চলো_রোদ্দুরে,40,41

0
455

#চলো_রোদ্দুরে,40,41
#ফাতেমা_তুজ
#part_40

একে অপরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে দুই মানব। কিছুক্ষণ আগে ও যাঁরা ছিলো প্রান প্রিয় বন্ধু।এই মুহুর্তে তাঁরা হয়েছে একে অপরের শত্রু।
নাহিদ নিজের মাথা টা চেঁপে ধরে শান্ত হলো।হাত জোড় করে অনুনয় করে বলল
_স্যরি। প্রয়োজনে আমি আবার তোর পা ধরছি তবু ও তুই আমার বোন কে এক্সসেপ্ট কর ভাই।

_এটা কি ছেলে খেলা নাহিদ? একজন শিক্ষিত মানুষ আর পূর্ন ডাক্তার হয়ে এসব উচ্চারণ করছিস কি করে। এমন অন্যায় আমি আর এক মুহুর্ত ও টলারেট করবো না।

_দেখ ভাই আমি কথা দিচ্ছি ভোর এর কোনো অসুবিধা হবে না। যতো টাকা লাগবে, যা যা করা লাগবে সব কিছু আমি এনে দিবো। তুই শুধু আমার বোন কে এক্সসেপ্ট কর। মরে যাবে মেয়েটা।

_আমাকে মাফ কর নাহিদ। আমি ভোর কে ভালোবাসি। তাছাড়া ও আমার স্ত্রী। তুই কোন যুক্তি তে এমন কথা বলছিস?

_জানি না আমি জানি না। শুধু জানি নীলাশা তোকে ছাড়া বাঁচবে না।

_আমি ওর সাথে কথা বলবো। তুই প্লিজ এমন অরুচি দাবি করিস না। এমনি তে ও এতো গুলো দিন সকল কে মিথ্যে বলে সে যাই হোক এখন এমন কিছু করিস না যাঁর ফলে আমাদের বন্ধুত্ব সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে যায়।

নাহিদ চোখ বন্ধ করে রইলো। কিছুক্ষণ পূর্বে সমস্ত টা বলেছে রাদ কে। সাথে বোন এর জন্য পা অব্দি ধরেছে। রাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কোনো ভাবেই ভোর কে ছাড়া সম্ভব নয়। নীলাশার ভালোবাসা কে অপমান করছে না ওহ।তবে আজ থেকে এগারো বছর পূর্বেই যদি নীলাশা ওর ভালোবাসা প্রকাশ করতো তাহলে গল্প টা অন্য রকম ও হতে পারতো।
কিন্তু এই মুহুর্তে একটা মেয়ের সাথে পূর্ণ ভাবে জড়িত ওহ।সব থেকে বড় কথা ভোর কে ভালোবাসে। হয়তো পৃথিবীর সমস্ত খাঁটি প্রেমিকের মতো নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে।

নীলাশার নাম্বার টা ডায়াল করলো রাদ। মনে মনে অনেক কিছুই সাজিয়েছে। তবে কতো টা কার্যকর হবে জানা নেই ওর। কয়েক বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো ফোন। ওপাশ থেকে ভাঙা ব্যথিত একটি করুন কন্ঠ ভেসে আসলো। চমকালো রাদ, নীলাশা বলল
_হ্যালো, কে?

রাদ নির্বাক। নীলাশা আবার বলল
_কথা বলছেন না কেন।

_হ্যালো নীলাশা আমি

_রাদ, আমার প্রিয় ডাক্তার সাহেব। আপনি কল করেছেন আমায়। আমি বিশ্বাস ই করতে পারছি না। আপনি, আপনি কেমন আছেন।দা ভাই বকে নি তো আপনাকে? আপনি এখন কি করছেন।

নাহিদ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে। রাদ এর ভেতর টা কেমন জ্বালা পোড়া করছে। নীলিশার ভালোবাসা এতো টা প্রখর তা ভাবতে ও পারে নি ওহ। নীলাশা কন্ঠ না শুনতে পেয়ে বলল
_এই যে মিস্টার ডাক্তার সাহেব কথা বলছেন না কেন। রাগ করেছেন?

রাদ এর হাত থেকে ফোন টা পরে গেল। নীলাশা এখনো বক বক করছে। রাদের চোখে পানি চিক চিক করছে।সাথে বুক টা ধক করে উঠলো। ভোরের মতো নীলাশা ও ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন করছে। চট করে ফোন টা তুললো। নীলাশার কন্ঠ অস্বাভাবিক। যেন কোনো বাচ্চা কথা বলছে। রাদ বা হাতের সাহায্যে বুকে হাত বুলালো। বলল
_আমাকে খুব ভালোবাসো নীলাশা?

_খুব ভালোবাসি, সত্যিই খুব ভালোবাসি।

_একটা কথা বলি রাখবে?

_কি কথা?

_এভাবে পাগলামি করো না। তুমি ই বলো আমি তো বিবাহিত, এই বিষয় টা যদি আরো এগারো বছর আগে আমাকে জানাতে তাহলে আমি মেনে নিতাম। তবে এখন সম্ভব নয়।

ওপাশ থেকে মৃদু গোঙানির শব্দ শোনা গেল। রাদ ব্যস্ত হয়ে বলল
_এই নীলাশা, আমার কথা টা শোনো এভাবে কেঁদো না প্লিজ। তাহলে আমার নিজেকে দোষী মনে হবে।

নাক টেনে উত্তর করলো নীলাশা
_আমার সাথেই কেন এমন হলো?

_ভাগ্য আমাদের এক সাথে করতে চায় নি নীলাশা। মন খারাপ করো না। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করো। কি করবে তো?

_হু।

স্বস্তি পেল রাদ। কল টা কেঁটে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ভালোবাসা এতো দগ্ধ দেয় কেন? নীলাশার ভালোবাসা টা ওকে ভাবাচ্ছে। তবে নীলাশার জন্য নয় বরং ভোর কে হারিয়ে ফেলার ভয়ে। কোনো কিছুর বিনিময়ে এই সত্য কে বদলাবে না রাদ। যে মেয়েটার হাত ধরে নিয়ে এসেছে রোদ্দুরে সেই মেয়ে টা কে কালো আঁধারে ছুঁড়ে ফেলতে পারে না ওহ। কিছুতেই এ কার্য সম্ভব নয়।
.

প্রচন্ড আহত মন নিয়ে এই মধ্য রাত্রি তেই ছুটে এসেছে রাদ। সারাদিন পর আজ যেন একটু বেশিই ক্লান্ত ছিলো রাদ।তাই তো সন্ধ্যা তেই ডিনার করে নিয়েছিলো। ঘুম টা ও যেন আজ জোড়ালো ছিলো। অধিক চিন্তায় খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছে।সেই থেকে মরিয়া হয়ে ভোর কে ফোন করলো। তাঁতে ও শান্তি হলো না। তখনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেছে। সেই আগের মতোই হোস্টলের পেছনে গাড়ি রেখে পাঁচিল টপকে ভেতরে প্রবেশ করলো। সামনেই দারোয়ান, তাঁর হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলল
_আমার বউ টা রে দেখে আসি চাচা। আপনি আমাকে সাহায্য করুন।

লোক টি মুখ টিপে হাসলেন। রাদ কে চিনতে অসুবিধা হয় নি ওনার। বেশ কিছু বছর পূর্বে বহু বার এভাবে আসতো রাদ। আর একি কথা বলতো।একদম ই বদল ঘটে নি ছেলে টার।

আশে পাশে তাকিয়ে উপরে উঠে গেল রাদ। তবে এবার উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তিন তলায় উঠে হাঁপিয়ে উঠলো ছেলে টি। কয়েক মুহুর্ত জিরিয়ে আবার উঠতে লাগলো।ভাগ্যিস খোলা বারান্দা না হলে উপরে উঠা মুশকিল হয়ে যেতো। প্রায় আধ ঘন্টা পর ভোরের ব্যলকনিতে পৌছাতে সক্ষম হলো। কয়েক বার দম নিয়ে দরজায় আঘাত করলো। ভোর চমকে উঠে বলল
_কে?

_আমি।

ফট করেই দরজা টা খুলে গেল। ভোর অবাক কন্ঠ বলল
_আপনি এতো উপরে

_হুসস কোনো কথা নয়।

রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে দিলো। কিছু বোঝার পূর্বেই আচমকাই মেয়ে টা কে জড়িয়ে ধরলো। ছেলেটার হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিদঘুটে তিমিরের মাঝে ও রাদের বিচলিত দৃষ্টি অনুভব হলো ভোরের। এক হাতের সাহায্যে পিঠে হাত বুলিয়ে বলল
_আপনি এমন করছেন কেন?

_আমার ভয় হচ্ছে।

_কিসের ভয়?

_হারানোর।

_আজব তো এই রাত দুপুরে এমন করে কেউ। আপনি অসুস্থ দের মতো করছেন। এখন অনেক হয়েছে বাসায় ফিরে যান।

_ফিরবো না।

_কেন?

_তুমি আমার সাথে যাবে।

_কি বলছেন কি? আমি তো আগেই বলেছি আমি এখন যাবো না।

_এখন সিদ্ধান্ত চেঞ্জ।আমি বলেছি তুমি আমার সাথে যাবে।

_এমন টা হয় না ডাক্তার সাহেব।

নিজেকে রাদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কথা টা বললো ভোর। রাদ যেন ক্ষুধার্ত বাঘের মতো তেঁতে উঠলো। ভোরের বাহু তে শক্ত করে চেপে ধরে বলল
_তুমি যাবে আমার সাথে।

_যাবো না।

_তুই কেন বুঝিস না তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তোকে কত বার বলতে হবে তোর কিছু হলে মরে যাবো আমি। কেন বুঝতে চাস না আমার ভালোবাসা।

ভোর অবাক হয়ে তাকালো। রাদ ওকে তুই বলে সমোন্ধন করছে। তারউপর চোখ দুটো কেমন বিবর্ণ বিষাদ নির্দেশনা করছে। আঁতকে উঠলো ভোর। রাদের সুচালো স্পর্শ ওর ওষ্ঠাধর নিজের করে নিয়েছে। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। রাদের এমন অবস্থা দেখে ভোরের ভীষন কান্না পাচ্ছে। ছেলে টার শার্ট খামচে ধরলো ওহ। ভোর কে বুকের মধ্য চেপে ধরে রাদ বলল
_খুব ভালোবাসি, তোমায় ছাড়া আমার চলবে না। চাঁদ যেমন অন্ধকার ছাড়া উঠে না ঠিক তেমনি তুমি বিহীন আমি ও উঠবো না। তুমি বিহীন এতো আলো আমার সইবে না ভোর সইবে না। রোদ্দুর যদি আঁধার কে প্রতিনিধিত্ব করে তবে চাই না আমার রোদ্দুর। আমি তুমি নামক আঁধারেই ডুবে থাকতে চাই। সময় হলে না হয় এক সাথে যাবো রোদ্দুরে। তবু ও তোমায় ছাড়বো না।

এতো সুখে মেয়েটার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রাদ ওকে কতো টা ভালোবাসে তা কল্পনার বাহিরে ছিলো।জানালা দিয়ে ফুর ফুর করে বাতাস বইছে। চাঁদের হালকা আলো তে রুম টা অদ্ভুত লাগছে। তাঁর ই মাঝে একে অপরের মাঝে ডুবে আছে বৈধ দুই প্রেমিক প্রেমিকা যুগল।এর থেকে সুন্দর আর কিই বা হতে পারে?

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_41

একটি বিতৃষ্ণাকর সময় অতিবাহিত করে চলেছে রাদ। টানাপোড়েনের মাঝে চলছে ওর দিন। উহু অর্থ সংকট নয় মনের সংকট। সেদিনের পর থেকে নীলাশার প্রতি খোঁজ লাগিয়েছিল। একটু আগে খবর এলো মেয়েটা প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরেছে। নাহিদ ও লাপাত্তা। এদিকে সুপ্তি বেঁচে থেকে ও যেন মরে গেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে যা তা অবস্থা। ঘড়ির কাঁটা সব থেকে ছোট কাঁটা টা ঢং ঢং শব্দ করে জানান দিলো সময় ভোর ছয় টা। হাই তুলে উঠে বসলো ভোর। মহান আল্লাহ তায়লার নামে ঘুম থেকে উঠার দোয়া পাঠ করে বলল
_আপনি জেগে আছেন যে?

_একটু আগেই উঠেছি।

_ওহহ।

_আব্বুর সাথে অফিস যাবেন নাকি হসপিটালে?

তৎক্ষনাৎ উত্তর দিতে পারলো না রাদ। কোনো টা তেই যাওয়ার রুচি নেই।এতো চিন্তার এক অংশ ও কাউ কে জানায় নি ছেলেটা। সব যেন নিজ হাতে সামলাচ্ছে। এ দিকে কিছু দিন যাবত ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। সম্প্রতি সময় টা যেন পরিণত হয়েছে জাহান্নামে। ছেলেটার বাহু তে হালকা ধাক্কিয়ে বলল
_কি হয়েছে আপনার? আমি তো কাছেই আছি। তবু ও কেন মুখ টা পাংশুটে দেখাচ্ছে।

_এমনি। তুমি একটু নাস্তা বানিয়ে দাও।

_ডাক্তার সাহেব।

ছেলেটার হাত খিচে ধরলো ভোর। ধীরে ধীরে বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে বলল
_আপনার চিন্তার এক অংশ যদি অবসান না ঘটাতে পারি তবে কিসের অর্ধাঙ্গিনী হলাম আমি।

_আমার সোনা বউ।

মেয়েটার কপালে গভীর চুম্বন খেলো রাদ। ভোর বেশ স্বস্তি পেল। বেশ কয়েক টা দিন পেরিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এরি মাঝে পূর্ণ সংসারী হয়ে গেছে মেয়েটা।

ক্ষমতার জোড়ে মানুষ কতো কিছুই না করে। কাইসার ওহ মিনিস্টার পদবি ধারন করে বেশ কিছু প্রজেক্ট হাতিয়ে নিয়েছেন। যাঁর অংশ বিশেষ একটু আগে টের পেলেন ইফতিহার। ভদ্র লোক কখনো এভাবে চিন্তায় ভেঙে পরেন না।তবে এবার চিন্তায় পরেছেন খুব।
রাদ কে কিছু জানানোর ইচ্ছে না থাকলে ও এক প্রকার বাধ্য হয়ে জানালেন তিনি। ছেলে টার ধারালো মস্তিষ্ক অনেক কিছু আঁচ করলে ও ওর ধারনার সাথে যোগ হলো আরো বিশেষ কিছু অংশ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু ফাইল এগিয়ে দিলেন ইফতিহার। পাশেই বসে আছেন রামিসা।সচরাচর অফিসে ওনার যাতায়াত নেই। বিশেষ কারনেই এসেছেন তিনি। রাদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন
_পঁচিশ বছর পূর্বে একটি কেইস হাতে আসে আমার। নকল টাকার অভিযোগে আটক হোন কাউন্সিলর কাইসার। তখন ওনার রাজনৈতিক জীবনের শুরু মাত্র। খুব সুন্দর করে বেড়িয়ে যান এই মামলা থেকে। আমার মন তা মানতে পারে নি। ইচ্ছাকৃত ভাবে ওনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি।
কারন ওনার নকল টাকার অভিযোগে আটত্রিশ জন সরল ব্যক্তি আটক হয়। বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের পর ওনার জেল নিশ্চিত করি। তেঁতে উঠেছিলেন তিনি। রাগে বেশ উদ্ভট ভাষায় গালি গালাজ করেন।তোমার ড্যাড আমার বিষয়ে খুব সেনসিটিভ ছিলেন। আমাদের বিজনেস মাত্র উঠতে চলেছে। তাছাড়া তুমি ও ছোট। তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করি আপাততো আইন বিভাগ থেকে সরে আসবো। পরে কেন যেন আর জয়েন করতে ও ইচ্ছে হয় নি। কয়েক বছর জেল হওয়ার পর কাইসার বের হয়ে আসেন।
খুব ই ভদ্রলোক বলে লোকসমাজে পরিচিত হোন। হয়ে উঠেন জনগনের নেতা মিনিস্টার কাইসার। এসব নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা ছিলো না। তবে কাইসার এখনো রাগে ফোঁস ফোঁস করে চলেছেন এর প্রমাণ এই কাগজ গুলো।

কথা গুলো শেষ করেই ধপ করে চেয়ারে বসলেন তিনি। ইফতিহার ওনার কাঁধে হাত রেখে বললেন
_বরাবর ই প্রানের সংশয়ে আমরা পিছিয়ে এসেছি। বোধহয় এটাই ভুল ছিলো আমাদের।

_হয়তো।

বাবা মায়ের কথার থেকে কিছু টা দূরে সরে এলো রাদ। এই সম্পর্কে কোনো রকম ধারণাই ছিলো না ওর। কপালের রগ গুলো চকিত হয়েছে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সব কিছু জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গেছে যেন। আশংকায় ভুক্ত মন কখনোই কি পরিত্রাণ পাবে না?
কোনো এক প্রলয় সৃষ্টি কারী ঝড় এসে ওদের দুজন কে আলাদা করে দিবে। ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে ভোর রাদের হীম শীতল করা রোদ্দুরে আসার কাহিনী। এক সঙ্গে অতিবাহিত করা প্রেম ময় স্মৃতি গুলো হারিয়ে যাবে কুচকুচে আঁধারে। এমন সব উদ্ভট ভিত্তি হীন চিন্তায় রাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে। চোখ দুটো হালকা কেঁপে উঠে। কোন অনর্থের সংকেত এটা?
.

বহু দিনের রুগ্ন শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলে যেমন দেখায় নীলাশা কে ঠিক তেমনি দেখাচ্ছে। শরীরে হাজার খানেক কামড়ের দাগ। যখনি নিজেকে সামলাতে পারছে না ঠিক তখনি দাঁতের সাহায্যে নিজেকে আঘাত করে যাচ্ছে। ঘরে কোথাও রাদ এর একটা ছবি নেই মাত্র। সব গুলো যত্ন সহকারে রেখেছে কাবাডে। পুরিয়ে ফেলার ইচ্ছে থাকলে ও ওর দ্বারা এটা সম্ভব হয় নি। মেয়ের অবস্থার জন্য কোনো না কোনো ভাবে কাইসার ই দায়ী।তবে সব থেকে হাস্যরসাত্মক বিষয় হচ্ছে এ নিয়ে তিনি অনুতপ্ত নয়। বরং রাদ আর তাঁর পরিবার কে দোষারোপ করে যাচ্ছেন নানান ভাবে। ট্রেরেস এর এক কোনে পা মেলে দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে নাহিদ। পাশে থাকা ফোনে সুপ্তির নাম টা ঝলমল করছে।কল রিসিভ করার মানসিকতা নেই এখন। চোখ দুটো কেমন লাগছে ওর। এতো ক্ষত নিয়ে কি করে বাঁচবে ছেলেটা?

_নীলাশা, উঠেছিস বোন।খাবার এনেছি। খাইয়ে দিবো কি?

_দা ভাই।

চোখ পিট পিট করে তাকালো নীলাশা। চোখের নিচে কালি জমেছে।চুল গুলো এলোমেলো। শ্যাম্পু করা হয় না বেশ অনেক গুলো দিন। কোনো মতে গোসল সাড়ে মাত্র। ভালো করে সাবান ও মাখে না। দেশের অন্যতম স্টাইলিশ অ্যাওয়ার্ড পাওয়া মেয়েটার অবস্থা এমন হতে পারে তা কারোই কাম্য নয়। নীলাশা কে জাপটে ধরলো নাহিদ। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরছে। হালকা আর্তনাদ করে নীলাশা বলল
_ব্যথা, বড্ড যন্ত্রনা রে দা ভাই।

_এমন করলে চলবে?

_আমি তো কিছু করছি না। আমার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে আছে। ভেতর টা কেমন করছে। আমাকে মেরে ফেলো তোমরা। আমি মুক্তি চাই। এই প্রখর যন্ত্রণা আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার ভেতর টা ঝলসে যাচ্ছে। বলছে যাচ্ছে ভেতর টা।

হালকা হাতে নীলাশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে নাহিদ। রাগে আক্রোশে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়। প্রণয়নে দহন যদি এমন হয় তবে প্রণয়ের কি প্রয়োজন?

কালো কোর্ট পরা মেয়েটি ভোর। কালো রঙ টা বড্ড সুন্দর মানিয়েছে ওর শরীরে।হাতে ফাইল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলো। আগে থেকেই গাড়ি তে অপেক্ষা করছিলো রাদ। ভোর কে দেখে চশমা নামিয়ে বলল
_বাহহ আইনজীবী বউ তো বড় হয়ে গেছে।

_কথা টা এভাবে নয়। বলুন বউ তো বড় হয়ে গেছে এখন সে আইনজীবী।

ঠোঁট কামড়ে হাসলো রাদ। মেয়েটার কপালের দু পাশে থাকা এক গাছি বিরক্তিকর চুল গুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল
_আইনজীবী বউ আবার মাম্মা হয়ে যাবে। ভাবা যায়, বাচ্চা একটা মেয়ে কোলে পিঠে করে মানুষ করলাম।সে আবার মাম্মা হবে।

_কোলে পিঠে করে মানুষ করলেন মানে?

ভোরের দাঁত কিরমির দেখে খলবিলিয়ে হেসে উঠে রাদ। যাঁর ফলে মেয়েটার অভিমান আর রাগ মিশে নাম না জানা কিছু তে পরিণত হয়। ছেলেটার গলা চেপে ধরে বলে
_মেরে দিবো একদম।

_বহু আগেই মেরে দিয়েছিস রে পাগলী। স্পর্শ করে দেখ এই যে বুকের বা পাশ টা মৃত।

_ধ্যাত।

রাদের বুকে কিল বসিয়ে হাসলো ভোর। মেয়েটা লজ্জা পেলে খুব সুন্দর লাগে। গালের সাথে নাক টা ও কেমন অন্য বর্ণ ধারন করে। মনে হয় রেড ভেলভেট কেকের এক অংশ।দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়।

অফিসের কাছে ভোর কে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো রাদ। আজকে পর পর তিন টে ওটি আছে ওর। এর মধ্য দুটোই হার্ট এর অপারেশন। কিছু টা ভয় হচ্ছে। সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা সব যেন ঠিক ঠাক হয়।

মৌশুমি কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। পাশ থেকে নিতু বলল
_কি যে বলবো, আজকাল সময় কাঁটতেই চায় না।

_কাজে মনোযোগ হও দেখবে বাতাসের গতিতে সময় কেঁটে যাবে।

_মরশুমি ম্যাম

টেবিলে শব্দ করে মৌশুমি। সামান্য বিরক্তি নিয়ে বলে
_উফ নিতু আমি মরশুমি না মৌশুমি।

_ঐ তো একি হলো।

_এখন মেকি হাসা বন্ধ করো আর কাজে মনোযোগী হও।

_হু।

ফাইল গুলো এক সাইট করতেই রাদের আগমন হলো। দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানায় দুজনেই।রাদ বলল
_ওটি কখন?

_ দুপুর দুটোয়।

_আর বাকি দুটো?

_ক্যানসেল হয়ে গেছে। একটু আগে ওনারা পেসেন্ট কে নিয়ে চলে গেছেন।

_হোয়াট। সিরিয়াস কন্ডিশন ছিলো পেসেন্ট এর।

_বলেছিলাম স্যার। বাট ওনারা শুনলেন না।

চিন্তিত ভঙ্গিতে রাদ বলল
_টাকা পয়সার সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে বলেছিলাম। তবু ও কেন চলে গেলেন? তা ও এক সঙ্গে দুটো পেশেন্ট।

_গট নোন স্যার। যাওয়ার পূর্বে বেশ বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমাদের হসপিটাল অথরিটি নাকি ফালতু, লোক ঠকায় তাছাড়া ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি নাকি খুব ই উইক। আর হাইজিনিং নিয়ে আমাদের কোনো ধ্যান ধারনা ই নেই। এখানে থাকলে রোগীর অবশিষ্ট জীবনী শক্তি ও নাকি শেষ হয়ে যাবে।

_হোয়াট!

_ইয়েস স্যার।

রাদের হাত পা কেমন ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। রাগ হচ্ছে খুব।এতো সুবিধা দেওয়ার পর ও মানুষ কি করে এমন টা বলতে পারে? তাছাড়া দুদিন আগে ও হসপিটালের খরচ মওকুফ করে দিলো রাদ। তখন তো বেশ সমাদার করেছিলো। তবে এখন কেন এমন মন্তব্য।মানুষ এতো টা ও অকৃতঙ্গ হয়?

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here