হৃদয়ের_মাঝে_তুই #লেখিকা__ফিহা_আহমেদ #পর্বসংখ্যা__০৪

0
746

#হৃদয়ের_মাঝে_তুই
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৪

মোবাইল বাজার শব্দে ফিহার আরামের ঘুমটা ভেঙে গেল।

ফিহার মাথা গরম হয়ে গেল। আমার আরামের ঘুমটা নষ্ট করলো কোন হনুমানরে। ফিহা কল রিসিভ করে,,, কোন হনুমানরে তুই আমার সাধের ঘুমখানা ভেঙে দিলি।গন্ডার, হনুমান,হাতি কোথাকার।কাজ নেই নাকি বসে বসে কেবল মেয়েদের ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করা।

ফোনের ওইপাশ থেকে লোকটি গম্ভীর কণ্ঠে বললো,, ফিহা,,,।

ফিহা এতক্ষণে নিজের মধ্যে আসলো।
এইরে এইটা ফাহাদ স্যার এর গলা।হায় আল্লাহ ফিহা তুই এটা কি করলি। কে ফোন করলো না দেখেই গালাগাল করলি।আজকে তুই শেষ ফিহা। আজকে ফাহাদ নামের রাক্ষসটা তোকে গিলে খাবে।

ফিহাঃ সরি সরি স্যার। আমি সত্যিই জানতাম না আপনি ছিলেন। সরি স্যার।

ফাহাদঃ ছি ফিহা এগুলো কেমন ভাষা ইউজ করো তুমি। এখন থেকে এইসব ভাষা যেন আর না শুনি।তাহলে শাস্তির কথা কি মনে আছে।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আজকে মেলায় যাব আর বর্নকে ও বলো। আমি আসছি তোমাদের বাসায়।
ফিহাঃ জি স্যার।

আমার ঘুম নষ্ট করে আসছে মেলায় ঘুরতে হনুমান একটা।
ফিহা বর্ন আপুর কাছে গিয়ে বললো ফাহাদ স্যার বললো মেলায় যাবে তোমাকে ও রেডি হতে বললো। ফিহা বলে নিজের রুমে চলে গেল রেডি হতে।।

বর্নের ভীষণ ভালো লাগছে ফাহাদ তাকে নিয়ে মেলায় যাবে।
আসলে বর্ন ছোট থেকেই ফাহাদকে ভালোবাসে কিন্তু এখন ও বলতে পারেনি।তারা দুজনেই সমবয়সী।

ফাহাদের বাবা অনিক চৌধুরী আর বর্ন আর ফিহার বাবা তাইমুর আহমেদ দুজন বাল্যকালের বন্ধু।
তাইমুর আহমেদ ফাহাদকে ছেলের মতো ভালোবাসেন।
অবশ্য ওনার কোনো ছেলে না থাকায় ফাহাদকে একটু বেশিই ভালোবাসেন।

ফিহা নীল রঙের শাড়ি পরলো, মুখে হালকা সাজ দিলো, ফিহা তার চিকন পাতলা ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিলো, নীল রঙের চুড়ি পরলো, সাথে মেচিং করা নীল রঙের কানের দুল পরলো। বাম পায়ে ফাহাদ এর দেওয়া কালো রঙের পায়েল পরলো। ব্যস এইটুকু।এতে ফিহাকে অস্পরীর মতো লাগছে।

ফিহা যখন নবম শ্রেণিতে পড়ে তখন ফাহাদ তার পনেরো তম জন্মদিনে পায়েল গিপ্ট করেছিলো।ফিহার অনেক পছন্দ হয়েছিলো। ফাহাদ যত উপহার দিয়েছিলো ফিহা সব উপহার যত্ন করে রেখেছে। সবগুলো উপহারের মাঝে ফিহার ফাহাদের দেওয়া পায়েল সব থেকে বেশি ভালো লাগে।সবসময় পায়েলটা যত্ন করে রাখে।

বর্ন রেডি হয়ে ফিহার রুমে এসে দেখলো ফিহা শাড়ির কুঁচি ঠিক করছে।বর্ন এগিয়ে এসে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে বোনের কুঁচি ঠিক করে দিয়েছে।
ফিহা দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,, পাগলি বোনটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে একদম পরীর মতোন।ফিহা লাজুক হেসে বললো,,, কি যে বলো না আপু তোমাকে সবুজ রঙের শাড়িতে অস্পরীর মতো লাগছে।
বর্নঃ হইছে আর পাম মারতে হবে না।চল।ফাহাদ গাড়ি নিয়ে নিচে ওয়েট করছে।চল।।

ফাহাদ মেলা পছন্দ করে না। শুধু তার প্রেয়সীর জন্য তার মেলায় যাওয়া। তার প্রেয়সী মেলায় ঘুরতে পছন্দ করে। তার প্রেয়সীর খুশির জন্য সব করতে রাজি।

একটু পর পর ফাহাদ দরজার দিকে তাকাচ্ছে। কখন বর্ন আর ফিহা আসবে।
এতক্ষণ লাগে রেডি হতে।
একটু পর দু বোন চলে আসল।
ফাহাদ তার প্রেয়সীর দিকে তাকাতেই থমকে গেল।
নীল শাড়িতে তার প্রেয়সীকে অস্পরীর থেকে কম লাগছে না।

ফিহাই ফাহাদের সেই ভালোবাসার মানুষটি।ফিহাকে কখনও নিজের ভালোবাসা বুঝতে দেয়নি ফাহাদ। তার প্রেয়সীকে সে ছোট থেকেই ভালোবাসে।

বাল্যকালের বন্ধু হওয়ার ছোট থেকেই এই বাড়িতে যাওয়া আসা হতো ফাহাদের বাবার সাথে।

বর্নঃ ফাহাদ আমরা রেডি চলো যাওয়া যাক।
ফিহা ফাহাদকে দেখছে,, আজ কত সুন্দর লাগছে স্যারকে নীল পাঞ্জাবীতে।
আরে আমার সাথে মেচিং হলো কেমনে। ব্রু কুঁচকে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছে ফিহা কেমনে কি কিছুই বুঝতে পারছে না।

ফাহাদঃ চলো গাড়িতে ওঠে বসো তোমরা।
ফাহাদ আর কিছু বলতে যাবে তার আগে বর্ন ফাহাদের পাশে ওঠে বসে পরলো।ফাহাদের খুব বিরক্ত লাগলো।ও চেয়েছিল তার °ফিহুপাখি°তার সাথে বসুক।
ফিহা ও চেয়েছিলো তার স্যার এর পাশে বসতে। মনটা খারাপ হয়ে গেল ফিহার। ফিহা গাড়ির পিছনের সিটে বসলো।
ফাহাদ কিছু বললো না বর্ন যদি ওলটা পাল্টা কিছু ভাবে তাই।
ফাহাদ গাড়ি স্টার্ট দিলো।

কিছুক্ষণ পর পর আড় চোখে ফাহাদকে দেখছে বর্ন।সত্যি ছেলেটা একটু বেশিই সুন্দর। এত সুন্দর না হলে ও পারতো।খাড়া নাক, ফর্সা মুখে চাপ দাড়িতে,, মাঝখানে খয়েরী ঠোঁটটার জন্য আর বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
ফিহা মন খারাপ করে গাড়ির জানলার কাছে মাথা রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আর ফাহাদ একটু পর পর লুকিং গ্লাস দিয়ে ফিহাকে দেখছে।বর্নের জন্য কিছু বলতে পারছে না। না হলে অনেক বকে দিতো।এইভাবে জানালায় মাথা দিয়ে রাখলে যদি কোনো বিপদ হয়।তাই ফাহাদ গাড়ির গতি স্লো করে দিলো। আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে। ফিহার যাতে কোনো সমস্যা না হয়।

দু ঘন্টা পর তারা মেলায় পৌঁছালো।
গাড়ি থেকে নেমে ফিহার মন ভালো হয়ে গেল। মেলাতে ঘুরতে তার অনেক ভালো লাগে।
তিনজন মেলার ভিতরে গেলো।

মেলাতে ঘুরতে ঘুরতে ফিহা একটা চুরির দোকানের সামনে এসে দাড়ালো। ঝুড়ি ভর্তি চুরি সাজিয়ে রেখেছে। লাল,নীল,বেগুনি, কালো,সবুজ,হলুদ সবগুলো কাচের চুরি ভীষন ভালো লাগলো।কিন্তু সাহস পাচ্ছে না এতগুলো চুরি নেওয়ার। স্যার যদি বকা দেয়।

চুরিগুলো নিয়ে ফিহা ঘাটাঘাটি করছে কোনটা নিবে বুঝতে পারছে না।
ফাহাদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পুরো ঝুড়িই কিনে নিলো।ফিহার চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠলো। বর্ন কালো আর নীল রঙের চুরি নিল।
নুপুরের দোকানে গেলো ফিহার একজোড়া নুপুর ভীষণ পছন্দ হয়েছে। বর্নের ও ফিহার পছন্দ করা নুপুরগুলো ভালো লেগেছে। ফিহা বলছে ফিহা নিবে বর্ন বলছে বর্ন নিবে।লেগে গেলো সমস্যা।
ফাহাদঃ স্ট,,,,,,,প। কি শুরু করলে তোমরা। নুপুর কারোরই কিনতে হবে না। অন্য কিছু দেখি চলো।
ফাহাদের ধমক খেয়ে দুজন চুপ হয়ে গেল।
আরও অনেক কিছু কিনলো।
ফিহা বায়না ধরলো ফুচকা খাবে। ফিহার জোরাজোরিতে ফাহাদ ফিহাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে গেলো।
আর বর্ন মেলা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।

ফিহাঃ মামা এক প্লেট ফুচকা দিন সাথে অনেক ঝাল ও দিয়েন।
ফাহাদ ব্রু কুঁচকালো ঝালের কথা শুনে। না জানি ঝাল খেয়ে এই মেয়ে কি করে বসে। এমনিতেই ফাহাদের এইসব খাবার একদম পছন্দ না। শরীরের জন্য ক্ষতিকর।ফিহা ফুচকা না খেয়ে কিছুতেই যাবে না তাই বাধ্য হয়ে আসলো।

ফুচকাওয়ালাঃ এই নিন আপা অনেক ঝাল কইরা ফুচকা দিছি।

ফিহা ফুচকার প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।এত ঝাল খেয়ে বেচারির অবস্থা খারাপ। চোখ দিয়ে জল পরছে।
ফাহাদ এইসব দেখে ফুচকাওয়ালাকে পানি দিতে বললো।
ফুচকাওয়ালা পানি দিতে গিয়ে দেখলো বোতলের পানি শেষ।
ভাইসাব পানি তো শেষ আমি নিয়া আইতাছি একটু বহেন।এই জামু আর আমু।

কিন্তু ফিহার অবস্থা খুব খারাপ বেশি ঝাল ছিলো ফুচকাগুলো।
পানি পানি দিন স্যার আমি আর পারছি না জলে যাচ্ছে।
আর বেশি করে ঝাল খাও। ডাপার একটা।

ফাহাদ আর উপায় না পেয়ে ফিহার ঝালে লাল হওয়া ঠোঁট গুলোতে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
ফাহাদের এমন কাজে ফিহা বরফের মতো জমে গেলো। ফাহাদ যে এমন কাজ করবে ফিহার কল্পনার বাহিরে ছিলো।ফাহাদের এতদিকে খেয়াল নাই। সে তার প্রেয়সীর ঠোঁটে মও হয়ে আছে।

এইদিকে ফুচকাওয়ালা পানি নিয়ে এসে এইসব দেখতে পেয়ে হাত থেকে পানির বোতলটা পরে গেলো।

আজকালকার পোলাপান যে কি শুরু করলো পাবলিক প্লেসে ও চুমাচুমি করে।ছি ছি কি দিন আসলো।না জানি আর কত কি দেখতে হবে। পাশে থাকা এক বয়স্ক মহিলা এই কথাটি বললো।
ফাহাদের এতক্ষণে হুশ আসলো।

ফিহাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে ফিহার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।

ফিহা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো ফাহাদের দিকে।একে তো আমায় চুমু খেলো আবার রাগ ও দেখাচ্ছে। ব্যাটা তো দেখছি আস্ত এক লুচু।

বর্ন একটা ঘড়ির দোকানে ঘড়ি চয়েস করছে। মূলত ফাহাদের জন্যই।ফাহাদকে দিবে বলে।
কিন্তু ফাহাদ এসে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলো। আর কিনা হলো না।
ফাহাদ ফিহার সাথে একটা ও কথা বলেনি আর।ওদের দুজনকে বাসায় দিয়ে আসলো।
বর্ন থাকার জন্য অনুরোধ করলো ফাহাদ কাজের নাম দিয়ে চলে আসল।

চলবে,,,,,,,,,,

[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

—————————————————————
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]
#ফিহা আহমেদ 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here