#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৭
লেখনী মাহীরা ফারহীন
‘নদীর পানি একই প্রবাহে বাহিত হতে হতে কখনো হয়তো কোথাও গিয়ে বাক নেয়। এবং এর গতিপথ পাল্টে যায়। ঠিক তেমন সকলের জীবনই একটি নির্দিষ্ট প্রবাহে চলতে থাকে। কখনো না কখনো হয়তো সেটা বাক নিয়ে নতুন কোনো পর্যায় এসে দাঁড়ায়। ভালো সময় থেকে খারাপ সময়ে এসে দাঁড়ায়। অথবা খারাপ সময় থেকে ভালো সময় এসে দাঁড়ায়। নিঃসন্দেহে বলতে পারি আমার রসকষহীন জীবনের প্রবাহ হঠাৎ করেই গতিপথ পাল্টেছে মাহীন নামক বাঁকের কারণে। ব্যপারটা প্রথমে আমার অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর বা অবাস্তব মনে হলেও আজকাল সেটাকে ভালোই লাগতে শুরু করেছে। দিনের পর দিন সকলের থেকে দূরে থেকে আমার মাঝে এবং সকলের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে দিয়ে যেখানে আটকা পরেছিলাম সেটাই ছিলো আমার কমফোর্ট জোন। যদিও মাঝে মাঝে সেখানে দম বন্ধ লাগতো। না সেই দেয়াল ভাঙ্গার ক্ষমতা আমার ছিলো, না ইচ্ছা। মনের গভীরে সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো ভয়। কাউকেই আমার জীবনে প্রবেশ করতে দিতে ভয় পেতাম। এই অদৃশ্য দেয়ালটা মাহীন এসে ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার অনুমতি ছাড়াই। কী আশ্চর্য না? প্রথমে আমি মোটেও না ব্যপারটা পছন্দ করেছি, না ওকে। তবে এখন বুঝতে পারছি মাহীন কতটা ঠিক কাজ করেছে। একটা অচেনা অপরিচিত মেয়ে যে না আমাকে চেনে না আমার সম্পর্কে কিছু জানে। তা সত্ত্বেও আমার মন আমার জীবনের প্রবাহ ঠিক ধরতে পেরে আমার কমফোর্ট জোনের দেয়ালটাই ভেঙ্গে দিলো। কিভাবে? কিভাবে আমাকে এখানে সকলের মাঝে টেনে আনলো? এখন আমি চাইলেও বের হয়ে যেতে পারছি না এখান থেকে। এবং আমি চাইও না। আমি চাই মাহীন যা করছে করে যাক। আমি শুধু ওর সাথে হেঁটে যাবো। কি অদ্ভুত না ও? ও সকলকে বাধ্য করে ওকে পছন্দ করতে। যেই ওকে দেখে তার সাথেই ওর ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়? আমি যদি ওকে না দেখে না চিনে ওর সম্পর্কে জানতে পারতাম তাহলে আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করতাম ওর থেকে দূরে থাকতে। ওর জালে না ফাঁসতে। কিন্তু কি সুন্দর ভাবে আমি ওর সাথে জড়িয়ে গেলাম। যাই ভাবি না কেন সবকিছুতেই কিভাবে যেন মাহীন চলে আসে। ও যেন আমার মানস্পটে আঁটকে গেছে। ওকে নিয়ে ঘটা করে ভাবতে বসলেও ভাবনা শেষ হবে না। আগে যতটা সম্ভব মনের দিক থেকে ওকে এড়িয়ে চলতাম। এখন যত ওকে দেখছি তত ওর কথাই মাথায় আসছে। কেনো? ওকে নিয়ে ভাবতেও এত ভালো লাগে? ওর সাথে কথা বলতেও ভালো লাগে? যতবার চোখে পরে ওকে দেখি যে, হয় ওর কোনো বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে বা বসে আছে বা হাঁটছে। অথচ আমি আজকাল শুধু ওকে দেখে এমনিই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই না। বসে খেয়াল করি কিভাবে ও কথা বলছে। কিভাবে ও হাসছে। ওর চোখ ওর চুল সবকিছু। এটা কী অদ্ভুত?’
‘রায়েদ’। কারোর ডাকে ভাবনার জাল ছিড়ে গেল। দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাতেই দেখল মাহীন ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ওই এখানে এসে হাজির হয়েছে দেখে হতবাক হলো রায়েদ। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরল। মাহীন বলল,
‘বাপরে বাপ কী গভীর চিন্তাভাবনাই না করো।’
রায়েদ নিজেকে সংযত করে বলল, ‘তুমি এখানে হঠাৎ?’
‘তুমি আমার সাথে আসো।’
‘কোথায় আসবো?’
‘আমাদের ক্যাম্পে। আমরা ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলতে বসছি।’
রায়েদ চোখ বড় বড় করে বলল, ‘সিরিয়াসলি আমি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবো এটা তুমি ভাবলা কি করে?’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ভাবি তো অনেক কিছুই। কিন্তু সবকিছু তুমি আসলে করতে চাইবে না তাই সেসব বাদ দাও। কিন্তু এখন আসো আমার সাথে।’
রায়েদ বলল, ‘কি জেদ এগুলো? তোমরা ফ্রেন্ডরা মিলে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবা। তার মাঝে আমি থাকলে কি ভালো লাগবে।’
মাহীন এবার ঘাসের ওপর ওর পাশে বসে পরল।বলল,
‘রায়েদ দেখো এখন পর্যন্ত তো অনেক কিছুতেই তুমি ‘আমার’ ফ্রেন্ডদের সাথেই থেকেছ। কিন্তু কিছুদিন ওদের সাথে মেলামেশা করলে ওরা ‘তোমারও’ ফ্রেন্ড হয়ে যেত যদি তুমি চাও। ওরা সকলে তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করে শুধু দেখানোর জন্য নয় আসলেই। অল ইউ নিড ইজ টু টক উইত দেম।’ বলে আগ্রহী দৃষ্টিতে রায়েদের দিকে তাকিয়ে রইল।
মাহীনকে এভাবে জুলজুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়েদের হাসি পেল। আবার কী অদ্ভুত মায়াবি লাগলো ওকে। ওর দৃষ্টিতে বুঝি এমন কিছু আছে যেটা কখনোই রায়েদকে শক্ত হতে দেয়না। দেহ মন অসাড় করে দেয়। অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হালকা হাসল। বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে। চলো।’
মাহীন আনন্দে এক লাফেই উঠে দাঁড়াল। রায়েদও উঠে দাঁড়াল। সন্ধ্যা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ পূর্বে। অন্ধকার আকাশ। চারিদিকে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই যারা জঙ্গলে গিয়েছিল বেশির ভাগই ফিরে এসেছে। যারা অন্ধকার হওয়ার পর ফিরেছে তাদের টিচারদের কাছ থেকে বকাও খেতে হয়েছে। সকলেই বসে আছে বা কেউ কেউ হাঁটছে এবং গল্প করছে। মাহীন ও রায়েদ ওদের ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে গেল। সকলে এক জায়গায় জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা এগিয়ে যেতেই জেনেট হাসি মুখে বলল,
‘গুড ইভনিং রায়েদ।’
‘ইভনিং জেনেট।’ প্রত্যুত্তরে বলল রায়েদ।
নায়েল এসে রায়েদের পাশে দাঁড়াল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি আগে কখনো ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলসো?’
রায়েদ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার পূর্বে মাহীন বলল, ‘অনেক আগে খেলতাম কিন্তু অনেক দিন খেলা হয়নি। এটাই বলতে যাচ্ছিলা না?’
রায়েদ মুচকি হেসে বলল, ‘হ্যা এটাই বলতে যাচ্ছিলাম।’
সাইলোহ এসে মাহীনের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলল ওকে। তারপর রায়েদের দিকে তাকিয়ে চিকন কন্ঠে বলল, ‘লাস্ট টাইম আমাদের ফার্স্ট সাক্ষাৎটা খুব একটা ভালো যায়নি। ইভেন ওয়ার্স্ট ছিলো। বাট এখন আশা করছি এমন কিছু আর হবে না। হ্যালো।’
রায়েদ বলল, ‘এবং কোয়েনসিকোয়েন্সটাও আলাদা ছিলো। এনি ওয়েজ হ্যালো।’
সাইলোহ হালকা হাসলো এবং অন্যদিকে চলে গেল। মাহীন বলল,’ওয়েল ওর কথাবার্তা একদম গায়ে লাগিও না। ও সবকিছুই বাঁকা ভাবে বলে।’
রায়েদ বলল, ‘তুমি একটা কাককে মধু খাওয়াও আর মাংসই খাওয়াও সেই কাক একই কর্কশ স্বরে কাকা করেই চিৎকার করবে।’
মাহীন ও নায়েল দুইজনই হেসে উঠলো। নায়েল বলল,
‘হ্যাটস অফ টু ইওর সার্কাজম!।’
মাহীন বলল, ‘আসলেই।’ তখনই এসিসিয়া এসে মাহীনকে কিছু একটা বললো। এবং মাহীন ওর সাথে হাঁটতে হাঁটতে অন্যদিকে এগিয়ে গেল। এখানে নায়েল বলল,
‘তুমি বিভিন্ন জায়গায় পার্ট টাইম জব করো না?’
‘হ্যা তা তো করি।’
‘তো সবগুলো কিভাবে ম্যানেজ করো আসলা?’
রায়েদ বলল, ‘আমি সাধারণত ছুটি খুব একটা নেই না। অনেক সময় অভার টাইমও কাজ করি। তাই যখন চার দিনের ছুটি চাইলাম, কেউ বাঁধা দিলো না। যদিও একজন একটু দ্বিধা করছিল পরে অবশ্য মেনে নিয়েছে।’
নায়েল বলল, ‘ওফ ভাগ্যিস।’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল, ‘কাল বোটিং করতে যাচ্ছো তো? তুমি তো এসবই আগে করতা। এখন করো কিনা জানি না অবশ্য।’
রায়েদ বলল, ‘কালকে যাচ্ছি অবশ্য। আগে তো ক্যাম্পিং ফ্যাস্টিভ্যাল গুলোয় যেতাম গাইড হিসেবে। এই সবই করতাম। তবে গত বছর যাইনি এবং এই বছর তো এখনো ক্যাম্পিং সিজন আসেই নি।’
তারপর একটু থেমে বলল, ‘তবে তোমার এসব জানার কথা কী?’
নায়েল মুচকি হেসে বলল, ‘ভুলে যাচ্ছো বোধহয় আমিও কিন্তু গাইড। মনে নেই একবার আমরা একই ক্যাম্প ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম।’
রায়েদ চোখ ছোট করে বলল, ‘টিফেনি ক্যাম্পিংয়ে? যেখানে একটা বোট ফুটো হয়ে গিয়েছিল এবং একজন ছোট ছেলে ডুবে গিয়েছিল?’
‘হ্যা হ্যা সেটাই। তোমার মনে আছে দেখছি।’ উচ্ছাসের সঙ্গে বলল নায়েল।
‘মনে থাকবে না আবার যা সব স্বরণীয় ঘটনা ঘটেছিল সেখানে।’
তখনই লিওকে উচ্চস্বরে বলতে শোনা গেল, ‘ওকে সো আমরা এখন খেলা শুরু করবো। দয়া করে সকলে গোল হয়ে বসে পরো।’
সকলেই একে একে বসে পরছে এবং একটা বৃত্ত তৈরি করছে। মাহীনও ফিরে এসেছে। এতক্ষণ রাবিতকে আশেপাশে দেখা যায়নি। সেও এখন এসে হাজির হয়েছে। সকলে বসার পর দেখা গেল রায়েদের এক পাশে নায়েল অপর পাশে লিম জু। মাহীন ওর থেকে একদম অপর দিকে। মাঝে একটা বোতল রাখা হয়েছে। বেশ বাতাস হচ্ছে। প্রথমে প্লাস্টিকের বোতল দেওয়ার কারণে সেটা শুধু উড়ে যাচ্ছিল। এবার কোথা থেকে যেন কোকের কাঁচের বোতল যোগার করা হয়েছে। রায়েদ খেয়াল করল মাহীনের একপাশে সাইলোহ বসে আছে এবং আরেক পাশে এসিসিয়া বসে আছে। ওকে দেখেই নায়েলকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,
‘এই এসিসিয়া কি সবসময়েই তোমাদের সাথে সাথে থাকে?’
নায়েল বলল, ‘হ্যা থাকে তো যদিও ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য। সাইলোর পাক্কা ধারণা এসিসিয়া কোনো মোটিভ নিয়ে এখানে এসে ভিড়েছে।’
রায়েদ বলল, ‘তেমনটাই তো হওয়ার কথা।’
‘হ্যা এসিসিয়া যদিও একদম স্বাভাবিক আচরণ করে আমাদের সাথে। সবকিছুতেই থাকতে চেষ্টা করে। মানে আমরা যা নিয়ে কথা বলি, যাই করি সবকিছুর মধ্যেই।’
‘আর বিশেষ করে মাহীনের পেছনে লেগে থাকে না ও?’
‘হ্যা প্রায় সময় দেখা যায় ওর সাথেই কথা বলছে। তবে সেভাবে লেগে থাকতে দেখিনি।’
রায়েদ সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। নায়েল আবার বলল,
‘শেষ পর্যন্ত বেচারি মাহীন দুই শত্রুর চিপায় পরেই গেল।’
রায়েদ চাপা হাসল। তখনই সর্বপ্রথম লিম জু বোতল ঘোরাল। এবং তা ঘুরতে ঘুরতে জেনেটের দিকে মুখ করে থেমে গেল।
লিম বলল, ‘ওকে সো ট্রুথ অর ডেয়ার?’
জেনেট একটু ভেবে বলল, ‘উম ডেয়ার।’
লিমও কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ‘তোমার এবং লিওর কাহিনী শোনাও। এটা কখনোই তোমাদের মুখ থেকে বের করা যায় না।’
ক্যারোট উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, ‘ওহ ইয়াহ গুড আইডিয়া। আমিও শুনতে চাই।’
বাকিরাও সায় দিলো। জেনেট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো, ‘আচ্ছা তো কাহিনী শুরু হয়েছে সেভেন্থ গ্রেড থেকে।’
মাহীন বলল, ‘তোমার রিলেশনশিপে বয়স না সাড়ে তিন বছর?’
জেনেট বলল, ‘হ্যা সাড়ে তিন বছর। কিন্তু কাহিনী শুরু হয়েছে আরো আগে থেকে। তো যা বলছিলাম ফার্স্টের দিকে আমি ওদের ফ্রেন্ড সার্কেল এর মধ্যে ছিলাম না। সাইলোর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ও আমাকে ক্রিয়েটিভ ইভেন্টে জয়েন করতে ঠেলাঠেলি করে। সেটা জয়েন করার পর আমার ইভেন্ট পার্টনার থাকে লিও। ওয়েল সো প্রথমে ওর সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়। এবং ইভেন্ট শেষ যাওয়ার পরও আমরা চারজন একসাথেই থেকে যাই। আমি এবং লিও প্রায় সময় হ্যাঙ্গআউট করতাম। তো আমারই ওকে প্রথম থেকে বেশ ভালো লাগত। একদিন আমি নায়েলকে আবার এটা বলেও দিয়েছিলাম। যদিও আমি ওকে দিয়ে প্রমিজ করিয়েছিলাম ও কাউকে বলবে না। কিন্তু ও ঠিকই মীরজাফরতা করে লিওকে বলে দিয়েছে। সেটার জন্য এখনো ওর ওপর রেগে আছি।’
নায়েল মাঝখান দিয়ে বলল, ‘আরেহ! আমার কি দোষ? লিও আমার মুখ থেকে জোড়াজুড়ি করে কথা বেড় করে নিয়েছিল তো।’
সকলে হেসে উঠল। লিও বলল, ‘আচ্ছা বাকি কাহিনী আমি বলছি।’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তো ওয়েল ইভেন্টের সময় হয়তো ওকে ওভাবে দেখিনি। কিন্তু পরে আমারও ওকে ভালোই লাগতো। তো একদিন কি হয়েছে সাইলোহ এবং নায়েল আমাকে ব্লাইন্ড ডেটে পাঠিয়েছে। ওদিক দিয়ে জেনেটকে ব্লাইন্ড ডেটে পাঠিয়েছে। আমাদের দুজনের কেউই জানতাম না সেটা আমরাই। পরে গিয়ে একে অপরকে দেখে রিয়েলি সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। এন্ড তার কিছুদিন পরই আমরা দুজনই কনফেস করি।’
সকলে করতালি দিয়ে উঠল। রাবিত বলল, ‘ওয়াহু ইট ওয়াজ এ হোলসাম স্টোরি।’
এবার রাবিত বোতল ঘোরাল। সেটার মুখ গিয়ে থামল এসিসিয়ার দিকে। রাবিত কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই এসিসিয়া বলল, ‘ট্রুথ!’
রাবিত কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ‘আচ্ছা তো এটা বলো যে এই মুহূর্তে তোমার সবচেয়ে বড় ডিজায়ার কি?’
এসিসিয়া কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। তারপর বলল,
‘m – f = m + f. এটাই।’
সকলেই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। র্যবিট কপাল কুঁচকে বলল, ‘এটা আবার কি বললা? আমি তো বুঝলামই না।’
সিয়া বলল, ‘ওয়েল দেখো এই ইকুয়েশনটা সলভ করা এখন আমার সবচেয়ে বড় ডিজায়ার। এবং এটা বুঝিয়ে বলা সম্ভব না।’
কেউ আর কিছু বললো না। এবার লিও বোতল ঘোরাল। সেটা লিম জুর দিকে এসে থামল। লিম জু বলল, ‘ট্রুথ।’
লিও বলল, ‘এখানে কী কেউ এমন আছে যাকে তুমি প্রথমে দেখতেই পারতে না। বাট এখন তার সাথে ভালো সম্পর্ক।’
লিম সাথে সাথেই বলল, ‘হ্যা আছে তো। এই যেমন র্যবিট। ও প্রথমে আমাকে খুব জ্বালাত তাই আমি ওকে দেখতে পারতাম না। কিন্তু ও এখন আমার খুব ভালো বন্ধু।’
এর পর সাইলোহ বোতল ঘোরাল। এবং সেটার মুখ গিয়ে ঠেকল র্যবিটের দিকে। র্যবিট বলল,
‘ডেয়ার ডেয়ার।’
সাইলোহ কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর ফিচেল হাসি দিয়ে বলল, ‘ওকে সো তোমার ডেয়ার হচ্ছে আমাদের থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি যেই গাছটা আছে সেটায় উঠে রাত এগারোটা পর্যন্ত ডালের ওপর বসে থাকা।’
সকলে হেসে উঠল। তবে র্যবিটের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। চক্ষু চড়কগাছ। ও বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘এটা কিন্তু ঠিক না। আমাকে খেলা থেকে বাদই দিয়ে দিচ্ছো?’
ক্যারোট বলল, ‘দেখো তোমাকে কেউ খেলা থেকে বাদ দিচ্ছেনা। তুমি যেখানে বসে আছো সেখানে বোতলের মুখ গিয়ে থামলে তোমাকে স্বরণ করবো আমরা।’
রাবিত অগত্যা উঠে দাঁড়িয়ে অসহায় দৃষ্টিতে রায়েদের দিকে চাইল। ওকে ওভাবে জুলজুল করে তাকাতে দেখে রায়েদ হালকা হাসল। বলল, ‘তুই তো গাছে উঠতে পারিস।’
রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের থেকে চার পাঁচ গজ দূরত্বে থাকা গাছটায় গিয়ে উঠতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে গাছে উঠে সবচাইতে নিচের ডালটায় বসে পরল। এবার মাহীন বোতল ঘোরাল। সেটার মুখ গিয়ে থামল রাবিতের ফাঁকা স্থানে। সকলেই হেসে উঠল। লিও উচ্চস্বরে বলল,
‘র্যবিট গুড নিউজ। মাহীনের বোতল তোমার দিকে ঘুরেছে। কোনটা নিবা?’
রাবিত গাছ থেকে চিৎকার দিয়ে বলল, ‘একবার ডেয়ার নিয়ে ঘাট হয়েছে। জীবনে আর ডেয়ার নিবো না। ট্রুথ।’
মাহীন কি বলবে ভাবছেই তখন এসিসিয়া পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল, ‘আমাকে খুব উইয়ার্ড একটা প্রশ্ন করেছে। তুমি প্লিজ আমার হয়ে একটা প্রশ্ন করো না।’
‘কি প্রশ্ন বলো।’ শুধালো মাহীন।
‘ওকে জিজ্ঞেস করো ওর ক্রাস কে।’
মাহীন ভ্রু কুঁচকে তাকাল ওর দিকে। তারপর ভাবলো কিরে বাবা ওর মাথায় ক্রাস ছাড়া আর কিছু ঘোরে না নাকি।’ ভেবে পেছনে ঘুরে চিৎকার দিয়ে বলল,
‘র্যবিট তোমার ক্রাস কে?’
সকলে হেসে উঠল। রাবিত কি রিয়াকশন দিলো গাছে বসে সেটা ওরা এখানে বসে দেখতে পেলো না। রাবিত চিৎকার দিয়ে বলল,
‘মাহীন তুমি এখানে আসো। শুধু তোমাকে বলবো উত্তরটা। এখান থেকে এনাউন্স করে বলবো না।’
মাহীন হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল এবং এগিয়ে গেল গাছের দিকে। রায়েদ ভাবল, ‘এর আবার ক্রাস আছেও আমি তো জানতাম না।’
মাহীন গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াল। রাবিত বলল,
‘আগে প্রমিজ করো ওখানে গিয়ে কাউকে বলবা না।’
‘আচ্ছা প্রমিজ।’ মুখ টিপে হাসল মাহীন।
রাবিত ইতস্তত করে লজ্জা ভরা কন্ঠে বলল, ‘ক্যারোট।’
মাহীনের চোয়াল ঝুলে পরল। চোখ বড় বড় করে চাইল। তারপর হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘কবে থেকে?’
‘আরেহ যেইদিন ওকে দেখেছি সেইদিন থেকেই।’
মাহীন এবার হাটতে হাটতে ফিরে আসলো কিন্তু ওর মুখ থেকে হাসি আর সরছে না। মাহীন ফিরে এসে বসার পর সকলে ওকে জোড়াজোড়ি করলেও ওর মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে না পেরে হতাশ হলো। এরপর এসিসিয়ার পালা বোতল ঘোরানোর। বোতলের মুখ গিয়ে থামল রায়েদের দিকে। রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ওর অপজিটে এসিসিয়া থাকাতে কিছুটা বিরক্তও হলো। তবে শান্ত কন্ঠে বলল, ‘ট্রুথ।’
এসিসিয়া বলল, ‘তোমার জীবনের সবচাইতে খারাপ দিন কোনটা?’
রায়েদ ততক্ষণাৎ উত্তর দিলো, ‘ছাব্বিশে আগস্ট।’
ওরা সকলে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে চাইল। কিন্তু কেউই বুঝতে পারল না এই তারিখটা কিসের। এরপর নায়েল
বোতল ঘোরাল এবং তা গিয়ে থামল লিমের দিকে। লিম ততক্ষণাৎ বলল, ‘ট্রুথ।’
‘লিম তুমি যদি পাঁচ লাক্ষ ডলার পাও। তাহলে তুমি সেই ডলার দিয়ে কি করবা।’
‘এমন কিছু করবো যাতে আরো টাকা আসে।’
সকলে করতালি দিলো। জেনেট বলল, ‘ওয়াইস এনসার।’
এবার রায়েদ বোতল ঘোরাল। এবং গিয়ে থামল মাহীনের দিকে।
জেনেট বলল, ‘ওহ ওয়াও!’
রায়েদ ভাবল, বাহ আমার পালায়ই মাহীন এসে পরে। মানে এতটা কোইনসিডেন্স কিভাবে ঘটতে পারে?’
মাহীন কিছুক্ষণ ভাবার পর বলল, ‘ডেয়ার।’
রায়েদ বলল, ‘তোমাকে আমার বলা যেকোনো একটা কাজ করতে হবে যেকোনো সময়। এখন বলছি না, যেকোনো সময়।’
মাহীন বলল, ‘মানে যেকোনো সময় যাই করতে বলবা তাই?’
‘হ্যা।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ঠিক আছে যেহেতু ডেয়ার নিয়েছি তাহলে তো করতেই হবে।’
এরপর জেনেট বোতল ঘোরাল এবং আবারও মাহীনের দিকে এসে থামল সেটা। মাহীন কাঁদো কাঁদো মুখভঙ্গি করে বলল, ‘ওফ আবার না!’
বাকিরা হেসে উঠল। নায়েল বলল, ‘বোতলটাও তোমার পিছুই ছাড়ছে না।’
জেনেট জিজ্ঞেস করল, ‘এমন একটা জিনিসের নাম বল যেটা কেউ তোমাকে উপহার দিলে তুমি সবচাইতে বেশি আনন্দিত হবা?’
মাহীন ততক্ষণাৎ হেসে বলল,’একটা মিষ্টিইই! হাসি।’
তারপরও পালা ঘুরতে ঘুরতে আরো কিছুক্ষণ খেলা চলতে থাকল। অদূরেই রাবিত গাছের ডালে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।
ইনশাআল্লাহ চলবে।