দমকা_হাওয়া,০৫,০৬

0
367

#দমকা_হাওয়া,০৫,০৬
#ঝিনুক_চৌধুরী
#পর্ব-৫

পিউর বাবা আহমেদ সাহেব যখন স্বচ্ছদের বাসায় ঢুকলেন তখন রান্না অনেকটাই শেষের দিকে। সুন্দর শাড়ি পরে হাসি মুখে এগিয়ে যান জেসমিন আরা। কিন্তু আহমেদ সাহেবের ড্রাইভার একের পর এক মিষ্টির প্যাকেট এনে ডাইনিং ভরে ফেললে তার ভ্রুজোড়া কুচকে যায়। আবার সেই বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বিলি করার ঝক্কি! মিজান সাহেব বাহারি মিষ্টি দেখে তেলতেলে হাসি হাসেন।
ড্রইংরুমে অল্প স্বল্প গল্প চলে একেবারে হুট করে আত্মীয় হয়ে ওটা দুই পরিবারের। কিছুটা বিব্রতও দুপক্ষ।
স্বচ্ছ খেয়াল করে পিউ নিচু হয়ে গোপনে আলতো করে চোখের জল মুছে নিল। ওদিকে আহমেদ সাহেবও সবার অগোচরে চোখের জল মুছলো। বাপ মেয়ে একই স্বভাবের। অনুভূতি লুকাতে চায়।
হঠাৎই স্বচ্ছর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠল। পিউ কী তাহলে স্বচ্ছকে এড়িয়ে চলছে নিজ অনুভূতি লুকানোর জন্যে? তবে কি পিউ স্বচ্ছকে গোপনে ভালোবাসে?

খাওয়া পর্বে আহমেদ সাহেব সব বাদ দিয়ে কেবল হাঁসের মাংসই বার বার পাতে তুলে নেন। তা দেখে মিজান সাহেব উসখুস করেন।
জেসমিন আরা ভাবেন পিউ হয়তো তার বাবাকে মানা করবে। এমন গরমে এতো হাঁসের মাংস খাওয়া তো ভাল নয়। অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু পিউ নিজের মতোই কুট কুট করে খাচ্ছে। এই মেয়ে হাঁসের উপকারীতা বা অপকারীতা সম্পর্কে আদৌ জানে কিনা সন্দেহ।
শেষে জেসমিন আরা নিজেই ভদ্রতা বজায় রেখে বলেন, বেয়াই সাহেব শুধু হাঁসের মাংস খেলে হবে? অন্যান্য আইটেমও তো চেখে দেখতে হবে?
-আপা, আপনার হাতের রান্না দারুণ। বহু দিন পর তৃপ্তি নিয়ে কিছু খাচ্ছি। পরবর্তীতে অন্যান্য আইটেম খাবো। আজ এটাই তৃপ্তি ভরে খেতে দিন। আমি আরেকটু নিলাম।
মিজান সাহেব হতাশ মনে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে জোরে শ্বাস ফেলেন।
খাওয়া শেষে আহমেদ সাহেব বলেন, আপা আপনাদের দুজনের সাথে আমি একান্তে কিছু কথা বলতে চাই।
জেসমিন আরা স্বচ্ছ ও পিউকে নিজের রুমে যেতে বলেন।
আহমেদ সাহেব পাশে রাখা একটা টুল টেনে স্বচ্ছর বাবা-মায়ের মুখোমুখি বসেন। মিজান সাহেবের দুহাত ধরে বলেন, আমি কঠিন পরিশ্রম করে বড় ব্যবসায়ী হতে পেরেছি কিন্তু ভালো বাবা হতে পারি নি বেয়ান। সবসময় ব্যবসাকে প্রধান্য দেয়ায় পিউর মায়ের জরুরি সময়ে ওর পাশে ছিলাম না। আজ আমার দোষেই আমার মেয়েটা মাতৃহারা। আমি সারাজীবন আমার মেয়ের অপরাধী।
আহমেদ সাহেব ছলছল চোখে বলেন, আমার মেয়েটা খুব সোজাসরল। ওকে জগতের পংকিলতা কখনো স্পর্শ করে নি। ও অনেক কিছুই বোঝে না। আপনারা ওকে দয়া করে সামলে নিবেন। জগত সম্পর্কে অজ্ঞ বলে আমার বন্ধুর ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম। ভেবেছিলাম পরিচিত পরিবেশে মেয়েটা ভালো থাকবে। ছেলে পিউর বেস্ট ফ্রেণ্ড ছিল। কিন্তু অন্তিম সময়ে নয়ন কেন যে এমন করলো আমরা জানি না। বিয়ে করবে না আগে বললেই পারতো। এভাবে বিয়ের দিন হুট করে পালিয়ে যাবে আমরা কেউ ভাবি নি।
চরম দুঃসময়ে আপনার ছেলে উপস্থিত হলো। ওর সাথে কথা বলে আমার মনে হলো এরচেয়ে যোগ্য ছেলে আমার মেয়ের জন্য হতেই পারেনা। যেমন বিনয়ী, তেমন ধীরস্থির কথাবার্তা। জানি এখনও সে ছাত্র, তবে বয়স অনুযায়ী অনেক দায়িত্বশীল। আমার বিশ্বাস পিউ স্বচ্ছর সাথে সুখী হবে।
বেয়ান, আমার মেয়েটাকে কোনোদিন আমি একটা ধমক দেয় নি। ধমক দেয়ার কাজও কোনোদিন করে নি। ওর মন অনেক নরম। আপনারা দয়া করে আমার মেয়েটিকে আপন করে নিবেন। জানি হুট করে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে আমি অপরাধ করেছি কিন্তু মেয়ে জেদ ধরেছিল আজই তার বিয়ে হতে হবে। নিরুপায় ছিলাম বলে মানা করি নি। মেয়ের সব শখ পূরণ করে করে হয়তো না বলতে ভুলে গেছি। আপনাদের কাছে হাত জোর করে বলছি আমার মেয়েটা যদি তার অজান্তে কোনো অপরাধ করে থাকে দয়া করে বকা দিবেন না। আমাকে ডেকে যত ইচ্ছে বকে দিবেন তবু মেয়েটাকে বকবেন না প্লিজ।
মিজান সাহেব বলেন, ছিঃ ছিঃ, কি বলছেন আপনি! পিউ কি মিষ্টি একটা মেয়ে! ওকে কেন বকা দেবো আমরা? তাছাড়া আমরা খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত সুখী পরিবার। পিউ আমাদের পরিবারে অনাদর পাবে না। আপনি নিশ্চিত থাকুন।
আহমেদ সাহেব মিজান সাহেবকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠেন।
মিজান সাহেব অসহায় বোধ করেন। এতো বড় ব্যবসায়ী অথচ কেমন অসহায় সুরে কথা বলছে।
কেবল মেয়ের বাবা বলে কি?
বাবা তো বাবাই হয়। কিন্তু ছেলের বাবা আর মেয়ের বাবার দৃষ্টিভঙ্গি বোধহয় ভিন্ন হয়। মেয়ের বাবারা সবসময় মেনে নেয় তার আদরের রাজকন্যা অন্য ঘরে যাবেই। অথচ ছেলের বাবারা কত দম্ভ নিয়ে চলে। উচ্চ শিক্ষার জন্য কদিন পর স্বচ্ছ দেশের বাইরে যাবে ব্যাপারটা কতই স্বাভাবিক কিন্তু সে যদি বিয়ে করে পিউর বাসায় উঠতো তবে জেসমিন আরা কেন মিজান সাহেব নিজেও অক্কা পেত নির্ঘাত।

______________
স্বচ্ছর পাশে পিউ চুপ হয়ে বসে আছে। চুপ মানে একেবারেই চুপ। কেনো নড়াচড়া নেই। স্বচ্ছ অনেকক্ষণ নীরব থেকে পিউকে খেয়াল করে। বুঝতে পারে স্থির পিউর মনের ভেতরটা অস্থির হয়ে আছে। আলতো করে ওর হাত ধরলে নড়ে ওঠে পিউ তবে চোখ তুলে তাকায় না। ওভাবেই বসে থাকে। গাল বেয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ে।
পিউর নরম হাতটি শক্ত মনোবলে ধরে রাখে স্বচ্ছ। কোনো কথা বলে না দুজন। মাঝে মাঝে একজনের মনের কথা অন্য জনের বুঝে নিতে হয়। কোনো বাক্য বিনিময়ের দরকার পড়ে না।

বিদায় বেলা দুজনার ডাক এলে আহমেদ সাহেব স্বচ্ছকে বুকে জড়িয়ে রাখেন অনেকক্ষণ ।
জেসমিন আরা পিউকে সামনে এগিয়ে দিলে আহমেদ সাহেব নিজ কন্যাকে সময় নিয়ে দেখেন। যেন কতদিন পর এ মুখটি দেখছেন। কপালে চুমু খেয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরেন। নিরবে বাবা মেয়ে কাঁদে। বাকিরা সরে আসে। মেয়ের গালে দুহাত রেখে বলেন ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়েছিস। সুখী হ মামনী। পারলে বুড়ো বাপটাকে ক্ষমা করিস।
_______
ঘুমোতে এসে নিজ বিছানায় গা এলিয়ে জেসমিন আরা বলেন, পিউ মেয়েটা মনে হয় ভালোই, কি বলো?
-হুম।
-ওর মতোই ওর বাবাও ভালো মানুষ, তাই না?
-হুম, তাই তো মনে হলো। তবে খায় বেশি।
জেসমিন আরা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন, আবার ছোটলোকি করছো?
-কি করে ভুলি আমার সাধের হাঁস বেটা একাই সাবাড় করতে চলেছিল।
_______
পিউ জামা কাপড় বদলে বিছানায় শুতে আসে।
স্বচ্ছ জিজ্ঞেস করে, ঘুমিয়ে যাবে এখনি?
-না, বিকালে শুয়েছি তো, এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না।
-পিউ!
-হুম!
-এখানে কেমন লাগছে?
-ভালো।
-আব্বু আম্মু?
-অনেক ভালো।
-আর আমি?
-… ভালো।
-গতকাল এই সময়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
-হুম।
-আমি জানতাম না তোমার বিয়ে হচ্ছিল। ফাইজা জানায় নি আমাকে।
-ফাইজা আপু তো দেশে নেই। নিজেও জানে না। তাছাড়া জানলে কী করতেন?
-হয়তো ……. থেমে যায় স্বচ্ছ। মন যা চায় আসলেই কি তা করতে পারত? পিউকে উল্টো প্রশ্ন করে, আমি যদি না যেতাম তবে তুমি কী করতে?
-সেকেন্ড অপশনে কল দিতাম।
-এতো অল্প সময়ে কেউ আসতো না।
-কেউ না কেউ তো আসতো। আপনিও তো এসেছেন।
-তোমার কয়টা অপশন ছিল?
-পাঁচ টা।
-তাদের নাম কী?
নিশ্চুপ।
-আমি চিনি তাদের? বলো পিউ। আমি জানতে চাচ্ছি।
-কি দরকার? মন খারাপ করবেন।
-কেন, মন খারাপ করবো কেন? তোমার অপশনে কি মাহিন ছিল?
-নাহ, ও তো একটা L ছেলে।
– ‘L মানে?
-লুইচ্চা।
-তাহলে আর কার নাম ছিল?
-আমার ঘুম পেয়েছে। আমি ঘুমালাম।
-তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো, পিউ।
-হ্যাঁ যাচ্ছি।
-কেন?
-আপনি ফালতু বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন।

পিউ পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।

-পিউ, আমি খুব সাধারণ ছেলে। এখনও ছাত্র। আমার নিজের কোনো টাকাপয়সা নেই। আমার পরিবারও তোমাদের মতো বিত্তশালী নয়। তুমি আমাকে জেদের বশে বিয়ে করেছো কি?
নিশ্চুপ।
-প্লিজ উত্তর দাও, পিউ। আমি জানতে চাচ্ছি।
নিশ্চুপ।

পিউর উত্তর না পেয়ে দ্বিধা জড়ানো কণ্ঠে স্বচ্ছ প্রশ্ন করে, আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো তুমি?
পিউ ওপাশ ফিরেই বলে, আমি কিন্তু সর্বপ্রথম আপনাকেই কল করেছি। সো… গুড নাইট।

স্বচ্ছ চুপ হয়ে বসে থাকে।
বিড়বিড় করে বলে, সর্বপ্রথম হতে চাই না আমি । একমাত্র হতে চাই।

চলবে।।

#দমকা_হাওয়া
#ঝিনুক_চৌধুরী
#পর্ব-৬
মিজান সাহেব খেয়াল করলেন পিউ আজ ভোরে উঠেই জেসমিন আরার সাথে কিচেনে কুটকুট গল্প করছে। জেসমিন আরাও ফুরফুরে মেজাজে আছে। ওদিকে স্বচ্ছ দিশেহারা। গম্ভীর, চুপচাপ।
নাস্তার সময় বউ শাশুড়ী মিলেই গল্প করছে, হাসাহাসি করছে। স্বচ্ছ যেন পাশের বাসার অনাকাঙ্খিত মেহমান।
নাস্তা শেষে মিজান সাহেব অফিসের জন্য তৈরি হতে রুমে ঢুকলে জেসমিন আরা পিউর সাথে ড্রইংরুমেই বসে গল্প করেন।
অন্যসময় মিজান সাহেবের অফিস যাওয়া অব্দি জেসমিন আরা তার আগে পিছে থাকে। আজ দুইবার ডেকেও পাত্তা পেলেন না ।
হতাশ হয়ে অনেকটা জোরেই জেসমিন আরাকে রুমে ডেকে আনলেন।
-আমি অফিস যাচ্ছি।
-হুম যাও। ভালো কথা, হাজার খানিক টাকা থাকলে আমাকে দিয়ে যাও তো। আজ পিউকে নিয়ে শপিং যাবো। ওকে কিছু কিনে দিবো।
-স্বচ্ছ যাবে?
-না, ও কেন যাবে? ও পড়ুক, আমরা সময় নিয়ে দেখেশুনে শপিং করবো।
-বিয়ের অনুষ্ঠানের শপিং শুরু করে দিবে নাকি?
-না না, এমনি কিনে দেব। আমি ওর শাশুড়ী না?
মিজান সাহেব ফোঁস করে শ্বাস ফেলেন। জেসমিন আরার কাঁধে হাত রেখে বলেন, মন দিয়ে শোনো জেসমিন। তুমি পিউকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে, ওকে এটা সেটা কিনে দেবে ভালো কথা। ছেলের বউ হিসাবে পিউকে তোমার পছন্দ হয়েছে তা আরো ভালো কথা। কিন্তু তুমি কিছু খেয়াল করেছো?
-কোন ব্যাপারে?
-স্বচ্ছ এবং পিউর সুর তাল কম।
– স্বচ্ছ তো পড়ায় ব্যস্ত থাকে। তাই হয়তো…
-পড়ায় থাকে না থাকতে বাধ্য হয়। তোমার বাধ্য ছেলে অনুমতি ছাড়া বিয়ে করায় নিজেকে অপরাধী ভাবছে। কিন্তু তোমার তো বোঝা উচিত ওদের বিয়ে হয়েছে। ওদের একে অপরকে সময় দেয়া দরকার।
–আমি কি বাধা দিচ্ছি নাকি?
-দিচ্ছো না। কিন্তু পিউকে নিজের কাছে বেশি রাখছো। স্বচ্ছর দিকে একটু মনোযোগ দাও দেখতে পাবে ছেলেটা সারাক্ষণ উসখুস করে। তোমার বেয়াইন ঠিকই বলেছে তার মেয়েটা জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞ। জামাই নিয়ে খবর নাই শ্বাশুড়িকে খুশি করায় ব্যস্ত।
-তুমি বলতে চাচ্ছো পিউ আমাকে খুশি করতে এমন করছে?
-না। মা হারা মেয়ে পিউ, তোমার সঙ্গ সে পছন্দ করছে। কিন্তু আমার ছেলেকে উপেক্ষা করে। এটা তো ঠিক না।
-মাত্র দুদিনের বিয়েতে এতো ঠিক বেঠিক চিন্তা করা লাগবে না। তুমি টাকা দাও নইলে আমি গেলাম।
জেসমিন আরা উত্তরের অপেক্ষা না করে প্রজাপতির মতো উড়ে পিউর কাছে গেলেন।
মিজান সাহেব দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। জেসমিন আরার এমন রূপ দেখেছিলেন তিনি নাতাশা জন্মের পর। তখনকার চোখের ঝিলিক আবার ফিরে এসেছে। এটা ভালো লক্ষন নয়।
_________________
বুয়া এসেছে আজ। পিউকে দেখে বুঝে পাচ্ছে না কে এই মেয়ে। জেসমিন আরাকে জিজ্ঞেস করে যখন জানলো স্বচ্ছ বিয়ে করেছে তখন হাত পা ছড়িয়ে বিলাপ করে কান্না শুরু করলো। কেন তাকে পর ভাবা হলো, একটা কল কেন কেউ দিলো না। এ সংসারে এতবছর কাজ করেও আপন হতে পারেনি, এ জগতে আপন বলতে কেউ নাই, মাবুদ নাই কেউ নাই আপন বলে…. সুরে সুরে কাঁদতে লাগলো।
পিউ দুবার উঁকি দিয়ে দেখে এসেছে। ওর খুব মজা লাগছে। কি টেলেন্ট বুয়া! ইনসট্যান্ট গান বানাচ্ছে।
পিউকে দেখে বুয়ার সুর আরো উর্ধ্বগতিতে ছুটছে।
পিউ এগিয়ে বলল, আমি নতুন বউ, কোনো কাজ পারি না, একেবারে আকাইম্মা, আমার কি হবে গো — এটাকে সুর দিয়ে একটা গান করে দেন না বুয়া।
বুয়া গোল গোল চোখে পিউর দিকে চেয়ে আছে। তার গানের সুর ভেঙ্গে চিঁ চিঁ গলা বের হচ্ছে।
জেসমিন আরা পিউকে ইশারায় সরে আসতে বলেন।

__________
পিউর পাশে বসে জেসমিন আরা খেয়াল করলেন অনবরত ঘামছে পিউ।
– তোমার কি খুব গরম লাগছে ?
– জ্বি, সমস্যা নেই। এ্যাডজাস্ট হয়ে যাবে।
– কিসের এ্যাডজাস্ট? তোমাদের বাসায় গরম নেই বুঝি?
পিউ মাথা নিচু করে হাসে, উত্তর দেয় না।
জেসমিন আরা নিজেদের সীমাবদ্ধতা টের পান। দুই রুমের এসির বিল নিয়েই তাদের হিমসিম খেতে হয়। পিউ হয়তো তা কখনো অনুভবও করে নি।

-তোমাদের সবরুমেই এসি আছে, তাই না? গলার সর নামিয়ে বলেন, তোমার কষ্ট হবে আমাদের মতো সাধারণ পরিবারে এ্যাডজাস্ট করতে।
পিউ হেসে উত্তর দেয়, আপনাদের সঙ্গ আমার খুব ভালো লাগছে। গরমটা একটু কষ্ট দিচ্ছে। তবে সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না।
জেসমিন আরা মলিন হাসেন। অগোচরে নিজের সাজানো সংসারে চোখ বুলান। মধ্যবিত্ত হলেও নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। দুই রুমে এসি থাকাটাও বিলাসিতা বলা চলে। সেখানে পিউর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে নিজেদেরর সীমাবদ্ধতা। পিউর জন্যও মায়া হচ্ছে। পিউ হয়তো চেষ্টা করছে, করবে। কতটুকু পারবে তা সময়ই বলে দেবে।

এরজন্য সমানে সমানে সম্পর্ক করতে বলে সবাই। স্বচ্ছ আবেগে ভেসে বিয়ে করলো কিন্তু পিউকে কতটুকু সুখী রাখতে পারবে, কে জানে।

চলবে।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here