চলো_রোদ্দুরে,06,07

0
421

#চলো_রোদ্দুরে,06,07
#ফাতেমা_তুজ
#part_6

লাল নীল আলো তে বসে রেড ওয়াইনে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে নীলাশা। রেড ওয়াইন আর রাদ দুটো ই ওর ভীষন প্রিয়। তবে দুটো থেকে যে কোনো একটা কে চুজ করতে দিলে নির্বিঘ্নে রাদ কে চুজ করে নিবে। দীর্ঘ ছয় টি বছর যাবত রাদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে নীলাশা। এই যে সন্ধ্যার পার্টি তে চলে এসেছে। এমন কি সাথে কোনো গার্ড ও নেই।এতো টাই পাগল সে।
সকলের সাথে হাসি মাখা গসিপে মেতে আসে রাদ। তদ্রূপ সেই হাসি তে মেতে আছে অন্য কেউ। সে আর কেউ নয় বরং নীলাশা ই। কথার ফাঁকে ফাঁকে রাদের গাঁয়ে স্পর্শ করছে সুপ্তি। যদি ও রাদের সাথে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোনো গভীর সম্পর্ক নেই মেয়েটার তবু ও সহ্য হয় না নীলাশার। দূর থেকে ও রাদের গাঁয়ে অন্য কারো স্পর্শ মেনে নিতে পারছে না।
রেড ওয়াইন এর গ্লাস টা সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরে। হাতের তালু লাল বর্ন ধারন করে নিয়েছে। তবে ভাঙে না।এতো শক্তি দিয়ে ও তুচ্ছ গ্লাসের সাথে পেরে উঠে না। রক্ত গরম হয়ে যায়। গ্লাস টা কে মেঝে তে নিক্ষেপ করতে চাইলেই কেউ একজন টেনে নিয়ে যায় ওকে।

_তো যেটা ঠিক হলো আমরা ক্যাম্পেইন টা শেষ করে রাঙামাটি যাচ্ছি। [ রনিত ]

_ইয়াপ। [ ইয়ানা ]

_বাট আমি যাচ্ছি না।

_হোয়াট। কেন যাবি না তুই?

_ দেখ নাহিদ সব কিছুর জন্য একটা সময় প্রয়োজন। আমার কাছে এখন সেই সময় টা নেই।

_কামন ইয়ার। এটা মাত্র দুই দিনের ট্যুর।

_আই নো বাট তোরা যা।

পাশ থেকে থমথমে মুখে দ্বীপ বলে
_তুই না গেলে আমি যাবো না।

_ দ্বীপ না গেলে আমি কি করবো?

_রায়া তুই ওহ?

_দেখ ইয়ার, দ্বীপের সাথেই তো আমার আসা যাওয়া। ওহ না গেলে আমি কি করে যাই?

_ফালতু কাপল।

_আশ্চর্য!আমরা মোটে ও ফালতু কাপল নই।

_অবশ্যই ফালতু। বন্ধু যাবে না বলে তুই ওহ যেতে চাচ্ছিস না। আর এ দিকে যে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আলাদা করে সময় কাটানো যাবে সেটা ভুলে গেলি।

_ এক্সাকলি রাদ ঠিক ই বলেছে। তোরা যাচ্ছিস ইনফেক্ট আমরা সবাই যাচ্ছি। রাদ এর প্রবলেম থাকতেই পারে।

কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায় রাদ। রনিত কিছু টা হাসে। রাদের কাছে এসে বলে
_নো প্যারা দোস্ত। আমি যাচ্ছি আমার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে আর তুই এখানে টাইম স্পেন কর তোর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে।

_রনিত।

_আরে মজা করছিলাম।

ইয়ানার বাহু তে হাত রেখে চোখ মারে রনিত। চাঁপা হাসে ইয়ানা। এদের কাপল গোল দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সুপ্তি। রাগি চোখে বলে
_তোদের ফালতু রিলেশন এর জন্য কোনো পার্টি তে ও মজা নেই। ধ্যাত

_এক্সাকলি সুপ্তি। দেখ রায়া আর দ্বীপ প্রেম করছে , রনিত আর ইনায়া ও প্রেমে ডুবেছে এ দিকে আমি তুই আর রাদ সিঙ্গেল মরছি।

নাহিদের কথায় চাঁপা হাসির গুঞ্জন চলে। যেই হাসি তে যোগ দিতে পারে না রাদ। এদের কি করে বোঝাবে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে ওহ। রাদের পিঠে চাপর পরতেই ধ্যান ভাঙে। নাহিদ বলে
_কি হয়েছে?

_তেমন কিছু না।

_দেখ ভাই আমরা হলাম তোর গলায় গলায়, আমাদের থেকে আড়াল করবি না কিছু। কোনো মেয়ে কে ভালো লাগলে সোজা বলে দিবি।

নাহিদের হাতের সাথে হাত মিলায় রাদ। বলে
_আগে তুই বল তোর রিলেশন এর কতো দূর।

_আহ এ জীবনে প্রেম আর হবে না।

_কেন?

কথার মাঝে ঢুকে পরে সুপ্তি। ব্যঙ্গ করে বলে
_ওর গার্লফেন্ড এর অভাব আছে?মেয়ে বাজ একটা।

_সুপ্তি।

_সুপ্তি, নাহিদ থাম তোরা। দুটো তে সারাক্ষন ঝগড়া করিস। এই মিল তো এই সাপ আর নেউল।

_ওর খুব জ্বলে বুঝেছিস।

_মোটে ও না। আমি এসব ফালতুমি তে নেই। আমি অলরেডি সবার উপরে। ভালো ছেলে পেলেই গলায় ঝুলে পরবো।

_দেখলি ওর কি চয়েজ আর ইনটেনশন।

নাহিদের কথায় পাত্তা দেয় না সুপ্তি। রাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে, একটু দূরে সরে আসে। বলে
_মেয়েটা কে বল তো।

_চুপ কর এখন। পরে জানাবো সব।

_সিউর।

_পাক্কা সিউর।

দরজায় লাথি মেরে চলে যায় নীলাশা। কিছু তেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে। রাদ কে যে করেই হোক নিজের করে নিতে হবে।
সুপ্তির অহেতুক স্পর্শ যেন ওর গাঁয়ে কাঁটার মতো বিঁধে।
.

_মরশুমি ম্যাম আমার সাথে শপিং এ যাবেন কাল?

_আমার সময় নেই নিতু।

_আমি ম্যানেজ করে নিবো।

_নেক্সট উইক এ দুদিন ছুটি নিয়েছিলে তুমি। ম্যানেজার স্যার ছুটি দিবেন না।

_আরে এতো টেনশন করছেন কেন? ম্যানেজার স্যার তো চশমা ওয়ালা স্যার। এম ডি স্যার এর কাছে যাবো সোজা।

কম্পিউটার থেকে মুখ সরিয়ে নেয় মৌশুমি। নিতুর চোখে কিছু টা অনুনয়। ছেলের জন্য কিছু দরকারি জিনিসের প্রয়োজন। সেই দিক থেকে নিতুর সহযাত্রী হলে ও মন্দ হয় না। দুটোই হলো। মৌশুমির সম্মতি পেয়ে খুশি হয় নিতু। কাজ কর্ম ফেলেই যায় অনুমতি নিতে।

চোখ দুটো ছলছল করছে। চাঁপা কষ্টে বুক ভারী হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। দুপুরে ফোন করেছিলো রাদ। বলেছে কোনো একটা কাজে আটকে গেছে তাই কাল সকালে নিয়ে যাবে। তাতেই যেন অভিমানের পাল্লা হয়েছে ভার। এই দুটো দিনেই যেন রাদ এর প্রতি আলাদা অধিকার বোধ কাজ করছে। সামান্য তম বিষয় টা ও অসামান্য মনে হচ্ছে। অথচ এমন শত দিন আছে যেদিন নিজের মা বাবার থেকে সময় পায় নি। আজ কাল বলে বলে বছরের অর্ধেক পেরিয়েছে অথচ বই কিনে দেওয়ার নাম গন্ধ আসে নি।
দরজায় নক পরে। কাউচ থেকে উঠে দাঁড়ায় ভোর। দরজা খুলতেই সকালের মেয়েটা রুমে প্রবেশ করে। কিছু টা মাথা নত করে বলে

_শুভ সন্ধ্যা ম্যাম।

_শুভ সন্ধ্যা।

_ম্যাম আপনার সেল ফোন টা সম্ভবত অফ। স্যার ফোন করেছিলেন তাই আপনাকে জানাতে এলাম। কাইন্ডলি একটু ফোন করবেন ওনাকে।

ফোন হাতে নিয়ে সামান্য ঠোঁট প্রসারিত করে। দুপুরের বিষয় টার জন্য রাগ হয়েছিলো খুব। সেই কারনেই ফোন টা সুইচ অফ করে দিয়েছিলো। ফোন অন করে রাদের নাম্বার ডায়াল করে কল করে। ফোন রিসিভ করেই রাদ বলে
_ তিন্নি কে দাও।

_তিন্নি কে?

_তোমার পাশে যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ওহ।

_ওহ।

তিন্নির হাতে ফোন বাড়িয়ে দেয় ভোর। বুঝতে পারে না যদি তিন্নি কেই দরকার ছিলো তবে ওকে কল করতে কেন হলো?
আড়চোখে তিন্নির দিকে তাকিয়ি থাকে। মেয়েটা হেসে হেসে কথা বলছে। বিরক্তি তে গা গুলিয়ে আসে। এই মুহুর্তে মেয়েটা কে আফিম দিয়ে অজ্ঞান করে দিতে পারলে শান্তি অনুভব হতো। ভোরের হাতে ফোন দিয়ে চলে যায় তিন্নি। ফোন রাখতে যাবে তখনি ওপাশ থেকে রাদের কন্ঠ কানে আসে। চাঁপা অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলে
_জি।

_ফোন সুইচ অফ কেন করেছো?

_এমনি।

_আর কখনো সুইচ অফ রাখবে না। আর শোনো কাল সকাল সকাল পিক করবো তোমায়। নাস্তা করার প্রয়োজন নেই। আজকের জন্য স্যরি। একটু কাজ ছিলো অফিসে।

_অফিস।

_ দুপুরে ড্যাড এর অফিসে গিয়েছিলাম। অনেক দিন ধরেই বলছিলো যাতে করে হসপিটাল আর অফিস দুটো তেই নজর দেই। বাট আমি পড়াশোনা তে ফোকাস করতেই স্বাচ্ছন্দ্য করি। এখন তো পড়াশোনা থেকে এক প্রকার ছুটিই বলা যায়। সেই কারনেই ড্যাড ফোর্স করেছে।

_ওহ।

_আচ্ছা রাখছি। আমি ড্রাইভ করছি।

কল কেঁটে দেয় রাদ। ভোরের ছোট ছোট উত্তর বেশ মজাদার মনে হয়। কখনো কাউ কে সেভাবে জবাব দিহিতা করা হয় নি। তবে ভোরের কাছে করে চলেছে ওহ। মন্দ নয় বিষয় টা। যদি ও এসব বর্ননা করে না বললে ও চলতো তবে কোনো রকম আশংকায় ফেলতে চায় না ওকে। এমনি তে ও সেদিনের একটা বাক্য নিয়ে বেশ চিন্তাগ্রস্ত। কি এমন বোঝাতে চেয়েছিলো মেয়েটা?

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_7

‘ শহর টা বেশ সুন্দর। সব থেকে বেশি সুন্দর রাতের পরিবেশ। তখন কোলাহলের মধ্য ও রোমাঞ্চকর লাগে। তবে দিনের বেলায় ধুলো বালি সব কিছু মিলিয়ে কিছু টা বিব্রত কর ই বটে। তবে এই উইকে রাতে ঘুরিয়ে দেখা তো সম্ভব নয়। ক্যাম্পেইন টা শেষ হলেই রাতে ঘুরতে নিয়ে যাবো।’

_আচ্ছা।

_তুমি তৈরি তো?

_হ্যাঁ।

_আচ্ছা চলো তাহলে।

মাথা ঝাঁকিয়ে রাদের কথায় সম্মতি জানায় ভোর। কিছু টা যুবুথুবু দেখাচ্ছে ওকে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে রাদ। হালকা শীতের কারনেই বোধহয় এমন অবস্থা। মুখ টা ও ফ্যাকাসে কেমন।বিউটি প্রডাক্ট দেয় নি বোধহয়। মেয়েলি বিষয় টা কিছু টা বিরক্তিকর হলে ও প্রশ্ন করে রাদ
_মুখে কি ইউজ করো?

_জি।

_আই মিন মুখের ত্বকের যত্নের জন্য প্রডাক্ট ইউজ করো কোনটা?

_আমি তেমন কিছু ইউজ করি না।

_শীতের প্রবাহে মুখের চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে কেমন। অকালে বুড়ি হতে সখ জেগেছে?

_না মানে আমি আসলে।

_আমতা আমতা করছো কেন? ভয় পাচ্ছো আমায়?

দু দিকে মাথা কাত করে সম্মতি জানায় ভোর। ফিক করে হেসে উঠে রাদ। তাকে ভয় পাওয়ার মতো বিশেষ কি এমন আছে?

আবারো শপিং মলের কাছে এসে গাড়ি থামাতে দেখে বিব্রত হয় ভোর। আনমনেই বলে
_আবারো শপিং মলে কেন?

_কাজ আছে।

_কিন্তু।

_কামন ভোর। আমি কোনো অন্ধকার নই, স্পষ্ট রোদ্দুর। যাঁর এপাশ ওপাশ স্পষ্ট দেখতে পাবে তুমি। ভয় পেও না কেমন?

কি বলবে বুঝে উঠে না মেয়েটা। রাদের সাথে আবারো শপিং মলে আসে। একই ভাবে লিফ্ট এর ঝাঁকনি তে মাথা ঘুরে আসে। অজান্তেই রাদের বুকে হাত চলে যায়। মৃদু হাসে ছেলেটা। বাচ্চা দের মতোই আগলে রাখে ওকে। অবশ্য শহুরে পরিবেশে নিতান্তই বাচ্চা মেয়েটা।

বিউটিশিয়ানের সাথে সেই কখন থেকে কথা বলে যাচ্ছে রাদ। একটু উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছে ভোর। তবে কিছু ই বুঝতে পারছে না। আশে পাশে সব মডেল ড্রেস আপ পরা মেয়েরা। পরিস্থিতি এমন যে ছেলেদের থেকে ও মেয়েদের দেখলে বেশি সংকোচ কাজ করে। মনে হয় ভিন গ্রহের প্রানী।

_ভোর এদিকে আসো।

বিউটিশিয়ান মেয়েটা ভালো করে দেখে ওকে। মৃদু হেসে রাদের দিকে তাকায়। রাদ বলে
_ওর স্কিন টাইপ অনুযায়ী যা যা লাগে সব দিয়ে দিবেন। আর ইউজ টা ও শিখিয়ে দিবেন।

_ওকে স্যার।

_বাই দ্যা ওয়ে। এমন প্রডাক্ট দিবেন না যাতে ভূতের মতো হয়ে যায়। আমার এমন টা প্রয়োজন নেই।

_নো স্যার। আপনি রিলাক্স এ থাকতে পারেন। ম্যাডাম এর জন্য শুধু মাত্র স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট দিবো।

_হুম। ভোর ওনার সাথে যাও।

_কোথায়?

_ওনি তোমার স্কিন টা চেক করবেন। দ্যান কিছু ভালো দেখে ময়েশ্চারাইজার প্রডাক্ট দিবেন। আই মিন উইন্টার সিজনের জন্য স্কিন কেয়ার যাকে বলে।

_আমি কিছু দিবো না। সাদা ভূত হয়ে যায়। আবার ত্বক পাতলা হয়ে যায়। এই সবের প্রয়োজন নেই আমার।

ভোরের কথা তে হাসে মেয়েটা। লজ্জায় পরে রাদ। কিছু টা ঝুঁকে বলে
_স্টুপিট। ওনি নাম করা বিউটিশিয়ান। জাস্ট স্কিন কেয়ার এর প্রডাক্ট দিবেন। যাতে তোমার স্কিন হেলদি থাকে। অন্য কোনো প্রডাক্ট দিবেন না যাতে ভূতের মতো হয়ে যাও।

_কিন্তু

_হুশশ , নো মোর ওয়ার্ড। নাও গো লাইক আ সুইট গার্ল।

রাদের দিকে তাকিয়ে থাকে ভোর। এক পলকের চাহনি যেন অনেক কিছু বলে।চোখ নামিয়ে নেয় ছেলেটা। ফোন হাতে নিয়ে মিথ্যে কলের অভিনয় করে।

বিশ মিনিটের মাথায় এক টা শপিং ব্যাগ নিয়ে বের হয় ভোর। রাদের কাছে এসে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে
_এতো সব মানুষ মাখে?

_কেন?

_দেখুন এগুলো কি।

শপিং ব্যাগ খুলে রাদ। সেখানে মুখের জন্য ফেসওয়াস, ফেস প্যাক, ক্রিম, পাউডার, আই ক্রিম আর বডির জন্য লোশন, সোপ , পায়ের গোড়ালির জন্য ক্রিম। চুলের জন্য শ্যাম্পু , অয়েল, আর হেয়ার ক্রিম। মোট কথা এতো এতো প্রডাক্ট। কিছু টা ঘুরপাক লেগে যায় রাদের। তবে স্ক্রিন কেয়ারের জন্য এগুলো জরুরি। প্রতি টা জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নেয়। সব গুলোই ঠিক আছে। ভোর এর মুখের ভঙ্গিমা দেখে মায়া হয়। আদুরে বাচ্চার মতো মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় রাদ। বলে
_স্কিন ঠিক রাখার জন্য জরুরি এগুলো। আর এটা তো সাধারন কিছু প্রডাক্ট। যা সকলেই ব্যবহার করে। তুমি যেহেতু আগে ইউজ করো নি তাই একটু বিরক্ত লাগবে বাট একটা সময় এসে টু মাচ বেটার ফিল হবে।

_ডাক্তার সাহেব আমি চাই না এসব। এগুলোর প্রাইজ অনেক বেশি।

_তুমি প্রাইজ এর জন্য হেজিটেশন করছো? কামন স্টুপিট আমি তো বললাম ই আমি তোমার মোহরানা পরিশোধ করি নি। তোমার কাছে আমি ঋনগ্রস্ত তুমি নও। এখন আসো তো।

_আপনার ফ্যামিলি জানতে পারলে অনেক বড় সমস্যা হবে।

_সেটা নিয়ে টেনশন করো না। আগে আঠারো তে পা দাও। দ্যান আমরা ডিসিশন নিবো এই বিয়ে টার কি করতে হবে। বাট আমাদের লক্ষ্য তুমি জানো তো?

মাথা ঝাঁকায় ভোর। রাদ বলে
_বলো তো কি লক্ষ্য আমাদের।

_অন্ধকার কে ছাপিয়ে যাবো রোদ্দুরে। কুসংস্কার কে মুছে দিয়ে সবাই কে বলবো , চলো রোদ্দুরে।

হেসে ফেলে রাদ। এতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে মেয়েটা? ট্যালেন্ট আছে বেশ। তবে সেটা নিয়ে ঘাটার সময় নেই এখন। মেডিকেল ক্যাম্পেইন শেষ করে নির্বিঘ্নে ভাবা যাবে।

বুক শপে এসে মাথা ধরে যায়। এতো এতো বই কখনোই দেখে নি ভোর। বছর শেষে স্কুলের স্টোর রুম টা তে ও এতো বই জমা হয় নি। এতো বিশাল বুক শপ। পকেট থেকে একটা লিস্ট বের করে কিছু বই নিয়ে নেয় রাদ। এক গাদা বই দেখে চমকায়িত হয় মেয়েটা। বলে
_এতো বই কেন?

_পড়ার জন্য।

_এগুলো সব পড়ার জন্য?

_বই তো পড়ার জিনিস। অন্য কোনো আইডিয়া আছে নাকি?

_না মানে এতো বই।

_হুশশ মেয়ে। এগুলো তো এডমিশন এর জন্য। এর পরে কলেজ বুক , নোট বুক, গল্প উপন্যাস, জীবনী সব , সব পড়তে হবে তোমায়।

_এতো বই পড়ে কি হবে ডাক্তার সাহেব?

_কেন ডাক্তার হবে।

_ডাক্তার। সে তো অনেক খরচ।তাছাড়া আমি তো বিজ্ঞানের ছাত্রী নই।

_ওহ হ্যাঁ তাই তো। আচ্ছা বাদ দাও ঐ টা। তুমি কোন বিভাগের?

_মানবিক। আসলে আমার ইচ্ছে ছিলো অন্য বিভাগে পড়ার। কিন্তু আব্বা না করে দিছে। কারন ঐ গুলো তে অনেক খরচ। আর প্রাইভেট ও পড়তে হয়।তাই আর

ভোরের কথা শুনে বুঝতে পারে ওর মন খারাপ হয়ে গেছে। প্রসঙ্গ হাতে নিতে হেসে উঠে রাদ। বলে
_ওয়াও দ্যাটস গ্রেট। ইউ নো হোয়াট, আমি কিছু তেই সাইন্স নিয়ে পড়তে চাই নি। বাট মম আর ড্যাড সহ স্যার রা ফোর্স করলেন। আমি হলাম ভদ্র স্টুডেন্ট আর কি সোজা বিজ্ঞান কে আঁকড়ে ধরলাম। পুরো জীবন টাই গেল রসাতলে। হায় কি ভাগ্য আমার।

রাদের ভঙ্গিমা দারুন হলে ও ওর চোখে মিথ্যে ফুটে উঠেছে। ভোরের ধারালো দৃষ্টি তে কিছু টা অপ্রস্তুত হাসে। বলে
_বিশ্বাস হচ্ছে না?

_একদম ই হচ্ছে না।

_আচ্ছা বাদ দাও। শোনো মানবিক নিয়ে যেহেতু পড়ছো সেহেতু আইন নিয়ে পড়বে। সমস্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। পারবে না তুমি?

চোখ দুটো কখন যে সিক্ত হয়ে গেছে খেয়াল ই নেই মেয়েটার। রাদের মনে হলো আইন নিয়ে পড়তে চায় না ভোর। তাই ওর মাথায় হাত রেখে বলল
_ডোন্ট ক্রাই। তুমি যেটা নিয়ে পড়তে চাও সেটাতেই পড়বে। বাট পড়তে হবে।

_আমি আইন নিয়েই পড়বো ডাক্তার সাহেব।

_তাহলে কাঁদছো কেন?

_আপনি অনেক বেশি ভালো ডাক্তার সাহেব, অনেক বেশি ভালো।

_এহহ দেখি চোখ লাল করে ফেলেছো একদম। স্টুপিট কোথাকার, এভাবে কেউ কাঁদে?

ভোরের চোখ মুছে দিতে দিতে কথা গুলো বলে রাদ। স্বচ্ছ হাসে মেয়েটা। রাদ ও হাসে। কারো জীবনে দুঃখ না হয়ে সুখ হতে পারলে তাঁর মাঝে কতো টুকু শান্তি একমাত্র সে ই উপলব্ধি করতে পারে। প্রেম যদি হয় সর্বসুখ, তবে মানবিকতা হলো তাঁর ভিত্তি। যেখানে মানবিকতা নেই সেখানে প্রেম কখনোই সম্ভব নয়।

ঢাকার ব্যস্ত নগরবাসী কোলাহলের মাঝেই হেঁটে চলেছে। কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। বিষয় টা একদম ই পছন্দ হলো না ভোরের। এই দিক থেকে গ্রাম কে বেশি সুন্দর মনে হয়। সেখানে একজন আরেক জনের প্রতি আকর্ষন থাকে। চারপাশের ঘোরে দু চোখ। অথচ এখানে মরে গেলে ও দেখার লোক নেই। গুটি কয়েক মানুষের জন্য গ্রাম পিছিয়ে আছে। কিছু সস্তার কুসংস্কার আর ভঙ্গুর মস্তিষ্ক সব কিছু কে কঠিন করে দিয়েছে। নারী পুরুষের ভেদাভেদ এতো টাই বারতি যে একজন নারী ই সংসারের ভিত্তি সে কথা ভুলে যায়। ছেলে মেয়ে উভয় ই যে এক রক্ত মাংসে গড়া তা ভুলে যায়। রাস্তায় নেমেছে রাদ। এই ব্যস্ত শহর টা ভোর কে চেনানোর জন্য ই এই ধুলো বালি তে মাখামাখি খেতে হচ্ছে। গাঁয়ের সাথে সিটিয়ে যায় ভোর। সামান্য ধাক্কা অনুভব করতেই পেছন ফিরে তাকায় ছেলেটা। বলে
_কি হয়েছে?

মাথা নিচু করে ফেলে ভোর। কিছুক্ষন ভাবে ছেলেটা। তবে এর রহস্য উদঘাটন করতে পারে না। ভোরের বাহু তে হালকা করে স্পর্শ করে বলে
_কি হয়েছে বলো।

_লোকজন।

_হুম তো।

_গাঁয়ের উপর পরছে।

কথা টা বলেই মাথা নিচু করে ফেলে ভোর। রাদ বুঝতে পারে ঠেলাঠেলি তে নারীর প্রতি সহিংসতা তৈরি করে চলেছে কিছু কলঙ্কিত পুরুষ। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। এক হাতে ভোর কে আগলে নেয়। বলে
_আমি তোমাকে সেফলি নিয়ে যাচ্ছি। তোমার কোনো অসুবিধা হবে না তো?

_না।

_আসো তাহলে।

রাদের বাহু ডোরে আবদ্ধ হয়ে পথ চিনতে থাকে ভোর। প্রশান্তি তে বুক ভরে উঠে। এতো এতো সুখ যেন এর আগে কখনোই অনুভব হয় নি। হৃদয় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ভেতর থেকে আসে শ্রদ্ধা। একজন নারী সব থেকে বেশি অনুভূতি পূর্ন হয়। পুরুষের স্পর্শের দিক সে খুব ভালো করেই জানে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত। এর জন্য কোনো প্রকার শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। রাদের ছোঁয়া তে রয়েছে আগলে রাখার চেষ্টা। হিংস্র স্পর্শ থেকে লুকিয়ে রাখার প্রত্যয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাদ কে সেরা মনে হলো। এমন মানসিকতা সম্পূর্ন, খুব কম মানুষের মাঝেই দেখেছে ভোর। কতো শত লোক আছে যাঁদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি বলে এলো মেলো পথ। যা প্রতি টা নারীর মনে ভয় সৃষ্টি করে আর জীবন কে করে তুলে ভয়ঙ্কর তিক্ত।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here