#হৃদয়ের_মাঝে_তুই(সিজন-০২)
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_০৮
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ❌]
ফিহার বাবা তাইমুর আহমেদ আজ বাসায় ফিরলেন।
মিসেস রাজিয়া স্বামীর জন্য হরেক রকমের খাবার রান্না করলেন ।
সবাই একসাথে খাবার শেষ করলো।
খাবার শেষে ফিহা, মিসেস রাজিয়া, তাইমুর আহমেদ সবাই একসাথে কিছুক্ষণ গল্প করলো।।
ফিহা তার রুমে চলে গেল।
তাইমুর আহমেদ মিসেস রাজিয়া কে বলে……………. ফিহার বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছি আমি।আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলের সাথে।তোমার কোনো আপওি আছে রাজিয়া।
মিসেস রাজিয়া মুচকি হেসে,,,,,,আপনি যা ভালো মনে করেন।
তাইমুর আহমেদঃ রাজিয়া এখনও আমি তোমার কাছে আপনি রয়ে গেলাম। তুমি হতে পারলাম না।
তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মিসেস রাজিয়া স্বামীর কথায় কোনো উওর দিলেন না।চুপ করে সব শুনে গেলেন।
ফিহা ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতেই পারছে না।ওই পেত্নীর জামাই কে দেখি চোখ বন্ধ করলে।
খুব বিরক্ত লাগছে।
শোয়া থেকে ওঠে হুমায়ুন আহমেদ এর 🍂অপেক্ষা 🍂বইটি নিয়ে পড়তে বসলো।
কিছুসময় বই পড়ার পর অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।ফিহা ভাবছে ধরব নাকি ধরবো না।
পরে রিসিভ করে,,,,,,,,,
ওই পাশ থেকে…… হ্যালো ফিহা আমি ঝিনুক।
ফিহাঃ তুই। এইটা কি তোর নতুন ফোন নাম্বার ।
ঝিনুকঃ না। আম্মুর ফোন নাম্বার । আমার মোবাইলে চার্জ নাই।তাই আম্মুরটা দিয়ে তোকে ফোন দিলাম।একটা দরকারি কথা বলতে।
ফিহাঃ ওহ্। আচ্ছা কি বলবি বল।
ঝিনুকঃ রিজভী স্যার এর ক্লাস এর সময় তুই লাইব্রেরীতে বই পড়ছিলি ক্লাস মিস করে। তখন প্রিন্সিপাল স্যার এসেছিলো……. কালকে নবীন বরন অনুষ্ঠান হবে।
ফিহাঃ ওই টাকলা প্রিন্সিপাল আসছিলো নাকি।আর কি বললো।
ঝিনুকঃ প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে থ্রাড ইয়ারের কিছু ভাইয়ারা ছিল। ওনাদের নবীন বরনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আমাদের ফাস্ট ইয়ারদের মেয়েদের জন্য নীল রঙের শাড়ি আর ছেলেদের জন্য সবুজ রঙের পাঞ্জাবী সিলেক্ট করেছে থ্রাড ইয়ারের ভাইয়েরা।
ফিহাঃ ওহ্।কিন্তু আমি শাড়ি পরতে পারি না।
ঝিনুকঃ তোর আম্মুরে বলিস।
ফিহাঃ হুম দেখি কি করা যায়।
ঝিনুকঃ শাড়ি পরে আসবি কিন্তু না হলে তোর খবর করে ছাড়ব আমি।
ফিহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে পরে আসমু।খুশি।
ঝিনুকঃ অনেক খুশি।
কথা শেষ করে ফিহা ঘুম দিলো।
★
এইদিকে বেচারা ফাহাদের ঘুম নেই। ফিহার ক্লাসে গিয়েছিল ফিহাকে একনজর দেখবে বলে।কিন্তু মহারানী দেখা ফেলাম না।
ফাহাদের ভীষন মন খারাপ লাগছে।ফিহাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
ফাহাদ আলমারি থেকে গিটার বের করে। ব্যালকনিতে গিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো…….
তোমার নামের রোদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাব কত্দুরে
এখন….ও…..(২)।।
আমার পোড়া কপালে
আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেন এলে জানি না
এখন…ও।।
ফন্দি আটে মন পালাবার
বন্দী আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই(২)।।
হলো শুরু সাতদিনে
এই খেলাধুলো রাতদিনে
জানি বারন করার সাধ্যি নেই
আর আমার……….।।
তোমার নামের মন্দিরে
আর তোমার নামের মসজিদে
আমি কথা দিয়ে এসেছি
বারেবার………..।।
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও…………
তুমি ইচ্ছে মতে আমাকে সাজাও………….
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই(২)………….।।
ফাহাদ গান শেষ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ব্যালকনিতেই ফাহাদ ঘুমিয়ে পরলো।
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই ফাহাদের ঘু ভেঙে যায়। নিজেকে ব্যালকনিতে দেখে…… তাহলে রাতে এইখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
ফাহাদঃ আজকে তো ফাস্ট ইয়ারদের নবীন বরন। প্রিন্সিপাল স্যার নবীন বরন সব দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন ।
ফাহাদ ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটি চলে আসল।
★
ফাহাদ, রওশান,জাহিদ আরও অনেকে মিলে স্টেজ সাজাচ্ছে।
হঠাৎ করে ফাহাদকে পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে। রওশান,জাহিদ…সবাই একসাথে বলে ওঠে………জে….রি….ন..।
ফাহাদ বিরক্তিকর কন্ঠে,,,,,,এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতামি জেরিন। ছাড় বলছি না হয় এখন খুব খারাপ হবে।
জেরিন ফাহাদকে ছেড়ে দিয়ে ফাহাদের সামনে এসে………………এমন করো কেন ফাহাদ বেবি।
আজকে কেমন লাগছে আমায় বলো। অনেক সুন্দর লাগছে না।
ফাহাদঃ তোকে না বললাম আমাকে বেবি বলে না ডাকতে।আর একবার বললে খুব খারাপ হবে।
জেরিনঃ ওইটা তো আদর করে বলি।
ফাহাদ মাথা গরম হয়ে গেল,,,,,,,, স্টপ জেরিন এই মুহুর্তে আমার সামনে থেকে আউট হ্।না হলে কি করব নিজে ও জানি না।
রওশান ফাহাদের কাঁধ ধরে,,,,, আজকে একটা অনুষ্ঠান ফাহাদ।মাথা ঠান্ডা কর আমি ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলছি।
রওশান এর কথায় ফাহাদ আর কিছু বললো না।
রওশান জেরিনকে চলে যেতে বললো।
জেরিন মন খারাপ করে চলে গেল।
জেরিন হাঁটছে আর ভাবছে……এত ভালোবাসি তোমায় ফাহাদ।অথচ তুমি কখনো আমার ভালোবাসা বুঝতে চাওনি।তুমি যদি আমার না হও তাহলে কারোর হতে পারবে না। আর না কারোর হতে দিব।যে আমার আর তোমার মাঝে আসবে তাকে সারাজীবনের জন্য সরিয়ে দিব।
লাবিবাঃ এই লারা সামনে দেখ এইটা জেরিন না
লারাঃ হ্যাঁ। ও ইউ-এস-এ থেকে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলো।এক মাস থাকবে বলেছিলো আমাকে। চল ওর কাছে যাওয়া যাক।
লাবিবাঃ চল।
লারা জেরিনের কাছে এসে…..জেরিন……বলতেই
জেরিন সামনে তাকাতেই অনেক খুশি হলো তার দুই বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখে।দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।
জেরিনঃ আজ দশ দিন পর তোদের দেখলাম।মনটা হুট করেই ভালো হয়ে গেল তোদের দেখে।
লাবিবাঃ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে।
জেরিনঃ কি করবো বল ফাহাদকে ছাড়া কষ্ট হচ্ছিল। ওকে না দেখলে আমার কেমন দম বন্ধ লাগে ।
লারাঃ ও….ও….।তাই বুঝি মহারানী এত তাড়াতাড়ি চলে আসলো।
জেরিনঃ হুম তোরা ও না। আগে থেকে ওনেক বেশি বান্দর হয়ে গেছিস।
★
রওশান গেইটের দিকে তাকাতেই তার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল……..
জাহিদঃ এই রওশান এইভাবে হা হয়ে কি দেখছিস।বেটা দিন দিন লুচু হচ্ছিস।তোর কতগুলো প্রেমিকা আছে তুই নিজেও জানিস না।
রওশান বিরক্ত হয়ে,,,,, আরে দূর একটু শান্তিতে দেখতে ও দিবি না।আর আমার এতগুলো প্রেমিকা দেখে তোর হিংসা হয়। নিজেতো একটা ও করতে পারলি না এখনো।
জাহিদঃ এইসব ফালতু কাজ করার ইচ্ছে ও আমার নাই।ভালোবাসলে একজনকেই ভালোবাসবো।
রওশান কিছু বললো না।
ওদের কথোপকথন শুনে ফাহাদ গেইটের দিকে তাকাতেই থমকে গেল,,,,,,,,,, আজকে ফিহাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নীল রঙের শাড়িতে নীল পরীর মতো লাগছে। ফর্সা শরীরে নীল রঙটা দারুণ মানিয়েছে।
হাতে নীল চুরি,নীল কানের দুল, মাথার খোঁপায় বেলীফুলের গাজরা। সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
ফাহাদ চোখ ফিরাতেই পারছে না ফিহার থেকে।
ফিহাঃ ঝিনুক চল স্টেজটা দেখে আসি।
ঝিনুকঃ চল।
ফিহা আর ঝিনুক স্টেজের কাছে আসতেই খেয়াল করলো ছেলেগুলো কিভাবে হা করে ওদের দেখছে।এতে দুজনেরই ভীষন অস্তিত্ব লাগলো।
রওশান ফাহাদকে কনুই দিয়ে গুঁতা মারছে।
ফাহাদ বিরক্তি নিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করছে সমস্যা কি।
রওশানঃ কাকে দেখছিস এইভাবে হা করে।
ফাহাদঃ তোর ভাবি কে।
রওশান যেন আকাশ থেকে পরলো……….
কি……..হহহহ্ তুই………আর ভাবি।বিয়ে করলি কবে ভাই।
ফাহাদঃ আরে পাগল বিয়ে করি নাই করবো।
রওশানঃ তো পুরো নীল রঙের শাড়িডা নাকি নীলের মধ্যে কালো ফুলের শাড়িডা।
প্লীজ ভাই নীলের মধ্যে কালো ফুলের শাড়িডা ওইটা আমার।তুই পাশেরটারে দেখ।
ফাহাদঃ পাশেরটার কথাই বলছি।
রওশানঃ ওহ্ ওহ্ ওহ্। ফিহার কথা বলছিস।
ফাহাদ মুচকি হেসে,,, হ্যাঁ।
রওশানঃ কবে থেকে চলছে।
ফাহাদঃ এখন ও বলতে পারিনি।দেখা হলেই শুধু ঝগড়া হয়।পেত্নী একটা।
রওশানঃ তুই থাক আমি একটু ফিহাট বান্ধবীর সাথে লাইন মারতে পারি কিনা দেখি।
ফাহাদঃ তুই আর ভালো হলি না।যা করার ভেবে করবি।
রওশানঃ ঠিক আছে।
রওশান ফিহা আর ঝিনুক এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ফিহাঃ কি চাই।।আবার রেগিং করতে আসলেন নাকি।
রওশান অপরাধীর মতো তাকিয়ে….. ওই দিনের জন্য সরি ফিহা।
ফিহাঃ ঠিক আছে। আর কিছু বলবেন।
রওশান কিছু বলবে তার আগেই ঝিনুক বলে ওঠে….. ফিহা আমি একটু কেন্টিন থেকে আসছি।
ফিহাঃ আচ্ছা যা।তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু।
ঝিনুকঃ ঠিক আছে।
রওশানঃ আচ্ছা ফিহা ও কি তোমার বান্ধবী।
ফিহাঃ হ্যাঁ। কেন?
রওশানঃ না এমনি জিজ্ঞেস করলাম। সবসময় তোমার সাথে থাকে তাই।
ফিহাঃ ওহ্।হ্যাঁ ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ঝিনুক।
রওশান ঝিনুকের নাম জেনে মুচকি হাসল। যেন বিশ্ব জয় করেছে।
রওশানঃ আচ্ছা পরে কথা বলি। আমার একটু কাজ আছে।
ফিহাঃ সমস্যা নেই ভাইয়া।
রওশান মুচকি হেসে চলে গেল।
ঝিনুক কেন্টিন থেকে ফিহার প্রিয় চকলেট কিটকাট কিনে হাতে নিতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ চকলেটটি নিয়ে নিল।
ঝিনুক পিছনে তাকিয়ে লোকটিকে দেখে ভীষণ বিরক্ত হলো………
চলবে………
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]