হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৫

0
462

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৫
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
-“কি হলো আপনি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি তো আর বলছি না যে কালকেই আমাদের আকদ করিয়ে দেওয়া হবে। যেদিন আপনি আমায় পছন্দ করবেন সেদিনই আমাদের আকদ হবে।”

সাকিবের কথাগুলো শুনে আরশি নিজেকে স্বাভাবিক করলো। এরপর কিছু একটা ভেবে বললো, “আর যদি আমি আপনাকে পছন্দ না করি?”

আরশির এহেন কথা শুনে সাকিব নিজের চেহারায় খানিকটা রাগের আভা ফুটিয়ে তুলে বসা থেকে উঠে আরশির কিছুটা কাছে এগিয়ে এলো আর বলতে লাগলো, “তাহলে আপনাকে আমি জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য হবো।”

মূহুর্তের মধ্যেই সাকিবের চেহারায় রাগের আভা ফুটে উঠা তারপর তার এমন কথা শুনে আরশি খানিকটা ঘাড়বে উঠলো আর ভয়ার্ত চোখে সাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরশির এমন চাহনি দেখে মূহুর্তের মধ্যেই সাকিব হো হো করে হেসে উঠলো আর নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো। সাকিবের হাসি দেখে আরশি পুরাই বেকুব বনে গেল। কেননা একটু আগে যেই ছেলের চেহারার রাগের আভা ফুটে উঠেছিল সেই ছেলেটা এই মূহুর্তে পাগলের মতো হাসছে এটার কারণ আরশির বুঝে আসছে না। আরশি এবার নিজের কৌতূহল জমিয়ে রাখতে না পেরে বলে উঠলো,

-“আপনি এইভাবে পাগলের মতো হাসছেন কেন?”

-“আপনার ভয়ার্ত চেহারা দেখে। ভয় পেলে যে আপনাকে দেখতে বাচ্চাদের মতো লাগে সেটা আজকে না দেখলে বুঝতামই না।”

-“মানে?”

-“মানে হলো আমি আপনার সাথে ফান করেছি। আপনি যদি আমায় পছন্দ না করেন তাহলে আমার বাবারও ক্ষমতা নেই আপনাকে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার।”

-“তাই বলে আপনি এভাবে…”

-“সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে আপনি এতটা ঘাবড়ে যাবেন।” নিজের হাসি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।

-“আর কোনোদিন যদি আমার সাথে এমন মজা করেন তাহলে কিন্তু আপনার খবর আছে।” খানিকটা রাগ দেখিয়ে।

-“আচ্ছা আচ্ছা আর কখনো এমন করবো না। তা বলেন আর কি খাবেন?”

-“না আর কিছু খাব না।”

-“আপনার কি এইখানে ভালো লাগছে না? বাসায় চলে যাবেন?”

-“না না ভালো লাগবে না কেন? বলেন আপনি আর কি বলবেন?”

-“শুধু কি আমিই বলবো আপনি কিছু বলবেন না?”

-“আপনি বলেন কিছু, তারপর নাহয় আমিও বলবো।”

-“আচ্ছা লাইফ পার্টনার হিসেবে আপনার কেমন ছেলে পছন্দ?”

-“যে আমাকে ভালোবেসে সম্মান করবে, যে আমার সব ধরণের আবদার পূরণ করবে, আমার কেয়ার করবে, আমাকে বোঝার চেষ্টা করবে, আমার মা-বাবাকে সম্মান করবে ইত্যাদি গুণ যার মধ্যে থাকবে তাকেই আমার লাইফ পার্টনার বানাবো। এবার বলেন আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ?”

-“একটা ছেলের মধ্যে আপনি যেসব গুণ থাকার কথা বলছেন আমার বেলায়ও একটা মেয়ের মধ্যে এইসব গুণগুলোই থাকতে হবে। আপনার কপি করছি ভাববেন না।”

-“ভ্যারি ইন্টারেস্টিং। আমাদের দু’জনের চিন্তা ভাবনার মিল আছে দেখছি!”

-“হয়তো এর পিছনে কোনো একটা কারণ লুকিয়ে আছে।”

-“কারণ! কি কারণ?” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো আরশি।

-“সেটা সময় হলেই জানা যাবে।”

এইভাবে আরশি আর সাকিবের মধ্যে অনেক্ষণ যাবত কথা হলো। একসময় গিয়ে তাদের কথা বলা শেষ হলে দু’জনে কফিশপ থেকে বেরিয়ে আসলো। এরপর সাকিব আরশিকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলো।

.
-“স্যার বাসা থেকে ফোন এসেছিল। আম্মুর শরীর নাকি খুবই খারাপ। দু-একবার বমিও করেছেন বমির সাথে নাকি মুখ থেকে র*ক্তও বের হয়েছে। আমায় এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে স্যার। প্লিজ আমাকে আজকের জন্য ছুটি দিয়ে দিন।”

আচমকা নীলা অনুমতি ছাড়া ফারহানের ক্যাবিনে ঢুকেই তাকে উক্ত কথাগুলো বলে উঠলো। ফারহান নীলার এমন আচরণে কিছুটা রেগে গেল আবার নীলা যখন তার আম্মুর অসুস্থতার জন্য তার কাছে ছুটি চাইলো তখন তার রাগটা আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। ফারহান এবার খিটখিটে মেজাজে বললো,

-“তোমাকে আজ কিছুতেই ছুটি দেওয়া হবে না, যাও গিয়ে নিজের কাজ কর।”

-“কেন ছুটি দিবেন না স্যার?”

-“দুইটা কারণে তোমায় ছুটি দিব না। প্রথমত আমার অনুমতি না নিয়েই তুমি বেয়াদবের মতো রুমে ঢুকে পরেছ। দ্বিতীয়ত তুমি একমাস যাবত প্রায়ই তোমার আম্মুর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অফিস থেকে ছুটি নাও আবার মাঝেমধ্যে অফিস ভাগাও দাও। একজন মানুষ একমাস যাবত অসুস্থ থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়না। আচ্ছা কি এমন হয়েছে আপনার আম্মুর যে দু’দিন পর পরই উনি অসুস্থ হয়ে পরেন?”

-“স্যার আমি সত্যি বলছি, আম্মুর অবস্থা খুবই খারাপ। তাই আমি তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে অনুমতি নিতেই ভুলে গিয়েছি। প্লিজ স্যার আমায় যেতে দেন।” মিনতির স্বরে শেষের কথাটা বললো নীলা।

-“বললাম না আজকে আপনাকে কিছুতেই ছুটি দেওয়া হবে না। আর যদি আপনার এতই ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে রিজাইন লেটারে সাইন করে আপনার যেখানে ইচ্ছা আপনি যেতে পারেন।”

-“স্যার…”

-“নাউ গেট আউট অফ মাই রুম।” খানিকটা ধমকের স্বরে।

ফারহানের ধমক শুনে নীলা আর কথা না বাড়িয়ে মন খারাপ করে তার ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে নিজের ডেক্সে চলে আসলো। নীলা তার ডেক্সে আসতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখে তার এক দূর সম্পর্কের চাচি ফোন দিয়েছেন। একটু আগে তিনিই নীলাকে কল করে তার মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। নীলা এবার কোনোকিছু না ভেবেই কলটা কে*টে দিল। কল কে*টে দেওয়ার পর মূহুর্তে আবার তার চাচির নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসলো। নীলা এবারও কলটা কে*টে দিল। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ কল কে*টে দেওয়ার পর একসময় নীলা কলটা রিছিভ করলো। কলটা রিছিভ করতেই নীলার চাচি নীলাকে এমন একটা কথা বললেন যেটা শোনার জন্য নীলা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কথাটা শুনেই নীলার চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করলো। তার কয়েক মূহুর্ত পরেই নীলার হাত থেকে তার ফোনটা মেঝেতে পরে গেল। এবার নীলার চোখ থেকে আস্তে আস্তে নোনা জল বেরিয়ে আসতে লাগলো। নীলা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আর এদিক সেদিক তাকিয়ে পাগলের মতো ছুটে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।

.
-“রফিক, নীলা মেয়েটার মাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে এসেছি, উনি মনে হয় আর বাঁচবেন না। আমাকে বার বার তোকে আসার জন্য বলতে বলছেন। তুই কি একটু ____ এই হাসপাতালে আসতে পারবি এখন?”

-“রাবেয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিস মানে! কি হয়েছে ওর?” বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন রফিক আহমেদ।

-“উনার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন একদম শেষ পর্যায়ে এসে উনার রোগটা ধরা পরেছে তাই উনাকে আর বাঁচানো সম্ভব না। উনি আমাকে বার বার তোকে এইখানে আসতে বলার জন্য বলছেন। উনাকে ____ এই হাসপাতালের ৫ নং ক্যাবিনে রাখা হয়েছে। তুই কি এখন একটু এখানে আসতে পারবি?”

-“কি বলছিস এইসব! মানে রাবে ও… আচ্ছা ওকে বল আমি আসতেছি।” বলেই মনে রফিক আহমেদ কল কে*টে দিলেন।

কল কে*টে দিয়ে রফিক আহমেদ কোনোরকমে রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলেন। তারপর উনার পারসোনাল গাড়িটা নিয়ে মোস্তাফা হোসেনের বলা হাসপাতালের দিকে রওনা দিলেন। প্রায় ১০ মিনিটের মতো সময় লাগলো উনার ওই হাসপাতালে পৌঁছাতে। হাসপাতালের সামনে এসে গাড়িটা কোনোরকমে এক জায়গায় পার্কিং করে উনি দ্রুত পা চালিয়ে ভিতরে ঢুকে ৫ নং ক্যাবিন খুঁজে সেখানে চলে আসলেন। রুমের ভিতরে ঢুকতেই উনি দেখলেন রাবেয়া বেগম হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। উনার মুখে একটা অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। আর উনারই পাশে উনার মেয়ে নীলা নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। রফিক আহমেদকে রুমের মধ্যে দেখে রাবেয়া বেগম উনাকে আঙ্গুল ইশারায় কাছে ডাকলেন। রফিক আহমেদও উনার ডাকে সাড়া দিয়ে উনার পাশে এসে দাঁড়ালেন। রফিক আহমেদ উনার পাশে এসে দাঁড়াতেই উনি উনার অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেললেন আর নিচু কণ্ঠে বলতে লাগলেন,

-“রফিক, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না রে। আমি ম*রে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে? কে দেখে রাখবে তাকে? ওর তো বাবাও নেই। এতবছর আমিই ওর সবকিছু ছিলাম, কিন্তু এখন যে আমিও ওকে রেখে ওর বাবার কাছে যেতে বসেছি।”

-“রাবেয়া এইসব কথা বলিস না। তোর কিছু হবে না দেখিস আল্লাহ আছেন তো।”

-“নারে, আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। তোকে এইখানে ডেকেছি একটা অনুরোধ করতে যদি তুই আমার অনুরোধটা রাখিস।”

-“কি অনুরোধ বল? আমি তোর অনুরোধটা রাখবো, কথা দিচ্ছি।”

-“আমি ম*রে গেলে তুই আমার মেয়েটা নিজের কাছে রেখে দিস নিজের মেয়ে মনে করে। আর যদি পারিস কোনো একটা ভালো পরিবারে আমার মেয়েটার বিয়ে দিস। মা-বাবা হারা মেয়েটাকে কোনো খারাপ ছেলের হাতে তুলে দিস না ভাই। তোর কাছে আমার ছোট্ট একটা অনুরোধ রইলো। খোদার ওয়াস্তে আমার অনুরোধটা রাখ, আমি ম*রেও তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। আর আমার বাসার আলমারিতে কিছু গহনা আছে হয়তো, ওগুলো নিয়ে নিস আর আমার মেয়েটার বিয়ের সময়ে খরচ করিস।” কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললেন রাবেয়া বেগম। উনার কথাগুলো শুনে আর কান্না দেখে নীলাও ছোট বাচ্চাদের মতো কেঁদে যাচ্ছে।

-“তোর মেয়ে তো আমারও মেয়ে। ওকে বিয়ে দিতে হলে তোর গহনা বেচা লাগবে কেন? যা আমি কথা দিলাম আমি নীলা মা’কে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে নিজের মেয়ের মতো করে রাখবো। আর ওর জন্য একটা ভালো পাত্র খুঁজে ওকে বিয়েও দিব, এই তোর হাত ছুঁয়ে কথা দিলাম।” রফিক আহমেদও কিছুটা কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললেন।

রফিক আহমেদের কথাগুলো শুনে রাবেয়া বেগম আর কিছু না বলে একটা শান্তিময় হাসি দিয়ে চোখ বুজে ফেললেন। এরপর তিনি আর চোখ খুললেন না। এদিকে উনার এমন অবস্থা দেখে নীলা বার বার উনাকে ‘আম্মু’ ‘আম্মু’ বলে ডাকতে লাগলো কিন্তু উনি কোনো সাড়া দিলেন না। এবার নীলা হাউমাউ করে কান্না করে দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো ‘আম্মু উঠ’ ‘আম্মু উঠ’ কিন্তু রাবেয়া বেগম এবারও সাড়া দিলেন না। মা’য়ের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে নীলা কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে বসে রইলো, এরপর হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পরে গেল। রফিক আহমেদ বুজে গেলেন রাবেয়া তাদের থেকে বিদায় নিয়ে উপর ওয়ালার ডাকে ডাকে সাড়া দিয়েছে। তিনি এবার নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে নীলাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। মোস্তফা হোসেন তখন তাদের পাশেই ছিলেন, আচমকা নীলাকে জ্ঞান হারাতে দেখে উনি এবার চিৎকার করে ডাক্তারকে ডাকতে লাগলেন। মোস্তফা হোসেনের চিৎকারে মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ডাক্তারের আগমন ঘটলো। ডাক্তার এসেই নীলাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। তার কয়েক মূহুর্ত পরেই হাসপাতালের ভিতর একটা শোকের হৈচৈ পরে গেল।
.
.
Loading…….

বিঃদ্রঃ এমন কষ্টদায়ক টুইস্ট একদমই রাখতে চাইনি কিন্তু কেন, কীভাবে এটা রাখলাম নিজেও জানি নাহ 😓। সবাই গল্প পড়া শেষে কমেন্টে গল্প সম্পর্কে নিজের অনুভূতিটা একটু জানিয়ে যাবেন।

~সবাই নিয়মিত নামায আদায় করবেন আর নামাযের লাভ জানিয়ে অন্যদেরকে দাওয়াত দিবেন~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here