#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল
#তানিয়া
পর্ব:২৯
প্রিয় মানুষটার ঘরটা এখন আদ্যর দখলে।তার সকল সুখ যেন এ ঘরে বন্দী। আদ্য এখন মেহুর ঘরেই দিন রাত যাপন করে।আদ্যর বারবার মনে হয় এ ঘরে মেহু এখনো বাস করে।আদ্য প্রায় মেহুকে দেখে জানে সত্যি না।তার অবচেতন মন মেহুকে দেখায় তাও মন্দ কি দেখতে তো পাচ্ছে। এত সেদিন রাতে আদ্য ছাদের ফুলগুলোতে হাত দিচ্ছিল তখনি পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠ শুনে,
“আপনি কি করছেন এখানে?ফুলগুলোতে হাত দিবেন না কারণ এগুলোতে কলি আসতে শুরু করেছে হাত লাগালে সমস্যা। ”
“কি সমস্যা শুনি? ”
“অত কথা বলতে পারবো না।আপনাকে হাত দিতে নিষেধ করেছি ব্যস।”
“মেহু বাবু কেমন আছে? ”
“বাবু আছে বাবুর মতো। অনেকটা আপনার মতো দুষ্ট হয়েছে।মাঝে মধ্যে এমনভাবে কিক মারে যে আমি আঁতকে উঠি বারবার।বাবুকে একটু বলে দিন তো যাতে কিক না দেয় আমি কষ্ট পায় তো।”
বলেই মেহু হি হি করে হেসে উঠে। হঠাৎ আদ্য লক্ষ্য করে তার সামনে কেউ নেই। আদ্য চারপাশে তাকায় কিন্তু কোথাও মেহু নেই। আদ্য হু হু করে কেঁদে উঠে। ভালোবাসার মানুষটা যে এভাবে হারিয়ে যাবে কে জানতো?আদ্য মেহুর এ শাস্তির জন্য নিজেকে দায়ী করে।কারণ সে যদি আগেই সবাইকে বলে দিতো ভালোবাসার কথা, আগেই যদি সাবধান হতো মেহুর প্রতি,সোহানাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি টা যদি না করতো তাহলে হয়তো সবটা ভালো হতো। আদ্যর যখনি মেহুর কথা মনে পড়ে তখনি সে দেয়ালে নিজের হাতে আঘাত করে।
আহসান ভিলা যেন মানুষহীন একটা আস্তানা হয়ে গেছে। মানুষ আছে কিন্তু নিষ্প্রাণ। শাহেদ আহসানের সাথে এখন আদ্য বা লুৎফার কথা হয় না বললেই চলে।মোটামুটি অন্যরা অল্পস্বল্প কথা বলে।শাহেদকে একসময় যারা ভয় পেতো আজকাল তারা সবাই যেন একধরনের ঘৃণা নিয়ে তাকে দেখে।শাহেদ যা করেছে তাতে ঘৃণা ছাড়া বৈকি শ্রদ্ধা আসে না।তবুও সামান্য শ্রদ্ধা যে কেউ কেউ করে তাতে শাহেদ স্বস্তি পায়।
আজগর আর মোজাম্মেলকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেলে তাদের রিমান্ড দেওয়া হয়। যার ফলে তারা কিডন্যাপের বিষয় টা স্বীকার করে শুধু তাই নয় কার কথায় তারা কাজটা করেছে তাও জানায়।
সোহানা বেশ কিছু দিন যখন আদ্যর ব্যবহারে পরিবর্তন পায় তখনি সে শাহেদকে আদ্যর ব্যবহার সম্পর্কে কথা বলে।শাহেদ সোহানার কথা শোনার পর বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। ঠিক তখনি তার মাথায় একটা খারাপ বুদ্ধি আসে।সে টাকার বিনিময়ে মেহুকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করে আর সেটার জন্য হাত মিলায় মোজাম্মেলের সঙ্গে। মোজাম্মেল প্রথমে রাজি না হলেও পরে টাকার ফাঁদে পড়ে ঠিকই হাত মেলায়।আর সূত্র অনুযায়ী সে মেহুকে কিডন্যাপ করে।এরপর যখন মেহুর প্রেগন্যান্টের বিষয়টা ধরা পড়ে তখন ঘরের মধ্যে অন্য ঘটনা ঘটে যায়। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শাহেদ সোহানাকে দেশে নিয়ে আসে।তারপর সোহানাকে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে মেহুর সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ঢুকাতে থাকে।
“আদ্য কেনো তুমি ঐ মেয়ের জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো।আদ্য তুমি তো আামকে বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসো আর আমাকে বিয়ে করবে।তাহলে কেনো ঐ কাজের মেয়ের জন্য আমাদের সম্পর্কের ফাটল ধরাচ্ছো।”
সোহানা কথাটা বলতেই আদ্য টাটিয়ে একটা চড় বসায় সোহানার গালে।সোহানা হতবাক হয়ে যায় আদ্যর ব্যবহারে।
“ব্লাডি রাসকেল।মেহুকে নিয়ে কিছু বললে জিভ টেনে নিয়ে আসবো।কাকে কাজের মেয়ে বলছো ও আমার ভালোবাসা আমার বৌ।ওকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বললে তোমার হাল কি হবে ভাবতে পারবে না।আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা পারে অন্যের সংসার ভাঙতে।তোমাকে কি ভালোবাসবো তোমাকে শুধু ঘৃণা আর করুণা করা যায় বুঝলে। আজকের পর আমার সামনে আসলে মেরে পুঁতে ফেলবো মনে রেখে। গেট আউট ড্যামেট!”
সোহানা কাঁদতে কাঁদতে আদ্যর রুম থেকে বের হয়ে যায়। শাহেদ তাকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু আদ্যর ব্যবহারে সোহানা এতটা ব্যথিত হয় যে একেবারে দেশ ছেড়ে সেদিনই চলে যায়।
রিমান্ডে রাখার ফলে মোজাম্মেল সবটা স্বীকার করে নেয়।মেহুর বাবা মাকে হত্যা করা মেহুকে কিডন্যাপ আর এও জানায় শাহেদের কথা মতো তারা কাজটা করে।এরপর শাহদেকে পুলিশে নিয়ে গেলে। কেস কোর্টে উঠলে একসময় মোজম্মেলের ফাঁসির আদেশ হয়।আজগর আর শাহেদের ছ’মাসের কারাদণ্ড। কিন্তু টাকার জোরে শাহেদ বেরিয়ে আসে।কিন্তু বাসায় আসার পর সব পরিবর্তন হয়ে যায়। শাহেদ যে ঘৃণার কাজটা করেছিল তার জন্যই আজ এ বাড়ির এ অবস্থা। মেহুর বাড়ি ছাড়ার জন্য শাহেদ সবচেয়ে বড় অপরাধী।
ঝকঝকে সকালে ধোয়া উঠা কফিটা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে কিন্তু মেহুর সেদিকে নজর নেই। সে অন্যমনস্ক হয়ে প্রকৃতি দেখছে।আরকিছু সময় এরপর মেহুর জীবনে আসবে ফুটফুটে নতুন অতিথি সেটা ভাবতেই মেহুর চোখ ভরে উঠে। কে জানতো একদিন মেহুর জীবনে মাতৃত্বের সুখ আসবে তাও এত তাড়াতাড়ি।
বাড়ি ছাড়ার পর মেহু সোজা চলে যায় রোকসানার কাছে যার কাছে সে প্রথম আশ্রিতা ছিল।নিশ্চয়ই এ মুহুর্তে তার সবটা শোনার পর রোকসানা তাকে ফিরিয়ে দিবে না।মেহু ভয়ে ছিল যদি সে জায়গায় রোকসানা না থাকে।ভাগ্যক্রমে রোকসানকে পেয়ে যায় মেহু আর এতদিন পর মেহুকে দেখেই আবেগে জড়িয়ে ধরে রোকসানা।
“মেহু তুমি এতদিন পর আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে হয়তো তোমার চাচা পেয়ে গেছেন।সেদিন তুমি এভাবে চলে গেলে আমি তো প্রায় অস্থির। আল্লাহকে ডাকছিলাম যেন তিনি তোমাকে রক্ষা করেন।জানো তোমার জন্য একটা হোস্টেল সিটের ব্যবস্থা করে বাসায় আসলাম।ওমা তুমি চলে গেলে। হোস্টেল সুপারভাইজারের কাছ থেকে তোমার চিঠি পায়। কি যে চিন্তায় ছিলাম? তাছাড়া তোমার এ অবস্থা কেনো?”
রোকসানার কথা শুনে মেহু নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা।হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। রোকসানা হকচকে যায়।
“কি হলো মেহু কি হয়েছে? ”
মেহু কান্না সামলানোর চেষ্টা চালায় কিন্তু কান্না যেন থামতেই চাইছে না বরং বেড়েই চলেছে।
মেহু এখন সিলেটের একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৈশ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করছে।রোকসানার সহযোগীতায় মেহু কাজটা পায় আর এ কাজের অসামান্য অবদান রাখে শফিক। শফিকরা এমন একটা প্রতিষ্ঠান চালায় যেখানে বয়স্ক শিক্ষার উদ্যোগে নেওয়া হয় আর রোকসানার খুব ভালো বন্ধু হলো শফিক।রোকসানা মেহুর জন্য কাজ খুঁজলে শফিকই তাকে এ ব্যবস্থা করে দেয়।শফিক আর মেহু দুজনের পোস্টিং এখন সিলেটে। সেখানের একটা স্কুলে মেহু শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োজিত।সবার কাছে মেহু এখন জান্নাত আপা নামে পরিচিত।প্রায় সাত মাস হলো মেহু এখানে এসেছে। এরমধ্যে সবার কাছে অনেক প্রিয় হয়ে গেছে সে।
“আপা আপনার চা ঠান্ডা হইয়া যাচ্ছে। আপনি খাইবেন না?”
“হুমম খাবো কিন্তু রিতু তোমাকে কতবার বলেছি এভাবে কথা না বলতে হইয়া খাইবা এসব কি? সুন্দর করে বলবে হয়ে যাচ্ছে, খাবেন না।বুঝলে?”
“জ্বি আপা।”
“স্কুলে কি সবাই এসেছে?”
“না এখনো আসে নাই প্রায় বাকি আছে। আপা আপনি তো বলছিলেন আপনার শরীর খারাপ যাবেন আজ পড়াতে?”
“হুমম রিতু তুমি সব ঠিক করো।”
রিতু হচ্ছে মেহুর সাথে থাকে।এ গ্রামেরই এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। মেহুর সাথে থাকে খায় আর মেহুর সেবা করে।মেহু যেখানে থাকে তার একপাশে থাকার ঘর অন্য পাশে স্কুল তাই যাওয়া আসার সমস্যা হয় না।মেহুকে এখন বলতে গেলে রান্না করতেই হয় না গ্রামের এ ঘর ওঘর থেকে তার জন্য খাবার আসে।সাড়ে আটমাস চলছে মেহুর।হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয় তবুও সুযোগ পেলে এদিক ওদিক হাঁটতে বের হয়।
গ্রামের সবাই মেহুকে খুব স্নেহ করে।মেহু যখন প্রথম এ গ্রামে আসে তখন অনেকে তাকে নিয়ে উপহাস করে।বিশেষ করে বয়স্ক শিক্ষার কথা বললে মেহুকে অনেক অপমান নিতে হয়।কিন্তু মেহুর সুন্দর আর মিষ্টি ব্যবহারে আস্তে আস্তে গড়ে উঠে নৈশ বিদ্যালয়।আর সেখান থেকে নাম ছড়িয়ে পড়ে জান্নাত আপা।
শফিকের কাজ থাকে ঢাকায় তাই এদিকটা মেহুকে সামলাতে হয়।কিন্তু এখন শফিক সিলেটে থাকে কারণ মেহুর ওপর চাপ দেওয়া সম্ভব না।তাছাড়া বাচ্চার কন্ডিশন একটু রিস্কি যে কোনো সময় বাচ্চা সিজার করাতে হবে।মেহুর শরীরের জন্য নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না।শফিক বিশেষ করে মেহুর খোঁজ রাখে।
লুৎফা আদ্যর সামনে সহজে কথা বলে না আর বললেও আদ্য হা হু বলে জবাব দেয়।লুৎফা বুঝে আদ্যর মনে তার জন্য একটা বিরাট ক্ষোভ জমে আছে। যে ছেলে মা-কে এতো ভালোবাসতো মায়ের সবকিছুকে সহজ করে মেনে নিতো সেই ছেলেকে এভাবে তার জন্য কষ্ট পেতে হবে লুৎফা ভাবে নি।তবুও সে চেষ্টা চালায় আদ্যকে খুশি রাখার।প্রতি মোনাজাতে লুৎফা মেহুকে খুঁজে পাওয়ার প্রার্থনা করে।
জাফলং ভ্রমণে এসে সবার মন উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে।আহসান ভিলা যেন মৃত বাড়ি আর সেই বাড়ির মানুষের মনে সামান্য আনন্দ জাগাতে সূচী আর নীলা এ ভ্রমণের ব্যবস্থা করে। আদ্য একেবারে না শব্দের সাথে সখ্যতা করেছিল কিন্তু লুৎফা নিজের দোষ আর অপরাধকে এমনভাবে তুলে ধরে যার জন্য আদ্য বাধ্য হয় সিলেটে আসতে।মূলত আদ্যকে খুশি করতে এ ট্রিপ।
সবাই হৈ হুল্লোড় করছে কিন্তু আদ্যর মনে আনন্দ নেই। তার আনন্দ তো অনেক আগেই চলে গেছে। সেটা তো মেহু নিয়ে গেছে তবুও কাছের মানুষকে খুশী রাখতে তাদের মতো করে আচরণ করা এখন শ্রেয়।
আদ্য হাঁটতে বের হয়েছে। তার বেশ ভালোই লাগছে।অনেকদিন ঘরকুনো ছিল বলে বাইরের আবহাওয়া গায়ে লাগে নি।বাড়ির সবাই গেছে জাফলং বীচে।আদ্য হাটতে হাঁটতে অনেকটা গ্রামের ভেতরে চলে এসেছে আর তখনি সে একটা জটলা দেখতে পায়।এগিয়ে যেতেই দেখে এক ভদ্রলোক আধমরা হয়ে পড়ে আছে। তাকে ঘিরে জনগণ। আদ্য লোকটার সামনে যেতেই লোকটা আধ হুঁশে কি জানি বললো আদ্য বুঝলো না।আদ্য আশেপাশের কয়েকজনকে বলে ভদ্রলোককে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান গিয়ে এডমিট করাতেই ডাক্তাররা রোগী দেখে জানায় রোগীর প্রেসার একেবারে লো।এ মুহুর্তে স্যালাইন দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।আদ্য বেশকিছু সময় থাকার পর ডাক্তাররা বলে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রোগীকে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। আদ্য বাহির থেকে রোগীকে দেখে চলে গেলো ।
পরদিন সকালে আদ্য আবারও হাসপাতালে যায় কিন্তু ডাক্তার জানায় রোগীকে ডিসচার্জ করা হয়েছে। তবে লোকটা যাওয়ার আগে একটা কাগজ দিয়ে গেছে। আদ্য কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তেই জানতে পারে ভদ্রলোকের নাম শফিক।তিনি একটা ঠিকানাও দিয়ে গেছেন।আদ্য কাগজ হাতে চিন্তা করলো সেখানে যাবে কি যাবে না?
“আচ্ছা আপনি কি বলুন তো শফিক ভাই? আপনি জানেন আপনার সবসময় প্রেসারের সমস্যা হয়।কতবার বলেছি সাথে স্যালাইন রাখতে।প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হাতের কাছে রাখতে তা না। বরাবরই অবহেলা করেন।শুনি কাল যদি ঐ ভদ্রলোক আপনাকে হাসপাতালে না নিতো তাহলে কি হতো শুনি?”
“মেহু তুমি এত চিন্তা করছো কেনো?কিছু তো আর হয় নি।ভাগ্যিস ভদ্রলোক হাসপাতালে নিয়ে গেছিলেন না জানি কি হতো?যাই হোক একটা ধন্যবাদ দেওয়া হলো না নিশ্চয়ই হাসপাতালে যাবেন দেখা করতে?”
“তো আপনি কোনো ঠিকানা দিয়ে আসেন নি?ভর্তি হতে না হতেই এমনি চলা আসার তাড়া।বললাম একদিন থাকুন তাহলে অন্তত লোকটা আপনাকে পেতো না কালই চলে আসতে হলো।”
“মেহু খামোখা রাগ করছো। বললাম না তো এখন ভালো আছি।তাছাড়া আমি একজন নার্সকে একটা কাগজে আমার নাম আর ঠিকানা দিয়ে এসেছি। হয়তো ভদ্রলোক এখানে চলে আসতে পারেন।তা তোমার খবর কি?ইদানীং তো তোমার খবর পাওয়া যায় না।বেবি কেমন?ডেলিভারী কখন ডাক্তার কিছু জানিয়েছেন?”
“না শফিক ভাই এখনো কিছু জানায়নি তবে বলেছে খুব তাড়াতাড়ি হবে।”
“ওকে। তোমাকে বললাম কিছুদিন স্কুলে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করো।এখন তোমার রেস্ট দরকার। তুমি তো কথায় শুনো না।তাছাড়া কথায় কথায় যা রাগ তোমার তাতে তো বেবির সমস্যাও হতে পারে।”
“হুমম রাগ না হয়ে কি করবো শুনি?আপনি আমার কোন কথা শুনেন?যাই হোক খাবারটা রেখে গেলাম খেয়ে নিবেন।পারলে একবার ওখানে যাবেন সবার পড়াশোনাটা দেখে আসবেন।”
মেহুর কথায় শফিক হেসে দেয়। মেহু কথা শেষ করে চলে যায়।শফিক মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসে।এ মেয়েটা বড্ড বাচ্চা স্বভাবের।কিন্তু সেই মেয়েটাই খুব তাড়াতাড়ি বাচ্চা কোলে নিবে।ভাবতেই শফিকের হাসি পায়।
শফিক দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিতে দরজায় কড়া নড়ে। বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতে অপরিচিত একজন মানুষকে চোখে পড়ে। শফিক সরু চোখে তাকিয়ে থাকে।
“কেমন আছেন শফিক?”
“ভালো আপনি?”
“আমি আদ্য গতকাল আপনাকে আমিই হাসপাতালে নিয়ে গেছিলাম।”
“ওহ ওহ আপনিই সেই মানুষ। আসুন ভেতরে আসুন।কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিব ভাবতে পারছি না।আপনি কাল আমার যা উপকার করলেন।”
“ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াবে এটাই তো নিয়ম।যাই হোক এখন কেমন আছেন?”
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। তা আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কি একা থাকেন?”
“জি এখনো বিয়ে হয় নি তাছাড়া বাবা মা নেই। আপনি কি সিলেটে থাকেন?”
না আমি ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে জাফলং ঘুরতে এসেছি আর হাঁটতে হাঁটতে এ গ্রামে চলে আসি সেখানেই আপনার দেখা। ”
“ওহ ভালোই হলো।এ সুযোগে আপনার মতো একজন বন্ধু পেলাম। তা কি খাবেন?”
“কিছুই খাবো না আমি খেয়ে এসেছি।
তাহলে তো ভালোই। আসলে একজন মানুষ তো তাই সবসময় সবকিছুর ব্যবস্থা থাকে না।আপনার কি আর কোনো কাজ আছে? ”
“না এ মুহুর্তে আর কাজ নেই কেনো?”
“তাহলে আড্ডা দিতে পারি।আসলে সহজে কারো সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না।কাজ নিয়ে বিজি থাকি।আপনাকে পেলাম এ সুযোগে সময় কাটানো যায়। তাছাড়া এ গ্রামে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত একটা নৈশ বিদ্যালয় আছে যেখানে বয়স্কদের শিক্ষা দেওয়া হয়।সেখানে একজন নারী কাজ করেন।কিন্তু তিনি হয়তো কিছুদিন কাজটা করতে পারবেন না তাই আমাকে কাজ করতে হবে।যদি ফ্রী থাকেন তাহলে বিকেলে আপনাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো।”
“আমার সমস্যা নেই। আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি।তাছাড়া আপনারা শিক্ষার প্রসারে ভালো কাজ করছেন অবশ্যই আমি দেখতে যাবো।”
শফিক খুশী হয় আদ্যর ব্যবহারে।সারা দুপুর দু’জনে হেসেখেলে সময় কাটায়।শফিক লিকারের চা বানিয়ে আদ্যকে দেয়।খাওয়া হলে দুজনে বের হয় স্কুলের উদ্দেশ্যে।
,
,
,
চলবে……..