প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প,০৪,০৫

0
330

প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প,০৪,০৫
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

|৪|

রৌদ্রোজ্জ্বল সকালটা মধ্যাহ্নে গড়াল। বুকের ভেতর দুরুদুরু অশনি বার্তায় মুহূর্ত পেরোল। কোথা থেকে উড়ে এলো এক মুঠো শেফালি ফুলের গন্ধ। অসময়ে কোকিল ডাকল। অস্বস্তিতে স্তব্ধ প্রায় আমি প্রচন্ড দুশ্চিন্তা নিয়ে গোটা দুই লেকচার শুনলাম। প্রফেসর বেরিয়ে যেতেই পাশের এক মেয়েকে ডেকে বললাম,

‘ এই জুথি? কী ব্যাপার বলো তো? কিছু কী ঘটেছে?’

প্রশ্নটা করেই বুকে পাথর চেপে বসে রইলাম আমি। ভেতরটা কাঁপতে লাগল দুরুদুরু। হাত পায়ের কম্পনটাও স্পষ্ট। ভয়াবহ কোনো দুঃসংবাদ শোনার আশায় বিকলপ্রায় হয়ে গেল মস্তিষ্ক। বারবার মনে হতে লাগল, যদি খারাপ কিছু ঘটে থাকে? ভয়াবহ খারাপ কিছু? বাবার মানসম্মান ধুলোয় মিশে যাওয়ার মতো খারাপ কিছু? তবে কী হবে? কী করব আমি? বাবার মুখের দিকে চেয়ে কীভাবে তার ব্যাখ্যা টানব? আমার ভেতরটা হুহু করে উঠল। অচেনা ভয়ে ডুকরে কেঁদে উঠতে চাইল মন। অসহায়, অস্থির চোখদুটো মেলে প্রিয়তার দিকে চাইলাম। জুথি অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

‘ কী ঘটবে?’

আমি যথাসম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললাম,

‘ আমাকে নিয়ে কী কিছু ঘটেছে?’

জুথি মায়া ভরা চোখে চাইল। প্রিয়তা অস্থির হয়ে বলল,

‘ সবাই এমন নিশুর খোঁজ করছে কেন বল তো? ব্যাপারটা কী?’

জুথি কিছুটা অপ্রস্তুত হলো বোধহয়। ঠোঁট টেনে হেসে বলল,

‘ আমি ঠিক জানি না।’

আমার ভয়টা বেড়ে গেল এবার। বুকের ভেতরটা ধরাস করে উঠল। কী এমন ঘটতে পারে যা জুথি মুখে বলতে পারছে না? নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ আর এই নতুন পরিস্থিতিতে আমরা দু’জনেই কিছুটা কুঁকড়ে গেলাম। অজানা এক ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল দু’জনের মুখ। এই ভয় আর অস্থিরতা নিয়েই জুথিকে কিছুটা চেপে ধরলাম আমরা। জুথি আমতা আমতা করে বলল,

‘ সত্যিই কিছু জানি না নিশু। জানলে অবশ্যই বলতাম। তবে তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কিছু একটা হয়েছে বোধহয়।’

আমি আর প্রিয়তা স্তম্ভিত হয়ে একে অপরের দিকে চাইলাম। দু’জনে প্রায় একই সাথে আওড়ালাম,

‘ বয়ফ্রেন্ড!’

জুথি মাথা নাড়ল। এদিকে আমার মাথা আউলে যাওয়ার জোগার। জীবন নামক রেলগাড়ীটা বিংশ বৎসর পাড়ি দিতে চললেও যেখানে প্রেমিক পুরুষ নামক যাত্রী খুঁজে পেলাম না। সেখানে হঠাৎ ‘বয়ফ্রেন্ড’ নামক পদার্থের উদয় হলো কী করে? আশ্চর্য! ক্লাস থেকে বেরিয়ে মুক্ত মঞ্চের সামনে গিয়েই বুঝলাম অবস্থা ভয়াবহ। কৌতূহলী ছেলে মেয়েরা ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে কোনো পথচারী ফিরে চাইলেও মনে হচ্ছে যেন আমাকেই দেখছে। কৌতুক করছে। হাসছে। আমি হতাশ হয়ে প্রিয়তার দিকে চাইলাম। ক্লান্ত কন্ঠে বললাম,

‘ এই বয়ফ্রেন্ড নামক প্যারাটার মানে কী? আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সবাই কেমন বিশ্রীভাবে তাকাচ্ছে।’

প্রিয়তা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বুদ্ধিদীপ্ত কন্ঠে বলল,

‘ আমি ভাবছি ভিন্ন কথা। আজকালকার যুগে বয়ফ্রেন্ড থাকা খুবই সাধারণ বিষয়। আমারও আছে। কিন্তু সে নিয়ে তো কারো মাথাব্যথা হচ্ছে না। তাহলে চিনা নেই, জানা নেই সবাই হঠাৎ তোর বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পড়ল কেন বল তো?’

আমি নিরুত্তর চোখে চাইলাম। চোখে-মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললাম,

‘ বুঝতে পারছি না। কিন্তু এই হাবিজাবি কান্ড যদি ছোট মামার কানে যায় তাহলেই আমি শেষ। বাবা একদম মেরে ফেলবে।’

প্রিয়তা কিছু বলল না। শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বলল,

‘ জীবনটা তো খালার হাতের রান্নার থেকেও রহস্যময় হয়ে যাচ্ছে রে নিশু। কী দিচ্ছে, কী খাচ্ছি কিছুই তো বুঝতে পারছি না!’

আমি উত্তর দিলাম না। ক্যাম্পাসের হাওয়া অসহ্য হয়ে উঠতেই বাসায় ফিরলাম। প্রিয়তা আর আমি বিশাল ভাবনা চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম আবিরকে চেপে ধরব। এই ফাজিল ছেলেটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছে। একমাত্র এই ছেলেটাই সমস্যার সমাধান। আমি আর প্রিয়তা বিকেল-সন্ধ্যা ব্যালকণিতে বসে রইলাম। কিন্তু আবিরের দেখা পাওয়া গেলো না। অদ্ভুত একটা অস্থিরতা নিয়ে সন্ধ্যা পেরুলো। রাত গড়াল। পূর্বাকাশে লালচে রঙ ধরতেই চোখ মেলে চাইলাম। প্রিয়তা তখনও ঘুমোচ্ছে। তার ছোট্ট, সুন্দর মুখটিতে ল্যাপ্টে আছে একরাশ ক্লান্তি। আমি সেকেন্ড কয়েক প্রিয়তার দিকে চেয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বিষণ্ণ মন নিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে চুপচাপ চেয়ে রইলাম দূর থেকে বহুদূরে। কলেজে এমন একটা কান্ড ঘটে যাওয়ার পর ক্লাস করার মানসিকতা আর রইলো না। দু’দুটো দিন লেখালেখি আর বই পড়ায় ডুবে রইলাম। কিন্তু মন বসাতে পারলাম না। বুকের ভেতর চাপা ভয় নিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে লাগলাম। ছোট মামা হলেন বাবার ডানকান। আমাদের কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র। সারাদিন দার্শনিকের মতো ঘুরে বেড়ায়। কাজ কারবার কিছু নেই। কলেজের ব্যাপারটা যদি আরও ছড়ায় আর ছোট মামার কান অব্দি পৌঁছায় তাহলেই সর্বনাশ। আমার আর প্রিয়তার ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে মরা ছাড়া উপায় নেই। দিন দুয়েক চিন্তা ভাবনা করে একরকম ক্লান্ত হয়ে আমি আর প্রিয়তা সিদ্ধান্ত নিলাম, আর কোনো চিন্তা ভাবনা নয়। জীবনে বহু পাপ করেছি। আল্লাহ যখন শাস্তি দিতে চাইছেন তখন মাথা পেতে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সুতরাং, সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে জীবনে শেষবারের মতো ফুসকার স্বাদ নেওয়া যাক। আমি আর প্রিয়তা অত্যন্ত দুঃখী দুঃখী মন নিয়ে তৈরি হলাম। দরজায় তালা দিয়ে দু’তলার সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই একটা চমৎকার ঘটে গেল। দোতলার সিঁড়ির গোড়া থেকে আবিরকে উঠে আসতে দেখা গেল। তার হাতে ফোন। গায়ে হালকা বাদামী পলো শার্ট। গোছানো, পরিপাটি চুল। ছিমছাম চেহারা। প্রিয়তা চাপা কন্ঠে চেঁচাল,

‘ এই নিশু? আবির! আবির!’

আবির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বেখেয়ালি চোখে একবার আমাদের দিকে চেয়েই চোখ ঘুরিয়ে নিজের ফোনের দিকে মনোযোগ দিল। চোখে-মুখে গাম্ভীর্য। বিস্ময় ভরা চাহনিতে তীক্ষ্ণ সতর্কবার্তা। তার এক পলক চাহনিতেই আমি আর প্রিয়তা থমকে গেলাম। বিভ্রান্ত হয়ে একে অপরের দিকে চাইলাম। প্রিয়তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘ তুই শিওর এটা আবির?’

প্রিয়তা অসহায় চোখে চাইল। ধ্রুবর দিকে আড়চোখে চেয়ে বলল,

‘ বুঝতে পারছি না। ব্যাটা মুখ চোখের এমন ভাব ধরে রেখেছে কেন, বল তো?ভড়ং ধরেছে মনে হয়।’

আমি প্রিয়তার কথায় পাত্তা না দিয়ে আড়চোখে আবিরকে দেখলাম। আবির দ্রুত পায়ে উপরে উঠছে। দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে স্থির। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কোনো ভাবান্তর হচ্ছে না। মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। আমি প্রিয়তার হাত খামচে ধরে ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘ চিবুকটা দেখ। চিবুকটা দেখ। চিবুকে তিল কার ছিল? ধ্রুব না আবিরের? উফ! মনে পড়ছে না তো।’

প্রিয়তা বিভ্রান্ত হয়ে বলল,

‘ আবিরের ছিল বোধহয়। আবিরের থুতনির কাছে তিল দেখলাম না? ধ্রুবরও থাকতে পারে। না, না আবিরেরই ছিল।’

প্রিয়তার বিভ্রান্তিতে আরও বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম আমি। রাগে-দুঃখে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো মুখে চাইল। আমাদের দুজনকে ভয়াবহ বিভ্রান্তির মাঝে রেখেই আবির নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে উপরে উঠে গেল। যেতে যেতে দেখিয়ে গেল চিবুকের কাছে ঝলঝলে এক কালো তিল। আমি রাগ নিয়ে বললাম,

‘ বলদের বলদ। সিম্পল একটা বিষয় মনে রাখতে পারিস না? ছোট মার উচিত ছিল তোকে দিনে দশবার করে হরলিক্সের পানিতে চুবানো। বেয়াদব! দুনিয়ার সব মনে থাকতে পারে। কোন ছেলে কখন হাঁচি দেয় সেটাও তোর মুখস্থ অথচ ধ্রুবর চিবুকে তিল আছে কি না সেটা মনে থাকে না? আশ্চর্য!’

প্রিয়তা মুখ ফুলিয়ে তাকাল। কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে বলল,

‘ তোর জামাইয়ের চিবুকে তিল আছে নাকি বাহুতে তিল আছে সেটা মনে রাখার দায়িত্ব তোর। আমাকে বলছিস কেন? তোর জামাইয়ের সাথে আমার কিছু হওয়ার সম্ভবনা আছে? নাই। তোর ধ্রুব ট্রুবকে আমি কখনো চুমু খেতে পারব? পারব না। তাহলে মনে রেখে লাভ?’

আমি হতভম্ব চোখে চাইলাম। অবাক হয়ে বললাম,

‘ চুমু খেতে না পারলেই খেয়াল করা যাবে না? তুই কী ছেলেদের চুমু খাওয়ার জন্য খেয়াল করিস নাকি? আশ্চর্য!’

প্রিয়তা উত্তর না দিয়ে হেলেদুলে নিচে নামল। তারপর দাঁত কেলিয়া বলল,

‘ অনেকটা তাই। যেখানে সম্ভবনা, সেখানেই আকর্ষণ। অন্যের জামাইয়ের উপর অযথা সময় নষ্ট করব কেন?’

আমি হতাশ চোখে চাইলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,

‘ জামাই জামাই করছিস কেন?ধ্রুব কখনোই আমার বর নয়। হওয়ার সম্ভবনাও নেই। হি ওয়াজ জাস্ট আ ইনফেচুয়েশন। তুই চাইলে তাকেও চুমু খেতে পারিস। শুধু শুধু একজন অবিবাহিত পুরুষকে তোর চুমু থেকে বঞ্চিত করবি কেন? তোর চুমু না পেলে তার পুরুষ হয়ে জন্মানো স্বার্থক না-ও হতে পারে।’

প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে তাকাল। আমার বাকি কথাগুলো ছেড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

‘ ইনফেচুয়েশন! জাস্ট ইনফেচুয়েশন! আমি তো ভালোবাসা ভেবেছিলাম। ওহ্ শিট! তোর এই ইনফেচুয়েশের চক্করে আজ আমাদের এই সিচুয়েশন!’

আমি উত্তর দিলাম না। প্রিয়তা সারা পথ হা-হুতাশ করে চলল। অনেকদিন বাদে রিকশা নিয়ে শহর ঘুরলাম। রিক্সাটা জয়নুল আবেদীন পেরিয়ে সার্কিট হাউজের রাস্তা ধরতেই অদূর থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠল,

‘ আরে, ভাবি! এই ভাবি দাঁড়াও।’

প্রিয়তা আর আমি একে অপরের দিকে চাইলাম। চলন্ত রিক্সা থেকেই ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকালাম। একটা লম্বা মতোন ছেলে হাত উঁচিয়ে থামতে বলে দৌঁড়ে আসছে। প্রিয়তা রিক্সা থামাতে বলতেই হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে এসে দাঁড়াল আবির অথবা ধ্রুবর একজন। আমি আর প্রিয়তা কুটিল চোখে চাইলাম। গোয়েন্দার মতো নিরক্ষণ করতে লাগলাম তার সারা শরীর৷ আবির মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে বলল,

‘ বাসায় যাচ্ছো ভাবী?’

আমি মাথা নাড়তেই আবির প্রিয়তাকে হেঁচকা টানে নিচে নামিয়ে নিজে আরাম করে বসল। আমি আর প্রিয়তা একইসাথে হতবাক ও স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আবির ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

‘ আমাকে লিফ্ট দাও। আমিও বাসায় যাব। এই মহিলা এখানে থাকুক। এই মহিলা বেশি কথা বলে। বেশি কথা বলা মেয়ে আমার পছন্দ না।’

আমি ভাষাহারা, নির্বাক হয়ে গেলাম। প্রচন্ড বিস্ময়ে আবিরের মুখের দিকে ‘হা’ করে চেয়ে রইলাম। প্রিয়তার মতো চটপটে মেয়েও মিনিট খানেক স্তব্ধ থেকে তেড়ে এসে বলল,

‘ এই নামুন! এটা কোন ধরনের ব্যবহার? ফাজলামো নাকি? রিক্সাটা ভাড়া করেছি আমি। আর আপনি আমাকেই নামিয়ে দিয়ে লিফ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছেন? আশ্চর্য!’

আবির আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হয়ে বলল,

‘ আমি লিফ্ট নিচ্ছি কে বলল? আমি তো এই রিক্সাতেই ছিলাম। ভাবী বিচারক। ভাবীই সাক্ষী। ভাবী? আমি তোমার সাথে ছিলাম কিনা বলো? তুমি বোনের জন্য বরের ভাইয়ের সাথে বৈষম্য করতে পারো না!’

আবির বড় বড় বিস্মিত চোখ জোড়া মেলে আমার দিকে চেয়ে রইলো। আমি আমার ফ্রীতে পাওয়া দেবরের দিকে অসহায় চোখে চাইলাম। ধ্রুবর মতো দেখতে একটা ছেলে, যাকে আমি মনে মনে চাইতাম, সে আমায় লাইনে লাইনে ভাবী ডাকছে ভাবতেই কান্না পেয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

‘ খবরদার ভাবী ডাকবে না! অন্যের বিবাহিত বউকে ভাবী ডাকা কোন ধরনের স্বভাব?’

আবির জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,

‘ ও হ্যাঁ। তোমাকে তো নিশু আপু ডাকার কথা। এখন থেকে তোমায় নিশু আপুই ডাকব ভাবী। তুমি মন খারাপ করো না।’

আমি হতাশ চোখে চাইলাম। প্রিয়তা ফুঁসে উঠে বলল,

‘ আমি এখানে মাঝ রাস্তার দাঁড়িয়ে আছি। আর তোরা বসে বসে প্রেমালাপ করছিস? নিশু তুই এতো খারাপ! দেবর পেয়ে বোনকে ভুলে গেলি? দু’দিনের দেবরেই এতো প্রেম? জামাই পেলে তো দুনিয়া ভুলে যাবি।’

আবির বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ তুমি এতো কথা বলো কেন ভাবীর বোন? আমি এই মুহূর্তে তোমাদের মেহমান। রিক্সা মেহমান। মেহমানদের সমাদর করতে শিখোনি?’

এদের দু’জনের চাপাচাপিতে মাথাব্যথা হয়ে গেল আমার। ইচ্ছে হলো দু’জনের গালে দুটো চড় বসিয়ে নিস্তব্ধ করে দিই পরিবেশ। কিন্তু তার প্রয়োজন হলো না। আবির হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। তার গমগমে কন্ঠস্বর হঠাৎই পাতালে নেমে এলো। মিনমিন করে বলল,

‘ ভাবী! ভাইয়া…. ‘

আবিরের কথায় বেখেয়ালে সামনের দিকে চেয়েই চমকে উঠলাম আমি। আমাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব। তার চোখজুড়ে বিস্ময়। ভ্রু জোড়া খানিক কুঁচকে তাকিয়ে আছে আবিরের মুখে। প্রিয়তা ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে চাইল। আমি অবাক হয়ে একবার ধ্রুব তো একবার আবিরের দিকে চাইলাম। দুটো একই রকম মানুষ একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। একজনের চোখে বিস্ময়, অপরজনের চোখে ভয়। আমি এই মুহূর্তে এসে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম, তারা সত্যিই দুটো আলাদা মানুষ। ব্যাপারটা কোনো মাইন্ড গেইম নয়। ধ্রুব এক নজর আমার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে চেয়ে রইল। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। মুখ দিয়ে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করল না। তবুও ফ্যাকাশে হয়ে গেল আবিরের মুখ। সে সুড়সুড় করে রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়াল। ধ্রুব সেকেন্ড কয়েক বিস্মিত চোখে চেয়ে থেকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে মানুষটাকে দেখলাম। এই প্রথম উপলব্ধি করলাম, তার চাহনি, হাঁটা-চলা আবিরের থেকে ভিন্ন। গম্ভীর, শান্ত। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তাকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করল,

‘ আপনার ভাই যে আমায় ভাবী ডাকতে ডাকতে অস্থির করে ফেলছে জানেন?’

বুকের ভেতর কোথাও একটা খুব কৌতূহল হলো। জানতে ইচ্ছে করল, সে কী আদৌ আমায় চিনে? খেয়াল করে?

#চলবে……

প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

|৫|

ধ্রুবর সাথে দেখা হওয়ার পরদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম, কলেজে যাব। এমন ইঁদুরের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকার মতো কিছু ঘটেনি। সুতরাং বসে থাকা চলবে না। মুখে মুখে এমন হাজারও স্তবক ঝাড়লেও মনের ভেতর আস্ত এক ভূমিকম্প নিয়ে কলেজে পৌঁছালাম। শীতের সকাল। কুয়াশায় স্তব্ধ হয়ে আছে চারপাশ। চায়ের দোকানে উনুন জ্বলছে। দু’একজন পথচারী ব্যস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলেছেন গন্তব্যে। আমি আর প্রিয়তা কিছুটা উদ্বেগ নিয়েই ক্যাম্পাসে পৌঁছালাম। ডিপার্টমেন্টের সিঁড়ির কাছে আসতেই ক্যাফেটেরিয়া থেকে ডেকে উঠল কেউ। বুকের ভেতরটা দুরুদুরু ঝংকার তুলল। আমি আর প্রিয়তা একে অপরের দিকে চেয়ে পিছন ফিরে চাইলাম। ছেলেটি ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে এসে বলল,

‘ তুমি নিশু না?’

ভীষণ লম্বা, দৈত্যের মতো দেখতে ছেলেটির মুখের দিকে চেয়ে মাথা নাড়লাম। ছেলেটি মৃদু হাসল। আমাকে চিনতে পেরে সে পরম আনন্দিত। কিন্তু আমি আনন্দিত হতে পারলাম না। এই লোকটিকে আগে কখনো দেখেছি বলেও মনে হলো না। আমি বিভ্রান্ত হয়ে বললাম,

‘ আপনি?’

লোকটি হাসল। হাত দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করে বলল,

‘ আমি ওই ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। এবার মাস্টার্স শেষ হলো।’

আমি কী বলব ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইলাম। ভদ্রলোক ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন শুনে অভিনন্দন জানানো উচিত নাকি অযথা বক্তব্যে বিরক্ত হওয়া উচিত বুঝে উঠতে পারলাম না। লোকটি হাসিমুখে প্রস্তাব করলেন,

‘ নাস্তা করেছ? আমাদের সাথে এক কাপ চা খাও, ছোট আপু?’

আমি চমকে চাইলাম। হঠাৎ এতো বিনয় পেয়ে হকচকিয়ে গেলাম। ঠোঁটটা টেনে কোনো রকম বললাম,

‘ অন্যদিন ভাইয়া। ন’টায় আমার ক্লাস আছে।’

আমার প্রত্যাখ্যানে ভদ্রলোকের খুব একটা ভাবাবেগ হলো না। আমার দিকে চেয়ে থেকে নিজের মনে হাসলেন। তারপর মাথা নিচু করে সম্মতি জানিয়ে আবারও ক্যাফেটেরিয়াতে অন্তর্ধান করলেন। ভদ্রলোক চলে যেতেই চোখ বড় বড় করে চাইল প্রিয়তা। কয়েক সেকেন্ড সন্দিহান চোখে চেয়ে থেকে একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল,

‘ এই ছেলেরে তুই কেমনে চিনিস? হাও?আমি কেন চিনি না? আমার গাঢ়ে বসে কাঁঠাল খাচ্ছিস অথচ আমি জানি না? সর্বনাশ!’

আমি উত্তর দিলাম না। প্রিয়তা এবার দুঃখের সাগরে ভেসে গেল। ওকে না জানিয়ে এতোবড় কান্ড করে ফেলেছি ভেবে তার মরে যেতে ইচ্ছে হলো। ঠিক এমন সময় সিঁড়ির মাঝ বরাবর এসে হুট করেই দাঁড়িয়ে পড়ল এক যুবক। গায়ে কালো জ্যাকেট। হাতে ক্যামেরা। লম্বাচওড়া ছিমছাম চেহারা। আমায় দেখে বিগলিত হেসে বলল,

‘ আপনি নিশু আপু না? কেমন আছেন?’

আমি বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে মাথা নাড়লাম। ছেলেটি হাসল। ক্যামেরার ফিতেটা হাতে জড়াতে জড়াতে বলল,

‘ আপনার ছবি কিন্তু ক্যামেরায় দূর্দান্ত আসবে আপু। কখনো ছবি তোলার হলে আমায় জানাবেন। আজ আসি?’

আমি ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ এমন ঘটা বিনয়ের কারণ বুঝতে না পারলেও, তারা প্রত্যেকে যে আমার সিনিয়র তা বেশ বুঝতে পারলাম। ছেলেটা পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই হাহাকার করে উঠল প্রিয়তা। কাঁদো কাঁদো চোখে চেয়ে বলল,

‘ তুই এতো নিষ্ঠুর নিশু! এতো হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম ছেলেদের সাথে তোর পরিচয় অথচ আমায় বলিসনি? এজন্যই সবাই প্রেমিক প্রেমিক করছে। আমি হাঁচি দিলেও তোকে বলি আর তুই হালি হালি প্রেমিক পালছিস অথচ বলিস নি?’

প্রিয়তা বুক ফাঁটা কষ্ট নিয়ে আমার সাথে বাক্যালাপ বন্ধ করে দিল। প্রিয়তার হাহাকারে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজেকেও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারলাম না। অসহায় কন্ঠে বিড়বিড় করলাম,

‘ এতো নিষ্ঠুর তুই নিশু! এতো এতো ছেলেপুলে তোর পরিচিত অথচ তুই আমাকেও জানতে দিলি না! আমার খেয়ে, আমার মধ্যে থেকে, আমাকেই ধোঁকা!’

আমরা দু’জনেই মর্মাহত মন নিয়ে ডিপার্টমেন্টে পৌঁছালাম। দুটো লেকচার শেষ হতেই কোথা থেকে দৌঁড়ে এলো বিথিকা। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বলল,

‘ তোর কাজে খুব দুঃখ পেয়েছি নিশু। তুই ধ্রুব ভাইয়ার সাথে সম্পর্কে জড়ালি অথচ একটিবারও আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? আমরা কী তোকে ধরে রাখতাম?’

আমি যারপর নাই অবাক হয়ে বললাম,

‘ মানে কী! কোন ধ্রুব?’

বিথিকা সরু চোখে চাইল,

‘ একদম নাটক করবি না। তোদের কাহিনি এখন পুরো ডিপার্টমেন্টই জানে। সুতরাং নাটক ফাটক করে লাভ নেই।’

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। প্রিয়তা সদ্য ছ্যাঁকা খাওয়া হৃদয় নিয়ে আমার দিকে চাইল। মর্মাহত চোখে চেয়ে বাপ্পারাজের মতো ডায়েলগ ঝাড়ল,

‘ না! না, আমি বিশ্বাস করি না। তুই আমার কোলে চড়ে আমারই উপরতলার ছেলেকে পটিয়ে ফেললি? আর আমি বেকুব, গরু, গাধা এতটুকু খোঁজ পর্যন্ত পেলাম না? ইয়া আল্লাহ! আমার বুকটা এমন ধরফর করছে কেন? আমি বোধহয় আর বাঁচব না। হে বিধাতা! ইয়া মা’বুদ! আমি আর বাঁচতে চাই না। এই বিশ্বাসঘাতকের জন্য আমি আমার হাজারখানেক প্রেমিক, স্বামী, সন্তান উৎসর্গ করে দিলাম।’

আমি বিরক্ত চোখে প্রিয়তার নাটক দেখলাম। আমার যে প্রেমের কাহিনি আমি ছাড়া সবাই জানে? সে কাহিনিটা আগাগোড়া বুঝার চেষ্টা করলাম। চেষ্টা সফল হলো না। আমার চেষ্টাকে পুরোপুরি অপচেষ্টা করে দিয়ে প্রফেসর আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। পড়াতে পড়াতেই হঠাৎ জিগ্যেস করলেন,

‘ এইযে আপনি? আপনার নাম নিশু?’

আমি চমকে উঠলাম। স্যার আমার সাথে কথা বলছেন বুঝতে পেরেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল মুখ। প্রিয়তা আমায় ঠেলে দাঁড় করিয়ে দিতেই থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। স্যার জহুরি চোখে চেয়ে বললেন,

‘ হোমটাউন কোথায়? এখানকার মেয়ে? নাকি বাইরের শহর থেকে এসেছেন? বাবা কী করেন?’

স্যারের পর পর এতো প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলাম আমি। ক্লাসের সকলের চোখেই উৎসুক দৃষ্টি। মাত্র এক মাস হচ্ছে ক্লাস জয়েন করেছি। শহরেও নতুন। স্যারের ক্লাস পেয়েছি মোটে একটি। এই অল্প সময়ে তাঁর আমার নাম জানতে পারার কথা নয়। আমি উত্তর দিতেই মৃদু হাসলেন প্রফেসর। আর আমি রহস্যের অতলে তলিয়ে গিয়ে নিজেকে খুব অসহায় বোধ করলাম। প্রিয়তা আরেক দফা দুঃখের সাগরে ভেসে গেল। এদিকে আমি পড়লাম বিপদে। মহাবিপদে! যার প্রেমিকা হিসেবে আমি ক্যাম্পাস খ্যাত তার সাথে যে এই জীবনে আমার ‘ক,খ’ ধরনের কথাবার্তাও হয়নি, সে কথা কেউ বিশ্বাস পর্যন্ত করল না। তার চা পছন্দ নাকি কফি? সে কেমিস্ট্রি পছন্দ করে নাকি ফিলোসোফি? সে সম্পর্কেও বিন্দুমাত্র ধারণা আমার নেই। অথচ আমি তার ভাইয়ের ভাবী। বন্ধুদের ছোট আপু আর জুনিয়রদের হিংসার কারণ। ভাবা যায়? না, ভাবা যায় না। আমি আর ভাবতে পারলাম না। ভয়াবহ প্রেমিকহীনতায় ভোগেও হঠাৎ কারো প্রেমিকা হয়ে যাওয়ার দুঃখে প্রাণটা যেন ফেঁটে গেল আমার। মাথাটা দপদপ করতে লাগল। পড়াশোনা, লেখালেখি সব লাটে তুলে দুঃখবিলাস করতে বসলাম। প্রায় তিন চারদিন বাদে হঠাৎ লাইব্রেরি যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো। ঘরে বই ফুরিয়ে গিয়েছে। দুঃখবিলাস ঠিকঠাক চলছে না। আমি ঘরের দোর খুলে লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু সিঁড়ির দুই ধাপ নামতেই ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটে গেল। সিঁড়ির গোড়ায় আবিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত পায়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঝাঁঝ নিয়ে বললাম,

‘ তুমি কী জানো? তোমার ভাইয়ের মতো বেয়াদব মানুষ পৃথিবীতে আর দুটো নেই?’

আবির পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমার কথার তেজে স্তব্ধ হয়ে গেল তার পা। ঘাড় ফিরিয়ে বিস্মিত চোখে চাইল। ডান ভ্রু’টা ঈষৎ উঁচু করে নিচু কন্ঠে শুধাল,

‘ কেন? কী করেছে ও?’

আমার মাথায় তখন আকাশ সমান রাগ। দু’দিন যাবৎ শান্তিতে কলেজ যেতে পারছি না। ছায়ার মতো ল্যাপ্টে থাকা প্রিয়তা পর্যন্ত কুটিল চোখে তাকাচ্ছে। মুদির দোকানের সবচেয়ে অপরিচিত মামাটাও দিনে দু’বার করে হালচাল জিজ্ঞেস করছে। ভাবা যায়? আমি রাগ নিয়ে বললাম,

‘ কী করেছে মানে? তার জন্য আমার জীবনটা নরক হয়ে গিয়েছে। আমার তো এই মুহূর্তে তার নামে মানহানির মামলা করা উচিত।’

আবির ভ্রু কুঁচকাল। শান্ত, শীতল কন্ঠে বলল,

‘ আচ্ছা?’

আবিরের কথায় অচেনা এক শীতলতা ঠাহর করে সচেতন চোখে চাইলাম। আমার বুদ্ধিমান মস্তিষ্ক বাংলা সিনেমার পুলিশদের মতো অত্যন্ত দেরি করে হলেও তাদের অস্তিত্বের জানান দিল। মাথার ভেতর লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে বুঝাল, ‘নিশুমণি? ইউ আর ইন দ্য রং নাম্বার!’ মস্তিষ্কের এই দূর্দান্ত বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর আমার মুখখানি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। সকল তেজ হাওয়ায় মিলাল। মেঘমন্দ্র কন্ঠ মুহূর্তেই শালিক পাখির মতো চিওচিও করতে লাগল। ভয়াবহ বিপদে পড়ে গিয়েছি বুঝতে পেরে ভেতরটা কেমন দুরুদুরু করে উঠল। আমি ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করে এক পা পিছিয়ে গেলাম। মনে মনে এক দৌঁড়ে বর্ডার পাড় করার চিন্তা জপতে জপতে অত্যন্ত লক্ষ্মী মেয়ের মতো বললাম,

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন?’

ধ্রুব শান্ত কন্ঠে সালামের জবাব নিয়ে বলল,

‘ তোমার নামই নিশু, তাই না? কোথায় যাচ্ছ? নিচে নামো।’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ আর দুরুদুরু বুক নিয়ে এক ধাপ নিচে নামলাম। অসহায় কন্ঠে বললাম,

‘ সরি ভাইয়া। আমি আপনাকে আবির ভেবেছিলাম। সরি!’

ধ্রুব আগের মতোই চেয়ে রইলো। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,

‘ সেই তো! আবিরের ভাই তোমার কী ক্ষতি করল?’

আমি কী বলব বুঝতে না পেরে বেকুবের মতো হাসলাম। অথচ ধ্রুব নিরুদ্বেগ। ধ্রুবর গম্ভীর, শীতল চাহনি দেখেই ভেতরটা কেমন নড়েচড়ে উঠল। পা দুটো আপনাআপনিই পেছন দিকে ছুটে যেতে চাইল। কিন্তু ধ্রুব সেই সুযোগটা দিল না। আমাকে আকাশসম অবাক করে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘ পালানোর চেষ্টা করবে না। নিচে নামো। সিঁড়ির নিচে আসো।’

আমি চোখ বড় বড় করে চাইলাম। সন্দেহে চিকচিক করে উঠল চোখ। এই স্বল্পভাষী, চুপচাপ ছেলেটিকে তো আমি মহা গাধা মনে করেছিলাম। বানিয়ে বসেছিলাম, ভদ্রতার পিরামিড। সাগর, মহাসাগর। কিন্তু এ তো দেখি মহা ধুরন্ধর। ফাঁকা সিঁড়ি দেখেই মেয়েদের অন্ধকার সিঁড়ির নিচে ডাকে! ইয়া মা’বুদ! কী সাংঘাতিক!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here