হৃদ_মাঝারে_তুমি #পর্বঃ- ২৭

0
285

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্বঃ- ২৭
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
-“কি ব্যাপার, এতো রাতে একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন যে?”

আচমকা কারও গলার আওয়াজ পেয়ে নীলা পিছন ফিরে তাকালো। দেখলো তার পিছন বরাবর ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। ফারহানকে দেখে নীলা বলে উঠলো, “ভালো লাগছিল না তাই ভাবলাম একটু ছাদে এসে হাঁটাহাঁটি করি।” বলেই নীলা আগের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

ফারহান এবার কিছুটা এগিয়ে এসে নীলার পাশাপাশি দাঁড়ালো আর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো, “মন খারাপ?”

-“নাহ মন খারাপ কেন হবে।”

-“তাহলে আপনার চোখে পানি কেন?”

-“পানি! কোথায় পানি?” বলেই নীলা তাড়াহুড়ো করে তার চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে ফেললো।

-“আপনার আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে তাইনা?”

নীলা নিশ্চুপ।

-“ওইদিনের জন্য আমি সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে আপনার আম্মুর কন্ডিশন এতো খারাপ পর্যায়ে আছে, বুঝতে পারলে আমি…”

-“আপনি আমাকে ছুটি দিতেন তাইনা? কিন্তু তখন আমাকে ছুটি দিলেও কোনো ফায়দা হতো না। কেননা আমি ওইসময় আম্মুর কাছে গিয়ে উনাকে মূহুর্তের মধ্যেই সুস্থ করে ফেলতে পারতাম না। তাই আপনার কাজের জন্য আপনাকে অনুতপ্ত হয়ে সরি বলা লাগবে না।”

নীলার কথাগুলো শুনে ফারহান আর বলার মতো কিছু পেল না। এরপর দু’জনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। নীরবতা ভেঙে একসময় আবার ফারহান বলে উঠলো, “আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

-“আমি জানি আপনি আমাকে কি জিজ্ঞেস করবেন। এটাই তো যে আমার আম্মুর ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে এটা আমি আপনাদের কাউকে জানালাম না কেন তাইতো?”

-“আমি যে এই কথাটাই জিজ্ঞেস করবো কীভাবে বুঝলেন?”

-“আম্মু মা*রা যাওয়ার পর আশেপাশে যত চেনা মানুষ ছিল তারা প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে এই একটা কথাই বলাবলি করছিল সেটা থেকেই আন্দাজ করলাম আপনিও হয়তো এখন এই কথাটাই জিজ্ঞেস করবেন। আসলে অনেকদিন ধরে আম্মু অসুস্থতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছিলেন। আমি অনেকবার উনাকে ডাক্তার দেখাতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আম্মু কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যেতে রাজি নন। আর আমিও সারাদিন অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আম্মুকে ডাক্তার দেখানোর কথা ভুলে যাই। কিন্তু একদিন আম্মুকে অনেক জোরাজুরি করে উনাকে নিয়ে একটা ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার আম্মুকে চেক করে জানান আম্মুর নাকি ব্রেইন ক্যান্সার। আর এটা এখন এমন পর্যায়ে এসে ধরা পরেছে যে এর কোনো চিকিৎসা করালেও আম্মু ঠিক হবেন না। সেদিন বাসায় এসে আম্মু আমাকে বলেন উনার ব্রেইন ক্যান্সারের কথা যেন আমি কাউকে না জানাই, বিশেষ করে আপনার আব্বুকে। কেননা এই কথাটা যদি আপনার আব্বু শুনতেন তাহলে আংকেল শুধু শুধু আম্মুর চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ করে যেতেন। কিন্তু এতে তো আম্মু আর সুস্থ হতেন না। কেননা ডাক্তারও বলেছে আম্মুর হাতে আর বেশি সময় নেই। আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিনই আম্মু বেঁচে থাকবেন।” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে নীলা থামলো।

-“আপনার আম্মুর ব্রেইন ক্যান্সারটা কবে ধরা পরেছিল?”

-“বিশ পনের দিন আগে।”

-“ওহ।”

এরপর দু’জনে আরও কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। নীরবতা ভেঙে আবার ফারহান বলে উঠলো, “তা রাতের খাবার খেয়েছেন?”

-“জি খেয়েছি।”

-“ঘুমাবেন না?”

-“ঘুম আসলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যাব।”

-“আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই, থাকেন আপনি।” বলেই ফারহান ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে আসলো।

ফারহান নিজের রুমে এসেই ঘুমিয়ে পরলো। এদিকে নীলাকে রুমে না পেয়ে রোকসানা বেগম ছাদে গিয়ে নীলাকে খুঁজতে লাগলেন। ছাদে আসতেই তিনি কারও ভাঙা গলার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। কান্নার আওয়াজটা যে নীলার এটা তিনি ভালো করেই বুঝে গেলেন। ছাদের চারদিকে তাকিয়ে নীলাকে খোঁজার পর এক জায়গায় নীলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি নীলার কাছে চলে আসলেন।

-“কি হয়েছে মা আম্মুর কথা বুঝি খুব মনে পরছে?” পিছন থেকে নীলার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন কথাটা।

আচমকা ঘাড়ে কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে নীলা বেশ চমকে উঠলো আর সাথে সাথে নিজের চোখের পানি মুছে পিছনে ফিরে তাকালো। দেখলো রোকসানা বেগম তার দিকে স্নেহময় চাহনিতে তাকিয়ে আছেন। রোকসানা বেগমের এমন চাহনি দেখে উনার মধ্যে নীলা নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেল যেন। তারপর কি মনে করে আবার চোখের পানি ছেড়ে নীলা রোকসানা বেগমকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। রোকসানা বেগম নীলার এমন কাজে কিছুটা অবাক হলেন তার পাশাপাশি কিছুটা কষ্টও পেলেন। নীলার মাথায় এবার তিনি হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

-“সবাইকেই একদিন ম*রতে হয়, এটা যে এই দুনিয়ায় থাকাকালীন উপরওয়ালারই নিয়ম রে মা। তবে মৃত মানুষের জন্য সারাদিন কাঁদলে কি সেই মানুষটাকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে? বরং তুমি তোমার মায়ের জন্য বেশি বেশি করে দোয়া কর যাতে উনার পরকালীন জীবনটা সুন্দর আর শান্তিময় হয়।”

রোকসানা বেগমের কথাগুলো শুনে নীলা কিছুটা শান্ত হলেও তার কান্না থামাতে পারলো না। রোকসানা বেগম এবার নীলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন, “অনেক রাত হয়েছে, এবার ঘুমাতে চল। তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমারও ঘুমানো লাগবে।”

-“আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন আমার ঘুম আসলে আমি গিয়ে যাব।” ভাঙা গলায় কথাটা বললো নীলা।

-“এইখানে থাকলেই তুমি তোমার আম্মুর কথা ভেবে শুধু কান্না করবা তার চেয়ে ভালো রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর। ঘুমিয়ে পরলে আর এতকিছু ভাবনায় আসবে না আর মনটাও ভালো থাকবে। চল এবার।” বলেই তিনি নীলাকে টেনে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে আসলেন।

নীলাকে তার রুমে নিয়ে এসে রোকসানা বেগম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। এরপর তিনিও নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলেন।

.
-“ফারহান, আমি চাচ্ছি তোমার সাথে নীলার বিয়ে দিতে। এখানে তোমার মত কি?”

সকালবেলা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছিল। নীলা তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। এমন সময় হঠাৎ রফিক আহমেদ ফারহানকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে উঠলেন। রফিক আহমেদের কথা শুনে ফারহান আর রোকসানা বেগম বেশ চমকে উঠলেন। ফারহান এবার রফিক আহমেদের প্রতিউত্তরে বলে উঠলো, “মানে কি! আমি কেন ওই মেয়েকে বিয়ে করবো? আর ওই মেয়ের কি বিয়ের বয়স হয়েছে যে তুমি আমার সাথে ওর বিয়ে দিতে চাচ্ছ।”

-“নীলার বিয়ের বয়স তো হয়েছেই। মেয়েটা এখন আমাদের বাসায় থাকবে। এক বাসার মধ্যে দুজন অবিবাহিত অচেনা যুবক-যুবতী থাকছে এটা বাহিরের মানুষ জানলে কি ভাববে বল তো?”

-“এইখানে ভাবার কি আছে? মেয়ে এতিম বলে তুমি তাকে বাসায় থাকার জায়গা দিয়েছ। এখন মেয়েটা অবিবাহিত যুবতী বলে বাহিরের মানুষজন মেয়েটাকে আর আমাকে নিয়ে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমাদের কি আসে যায়? এখন এই মানুষদের ভয়ে তুমি ওর সাথে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছ এটা কেমন কথা?”

-“আহা মানুষদের ভয় পাব কেন? এই বিষয়টা বাহিরে জানাজানি হলে…”

-“বাহিরে জানাজানি হলে কিচ্ছু হবে না।”

-“তোর বাবা কিন্তু ঠিকই বলছেন ফারহান। একটা এতিম মেয়ে আমাদের বাসায় থাকছে এটা বাহিরের মানুষরা জানলে বিষয়টাকে অন্যভাবে নিতে পারে। তাই আমি বলি কি তুই নীলা মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা।”

-“তোমরা থাম তো এবার, যখন যার সাথে মনে চায় তার সাথেই বিয়ে দিতে উঠে পরে যাও। তোমরা পেয়েছটা কি আমায়? চিনি না জানি না একটা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য বলছ তাও মানুষদের ভয়ে, কেন মানুষরা কি আমাদেরকে উপার্জন করে খাওয়ায়? শুন তোমরা যাকেই বল না কেন আমি কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না। কারণ আমি একজনকে ভালোবাসি।” অনেকটা রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বললো ফারহান।

-“ভালোবাস মানে! কাকে ভালোবাস তুমি? কে সে?” বেশ চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন রফিক আহমেদ।

ফারহান এবার কিছুটা বিরতি নিয়ে বলে উঠলো, “আরশি, আরশিকে ভালোবাসি আমি। আর বিয়ে করলে তাকেই বিয়ে করবো। এবার তোমরা দু’দিন পর পর আমার বিয়ের জন্য কষ্ট করে মেয়ে দেখা বন্ধ কর ওকে?” কথাগুলো বলেই ফারহান নাস্তার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালো। এরপর সে যেই পিছনে ফিরে তার রুমের দিকে যাবে তখনই সে দেখলো নীলা দরজার সাথে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনের সাথে দু’জনের চোখাচোখি হলে নীলা তার চোখ নামিয়ে নিল আর ফারহান সেখান থেকে তার রুমে চলে আসলো। রুমে এসে রেডি হয়ে ফারহান অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here