আধারে_তুমি,২২,২৩

0
224

#আধারে_তুমি,২২,২৩
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২২

নিলার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিলা মিটমিট করে হাসছে। শান অবাক স্বরে বলে
” ওই বাড়িতে যাচ্ছো তোমরা ? আমাকে জানাও নি কেনো কেউ?” নিলা হেসে বললো
” জানালে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো ? তবে আমরা ভেবেছিলাম বিয়ে পাকা করে একদম সুখবর দিয়ে সারপ্রাইজ করবো কিন্তু সালমার তো পেটে কথা থাকে না।” নিলা কড়া দৃষ্টিতে সালমার দিকে তাকায়। সালমা দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শান উঠে দাঁড়িয়ে বললো
” আজকে যাওয়ার প্ল্যানটা ক্যান্সেল করে দাও ভাবি ! আমার আজ থানায় কাজ আছে।”
নিলা ভ্রু কুঁচকে বলে
” তোমাকে কে নিচ্ছে ? আমরা তো তোমাকে নিচ্ছি না।” শান মুখ কালো করে ব্রেকফাস্ট করতে থাকে। নাইসা দৌঁড়ে শানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। নাইসা ড্রেস, সু পরে তৈরি হয়ে এসেছে। শান নাইসাকে দেখে মুচকি হেসে নাইসাকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। নাইসার গালে চুমু দিয়ে বলে
” কোথায় যাচ্ছে আমার নাইসা মামুনি ?”
নাইসা শানের প্লেট থেকে ব্রেড নিয়ে কামড় বসিয়ে খেতে খেতে বলে
” মিষ্টিপাখি যাবো আমি।” শান হেসে বলে
” শান বাবাই কে নিয়ে যাবে না ?” নাইসা মাথা নেড়ে না বললো। শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কেনো নেবে না আমাকে ?” নাইসা উত্তর না দিয়ে শানের কোলে থেকে নেমে দৌঁড়ে চলে গেলো। শান বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। নিলা শানকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে
” কি গো খাচ্ছো না কেনো ? থানায় যাওয়ার টাইম হয়ে গেছে তোমার।” শান নিশ্বাস ফেলে খাওয়া শেষ করলো। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো থানার উদ্দেশ্যে।
থানায় পৌঁছতেই গাড়ি পার্ক করে থানায় ঢুকে গেলো। কেবিনে ঢুকে নিজের জায়গায় বসতেই কিছুক্ষণের মধ্যে নক করলো ইমন। শান ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলে ইমন ঠাস ঠাস পায়ে ঢুকে গেলো ভেতরে। শান ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইমনের দিকে। ইমন সুক্ষ্ম চোখে শানের দিকে তাকালো। শান গম্ভীর জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে ?” ইমন কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে শানের সামনে বসে পরলো। বায়না স্বরে বলে
” ভাই আমাকে ছুটি দে কয়েকদিনের প্লিজ! একটু শান্তিতে ঘুমাবো কয়েকদিন।” শান স্মিত হেসে বলে
” নাহ তোকে ছুটি দেওয়া যাবে না। তুই ছুটিতে চলে গেলে ৭ দিন এর আগে আসবি না।”
ইমন অনুরোধ করে বলে
” ভাই প্লিজ ! ভাই আমার। ৭ দিন না হোক অন্তত পক্ষে ২দিনের ছুটি দে !” শান ফাইল বের করে দেখতে দেখতে বলে
” ভেবে দেখবো তবে উত্তরটা “না” হবে। কিন্তু তুই চাইলে একটা অপশন দিতে পারি।”
ইমন হুরমুর করে দাঁড়ালো। উত্তেজিত হয়ে বলে
” কি অপশন বল বল!” শান চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে
” যেই ইনভেস্টিগেশন এর কথা বলেছিলাম কাল
সেটার ইনভেস্টিগেশন করবো। আমার কাছে কিছুটা জটিল লাগছে ব্যাপারটা কেনো, কিসের এসব হয়েছে আর লোকটা উধাও হয়ে গেলো কোথায় সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। তুই আমাকে পুরো কেসে হেল্প করবি। যদি কাজ ঠিক মতো হয় তাহলে তোকে ২ না ৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে দেবো।” ইমনের চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। খুশি খুশি হয়ে বলে
” জুনিয়ার অফিসার তাই আমাকে তো সব কেসেই involve থাকতে হয় এটায় নাহয় বেশি থাকবো তবে ছুটি নেবোই। তারপর আরামে কয়েকদিন ঘুমাবো। চোখে মুখে আমার মেয়েদের মতো ডার্ক সার্কেল পরে যাচ্ছে। পরে আমার বিয়ের সময় শশুড় বাবা আমাকে রিজেক্ট করে দেবে।” শান বিরক্ত স্বরে বলে
” ওই তুই তোর বাজে বকা বন্ধ করবি? এতই যখন বিয়ে নিয়ে চিন্তা তাহলে পুলিশের চাকড়ি করতে গিয়েছিলি কেনো ?” ইমন মুখ কুঁচকে বলে
” ধুর জানতাম নাকি এতো খাটনি হয় পুলিশ হলে ? যাই হোক আমি কাজে লেগে পরছি।”
ইমন তার কেবিনে চলে গেলো। শান আলতো হাসলো। যতো চাই বলুক না কেনো! কাজের সময় কোনো গাফলতি করেনা ছেলেটা। সব কাজ নিষ্ঠা আর কঠোরতার সাথে করবে। শান নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো।

ইমতিয়াজ রহমান আর রিয়ানা রহমানের মুখোমুখি হয়ে বসে রয়েছে। শাহানাজ বেগমরা সবাই। সবাই বলতে শুধু ইশান আর শান নেই এখানে বাকি সবাই উপস্থিত আর সোহা রুমেই রেস্ট করছে। শাহানাজ বেগমরা তাদের প্রস্তাব জানিয়েছে কিন্তু রিয়ানা বেগম অমত প্রকাশ করছে। তার ভাষ্যমতে একই বাড়িতে দুই মেয়ের বিয়ে কেমন দেখায় সেটা ! শাহানাজ বেগম বললো
” দেখুন এটা আমাদের ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ এর ব্যাপার এখানে। একই বাড়িতে দুই বোন বউ হয়ে যাচ্ছে এসব কথা মানায় না। সমাজের কথা চিন্তা করলে আমাদের চলবে না। সমাজের লোকদের কাজ সমালোচনা করা তারা সেটা করবেই। আমাদের সন্তানের জীবন সুন্দর হলে কুনজর দেবে আর ধ্বংস হয়ে গেলেও কেউ এসে খোঁজ খবর নেবে না।”
রিয়ানা রহমান ইমতিয়াজ রহমানের মুখের পানে তাকালো। ইমতিয়াজ রহমান এখনও তার মতামত জানায়নি। মুসফিক চৌধুরী বললো
” আমরা সোহাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসি। আমার বাড়ির প্রত্যেকেই মাথায় তুলে রাখে। তবে আপনার এই সম্পর্কে আপত্তি থাকলে এখানে জোরের কিছু থাকবে না। আমাদের সম্পর্কও ঠিক থাকবে। আপনারা ভেবে দেখবেন।” ইমতিয়াজ রহমান স্বাভাবিক ভাবেই হাসলো, তাদের নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো
” আপনারা তো কিছুই খাচ্ছেন না। আগে খান তারপর কথা হবে। কথা তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না !” মুসফিক চৌধুরী হেসে খাওয়া শুরু করে। ইমতিয়াজ রহমানের স্বভাবের সঙ্গে পরিচিত তিনি। সব পরিস্থিতিতেই স্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি। সবাই পাথর পাথর ভাব থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হলো। ইমতিয়াজ রহমান নড়েচড়ে হলা ঝেড়ে বললেন
” আমি প্রথম থেকে সোহার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ দেখেছি তাই সেসব কিছু নিয়ে সন্দেহ নেই আমার। আমার স্ত্রীর মতোও কিছু ভাবি না। আমি নিজেও শানকে পছন্দ করি। যোগ্য ছেলে শান কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত আমার মেয়ের উপর চাপাবো না। সোহার উত্তর ‘হ্যা’ হলেই আমি সম্পর্কের পরিণতি দেখতে চাইবো।” ইমতিয়াজ রহমানের কথা শুনে সবার মাথা থেকে চিন্তার পাহাড় সরে গেলো। সিমিও খুশি হলো বাবার সিদ্ধান্ত শুনে। সোহার না করার কোনো কারণ আছে বলে খুঁজে পেলো না। হয়তো হ্যা হবে সোহার উত্তর। নাইসা সোহার রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। সিমি নাইসাকে কোলে নিতেই নাইসা ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠে
” মিষ্টি..পাখি !” সিমি ভ্রু কুঁচকে নেয়। দ্রুত পায়ে সোহার রুমে গেলো। গিয়ে দেখে সোহা হাতে মুখে চকলেট লাগিয়ে রেখেছে। সিমি নাইসাকে নিয়ে এগিয়ে গেলো। ক্ষিপ্ত হয়ে বলে
” কি করেছিস এসব ? তোকে দেখে মেয়েটা কাঁদছে সেদিকে খেয়াল আছে ?”
সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো। নাইসা সিমির বুকে মুখ লুকিয়ে আবার কেঁদে দিলো। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” আরে আমি নাইসুর চকলেট নিয়েছিলাম তাই কাঁদছে।” সিমি রেগে বলে
” এই এখন তো চকলেট খাওয়ার বয়স ? তাএ আবার বাচ্চাটার চকলেট খেয়ে নিয়েছিস !”
সোহা ভেংচি কেটে হাত বাড়িয়ে নাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আসো নাইসু তোমাকে চকলেট দিচ্ছি।” নাইসা মাথা নেড়ে না বললো। অভিমান করেছে সে সোহার উপর। সোহা বালিশের নিচে হাত দিয়ে কয়েকটক চকলেট বের করতেই নাইসা দৌঁড়ে সোহার পাশে গিয়ে বসে পরে।সোহা আর সিমি হেসে দেয় নাইসার কাজ দেখে। সিমি জিজ্ঞেস করলো
” চকলেট কোথায় পেয়েছিস তুই ?”
সোহা ভাব নিয়ে বলে
” আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছো যে নাইসার টা খাবো ? নাইসারটা আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম আর আমার চকলেট খেয়েছি আমি। এগুলোও কয়েকটা আমার।” সিমি নাইসাকে দুটো চকলেট দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে বললো
” এতোগুলো চকলেট দিয়ে বদঅভ্যাস করে ফেলবি নাকি ? এগুলো আমি ভাবির কাছে দিচ্ছি।” সোহা হেসে বলে
” হ্যা তুমিই আবার খেয়ে ফেলো না।” সিমি কড়া চোখে তাকালো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখে শাহানাজ বেগম আর নিলা দাঁড়িয়ে আছে। সোহা সবাইকে দেখে বড়সড় হাসি দিলো। শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো
” কেমন আছিস আমার মা টা ?” সোহা হেসে বলে
” খুব ভালো গো। তোমাদের দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি।”

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৩

শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো
” কেমন আছিস আমার মা টা ?” সোহা হেসে বলে
” খুব ভালো গো। তোমাদের দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি।” শাহানাজ বেগম হেসে সোহার পাশে বসলো। নিলা সিমিকে ইশারা করে বললো বাইরে আসতে। সিমি বুঝতে পেরে নিলার সাথে বেরিয়ে গেলো। সোহা জিজ্ঞেস করলো
” আজকে হঠাৎ চলে এসেছো যে আন্টি ? আপুকে নিতে এসেছো নাকি ?” শাহানাজ বেগম মুচকি হেসে বললো
” নাহ আজকে এক বিশেষ কাজেই এসেছি। তোকে নিয়েই সব।” সোহা ভ্রু কুঁচকে বললো
” আমাকে নিয়ে সব ? আমাকে নিয়ে কি বিশেষ কাজ ?” শাহানাজ বেগম হেসে বলে
” জানবি জানবি পরে জানতে পারবি। তবে ভেবে চিন্তে নিজের উত্তর দিবি। তোর “হ্যা” উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো আমরা।” সোহা বুঝেই উঠতে পারছে না কিসের কথা বলছে। শাহানাজ বেগম কিছুক্ষণ কথা সোহাকে আদর টাদর দিয়ে চলে গেলো। সোহা ভাবনায় পরে গেলো কিসের বিশেষ কথা জানার কথা বলেছে তাকে ? কিছুক্ষণ ভেবেই খুঁজে পেলো না কিছু।
বিকেল হয়ে আসার আগেই শাহানাজ বেগমরা বাড়ির জন্য রওনা দেন। তারপর বিকেলে ইতির আগমন ঘটলো। ইতি, ইমতিয়াজ রহমান আর রিয়ানা রহমান এর সাথে কথা বলে উপরে চলে গেলো।
ইতি সোহার রুমে এসেই দৌঁড়ে সোহাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। সোহা ঠাস করে থাপ্পড় দিলো ইতির হাতে। শব্দের ধ্বনি পুরো রুমেই শোনা গেলো। ইতি রেগে বোম হয়ে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” অসভ্য মেয়ে, শয়তান, বজ্জাত মেয়ে। তোর সাহস তো কম না আমাকে থাপ্পড় মারিস তুই ! এই জন্যই মাঝে মাঝে বলি তোর উপর প্রেম ভালোবাসা না দেখানোই ভালো।” সোহা দাঁতে দাঁত চেপে পেটে হাত দিয়ে বসে রয়েছে। ইতির কথা শুনে বললো
” রাখ তোর ভালোবাসা ! দৌঁড়ে এসে লাফিয়ে পরেছিস আমার উপর। ব্যাথা যে পেয়েছি খেয়াল আছে তোর ?” ইতি জিভ কাটলো খেয়াল আসতেই। ইতি সোহাকে সরি বলে উঠে তার ড্রেস চেঞ্জ করে আসলো। রিলেক্স হয়ে বসে বললো
” আপুর শশুড় বাড়ির সবাই নাকি এসেছিলো।”
সোহা মোবাইলে মগ্ন হয়ে ছিলো ইতির কথা শুনে ফোন থেকে মুখ না তুলেই বললো
” দেখা হয়েছে তোর ?”
ইতি নিশ্বাস ফেলে বলে
” আরে নাহ। আন্টি বললো।” সোহা ইতির ফোন নিয়ে ইতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
” নে গেইম খেলছি শুরু কর জলদি।” ইতি কোণাচোখে তাকিয়ে ফোন হাতে নিলো। সব সময় গেইম খেলতে কি মজা লাগে ? না তো লাগে না তবে সোহার ইচ্ছে হলেই গেইম খেলতে বসে যাবে তার ইতিকেও জোড় করে বসাবে। ইতি না বসলে মাঝে মাঝে সোহা কান্না করে ভাসিয়ে দেবে নয়তো ঝগড়া লেগে যাবে। দুজনের বন্ধুত্ব টা খুবই গভীর বলা যায়। ছোট থেকেই এক সঙ্গে রয়েছে দুজন।
খেলায় জম জমাট একটা ভাব আসে। কে জিতবে কে হারবে এমন একটা ভাব। তখনই ইমতিয়াজ রহমানের আগমন ঘটলো। দরজায় ফ
নল করলেও দুজনের এতো ব্যস্ততা যে তারা খেয়ালই করলো না। তাই ইমতিয়াজ রহমান ঢুকে গেলো। দুজন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তাদের বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে। ইমতিয়াজ রহমান আলতো হেসে গলা খাকড়ি দিয়ে বললো
” তোমরা কি ব্যস্ত !” সোহা একপলক তাকিয়ে ব্যস্ত গলায় চেঁচিয়ে বললো
” হ্যা বাবা অনেক ব্যস্ত। এখনই আমি জিতে যাবো।” ইতি খেলার মাঝেই তেতে বলে উঠে
” যা সর আমি জিতবো এখন।” সোহা রেগে নাক ফোলাতে থাকে। গেইম খেলায় দুই হাত বন্দি নাহলে এখনই ইতিকে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো তার বিরুদ্ধে কথা বলায়। ইমতিয়াজ রহমান বললো
” আমি কিছু কথা বলতে এসেছি। তোমরা তোমাদের খেলাটা কিছুক্ষণের জন্য স্টপ রাখলে খুশি হবো।” বাবার কথায় সোহা না শুনলেও ইতি শুনে সাথে সাথে ফোনটা রেখে দিলো আর সোহার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। সোহা ক্ষেপে কিছু বলার আগেই ইমতিয়াজ রহমান বললো
” আমার কথা শুনে ফোন রেখেছে। তুমি এতো ব্যস্ত যে বাবাকে উপেক্ষা করছো ?” ইমতিয়াজ রহমানের কথায় সোহার শান্ত হয়ে গেলো। ভুল বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে বললে
” সরি বাবা। আমি তেমন কিছু করতে চাইনি। তুমি বসো আর বলো কি বলবে। আর আমাকেই তো ডাকতে পারতে আমি চলে যেতাম।” ইমতিয়াজ রহমান আলতো হেসে বললো
” অসুস্থ মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। ইতি ! তোমাকে আন্টি ডাকছে। তুমি তার কাছে যাও।” ইতি সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
বাবা কি বলবে সেটা শোনার জন্য সোহা উৎসাহ হয়ে বসে থাকে। ইমতিয়াজ রহমান সহজ ভাষায় বলা শুরু করলো
” দেখো মা প্রত্যেকটা মেয়েকে বিয়ে করে চলে যেতে হয়। তোমাকেও যেতে হবে আজ নয়তো কাল। সেই বিষয় কথা বলতে এসেছি।” সোহা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুটা অস্বস্তি বোধও করলো। প্রথম তার সাথে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এর আগে সোহার জন্য কোনো প্রপোজাল আসলেও সেটা ইমতিয়াজ রহমান তাদের মুখের উপর না করে দিয়েছে কিন্তু সোহাকে এর মধ্যে জড়াতো না। আজ হঠাৎ তাকে এসবে জড়ানো হচ্ছে কেনো ?
সোহার ভাবনার মাঝেই ইমতিয়াজ রহমান জিজ্ঞেস করলো
” তোমার কি কারো সাথে কোনো সম্পর্ক অথবা পছন্দ রয়েছে ? এসব বিষয় থাকলে আমি আর আমার কথা এগবো না। তুমি তোমার মায়ের সাথে শেয়ার করে জানাতো পারো নিশ্চিন্তে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত চাপাতে চাই না তোমার উপর।” সোহা মাথা নেড়ে বললো
” না বাবা আমার তেমন কোনো কথা নেই। তুমি কি বলবে বলো।” ইমতিয়াজ রহমান শান্ত ভাবে বললো
” শাহানাজ বেগম এবং তার পুরো পরিবার তাদের বাড়ির আদরের ছোট বউ হিসেবে চেয়েছে তোমাকে।” সোহা হতবাক হয়ে বসে থাকে। এখন তার মাথায় শাহানাজ বেগমের কথা ঘুরপাক খেতে থাকে। শাহানাজ বেগম তাহলে এটাই বলতে এসেছিলো ?
ইমতিয়াজ রহমান আবারও বললো
” দেখো আমি তোমার সিদ্ধান্তের জন্য সময় চেয়ে নিয়েছি। তোমাদ উত্তর যা হবে সেটাই তারা মেনে নেবে বলেছে। ভেবে দেখো তোমাকেও আমি সময় দিচ্ছি। যা ভাবার ভেবে নাও। তুমি যা বলবে সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। তবে একটা কথা না বললেই নয়। শান চৌধুরী পারফেক্ট এবং যোগ্য ছেলে তোমার জন্য। ভেবে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। তোমার উপর কোনো জোড় নেই আমাদের। তবে যা সিদ্ধান্ত নেবে ভালো করে ভেবে নেবে যাতে নিজের জীবন সুন্দর করে তুলতে পারো।” ইমতিয়াজ রহমানের কথা শেষ হতেই তিনি বেড়িয়ে গেলো। সোহা এখনও ঘোরের মাঝেই রয়েছে। শানের সাথে তার বিয়ে ? ভাবা যায় ?

ছাঁদের রেলিং এর উপর এক হাত রেখে তার উপর থুঁতনি রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোহা। দমকা হাওয়া সে বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে বারবার। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ভালোই লাগছে সোহার। সোহা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে। রাত তো কম হলো না। কিন্তু রাতে সৌন্দর্য কেনো জানি মনকে বেশি টানে। চাঁদ টা দেখা যাচ্ছে না। মেঘে ছেয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তবে বৃষ্টি আসবে না এখন। এখনও তেমন মেঘাচ্ছন্ন হয়নি আকাশ।
ইতি এসে সোহার গা ঘেঁষে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর সোহার দিকে তাকিয়ে বললো
” কিছু ভেবেছিস কি তুই ?” সোহা চোখ খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। স্বাভাবিক ভাবে বললো
” কি ভাববো ?” ইতি উল্টো ঘুরে রেলিং এ পিছন ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। পাশের গোলাপ গাছের আর বেলি ফুল গাছ গুলোর ফুল গুলোতে হাতিয়ে বললো
” কি আবার ! শান ভাইয়ার সাথে বিয়ে নিয়ে। আন্টি আমাকে জানিয়েছে।” সোহা গভীর ভাবনায় পরে গেলো। ধীরেধীরে হেটে গিয়ে দোলনায় বসে পরলো। পা দিয়ে দোলনা হালকা নাড়িয়ে চিন্তিত হয়ে বললো
” বিয়ে ? আচ্ছা তোর কি মনে ? আমার ‘হ্যা’ বলা উচিত নাকি ‘না’ ?” ইতি সোহার পাশে এসে বসে পরলো। বললো
” না কেনো বলবি ? তোদের দুজনের মধ্যে কিসের কমতি রয়েছে ? তোরা তো দুজন একদম পারফেক্ট দুটো মানুষ। আমার তো মনে হয় তোর হ্যা বলাই উচিত।” সোহা বসে বসে ভাবতে থাকে। কিছুক্ষণ পর খেয়াল হলো শাহানাজ বেগমের সাথে কথা বলা উচিত। তবে ফোন দেবে নাকি দেবে না এই নিয়ে দ্বিধাধন্ধ তে পরে গেলো। পরে ভাবলো সকালে নাহয় কথা বলবে।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here