হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৪

0
327

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৪
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
ফারহান আরশিকে টেনে আরেকটু কাছে নিয়ে এসে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। আরশি এবার নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে আস্তে আস্তে ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়ছে। আর এদিকে ফারহান এক দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। আরশিকে এমন অবস্থায় ফারহানের কাছে তাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তবে আরশি বেশিক্ষণ স্থির হয়ে রইলো না। আরশি চোখ বুঝেই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ফারহানকে বলে উঠলো,

-“ভাইয়া আমার সুরসুরি লাগছে, প্লিজ ছাড় আমায়।”

-“সুরসুরি লাগছে নাকি আমার প্রতি মনে ফিলিংস সৃষ্টি হচ্ছে?”

-“সত্যি আমার সুরসুরি লাগছে, প্লিজ ছাড় আমায়।”

-“যদি না ছাড়ি?”

-“আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”

-“ঠিক আছে, কর তাহলে। দেখি তোর চিৎকার শুনে কে আসে।”

ফারহানের কথায় আরশি চিৎকার করতে গিয়েও পারলো না। কেননা তার গলা থেকে চিৎকারের আওয়াজটাই বের হতে চাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে আরশি সেখানে স্থির হয়েই দাঁড়িয়ে রইলো। আরশিকে চিৎকার করতে না দেখে ফারহান বলে উঠলো, “কি হলো চিৎকার করছিস না যে।”

-“ভাইয়া প্লিজ আমায় ছাড়।”

-“ছাড়তে পারি একটা শর্তে।”

-“কি শর্ত?”

-“তোর ফোনের লকটা খুলে দে।”

-“লক খুলে দিব কেন?”

-“দিতে বলছি দে।”

আরশিও আর কথা না বারিয়ে বাধ্য মেয়ের মতো তার ফোনের লক খুলে ফারহানের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিল। ফারহান তার বাম হাত দিয়ে আরশির ফোনটা নিয়ে তার রেকর্ড করা ভয়েজটা ডিলেট করে দিয়ে আরশির ফোনটা আবার তার কাছে দিয়ে দিল। তবে ফারহান আরশিকে ছাড়লো না।

-“শর্ত তো পূরণ করলাম, এখন ছাড়ছ না কেন?”

-“আরেকটা শর্ত আছে।”

-“আরেকটা শর্ত মানে! কি সেটা?”

-“আমায় একটা চু*মু দে।”

-“কিহহ!” বলেই আরশি নিজের চোখ জোড়া খুলে বড় বড় চোখে ফারহানের দিকে তাকালো।

-“গালের মধ্যে দিলেই হবে।”

-“পাগল হয়েছ তুমি! তোমাকে আমি কোন দুঃখে চু*মু দিব? আমার ট্যাকা পরে নাই তোমাকে চু*মু দেওয়ার।”

-“তাহলে আমারও ট্যাকা পরে নাই তোকে ছাড়ার।”

-“ভাইয়া পাগলামি কর না প্লিজ। ছাড় আমায় নাহলে কেউ যেকোনো মূহুর্তে ছাদে চলে আসতে পারে।”

-“তো আসলে কি হবে?”

-“কি হবে মানে! তখন কি হবে তুমি বুঝতে পারছ না? কেউ যদি এখন ছাদে এসে আমাদের দুজনকে এইভাবে দেখে ফেলে তাহলে তো কেলেংকারী লেগে যাবে।”

-“এখন কেউ ছাদে আসবে না।”

-“না আসলেও আমাকে ছাড় আমি নিচে যাব।”

-“বললাম তো ছেড়ে দিব আগে শর্তটা পূরণ কর।”

-“পারবো না।”

-“তাহলে আমিও ছাড়বো না।”

আরশি আর কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো এখন সে কি করবে। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর আরশি বলে উঠলো, “আচ্ছা দিচ্ছি, তবে তোমায় চোখ বন্ধ করতে হবে।”

-“হ্যাঁ আমি চোখ বন্ধ করি আর তুমি আমাকে চিমটি বা লাত্থি মে*রে পালিয়ে যাও তাইনা?”

-“আমায় যেভাবে ধরে রেখেছ তাতে ভালো করে নড়তেই তো পারছি না তাহলে তোমায় চিমটি, লাত্থি মা*রবো কি করে?”

আরশির কথা শুনে ফারহান ভেবে দেখলো আরশি ঠিকই বলছে। সে তাকে যেভাবে ধরে রেখেছে তাতে আরশি তাকে চিমটি, লাত্থি মে*রেও পালাতে পারবে না। তাই ফারহান আর কথা না বাড়িয়ে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল আর বললো, “এই নে চোখ বন্ধ করলাম এবার চু*মু দে।”

ফারহান চোখ বন্ধ করার কিছু মূহুর্ত পরেই আরশি ফারহানের গলার মধ্যে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল। আচমকা গলার মধ্যে বিষের ন্যায় যন্ত্রণা অনুভব হলে ফারহান ‘আহ্’ বলে চিৎকার মে*রে আরশিকে ছেড়ে দিয়ে কয়েক কদম দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। এই সুযোগে আরশিও ফারহানের থেকে ছাড়া পেয়ে গেল আর এক দৌড়ে ছাদের দরজার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে পরলো।

-“আরশির বাচ্চা তোকে আমি ছাড়বো না। আহ্ কি ব্যাথা রে।” গলার কামড় দেওয়া জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো কথাটা।

-“আগে ধরে তো দেখাও তারপর ছাড়ার কথা বলিও।”

-“দাঁড়া তোকে আমি…” ফারহান তার পুরো কথাটা শেষ না করেই আরশির দিকে এগুতে যাচ্ছিল তখনই আরশি এক দৌড়ে সেখান থেকে নিচে চলে যায়।

ফারহান ছাদের মধ্যে হাটু গেড়ে বসে তার গলার মধ্যে হাত বুলিয়ে যেতে লাগলো। যতক্ষণ না তার গলার ব্যাথা কিছুটা কমলো ততক্ষণে পর্যন্ত সে ওভাবেই বসে রইলো। তারপর তার গলার ব্যাথা কিছুটা কমলে সে নিচে নেমে আসলো। নিচে এসে ফারহান তার রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার গলায় আরশির দেওয়া কামড়ের চিহ্ন লেগে আছে। ফারহান কিছুক্ষণ কামড়ের চিহ্নটার দিকে তাকিয়ে থেকে তার ওয়ারড্রব থেকে একটা মলম জাতীয় জিনিস বের করে সেটা কামড় দেওয়া জায়গাটার মধ্যে লাগিয়ে দিল। এরপর বিছানায় পরে উপর হয়ে চোখ বুজে শুয়ে রইলো।

.
-“তোর গলায় এটা কীসের দাগ ফারহান?”

রাতেরবেলা বাসার সবার সাথে খাবার খেতে বসেছে ফারহান। রোকসানা বেগম একে একে সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলেন। যখনই তিনি ফারহানের প্লেনে খাবার বেড়ে দিতে যাবেন তখনই ফারহানের গলার মধ্যে কামড়ের চিহ্নটা উনার চোখে পরে যায়। সাথে সাথে তিনি ফারহানের গলার চিহ্নটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে উপরোক্ত কথাটা বলে উঠেন। রোকসানা বেগমের কথায় ফারহান চমকে উঠে আরশির দিকে তাকায়। ফারহান আরশির দিকে তাকাতেই আরশি এক অজানা ভয়ে আৎকে উঠে। হয়তো আরশি এটাই ভাবছে না জানি ফারহান এখন তার আম্মুর কাছে গলার দাগটার ব্যাপারে কি বলে।

-“কি হলো ফারহান চুপ করে আছিস কেন? তোর গলায় এটা কীসের দাগ বলছিস না কেন?” ফারহানকে চুপ করে থাকতে দেখে রোকসানা বেগম কথাটা বলে উঠলেন।

-“আসলে আম্মু ইয়ে মানে আজ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় কিছু বাচ্চাদের দেখতে পাই। তো ওদের কাছে গিয়ে একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছিলাম তখন বাচ্চাটা আমার গলায় কামড় মে*রে বসে। এটা সেটারই দাগ।”

-“বাচ্চাটা কত বড় ছিল যে এতো বড় একটা দাগ বসিয়ে দিয়েছে?” রফিক আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন।

-“হবে হয়তো ২-৩ বছরের।”

-“২-৩ বছরের বাচ্চা এতো বড় কামড় কীভাবে দিল?” রোকসানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন।

-“সেটা আমি কীভাবে জানবো? আর বাচ্চা মানুষ ইচ্ছা করে কামড় দিয়েছে নাকি?”

-“আচ্ছা ঠিক আছে, বাচ্চা মানুষ কামড় দিয়ে ফেলেছে এখন এ নিয়ে আর মাতামাতি করে লাভ কি। বাসায় মলম থাকলে ওখানে একটু মলম লাগিয়ে নিও, এবার খাবার খাও।” রফিক আহমেদ বললেন কথাগুলো।

তারপর কেউ আর কোনো কথা না বলে যার যার খাবার খাওয়ায় মন দিল। তবে খাবার খেতে খেতে ফারহান দু-একবার আরশির দিকে আড় চোখে তাকিয়েছিল। তখন আরশিও ফারহানের দিকেই তাকিয়েছিল। দু’জনের চোখাচোখি হলে আরশি চোখ নামিয়ে নেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যে সবার খাবার খাওয়া শেষ হলে আরশিরা ফারহানের আম্মু-আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসায় চলে আসলো। বাকি শুধু ফারহানের খালা-খালু ওরা তাদের বাসায় রয়ে গেলেন। আরশিরা চলে যাওয়ার পর রফিক আহমেদ আর তানিশার আব্বু দুজনে ড্রয়িংরুমে বসে বসে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলেন। রাত এগারোটা বেজে উঠলে যার যার রুমে গিয়ে দু’জনে ঘুমিয়ে পরলেন। ফারহান অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পরেছে। আর ওদিকে তানিশা আর সানি দু’জনে বাসর ঘরে বসে বসে একে অন্যের সাথে সুখ-দুঃখের গল্প করছে।

.
পরেরদিন ভার্সিটি শেষে আরশি ভার্সিটি গেইট দিয়ে বের হতেই হঠাৎ সামনে চোখ পরতেই দেখলো একটা জায়গায় সাকিব দাঁড়িয়ে আছে। সাকিবকে দেখে আরশি খানিকটা চমকে উঠলো আর মনে মনে ভাবলো, “সাকিব এখানে কেন আসলো?”

-“কিরে আরশি ওইটা দুলাভাই না?” পাশ থেকে রুহি বললো কথাটা।

-“কাকে দুলাভাই বলছিস?” রুহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো আরশি।

-“আরে ওই যে সামনে একটা সাদা শার্ট পরে যেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। ওইদিন রেস্টুরেন্টে যার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি ওই ছেলেটার মতোই তো লাগছে একে।”

-“হ্যাঁ তো ওই ছেলেটা তোর দুলাভাই হলো কীভাবে? বিয়ে হয়েছে ওর সাথে আমার?”

-“হয়নি তবে একদিন তো হবে। চল এখন উনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি উনি হঠাৎ এখানে কেন এলেন।” এই বলে রুহি আরশিকে টানতে টানতে সাকিবের কাছে নিয়ে আসলো।

-“ভাইয়া কেমন আছেন?” জিজ্ঞেস করলো রুহি।

-“এইতো ভালো আপনি?”

-“জি আমিও ভালো। তা হঠাৎ এখানে কি মনে করে?”

-“উনার (আরশিকে দেখিয়ে) সাথে একটু দেখা করতে আসলাম।”

-“ওহ আচ্ছা, তাহলে আপনারা কথা বলেন আমি নাহয় যাই।”

-“আরে না না থাকেন সমস্যা নেই।”

-“না আপনারা আজকে নাহয় একটু একাকী গল্প করেন। আমি এখন যাই, আরশি থাক তাহলে কাল দেখা হবে।” বলেই রুহি সেখান থেকে চলে গেল।

-“তা এইখানে দাঁড়িয়েই কথা বলবো নাকি আমরা?” আরশি বললো।

-“চলেন একটা কফিশপে গিয়ে কফি খেতে খেতে গল্প করি।”

-“আচ্ছা চলেন।”

তারপর আরশি আর সাকিব দু’জনে পাশের একটা কফিশপে চলে আসলো। কফিশপে এসে সাকিব দু’জনের জন্য দুই কাপ কফি অর্ডার দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়েটার এসে তাদেরকে কফি দিয়ে গেল। ওয়েটার কফি দিয়ে যাওয়ার পর দু’জনেই বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো। নিরবতা ভেঙে সাকিব বলে উঠলো, “আপনাকে কিন্তু আমার পছন্দ হয়েছে। এবার আপনি যদি আমাকে পছন্দ করে থাকেন তাহলে খুব শীগ্রই আমাদের আকদ করিয়ে দেওয়া হবে।”
সাকিবের এহেন কথা শুনে আরশি কিছুটা থতমত খেয়ে উঠলো আর চমকিত দৃষ্টিতে সাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here