বোধোদয়,পঞ্চম পর্ব
ধারাবাহিক গল্প
কুসংস্কারে বিশ্বাস না করলেও নিজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে বেশ ভালোই গুরুত্ব দেন নিশিতার মা, ঐন্দ্রিলা চৌধুরী। এযাবৎ তার অনুমান খুব কমই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিয়ের পর থেকে যতবারই মেয়ের সাথে তাঁর কথা হয়েছে, নিশিতা তাকে প্রতিবারই আশ্বস্ত করেছে। তবে একজন মা এবং সর্বোপরি একজন নারী হওয়ার সুবাদে নিজের মেয়ের কণ্ঠের চোরা হতাশা ও দুঃখবোধ টের পেয়েছিলেন ঠিকই। এটা সত্য যে নিশিতাকে খুব পছন্দ করে শাফায়াতের মা নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সব দেখেশুনে ঐন্দ্রিলাও খুশী হয়েছিলেন। তবে মেয়ে যে তাকে কিছু ব্যাপারে মিথ্যে বুঝ দিচ্ছে, সেটা ধরতে তাঁর বেশী সময় লাগেনি। বিশেষ করে জামাইয়ের ব্যাপারে বলার সময় মেয়ের কণ্ঠের নিঃস্পৃহতাই বলে দেয় সম্পর্কের শীতলতা। এ ব্যাপারে নিশিতার বাবাকে কিছু শেয়ার না করলেও বেশ কিছুদিন থেকেই তাঁর নিজের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছিলো। ভেবেছিলেন কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েকে দেখে আসবেন। তবে এর আগেই এক অপ্রত্যাশিত ঝড় সব এলোমেলো করে দিলো।
সেদিন রাতে যে সুফী সাহেব চোখের পাতা সহজে এক করতে পারেননি, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন ঐন্দ্রিলা। জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাননি। যদিও স্বামীকে জোর করার স্বভাব তাঁর সেই অর্থে কখনও ছিল না। তবে তাঁর একাকী কষ্টের ভাগীদার হতে না পারার কষ্টও পোড়াচ্ছিল ঐন্দ্রিলাকে। তখন থেকেই কেন যেন অজানা আশংকা চেপে বসেছিলো তাঁর মনে। আবার পরের দিন সাত-সকালে সুফী সাহেবের হঠাৎ বেরিয়ে পড়াটাও স্বাভাবিক লাগেনি তাঁর কাছে। হয়তো গোপন করছেন কিছু। কি হতে পারে সেটা? কোন বিপদ হলো না তো? ঐন্দ্রিলা’র হঠাৎ অসুস্থ লাগতে শুরু করলো।
তবে উত্তর পেতেও খুব একটা অপেক্ষা করতে হলো না তাঁকে। দুপুরের কাছাকাছি সময়ে যখন নিশিতা ও তাঁর বাবা’কে বড় ব্যাগ’সহ পাশাপাশি বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন দরজার ওপাশে, বুঝে নিলেন সব কিছু। নিশিতা যদিও মা’কে দেখে একটু হাসার চেষ্টা করলো, তবে তার অশ্রু টলমল চোখই বলে দিলো সবকিছু। একটু বাদেই মা’কে জড়িয়ে ধরে ভেঙ্গে পড়লো নিশিতা। সব হারানোর বেদনায় ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় যেন আজ পণ করেছে অশ্রুভাণ্ডার নিঃশেষ করার। ঐন্দ্রিলা যদিও স্বভাবগত’ভাবে আবেগী, তবে কোথায় লাগাম টানতে হয়, সেটাও ভালোই জানেন। মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললেন,
– ‘কেঁদো না, মামনি। আমরা তো আছি তোমার পাশে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
বেশ কিছুক্ষণ পর নিশিতার ফোঁপানি কমে এলো ধীরে ধীরে। ইতোমধ্যে সুফী সাহেব চলে গেলেন ভেতরে। যাওয়ার সময় ইশারায় ঐন্দ্রিলাকে বেশী কথা বাড়াতে মানা করলেন। মেয়েকে সামলে নিয়ে তার রুমে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে দেখেন সুফী সাহেব নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁকে রুমে ঢুকতে দেখে বিছানায় এসে বসতে বললেন চোখের ইশারায়। নামাজের আগে কিছুক্ষণ দোয়া পড়া সুফী সাহেবের অভ্যাস। এসময় সাধারণত কারও সাথে কথা বলেন না তিনি। ঐন্দ্রিলার দুশ্চিন্তা বাড়ছিলো। একটু পর সুফী সাহেব দোয়া পড়া শেষ করে ঐন্দ্রিলার পাশে এসে বসলেন। স্ত্রী’র দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। কিভাবে কথাগুলো নিবেন ঐন্দ্রিলা, ভাবতে লাগলেন। নিজ স্ত্রী’র আবেগী স্বভাবের ব্যাপারে ভালো করেই জানেন তিনি। এরপরও বলতে তো হবেই। একটু দম নিয়ে শুরু করলেন,
– ‘শোন, এখন যা বলবো, সেটা শুনে খুব বেশী রিঅ্যাক্ট করা যাবে না। ঠাণ্ডা মাথায় পুরোটা শুনবে। ঠিক আছে?’
– ‘তুমি আগে বলো তো !’ – ঐন্দ্রিলার অধৈর্য কণ্ঠ।
– ‘বলবো। তবে যেটা বললাম, সেটা মাথায় রেখো।’
– ‘আচ্ছা, রাখবো। প্লিজ, বলো। জামাইয়ের সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে? বেয়ান কিছু বলেছেন?’ – একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলেন ঐন্দ্রিলা।
– ‘সমস্যাটা আসলে জামাইয়ের। বেয়াইন যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। তবে যেহেতু সমস্যাটা শাফায়াতের, তাই তিনি খুব একটা সফল হননি।’ – ধীর কণ্ঠে বললেন সুফী সাহেব।
নিজের ধারনার সাথে এভাবে মিলে যাবে সবকিছু, অন্তত এক্ষেত্রে, ভাবতে পারেননি ঐন্দ্রিলা। কিঞ্চিৎ কাঁপা কণ্ঠে বললেন,
– ‘কি সমস্যা, সেটা তো বলবে? নিশিতার কোন ভুল হয়েছে?’
– ‘না। সমস্যা তোমার মেয়ের না। সমস্যা আসলে শাফায়াতের। ওর চাহিদা ছিল ডানাকাটা পরী। তোমার মেয়ে তো আর সেটা না। অথচ তার ভাগ্যে পড়লো তোমার মেয়ে। শুধুমাত্র এই কারণে তোমার মেয়ের প্রতি অবহেলা করে গিয়েছে দিনের পর দিন। নিশিতা প্রথম দিকে সহ্যও করেছিল। তবে এভাবে আর কত দিন? বেয়াইনও চেষ্টার কমতি রাখেননি। শাসনও নাকি করেছেন জামাই’কে। লাভ হয়নি। আর আজকে যখন ঐ বাসায় গেলাম, তখন ঐ ছেলে বলে কিনা সে দুঃখিত, অনুতপ্ত ? কি বলা উচিৎ একে?’ – যথেষ্ট রাগ সুফী সাহেবের কণ্ঠে, যদিও তা নিয়ন্ত্রিত।
ঐন্দ্রিলা ভেতরে ভেতরে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। এত বড় সাহস কি করে হয় শাফায়াতের, ভেবে পেলেন না। এই ছেলে যে ভেতরে ভেতরে এতোটা নীচু মনের, সেটা টেরই পাননি। কথাবার্তায় যদিও সংযত, তাঁকে সম্মানও করে যথেষ্ট। নিশিতার বাবাও বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন বিয়ের সময়। তবে আজ সব পর্দা যেন খুলে গেলো। নিজের একমাত্র মেয়ের এমন অপমান সহ্য হলো না ঐন্দ্রিলা’র। স্বামীকে বললেন,
– ‘ঐ পরিবারে আমার মেয়ে আর ফিরে যাবে না। জানিয়ে দিও। ওদের সাথে কথা বলার মতো রুচি নেই আমার। বিয়ের অল্প ক’দিনেই যখন এত বড় সাহস দেখাতে পেরেছে ঐ ছেলে, এরপর আরও অত্যাচার করবে সে নিশিতার ওপর। আমার মেয়ে ফেলনা নয় যে যেভাবে খুশী সেভাবে ট্রিট করবে। ওকে আমি আর পাঠাবো না। আমাদের মেয়ে আমাদের কাছেই থাকবে। যেখানে আমার মেয়ের সম্মান নেই, সেখানে সে কিছুতেই ফিরে যাবে না।’ – দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ঐন্দ্রিলা।
স্ত্রী যে এমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটা ভালো করেই জানতেন সুফী সাহেব। তবে তাল মেলালেন না। মাথা ঠাণ্ডা রাখলেন। বিচ্ছেদ যদিও খুব কঠিন বিষয় নয়, তবে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আর ধর্মীয় দিক থেকেও সবচেয়ে নিকৃষ্ট তবে হালাল কাজ হচ্ছে তালাক। তাই আরেকটু অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে এটাও সত্য, নিজের মেয়ের সম্মানের চাইতে বড় কিছু আর আর নেই তাঁর কাছে। স্ত্রী’কে শান্ত করার চেষ্টা করলেন,
– ‘মাথা গরম করো না। আমি ওদের স্পষ্ট করেই বলে এসেছি, নিশিতা যা চাইবে সেটাই হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা ওর ওপর চাপিয়ে দিবো না। এমনিতেও মেয়েটার সাথে অনেক অবিচার হয়েছে।’
– ‘আমি নিশিতার সাথে কথা বলবো। এভাবে চলতে পারে না। আমার সহজ-সরল নির্দোষ মেয়েটাকে এভাবে শাস্তি দিতে এতোটুকু বুক কাঁপলো না ঐ ছেলের? কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছে একটা !’ – ক্ষোভে ফেটে পড়লো ঐন্দ্রিলা, চোখে অশ্রু।
– ‘আহ ! বললাম তো মাথা গরম করো না। এখনও শাফায়াত তোমার মেয়ের জামাই কিন্তু। পরে যা হওয়ার হবে, তবে এখনই সব মেজাজ হারিয়ে বসো না। বারবার বলছি। আরেকটা বিষয়ও আছে যেটা হয়তো খেয়াল করো নি।’
– ‘কি সেটা?’
– ‘যতোটা বুঝলাম, তোমার মেয়ে তার জামাইয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে !’
নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারলেন না ঐন্দ্রিলা। এত কিছুর পরও ! সুফী সাহেব খেয়াল করলেন স্ত্রী’র অবিশ্বাস ভরা চাহনি। মুচকি হেসে বললেন,
– ‘অবাক আমিও হয়েছি। তবে হ্যাঁ, যা বলছি, সে ব্যাপারে আমি প্রায় নিশ্চিত। জামাই তোমার মেয়ের মর্ম না বুঝলে কি হবে? নিশিতা কিন্তু তার ব্যাপারে বেশ ইমোশনাল। এখন যা দেখছো, সেটা শুধুই তীব্র অভিমান ছাড়া আর কিছু না। বাকীটা তুমি কথা বলে বুঝে নিও। আমি নামাজে গেলাম।’
ঐন্দ্রিলা ভাবতে লাগলেন। মেয়ে যদি বেশী আবেগী হয়ে পড়ে, তাহলে ঝামেলা বাড়তে পারে। আবারও যদি মেয়ে ফেরত যায় শ্বশুরবাড়িতে, তাকে যে শান্তি দিবে না শাফায়াত, সেটা বোঝাতে হবে। কুলাঙ্গারটা এখন নাটক করছে যাতে নিশিতা নরম হয়। রাস্কেল ! চোয়াল শক্ত হল ঐন্দ্রিলা’র।
⭕️
মেয়ের রুমে গিয়ে দেখে নিশিতা নামাজে। সেজদা’রত মেয়ের কান্না শুনে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না ঐন্দ্রিলা। ছোট থেকেই মেয়ের ধর্মের প্রতি আগ্রহ। নিজ উদ্যোগেই আমল করে নিয়মিত। এত ভালো মেয়েটার কপাল এমন হলো কেন সেটা ভাবতেই দুঃখে-আফসোসে বুকটা ভারী হয়ে আসছে ঐন্দ্রিলার। মেয়ের বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন। একটু পর নিশিতা’র নামাজ শেষ হলো। মা’কে দেখেই বুঝলো সবই জেনেছেন তিনি। এরপরও মায়ে’র করুণ মুখ দেখতে ভালো লাগলো না তার। পাশে বসে আলতো করে ঐন্দ্রিলা’কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ‘তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন, মা?’
– ‘তুমি এতদিন কিছুই বলো নি কেন আমাদের, বল তো মামনি? একটুও বুঝতে দিলে না কিছু?’ – কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছেন ঐন্দ্রিলা।
– ‘মা, ওটা আমার সংসার। সেখানে যে কোন সমস্যা ফেইস করাটা আমার কর্তব্য। সাধ্যমতো সেটা করার চেষ্টাও করেছি। শ্বশুরবাড়িতে ছোট হোক ,বড় হোক, যে কোন ইস্যু হলেই সেটা সমাধানের জন্য বাবার বাড়ি’কে বারবার ইনভলভড করাটা আমার কাছে ছোটলোকিপনা মনে হয়। তবে বাড়াবাড়ি’র হিসাব আলাদা। তোমাদের জামাই যা করেছে, সেটা একপর্যায়ে আর সহ্য হলো না। আমি অপেক্ষায় ছিলাম। নিজের সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়েও। হয়তো ও বদলাবে। কিন্তু না। শেষ পর্যন্ত যদিও মনে হলো, তার মধ্যে একটু হলেও পরিবর্তন এসেছে, তবে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।’ – শান্ত কণ্ঠে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো নিশিতা।
– ‘তুমি আর ফিরে যেও না, মামনি। যে তোমার মূল্য বোঝেনি, তাকে আর কোন সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই। ঐ ছেলে যা করেছে, এজন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে।’ – ঐন্দ্রিলা শক্ত গলায় মেয়েকে বললেন।
মায়ের এত রিঅ্যাক্ট করার কারণ বুঝলো নিশিতা। এরপরও তার মনে হলো, মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হবে না। মা’কে বুঝানোর কণ্ঠে বললো,
– ‘বিয়েটা কোন ছেলেখেলা নয়, মা। মানছি তোমাদের জামাই অপরাধ করেছে। তবে তার মধ্যে একটু হলেও পরিবর্তন এসেছে। ভুল বুঝতে পেরেছে। সে আমাকে বারবার অপমান করেছে সেটা সত্য, তবে এটাও ঠিক যে সে আমার সবচেয়ে আপনজনদের মধ্যে অন্যতম। একটা কথা জেনে রাখো, মা। আমি সো-কল্ড প্রগতিশীল মানসিকতায় বিশ্বাসী নই, যারা ঠুনকো অজুহাতে হালাল সম্পর্ক ভাঙ্গার ব্যাপারে সবসময় তৎপর থাকে। আবার নিজের সম্মান নষ্ট করার পক্ষপাতীও নই। শাফায়াত’কে আমি সহজে ক্ষমা করবো না। ওকে বুঝতে হবে আমার মূল্য।’
মেয়ের এমন কথা শুনে ঐন্দ্রিলার রাগ যেন মাত্রা ছাড়ালো। নিশিতার বাবার কথা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় মেজাজও বেশ গরম হলো। চট করে মেয়ের কাছ থেকে উঠে দাঁড়ালো,
– ‘এতকিছুর পরও তুমি ঐ কুলাঙ্গারের কাছে ফিরে যেতে চাও? আমাদের মান-সম্মানের কোন মূল্য তোমার কাছে নেই?’
– ‘আছে। এজন্যই আপাতত ফিরবো না। আমাকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে।’
– ‘যে ছেলে তোমাকে ভালোই বাসে না, সে দিবে আবার সম্মান?’ – বাঁকা হাসি ঐন্দ্রিলার ঠোঁটে।
– ‘মা, এ বিষয় নিয়ে আর কথা বাড়াবো না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।’
ঐন্দ্রিলা চলে যেতে যেতে বললেন,
– ‘ঐ ছেলের কাছে তুমি সুখী হবে না, সেটা আমি লিখে দিতে পারি। এত গোঁয়ার, নীচ মানসিকতার মানুষের সাথে সংসার হয় না। এখনও বুঝলে না। যেদিন বুঝবে, সেদিন কিন্তু কাউকে পাশে পাবে না।’
– ‘ যার কেউ নেই, তার জন্য সৃষ্টিকর্তাই যথেষ্ট।’ – মনে মনে বললো নিশিতা।
⭕️
নিশিতা চলে যাওয়ার পর থেকে শাফায়াত কার্যত অসুস্থ হয়ে পড়লো। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে তার সব কাজই যেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কথাও যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার। সাফিয়া চিন্তিত হয়ে পড়লেন ছেলের এই অবস্থা দেখে। নিশিতা যাওয়ার পর যদিও তাঁর নিয়মিত কথা হচ্ছে মেয়েটার সাথে। নিশিতা’কে খুব মিস করছেন তিনি। তবে ছেলেকে বুঝতে দেন না। ছেলের এই পরিবর্তনের পেছনের কারণ যে নিশিতা, সেটাও বুঝতে পেরেছেন তিনি। সেদিনের পর থেকে রাতে প্রায়ই জ্বর আসে শাফায়াতের। এক রাতে সাফিয়া ছেলের জ্বর এসেছে কিনা, চেক করতে এসে দেখেন ঘুমন্ত ছেলের বুকের উপর রাখা একটি ছবি। ছবির মানুষটিকে চিনতে ভুল হলো না তাঁর। মুচকি হেসে ছেলের কপালে চুমো খেয়ে চলে গেলেন রুম থেকে।
বেশ কিছুদিন পর শাফায়াত কিছুটা ভালো বোধ করছিল। কাজেও গেল। তবে বাসায় ফেরার পর থেকে শূন্যতা আঁকড়ে ধরলো তাকে। বিছানায় নিশিতার শোবার জায়গা, নিশিতার বালিশ, জায়নামাজ – পুরো রুমের সব জায়গাতেই নিশিতার ছোঁয়া যেন অনুভব করতে লাগলো শাফায়াত। হঠাৎ করে নিশিতার কণ্ঠ শুনতে খুব ইচ্ছে হলো তার। যেন কতোদিন শোনা হয়নি সেই প্রিয় কণ্ঠ। একই সাথে অস্বস্তিও অনুভূত হলো। অপরাধবোধের যে আগুনে তার হৃদয় গত কিছুদিন থেকেই পুড়ে চলেছে, আদৌ কি তার শুদ্ধতার সংবাদ পৌঁছুবে নিশিতার কাছে? জানা নেই শাফায়াতের। তবে এটুকু বুঝলো, নিশিতাকে ছাড়া তার কোনভাবেই চলবে না। এজন্য যা করতে হয়, সে করবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে সাহায্য চাইলো সে।
Aditya Kingshuk