হৃদ_মাঝারে_তুমি,#পর্বঃ- ২

0
604

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,#পর্বঃ- ২
#লেখকঃ- Tamim Ahmed

রুহি তার জন্মদিনের কেক কা*টতে নিলেই বাসায় উপস্থিত সবাই তাকে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রুহি’ বলে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করলো। অতঃপর রুহি কেকটা কে*টে প্রথমে তার আম্মুকে তারপর আব্বুকে এরপর একে একে তার সকল বান্ধবীদের কেক খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরল। রুহির সব বান্ধবীরাও একে একে তাকে কেক খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরল। অপরদিকে ফারহান এসবের দিকে ধ্যান না দিয়ে বাসার এক কোণায় দাঁড়িয়ে নীল শাড়ি পরিহিত আরশির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরশিকে আজ নীল শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে মেয়েটা এতো সুন্দরভাবে সেজেছে যে তার থেকে ফারহান নিজের চোখ ফেরাতে পারছে না। আসলে শাড়ি পরলে আরশিকে একটু বেশিই সুন্দর লাগে। তাই ফারহান আরশিকে বেশি শাড়ি পরতে দেয়না। কেন’না সে চায়না আরশির এই সৌন্দর্য অন্য ছেলেরা দেখুক।

এদিকে আরশি কেক কা*টার আগ মূহুর্ত থেকেই লক্ষ্য করছে ফারহান দূর থেকে তার দিকে অনেক্ষণ যাবত তাকিয়ে আছে। আরশি প্রথমে ভেবেছিল ফারহান হয়তো কেক কা*টার দৃশ্য দেখছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরশি বুঝতে পারল ফারহান তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরশির জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো ফারহানের তাকানো দেখে লজ্জাবোধ অথবা অস্বস্তিবোধ করতো। কিন্তু আরশির এসব না করে উলটা ভয় হচ্ছে। কেন’না ফারহান তাকে একবার শাড়ি পরে এইখানে আসতে মানা করেছিল কিন্তু এইখানে এসে রুহির কথাতে ফারহান তাকে শাড়ি পরার অনুমতি দিয়ে দিল কোনো প্রকার রাগ না দেখিয়েই। তখন হয়তো ফারহান চাপে পরে তাকে শাড়ি পরার অনুমতি দিয়েছিল আর তাই এখন সে মনের মধ্যে একপ্রকার ক্ষোভ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার তাকানোতে আরশি কেন জানি কোনো ক্ষোভ খুঁজে পাচ্ছে না, তবুও আরশির ভিতরে ভিতরে ভয় হচ্ছে।

.
-“আরে ভাইয়া আপনি এইখানে! আর আমি কি-না আপনাকে সারা বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছি। এই নেন কেক খান।”

ফারহান অনেক্ষণ যাবত আরশির দিকে তাকানোর পর বুঝতে পারল আরশি তার তাকানোতে বিব্রতবোধ করছে। তাই ফারহান আরশির থেকে চোখ সরিয়ে সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাসার গার্ডেনে চলে আসলো। রুহিদের গার্ডেনে মানুষদের বসার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। ফারহান সেখানেই বসে বসে ফেসবুকে স্ক্রোল করছিল। এমন সময় কোথা থেকে জানি সেখানে রুহি এসে উপস্থিত হয় একটা প্লেটে বড় এক পিস কেক নিয়ে। রুহি এসেই উপরের কথাগুলো বলতে বলতে তার কাছাকাছি বসে প্লেটে থাকা কেকের পিস ফারহানের মুখের সামনে ধরে। রুহির এমন উদ্ভুটে কাজে ফারহান প্রথমে কিছুটা চমকিত হলে মূহুর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

-“আমার কি নিজের হাত নেই যে তোমার আমাকে কেক খাইয়ে দিতে হবে?”

-“আপনার হাত আছে তো কি হয়েছে? আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে আমি সবাইকেই নিজের হাতে কেক খাইয়ে দিচ্ছি। তো আপনাকে খাইয়ে দিলে কি সমস্যা?” রুহি কিছুটা বাচ্চাদের মতো ভঙ্গ ধরে বললো কথাগুলো।

-“যাদেরকে খাইয়ে দিয়েছ তাদের মধ্যে অনেকেই তোমার ফ্রেন্ড আবার অনেকেই তোমার আত্নীয় হয়। কিন্তু আমি না তোমার ফ্রেন্ড আর না তোমার কোনো আত্নীয় হই। তাহলে তুমি কেন আমায় খাইয়ে দিবা?”

-“এসব না হলে কি হয়েছে? বললাম তো আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে…”

-“এই যে আমি কেকটা নিলাম আর এই যে আমি কেকটা খেলাম (রুহির থেকে কেকের প্লেটটা নিয়ে কেকের এক সাইট খেয়ে)। এবার তুমি এখান থেকে যাও আর নিজের ফ্রেন্ডদেরকে নিয়ে সময়টাকে এনজয় কর।”

রুহি কিছু একটা বলতে যেয়েও বলতে পারল না। কেকের প্লেটটা নিয়ে সেখান থেকে মুখ ফুলিয়ে চলে গেল। রুহি চলে গেলেই ফারহান কেক খেতে খেতে বললো, “আসছে আমার সাথে ঢং দেখাতে।”

.
রাত ১০ টার দিকে রুহিদের বাসা থেকে ফারহান আরশিকে আরশিদের বাসায় চলে গেল। আরশিকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে ফারহান গাড়ি নিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর তার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন। ফারহান চুপচাপ ভিতরে ঢুকে তার রুমের দিকে যেতে লাগলো তখনই রোকসানা বেগম বলে উঠলেন, “কোথায় ছিলি এতক্ষণ?”

-“আরশিকে নিয়ে তার এক বান্ধবীর জন্মদিনে গিয়েছিলাম।” পিছন ফিরে উত্তর দিল ফারহান।

-“আরশির বান্ধবীর জন্মদিনে তুই কেন গিয়েছিলি?”

-“আরে আরশিকে ওর বান্ধবীর বাসায় দিয়ে আসতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর ওর বান্ধবী বললো এসেছেন যখন আমার জন্মদিনের কেকটা খেয়ে যান। তো ভাবলাম কেক খেয়ে নাহয় কিছুক্ষণ এইখানে থেকে আবার আরশিকে নিয়ে তাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।”

-“ঠিক আছে এবার রুমে যা আর হাত-মুখ ধুয়ে খেতে আয়।”

-“আমি ওদের ওইখান থেকে খেয়ে এসেছি আম্মু, আর খুদা নেই। তুমি আর আব্বু দু’জনে খেয়ে নাও।”

-“তোর আব্বু তোর অপেক্ষা করতে করতে অনেক আগেই খেয়ে ফেলেছেন।”

-“তার মানে এখন শুধু তুমি একাই খাওয়ার বাকি রয়েছে? আচ্ছা সমস্যা নেই আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি তুমি খাবার রেডি কর, দু’জনে একসাথে খাব।”

-“তুই না ওইখান থেকে খেয়ে এসেছিস বললি। তাহলে এখন আবার…”

-“খেয়ে এসেছি তো কি হয়েছে? এখন আবার খাব। তবে নিজের হাতে খাব না তোমার হাতে খাইয়ে দিতে হবে কিন্তু।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে খাইয়ে দিব নে। তুই যা গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আয়।”

ফারহান “আচ্ছা” বলে তার রুমে চলে আসলো। রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে খাবার খেতে নিচে চলে আসলো। এসে ডাইনিং টেবিলে বসতেই রোকসানা বেগম তাকে খাইয়ে দিতে আরম্ভ করলেন। ফারহানও তার আম্মুর দেওয়া খাবারের লুকমা মুখে পুরে ছোট বাচ্চাদের মতো করে খেতে লাগলো। এটা কোনো নতুন বিষয় না। ফারহান প্রায়শই এইভাবে তার আম্মুর হাতে খাবার খায়।
ওইদিনের মতো খাওয়া শেষে ফারহান তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

.
পরেরদিন সকালবেলা ফারহান ঘুম থেকে উঠেই ভার্সিটিতে চলে যায়। ভার্সিটিতে এসে ক্যাম্পাসের এক কোণায় বসে বসে তার বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করছিল এমন সময় কোত্থেকে একটা মেয়ে এসে তার দিকে একটা চিঠি এগিয়ে দিয়ে বলে, “ভাইয়া এটা আপনার জন্য।”
ফারহান মেয়েটার থেকে চিঠিটা নিয়ে সেটা খুলে দেখলো সেটাতে বড় বড় করে “I Love You” লিখা রয়েছে। চিঠির ভিতরে এমন লিখা দেখে ফারহান সাথে সাথে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো, “কে দিয়েছে এটা তোমায়?”

-“ওই যে গেইটের সামনে কিছু ছেলেরা বাইকের উপর বসে আছে তারা।” মেয়েটা আঙুল ইশারায় দেখিয়ে বললো।

-“ঠিক আছে আস আমার সাথে।” বলেই ফারহান উঠে সামনের দিকে পা বাড়ালো।

ফারহানের সাথে সেই মেয়েটাও তার পিছু পিছু যেতে লাগলো। ছেলেগুলোর কাছে এসে ফারহান তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো, “এই মেয়েকে এই চিঠিটা কে দিয়েছে?”

-“সেটা জেনে তোমার কাজ কি?” তাদের মধ্যে থেকে একজন বললো কথাটা।

-“যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও।” কড়া গলায়।

-“আমি দিয়েছি কেন কি হয়েছে?” একটা ছেলে বসা থেকে উঠে ফারহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো কথাটা।

-“কোন ইয়ারে পড়?”

-“ফাস্ট ইয়ারে কেন?”

-“ভার্সিটিতে এসেছ পড়াশোনা করার জন্য তাহলে এইসব রেগিং টেগিং না করে পড়াশোনায় মন দাও। পরেরবার থেকে যেন আর এইসব করতে না দেখি।” শান্ত গলায় কথাগুলো বললো ফারহান।

-“এতো জ্ঞান তো আমার বাপও আমায় কখনো দেয়না, তুই কে যে আমায় এতো জ্ঞান দিচ্ছিস? প্রিন্সিপালের ছেলে হে?”

ছেলেটার কথাগুলো শুনে এবার ফারহানের মাথাটা গরম হয়ে গেল। সে আর নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারলো না। নিজের বাহিরের সরলতা সরিয়ে আসল রূপে ফিরে আসলো আর ছেলেটার গাল বরাবর ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল। চড় খেয়ে সেই ছেলেটা সাথে সাথে দুই হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পরল। এমন দৃশ্য দেখে ওই ছেলেটার সাথে থাকা বাকি ছেলেগুলো বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল। তাদের মধ্যে থেকে একটা ছেলেকে বলা হলো “যা গিয়ে বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে আয় তো। আজ শা*লাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।” ছেলেটাও তৎক্ষনাৎ দৌড়ে সেখান থেকে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। ফারহান বুঝতে পারল একটু পর এখানে কি হতে চলেছে। তবুও সে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে পাশে থাকা একটা বাইকে গিয়ে আরামসে বসে পরল আর তার সাথে আসা মেয়েটাকে নিজের ক্লাসে চলে যেতে বললো। মেয়েটাও তার কথামতো সেই জায়গা ত্যাগ করে চলে গেল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here