হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৩,০৪

0
666

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৩,০৪
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৩

-“আরে ফারহান ভাই আপনি এইখানে! এরা কি আপনার সাথে কোনো বেয়াদবি করেছে ভাই?”

ফারহান অনেক্ষণ যাবত বাইকে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পড়েছিল তাই সে বাইকের উপর উঠে হেলান দিয়ে শুয়ে পরল। তার কিছু মূহুর্ত পরেই সেই রেগিং করা দলের ছেলেটা তার সাথে একটা ছেলেকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো। ছেলেটা সেখানে এসেই তার সাথে নিয়ে আসা ছেলেটাকে আঙ্গুল ইশারায় ফারহানকে দেখিয়ে বললো, “ভাই এই ছেলেটা।” তখন ওই ছেলেটা ফারহানের কাছে এসে তার গায়ে হাত দিবে তখনই সে বাইকের উপর শুয়ে থাকা ফারহানকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। ফারহানকে দেখেই সে কিছুটা ভিত হয়ে উপরোক্ত কথাটা বলে উঠলো।
এদিকে ফারহানও খুব পরিচিত একজনের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে আশেপাশে তাকাল। তখনই সে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইমরানকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো। ফারহান এবার আস্তে আস্তে শুয়া থেকে উঠে বসলো আর ইমরানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“কি ব্যাপার তুই এইখানে?” কপাল কুচকে বললো কথাটা।

-“সেটা পরে বলছি ভাই, আগে বলেন এরা কি আপনার সাথে কোনো বেয়াদবি করেছে?” সেই রেগিং করা ছেলেদের আঙ্গুল ইশারায় দেখিয়ে।

-“না আমার সাথে তেমন বেয়াদবি করেনি। তবে ওরা ভার্সিটিতে নতুন এসেই স্টুডেন্টদের রেগিং করা শুরু করেছে। এ বিষয়ে আমি কথা বলতে আসায় ওই ছেলেটা আমায় তুই-তুকারি করে মাথা গরম করে দিয়েছিল। তাই রাগ সামলাতে না পেরে একটা বসিয়ে দিলাম।”

-“কি বলেন ভাই, ও আপনার সাথে বেয়াদবি করেছে! ও আপনার সাথে বেয়াদবি করেছে আর আপনি তাকে কিছুই করলেন না? দাঁড়ান আমি ওকে আপনার হয়ে শায়েস্তা করছি।” কথাটা বলেই ইমরান নামের ছেলেটা গিয়ে ফারহানের সাথে বেয়াদবি করা ছেলেটার গালে ঠাস, ঠাস করে দুইটা চ*ড় বসিয়ে দিল।

চড় খেয়ে সেই ছেলেটা কিছুটা ক্ষেপে উঠলো আর বললো, “ভাই আপনি এই ছেলেটার জন্য আমায় চ*ড় মারলেন! এই শা*লা কে যে…” কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ইমরান ছেলেটা আবার ওই ছেলের গালে ঠাস করে একটা চ*ড় বসিয়ে দিল আর বলতে লাগলো, “চুপ থাক ব্যাটা। তুই কাকে কি বলছিস? চিনিস তুই উনাকে? উনি আমাদের এই ভার্সিটির বড় ভাই আর তুই কি-না ভার্সিটিতে নতুন এসেই উনার সাথে বেয়াদবি করে বসলি! যা এক্ষুণি গিয়ে উনার পায়ে ধরে মাফ চা যা।” অনেকটা ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলো বললো ইমরান।

-“আমি মাফ চাইতে পারবো না ভাই।” জিদ দেখিয়ে।

-“তোকে মাফ চাইতে বলছি যা মাফ চা। নাহলে কিন্তু আরেকটা দিব এখন।” হাত উঠিয়ে।

ইমরানের কথা শুনে এবার সেই ছেলেটা বাধ্য হয়ে ফারহানের কাছে যেতে লাগলো তার পা ধরে মাফ চাইবে বলে। ইমরান তখন রেগিংয়ে জড়িত থাকা বাকি ছেলেদেরকেও ফারহানের থেকে মাফ চাইতে বললো। সবাই যখন একত্র হয়ে ফারহানের পা ধরতে যাবে তখন হুট করে ফারহান বলে উঠলো,

-“অযথা পা ধরে মাফ চাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ভার্সিটিতে এসেছ পড়াশোনা করার জন্য, তাই এইসব রেগিং টেগিং না করে ভালো করে পড়াশোনা কর। নেক্সট টাইম থেকে যেন আর এইসব কাজ করতে না দেখি।”

ফারহানের কথাগুলো শুনে সবাই মাথা নাড়িয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তখন ইমরান কিছুটা এগিয়ে এসে সবাইকে চলে যেতে বললো। ইমরানের কথামতো সবাই ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। ইমরান তখন ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বললো, “ভাই ওরা আসলে আমার এলাকার ছোট ভাই। ওদের কাজের জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত। প্লিজ ভাই আপনি ওদের ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না। ভার্সিটিতে নতুন এসেছ তো তাই ভার্সিটির কাউকে চিনে না। তবে আমি ওদেরকে…”

ইমরানের কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই ফারহান বলে উঠলো, “ওদেরকে যেন আমি আর ভার্সিটিতে রেগিং করতে না দেখি বলে দিস ওদেরকে। এবার তুই এইখান থেকে যা।”

-“আচ্ছা ভাই।” বলেই ইমরান ছেলেটা সেখান থেকে চলে গেল।

ইমরান ছেলেটা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর ফারহান তার ফোনটা বের করে শুভর নাম্বারে কল দিল। একবার রিং হতেই শুভ কল রিছিভ করলো।

-“কিরে কোথায় তুই? আজ ভার্সিটিতে আসবি না নাকি?”

-“আরে আসছি আমি আর ৫ মিনিট।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আয়।” বলেই ফারহান কল কে*টে দিল।

-“আরে ভাইয়া আপনি এইখানে একা একা বসে আছেন যে? কারও জন্য অপেক্ষা করছেন নাকি?”

হঠাৎ কোথা থেকে জানি রুহি এসে ফারহানকে উক্ত কথাগুলো বললো। ফারহান মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে আরশি, রুহি আর তাদের দু’একটা ফ্রেন্ড তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

-“ফ্রেন্ডদের জন্য অপেক্ষা করছি। তোমরা এখন আসলে নাকি?”

-“আমরা তো সেই কখন এসেছি। এতক্ষণ যাবত দূর থেকে আপনার আর ওই ছেলেটার মধ্যে হওয়া তর্ক-বিতর্ক দেখছিলাম। কিন্তু হুট করেই আপনি ছেলেটাকে একটা চ*ড় মেসে বসলেন। আপনার ওই চ*ড়টা কিন্তু হেব্বি হয়েছে ভাইয়া, একদম মুভির হিরোদের মতো মে*রেছিলেন সেই চ*ড়টা।” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রুহি থামলো।

-“কথা শেষ? এবার ক্লাসে যাও।”

-“আচ্ছা ভাইয়া ওই ছেলেটাকে আপনি চ*ড় মে*রেছিলেন কেন?”

-“সেটা তোমায় বলতে হবে?” ফারহান কপাল কুচকে রাগের আভা ফুটিয়ে তুলে বললো কথাটা।

-“না মানে যদি একটু…”

-“তোমাদের না ক্লাসে যেতে বললাম। যাও ক্লাসে যাও।” খানিকটা ধমকের স্বরে বললো কথাটা।

ফারহানের ধমক শুনে এবার পাশ থেকে আরশি রুহির কানে কানে বলে উঠলো, “এই রুহি চল তো ক্লাসে যাই। নাহলে ভাইয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে বলা যায়না যেকোনো সময় তোকেও ওই ছেলেটার মতো একটা চ*ড় বসিয়ে দিবেন।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে চল, বলা তো যায়না সেই ছেলেটার মতো যদি আমাকেও একটা বসিয়ে দেন তাহলে সবার সামনে মান – সম্মান পানি পানি হয়ে যাবে।” বলেই রুহি সবাইকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।

আরশিরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফারহানের বন্ধুরা সেখানে এসে উপস্থিত হলো।

-“কিরে এইখানে বসে আছিস কেন?” শুভ বললো কথাটা।

-“একটু ঝামেলা হয়েছিল তাই এখন এইখানেই বসে রইলাম। ভাবলাম তোরা আসলে একসাথে ক্লাসে যাব।”

-“ঝামেলা! কিসের ঝামেলা?”

-“আরে ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারের পোলাপাইন আজ একটা মেয়েকে রেগিং করেছিল। তাদের সাথেই একটু ঝামেলা হয়েছিল আরকি।”

-“বলিস কি! ওরা ক’জন ছিল আর তোর গায়ে কেউ হাত দিয়েছিল নাকি?”

-“ছিল ৬-৭ জন। আর আমার গায়ে আবার কে হাত দিবে? তবে একটা ছেলে একটু তুই তুকারি করে কথা বলেছিল তাই ক্ষেপে গিয়ে একটা চ*ড় বসিয়ে দিয়েছি।”

-“ঠিক করেছিস। আয় দেখা তো আমাদেরকে ওরা কারা। ওদেরকে একটু টাইট নিয়ে রাখি আগে থেকে যাতে পরেরবার থেকে আর এমন কাজ করতে না পারে।”

-“তার কোনো প্রয়োজন নেই। ছেলেগুলো ইমরানের এলাকার, ও বিষয়টা জেনে গেছে আর ওদেরকে সাবধান করে দিয়েছে ওরা যেন আর এসব কাজ না করে।”

-“আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে। এবার তাহলে ক্লাসে চল।”

-“হ্যাঁ চল।”

তারপর ফারহান আর তার বন্ধুরা সবাই সেখান থেকে তাদের ক্লাসে চলে গেল।

.
-“কিরে রাফি আজকে যে ইমরান ভাই তোকে সেই ছেলেটার জন্য কত চ*ড় মারল তখন তুই ওইভাবে চুপ করে ছিলি কেন? যা চুপ করে ছিলি ঠিক আছে, কিন্তু ওই শা*লার থেকে মাফ চাইতে গেলি কেন?” রাফির বন্ধু রকি বললো কথাগুলো।

-“উনি আমাদের এলাকার বড় ভাই দেখে উনাকে কিছু বলতে পারিনি। তবে ওই শা*লাকে আমি এত সহজে ছাড়ব না, সে যেই হোক না কেন। আমার এই অপমানের প্রতিশোধ তো আমি ওর থেকে নিব’ই নিব।” খানিকটা রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বললো রাফি।

-“কিন্তু কীভাবে?”

-“ভাবতে হবে। তার আগে ওই ব্যাটার সকল ডিটেইলস বের করা লাগবে। তারপর দেখবি ওই ব্যাটাকে কীভাবে আমার অপমানের শাস্তি দেই।” একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বললো কথাটা।

.
ভার্সিটি শেষে ওইদিনের মতো ফারহান তার বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া শেষে ফারহান তার রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে রেস্ট নিতে লাগলো। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে তার চোখ লেগে যায় সেদিকে তার খেয়াল’ই নেই।

বিকালবেলা ফারহান ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে বের হতেই তার আম্মুর সাথে দেখা। তার আম্মু তাকে দেখেই বলে উঠলেন, “তুই কি এখন একটু আরশিদের বাসায় যেতে পারবি?”

-“কেন ওদের বাসায় গিয়ে কি করবো?”

-“আরে একটু পায়েস রান্না করেছিলাম। আরশি তো পায়েস অনেক পছন্দ করে। ওর জন্য যদি একটু পায়েস নিয়ে যেতি।”

-“পায়েস তো মামিও রান্না করতে পারেন তাহলে শুধু শুধু…”

-“আরে ওর মা’য়ের বানানো পায়েস সে খায়না। তার আম্মু বেশি ভালো পায়েশ রান্না করতে পারে নাকি?”

-“আচ্ছা বুঝেছি, দাও তাহলে কি কি দিবা।”

-“ডাইনিং টেবিলে একটা টিফিন বক্স রাখা আছে ওইটা নিয়ে তাদের বাসায় চলে যা।”

ফারহান “আচ্ছা” বলে সেখান থেকে নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে থাকা টিফিন বক্সটা নিয়ে গাড়িটা বের করে আরশিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। তাদের বাসা থেকে আরশিদের বাসা বেশি দূরে না মাত্র ১০ মিনিট লাগে গাড়ি দিয়ে যেতে। তো ১০ মিনিটের মধ্যে ফারহান আরশিদের বাসায় চলে আসলো। এসে বাসার কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর আরশির আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন।

-“আরে ফারহান তুমি! কি খবর?”

-“এইতো মামি আছি, আরশি কোথায়?”

-“তার রুমেই আছে, মনে হয় পড়তে বসেছে।”

-“আচ্ছা আমি দেখে আসছি।” বলেই ফারহান সেখান থেকে আরশির রুমে চলে আসলো।

আরশির রুমের দরজা তখন খোলাই ছিল। ফারহান আর বাহির থেকে দরজায় নক না করে ভিতরে ঢুকে পরল। ভিতরে ঢুকতেই আচমকা কেউ একজন হুমড়ি খেয়ে তার গায়ে এসে পরল। আচমকা কেউ এসে তার গায়ে পরাতে ফারহান ব্যালেন্স হারিয়ে সাথে সাথে নিচে পরে গেল। তার সাথে সেই ব্যাক্তিটাও নিচে পরে গেল। ফারহান তখন খেয়াল করে দেখল তার উপরে থাকা ব্যাক্তিটা আরশি। আরশিকে তার উপরে দেখে ফারহানের চোখ কিছুটা চমকিত হয়ে উঠলো। এদিকে আরশিও ফারহানকে তার নিচে পরে থাকতে দেখে খানিকটা ভড়কে গেল। আরশি মনে মনে নিজেই নিজেকে বললো, “ফারহান ভাইয়া এই সময় আমার রুমে কীভাবে এলেন?”
.
.
Loading…….

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৪
,,
,,
আরশি ফারহানকে তার নিচে পরে থাকতে দেখে সে তৎক্ষনাৎ নিচে থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফারহানও আরশির সাথে সাথে নিচে থেকে উঠে নিজের জামা ঝাড়তে লাগলো। জামা ঝাড়তে ঝাড়তে ফারহান বললো, “রুমের মধ্যে কি ডান্স করছিলি নাকি যে এইভাবে হুমড়ি খেয়ে এসে আমার উপরে পরলি?”

-“না মানে ইউটিউবে একটা নাচের ভিডিও দেখছিলাম একটু আগে। তাই একটু…”

-“তাই একটু নাচতে ছিলে তাইতো? এখন কি তোর নাচার সময়? পড়াশোনা রেখে এতো নাচা কি হে?” খানিকটা রাগ দেখিয়ে বললো কথাগুলো।

-“সরি।” মাথা নিচু করে। “কিন্তু তুমি এই সময় আমার রুমে কেন?” আরশি মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো।

-“আম্মু তোর জন্য পায়েস পাঠিয়েছে, এই নে পা.. আরে টিফিন বক্স কোথায়! ওহ ওই দেখ তোর সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে গেছে। এই নে তোর পায়েস।” নিচে থেকে টিফিন বক্স উঠিয়ে আরশির দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো কথাগুলো।

-“ফুপি আমার জন্য পায়েস পাঠিয়েছে! আহ্ কতদিন ধরে ফুপির বানানো পায়েস খাচ্ছি না। বাসায় গিয়ে ফুপিকে একটু বলিও তো আমার জন্য যেন একদিন বিরিয়ানি বানিয়ে পাঠায়।” ফারহানের থেকে টিফিন বক্সটা নিতে নিতে বললো কথাগুলো।

আরশির কথাগুলো শুনে ফারহান কিছু না বলে চোখ সরু করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। আরশি যখনই এই বিষয়টা খেয়াল করলো তৎক্ষনাৎ সে উপলব্ধি করলো তার হয়তো ফারহানের কাছে এইসব না বললেই ভালো হতো। আরশি এবার ফারহানের চোখ সরু করে রাখাটা পালটানোর জন্য বলে উঠলো, “না মানে এইটা আমি-ই ফুপিকে বলে দিব, তোমার শুধু শুধু কষ্ট করে বলা লাগবে না।”

-“আচ্ছা তোর বান্ধবী রুহি এমন কেন রে? যখনই দেখা হয় তখনই রেডিওর মতো বক বক শুরু করে দেয়। সেদিন তার জন্মদিনে তো আমায় নিজের হাতে কে…” ফারহান আর সামনের কথাটা বলতে পারল না তার আগেই তার কথা আটকে গেল।

-“তার জন্মদিনে আমায় নিজের হাতে কি?” আরশি ভ্রু জোড়া কুচকে বললো কথাটা।

-“না কিছু নাহ। তোর বান্ধবীর সাথে দেখা হলে তাকে একটু বক বক কম করতে বলিস। আচ্ছা এখন তাহলে আমি যাই আর পায়েসটা মনে করে খেয়ে নিস।” কথাগুলো বলেই ফারহান আরশির রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ফারহান আরশির রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরশি একটা বিষয় নিয়ে খানিকটা ভাবনায় পরে গেল। “ফারহান ভাইয়া তখন আমায় কি বলতে চেয়েছিলেন রুহির বিষয়ে? রুহির জন্মদিনে রুহি উনাকে নিজের হাতে কি করেছে? উফফ কিছুই তো ক্লিয়ার বুঝতে পারছি না। কাল ভার্সিটিতে গিয়ে একবার রুহির সাথে এ বিষয়ে কথা বলে দেখবো নে কিছু জানা যায় কি-না। এখন আপাতত বসে বসে পায়েস খাই।” আরশি মনে মনে বললো কথাগুলো।

এদিকে ফারহান আরশির রুম থেকে বেরিয়ে নিচে আসতেই রোজিনা বেগমের সাথে তার দেখা হয়ে গেল।

-“চলে যাচ্ছ নাকি ফারহান?”

-“হ্যাঁ মামি চলে যাচ্ছি।”

-“আসার না তোমার হাতে একটা টিফিন বক্স দেখলাম সেটা কোথায়?”

-“আম্মু আরশির জন্য টিফিন বক্সে করে একটু পায়েস পাঠিয়েছিল। সেটা আরশিকে দিতেই এখানে এসেছিলাম।”

-“ওহ, কিছু খেয়ে যাও তাহলে।”

-“না মামি এখন যেতে হবে। বাসায় একটু কাজ আছে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে যাও তাহলে।”

তারপর ফারহান আরশিদের বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িটা নিয়ে তাদের ওখান থেকে নিজের বাসায় চলে আসলো।

.
পরেরদিন ভার্সিটিতে এসে আরশি আর রুহি তাদের ক্লাসে বসে আছে আর তাদের বাকি বান্ধবীদের আসার অপেক্ষা করছে। এমন সময় আরশি রুহিকে বললো, “আচ্ছা রুহি তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

-“কি কথা?”

-“সেদিন তোর জন্মদিনে ফারহান ভাইয়ার সাথে তুই কি কিছু করেছিস?”

-“আমি আবার উনার সাথে কি করবো? আর তুই হঠাৎ আমায় এমন উদ্ভুটে কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?”

-“না আসলে গতরাতে ফারহান ভাইয়া আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তো উনি আমায় বললেন তুই নাকি সেদিন উনাকে নিজের হাতে কি যেন একটা বলতে গিয়ে আর বলেন নি। তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম তুই কি উনার সাথে সেদিন কিছু করেছিলি নাকি।”

-“এই রে ফারহান ভাইয়া তো দেখছি আমার কর্মকাণ্ডের কথা আরশিকে জানিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু উনি আরশিকে সবটা বললেন না কেন? বলেন নাই আমারই ভালো হয়েছে নাহলে ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার কানে এই কথাটা চলে যেত আর সবাই আমাকে নিয়ে কি না কি ভাবত।” রুহি মনে মনে বললো কথাগুলো।

-“কিরে চুপ করে আছিস যে।”

-“আরে না না আমি আবার উনার সাথে কি করবো। আসলে উনাকে আমি নিজে একটা প্লেটে করে এক পিস কেক খেতে দিয়েছিলাম। উনি হয়তো সেটার কথাই বলতে চাচ্ছিলেন।”

-“কি জানি, হতেও পারে।”

তারপর আরশি আর রুহি দু’জনেই চুপ করে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর তাদের বাকি বান্ধবীরাও চলে আসলো। সবাই একত্রে জড়ো হতেই তারা নিজেদের মধ্যে টুকটাক গল্প করা শুরু করে দিল।

.
-“ভাইয়া গতকাল কি ওই ছেলেগুলোর সাথে আপনি মা*রা’মা*রি করেছিলেন?”

ফারহান ভার্সিটিতে এসে ক্যাম্পাসের একটা জায়গায় বসে বসে ফোন টিপছিল। তখন কোথা থেকে জানি একটা মেয়ে এসে ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে উক্ত কথাটা বলে উঠলো। ফারহান মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে একটা বোরকা পরিহিত মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

-“আপনাকে ঠিক চিনলাম না। আপনার পরিচয়?”

-“আরে আমাকে চিনতে পারেন নি? গতকাল যে একটা মেয়ে এসে আপনাকে একটা চিঠি দিয়েছিল। আমি সে। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি চিঠিটা পড়েই আমার গাল বরাবর কয়েকটা চ*ড় বসিয়ে দিবেন। কিন্তু না আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে কেউ আমাকে রেগিং করে এই কাজটা করিয়েছে।”

-“ওহ আচ্ছা আপনি সেই মেয়ে! চিনতে পেরেছি এখন।”

-“তা ভাইয়া আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিলেন না যে।”

-“কোন প্রশ্নের উত্তর?” কপাল কুচকে।

-“ওই ছেলেগুলোর সাথে মা*রা’মা*রি করেছিলেন নাকি?”

-“না ওইসব কিছু করিনি।”

-“আচ্ছা ভাইয়া আপনি কোন ইয়ারে পড়েন?”

-“তা জেনে আপনি কি করবেন?”

-“না মানে এমনিই জানতে ইচ্ছা করলো আরকি।”

-“ফোর্থ ইয়ার।”

-“কি ফোর্থ ইয়ার!” মুখটা কালো করে।

-“এইভাবে মুখ কালো করার কি আছে?”

-“আচ্ছা ভাইয়া আমি তাহলে এখন যাই।” বলেই মেয়েটা দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।

মেয়েটা চলে যাওয়ার কিছু মূহুর্ত পরেই ফারহানের বন্ধুরা সেখানে এসে উপস্থিত হলো।

-“কিরে মেয়েটা কে ছিল?”

-“ওই যে গতকাল ওই ছেলেগুলো একটা মেয়েকে রেগিং করেছিল এটা সেই মেয়ে।”

-“তা এখন তোর কাছে এসেছিল কে?”

-“পার্ট নিতে এসেছিল বোধহয়। কিন্তু যেই বললাম আমি ফোর্থ ইয়ারে পড়ি ওমনি মেয়েটার মুখ কালো হয়ে গেল।” বলেই ফারহান খানিকটা হেসে উঠলো।

-“বাবুকা দিলমে চোট দে দিয়া বন্ধু।” কথাটা বলেই শুভ সহ বাকিরাও হো হো করে হেসে উঠলো।

.
ভার্সিটি শেষে ফারহান বাসার দিকে হাঁটা ধরবে এমন সময় রুহি আরশিকে নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

-“ভাইয়া কি এখন বাসায় চলে যাবেন?”

-“না আমার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাব।”

-“ভাইয়া ফাজলামি করবেন না তো, সত্যি করে বলেন এখন কোথায় যাবেন?”

-“ভার্সিটি শেষে মানুষ কোথায় যায়? বাসায় যায় নাকি? তাহলে এটা শুধু শুধু জিজ্ঞেস করার কি আছে?” কিছুটা রাগ দেখিয়ে।

-“আরে ভাইয়া রাগ করছেন কেন? বলছিলাম কি আপনার বাসায় কোনো কাজ না থাকলে চলেন না আমরা কোথাও গিয়ে কফি খাই।”

রুহির কথা শুনে ফারহান এবার কিছু না বলে শুধু আরশির দিকে তাকালো। আরশিও ফারহানের তাকানোর মানেটা বুঝতে পেরে রুহিকে বললো, “রুহি চল তো ভাইয়া এখন বাসায় যাবে আর ভাইয়া এতো কফি খায়না। তোর কফি খাওয়ার হলে চল আমি তোকে কফি খাওয়াচ্ছি।”

-“আরে তুই কীভাবে জানিস ভাইয়া কফি খায় কি না খায়। ভাইয়া আপনি কি সত্যিই কফি খান না?”

রুহির কথা শুনে ফারহান এবার কিছু না বলে পাশ দিয়ে যাওয়া একটা রিক্সাকে ডাক দিল। রিক্সাও ফারহানের কথামতো তাদের কাছে চলে আসলো। তারপর ফারহান আরশির দিকে তাকিয়ে বললো, “দুজনে এই রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে যাও।” বলে তার মানিব্যাগ বের করে রিক্সাওয়ালাকে তার প্রাপ্ত ভাড়াটা আগেই দিয়ে দিল।

-“আরে ভাইয়া কিন্তু…”

-“রুহি চল তো, ভাইয়া এখন বাসায় যাবে।” বলেই আরশি রুহিকে টেনে রিক্সায় নিয়ে উঠাল আর নিজেও উঠে বসলো।

আরশি আর রুহি দু’জনে রিক্সায় উঠে বসতেই রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালানো শুরু করলেন।
ফারহান একবার রিক্সার দিকে তাকিয়ে মনে মনে রুহিকে উদ্দেশ্য করে বললো, “ব্যাটি আজকেও ঢং দেখাতে আসছে। তবে নেক্সট টাইম এই ঢং ফারহান আর মেনে নিবে না। মুখের কথায় না বুঝলে হাতের দ্বারা বুঝিয়ে দিব একদম।”
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here