দমকা_হাওয়া,১০,১১

0
309

#দমকা_হাওয়া,১০,১১
#ঝিনুক_চৌধুরী
#পর্ব-১০

সকালে ঘুম ভাঙলে চোখ মেলতে ইচ্ছে করে না পিউর। বলা যায় না আজ আবার সরি বলে কিনা স্বচ্ছ। দেখা গেল পা ধরে ঝুলে আছে।
এক চোখ খুলে দেখে স্বচ্ছ মুখোমুখি বসে আছে ওরই দিকে চেয়ে। পিউ ঝটপট চোখ বন্ধ করে ফেলে।
–পিউ ওঠো। ঘুমোনোর অভিনয় করার দরকার নেই।
খুব স্বাভাবিক ভাবে আড়মোড়া ভেঙে হেলেদুলে ওঠে পিউ। যেন গতরাতে কি হয়েছে কিছুই মনে নেই তার।
স্বচ্ছ ভরাট কণ্ঠে বলে, সুপ্রভাত!
পিউ থতমত খেয়ে বলে, কী?
-বললাম, সুপ্রভাত! রাতে ভালো ঘুম হয়েছে?
চোরের মতো মুখ করে ওয়াশরুমে পালায় পিউ। স্বচ্ছর ওভার কনফিডেন্সের কারণ খুঁজে পায় না।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চমকে ওঠে। স্বচ্ছ এখনও চেয়ারে বসা, মিটমিট করে হাসছে।
পিউ পাশ কাটিয়ে বের হতে নিলে পথ আটকে দাঁড়ায়।
–তুমি গতকাল কাকে বলেছিলে আমি তিমি মাছ?
–ন..নয়নকে।
–তিমি মাছ যখন পছন্দ না তখন হাঙর হয়ে দেখাবো। সামলাতে পারবে তো?
পিউ নির্বিকার থাকার চেষ্টা করে কিন্তু ফিক করে হাসি বেরিয়ে পড়ে।
খাবার টেবিলে স্বচ্ছ মুচকি হাসি হাসে। পিউর গাল বার বার রং বদলায়।
মিজান সাহেব জেসমিন আরাকে ইশারায় বোঝান, দেখো, সব ঠিক আছে।
জেসমিন আরা গল্প তুলেন রুবিনা ও দিলু ফুপির। দুজনকে তার খুব পছন্দ হয়েছে। দিলু কত ধীরস্থির মহিলা। তার একমাত্র মেয়ে জামাইসহ সুইডেনে আছে অথচ তিনি পিউর কাছেই রয়ে গেছেন। ওদিকে রুবিনা কত স্মার্ট মহিলা। পিউর প্রতি কী গভীর মায়া! পিউর পড়াশোনার দেখভাল করেছেন নিজ দায়িত্বে।
জেসমিন আরা বলেন, শুধু মাত্র মা হতে পারেনি বলে রুবিনাকে তার স্বামী ছেড়ে দিল? মানুষ কত পাষাণ হয়!
–মা, দিলু ফুপি আর আমি মিলে একটা প্ল্যান করেছি। আমরা রুবিনা ফুপিকে আবার বিয়ে দেবো।
–তাই নাকি? এটা তো খুবই ভালো খবর। রুবিনা জানে? কার সাথে দিবে, পাত্র দেখেছো?
–হ্যাঁ, আব্বুর সাথে বিয়ে দেব।
ডাইনিংয়ে বসা বাকি তিনজন খাওয়া থামিয়ে হা হয়ে পিউর দিকে তাকায়।
জেসমিন আরা বলেন, সব কিছু এতো সোজা নাকি? তুমি ঠিক করলেই হবে? তোমার আব্বু রুবিনাকে পছন্দ করেন? মানে ওভাবে পছন্দ করেন ?
-তা জানি না। কিন্তু আব্বুকে ম্যানেজ করতে হবে।আমার বিয়ে হয়েছে। আমি এখন এখানে থাকবো। দিলু ফুপির নাতি হয়েছে। তার মন চায় মেয়ের কাছে বেড়াতে যেতে। রুবিনা ফুপি কোথায় যাবে। তার তো কেউ নেই। আব্বুরও কেউ নেই। দুজন কেউ নেই মানুষ এক হয়ে যাবে। তারা তো একসাথে অফিস করে, মিটিং করে, যে কোনো সিদ্ধান্তে একমত হয় তাহলে বিয়ে করলে দোষ কি?
স্বচ্ছ বলল, তুমি যেভাবে হিসেব কষছো তারা হয়তো সেভাবে ভাবছেও না।
— তাদেরকে ভাবাতে হবে।
জেসমিন আরা বলেন, তুমি বললেই তো হবে না। কে তাদের সাথে আলাপ করবে?
–কেন,আপনারা করবেন?
মিজান সাহেবের গলায় খাবার আটকে খেক খেক করে কেঁশে ওঠেন।
জেসমিন আরা হা হয়ে পিউর দিকে চেয়ে বলেন,আমরা কেন রাজি করাবো? মাত্র দুদিন হলো আত্মীয় হয়েছি, তোমার আব্বু কি ভাববেন আমাদের?
মিজান সাহেব হেসে বলেন, না না দরকার হলে রাজি করাবো। জেসমিন, উনি তোমার বড় ভাইয়ের মতো। ভাই কি সারা জীবন এভাবে একা কাটাবে? অন্যের হাত ধরে কান্নাকাটি করবে? তারচেয়ে নিজের একজন জীবন সঙ্গী থাকা উচিত। জীবনটা পরিপূর্ণ হবে সাথে আমার টেনশনও থাকবে না। কি বলো পিউ?
পিউ দাঁত বের করে হাসে। আব্বু আপনি অনেক ভালো!
জেসমিন আরা মুখ বাঁকিয়ে বলেন, তা তো ভালোই। তোমার আব্বুর একাকী জীবন দেখে কত দুঃখিত তোমার এই নতুন আব্বু। আচ্ছা, ভাই সাহেব বলল ছেলেটা কি যেন নাম নয়ন, সে নাকি তোমার বেস্ট ফ্রেণ্ড ছিল, তাহলে বিয়ের দিন পালালো কেন? ওকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল কি?
পিউ খালি প্লেটে আঙুল ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে চোর গলায় বলল, ও আসলে একজনকে ভালোবাসে।
-তুমি জানতে? তাহলে তুমিই বা বিয়ে করতে চাইলে কেন?
পিউ ঢোঁক গিলে বলল, আমি জানতাম না। কেউ জানতো না। ও যাকে ভালোবাসে তাকে কেউ মেনে নেবে না।
জেসমিন আরা বলেন, কেন? এযুগে প্রেম ভালোবাসা তো সবাই করে। মেনে না নেয়ার কি আছে? মেয়েরা কি ভিন্ন ধর্মের ?
–ও…. আসলে….. ও….মেয়ে নয়।
ওমনি স্বচ্ছ খাবি খেয়ে খুক খুক করে কাঁশতে থাকে।
মিজান সাহেব বড় বড় চোখে পিউর দিকে তাকায়।
জেসমিন আরা বলেন, কে মেয়ে নয়?
পিউ বলে, নয়নের প্রেমের শুরু দেশের বাইরে পড়তে গিয়ে। ওখানের কালচার তো জানেন। কতশত মেয়ে, সকলের সাথেই কত মেলামেশা! কিন্তু নয়নের পছন্দে কোনো মেয়ে না এসে ছেলে এসেছে। নয়ন পুরোই অবসেসড ওকে নিয়ে। বিয়ে করলে ওকেই করবে, সংসার করলে ওর সাথেই করবে, বাচ্চার বাপ হলে ওর …..
স্বচ্ছর সাথে এবার মিজান সাহেবও কাঁশতে শুরু করেন। বাপ ছেলে খুক খুক করে বেতালে কেঁশেই যাচ্ছে।
জেসমিন আরা বিরক্তি মুখে দুজনকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলেন, এতো কাঁশির কি হলো? তোমাদের ধারণা আমি বিশ্ব জ্ঞান রাখি না? এখন যে এসব ঢং বিশ্ব বাজারে চলছে জানি না?
মিজান সাহেব পানি খেয়ে হাঁপাতে থাকেন। অভিনয় করে কাঁশতে গিয়ে শরীরের এনার্জি নষ্ট হয়েছে তবু বউ শাশুড়ীর প্যাচপ্যাচানী বন্ধ হচ্ছে না। কে সামনে আছে, কি বিষয়ে কথা হচ্ছে, তাদের কোনো যায় আসে না।
স্বচ্ছ পিউর কনুই ধরে ঝাঁকাতে থাকে চুপ করার জন্য। কে শুনে কার কথা।
মিজান সাহেন বলেন, মামনি, থামো এবার। সব কথা সবার সামনে বলতে নেই রে মা। তোমার শাশুড়ী তোমার বন্ধু হয়েছে, ভালো কথা। তাকে আলাদাভাবে ডেকে তোমার ঠাকুরমার ঝুলি শোনাও। কোনো অসুবিধা নেই। এখন থামো প্লিজ।
__________
স্বচ্ছ পিউ ড্রইং রুমে বসে কুট কুট গল্প করছে, খুনসুটি করছে। জেসমিন আরা কিচেন থেকে আধো আধো শুনতে পাচ্ছেন। মাত্র তিনজন মানুষ, ইচ্ছা না থাকলেও কথা কানে আসে। শুনতে মন্দ লাগছে না।
এক ফাঁকে কাঁচা আম কেটে দিয়ে আসলেন দুজনকে। পিউ খেল না, বলল, পেট ব্যাথা করছে।

_______
পিউকে টিপনি কেটে স্বচ্ছ বলল, তুমি গতকাল বললে নয়ন সম্পর্কে জানলে আমি তাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরবো। আজ বলছো নয়ন মেয়ে নয় ছেলে পছন্দ করে। এমন একটা ছেলেকে আমি জড়িয়ে ধরবো? তোমার মাথা ঠিক আছে?
-আছে? তুমি ঠিক নয়নকে জড়িয়ে ধরবে।
-জীবনেও না। জড়িয়ে ধরার প্রশ্নই আসে না। ছিঃ!
-দেখে নিও। আমি যা বললাম তাই হবে।

দুপুরের খাওয়া শেষে জেসমিন আরা শুনতে পান পিউ স্বচ্ছকে বলছে, বিকালে ফার্মেসী যেও।
স্বচ্ছ মোবাইলে কি যেন মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিছু না বুঝেই হু বলল।
জেসমিন আরা স্পষ্ট বুঝলেন পিউ কেন যেতে বলেছে। কিন্তু স্বচ্ছ গাধাটাই বুঝেই নি।
সকালে পেট ব্যাথা করছিল পিউর। নিশ্চয়ই পিরিয়ড হয়েছে বা হবে।

পিউর কাছ থেকে স্বচ্ছ সরে গেলে জেসমিন আরা সুযোগ পেয়ে পিউর কাছে এগিয়ে আসেন। নিচু সুরে বলেন, আমি একটু পর বাইরে যাবো। তোমার কিছু আনতে হবে ?
–না মা।
-থাকলে বলো আমি নিয়ে আসবো।
– না মা, কিছু লাগবে না।
– আহা, লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। ফার্মেসী থেকে এনে দেবো আমি। নাম কি বলো?
পিউ স্বচ্ছর দিকে তাকালো। স্বচ্ছ ডাইনিংয়ে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছে। এদিকে মনোযোগ নেই।
পিউ বলল, না মা কিছু লাগবে না।
-আহা পিউ, লজ্জার কিছু নেই। আমি শাশুড়ী বলে লজ্জা পাওয়া লাগবে না। আমি তো তোমার মা এখন। তুমি নাম বল, আমি নিয়ে আসছি। আমারটা মাঝে মাঝে স্বচ্ছ এনে দিত। আমি ওকে বুঝিয়েছি, এটা প্রকৃতির নিয়ম।
পিউ হা হয়ে বলে, স্বচ্ছ এনে দিত?
— হ্যাঁ। মাঝে মাঝেই আনতো। এটা লুকানোর কিছু নেই।
তুমি নাম বল।
–মা, আমি তো নাম জানি না।
–নাম জানো না মানে?
–মানে আগে তো ইউজ করি নি। নাম জানবো কি করে। বিয়ের আগে খামাখা নাম জেনে কি করবো?
দূর থেকেই পিউর কথা শুনে স্বচ্ছর কান লাল হয়ে ওঠে। ঘটনা কোন দিকে গড়াচ্ছে তা বুঝে কাঁশতে শুরু করে। মাকে থামাবে নাকি পিউকে থামাবে বুঝে উঠতে পারে না।
জেসমিন আরা বিরক্ত চোখে স্বচ্ছর দিকে তাকায়। সারাক্ষণ খুকখুক কাঁশিস কেন, কি সমস্যা তোর?
পিউর দিকে ফিরে তিনি বলেন, পিউ এতোটা দায়িত্বহীন হওয়া তো ঠিক নয়। সব কি তোমার ফুপিরা সামলাবে? নিজের ব্যক্তিগত জিনিস গুলো ….
–না না মা, ওরা কেন সামলাবে? ওটা তো স্বচ্ছর দায়িত্ব।
আসন্ন বিপদ বুঝে স্বচ্ছ দ্রুত পা চালিয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটল কিন্তু চেয়ারে পা আটকে উপুত হয়ে পড়ল। চোখে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো।
এদিকে পিউ বলে চলল, আমি দায়িত্বহীন নই মা। আমি অনেক দায়িত্বশীল তাই তো স্বচ্ছকে কিনতে বলেছি। স্বচ্ছ এখনো ছাত্র, আমিও এখন মা হওয়ার জন্য প্রস্তত নই। প্রোটেকশন কেনা জরুরি। এই দায়িত্ব তো স্বচ্ছর, আর নাম কিভাবে জানবো, ব্যবহার না করলে…..
স্বচ্ছ উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছে। হামাগুড়ি দিয়েই কোনোরকমে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকালো।
পিউ মায়ের দিকে মুখ তুলে চেয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই। সে একাই কথা বলছে।

জেসমিন আরা নিজের রুমের দরজা আটকে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছেন। নিজের গালে দুটো চড় দিলেন। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। মিজান জানলে নির্ঘাত হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে। কেন আগ বাড়িয়ে এতোটা বোকা বনতে গেল! মিজান বার বার মানা করেছে স্বামী স্ত্রীর মাঝে নাক গলাতে না। কেন কথাটার মূল্য দিল না? কি বোকামীটা হলো এবার! এখন স্বচ্ছর সামনে কি করে দাঁড়াবে? ইস, আজকের দিনটা যদি তারিখ থেকে নিখোঁজ হয়ে যেত!
মা-বেটা দুজনই দীর্ঘ সময় রুম থেকে বের হচ্ছে না। পিউ একবার ভাবে মায়ের রুমে যাবে। বলবে মা এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে! আমি কিছু মনে করি নি।

মত পালটে নিজের রুমে ঢুকতেই স্বচ্ছ তেড়ে এলো।
— এটা তুমি কি করলে? এভাবে কেউ শাশুড়ীকে বলে? মিনিমাম লাজ লজ্জা নেই?
— আশ্চর্য! আমি কী করেছি? মা ই বার বার বলছিল নাম বল, নাম বল। আমি কী নাম জানি?
— তুমি কথাটা ঘুরাতে পারতে।
— আমি তো মাকে কিছু বলিনি। তোমাকে বলেছিলাম কিনতে মা বলল লজ্জার কিছু নাই। এসব প্রকৃতির নিয়ম।
— পিউ, আম্মু মেয়েদের পিরিয়ডের কথা ভেবেছে আর তুমি…
— আমি কি করে বুঝবো? তুমি আমাকে রাগ দেখাছো কেন? তুমি একটা নষ্ট ছেলে!
— কি? আমি নষ্ট ছেলে?
— হ্যাঁ! আর একবার যদি আমার কাছে এসেছো তাহলে হাড্ডি গুড়ো করে কবুতরকে খাইয়ে দিবো বলে দিলাম।
স্বচ্ছর হাসি চলে আসে। তুমি পুরাই একটা কার্টুন।
–হ্যাঁ আমি কার্টুন। আমাকে দেখে হি হি করে হাসো।
পিউর কমোড় জড়িয়ে কাছে টেনে আনে স্বচ্ছ। বলে, হাসবো না ভালোবাসবো।
-না, ছাড়ো, ফালতু ছেলে, মাকে বলে দিবো।
স্বচ্ছ হেসে বলে, যাও বলে দাও। বাকি রেখেছো কিছু বলার? অস্থির ঠোঁটে গভীর চুমু খেয়ে বলে, যাও এবার গিয়ে বল, মা, স্বচ্ছ আমাকে চুমু খেয়েছে।
পিউ ধাক্কা দিয়ে সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে, তুমি আসলেই একটা নষ্ট ছেলে।
-তাই না? নিজে কি? শাশুড়ীর চামচী! বলো গিয়ে, মা আপনার ছেলে একটা নষ্ট ছেলে!
-বলবোই তো। পিউ থপ থপ শব্দ তুলে জেসমিন আরার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
পেছন ফিরে দেখে বেয়াদব ছেলে ইশারায় বলছে থামলে কেন, যাও?
অসহায় চোখে জেসমিন আরার বন্ধ দরজার দিকে তাকায় আবার স্বচ্ছর দিকে তাকায়।
বেয়াদব ছেলেটা দুষ্ট হেসে এবার কাছে ডাকছে।

চলবে।।

#দমকা_হাওয়া
#ঝিনুক_চৌধুরী
# পর্ব-১১

কদিন কেটে গেল।
মিজান সাহেব আজ রাত এগারোটায় দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। দুদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিচিত একজন গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে বলে তিনিও সাথে রওনা হচ্ছেন। সম্পত্তি বিষয়ক কাজ।
জেসমিন আরা তড়িঘড়ি ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছেন। পিউ আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে।
-আব্বু আজই কেন যাচ্ছেন? কবে আসবেন? বাসা খালি হয়ে যাবে না? মা তো একা হয়ে যাবে।
মিজান সাহেব হেসে ফেলেন।
-মামনি আমি বাসায় থাকিই কতক্ষণ? শুধু রাতটুকু। এতেই তোমার মনে হচ্ছে বাসা খালি হয়ে যাবে? আগামীকাল তো তোমার মাও গ্রামে চলে যাবে।
পিউ অবাক চোখে তাকায়। মা, আপনিও গ্রামে যাবেন?
-হ্যা, একটু দরকার আছে। মিজান একা পারবে না। সমস্যা নেই আমি সব গুছিয়ে দিয়ে যাবো। তিন চার দিনেই চলে আসবো।
-আমাকেও নিয়ে যান তাহলে। একা একা কি করবো এখানে?
জেসমিন আরা মিজান সাহেব দুজনেই হেসে ওঠেন।
মিজান সাহেব বলেন, মা রে মাত্র কদিনে তুমি একেবারে আপন হয়ে গেছো। এমন ভাবে বলছো যেন আমাদের আর দেখা হবে না। আমরা তো চারদিন পরই চলে আসবো।
পিউ মুখ ভার করে বসে থাকে। কেন জানি কান্না পাচ্ছে। ওর আব্বু যতবার দেশের বাইরে যায় তখনো এমন কান্না পায়। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। সবাই তো আর সারাজীবন গলা ধরে বসে থাকবে না। সবারই নিজেস্ব কাজ আছে। তবু পিউর মনে হয় সবাই কেন একসাথে এক জায়গায় ভালোবেসে থাকে না?
জীবন তো একটাই। কখন কি হয়ে যায়!

_________
জেসমিন আরা সকাল থেকেই গোছগাছ শুরু করছেন। বিকালে বেরিয়ে যাবেন। তিনদিন সংসারে থাকবেন না। বলা যায় না, চার পাঁচ দিনও লাগতে পারে। স্বচ্ছর উপর যেন চাপ না পড়ে ওভাবে সব গোছাচ্ছেন। স্বচ্ছর পছন্দের খাবার রান্না করে বক্সে ভরে রাখছেন। পিউ ভারি মুখে জেসমিন আরার সাথেই আছে। জেসমিন আরা মনে মনে পিউর জন্য সারপ্রাইজ ঠিক করে রেখেছেন। দুপুরে খাওয়ার পর বলবেন।
স্বচ্ছ পড়ার টেবিলে মনযোগ দিয়ে আছে। বিকালের পর বাসায় পিউ ও স্বচ্ছ ছাড়া কেউ থাকবে না। এরচেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। বোকা মেয়েটা বুঝছে না। পরিবার থাকা ভালো তবে হানিমুন বলেও একটা কথা আছে। সে সময়টা শুধু দুজনের হয়। স্বচ্ছ পিউর হানিমুন না হয় খালি বাসাতেই হবে।
দুপুরের খাওয়া শেষে জেসমিন আরা পিউকে বললেন, তোমার জন্য সুখবর আছে।
পিউ মুখ উজ্জ্বল করে তাকায়। স্বচ্ছও আগ্রহী চোখে তাকায়।
-যাওয়ার পথে তোমাকে বাবার বাসায় নামিয়ে দেবো। আমি যেহেতু থাকছি না তুমি এ ক’দিন বাবার বাড়ি বেড়িয়ে এসো। তোমার আব্বু খুশি হবেন।
পিউ বুঝল না ওর কি বলা উচিত। জেসমিন আরা এতো খুশি মনে পিউকে সুসংবাদ দিল যে মুখের উপর কিছুই বলতে পারলো না।
স্বচ্ছর দিকে তাকিয়ে দেখে স্বচ্ছ নত মুখে ভাত খাওয়ায় ব্যস্ত। যেন এ ব্যাপারে কোনো আলাপ করতে আগ্রহী নয়।
রুমে ঢুকে পিউ জিজ্ঞেস করল, আমি যাবো বাবার বাসা?
স্বচ্ছ ল্যাপটপে মুখ রেখেই গম্ভীর সুরে বলল, বাসা খালি হয়ে যাচ্ছে, একা বাসায় কি করবে এসব বলে বলে সবার মাথা খেয়েছ। পরিবারের সবার জন্য তোমার এতো মন খারাপ হচ্ছে যখন আমার সাথে একা থেকে কি করবে? তোমার যাওয়াই উচিত।
পিউ মুখ কালো করে ব্যাগ গোছাতে শুরু করল। ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক প্রশ্ন করে স্বচ্ছকে কিন্তু উত্তর আসে না ওপর দিক থেকে।
বিদায় বেলা জেসমিন আরা খুশিমনে বিদায় নিলেন। মেয়েটা একা একা বাসায় কষ্ট করতো ভেবে শান্তি পেলেন নিজের সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য।
পিউ কয়েকবার চোরাচোখে স্বচ্ছর দিকে তাকালো। কিন্তু অভিমানী স্বচ্ছ একবারও পিউকে দেখলো না।
দুজনকে বিদায় দিয়ে নিজ রুমে এসে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্বচ্ছ। পুরো ঘর শূন্য।
ডাইনিং টেবিলে এসে দুটো গ্লাস পরপর তুলে জোড়ে আছাড় মারে। রাগটা ঠিক কার উপর বুঝে না। মা, পিউ নাকি নিজের উপর?
_____________
পিউ একটিবারও কল দেয়নি। স্বচ্ছও দেয় নি। রাতে ঘুমোনার সময় মন ছটফট করতে থাকে স্বচ্ছর। মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবে এখনি কল দেই কিন্তু অভিমানী মন প্রশ্ন করে কই পিউ তো একবারও কল দিলো না।
ভোরের দিকে সকল অভিমান ঝেরে পিউকে ভিডিও কল দেয়। ভালোবাসার মানুষটার মুখখানা না দেখলে বেঁচে থাকা দায়।
কল ধরে ঘুম জড়ানো চোখে পিটপিট করে তাকানোর বৃথা চেষ্টা চালায় পিউ।
মুহূর্তে ফুরফুরে বাতাস উড়ে এসে স্বচ্ছর মন প্রফুল্লো করে তুলে।
-কেমন আছো পিউ?
-হুম।
-আরো ঘুমাবে?
-হুম।
– একটু কথা বলো!
– হুম
-ঠিক আছে ঘুমাও। শুধু মোবাইলটা এমন জায়গায় রাখো যেন আমি তোমায় দেখতে পাই।
পিউ হাতড়ে মোবাইল স্ট্যাণ্ডে মোবাইল রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
স্বচ্ছ গভীর চোখে চেয়ে দেখে ঘুমন্ত মুখটিকে। খুব ইচ্ছে করে ঠোঁটে চুমু খেতে। ভালোলাগায় দম বন্ধ হয়ে আসে। মোবাইল স্ক্রীনে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে, আমার ভালোবাসা …..

সারাদিনে দুতিনবার কল করেছে স্বচ্ছ। পিউ হু হা বলে রেখে দিয়েছে। স্বচ্ছ স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নিয়েছে পিউ হয়তো পরিবার কে সময় দিচ্ছে। কিন্তু পিউর মনের অভিমান বেড়ে চলছে ক্রমেই স্বচ্ছ তা টের পায় নি ।
যেন-তেন ভাবে স্বচ্ছ দুইদিন পার করে দিলেও পিউর সময় যেন থমকে গেছে। সবার সাথে থেকেও একা সে, সবার সাথে হেসেও বিষন্ন মন।
————
মিজান সাহেব ঘুমোতে এলে দেখেন জেসমিন আরা পিউর সাথে কথা বলছে। তিনি ডিসটার্ব করলেন না।কল রেখে জেসমিন আরা এবার স্বচ্ছকে কল দিয়ে খবরাখবর নেন।
মিজান সাহেব অবাক হলেন। ফোন রাখলে জিজ্ঞেস করেন তুমি ওদের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলছো কেন?
জেসমিন আরা বিছানায় গা এলিয়ে বলেন দুজন আলাদা জায়গায় তাই আলাদা কল দিয়েছি।
মিজান সাহেব আকাশ থেকে পড়েন। আলাদা মানে?
জেসমিন আরা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলেন, আমি আসার সময় পিউকে ওর বাবার বাসায় দিয়ে এসেছি। আমি যেহেতু থাকবো না মেয়েটা একা একা কি করবে খালি বাসায়?
-স্বচ্ছকে জিজ্ঞেস করে পিউকে ওর বাসায় পাঠিয়েছো?
মিজান সাহেবের কণ্ঠের রূঢ়তা শুনে জেসমিন আরা অবাক চোখে তাকান। বলেন, জিজ্ঞেস করিনি। স্বচ্ছ মানাও করে নি। পিউও মানা করে নি। ওরা তো এখনো ছোট, নিজেরা কি আর….
মিজান সাহেব চেঁচিয়ে ওঠেন। কোথায় ছোট? কেন বার বার তুমি ছোট ছোট বল? কতবার তোমাকে একই কথা বোঝাবো?
জেসমিন, এ বয়সে আমরা প্রেম করেছি । আমি তার একবছর পর তোমায় বিয়ে করেছি। সংসার সামলেছি। তুমি আমার পরিবার সামলেছো। তুমি বার বার একই ভুল করছো কেন? ওদেরকে ওদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দিচ্ছো না কেন?
জেসমিন আরা আমতা আমতা করে বলেন, আমি তো ওদের ভালোর জন্য এমনটা করেছি। পিউ একা ঘরে কি করতো? ও তো কিছু বুঝেই না। সোজা সরল মেয়ে…
— ওহো্ জেসমিন বোঝার চেষ্টা কর। পিউর জন্য স্বচ্ছ আছে। ওরা একে অপরকে সামলে নিবে। কেবল বিয়ে হয়েছে দুজনের। ওদের ঠিকমতো কাছে আসার সুযোগ তো দিবে। তুমি তো দেখছি নিজের ছড়ি ঘুরাতেই ব্যস্ত।

জেসমিন আরা বিস্ফারিত চোখে তাকায়।
-এভাবে বলতে পারলে তুমি? আমি ছড়ি ঘুরাচ্ছি? আমি ওদের ভালোবাসি না, ওদের ভালো চাই না?
– ভালো চাইলে দুজনের কথা ভাবতে। নিজের মতামত ওদের উপরে চাপিয়ে দিতে না।
– আমি কিছু চাপিয়ে দেই নি মিজান। শুধু পিউ কিভাবে কোথায় ভালো থাকবে সেটা আগে ভেবেছি। মেয়েটা….
— আর স্বচ্ছ? ওর কথা ভাবনি কেন? তুমি আসলে পিউকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছো টিপিক্যাল শাশুড়ীদের মতো।
– মিজান চুপ করো। একদম চুপ। থরথর করে কাঁপতে থাকে জেসমিন আরা। দৃষ্টি ঘোলা হয়ে ওঠে। চিৎকার করে বলেন, আমি পিউর শাশুড়ি নই। আমি মা! আমি মা! পিউকে আমি কতটা পছন্দ করি তুমি বুঝছো না, আমি বোঝাতে পারবো না। ওকে ছাড়া এখানে কিভাবে দিন কাটাচ্ছি তুমি জানো না। আমার মেয়ে নাতাশা, আমার জানপাখি , ওর ভালো চাইবো না আমি? আমি ওর মা না? অস্থির চোখে কেঁদে ওঠেন জেসমিন আরা।
মিজান সাহেব তড়িঘড়ি বুকে জড়িয়ে ধরেন জেসমিন আরাকে।
-জেসমিন শান্ত হও, শান্ত হও! আমরা পিউর কথা বলছি জেসমিন, আমাদের নাতাশার কথা নয়।
জেসমিন আরা অপরাধী চোখে তাকান। কখন মুখ ফসকে এমন ভুল করলেন?
মিজান সাহেব নমনীয় কণ্ঠে বললেন, নাতাশা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে জেসমিন। বহু বছর আগে। সেই ক্ষত আমরা মুখে না বললেও বয়ে বেড়াচ্ছি দুজনই। আল্লাহ হয়তো নতুনরূপে নাতাশাকে পিউ রূপে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। তুমি পিউর মাঝে নিজের মেয়েকে খুঁজে পেয়েছ ভালো কথা কিন্তু এটা ভুলে গেলে হবে না পিউ স্বচ্ছর স্ত্রী। তোমার চেয়ে পিউর উপর স্বচ্ছর অধিকার বেশি। স্বচ্ছকে নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত।

জেসমিন আরা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদেন।
–আমি ভালো মা হতে পারলাম না মিজান। আমি মা নামের কলংক।
–না জেসমিন, কেন নিজেকে বার বার তুমি গালি দাও? যা হয়েছে তা ভুলে যাও প্লিজ। ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। পুরোনো ক্ষত কেন তুলে আনছো?
–কারন আমি আজো নিজেকে ক্ষমা করতে পারি নি। আমি অপরাধী, আমার নাতাশা, আমার জান পাখীটার অপরাধী আমি। আমি তোমার অপরাধী মিজান। আমি ক্ষমার অযোগ্য।
-জেসমিন চুপ করো তো। ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল।
–আমার বেলাতেই কেন এমন হলো বলতে পারো? আমি একটা দায়িত্বহীন মা বলে।
-না জেসমিন, তুমি অনেক ভালো মা!
— ভরা বর্ষায় আমি আমার গ্রামে ঘুরতে যাবার জেদ কেন ধরেছিলাম? চারিদিকে থৈথৈ পানি। আমার চঞ্চল পরীটা এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়। তুমি এতো করে মানা করলে অথচ আমি? তোমার অবাধ্য হয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করলাম। এতো কিসের ঘুম ছিল আমার চোখে? নির্জন দূপুরে আমার মেয়েটার নিথর শরীর ডুবে ছিল ছোট্ট ডোবায় অথচ আমি জানলামই না। কেউ জানলো না। মৃত্যুর আগে নিশ্চয়ই মেয়েটা আধোবুলিতে মা মা ডেকেছে। আমি কেন শুনতে পেলাম না? আমি কেমন মা? আমার নাতাশা, আমার কোল ছেড়ে চিরতরে হারিয়ে গেল….আমি.. আমি কি করে পারলাম মিজান? কি করে আমার জান পাখিটা হারিয়ে গেল? মুহূর্তে আমার….সব শেষ হয়ে গেল…
শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে তীব্র আর্তনাদে কেঁদে চলেন জেসমিন আরা।
মিজান সাহেব শক্ত করে বুকে চেপে রাখেন নিজ স্ত্রীকে। যেমন করে এতোটা বছর ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। বহু কষ্টে সন্তান হারানো পাগলপ্রায় জেসমিনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিল তিনি। সেই দুঃসময়, সেই দুঃস্মৃতি আর মনে করতে চান না।
নাতাশা হারানোর তিন বছর পর স্বচ্ছর অস্তিত্ব জানান দিলেও জেসমিন আরা স্বাভাবিক হতে পারে নি। তখনও নির্ঘুম রাত কাটতো, ক্ষণে ক্ষণেই চিৎকার করে উঠতো, নাতাশার বয়সী কোনো মেয়ে দেখলেই কান্না শুরু করতো।
কি একটা দুঃসময় পার হয়েছে দুজনের!
স্বচ্ছ পেটে থাকা অবস্থায় মিজান সাহেব ছিলেন চরম উৎকন্ঠায়। জেসমিন আরা আদৌ কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে?
স্বচ্ছ জন্মের পর মাতৃত্বের স্বাদ আবার ফিরে পাওয়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক হতে শুরু করেন জেসমিন আরা। স্বচ্ছকে এতো বেশি আগলে রাখতেন যেন চোখের পলকেই উধাও হয়ে যাবে ছেলেটি ।

মিজান সাহেব বেশ সময় ধরে জেসমিন আরার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারানোর চেষ্টা করছেন। বাঁধ ভাঙা কান্না শেষে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত জেসমিন আরা।
পরিবেশ হালকা করতে মিজান সাহেব বলেন, পিউ একটা দজ্জাল শাশুড়ী না পেয়ে তোমার মতো মমতাময়ী মা পেয়েছে। মেয়েটার ভাগ্য কত ভালো, দেখেছো! পিউও হয়তো ওদিকে অস্থির হয়ে আছে তার মায়ের জন্যে, তাই না জেসমিন? তোমাদের বউ শাশুড়ীর অতিরিক্ত মহব্বতে আমাদের বাপ-ছেলের টিকে থাকা মুশকিল হবে তা খুব ভালো করেই বুঝছি।

জেমমিন আরা মলিন হাসেন।
এই মানুষটার প্রতি চির কৃতজ্ঞ তিনি। তার ছোট ছোট মায়ায় জড়ানো কথামালা বুকের ভেতরের ক্ষতকে হালকা প্রলেপ দিয়ে সংসারে ছন্দ এনেছে প্রতিবার।

_____________
স্বচ্ছ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। পিউ কল দিল কি? খুশি মনে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে পিউ নয়, একটা ছেলের প্রোফাইল থেকে কল বাজছে। নাম নয়ন শিকদার।
ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা ।
আমেরিকায় এখন দিন কিন্তু এখানে তো মাঝরাত। এমন অসময়ে কল দেয়া কেমন ভদ্রতা? হতে পারে নয়ন পিউর বন্ধু কিন্তু স্বচ্ছর তো বন্ধু নয়। একজন অপরিচিত মানুষকে কেউ এতো রাতে কল দেয়?
বিরক্তি নিয়ে কল ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে নয়ন বলে, কি রে ভাই, এমন অনুভূতিহীন নির্বিকার, নিষ্ঠুর মানুষ আমি জন্মেও দেখি নাই। তুমি কি মানুষ নাকি এলিয়েন ?
অপমানে মুখ লাল হয়ে ওঠে স্বচ্ছর।

চলবে।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here