বোধোদয়,সপ্তম পর্ব

0
318

বোধোদয়,সপ্তম পর্ব

নিজের কাছে নিজেকে অচেনা লাগার অনুভূতি কেমন, তা বেশ বুঝতে পারছে শাফায়াত। উপলব্ধি আসাটা অস্বাভাবিক নয়, তবে স্বাভাবিক বিষয়েও ক্রমাগত দোলাচল থাকাটাও তো অনুচিত। নিশিতার প্রতি তার যে তীব্র আবেগের জন্ম, তার উৎস আসলে কোথায়, ভাবতে লাগলো। এটা ঠিক, সে নিশিতাকে চায়, ঠিক যেভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে কামনা করে। তবে এই অনুভূতির জন্ম একদিনে হয়নি। যত দিন গড়াচ্ছে, একটু একটু করে সে বুঝতে পারছে, নিশিতাকে ছাড়া তার জীবন ধূসর। একজন মানুষ তার জন্য ভেবেছে, নিজের চাইতেও বেশী ভালোবাসার চেষ্টা করেছে, তাকে গভীরভাবে পেতে চেয়েছে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছে, প্রার্থনা করেছে তার মন পাওয়ার জন্য – এই ভাবনাগুলো শাফায়াতকে দখল করে রেখেছে বিগত বেশ কিছুদিন। মেয়েটার দোষ সেভাবে না থাকলেও সে নিজের মতো ভেবে তাকে দোষী বানিয়েছে। চূড়ান্ত অবহেলা করেছে। যার শাস্তি পাচ্ছে সে। তবে এভাবে চলতে দিবে না সে। নিশিতার মনে অভিমানের যে পাহাড় জমেছে, তা দূর করতে হবে ভালোবাসা দিয়েই। সামনে গিয়ে দাঁড়ালে নিশ্চয়ই নিশিতা তাকে ফিরিয়ে দিবে না। যত যাই বলুক নিশিতা, সে যে মনে মনে এখনও তাকে চায়, জানে শাফায়াত। এই বিশ্বাসটাই যে তার প্রত্যাশার শক্তি।

নিশিতা চলে যাওয়ার পর থেকে সাফিয়া মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও ছেলের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেননি। তবে শাফায়াতও যে তার মায়েরই সন্তান ! স্ত্রীর সাথে মায়ের ঘনিষ্ঠতাও তার মধ্যে অপরাধবোধ জন্ম নেওয়ার অন্যতম কারণ। দারুণ এক সম্পর্ককে নিজ হাতে শেষ করে দিয়েছে সে। প্রায়শ্চিতের সুযোগ সে কয়েকদিন থেকেই ঘুজে বেড়াচ্ছিলো। ছেলের আগ্রহ টের পেলেও সাফিয়া আরও কিছুদিন ছেলেকে উপলব্ধির জন্য সময় দিতে চেয়েছিলেন। তবে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা এবং ছেলের মনোদৈহিক অবনতির কারণে সিদ্ধান্ত নিলেন যত দ্রুত সম্ভব নিশিতাকে ফিরিয়ে আনার। তবে কাজটা সহজ হবে কিনা, সে ব্যাপারে আশংকা থেকেই গেলো তার।

সেদিন রাতে ছেলের রুমে গিয়ে দেখেন সে নিজের লাইব্রেরী গুছাতে ব্যস্ত। এত বই পাগল তার ছেলে ! সাহিত্যের প্রতি শাফায়াতের অনুরাগের ব্যাপারে একসময় বেশ বিপক্ষে ছিলেন। কারণ, অনেক সময় পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়েও এই অভ্যাস থেকে শাফায়াত বের হতে পারেনি। পরে অবশ্য বুঝেছিলেন, কিছু কিছু দুর্বলতা মানুষ সারাজীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারে না।

রুমের ভেতর ঢুকে চুপচাপ ছেলের বিছানায় বসে রইলেন। পেছনে না ফিরেও শাফায়াত বুঝতে পারলো তার মা বসে আছে। তাক থেকে শখের কালেকশনের কিছু সমগ্র বের করে মুছে পুনরায় সেলফে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করলো,

– ‘কিছু বলবে, মা?’
– ‘এভাবে কতদিন চলবে?’ – সাফিয়ার কণ্ঠ বেশ গম্ভীর।
– ‘এসব নিয়ে আর কথা না বাড়াই, মা?’
– ‘কথা না বললে সমাধান সম্ভব না। তোমার স্ত্রী দিনের পর দিন তার বাবার বাড়িতে পড়ে আছে, আর তুমি আছো নিজের জগত নিয়ে? কি ভাবো, আমি কিছুই বুঝি না?’ – সাফিয়া চেষ্টা করলেন রাগ চেপে রাখতে।
– ‘যদি সত্যিই আমাকে বুঝতে, তাহলে আর এত কিছু হতোই না, মা। তুমি সবসময় নিজের বুঝকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছো। কোনদিনও বুঝতে চাওনি আমি কি চাই। এসব নিয়ে কথা বলে তিক্ততা বাড়িয়ে আর লাভ কি? আর নিশিতা যে ফিরবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। নইলে এভাবে যোগাযোগ বন্ধ রাখতো না। ওকে ওর মতো থাকতে দাও।’ – শাফায়াত যে নিশিতার সাথে যোগাযোগ করেছে সেটা আর বললো না।

সাফিয়া রিঅ্যাক্ট করলেন না। বুঝতে পারলেন ছেলের মনের অবস্থা। ভাঙবে তবু মচকাবে না। অনুশোচনা এখন অভিমানে রূপ নিয়েছে। হয়তো বোঝালে বুঝতেও পারে। ঠাণ্ডা মাথায় বললেন,

– ‘তোমার শরীর হঠাৎ করে কেন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, সেটা না বললেও বুঝতে পারি, বাবা। তোমার সাথে বউমার কথা হয়েছে কিনা, জানি না, তবে সে আমার খবর নেয় রোজ। মেয়েটা কিন্তু কষ্টে পাচ্ছে এখনও। ওর সাথে যে আচরণ তুমি করেছো, সেটা হয়তো ক্ষমার অযোগ্য, তবে অনুশোচনার গুরুত্বও অনেক। ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে শুধরে নিলে সৃষ্টিকর্তাও ক্ষমা করেন।

মায়ের কাছে এভাবে ধরা পড়ে যাবে, ভাবেনি শাফায়াত। একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তবে নিশিতাকে ভালোবাসার যে আগ্রহ তার বাড়ছে সময়ের সাথে, সেটাও তো সত্য। সাফিয়া ছেলের মৌনতায় যা বোঝার বুঝে নিলেন। কাছে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

– ‘ওর অভিমান তোমাকেই ভাঙ্গাতে হবে। স্ত্রী’র কাছে নিজের ভালোবাসা প্রকাশে কোন কার্পণ্য করতে হয় না, বাবা। তোমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওর চোখে যে আকুতি দেখেছি, আমি নিশ্চিত সে তোমাকে ফিরিয়ে দিবে না। তবে মেয়েটা যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে। এই ধরনের কষ্ট মানুষের মনকে অনেক সময় কঠিন করে তোলে। হয়তো এর ফলে সে কোন শক্ত সিদ্ধান্তও নিতে পারে। কোন সম্ভাবনাকেই আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে সবকিছু পজিটিভভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে তোমাকে। মনে রেখো, সম্পর্কের পরীক্ষায় যে জেতে, জীবনের কোন পরীক্ষাতেই সে হারে না।’

মায়ের কথায় শাফায়াত নিজের ওপর কিছুটা হলেও ভরসা পেলো। একই সাথে, নিশিতাকে কিভাবে কনভিন্স করবে, সেটা নিয়েও ভাবতে লাগলো।

পেশাগত ব্যস্ততার কারণে পরবর্তী কিছুদিন যেন দ্রুতই চলে গেলো শাফায়াতের। নিজেকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেওয়ার চাইতে ব্যস্ত রাখাটাই যেন আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠলো তার কাছে। যদিও রাতগুলো যেন দীর্ঘ থেক দীর্ঘতর হয়ে উঠছিলো। এদিকে, মায়ের সাথে যে শুক্রবার নিশিতাদের বাসায় যেতে হবে, সেটাও প্রায় ভুলতে বসেছিল। তবে সময়মতো ছেলেকে ঠিকই মনে করিয়ে দিলেন সাফিয়া।

অন্যদিকে, নিশিতা যখন শুনলো শাফায়াত তার মা’সহ তাদের বাসায় আসবে, মিশ্র এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো তার মাঝে। একদিকে স্বামীর প্রতি তীব্র অভিমান বা ঘৃণা, অন্যদিকে যে শাশুড়ি মা তাকে এতোটা ভালবেসেছেন, তাঁকে কিভাবে ফিরিয়ে দিবে সে? – ভাবনার এমন দ্বন্দ্বের মাঝেই সুফী সাহেবের আগমন তার রুমে। সাথে ঐন্দ্রিলা। নিশিতা রুম গুছিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। বাবা-মা’কে একসাথে রুমে ঢুকতে দেখে আন্দাজ করতে পারলো কি জন্য এসেছেন তাঁরা। তবে রিঅ্যাক্ট করলো না। যদিও শাফায়াতকে কেন এ বাড়িতে আসার অনুমতি দেওয়া হলো, সেজন্য একটু রেগেও ছিল মনে মনে।

সুফী সাহেব গত কিছুদিন মেয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেননি। সেটা ঐন্দ্রিলাও লক্ষ্য করেছেন। অবশ্য, নিশিতাও রুম থেকে খুব একটা বের হয়নি। তবে ডিনারে সুফী সাহেব পারিবারিক আলোচনা পছন্দ করেন। গত কিছুদিনে সেটাও কেমন যেন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছিল। যতই বলা হোক না কেন মেয়েরা চিরদিনই বাবার রাজকন্যা, বিয়ের পর একজন মেয়ের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজনের স্ত্রী, অন্য সব পরিচয়ই তখন গৌণ হয়ে পড়ে। তাই নিশিতার নিজের সংসার ফেলে রেখে দিনের পর দিন পার করাটা সুফী সাহেবের কাছে মোটেও ভালো ঠেকেনি। বাবা হিসেবে মেয়ের পাশে থাকাটা তার কর্তব্য, সেটা মানেন। তবে নিশিতারও একটা আলাদা জীবন আছে, দায়িত্ব আছে, পরিচয় আছে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের একটি, বিয়ে পরবর্তী প্রথম বছর। স্বামী-স্ত্রী’র বোঝাপড়া পোক্ত হওয়ার জন্য, ভালোবাসা গভীর হওয়ার জন্য, নিজেদের একে অপরের কাছে পুরোপুরি জানার জন্য এই সময়টা সবচেয়ে জরুরী। এই সময়ে স্বামী-স্ত্রী’র যতোটা সম্ভব একসাথে থাকাটা জরুরী। অথচ এই সময়ই কিনা শাফায়াত-নিশিতা একে অপরের থেকে দূরে পড়ে আছে?

শাফায়াত ! ওর কথা মনে হলেই সুফী সাহেব নিজের ক্ষোভ টের পান। আবার আফসোসও হয়। ছেলেটার যে শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে, সেটা বিশ্বাস করেন তিনি। আবার নিজের মেয়ের কথা মনে হলে ভাবনার বৈপরীত্যও কাজ করে। এমন কিছু তো দুঃস্বপ্নেও আশা করেননি। মেয়েকে সুখী দেখতে চেয়েছিলেন। শাফায়াত ছেলে হিসেবে যথেষ্ট দায়িত্ববান পরিবারের প্রতি। সেটা লক্ষ্য করেছেন ইতোমধ্যে। কিন্তু তার মেয়ের সম্মান তো রাখতে পারলো না শাফায়াত। নিজের স্ত্রীকে এভাবে অবহেলা করে, অসম্মান করে কিভাবে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে দাবী করতে পারবে সে? সৃষ্টিকর্তাকেই বা কি জবাব দিবে সে? একবারও ভাবলো না ছেলেটা? – দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সুফী সাহেব।

তবে সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ভেবে-চিন্তেই নিতে হবে। সারাজীবনের ব্যাপার। নিশ্চয়ই নিশিতা কিছু ভেবেছে। সেটা জানার জন্যই আজ মেয়ের কক্ষে আগমন। ঐন্দ্রিলাও ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেয়াইনের আসার সংবাদে কিছুটা আশংকাও কাজ করছে। কি বলবেন তাঁরা? আদৌ কি সব ঠিক হবে নাকি অন্য কিছু অপেক্ষা করছে? বেয়াইন যতোই নিজের আগ্রহ দেখাক না কেন, শেষ পর্যন্ত সবকিছু শাফায়াত-নিশিতা’র ওপরই নির্ভর করছে।

নিশিতা’কে পাশে বসতে ইশারা করলেন তিনি। কাছে এসে বসার পর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সুফী সাহেব বললেন,

– ‘আমাদের ওপর রাগ করে আছো, মামনি?’ – সস্নেহে জিজ্ঞেস করলেন।
– ‘তোমাদের ওপর না, বাবা। আমার নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে। এত ঘটনার পরও যখন তোমরা শাফায়াতকে অনুমতি দিতে পারলে এ বাসায় আসতে, একবারও আমার কথা ভাবলে না, আর কি বলবো !’ – নিশিতার চাপা ক্ষোভ টের পেলেন ঐন্দ্রিলা।
– ‘এমন কিছু না রে, মা। বেয়াইন’কে তো আর সরাসরি মানা করা যায় না। যতই হোক, তুমি এখনও তার ছেলের বউ। তবে কথা তাদেরকে শুনতে হবেই, এত অন্যায় মুখ বুজে মানা সম্ভব না। একটু ধৈর্য ধরো, মামনি’ – বোঝানোর চেষ্টা করলেন ঐন্দ্রিলা।

নিশিতা জানে, এই সমাজ এখনও মেয়েদের পরিবারকে ছেলেদের পরিবারের চাইতে নীচু অবস্থানে দেখে। চাইলেই মেয়েদের পরিবার কঠোর অবস্থানে যেতে পারে না যদি মাত্রাতিরিক্ত কোন জটিলতার সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে তার বাবা-মাও ব্যতিক্রম নয়। তবে আত্মসম্মানের চাইতে বড় কিছুই নেই। সেটা সে কোনভাবেই বিসর্জন দিবে না। দরকার হলে আরও সময় নিবে। শাফায়াতকে তার ভুল সত্যিকারভাবেই বুঝতে হবে।

সুফী সাহেব মুখ খুললেন,

– ‘তোমাকে আমি শুরু থেকেই এই ব্যাপারে কোনভাবে জোর করিনি। তোমার মা’য়ের ব্যাপারটা আলাদা। মা’য়েরা মানসিকভাবে সন্তানদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অনেক কিছুতেই কম্প্রোমাইজ করতে চায়। আমি তেমন নই। আমার কাছে তোমার সম্মানটাই বড়। ওদেরকেও কিন্তু বলে এসেছি, তোমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যদি সত্যিই মনে করো ফিরবে না, ওনারা আসলে জানিয়ে দিও। আমাদের আপত্তি থাকবে না। আমি জানি, এই সমাজ বিচ্ছেদকে সহজভাবে নেয় না। পরিবারের সবাইও ব্যাপারটা ভালোভাবে নিবে না। হয়তো তোমাকেই দায়ী করবে। তবে নিজেকে ছোট করে বেঁচে থাকার চাইতে স্বাধীনভাবে থাকাই ভালো।’ – সুফী সাহেব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন খানিকটা।

বাবাকে ছোট থেকে একটু বেশীই ভালোবাসে নিশিতা। আজ যেন নতুন করে আরও একবার মানুষটাকে চিনলো সে। স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে বিপরীতে দাঁড়িয়ে যে সাহস তিনি আজকে দিলেন, নিশিতা ফিরে যাক বা যাক, এই সাহস তার আজীবনের সঙ্গী হিসেবে থেকে যাবে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ তার বুকে মাথা রাখলো যেন সেই ছোট্ট নিশিতা।

তবে বাবা-মেয়ের মধুর মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা ঠিক স্বস্তি পেলেন না। সুফী সাহেব মেয়েকে বুঝিয়ে রাজী করাবেন, এমন একটা ক্ষীণ আশা থাকলেও ভালো করেই স্বামীকে জানেন। একবার যদি কিছু ইগোতে নিয়ে নেন, সেখানে থেকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে চান না। স্বামীর সামনে যদিও নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করলেন, তবে ভেতরের ক্ষোভ অল্প হলেও বেরিয়ে এলো,

– ‘তুমি তো দেখছি মেয়ের সংসারটা খাবে ! এভাবে সবকিছু ছেড়ে দেয় কেউ সন্তানদের উপর? বাবা-মা হিসেবে কি আমাদের কিছুই করার নেই? কোথায় মেয়েকে রাজী করাবে যেন এমন বাড়াবাড়ি আর না করে সেখানে তুমি..?’ – কথা শেষ করতে পারেন না ঐন্দ্রিলা।
– ‘যে ভুল জামাই করেছে, ভাগ্য ভালো ওকে আমি চড় মারি নি। কত বড় সাহস সে দেখিয়েছে, ভাবতে পারো?’ – একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন সুফী সাহেব।

নিশিতা কথাটা শুনে কিছুটা চমকে উঠেই একটু সরে গেলো বাবার কাছ থেকে। মাথা নিচু করে মৃদু গলায় বললো,

– ‘এসব কথা থাক, বাবা। মা, তুমিও থামো।’

মেয়ের মৃদু অথচ দৃঢ় কণ্ঠে সুফী সাহেব বুঝলেন, মেয়ে তার স্বামীর প্রতি এখনও অনেকটাই দুর্বল, যতোই তার অভিমান বা রাগ থাকুক না কেন।

তবে ঐন্দ্রিলা থামলেন না,

– ‘থামবো কেন? ওদেরকে আমরা যা বলার তা অবশ্যই বলবো। তবে তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে, মামনি। নইলে এমন ঘটনা আরও ঘটবে। ওদেরকে যেহেতু একবার বুঝিয়েছো তুমি একা নও, তোমার সাথে আমরা আছি, জামাই আর এমন করবে না, আশা করি।’

নিশিতা কোন উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো। সুফী সাহেব খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন মেয়ের দিকে। এরপর ঐন্দ্রিলা’কে চোখের ইশারায় উঠতে বললেন। মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

– ‘আমরা তোমার ভালো চাই সবসময়, মামনি। তবে তোমাকে নিজের ভালোটা বুঝতে হবে। সেই বয়স তোমার হয়েছে। শাফায়াতের সাথে আমি সহজ হতে পারবো কিনা এত অপমানের পর, সেটা জানি না তবে তুমি যদি সত্যিই তাকে ভালোবেসে থাকো, সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিও। আফসোস নিয়ে জীবন কাটানোর মতো শাস্তি দ্বিতীয়টি নেই।’ – বলেই বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। ঐন্দ্রিলাও তাঁকে অনুসরণ করলেন।

একা রুমে নিশিতা নিঃশব্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। নিজের মনের সাথে চলমান নিরন্তর যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তার জানা নেই। দ্বিতীয় সুযোগ দিলেই কি শুধরাবে শাফায়াত? নাকি আরও বড় কোন আঘাত অপেক্ষা করছে তার জন্য? তিক্ততা দিয়ে যে সম্পর্কের শুরু, তা কি শরীর ছাপিয়ে মনের খোঁজ করবে কোনোদিন?

Aditya Kingshuk

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here