হৃদয়ের_মাঝে_তুই
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#অন্তিম__পর্ব
ফিহা বেলীফুলে সজ্জিত খাটে বসে আছে ঘোমটা টেনে।মনটা বিস্বাদে ভরে আছে।কিছুই ভালো লাগছে না। স্যারকে যে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।স্যারের জাগয়া অন্য কাউকে কিভাবে দিব আমি।ওনি আমার সাথে মিথ্যে নাটক করলেও আমি ওনাকে সত্যি ভালোবাসি।
ফিহার বর রুমে প্রবেশ করেই সেরোয়ানির বুতাম খুলা শুরু করলো।ফিহা ঘোমটার নিচ দিয়ে বুতাম খুলতে দেখে ভয় পেয়ে গেল।
ফিহা এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা ঢোক গিললো।না জানি কি করে বসে।
ফিহা মাথা নিচু করে বসে আছে।খুব ভয় লাগছে লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।
তোমাকে কি বলে দেওয়া হয় নাই বরের পায়ে সালাম করতে হয়।
ফিহা কন্ঠ শুনে চমকালো।স্যারের গলার স্বরের মতোন লাগছে।ফিহা ঘোমটা তুলে অবাক হলো ওনি এখানে কি করছেন এখানে ওনার তো আসার কথা না।
ফিহাঃ আপনি আপনি এইখানে কি করছেন।আমার বর এসে আপনাকে আমার সাথে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
ফাহাদ কিছু না বলে ফিহার সামনে গিয়ে বসে।
ফাহাদঃ কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি।
ফিহাঃ আপনি কি বুঝাতে চাইছেন।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ফাহাদঃ তুমি এখনও বুঝতে পারছো না তোমার বর কে।সারাক্ষণ তর্ক ছাড়া আর কিছু পার।চুপচাপ গিয়ে লেহেঙ্গা চেঞ্জ করে আস।
ফিহাঃ আপনার সমস্যাটা কি কিসের অধিকার ফলাচ্ছেন আপনি।
ফাহাদের মেজাজ বিগড়ে গেল। ফিহার হাত শক্ত করে ধরে বললো,,কিসের অধিকার দেখাচ্ছি শুনতে চাস,,স্বামীর অধিকারে বলছি তোকে,, ভালোবাসার অধিকারে বলছি তোকে,,এই”” হৃদয়ের মাঝে শুধু তুই “”থাকিস।
ফিহা কান্না করতে করতে বললো,,এই ছিলো আপনার ভালোবাসা একবার ও যোগাযোগ করেছেন আমার সাথে। দেখা ও করেননি।মানিনা আপনাকে আমি স্বামী।
ফাহাদ নিজেকে শান্ত করে ফিহাকে জরিয়ে ধরল।
আই এম সরি “ফিহুপাখি “।
তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমনটা করেছি।সরি ফিহুপাখি।
ফিহাঃ মামনি আর বাবাই কোথায়।
এই কথা শুনে ফাহাদের মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ফাহাদঃ বাবার হার্ট চিদ্র হয়ে গেছে তাই আম্মু বাবাকে নিয়ে ইউএসএ গেছে চিকিৎসার জন্য। কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে।
ফিহারও মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ফাহাদ পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে ফিহার হাতে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখতে বললো।ফিহা বাক্সটা খুলে অবাক হলো আর ভীষন খুশি ও হলো।
ফিহা স্বর্নের পায়েলটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।
ফাহাদঃ পছন্দ হয়েছে ফিহুপাখি।
ফিহা খুশি হয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
ফাহাদ আলো নিভিয়ে দিলো। ফিহাকে নিয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলো।
★
আট বছর পর……….
বর্নের টুইন বেবি হয়েছে দুটোই ছেলে। নীল আর তীব্র এখন ওদের ছয় বছর চলছে দুটোই ভীষণ দুষ্ট সারাদিন দুইভাই ঝগড়া লেগে থাকে।দুটোই অসম্ভব সুন্দর দেখতে পুতুল পুতুল লাগে।
বর্ন এখন রুহানকে ভালোবাসে। রুহানও কোনো কমতি রাখছে না।দুজন এখন সুখে সংসার করছে।
★
ফিহার একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়েছে। এখন দুই বছর চলছে।ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে। সারা মুখ জুড়ে মায়ায় ভরা।যেই দেখে সেই মায়ায় পরে যায় এই বাচ্চা মেয়েটির ওপর।বিশেষ করে গালের টোলটা ওর সৌন্দর্য আর বাড়িয়ে দিয়েছে।
মিষ্টি মিষ্টি কোথায় তুমি বের হও বলছি কি করেছো তুমি পুরো রুম জুড়ে। চকলেট, চিপস দিয়ে পুরো রুম অপরিষ্কার করেছো।আজকে মার আছে শুধু বের হও। ফাজিল মেয়ে বাবার আদর খেয়ে খেয়ে দিন দিন দুষ্ট হচ্ছো তুমি।
মিষ্টি ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে বেরিয়ে এসে ফিহার সামনে
দাঁড়িয়ে বললো,,স,,,,সলি মাম্মা আল করলবো না। আমালে মেল না।সলি।
ফিহার মেয়ের মুখের কথা শুনে না হেসে পারলো না। হু হা করে হেসে দিলো।
ফাহাদ এখন আর শিক্ষকতা করে না বাবার অফিসে চাকরি করে। অফিস থেকে এসে মা – মেয়ের কান্ড দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলো।
ফাহাদ মিষ্টি কে কোলে নিয়ে বলে,,আমার মাম্মা কি আজকে ও মায়ের বকা খেয়েছে।
মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। ফাহাদ মুচকি হেসে মেয়ের কপালে চুমু দিলো।
ফিহাঃ আমি যে এইখানে আছি মনেই হয় না। বাবা মেয়ে দুজন দুজনকে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলো।সবই এই হতভাগীর ভাঙা কপাল।
ফাহাদ মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে ফিহাকে জড়িয়ে ধরলো। ফিহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,
🌺ভালোবাসি ফিহুপাখি 🌺
কপালে অধর চুইয়ে দিলো।
🍂—————————–সমাপ্ত————————-🍂