হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২০

0
349

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২০
#লেখকঃ- Tamim Ahmed

,,
,,
ফারহান তানিশাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো, “কিরে তুই এইখানে? কিছু বলবি?”

-“তোমার সাথে একটু কথা ছিল। ভিতরে আসবো?” গম্ভীর স্বরে।

-“হ্যাঁ আয়, বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

অনুমতি পেয়ে তানিশা ভিতরে এসে ঢুকলো। কিন্তু কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তানিশাকে চুপ করে থাকতে দেখে ফারহান বললো, “চুপ করে আছিস কেন? তুই না কি যেন বলবি বল কি বলবি?”

-“তুমি তাহলে আগে থেকেই সবকিছু জানতে তাইনা?”

-“মানে বুঝলাম না।”

-“এখন তো কিছুই বুঝবা না। যা বোঝার সব তো আগেই বুঝে গেছ।”

-“আরে তুই কি বলছিস এইসব? যা বলার ক্লিয়ার করে বল।”

-“তোমার সাথে যে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এটা তুমি আগে থেকেই জানতে তাইনা?”

-“হ্যাঁ, না মানে পুরোটা না।”

-“মানে?”

-“মানে তোরা এইখানে আসার আগ থেকেই আম্মু বলাবলি করতেন তোর সাথে আমার বিয়ে দিবেন। কিন্তু ওরা যে সত্যি সত্যি আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলবেন সেটা আমার জানা ছিল না।”

-“জানা ছিল না তাইনা? তাহলে আম্মু যখন বললেন আমরা তোমাদের বিয়ে ঠিক করেছি তখন তুমি সাথে সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলে কেন?”

-“আরে আমি রাজি হইনি। আমি উলটা আরও আম্মুকে বলেছি তানিশা আমার কত ছোট তাকে আমি কীভাবে বিয়ে করি আর তোমরা আমাদের মতামত না নিয়েই আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেললে কেন। আমার কথাগুলো শুনে আম্মু সবাইকে বলে দিলেন যে আমি নাকি বিয়েতে রাজি। এখন তুই বল এইখানে আমার কি দোষ?”

-“তোমার কোনো দোষ নেই তাইনা? সব দোষ তোমার। তুমি বিয়েতে রাজি না হলে খালামণি তখন সবার সামনে মিথ্যা বলবে কেন? আমাকে তুমি বোকা পেয়েছ তাইনা? যে তুমি যা বলবে আমি তাই বিশ্বাস করে নেব?”

-“আরে আমি সত্যি বলছি বিশ্বাস কর আমি…”

-“থাক আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলা লাগবে না। বিয়েতে তুমি মত দেওয়াতে আমি যে অসহায় হয়ে পরেছি এমনটা ভাবিও না। আমি তোমাকে কিছুতেই বিয়ে করছি না। আর যদি বাই চান্স তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েই যায় তাহলে বিয়ের রাতেই তোমাকে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে মে*রে আমি আমার সানির সাথে এই শহর ছেড়ে পালিয়ে যাব। তখন বাসার সবাই তোমাকে নিয়ে কান্নাকাটি করবে আর ওদিকে আমি আর সানি হানিমুনে গিয়ে টাইমটা এনজয় করতে থাকবো।”

তানিশার কথাগুলো শুনে ফারহান কিছু মূহুর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। মেয়েটার মাথায় যে এমন সাইকো টাইপের প্ল্যান থাকতে পারে সেটা তাকে দেখে আন্দাজই করা যায় না। সানির কথা শুনে
ফারহানের মাথায় এবার একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সে এবার তানিশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “তাহলে বিয়ের আগেই তুই সানির সাথে কোথাও পালিয়ে যা না তাহলেই তো সব প্যারা দূর হয়ে যাবে।”

-“এখন কেন আমি সানির সাথে পালাব? কালকেই তো আর তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। যদি শুনি আগামী দু’দিনের মধ্যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে তাহলে হয় বিয়ের একটু আগে পালাব কেননা তখন আমার গায়ে অনেক গয়না থাকবে যা দিয়ে আমি আর সানি বসে বসে কয়েকমাস খেতে পারবো। আর যদি এটা করতে না পারি তাহলে প্রথমে যেটা বললাম সেটাই করতে হবে। এখন তোমার জীবনের প্রতি যদি তোমার মায়া থেকে থাকে তাহলে তুমি নিজে কোনো একটা আইডিয়া বের করে বিয়েটা ভেঙে দাও নাহলে তো বিয়ের রাতে আমার হাতে তোমার প্রাণ হারাতে হবে। আচ্ছা তুমি তাহলে বসে বসে ভাব আমি এখন যাই।” কথাগুলো বলেই তানিশা ফারহানের রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।

তানিশা চলে যাওয়ার পর ফারহান একটা ডেভিল হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো, “বোকা মেয়ে একটা, আসছে আমাকে ভয় দেখাতে। এমন কাজ করবো না যে তুই নিজেই বিয়েটা ভাঙবি। তবে এইখানে গোপন ক্রেডিট থাকবে আমার আর দোষী হবি তুই।”

তারপর ফারহান তার রুমের দরজাটা ভিতর থেকে আটকিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

.
পরেরদিন সকালবেলা ফারহানদের পরিবারের সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছে এমন সময় রফিক আহমেদ ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, “গতরাতে আমরা সবাই মিলে কথা বলে ঠিক করেছি আগামী দু’দিনের মধ্যে তোমার আর তানিশার বিয়ের কাজ শেষ করে ফেলবো। বিয়েটা ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করে করবো তাই বেশি মানুষদের ইনভাইট করবো না। তুমি চাইলে তোমার ফ্রেন্ডদেরকে বিয়েতে ইনভাইট করতে পার।”

রফিক আহমেদের কথাগুলো শুনে ফারহান একটুও অবাক হলো না। কিন্তু তানিশা এতে বেশ অবাক হয়েছে আর বর্তমানে মনে মনে কি যেন ভেবে চলছে। রফিক আহমেদের কথাগুলো শুনে ফারহানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে না পেরে মূলত তানিশা খানিকটা ভাবনায় পরে যায়।

-“তানিশা মা, আগামী দু’দিনের মধ্যে তোমাদের বিয়ে হলে তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?” রফিক আহমেদ তানিশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন।

-“জি না খালু, কোনো সমস্যা নেই।”

কথাটা বলে তানিশা একবার ফারহানের দিকে তাকালো। দেখলো ফারহানও তার দিকেই তাকিয়ে আছে আর ঠোঁটের কোণায় ডেভিল হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। ফারহানের এমন হাসির মানেটা তানিশা বুঝে উঠতে পারলো না। কোথায় এখন তানিশার মুখে শয়তানি হাসি থাকার কথা ছিল কিন্তু এখন তো এর উল্টোটা ঘটছে।
তারপর ফারহান নিজের নাস্তা শেষ করে উঠে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে রেডি হয়ে ফারহান অফিসে চলে গেল।

.
রাতেরবেলা আরশি আর তার আম্মু-আব্বু ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন এমন সময় আমজাদ হোসেন আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ইদানীং অফিসের চাপে তোমার সাথে সময় করে কথাই বলতে পারছি না। বলছিলাম তুমি যে ওইদিন সাকিবের সাথে দেখা করতে গেলে তা সাকিবকে পছন্দ হয়েছে তোমার?”

-“কি বল আব্বু, একদিনেই কি কাউকে পছন্দ করে ফেলা যায় নাকি? তবে আমি আসার সময় উনার নাম্বার নিয়ে এসেছি। ইচ্ছা হলে আরেকদিন উনার সাথে দেখা করবো।”

-“তার মানে তুমি কিছুদিন ওর সাথে দেখা করে আস্তে আস্তে ওর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করবে তাইতো?”

-“কিছুটা এমনই।”

-“আচ্ছা তাহলে তোমরা আরও কয়েকদিন একে অন্যের সাথে দেখা কর। দু’জন দু’জনের সাথে কিছু সময় কা*টিয়ে একে অন্যের ব্যাপারে ভালো করে জান। তারপর যদি তাকে তোমার ভালো লাগে তাহলে আমাকে বলিও।”

-“আচ্ছা আব্বু।”

তারপর আরশি তার খাবার শেষ করে উঠে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে আরশি কিছুক্ষণের জন্য পড়তে বসে পরলো কেননা কাল ভার্সিটিতে তাদের একটা ক্লাস টেস্ট আছে।

.
ফারহান সবে রাতের খাবার খেয়ে তার রুমে এসেছে এমন সময় তানিশাও তার পিছু পিছু এসে রুমে ঢুকলো।

-“কি ব্যাপার তুই আমার রুমে!”

-“তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি।”

-“গতকালের মতো?”

-“ভিন্ন কথা।” রাগ দেখিয়ে।

-“বল কি বলবি?”

-“সকালে খালু যখন বললেন যে আগামী দু’দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে করিয়ে দেওয়া হবে তখন তুমি কিছু বললে না কেন?”

-“কি বলবো আমি?”

-“কি বলবে মানে! তুমি কি চাও যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক আর বিয়ের রাতে আমি তোমাকে বালিশ চাপা দিয়ে মে*রে ফেলি?”

-“তার আগে বল তুই কি চাস বিয়ের রাতেই আমি তোকে নিয়ে হানিমুন করতে বাহিরের কোনো দেশে চলে যাই।”

-“একদমই না।”

-“তাহলে তুই নিজেই কিছু একটা করে বিয়েটা ভেঙে ফেল। নাহলে আমার সাথে তোর বিয়ে হলে তোকে যে ওইদিন কোথায় নিয়ে যাব আমি নিজেও জানি না।”

-“মানে কি! আমি কেন এমনটা করবো?”

-“তাহলে তো তোর আর আমার জন্য কোনো একটা দেশের টিকেট কা*টতে হবে। তুই কোন দেশে যেতে চাস বল তো? আমার খেয়াল আমরা আমেরিকা চলে যাব। তুই তো জানিসই আব্বুকে বললেই আমাদের জন্য আমেরিকার টিকেট কে*টে ফেলবে।”

-“তুমি তো দেখছি আমারই টেকনিক আমার উপরেই ব্যবহার করছ! আমি কিন্তু একদমই ফাজলামি করছি না। তোমার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে কিন্তু বিয়ের রাতেই তোমাকে আমি বালিশ চাপা দিয়ে মে*রে ফেলবো বলে দিলাম।”

-“আমিও তো ফাজলামি করছি না। তোর সাথে আমার বিয়েটা হলেই বিয়ের রাতেই তোকে নিয়ে আমেরিকায় উড়াল দিব আর সপ্তাহ খানিকের মতো থেকে আসবো। তবে তুই যদি চাস বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস। আমি যেভাবে বলি সেভাবে যদি তুই কাজ করিস তাহলে তোকে খালা-খালুর কাছে কোনোপ্রকার দোষীও হওয়া লাগবে না।”

-“সেটা কি? মানে এর জন্য আমায় কি করা লাগবে?”

-“শুন তাহলে।”

তারপর ফারহান তানিশাকে যা বললো তা শুনে তানিশা কয়েক কদম পিছিয়ে গেল আর বলতে লাগলো, “পাগল নাকি তুমি? কি বলছ এইসব? এমনটা করলে তো আম্মু-আব্বু আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবেন। না না আমি এমনটা করতে পারবো না, কিছুতেই না।”

-“ওকে তাহলে বিয়ের জন্য নিজের মনকে প্রস্তুত করে নাও।” বলেই ফারহান ঠোঁটের কোণায় একটা ডেভিল হাসি ফুটিয়ে তুললো।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here