হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৯

0
374

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৯
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
সাকিব আজকেও আরশির ভার্সিটির সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে, আরশির সাথে দেখা করার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেল। প্রতিদিনকার মতো আরশি আর রুহি দু’জনে গল্প করতে করতে একসাথে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলো। সেদিনকার মতো আজকেও রুহি আরশির আগে সাকিবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আর সেটা আঙ্গুল ইশারায় আরশিকে দেখিয়ে বললো,
-“ওই দেখ দুলাভাই আজকেও তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।”

আরশি সামনে তাকিয়ে দেখে সাকিব রাস্তার ওপাশে একাকি দাঁড়িয়ে আছে। সাকিবকে দেখে আরশি আর রুহি রাস্তা পারাপার হয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এরপর আরশি বললো,
-“কি ব্যাপার আপনি এখানে আজকেও!”
-“আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম।”
-“কিন্তু সেদিন না দেখে করে গেলেন।”
-“আরে এমনটা কি কোথাও লিখা আছে যে তোর সাথে উনি ২-১ দিন পর পর দেখা করতে পারবেন না? ভাইয়া আসছেন তোর সাথে দেখা করতে, আর তুই উনার সাথে এমনভাবে কথা বলছিস যেন উনার আজ এখানে আসাটা ঠিক হয়নি।”
-“তোকে এখন কথা বলতে বলেছে কে? সবসময় পাকনামি না করলে হয়না?” রুহির কানে কানে কথাটা বললো আরশি।
-“আমি কি আজ দেখা করতে এসে ভুল করে ফেললাম নাকি? না মানে এখন কি আপনারা কোথাও যাবেন নাকি?”
-“আরে ভাইয়া না, আমরা আবার কোথায় যাব? চলেন আজকে আমিও আপনাদের সাথে যাব।”
-“তুই আমাদের সাথে গিয়ে কি করবি? আর আমি কি একবারও বলেছি যে আমি উনার সাথে কোথাও যাব?” রুহির কানে ফিস ফিস করে কথাটা বললো আরশি।
-“আরশি, আপনার কোনো সমস্যা হলে বলতে পারেন আমি চলে যাব।”
-“না না আমার সমস্যা হবে কেন? চলুন কোথায় যাবেন।”
-“আজকে আপনাদের নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যাব। ওইদিকেই কিছুদিন আগে একটা নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে। ওখানকার বিরিয়ানি অনেক সুস্বাদু, আমি নিজেও খেয়েছি একবার। চলেন আজকে আপনাদেরকে ওই রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি খাওয়াব।”
-“কোনো খুশির খবর আছে নাকি ভাইয়া? না মানে হঠাৎ আমাদেরকে বিরিয়ানি খাওয়াতে চাচ্ছেন যে?”
-“নাহ কি খুশির খবর হবে? এমনিই আপনাদেরকে বিরিয়ানি খাওয়াতে মন চাইল তাই বললাম।”
-“ওহ আচ্ছা। বাই দ্যা ওয়েহ আমাদের আরশির কিন্তু বিরিয়ানি অনেক ফেভারিট।”
-“ওহ তাই নাকি!”
-“জি ভাইয়া।”
-“ওকে চলেন তাহলে এবার যাওয়া যাক।” এই বলে সাকিব সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। তার পিছু পিছু রুহিও আরশিকে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।
-“এই তুই শুধু শুধু মিথ্যা বললি কেন যে বিরিয়ানি আমার ফেভারিট?” আরশি কটমট করে রুহির কানে কানে বললো কথাটা।
-“যাতে এই কারণে প্রতিদিন ফ্রিতে বিরিয়ানি খেতে পারি। এবার আর কথা না বলে চুপচাপ হাঁটতে থাক।” এই বলে রুহি নিজের মতো হাঁটতে লাগলো। আরশিও আর কিছু না বলে তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো।
.
আরশি আর রুহি সাকিবের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে আর একে অন্যের সাথে গল্প করছে। এমন সময় রুহি সাকিবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “তা ভাইয়া আপনি কি আমেরিকা যাওয়ার ভিসা পেয়ে গেছেন নাকি এখনো কোনো কাজই শুরু করেননি?”
-“নাহ কাজ শুরু করে ফেলেছি। এখন ভাগ্য যদি ভালো থাকে আশা করা যায় ৩ মাসের মধ্যেই ভিসা পেয়ে যাব।”
-“তা ভিসা পেলেই কি আমেরিকা চলে যাবেন? না মানে আমেরিকা যাওয়ার বিয়ে করে যাবেন না?”
-“ইচ্ছা তো আছেই, তবে আমার একার ইচ্ছা দিয়ে তো হবে না। আপনার বান্ধবীও তো ইচ্ছা থাকা লাগবে তাইনা?” আরশির দিকে তাকিয়ে বললো কথাটা।
-“হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক। কিরে আরশি তুই চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল।”
-“কি বলবো?”
-“কি বলবো মানে? ভাইয়া তোকে বিয়ে করতে রাজি এবার তুই বল তুই উনাকে বিয়ে করতে রাজি আছিস কি-না।”
-“রুহি তুই একটু বেশিই পাক*নাকি করে ফেলছিস কিন্তু। এইসব বিষয়ে তোকে কথা বলতে বলেছে কে?” রুহির কানে কানে বললো কথাটা।
-“তুই কিছু বলছিস না দেখেই তো আমি কথা বলছি। ঠিক আছে যা আমি আর কথা বলবো না, তোরা তোরাই কথা বল।”
-“কি ব্যাপার আপনারা কি ফুসুর ফুসুর করছেন?” সাকিব জিজ্ঞেস করলো কথাটা।
-“না মানে বলছি যে এখানকার বিরিয়ানিটা আসলেই অনেক সুস্বাদু।” আরশি বললো।
এরপর কেউ আর কোনো কথা না বলে নিজের মতো করে খাবার খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সবার খাওয়া শেষ হলে সাকিব সবার জন্য আইসক্রিম অর্ডার দিল। আইসক্রিম অর্ডার দিয়ে সবাই চুপ করে বসে আছে এমন সময় সেই রেস্টুরেন্টে ফারহান এসে ঢুকলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকে ফারহান চারপাশে তাকিয়ে খালি টেবিল খুঁজতে লাগলো এমন সময় তার চোখে পরলো একটা টেবিলে আরশি রুহি আর একটা ছেলে বসে আছে। ছেলেটাকে দেখে ফারহানের কিছুটা চেনা চেনা মনে হলো কিন্তু ছেলেটাকে সে চিনতে পারলো না। এরপর মনের মধ্যে খানিকটা সংকোচ নিয়ে ফারহান ধীরে ধীরে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

-“আরে আরশি তুই এখানে! রুহিও যে!”
আচমকা কারও গলার আওয়াজ পেয়ে আরশি, রুহি আর সাকিব তিনজনেই সামনের দিকে তাকালো। দেখলো তাদের সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। ফারহানকে এখানে দেখে আরশি কিছুটা অবাক হলো বটে তবে সাথে সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে উঠলো, “আসলে উনি (সাকিবকে দেখিয়ে) আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছেন। তা তুমি এখানে কেন?”

-“এই রেস্টুরেন্টে দু’জন ডিলার আসবেন উনাদের সাথে অফিসের একটা কাজের ডিল করতে এখানে আসলাম। তা উনি কে? দেখে কেন জানি চেনা চেনা মনে হচ্ছে।” সাকিবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কথাটা।

-“উনি আসলে ইয়ে মানে উনি…”

-“কি হলো উনার পরিচয় দিতে এতো ভনিতা করছিস কেন?”

-“ভনিতা করবে না ভাইয়া? উনি কি আর যেই সেই মানুষ নাকি? উনি আমাদের আরশির ফিউচার হাজবেন্ড আপনি কি এটা জানেন না নাকি? আর সেদিনও তো আপনি উনাকে একবার দেখেছিলেন এরপর কি আর কখনো আপনাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি?” আরশি কিছু বলার আগেই রুহি বলে উঠলো কথাগুলো।

-“উনার সাথেই তাহলে মামা তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছেন?” কপালে খানিকটা রাগের আভা ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করলো ফারহান।

ফারহানের কথায় আরশি কিছু না বলে শুধু দু’বার মাথা উপর নিচ করলো। আরশির ইশারায় দেওয়া উত্তরটা পেয়ে ফারহান একবার পিছন ফিরে নিজের ভিতরের রাগটা কন্ট্রোল করলো। এরপর আবার সামনে ফিরে টেবিলের মধ্যে জোরে একটা ঘুষি মে*রে সাকিবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “দেখেন আপনাকে একটা সোজাসাপটা কথা বলে দেই, আমি আরশিকে ভালোবাসি। তাই আপনি শুধু শুধু আমাদের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবেন না প্লিজ। সময় থাকতে আরশির থেকে দূরে সরে যান।”

ফারহানের এহেন কথা শুনে আরশি আর রুহি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল যেন। আরশি কখনো ভাবতেই পারেনি যে ফারহান এমন জায়গার মধ্যে সাকিবের কাছে এই কথাগুলো বলবে। এদিকে ফারহানের কথাগুলো শুনে সাকিব একটুও অবাক হলো না। বরং সে আরও নিজের হাত দুটো ভাজ করে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে স্বাভাবিকভাবে বললো, “যদি না যাই?”

-“তাহলে আমি নিজেই যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিব। এই তুই চল বাসায়, অনেক সহ্য করেছি আর না। এবার মামা-মামীর কাছে সবকিছু বলতেই হবে।” এই বলে ফারহান আরশির হাত চেপে ধরে তাকে টানতে টানতে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসলো। এরপর আরশিকে তার গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। এরপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আরশিদের বাসার দিকে রওয়ানা দিল।

প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে ফারহান আরশিদের বাসার কাছে চলে আসলো। এরপর ফারহান গাড়ি থেকে নেমে আরশিকে বের করে তার হাত চেপে ধরে তাকে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে সোজা ডাইনিং রুমে চলে আসলো। ওইসময় আমজাদ হোসেন দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য অফিস থেকে বাসায় এসেছেন। আচমকা আরশির সাথে ফারহানকে বাসায় দেখে তিনি কিছুটা চমকে উঠলেন। এরপর যখন দেখলেন ফারহান আরশির হাত চেপে ধরে আছে তখন তিনি বলে উঠলেন, “কি ব্যাপার তুমি এইসময় এখানে! আর এভাবে আরশির হাত চেপে ধরে আছ কেন?”

-“আগে বল তুমি আরশিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এইভাবে উঠে পরে লেগেছ কেন?”

-“মানে?”

-“সাকিব নামের একটা ছেলের সাথে নাকি তুমি আরশিকে বিয়ে দিতে চাচ্ছ?”

-“হ্যাঁ, তো কিছু হয়েছে?”

-“ওই ছেলেটার সাথে আরশির বিয়ে দেওয়া যাবে না।”

-“কেন?” কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলেন আমজাদ হোসেন।

-“কারণ আমি আরশিকে ভালোবাসি। তাই আমাকে রেখে অন্য কারও সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করবা না।”

-“মানে কি!”

-“মানে খুবই সোজা। আমি আরশিকে সেই ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করি। শুধু পছন্দই করি না যবে থেকে ভালোবাসা জিনিসটা বুঝেছি তখন থেকেই তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। তাই আমাকে রেখে আরশিকে অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়ার চিন্তাও করবা না, নাহলে…”

-“নাহলে? নাহলে কি বল?”

-“নাহলে আমি ভুলে যাব যে তুমি আমার মামা।”

-“তার মানে কি তুমি আমায় মা*রবে?”

-“নাহ, তোমারই সামনে তোমার মেয়েকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাব। আর কাজি অফিসে গিয়ে তাকে বিয়ে করে নিব।”

-“ফারহান, তুমি কিন্তু আমার সাথে চরম বেয়াদবি করছ। আমি কিন্তু এইসব কথা আপাকে জানাব।”

-“তার কোনো প্রয়োজন নেই। আজকে সন্ধ্যার পর আমি এমনিতেই আম্মু-আব্বুকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসবো। তখন নাহয় আরামসে বসে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলিও। এখন তাহলে আমি আসি মামাশ্বশুর।” বলেই ফারহান আরশিদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here