মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸 #পর্ব- ৯,১০

0
342

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৯,১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
০৯

অর্ষার সামনে কেউ হুট করে এসে বর্ণকে জড়িয়ে ধরে। বর্ণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অরু মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। বর্ণ মেয়েটাকে নিজের থেকে সরিয়ে বলে, ‘ রোজিয়ানা তুই এখানে? ‘ রোজিয়ানাকে দেখে আরফানও দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। রোজিয়ানা স্বাভাবিক ভাবেই হেসে বলে, ‘ আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে অথচ আমি থাকবো না? ইটস নট ফেয়ার বর্ণ। ‘
অর্ষা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে মেয়েটার পড়নে ছোট খাটো পোষাক। পাতলা একটি সাদা ফ্রক হাটু অব্দিও পৌঁছায় নি তা। মুখশ্রী গড়ন দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটি বিদেশি, কিন্তু বাংলা ভাষা যথেষ্ট ভালো বলতে পারছে। মিরা আরফানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রোজিয়ানাকে ভালো করে লক্ষ্য করে বলে, ‘ আপনাকে ঠিক চিনলাম না। ‘
রোজিয়ানা আরফানের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ আমি আরফান এবং বর্ণের ক্লাসমেট, এন্ড ভালো ফ্রেন্ড ও বলা চলে। আরফানের সাথে তো আমার ফ্রেন্ডশিপ একটু বেশিই! তাই তার বিয়ে কোনভাবে মিস করতে চাইনি, তাই চলে এলাম। ‘

মিরা মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘ খুব ভালো করেছেন, কিছুক্ষনের মধ্যেই তো রং খেলার অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। আপনি একদম ঠিক টাইমে চলে এসেছেন। আপনার কোন সমস্যা নেই তো? ‘

‘ আরে আমার সমস্যা থাকবে কেন? ফার্ষ্ট টাইম বিডিতে এসেছি, তাছাড়া আরফান বিজি থাকলে কি হয়েছে? বর্ণ তো আছেই আমার খেয়াল রাখার জন্যে! কি বলিস বর্ণ? ‘

বর্ণও পকেটে হাত গুজে, রোজিয়ানার প্রশ্নের জবাবে তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে, আরফান এবং মিরার দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ ইয়াপ ডোন্ট ওয়ারি। আমি আছি তো রোজিয়ানার খেয়াল রাখার জন্যে। অনুষ্টান শুরু করা যাক কেমন? ‘

মিরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়।

__________________
অরুর কাজিনেরা রং হাতে নিয়ে মিরা এবং আরফানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অরু মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হতাশ পানে শুধু বর্ণ এবং রোজিয়ানার দিকে আড়চোখে তাঁকাচ্ছে। বিড়বিড়িয়ে বলছে, ‘ একে তো অর্ষা আপু ছিলো, এখন এই বিদেশেনি জুটেছে। দূর ছাই। জীবনে একজনের উপর ক্রাশ খেলাম, তাও তাকে নিয়ে মানুষের টানাটানির শেষ নেই। ‘

বর্ণ খেয়াল করছে অর্ষা কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সেই দৃষ্টিতে রয়েছে একরাশ বিরক্তি। অর্ষা পকেটে হাত গুজে বর্ণকে দেখে ভেংচি কেটে দূরে সরে যায়। বর্ণ মুচকি হেসে দেয়। অপরদিকে আরফান ঘেমে একাকার। রোজিয়ানার তো এতোক্ষনে তোলপাড় শুরু করে দেওয়ার কথা, কিন্তু সে কেমন শান্ত ভাবে সকলের সাথে কথা বলছে। একটু আগেও রোজিয়ানার সাথে ঝগড়া হয়েছে, তখনো সে জানতো না রোজিয়ানা বাংলাদেশে এসেছে। এমনকি একটু আগে ঝগড়া করে এখন সে আরফানের বিয়েতে যোগ দিতে চাইছে, আসলে চাইছে টা কী রোজিয়ানা? রং খেলার উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। আরফান শুধু মিরার সাথেই একপ্রকার লেগে রয়েছে। যদিও মিরার ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগছে। অন্যদিনের তুলনায় আজ আরফান তার একটু বেশিই খেয়াল রাখছে। আরফান শুধু বার বার আড়চোখে রোজিয়ানাকে দেখে যাচ্ছে। রোজিয়ানা বর্ণের সাথে কথা বলে যাচ্ছে, আরফানের দিকে একপলকের জন্যেও তাকাচ্ছে না৷ রং খেলে সকলে একপ্রকার ভুতে পরিনিত হয়েছে। অর্ষা সবকিছু থেকে দূরে বাগানের সাইডে বসে ফোন গুতিয়ে যাচ্ছে। পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে, পাশ ফিরে তাঁকায় সে। বর্ণকে দেখে মুখশ্রী ঘুড়িয়ে বলে, ‘ আপনি আবারো এসেছেন? আপনার ফরেনার ফ্রেন্ড এসেছে, তার খেয়াল রাখুন। ‘

‘ আপাতত রোজিয়ানার খেয়াল না হয় আরফান রাখবে। সেসব কথা বাদ দিন। সবাই রং খেলছে। আপনি খেলবেন না মিস ঝাঁঝওয়ালী? ‘

‘ যে জীবন অন্ধকারের কালো রংয়ে ডুবে রয়েছে, সেই জীবনে অন্য কোন রংয়ের প্রবেশ নিষেধ। ‘

অর্ষা কথাটি বলেই উঠে চলে গেলো। বর্ণ স্হীর হয়ে বসে পরলো। আরফান পিছনের দিকে এসে কাউকে ফোন করছিলো, হুট করে আরফানের হাত থেকে কেউ ফোন খানা কেড়ে নেয়। আরফান পিছনে ঘুড়ে দেখে অর্ষা। অর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ কাকে ফোন করছিলে হঠাৎ? ‘

‘ যার কথা তুমি ভাবছো। সে অন্তত নয়। ‘

ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় আরফান। আরফান উত্তর দিয়ে, অর্ষাকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে, অর্ষা হাত দিয়ে, আরফানের হাত পিছন দিয়ে মোচরে দিয়ে বলে, ‘ আমাকে ভয় পাচ্ছো তুমি আরফান? আমাকে? যাকে একসময় নিজের পায়ের তলায় পি/ষে মা/রতে চেয়েছিলে। যার সবটুকু তোমরা সবাই কে/ড়ে নিয়েছিলে। ‘

আরফান অর্ষার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করতে করতে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, ‘ তোহ! তুমি এখন কি চাইছো? ‘

‘রি/ভেন্জ! তোমাদের সকলের ধ্বং/শ। ‘

আরফান হু হা করে হেসে উঠে পরক্ষনে। অর্ষার উত্তরে। অর্ষা আরফানকে ছেড়ে, শক্তমুখশ্রীতে দেয়াল ঠেসে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘ তুমি নিবে রিভেঞ্জ? কি ভেবেছে দুইদিনের নেতাগিরি করে এই আরফানকে ধ্বং/শ করবে তুমি? আমি ভুল ছিলাম অর্ষা, তুমি আগেও বোকা ছিলে, এখনো বোকাই রয়ে গেছো। ইউ ব্লা/ডি ফুল লেডি। ‘

সঙ্গে সঙ্গে আরফানকে লা/ত্থি মেরে মাটিতে শুইয়ে দেয় অর্ষা। আরফানের বুকে নিজের হিল জু/তো দিয়ে পা/রা রেখে বলে, ‘ বদলিয়েছি কিনা, তা তো সময়ই বলে দিবে। আজই দেখে নাও। একদিন তোমার পায়ের নীচে আর্তনাদ করেছিলাম, আজ তুমি আমার পায়ের নীচে। মনে পরে আরফান? আমি নিজের জীবনের এবং আমার স… ‘

কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায় অর্ষা। নেত্রপল্লবে ধরা দেয় নিজের না হওয়া কিছু প্রিয়জনকে হারানোর আর্তনাদ। অর্ষা স্পষ্ট শুনতে পারছে কারো পায়ের আওয়াজ। কেউ এদিকে আসছে। অর্ষা পিছিয়ে যেতেই দেখতে পায় মিরা এসেছে। মিরাকে দেখেই দ্রুত উঠেই, নিজের পাঞ্জাবি ঝেঁড়ে পরিপাটি ভাবে দাঁড়িয়ে পরে আরফান। মিরা পুনরায় অর্ষা
এবং আরফানকে জনশূন্য জায়গায় দেখে বিরক্তির সহিত প্রশ্ন করে, ‘ আবার তোরা এখানে? একসাথে কি করছিস অর্ষা? ‘

অর্ষা এবং আরফান পুনরায় অস্বস্হিতে পরে যায়। অর্ষা একপ্রকার তাড়া নিয়েই বলে, ‘ আসলে রং খেলার উৎসব চলছে, তার মধ্যে আরফান ভাইয়াকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই খুঁজতে এসে দেখি, ভাইয়া এদিকটায় পা পিছলে পরে গেছে। আচ্ছা তুই যখন চলে এসেছিস। আমি এখন যাই। তোরা গিয়ে ইঞ্জয় কর। ‘

___________

একপ্রকার পালিয়েই মিরা এবং আরফানের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনলো সে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মিরার থেকে ধরা পরতে পরতে বেঁচে গিয়েছে সে। অর্ষা মস্তিষ্ক শুধু একটি কথাই ঘুড়ছে, তাকে কোনভাবে বিয়েটা আটকাতে হবে, নাহলে তার মরুর জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অতঃপর আরফানসহ, বাকি সকলের থেকে সে হিসাব নিবে অতীতের। অর্ষার ভাবনার মাঝেই, কেউ অর্ষাকে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে আসে। অর্ষা কোনপ্রকার বাক্য ব্যায় করার পূর্বেই, কেউ অর্ষার মুখ চেপে ধরে।
__________

অপরদিকে রোজিয়ানা চারপাশে ঘুড়ছিলো, তাকে দেখে অরু প্রশ্ন করে, ‘ কাউকে খুঁজছেন আপনি? ‘

‘ হ্যা! আসলে বর্ণকে খুঁজছিলাম, বর্ণ কোথায়? ওকে ছাড়া আমার তো এখানে কেউ পরিচিত নেই। তাই আর কি ওকে খুঁজছি। তুমি বলবে বর্ণ কোথায়? ‘

‘ শাকচুন্নি কোথাকার শুধু বর্ণ আর বর্ণ অসহ্য। ‘

বিড়বিড়িয়ে বলে অরু। ‘ কিছু বললে তুমি আমাকে?’

রোজিয়ানার প্রশ্নে দ্রুত মাড়িয়ে অরু বলে,
‘ না না কিছু বলেনি। আপনি আসুন আমার সাথে। আমার সব কাজিনদের সাথে আলাপ করিয়ে দেই। এত্তো বর্ণ বর্ণ করতে হবে না। ‘

রোজিয়ানা ‘না ‘ বলার পূর্বেই অরু রাগে তার হাত ধরে তার কাজিনদের কাছে নিয়ে যায়।

___________________
অন্যদিকে কেউ হাত বাড়িয়ে অর্ষার চুলের খোপা খুলে দেয়। বেড়িয়ে আসে অর্ষার ঘন কালো লম্বা চুল। অর্ষা তার আখিজোড়া নিষ্চুপে বন্ধ করে নেয়। সে কারো ঘন ঘন নিঃশ্বাস উপলব্ধি করতে পারে। স্পষ্ট বুঝতে পারে তার সামনে আর কেউ নয় বরং বর্ণ। বর্ণ অর্ষা ললাটে জুড়ে লেপ্টে থাকা চুল কানের লতিতে সাবধানতার সাথে লাগিয়ে দিয়ে, গভীর কন্ঠে বলে,

‘ আপনার অন্ধকার কালো জীবনে এক পশলা রংধনু হয়ে, রাঙ্গিয়ে দিতে চাই আপনার জীবনের কালো অধ্যায়কে। গোধূলীর বেলা হয়ে আলোয় পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই আপনার জীবনের সবটুকু অংশ। ‘

চলবে কি?

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অন্ধকার নিস্তব্ধ কক্ষে বর্ণের তপ্ত ঘন ঘন নিঃশ্বাস উপচে পরছে অর্ষার কাঁধে। বর্ণ হাত বাড়িয়ে রং দিয়ে রাঙ্গিয়ে তুলে অর্ষার মুখশ্রী। অর্ষার হাতে নিজের হাত পুরে দেয়ালার সাথে মিশিয়ে, দেয়ালে তাদের রংয়ের হাতজোড়ার ছাপ দিয়ে দেয়। অর্ষার চুল উপচে পরছে বর্ণের মুখশ্রীতে। অর্ষা কি ভেবে হুট করে বর্ণকে সরিয়ে চলে যেতে নিলে, কোন কিছুর বাঁধা পেয়ে থেমে যায়। আখিজোড়া নাড়িয়ে সে দেখতে পায় তার লম্বা ঘন চুলের কিছু অংশ বর্ণের পাঞ্জাবির বুতামের সাথে ঝটলা পেঁকে রয়েছে। অর্ষা হাত দিয়ে ছাড়াতে নিলে, বর্ণ হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। ভ্রু নাড়িয়ে মায়াবী ভাবে তাকিয়ে সুধোয়,

‘ আমি এবং আপনি একই সুত্রে গাঁথা মিস ঝাঁঝওয়ালী। আপনি চাইলেও এই বন্ধন হতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন না। ‘

‘ কি চান আপনি? কি বলতে চান আপনি? ‘

কিছুটা হতাশা নিয়ে প্রশ্ন করে অর্ষা। অর্ষার প্রশ্নের বিপরীতে পাঞ্জাবির পকেটে হাত রেখে, অর্ষা চারপাশে ঘুড়তে ঘুড়তে হুট করে বর্ণ বলে উঠে,

‘ যদি বলি আপনাকে চাই আমি। দিবেন আমায়?’

অর্ষা বর্ণের কথা শুনে চমকে তাঁকায় বর্ণের দিকে। আখিজোড়া আবদ্ধ হয়ে উঠে ঘোর অন্ধকারে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে। অতীতে কোন এক প্রিয় মানুষটার মুখে কথাটি শুনেছিলো সে। আজ এতো বছর পর সেই স্বরে, সেই বাণী! সবকিছু গুলিয়ে ফেলছে অর্ষা। দুনিয়ার সকল কিছু বাদে সম্পূর্ণ বর্ণ কেন কথাটি তাকে বললো? অর্ষার হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠলো এক অদ্ভুদ উত্তেজনায়। বর্ণ হয়তো অর্ষার মনের ভাব সম্পূর্ণ বুঝতে পারলো। তাই সামান্য হেসে বললো, ‘ আই ওয়াস জাস্ট কিডিং মিস ঝাঁঝওয়ালী। ডোন্ট বি সিরিয়াস ওকে? ‘

‘ আপনি বড্ড হেয়ালী করেন বর্ণ আহমেদ। রহস্যের বেড়াজালে আমার অন্তরটাকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করে তুলছেন আপনি। ‘

অর্ষা নিম্ন সুরে বর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, প্রতিউত্তরে বর্ণ অর্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে অর্ষার চুলের খোঁপা করার সেই ক্লিপটি ধরিয়ে দিয়ে বলে,

‘ চুল বেঁধে নিন, আপনাকে খোলা চুলে বড্ড সুন্দর লাগে। আপনার প্রেমে পরা এক ধরণের পাপ। সেই পাপ অন্য কেউ করুক আমি চাই না। ‘

অর্ষা রাগ দেখিয়ে ক্লিপ খানা নিয়ে, কোমড়ে হাত রেখে বলে, ‘ আমার মতো ছেলে-মেয়ের মানুষের প্রেমে আদোও কেউ পরতে পারে? যেখানে এলাকার ছেলেরা আমার ভয়ে নিঃশ্বাস অব্দি আটকে রাখে, সেখানে আমার প্রেমে নাকি কেউ পরবে! হাহ! সে নিশ্চিত পাগল। ‘
কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরেই বলে অর্ষা।

‘ তবে বোধহয় আমি তোমার এক পাগল প্রেমিকা প্রেয়সী। যে তোমার অপেক্ষায় জীবন শেষ অব্দি অপেক্ষা করে যাচ্ছি। কি সুন্দর না? ‘

বর্ণের কথার বিপরীতে একপ্রকার বিষম খেয়ে প্রশ্ন করে অর্ষা,

‘ কি সুন্দর? ‘

‘ হুট করে লাইন গুলো মাথায় চলে এলো, তাই বলে ফেললাম। তাছাড়া আর কিছুই না। আমি বরং যাই। সকলে খেলছে। আপনি তো রং খেলে ভুত হয়ে গিয়েছেনই, আপনিও চলুন এখন। ‘

বর্ণ অর্ষার হাত ধরে একপ্রকার বাইরে নিয়ে আসে। অরু রোজিয়ানাকে নিয়ে, নিজের রংখেলায় ব্যস্ত ছিলো। বর্ণ এবং অর্ষাকে একসাথে দেখে, অরু রোজিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ ওইতো বর্ণ ভাইয়া! অর্ষা আপুর সাথে। ‘

বর্ণকে দেখেই রোজিয়ানা এবং অরু তাদের কাছে চলে আসে। বর্ণ অর্ষার হাত ধরে আছে দেখে, রোজিয়ানা বর্ণের হাত ধরে আবদারের সুরে বলে,

‘ তুই এখানে? এদিকে আমি তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। চল সকলে রং খেলছে। তুই ও চল আমার সাথে। ‘

রোজিয়ানা বর্ণের হাত ধরায়, অর্ষা নিজের হাত ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু বর্ণ তার হাত না ছেড়ে, রোজিয়ানার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,

‘ তুই অরুদের সাথে রং খেল। আমার অন্য কাজ রয়েছে। ‘

‘ কি কাজ এখন তোর আবার? যে আমাকে টাইম দিতে পারছিস না তুই। ‘

মন খারাপের সুরে বলে রোজিয়ানা। অরু তা দেখে মুখ ভেংচি কেটে, ধীর কন্ঠে বলে উঠে,

‘ মেয়েটার ন্যাকামির শেষ নেই বাপু। ন্যাকি একটা। ‘

‘ আরে রোজিয়ানা মা তুমি এখানে? ‘

বর্ণ পিছনে ঘুড়ে দেখে তা মা, আরফানের মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রোজিয়ানা বর্ণের মায়ের কাছে গিয়ে বর্ণের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ কেমন আছেন আন্টি? ‘

‘ আমি তো খুব ভালো রয়েছি। আগে তো বর্ণের ফোন থেকে প্রায় আমার সাথে কথা বলতে, এখন তো ফোনই দাওনা। ‘

রোজিয়ানা বর্ণের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে, ‘ আর কি বলবো আন্টি? এই দুই বন্ধু দেশে এসে, আমাকে ভুলেই গেছে। আরফান যে কিনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তার বিয়ের দাওয়াত অব্দি আমাকে দেইনি। সে তো আমি এসে নিজ থেকে বিয়েতে আনইনভাইটেড গেস্ট হয়ে এন্ট্রি নিয়েছি। ‘

আরফানের মা রোজিয়ানার গালে হাত রেখে বলে,

‘ একদম ঠিক করেছো মা তুমি। আরফানকে এর জন্যে আমি দেখো কি করি। তোমাকে তো আমিও অনেক আগে থেকে চিনি, অথচ তোমাকেই দাওয়াত দিলো না। আচ্ছা বর্ণ বাবা শুনো? ‘

আরফানের মায়ের ডাক শুনে বর্ণের থেকে একপ্রকার জোড় করেই হাত ছাড়িয়ে নিলো অর্ষা। বর্ণ আরফানের মায়ের কাছে যেতেই, তিনি বললেন,

‘ তুমি কিন্তু বাবা রোজিয়ানার খেয়াল রাখবে। এত্তো দূর থেকে মেয়েটা এসেছে। ‘

আরফানের মায়ের কথার বিপরীতে রোজিয়ানা গিয়ে, বর্ণের গলা একপ্রকার জড়িয়ে ধরে জবাব দেয়, ‘ ডোন্ট ওয়ারী আন্টি বর্ণ আমার অনেক ভালো করে খেয়াল রাখবে। কি বলিস বর্ণ? ‘

বর্ণ বিরক্তিরসহিত রোজিয়ানাকে ছাড়িয়ে নিয়ে, পিছনে তাঁকাতেই দেখে অর্ষা উপস্হিত নেই। কোথায় গেলো সে? অপরদিকে রোজিয়ানাকে স্টেজ থেকে লক্ষ্য করে যাচ্ছে আরফান। রোজিয়ানার মতলব কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। পাশ থেকে মিরা আরফানের গলার দিকে হুট করে প্রশ্ন করে উঠে, ‘ তোমার গলায় কিসের দাগ আরফান? ‘

মিরার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে আরফান। গতকাল রাতে অর্ষা তার গলা চে/পে ধরায় অর্ষার নখের
আ/চ পরে গিয়েছে তাতে৷ আরফান নিজের গলার দাগটুকু বৃথা চেষ্টা করে বলে, ‘ তেমন কিছু না। আসলে। ‘

মিরা আরফানের গলার দিকে তাকিয়ে, গলার হাত দিয়ে, ক্ষিপ্ত সুরে বলে, ‘ তোমার গলা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ খুব আদরের সাথে খা/মচি মেরেছে গলায়। ‘

‘ কি বলছো কি তুমি মিরা? ‘

বিরক্তি সাথে সহিত প্রশ্ন করে আরফান। মিরা তার মুখশ্র ঘুড়িয়ে ফেলে। নেত্রপল্লবে অশ্রু ধরা দিচ্ছে, কালকে রাতে সে অর্ষাকে শেষবারের মতো আরফানের কক্ষে দেখেছিলো, তবে কি অর্ষা? না না। অর্ষা এমন কেন করবে? সে তো তার বোন হয়। নিজেকে নিজেই শান্তনা দিয়ে নিষ্চুপ রাখে মিরা।

_______________

আরফান রং খেলা উৎসব শেষে, নিজের রুমে এসে একটি চিরকুট হাতে পায়। তা সে হাতে নিয়ে দেখে তাতে লেখা, ‘ এখুনি ভয়ে পালিয়ে যাও আরফান। নাহলে কালকে বিয়ের আসরে মুখ লুকিয়ে পালাতে হবে তোমাকে। ‘

চিরকুট টা দেখে ভয়ে ঢুগ গিলে সে। আয়নার পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে, সঙ্গে সঙ্গে পাশ ফিরে তাঁকায় সে। রোজিয়ানাকে দেখে ভয়ের সহিত চিরকুট দেখিয়ে বলে, ‘ তুমি এই ঘরে কি করছো? এই চিরকুট কি তুমি লিখেছো? ‘

রোজিয়ানা আরফানের কাধে হাত রেখে, আরফানের ললাটে জুড়ে ঘামটুকু মুছে বলে,

‘ চিল বেবী! জাস্ট কুল! আমি এই চিরকুট কেন লিখতে যাবো? হ্যা তুমি আমাকে চিট করেছো, সো হোয়াট? তুমি বিয়ে করে নিচ্ছো, বাট বর্ণ তো আছে। ওর থেকে পাত্তা না পেয়েই তো, তোমার৷ সাথে রিলেশনে গিয়েছিলাম। সো চিল। তুমি নিশ্চিন্তে বিয়ে করতে পারো। ‘

আরফান কিছু বলার পূর্বেই…….
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here