হৃদ_মাঝারে_তুমি #সূচনা_পর্ব

0
1050

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#সূচনা_পর্ব
#লেখকঃ- Tamim Ahmed

-“আমি নিষেধ করা সত্তেও তুই কোন সাহসে শাড়ি পরেছিস? ছেলেদের শরীর দেখানোর খুব শক জেগেছে তাইনা?” রাগে গজগজ করে শেষের কথাটা বলে উঠলো ফারহান।

এদিকে ফারহানের রাগ দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে চুপটি মে’রে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরশি। ফারহানের মুখের উপর কথা বলার সাধ্য তার নেই। কেন’না আরশি ফারহানকে জমের ন্যায় ভয় পায়। ভয় পাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ফারহানের কথার চেয়ে তার হাত বেশি চলে। তা ছাড়া ফারহান সেই ছোটবেলা থেকেই আরশিকে শাসিয়ে আসছে। ছোটবেলায় আরশি ফারহানের কোনো কথা না শুনলে ফারহান তার গায়ে হাত চালিয়ে দিত। তখন ফারহানকে তার আম্মু দমিয়ে রাখলেও এখন আর কেউ তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এ জন্য-ই আরশি ফারহানকে সবার চাইতে একটু বেশি-ই ভয় পায়।

-“কি’রে কথা বলছিস না কেন? সারাদিন তো ঠিকই পকপক করে বেড়াস, আমি সামনে আসলেই তোর কথা বন্ধ হয়ে যায় কেন?” আরশিকে চুপ করে থাকতে দেখে কথাগুলো বললো ফারহান।

-“আআসলে ভাইয়া আজ রুহির জন্মদিন তো তাই…”

-“তাই তোকে শাড়ি পড়তে হবে? রুহি তোকে বলেছে ওর জন্মদিনে শাড়ি পড়ে যেতে?” চেহারায় রাগের মাত্রা বজায় রেখেই কথাগুলো বললো ফারহান।

আরশি কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আরশির নিরবতা দেখে ফারহান এবার তাকে একটা ধমক দিয়ে বললো, “কথা বলছিস না কেন?”

আরশি এবার মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সূচক জবাব দিল।

-“যদি রুহির জন্মদিনে যেতেই হয় তাহলে বোরকা পড়ে যাবি। যদি বোরকা পড়ে যেতে সমস্যা হয় তাহলে নরমাল ড্রেসে যা। কিন্তু শাড়ি পড়ে ওইখানে যাওয়া যাবে না বলে দিলাম।”

-“কিন্তু ভাইয়া, আমার সকল ফ্রেন্ডরা আজ শাড়ি পড়ে রুহির জন্মদিনে আসবে। এখন যদি আমি ওখানে নরমাল ড্রেসে যাই তাহলে…”

-“তাহলে কি সবাই তোকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে? নাকি তোকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিবে কোনটা? দেখ আরশি, আমি আর এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা। তুই ওইখানে শাড়ি পড়ে যেতে পারবি না এটাই আমার শেষ কথা। এখন তোর যেতে মন চাইলে চল আমি তোকে গাড়ি দিয়ে রুহিদের বাসায় দিয়ে আসবো, আর নাহয় রুহিকে কল করে বলে দে যে তুই আসবি না।” একদমে কথাগুলো বলেই ফারহান হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ফারহান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আরশি মুখ ভার করে খানিকক্ষণ বিছানায় বসে রইলো। তার কিছুক্ষণ পড়েই আরশি একটা ডেভিল হাসি দিয়ে উঠলো। আরশি আগেই বুঝেছিল সে শাড়ি পড়ে মায়ার জন্মদিনে গেলে ফারহান এসে তাকে বাধা দিবেই। তাই সে নিজের একটা শাড়ি পড়ে আগে থেকেই রেডি হওয়া শুরু করেছিল যাতে ফারহান এসে তাকে শাড়ি পড়তে মানা করে দেয়। শেষ*মেশ সেটাই হলো যেটা আরশি চাচ্ছিল। এখন আর তার কিছু করা লাগবে না, যা করার রুহির বাসাতে গিয়েই করবে। আপাতত এখন আরশি একটা নরমাল ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিল রুহিদের বাসায় যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে সাথে করে একটা ব্যাগে তার শাড়িটা ভরে নিচে চলে আসলো। নিচে আসতেই আরশির তার বাবার সাথে দেখা হয়ে গেল।

-“আজ না তোমার বান্ধবী রুহির জন্মদিন। তুমি কি যাবে না নাকি?”

-“হ্যাঁ আব্বু, এইতো যাচ্ছি এখন।”

-“যাচ্ছি মানে! তুমি না বললে সেখানে শাড়ি পড়ে যাবে। শাড়ি কেনার জন্য গতকাল টাকাও তো নিয়েছিলে আমার থেকে। তাহলে এখন এমন নরমাল ড্রেসে যাচ্ছ যে?” কপাল ভাঁজ করে কথাগুলো বললেন আমজাদ হোসেন।

-“আসলে আব্বু হয়েছে কি ফারহান ভাইয়া…”

-“ওহ আচ্ছা, থাক আর কিছু বলতে হবে না বুঝে গেছি। যেখানে আমি নিজের মেয়েকে এতো শাসন করিনা সেখানে ও সবকিছুতে তোমায় এতো শাসিয়ে রাখে কেন বুঝিনা। কিছু বললেও শুনে না, বললেই ঘাড়*ত্যাড়ামি শুরু করে দেয় ঘাড়*ত্যাড়া একটা।” খানিকটা রাগ ঝেড়ে কথাগুলো বললেন আমজাদ হোসেন।

-“কে ঘাড়*ত্যাড়া মামা?”

হঠাৎ পিছন থেকে কথাটা কানে এসে পৌঁছাতেই আমজাদ হোসেন আর আরশি চমকে উঠে পিছনে ফিরে তাকাল। তাদের ঠিক পিছন বরাবর ফারহান দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে। ফারহানকে দেখে আমজাদ হোসেন কিছুটা আৎকে উঠেলেন। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে তিনি বললেন, “আরে কে আবার, আমাদের ড্রাইভার। তাকে বললাম সে যেন আরশিকে তার বান্ধবীর বাসায় গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেয়। আমার কথা তো শুনল’ই না উলটা আরও ত্যা’ড়া’মি করে গাড়িটা নিয়ে চলে গেল।” কথাগুলো বলে আমজাদ হোসেন আরশির দিকে তাকালেন। দেখলেন আরশি তখন উনার অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছে কিন্তু তা ফারহানকে বুঝতে দিচ্ছে না।

-“ড্রাইভার চলে গেছে তো কি হয়েছে? আমি তো আছিই। আমি আমাদের কার নিয়ে এসেছি। আর এখন আরশিকে তার বান্ধবীর বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসবো। এইখানে ড্রাইভারের তো কোনো প্রয়োজন নেই।”

-“হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু তুমি শুধু শুধু এইসময় এতো দূর অবধি আসতে গেলে কেন? আমি তো ড্রাইভারকে ফোন করে নিয়ে আসতে পারতাম।”

-“আমি তো কার নিয়ে এসেছি, হেঁটে হেঁটে তো আর আসি নি। যাইহোক, আমরা এখন চললাম, চল আরশি।”

ফারহান আর আরশি বাসা থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রান্নাঘর থেকে রোজিনা বেগম বেরিয়ে আসলেন। ফারহানকে দেখেই তিনি বলে উঠলেন, “আরে ফারহান! তুমি কখন এলে? আর আরশিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?”

রোজিনা বেগমের কথাগুলো শুনে ফারহান হাঁটা থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকালো আর বললো, “এইতো মামি কিছুক্ষণ আগে এসেছি। এসে শুনলাম আরশি নাকি তার এক বান্ধবীর জন্মদিনে যাবে। তাই ওকে তার বান্ধবীর বাসায় দিয়ে আসতে যাচ্ছি।”

-“এতদিন পর বাসায় আসলে খালি মুখে চলে যাবে নাকি? কিছু খেয়ে যাও?”

-“মামি আজ না, অন্য একদিন আসলে খাব, এখন আমরা যাই।” কথাগুলো বলেই ফারহান বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।

ফারহান চলে যাওয়ার পর আরশিও তার আম্মু-আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে ফারহানের পিছু পিছু বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। আরশিকে বিদায় দিয়ে রোজিনা বেগম রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াবেন তখনই আমজাদ হোসেন রোজিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ছেলেটা বাসায় আসলেই তুমি এতো আ*হ্লা*দী হয়ে যাও কেন হে? আর ও তো দু’দিন পর পর’ই আমাদের বাসায় আসে তাহলে এতো আ*হ্লা*দ দেখি বলার কি আছে যে এতদিন পর বাসায় আসলে কিছু খেয়ে যাও।” কথাগুলো বলতে বলতে আমজাদ হোসেন উনার স্ত্রী রোজিনা বেগমের উপর খানিকটা রাগ ঝাড়লেন।

-“ওমা! সে বাসায় আসলে আমি আবার কখন আ*হ্লা*দী হয়ে উঠি? আর এইসময়ে কেউ বাসায় আসলে তাকে কিছু খাওয়ার কথা না বললে কেমন দেখায় বল তো?”

-“এটা অন্যদের বেলায় বললে মানা যায় কিন্তু ওর বেলায় এটা মানায় না। পরেরবার ও বাসায় আসলে এতো আ*হ্লা*দ দেখাতে যাবা না বলে দিলাম।” কথাগুলো বলেই আমজাদ হোসেন উনার রুমে চলে গেলেন।

.
ফারহান আরশিকে নিয়ে তার বান্ধবী রুহিদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামাল। গাড়ি থামাতেই আরশি তার শাড়ির ব্যাগটা নিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাবে ওমনি ফারহান তার হাত চেপে ধরে।

-“গাড়ি থেকে নামতে বলেছি তোকে?” আরশির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

-“রুহিদের বাসায় তো চলে এসেছি, এখন নামবো না তো কি করবো?”

-“তোর এই ব্যাগের মধ্যে কি?”

-“শাড়ি।”

-“কার শাড়ি এটা?”

-“আম না মানে রুহির।”

-“রুহির শাড়ি তোর কাছে কেন?”

-“আমার তো কোনো ভালো শাড়ি নেই তাই ওর জন্মদিনে পড়ার জন্য ওর থেকে এই শাড়িটা নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো শাড়ি পড়তে মানা করে দিলে। তাই এটা সাথে করে নিয়ে আসলাম তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য।” চেহারায় কিছুটা কষ্টের চাপ ফুটিয়ে তুলে কথাগুলো বললো আরশি।

-“তাই না? আচ্ছা রুহিকে ফোন করে বাহিরে আসতে বল তো।”

-“এইসময় ও বাহিরে আসবে কীভাবে? ভিতরে তো অনেক…”

-“তোকে যেটা বলেছি সেটা কর।” রাগী গলায়।

অতঃপর আরশি বাধ্য হয়ে তার ফোনটা বের করে রুহির নাম্বারে কল দিল। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর রুহি কল রিছিভ করলো।

-“কিরে আরশি তুই কোথায়? ইরা, ফারিহা, জেরিন সবাই তো এসে পরেছে।” ফোনের অপাশ থেকে রুহি বললো কথাগুলো।

-“আমি তোদের বাসার নিচে। আমার সাথে ফারহান ভাইয়াও আছেন। ভাইয়া তোকে নিচে আসতে বলেছেন।”

-“কেন?”

-“তুই আয় না আসলেই বুঝতে পারবি।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।” বলেই রুহি কল কে*টে দিল।

কিছুক্ষণ পরেই রুহি নিচে চলে আসলো। রুহিকে আসতে দেখে ফারহান গাড়ি থেকে নেমে পরল, তার সাথে আরশিও গাড়ি থেকে নেমে পরল।

-“কি ব্যাপার ভাইয়া, আপনি নাকি আমায় ডেকেছেন?”

-“হুম। এই শাড়িটা নাকি তোমার?” আরশির নিয়ে আসা শাড়িটা দেখিয়ে।

ফারহানের কথা শুনে রুহি আরশির দিকে তাকাতেই আরশি তাকে ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বলতে বললো। রুহিও বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো, “হ্যাঁ ভাইয়া, এই শাড়িটা আমার।”

-“আচ্ছা তাহলে এই নাও তোমার শাড়ি। তোমরা তাহলে এবার যাও আর আরশি, (আরশির দিকে তাকিয়ে) অনুষ্ঠান শেষ হলে আমায় একটা কল দিস। আমি তোকে নিতে চলে আসবো। এখন তাহলে আমি যাই আর রুহি, হ্যাপি বার্থডে।”

-“সে কি ভাইয়া! আপনি এই প্রথম আমাদের বাসায় আসলেন খালি মুখে চলে যাবেন নাকি? ভিতরে আসেন আর জন্মদিনের কেকটা খেয়ে যান।”

-“নাহ সমস্যা নেই তোমরা যাও।”

-“আরে ভাইয়া আসেন না। কিছুক্ষণ পরেই কেক কা*টা হবে। অন্তত এক পিচ কেক খেয়েই যান। প্লিজ ভাইয়া আসেন না।” খানিকটা মিনতির স্বরে কথাগুলো বললো রুহি।

রুহির এতো রিকুয়েষ্ট করাতে ফারহান কি যেন ভেবে তার কথায় রাজি হয়ে গেল। আর বললো, “ঠিক আছে তোমরা তাহলে যাও আমি গাড়িটা এক জায়গায় পার্কিং করে আসছি।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা তাহলে ভিতরে যাই আপনি গাড়িটা পার্ক করে চলে আসিয়েন। চল আরশি।” বলেই রুহি আরশিকে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেল।

বাসার ভিতরে আসতেই আরশি রুহির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, “এটা তুই কি করলি রুহি? তুই ফারহান ভাইয়াকে এইখানে থাকতে বললি কেন?”

-“বলেছি তো কি হয়েছে? আজ আমার জন্মদিন আর উনি তোকে নিয়ে আমার বাসা অবধি এসেছেন। এখন ভদ্রতার খাতিরে উনাকে একটু কেক খেয়ে যাওয়ার কথা বলা যায়না?”

-“উনাকে এইখানে রেখে যে তুই আমার জন্য একটা বি’প’দ তৈরি করেছিস সেটা কি তুই বুঝতে পারছিস?”

-“উনি এইখানে থাকলে তোর আবার কিসের বি’প’দ?”

-“সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি, এখন ভিতরে চল।”

অতঃপর আরশি আর রুহি দু’জনে ভিতরে গিয়ে তাদের ফ্রেন্ডদের কাছে চলে এলো। সেখানে দু’জন উপস্থিত হতেই তাদের মধ্যে থেকে একজন আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললো, “কিরে আরশি তোর আসতে এতো দেরি হলো কেন? আর আমাদের মধ্যে না কথা হয়েছিল যে আমরা সবাই রুহির জন্মদিনে শাড়ি পড়ে আসবো, তাহলে তুই এমন নরমাল ড্রেসে আসলি কেন?”

-“কারণ ফারহান ভাইয়া আমায় শাড়ি পড়ে আসতে দেননি তাই। তবে আমি ভেবেছিলাম এইখানে এসে শাড়ি পড়ে নিব, এমনকি সাথে করে আমার শাড়িটাও এনেছিলাম। কিন্তু এই রুহি সব গন্ড*গোল পাকিয়ে দিল।”

-“ওমা আমি কি করলাম?” পাশ থেকে রুহি বললো কথাটা।

-“এই যে তুই ফারহান ভাইয়াকে ভদ্রতার খাতিরে কেক খেয়ে যেতে বললি। ফারহান ভাইয়াও তোর কথায় রাজি হয়ে গেলেন। এখন আমি শাড়ি পড়ে তোর কেক কা*টার সময় কীভাবে এটেন্ড করবো? তখন তো ফারহান ভাইয়াও সেখানে উপস্থিত থাকবেন। আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখলে উনি বাসায় গিয়ে যে আমায় কি করবেন তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”

-“প্রতিটা সমস্যার’ই একটা সমাধান থাকে, তোর সমস্যার সমাধানও আছে আমাদের কাছে। আমরা সবাই এখন ফারহান ভাইয়ার কাছে যাব আর উনার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।”

-“কি বলবি?”

-“সেটা তখনই শুনতে পাবি, এখন আগে চল গিয়ে দেখি ফারহান ভাইয়া কোথায় আছেন।” কথাটা বলেই রুহি সবাইকে নিয়ে ফারহান খুঁজতে চলে গেল।

.
গাড়ি পার্কিং করে ফারহান সবেমাত্র রুহিদের বাসার ভিতরে ঢুকেছে ওমনি কোথা থেকে জানি রুহি আর তার বান্ধবীরা ফারহানের সামনে এসে দাঁড়ালো। ফারহান কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই রুহি বলে উঠলো, “আপনি আরশিকে শাড়ি পরতে মানা করেছেন কেন তা আমরা জানি না। তবে ভাইয়া, আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে অন্তত আরশিকে কিছুক্ষণের জন্য শাড়ি পড়ার অনুমতি দেন। আমরা সব ফ্রেন্ডরা আজ শাড়ি পড়েছি শুধু আরশি ছাড়া আমরা তো আজ কত ছবিও তুলবো, আমরা সবার পরনে শাড়ি থাকবে আর ওর থাকবে নরমাল ড্রেস এটা কেমন দেখায় না বলেন ভাইয়া?”

রুহির কথাগুলো শুনে ফারহান কিছুক্ষণের জন্য ভাবনায় পড়ে গেল সে এখন কি করবে। ফারহান লক্ষ্য করলো জন্মদিনে আসা অনেক অতিথিরা তার দিকে সরো চোখে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারলো এরা আরও বেশিক্ষণ এইখানে দাঁড়িয়ে তার সাথে কথা বললে জন্মদিনে আসা অতিথিরা বিষয়টাকে অন্য মাইন্ডে নিতে পারে। তাই এরা যা বলছে তাতে মত দিয়ে এদেরকে এইখান থেকে কোনোরকমে ভাগিয়ে দিলেই হলো।

-“আচ্ছা ঠিক আছে তোমাদের যা ভালো লাগে তাই কর আমায় আর এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা লাগবে না।” কথাটা বলেই ফারহান তাদের পাশ কা*টিয়ে অন্যদিকে চলে গেল।

ফারহানের কথা শুনে আরশির সব বান্ধবীরা বেজায় খুশি হয়ে উঠলো সাথে আরশিও। তবে ফারহান যে তাকে এতো সহজে শাড়ি পড়ার অনুমতি দিয়ে দিল সেটা আরশির মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। ওতো সাত-পাঁচ না ভেবে আরশি শেষ*মেশ শাড়ি পরতে চলে গেল।

প্রায় কিছুক্ষণ পর আরশি শাড়ি পড়ে তার বান্ধবীদের সাথে বেরিয়ে আসলো কেক কা*টার স্টেইজে। ফারহান তখন সেখানেই একটা চেয়ারে বসে ছিল। হুট করে সেখানে একদল মেয়েদের মধ্যে নীল শাড়ি পরা একটা মেয়েকে দেখে ফারহানের চোখ আঁটকে গেল। চোখে গাড় কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, হাতে নীল শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে নীল চুড়ি যেন আকাশ থেকে একটা নীল পরী মাটিতে নেমে এসেছে। এই মেয়েটার ছবি’ই ফারহান এতদিন যাবত নিজের হৃদয়ে এঁকে এসেছিল আর আজ তাকে বাস্তবেও দেখে নিল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here