।”

-“ওয়াও চুড়ি! Thank You ভাইয়া।” খুশিতে আত্মহারা হয়ে।

-“পছন্দ হয়েছে তোর?”

-“অনেক। দাও এবার আমার চকলেট, ফুচকা আর আইসক্রিম দাও।”

-“এই নে।” আরশির দিকে সেগুলো এগিয়ে দিয়ে।

তারপর আরশি ফারহানের থেকে সেগুলো নিয়ে প্রথমেই ফুচকা খাওয়া শুরু করে দিল। ফারহান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আরশির খাওয়া দেখতে লাগলো। এইসব পেলে আরশি যেন একদম বাচ্চা হয়ে যায়। আরশি খাওয়ার মাঝে একবার ফারহানকে খাওয়ার জন্য বললো কিন্তু ফারহান খেল না। বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান আরশিকে বলে তাদের বাসা থেকে চলে আসলো।

এইভাবেই ফারহান আরশির দিনকাল কা*টতে লাগলো। প্রতিদিন সকালে উঠে ভার্সিটিতে আসা, ভার্সিটি শেষে বাসায় যাওয়া। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে ফারহানের অফিসে যাওয়া, সন্ধ্যার পর অফিস থেকে আবার বাসায় ফেরা। সবকিছু যেন একটা রুটিন অনুসারে চলতে লাগলো। এইভাবেই দেখতে দেখতে কে*টে গেল একটা বছর।
.
.
Loading…….

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১৪
,,
,,
এক বছরের মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। বদলে গেছে চারপাশের আবহাওয়া, পরিবেশ সাথে আরশিও। আরশি এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে। আগের থেকে আরশি এখন আরও সুন্দর হয়েছে। ভার্সিটির অনেক ছেলেরাই আরশিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আরশি কারও প্রস্তাবই গ্রহণ করেনি। আবার যারা যারা জেনেছে আরশি ফারহানের কাজিন তারা অনেকে ভয়ে আরশির ধারেকাছেও আসেনি। এরই মধ্যে ফারহানের পড়াশোনাও শেষ হয়ে গিয়েছে। সে এখন তার আব্বুর অফিসে অফিসের বস হিসেবে যোগ দিয়েছে। ফারহান অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার আম্মু তাকে বিয়ে করানোর জন্য উঠে পরে লেগেছেন। কিন্তু ফারহানের একটাই কথা সে এখন বিয়ে করবে না। এ নিয়ে অবশ্য ফারহান আর তার আম্মুর মধ্যে প্রতিদিনই ছোটখাটো একটা ঝগড়া হয়। চলুন তাহলে আজকে তাদের মধ্যে হওয়া ঝগড়াটা একটু শুনে আসি।

অফিস শেষে ফারহান বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। হঠাৎ তার মনে হলো বিগত এক সপ্তাহ ধরে তো তাকে অফিস থেকে ফিরে বাসার বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফারহান এবার কিছু না ভেবে সাথে সাথে তার ফোনটা বের করে তার আব্বুর নাম্বারে কল দিল। যদি তিনি ঘরে থাকেন তাহলে তিনি যেন এসে দরজা খুলে দেন। কিন্তু কল দেওয়ার আগ মূহুর্তেই ভিতর থেকে কেউ একজন দরজা খুলে দিল। ফারহান সামনে তাকিয়ে দেখে তার আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন।

-“আরে আব্বু, তুমি বাসায় এলে কখন?”

-“এইতো একটু আগে।”

-“যাক ভালোই হলো তুমি বাসায় ছিলে নাহলে তো আমায় ঘন্টার পর ঘন্টা বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।”

-“বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো মানে! বাসায় তো তোর আম্মু…”

-“আম্মু বাসায় থাকা না থাকা একই কথা।” ফারহান ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললো কথাটা।

-“মানে?”

-“এক সপ্তাহ ধরে বাসায় যে কি হচ্ছে সেটা তো তুমি জান না।”

-“কি হচ্ছে বাসায়?”

-“আরে আমি অফিসের দায়ভার নেওয়ার পর থেকে আম্মু আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছেন।”

-“তো এটার সাথে তোমার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকার কি সম্পর্ক?”

-“আমি বলেছি আমি এখন বিয়ে করবো না। তাই আম্মুও বলেছেন আমি বিয়ে না করলে উনি আর আমায় দরজা খুলে দিবেন না। তাই বিগত এক সপ্তাহ ধরে অফিস থেকে ফিরে আমায় বাসার বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।”

-“তোমার তো এখন বিয়ের বয়স হয়েই গেছে তাহলে তোমার আম্মু যেহেতু বলছেন বিয়ে করেই নাও। বিয়ে করতে তো কোনো সমস্যা নেই।”

-“আরে উনি কাকে বিয়ে করতে বলছেন তুমি জান?”

-“কাকে?”

-“তানিশাকে।”

-“তোর ছোট খালার মেয়ে না তানিশা?”

-“হ্যাঁ।”

-“সে তো অনেক ভালো মেয়ে। তাকে বিয়ে…”

-“আব্বু তুমিও আম্মুর সাথে তাল দিও না তো। দেখি সর আমায় ভিতরে যেতে দাও।”

-“তাকে বিয়ে করলে তুই জীবনে অনেক সুখী হবি এটাই তোর আব্বু বলতে চাচ্ছিলেন। তানিশা কেমন মেয়ে এটা তো তোর আব্বু ভালো করেই জানেন এতে আমার সাথে উনি তাল মেলাবেন কেন?” কোথা থেকে জানি রোকসানা বেগম এসে কথাগুলো বললেন।

-“দেখ আম্মু আমার এখন বিয়ে করারই ইচ্ছা নেই তাহলে তুমি কেন শুধু শুধু আমার সাথে এমন করছ বল তো?”

-“কারণ আমার সারাদিন ঘরে একা বসে থাকতে থাকতে ভালো লাগে না। এর জন্য আমি তোর বিয়ে করাতে চাই যাতে তোর বউয়ের সাথে আমি সারাদিন গল্প করতে পারি।”

-“তো এর জন্য আমায় বিয়ে করানোর কি দরকার? একটা কাজের মেয়ে রেখে দাও আর তার সাথে সারাদিন মন ভরে গল্প করতে থাক।”

-“ফারহান তুই কিন্তু ইদানীং আমার মুখে মুখে কথা বলা শিখে গেছিস।” কিছুটা রাগ দেখিয়ে।

-“আচ্ছা আমি সরি, আমি আর তোমার সাথে এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। গেলাম আমি।” বলেই ফারহান তার রুমে চলে গেল।

-“দেখেছ কত ফাজিল হয়েছে তোমার ছেলেটা। কত করে বলছি তানিশাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।” রোকসানা বেগম রফিক আহমেদের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন।

-“ফারহান বিয়েতে রাজি হচ্ছে না এটা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি ইদানীং ওর সাথে যা শুরু করেছ তা একদমই ঠিক না। ছেলেটা মাত্র অফিসের হাল ধরেছে, আর তুমি এখনই ওকে বিয়ে করানোর জন্য উঠে পরে লেগেছ। আরে আগে ওকে অফিসে মনোযোগী হতে দাও তারপর নাহয় আমিই ওর সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবো। ওকে একটু ভালো করে বুঝিয়ে বললে ও ঠিকই রাজি হবে দেখিও।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যদি মনে হয় এমনটা করলে ও বিয়ে করতে রাজি হবে তাহলে আমি আর ওকে বিয়ের জন্য জোরাজুরি করবো না। তবে আমার একটাই কথা, বিয়ে কিন্তু তানিশাকেই করতে হবে।” কথাগুলো বলেই রোকসানা বেগম উনার রুমে চলে গেলেন।

.
রাতেরবেলা আরশি তার আম্মু-আব্বুর সাথে খাবার খেতে ডাইনিং টেবিলে বসেছে। এমন সময় আমজাদ হোসেন আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আরশি মা, এখন যদি আমরা তোমার বিয়ে দিতে চাই তুমি কি রাজি হবে?”

আমজাদ হোসেনের এমন কথা শুনে আরশি কিছুটা চমকে উঠলো আর বললো, “একদমই না। কেননা আগে আমি আমার পড়াশোনা কমপ্লিট করবো তারপর বিয়ে। কিন্তু তুমি হঠাৎ এমন কথা বলছ কেন আব্বু?”

-“আমি জানতাম তুমি এমনটাই বলবে। তাই আমি সাজ্জাদের কথায় রাজি হইনি। আমিও ওকে বলেছি আমার মেয়ে যেটা বলবে সেটাই হবে।”

-“তোমার কথার মানে ঠিক বুঝলাম না আব্বু।”

-“তোমার সাজ্জাদ আংকেলের কথা বলছি। সে আমার ছোটবেলার বন্ধু। তুমি ছোট থাকতে ও প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো। কিন্তু হঠাৎ ওর চাকরির পোস্ট বদলি হওয়াতে তাকে অন্য শহরে চলে যেতে হয়। তার একটা ছেলেও আছে তোমার থেকে ২-৩ বছরের বড় হবে। তার নাম সাকিব। আমি ভেবেছি তোমার পড়াশোনা শেষ হলে সাকিবের সাথে তোমার বিয়ে দিব।”

আচমকা নিজের বিয়ের কথা শুনে আরশি কিছুটা চমকে উঠলো বটে তবে মনের মধ্যে কোনো জটলা না পাকিয়ে বলে উঠলো, “এটা কি তোমরা দুই বন্ধু মিলেই ঠিক করেছ নাকি শুধু তুমি একাই এই চিন্তা করেছ?”

-“না না আমি একা না সাজ্জাদও ঠিক করেছে তার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে করাবে। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে। তার ছেলে সাকিব ৬ মাস পর বিদেশ চলে যাবে। তাই সে আমাকে বলেছে এর মধ্যে যদি তোমার আর ওর আকদ করিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভালো হয়। কেননা সাকিব বিদেশ গেলে আবার কবে দেশে আসবে তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

-“যেই ছেলে একবার বিদেশ গেলে তার দেশে আসার কোনো নিশ্চয়তা নেই সেই ছেলেকে আমি কেনই বা বিয়ে করবো?”

-“আরে আমি তো বলছি না যে সে বিদেশ গেলে ১০-১২ বছরের মধ্যে দেশেই ফিরবে না। তবে বিদেশে গেলে তো মানুষ সাধারণত ৪-৫ বছর ওইখানে কা*টিয়ে দেশে আসে। এখন সাকিবের ক্ষেত্রেও তো এমনটা হতে পারে। তাই সাজ্জাদ চাচ্ছে তোমাদের আকদ করিয়ে দিতে।”

-“উনি চাইলেন আর আমাদের আকদ করিয়ে দেওয়া হবে? এটা বিয়েসাদীর ব্যাপার, একজন অপরজনের ব্যাপারে কিছু না জেনেই আকদ করে ফেলাটা কেমন হয়ে যায় না?”

-“সমস্যা নেই তুমি তাহলে একদিন সাকিবের সাথে কোথাও দেখা কর, একজন অপরজনকে জান। তারপর যদি তোমার মনে হয় ছেলেটা ভালো, তোমার সাথে মানাবে তখন নাহয় আমরা তোমাদের আকদ করিয়ে দিব।”

-“আব্বু, একটা মানুষের সাথে একদিন দেখা করেই কি তার ব্যাপারে ভালো করে জানা যায় বল?”

-“তাহলে তুমি কি করতে চাও?”

-“আমার এখন এই ব্যাপারে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আমি আপাতত কিছুদিন ভেবে দেখি তারপর তোমাকে জানাব।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যেমনটা ইচ্ছা।”

তারপর কেউ আর কোনো কথা না বলে যার যার খাওয়ায় মন দিল। কিছুক্ষণ পর আরশি খাওয়া শেষ করে তার রুমে চলে গেল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here