ভালোবাসি_বলে_দাও #আরিশ❤আরু #Suraiya_Aayat 15.

0
315

#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat

15.

ফুপির বাসার সামনে গাড়ি থামালেন উনি। এতোটা রাস্তা সানা আর আমি বকবক করতে করতে আসছিলাম তাই খেয়ালই ছিল না যে ওনার আমাদেরকে নিয়ে হাতিরঝিলে যাওয়ার কথা ছিল। গাড়ি থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম আরিশ ভাইয়া তার নিজের বাসার সামনে এনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন। আমি কটমট করে বললাম,
‘আপনি আপনার কথার খেলাফ করলেন কেন? ‘
উনি বুঝেও যেন না বোঝার ভান করেন বললেন,
‘কিসের কথা বলছো? ‘

সানা একবার আমার দিকে আর একবার ওনার দিকে তাকাচ্ছে, এতো হরতালের মধ্যে সে বুঝতে পারছে না যে কি চলছে।
ওনার এমন গা ছাড়া হাবভাব দেখে আমি বললাম,
‘আপনার না হাতির ঝিল নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল! তারপর না ফুপির হাতের কাচ্চি খাওয়ার কথা ছিল। ‘

আমার কথা শুনে সানা বলে উঠলো,
‘আরে ঠিক আছে ছাড় না। আজকে আর যেতে হয়না। এমনিতেও এত খাওয়া দাওয়া করে আমার আর যেতে ইচ্ছে করবে না, আমি তো একটা ঘুম দেবও। ‘

সানার কথা শুনে সানাকে হাত দিয়ে আলতো করে একটা চাটি মারতেই ও উঁ করে গাড়ি থেকে নেমে বলল,
‘আমি আসছি তোরা ঝগড়া কর। ‘

কথাটা বলে সানা হাটতে লাগলো। আরিশ ভাইয়া আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন,
‘তাহলে কি কাচ্চি খাবে না? হাতিরঝিল ঘুরিয়ে বাসায় ফেরত দিয়ে আসবো আপনাকে? ‘

ওনার এমন কথা শুনে আমার রাগ হলো, আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘এই আপনি গাড়ি থেকে নামেন তো। আপনার মুখ দেখতে পাচ্ছি না। মুখ না দেখলে ঝগড়া করতে ভালো লাগে না। নামেন। ‘

আমি গাড়ি থেকে নামলাম দেখে উনিও নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। ওনাকে দেখে বলে উঠলাম,
‘আপনি আমার মতো একটা এতো ভালো মেয়ের সাথে এমন ধোকাবাজিটা করতে পারলেন? আপনার বিয়ে হবে না দেখিয়েন।’

উনি ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
‘তুমি বললেও হবে না বললেও হবে। এখন বাসায় চলো। খাওয়া হয়ে গেলে কিছুখন আম্মুর সাথে গল্প করে তারপর এগারোটা নাগাদ যাবো। খুশি এবার? ‘

আমি ওনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম,
‘সত্যি তো? এই কথার মধ্যেও আবার ভেজাল নেই তো? ‘

উনি জবাব না দিয়ে আমার হাত ধরে বাসার দিকে যেতে লাগলেন। উনি যা দ্রুত গতিতে হাটেন আমি ওনার সাথে পেরে উঠি না, বিধায় ওনার সাথে তাল মেলাতে হালকা পাতলা দৌড়মূলক হাটতে লাগলাম।
বাসায় ঢুকতে ঢুকতে দেখলাম একটা ছোট্ট আর মাঝারী সাইজের কাঠগোলাপ গাছ, তাতে এখনো ফুল আসেনি। আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম, আনন্দিত হলাম খুব। উনি সমান তালে হাটছেন। বাসার দরজার কাছে যেতেই আমি ওনার পিঠে হাত দিয়ে টোকা দিতেই উনি প্রশ্ন না করে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে কি হয়েছে?

আমি অনেক উৎসাহ আর আগ্ৰহের সাথে বললাম,
‘আপনার বাসায় কাঠগোলাপ গাছ আছে বলেননি তো? ‘
উনি গাছটার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,
‘ কেন আমার বাসায় থাকতে পারে না? ‘

আমি বিরক্তিসূচক ভাব নিয়ে বললাম,
‘এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলেন কেন হ্যাঁ? আমি কি তা বলেছি। আগে আপনার বাসায় দেখিনি তাই তো বললাম। ‘

ওনাকে একটু রাগ দেখিয়ে কথা বলতেই উনি যেন দমে গেলেন। তারপর বেশ নরমসরম ভাবে বললেন,
‘কদিন আগেই কিনেছি। এটা তুমি দেখোনি আগে। ‘

আমি ওনার কথাতে খুশি হয়ে বললাম,
‘এটাতে ফুল আসবে কবে? ‘

‘আমার বিয়ের পর। ‘

‘ এটা কোন কথা? ফাজলামি না করে বলেন। ‘

‘ফাজলামি না। আমার বউ যতদিনে এ বাসায় আসবে ততোদিনে গাছে ফুল ফুটে যাবে। ‘

আমি ওনার কথার ধার না ধেরে বললাম,
‘ ছোট গাছেও তো ফুল আসে আপনি গাছটাকে বলেন না ফুল ফোটাতে। আমি দেখবো। ‘

উনি ধমক দিলেন।
‘স্টুপিড গাছকে বললেই ফুল ফোঁটে? ‘

‘ আচ্ছা তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি একটা বউ আনেন না, জলদি বিয়ে করেন, গাছের ফুলটা ফুটুক আমি একটা ফুল নিবো এই গাছের।’

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘ আর ইউ সিওর? ‘

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে গাছটার দিকে তাকালাম। তারপর ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে আছেন।
‘সমস্যা নাই, ফুল ফুটে গেলে আপনি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েন সমস্যা নাই। ‘

উনি আমার কথা শুনে একটা ধমক দিয়ে বললেন,
‘স্টুপিড একটা। একবার বিয়ে করলে তাকে আর ছাড়ছি না এটা মনে রেখো। ‘

ওনার ধমক খেয়ে আমি বললাম,
‘ আপনার এই হিটলার গিরি আমি সহ্য করছি কিন্তু আপনার বউ করবে না হু্! ‘

আমার এমন কথার উনি আর জবাব দিলেন না, উনি জানেন যে আমি সহজে দমে যাওয়ার নই, তাই কথায় কথা বাড়বে। বিধায় উনি চুপ করে গেলেন।

বাসার ভিতর ঢুকতেই দেখলাম ফুপি রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ফুপিকে এমন ভাবে দেখে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। উনি আমার হাতটা ছেড়ে ততখনে ওনার রুমে চলে গেছেন। আমি বেশিকিছু না ভেবে ফুপিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই ফুপি রাগী গলায় বলল,
‘ ছাড় আমাকে। একদম আসবি না আমার কাছে। তুই গেট থেকেই বাসায় ফিরে যেতি যখন ফুপির থেকে হাতিরঝিল প্রিয়। ‘

আমি ফুপির কথাতে বুঝলাম ফুপির এই অভিমানের কারন। ফুপিকে মানানো অতোটাও কঠিন না কিন্তু ফুপির হিটলার ছেলে একবার রেগে গেলে তাকে মানানো মুশকিল। আমি ফুপির গালে চুমু একে বললাম,

‘আমার ফুপিটা এই কারনে রাগ করেছে? আরে তুমি আমার ওপর রাগ করছো কেন। আমি তো ভাবলাম তোমার ছেলে আমাকে মিথ্যা কথা বলেছে তাই ওনার সাথে এতখন ঝগড়া করছিলাম। হাতিরঝিল না গেলে না কিন্তু আমার ফুপির কাছে আসা চাই। রাগ করে না।

নিমেষেই ফুপি গলে গেল। আমি হা হা করে হেসে দিলাম, সানা সোফাতে বসে আমাদের দুজনকে দেখে পিটপিট করে হাসছে।

/

রাতে এগারোটা পার করে ঘড়ির কাটা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। আমি ওনার জন্য গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছি, উনি বাইকের চাবি আনতে গেছেন। আমি ওনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে উনি চলে এলেন আর বললেন,
‘ ফোন কোথায় তোমার? ‘

‘আনিনি আমি। ‘

উনি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
‘কেন? ‘

আমি মুখ গোমরা করে বললাম,
‘ কি লাভ ওই ফোন নিয়ে ঘুরে? শুধু কল যাওয়া আসা আর ছবি তোলা ছাড়া কিছুই হয় না। ‘

উনি বকা দিলেন।
‘কতোবার কল করেছি এর মধ্যে হিসাব আছে? ‘

‘আপনার আবার এখন কি দরকার? কিন্তু এখন একদম এটা বলবেন না যেন যে নিয়ে যাবেন না। ‘

‘ তোমার সাথে কথা বলায় বেকার। পিছনে ওঠো। ‘

উনি বাইক স্টার্ট দিলেন। আমি বাইকে উঠতেই উনি বললেন,
‘ পাকনামি করে না ধরে বসলে খবর আছে। ধরে বসো ‘

আমি আলতো করে ওনার কাধে হাত রাখতেই উনি বললেন,
‘ জলদি ফিরবো কিন্তু। ‘

‘আরে আগে চলেন তো। ‘

উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। প্রায় আধাঘন্টা পর হাতির ঝিল পৌছালাম। উনি বাইক সাইডে রাখছেন তখনই আমি সামনের দিকে দ্রুত গতিতে হাটতে লাগলাম। উনি দৌড়ে আমার কাছে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন,
‘ একা একা কোথায় যাচ্ছো? পা দুটো বেশি লম্বা হয়ে গেছে? ‘

আমি জবাব দিলাম না, বুঝতে পারলাম যে উনি কি কারনে আমাকে বকা দিলেন। সামনেই কয়েকটা ছেলে গোল করে মদের আসর জমিয়েছে। আমি খানিকটা দমে গেলাম। উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছেন, নিজেকে ওনার সাথে অনেক নিরাপদ অনুভব করছি।

ছেলেগুলো আমাদের দুজনকে দেখে অনেক কটু কথা বলছেন কিন্তু উনি তাতে তোয়াক্কা করলেন না। উনি হাটতে হাটতে একটা জায়গায় গিয়ে হাতটা ছেড়ে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি ওনার পাশে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে বললাম,
‘সরি। ‘

উনি জবাব দিলেন না। ওনার পকেট থেকে আমার ফোনটা বার করে বললেন,
‘ এই নাও। সবকিছু চালু করে দিয়েছি, শুধু আগের মতো অপব্যবহার না করলেই হলো। ‘

ওনার এমন কথা শুনে আমার হাতটা আপনা আপনিই গালে চলে গেল।
‘ আমার আর চড় খাওয়ার ইচ্ছা নাই। ‘

কথাটা বলে ওনার হাত থেকে ফোনটা নিলাম। সবকিছু আগের মতো চলছে কি তা দেখলাম না। শুধু ফোনটা একবার ধরে ওনার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। উনি জিজ্ঞাসা করলেন কি সমস্যা?

আমি ওনাকে বললাম,
‘এখন পকেট রাখেন বাসায় গিয়ে নেবো। এখানে সুন্দর বাতাস বইছে, আপতত সেটাই উপভোগ করার চেষ্টা করছি। ‘
উনি ফোনটা পকেটে রাখলেন। আমরা দুজনেই চুপ। হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই আমি কিছু না ভেবে খপ করে ওনার হাতটা ধরলাম,
‘আরিশ ভইয়া চলেন না জলে পা ডুবিয়ে বসি। আপনারো অনেক ভালো লাগবে আসেন। ‘

ওনাকে না বলার সুযোগটাও বিন্দুমাত্র দিলাম না, ওনাকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলাম নীচে ঝিলের ধারে। আমি ওনাকে ইশারা করে বললাম,
‘চলেন বসি। ‘

ওনাকে নিয়ে বসলাম, আমি জলে পা ঝাপাচ্ছি। ভীষনরকম ভালো লাগছে আমার। আমি জলের মধ্যে হাত দিয়ে আর পা দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বললাম,
‘আচ্ছা আরিশ ভইয়া আপনি আমার সব আবদার গুলো কেন রাখেন বলেন তো? ‘

উনি চোখ বাকিয়ে বললেন,
‘ কেন তোমার সমস্যা আছে? ‘

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘ একদম না কিন্তু মাঝে মাঝে না করলে আপনাকে আমি যে দু একটা ঝাড়ি দেওয়ার সুযোগ পেতাম সেগুলোও পাইনা ‘

‘ স্টুপিড। ‘

আমি কৌতুহল নিয়ে ওনার দিক তাকালাম। উনি জলের দিকে তাকিয়ে আছেন। ওনাকে দেখলেই আমার মনে হয় উনি বড্ড প্রেমিক মানুষ। ওনার মনে কারোর জন্য এক আকাশ প্রেম জমে আছে, উনি বোধহয় কাওকে বড্ড ভালবাসেন। কিন্তু আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, যে মানুষ এতো ধমক দিয়ে কথা বলে তার জীবনে প্রেম নামক বস্তুটা থাকতেই পারে না। আমি আগে পিছে না ভেবে বললাম,
‘ আচ্ছা আপনি কাওকে ভালোবাসেন? ‘

উনি আমার কথা শুনে আমার চোখের দিক তাকালেন। আমি উত্তর এর আশায় চেয়ে আছি ওনার দিকে। বেশ কিছুখন থেমে উনি উত্তর দিলেন,
‘হমম। ‘

ওনার কথাতে আমার শরীর জুড়ে শিহরন বয়ে গেল। আবাক হয়ে চেয়ে রইলাম আমি। আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘আপনিও কাওকে ভালবাসতে পারেন? ‘

উনি আমার কথাতে রেগে গেলেন না কেবল হাসলেন। এই মুহূর্তে সেই মেয়ের প্রতি রাগ হিংসা সব দমে গেল আমার। খুব জানতে ইচ্ছা হলো ওনার ভালোবাসা কেমন।
কৌতুহল নিয়ে বললাম,
‘আচ্ছা আপনার ভালবাসা কেমন?’

উনি আমার গালদুটো টেনে বললেন,
‘তোমার ভাষায় যেটা টুইটুই তেমন। ‘

‘মজা করবেন না, বলেন সে কেমন। ‘

উনি উঠে দাঁড়ালেন। ওনার সাথে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। উনি কেবল একটাই কথা বললেন,
‘ কখনো নিজেকে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখো তাহলে বুঝবে যে তুমি কারোর মায়াবতী। ‘

আমি ওনার কথার আগা মাথা বুঝলাম না, না বুঝে বললাম,
‘ আপনার প্রেমিকা কেমন জানতে চাইলাম আমার কথা জানতে চাইনি। আমি জানি আমি সুন্দর আর টুইটুই। এই আরিশ ভাই বলেন না সে কেমন। ‘

উনি হাটতে হাটতে বললেন,
‘ নো মোর ওয়ার্ডস। বাসায় চলো। তুমি বোঝোনি আর বোঝাতেও যে আমার কতো বছর টাইম লাগবে আমি জানি না। স্টুপিড একটা। ‘

আমি মুখ গোমরা করে ওনার পিছন পিছন হাটতে লাগলাম। আমার জানা হলো না সে কে। তবে তার প্রতি হিংসা হলো বেশ।
তবে উনিও ভালোবাসতে পারেন?

#চলবে,,,

বড়ো বড়ো কমেন্ট চাই🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here