তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________72

0
92

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________72

সকাল ৫টা বাজে……….
গ্রুপের সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলো নিদ্র । জেক, রাহুল, সাব্বির, সুজন আর রাশেদ গত কাল সন্ধায় আসছে । ওরা এখানে এসে নিদ্রকে অনেক বার সরি বলেছে সেদিনের বিষয় নিয়ে । আর এটাও প্রমিজ করেছে, যে আর কোনো দিন ড্রিংক(মদ) খাবে না ওরা । নিদ্র সব কিছু ভুলে আবার তাদের মাঝে ফিরে আসলো । ড্রাইভিং সিটে বসে এক মনে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে নিদ্র । আর তার পাসে বসে তৃপ্তি গভির ভাবে নিদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে । চোখ পাতা যেন তার পড়ছে না । সারা রাত এমন করেছে মেয়ে’টা, এখনও এমন করছে । নিদ্র অস্থি আবিস্কার করছে । নিদ্র সব বন্ধুরা, তারা যেই গাড়ি নিয়ে আসছে, সেটাতে আছে । নিদ্র গাড়ি’টা সাইডে দার করিয়ে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+সমস্যা কি । এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?(নিদ্র)

তৃপ্তি যেন নিদ্র এই কথা’টার জন্যই অপেক্ষা করছিল । সে আস্তে করে নিদ্রর হাত ধরে বলে উঠলো ।

:+তুমি যানো, তোমাকে এখন কেমন লাগছে ।(তৃপ্তি)

নিদ্র ভ্রুকুঞ্চন করে তাকালো তৃপ্তির দিকে । এরপর বাম ভ্রু নাচিয়ে বললো ।

:+কেমন লাগছে ।(নিদ্র)

:+একে বারে হুজুরদের মতো । হুজুরদের যেমন লম্বা লম্বা দাড়ি থাকে । তোমারও ঠিক এমন দাড়ি হয়েছে ।(তৃপ্তি)

কিছু’টা হেসে বলে উঠে তৃপ্তি । বিরক্ত হয় নিদ্র । এই সময় এরকম কথা শুনতে প্রছন্ড বিরক্ত লাগছে । তৃপ্তি নিজের হাত’টা নিয়ে যায় নিদ্রর দাড়ির দিকে । নিদ্র খপ করে ধরে ফেলে তৃপ্তির হাত । এরপর চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে ।

:+চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে বসে থাক । আমার দিকে এমন করে তাকাতে হবে না । আমার অস্থি লাগছে ।(নিদ্র)

এই বলে নিদ্র তৃপ্তির হাত’টা ছেড়ে দিলো । এরপর আবার সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো । তৃপ্তি কিছু সময় নিদ্রর দিকে অমন ভাবেই তাকিয়ে ছিল । এরপর সামনের দিকে ঘুরে চুপচাপ বসে রইলো । অনেক’টা পথ পেরোনোর পর হঠাৎ তৃপ্তি নিদ্রর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে উঠলো ।

:+আচ্ছা । আমাদের বেবির নাম কি রাখবো । আমি কিন্তু একটা নাম ঠিক করেছি । শুনবে ।(তৃপ্তি)

হঠাৎ তৃপ্তির এমন কথা শুনে নিদ্র বিষম খেলো । খুক খুক করে কেশে উঠলো নিদ্র । তৃপ্তি গোল গোল চোখ করে নিদ্রর দিকে তাকিয়ে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলো । নিদ্র গাড়ি’টা দার করিয়ে বোতল’টা নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেলো । তৃপ্তি মুখ বাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।

:+তৃপ্তি আর নিদ্রর প্রথম বেবির নাম হবে “মুগ্ধ” । যাতে থাকবে মুগ্ধতা আর মুগ্ধতা । ঠিক তোমার মতো ।(তৃপ্তি)

শেষের কথা নিদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো তৃপ্তি । নিদ্র হা করে তাকিয়ে রইলো তৃপ্তির দিকে । এই মেয়ে কয়টা বেবি নিবে, সেটাও সিলেক্ট করে ফেলেছে । তার উপর ছেলে হবে, না মেয়ে হবে, সেটাও সিলেক্ট করে ফেলেছে । তৃপ্তির ধারণা তার ছেলে হবে । তাই সে “মুগ্ধ” নাম ঠিক করেছে তার ছেলের জন্য । নিদ্র জোরে একটা শ্বাস ফেলে বোতল’টা হাত থেকে সাইডে রাখলো । তৃপ্তি আবার মুখ বাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+আমার দু’টো বেবি লাগবে । একটা ছেলে, আর একটা মেয়ে । ছেলের নাম হবে “মুগ্ধ” । আর মেয়ের নাম হবে “মুগ্ধতা” ।(তৃপ্তি)

:+আর একটা কথা বললে, থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো ।(নিদ্র)

কিছু’টা রাগ দেখিয়ে বলে উঠে নিদ্র । তৃপ্তি ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে বললো ।

:+মগের মুল্লুক নাকি । গত কাল একটা চড় দিয়েছো, কিছু বিলি’নি । তাই বলে এই ভেবো না, যে আমি কিছু বলবো না । আমাকে আর একটা চড় মাড়লে । আমি বাসায় গিয়ে বড় আম্মুর কাছে বিচার দেবো ।(তৃপ্তি)

নিদ্র কপাল চাপড়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো । এই মেয়ে আর শান্তি দেবে না তাকে । তৃপ্তি মুচকি হেসে এটা সেটা বলতে লাগলো । ভবিষ্যৎ প্লানিং করতে লাগলো সে । নিদ্র অবাক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, আর তৃপ্তির পটর পটর শুনছে । এই মেয়ের পেটে এতো কথা জমা ছিল নিদ্র ভাবতেও পারছে না । যেটা জীবনে সম্ভব নয়, সেটাও বলে যাচ্ছে তৃপ্তি । আসলে সে নিদ্রর সাথে কথা বলে আগের মতো ফ্রী হতে চাচ্ছে । নিদ্র কেমন যেন গম্ভীর মুখ করে থাকে । তৃপ্তির তা সহ্য হচ্ছে না । তাই আন বান বকছে সে । নিদ্রও শুনে শুনে কিছু’টা মুচকি হাসছে । তৃপ্তির বেশ ভালো লাগছে । হঠাৎ গাড়ি থামতে বকবকানি থেমে যায় তৃপ্তির । ভ্রু উচু করে সে তাকালো নিদ্রর দিকে । নিদ্র অসহায় মুখ করে বলে উঠলো ।

:+আর একটা কথা বললে, আমি গাড়ি থেকে নেমে চলে যাবো ।(নিদ্র)

তৃপ্তি সোজা নিজের মুখ দু’হাত দিয়ে চেপে ধরলো । এরপর মাথা নাড়িয়ে বোঝালো “সে আর কথা বলবে না” । নিদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললো ।

:+গাড়ি থেকে নাম । এখান থেকে কিছু খেয়ে নেবো ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে তৃপ্তি চট করে পিছনে ঘুরে তাকালো । এতোখন সে খেয়াল করেনি । তারা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আছে । সামনে তাকাতে দেখলো নিদ্র নেই । তৃপ্তি তাড়াতাড়ি গাড়ির দরজা খুলে, গাড়ি থেকে নামলো । বলাতো যায় না, তাকে যদি আবার ফকি দিয়ে পালিয়ে যায় । গাড়ি থেকে নেমে নিদ্রর কাছে সোজা চলে গেল তৃপ্তি । এরপর নিদ্রর বাম হাত নিজের দু’হাত দিকে জরিয়ে ধরলো । নিদ্র এক পলক তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো । তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে, জেককে একটা মেসেজ দিয়ে, তারা রেস্টুরেন্টের ভিতরে আসলো । সকালে কিছু খাওয়া হয়-নি । তাই এখান থেকে খেয়ে নিতে চায় নিদ্র । এখনো অনেক’টা পথ বাকি ।

———————————————–

বেলা ১১টা বাজে…………
ড্রইং রুমে সোফার উপর বসে আছে, বজলুর, ফরহাদ, আমেনা, সালমা, সুমি, আর সজিব । গত কাল রাত ৮টায় ঢাকায় আসছে বজলুর সালমা আর সজিব । সালমার জোরাজোরিতে ঢাকায় আসছে বজলুর । মেয়ে উনার কেন এমন করলো তার সাথে ৷ তা তিনি খুজে বের করবেন’ই । সেই জিম্মা নিয়ে সালমা ঢাকায় আসে । আর ঢাকায় এসে আমেনার মুখে সব শুনে কেপে উঠে সালমা । এতো কিছু হয়ে গেছে । আর তারা বিন্দু মাত্র আন্দাজ করতে পারলো না । কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেলেন তিনি । বজলুর প্রথমে নিদ্রর সাথে তৃপ্তির বিয়ে দিতে নারাজ হয় । কিন্তু পরে যখন শুনলো “তৃপ্তি প্রেগন্যান্ট” । তখন উনার কথা বলার ভাষা হারিয়ে যায় । ফরহাদ বোঝায় বজলুরকে । যে ওরা যদি সুখে থাকে । তাহলে তারা বাধা দিয়ে কি করবে । শুধু শুধু দু’জনের জীবন নষ্ট হবে । গাড়ির শব্দে ধেন ভাঙে সবার । সজিব সোফা থেকে নেমে দৌড় লাগায় বাড়ির বাহিরে । সজিবের পিছু পিছু সবাই হাটা শুরু করে । তৃপ্তি গাড়ি থেকে নামতেই, সজিব দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে তৃপ্তিকে । তৃপ্তি অবাক হয়ে যায় সজিবকে দেখে । ভিতরে ভিতরে ভয় লাগা শুরু করলো তৃপ্তির । নিদ্রর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সে । নিদ্র নিজেও বুঝতে পারছে না । যে সে এখন কি করবে । হঠাৎ ঠাস করে একটা চড় পরে নিদ্রর গালে । সবাই চমকে উঠে আমেনার দিকে তাকালো । নিদ্র আস্তে করে আমেনার হাত ধরতে নিলো ৷

:+খরবদার আমাকে তুই ছুবি না । এতো দিনে মরে গেছি, না বেচে আছি । এক বারো খোজ নিয়েছিস ।(আমেনা)

নিদ্র বিনা বাক্যে আমেনাকে আস্তে করে জরিয়ে ধরলো । আমেনা হু হু করে কেদে উঠলো । নিদ্রর চোখেও জল । কিন্তু মুখে তার হাসি । এদিকে সালমার সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তৃপ্তি । ভয়ে পুরো শরীর গরম হয়ে গেছে তার । কপালে ঘাম জমা হচ্ছে । কিন্তু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিচ্ছে সে । সালমা খানিক সময় মেয়েকে উপর থেকে নিচ প্রজন্ত পরক করেন । গায়ে নীল কালারের একটা জামা । বোরখা নেই । সালমা শন্ত কন্ঠে বলে উঠেন ।

:+বোরখা কোথায় ?(সালমা)

:+গাড়ির ভিতরে গরম লাগছিল, তাই খুলে ফেলছি ।(তৃপ্তি)

তড়িঘড়ি করে বলে উঠে তৃপ্তি । সালমা সরু চোখে তাকায় তৃপ্তির দিকে । মেয়ে উনার ভয়ে হিম হয়ে গেছে । তিনি বেশ বুঝতে পারছেন । মুচকি হেসে আস্তে করে তৃপ্তিকে নিজের কাছে টেনে নেয় সালমা । তৃপ্তি খপ করে জরিয়ে ধরে সালমাকে । মৃদুস্বরে বলে উঠলো তৃপ্তি ।

:+আমাকে খমা করে দাও আম্মু । আমি আর কখনো তোমাকে অমন করে ধাক্কা দেবো না । বিশ্বাস করো, তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না ।(তৃপ্তি)

সালমা মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । অতপত সবার রাগ অভিমান ভেঙে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সবাই । এরই মধ্যে নিদ্রর সব বন্ধুরাও সেখানে এসে গেছে । বাড়ির ভিতরে এসে, আসে পাসে তাকাতে লাগলো তৃপ্তি । কাওকে খুজচ্ছে সে । না দেখে আমেনার কাছে আসলো তৃপ্তি । এরপর আমেনার হাত ধরে টেনে দোতলায় নিজের রুমে নিয়ে আসলো । আমেনা শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তৃপ্তির দিকে । তৃপ্তি কোমরে দুই হাতে দিয়ে বললো ।

:+কাজি কোথায় । আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলাম । বিয়ের সব কিছু ঠিক করে রাখতে । আমি আমার বর নিয়ে আসছি । কাগজ’টা নিশ্চয়ই তুমি পেয়েছো । পাওয়ার কথা । না পাওয়ার কোনো যুক্তি আসে না । তার উপর সকাল থেকে সুমি আপুর ফোনে মেসেজের উপর মেসেজ দিয়ে বলেছি । সব কিছু ঠিক করেছো কি-না । তুমি সুমি আপুর কাছে, কি বললে । সব ঠিক করেছি । তাহলে এখন কাজি কোথায় । বিয়ে পড়াবে কে । আমি আর এক সেকেন্ডও দেরি করতে চাই না । এখনি মানে এখনি বিয়ে করবো ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে আমেনা শুকনো ঢোক গিললো । ফরহাদকে তিনি অনেক বার বলেছেন এই নিয়ে । কিন্তু ফরহাদ তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি । আমেনা আমতা আমতা করে বললো ।

:+এক মাত্র ছেলের বিয়ে । এমন ঘর মুখো করলে কি হবে বল । আমাদের এখনে কতো লোক আছে । তোর বড় আব্বুর অনেক বিজনেস পার্টনার আছে । উনাদের না বলে । এক মাত্র ছেলের বিয়ে কি করে,,,,,,,,।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে তৃপ্তি তেতে উঠে বললো ।

:+আমি কোনো কিছু শুনতে চাই না । আমি বিয়ে এখনি করবো । এক বার ভুল বোঝা বুঝিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি । আর না । তোমাদের বিজনেস দিয়ে, তোমরা মুড়ি খাও । সেটা আমাদের বিয়ের দিকে টানবে না । বিজনেস, বিজনেসের যায়গায় । পরে একটা পার্টি দিয়ে উনাদের যানিয়ে দেবে । কিন্তু এখন বিয়ে হবে, মানে হবে ।(তৃপ্তি)

:+আরে শুনতো আমার কথা । তোর বড় আব্বু,,,,,,,।(আমেনা)

আমেনা কথা শেষ করার আগেই, তৃপ্তি আমেনা সমানে এগিয়ে এসে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো ।

:+বেশি বকবে না । তাহলে বিয়ের পর, ওই যে ইস্টার জলসা, জি বাংলার নাটক দেখতে না । ঠিক ওই নাটকের ডাইনি বৌ গুলোর মতো, আমি তোমার সাথে থাকবো । একটুও শান্তি দেবো না । সারাখন জ্বালিয়ে মারবো । এখন আমার সাথে নিচে যাবে । আর সুন্দর মতো সবার সামনে আমাদের বিয়ের কথা বলবে । আজ এবং এখনি বিয়ে হবে । এটা সাফ বলবে । তাহলে বিয়ের পর আর তোমাকে জ্বালাবো না ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি আমেনার হাত ধরে আবার নিজ রুম থেকে বেরিয়ে আসলো । আমেনা বিরবির করে বলে উঠলো ।

:+এখনি যা জ্বালাচ্ছিস । বিয়ের পর কি করবি আল্লাহ যানে ।(আমেনা)

:+কিছু বললে ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তি সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে বলে উঠে । আমেনা মুচকি হেসে তড়িঘড়ি করে বলে উঠে ।

:+না না না । কিছু বলি’নি ।(আমেনা)

:+হুম,,যা বলেছি । নিচে গিয়ে তা সবার সমনে বলবে ৷ নাহলে তোমার খবর আছে ।(তৃপ্তি)

এই বলে আমেনাকে নিয়ে নিচে এনে, সবার সামনে দার করালো তৃপ্তি । আর সে আমেনার পিছনে দারালো । এতোখন নিদ্রর কাছ থেকে, এই তিন মাস সে কোথায় ছিল, এই সব শুনছিল সবাই । আমেনা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে দেখে, তৃপ্তি আমেনার কোমোড়ে চিমটি কাটলো । আমেনা তড়িঘড়ি করে খুক খুক করে কেশে নিজের উপস্থিতি যানান দেয় । সবাই তাকালো আমেনার দিকে । আমেনা এক হাত দিয়ে কোমোড় ডলে আমতা আমতা করে বলে উঠলো ।

:+আমি চাচ্ছি, ওদের বিয়ে’টা আজই দিয়ে দিতে ।(ফরহাদ)

আমেনার কথা শুনে ফরহাদ কেমন করে যেন তাকালো আমেনার দিকে । তিনি তো আগেই আমেনাকে বলে দিয়েছেন, দুই দিন পর ওদের বিয়ে দেবেন ।

:+তোমাকে আমি আগেই বলেছি । যে ওদের বিয়ে’টা দুই দিন পরে হবে । তাহলে এখন আবার এই কথা কেন ?(ফরহাদ)

ফরহাদের কথা শুনে তৃপ্তি আবার চিমটি কাটলো আমেনার কোমড়ে । আমেনা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো ।

:+বাড়িতে তো তুমি থাকো না । সারা দিন তো অফিসে থাকো । বাড়ির ভিতরে কি হবে, সেটা তুমি কি করে বুঝবে । বাড়িতে তো আমি থাকবো । সব জ্বালা আমাকে সহ্য করতে হবে । আমি এমন জ্বালা চাই না । আমি এখনি ওদের বিয়ে দিতে চাই । মানে এখনি ।(আমেনা)

আমেনার এমন জোরদার কথা শুনে ফরহাদ চুপসে গেল । তৃপ্তি পিছনে দাড়িয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো । নিদ্রর কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে । সে আমেনাকে উপর থেকে নিচ প্রর্যন্ত পরক করলো । তৃপ্তির একটা হাত আমেনার কোমড়ে দেখে, তৃপ্তির মুখের দিকে তাকালো নিদ্র । সাথে সাথে তৃপ্তি চোখ মাড়লো । নিদ্র যা বুঝার সে বুঝে গেল । মুখের উপর হাত দিয়ে, হাটুতে কনুই ঠেকালো সে । এই মেয়ে তাকে শান্তিতে বাচতে দেবে না । সবার স্তব্ধতা দেখে, তৃপ্তি আবার আমেনার কোমড়ে চিমটি কাটলো । আমেনা ফরহাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।

:+বসে আছো কেন? সবাইকে নিয়ে তাড়াতাড়ি কাজে লেগে পরো ।(আমেনা)

ফরহাদ কিছু বলতে যেতে নিলে,আমেনা হাত উচু করে থামিয়ে দিলো তাকে ।

:+আমি আর কিছু শুনতে চাই না । যা বলেছি তাই করো । তেমার বিজনেস পার্টনারদের পরে একদিন পার্টি দিয়ে যানিয়ে দিও । এখন ওদের বিয়ে আজ হবে ।(আমেনা)

ফরহাদ আবার চুপ মেরে গেল । আমেনা বজলুর আর সালমার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+তোমাদের কিছু বলার আছে ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে, বজলুর মাথা নিচু করে দুই দিকে মাথা নাড়ালো । উনার কিছু বলার নেই । সালমা মনে মনে ছি ছি করছেন । যাকে এতোদিন ভাই ডেকেছে । আজ তাকে বেয়াই ডাকতে হবে । যাকে এতোদিন ভাবি ডেকে আসছে । আজ তাকে বেয়াইন ডাকতে হবে । ভেবেই উনার মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে । গোলকধাঁধার মধ্যে পরে গেছেন তিনি । সবাইর সম্মতি দেখে তৃপ্তি টুকুস করে আমেনার গালে চুমু বসিয়ে সেখান থেকে পালালো । তৃপ্তি যানে আমেনাই পারবে সবাইকে রাজি করাতে । সবার বড় আমেনা । তাই উনার কথার উপরে কেও কথা বলবে না । ফরহাদ তো সব সময় আমেনার কথার নিচে থাকে ৷ রুমে এসে দরজা লাগিয় বেডের উপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো তৃপ্তি । আজ তার সব কিছু পরিপূর্ণ হবে ।

———————————————-

রাত ১০টা বাজে……………
লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা পড়ে নিদ্রর রুমে বসে আছে তৃপ্তি । লিয়ার দেওয়া সেই লেহেঙ্গা’টা পরছে সে । তৃপ্তির পাসে নীলা, সুমি আর জুই বসে গল্প করছে । আর কিছুখন পর পর হা হা করে হেসে উঠছে সবাই । নীলা বিকেলের দিকে আসছে ইমনকে নিয়ে । আর জুই সন্ধায় আসছে । বিয়ে’টা শেষ হয়েছে কিছুখন আগে । জুই নিজের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+আমার সময় হয়ে গেছে । এবার যেতে হবে । পাপা ফোন করছে ।(জুই)

জুইর কথা শুনে সবাই তাকালো তার দিকে । তৃপ্তি ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো ।

:+আজ কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোর । আংকেলকে বলে দে, যে আজ তুই আমাদের এখানে থাকবি ।(তৃপ্তি)

:+না মানে, প্লিজ মাইন্ড করিস না । আমাকে এখন যেতেই হবে । সকাল ভোরে বরিশালের উদ্দেশ্য রওনা দেবো আমরা । তোকে তো বলেছি । যে আমি এসে থাকতে পারবো না । কিছুদিনের জন্য বরিশাল যাবো ।(জুই)

কিছু’টা ইনোসেন্ট মুখ করে বললো জুই । তৃপ্তি কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো ।

:+আমরা মুসলিম, আর তুই হিন্দু । তাই থাকতে চাচ্ছিস না । তাই না ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে জুই ফোঁস করে নিশ্বাস ছারলো । এই মেয়েকে সে কি বললো । আর এই মেয়ে কি বুঝলো । তৃপ্তির মাথায় গাট্টা মেরে জুই বলে উঠলো ।

:+আপনি একটু বেশিই বুঝতেছেন ম্যাডাম । যদি আমি হিন্দু আর মুসলিমের ভেদাভেদ খুজতাম । তাহলে কি এখানে আসতাম । আর খাবার খেতাম । একটু কম বুঝার চেষ্টা করেন বুঝচ্ছেন ।(জুই)

জুইর কথা শুনে তৃপ্তি ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে রইলো জুইর দিকে । নীলা আর সুমি জুইর কথায় মুগ্ধ হলো । সব হিন্দু আর মুসলিম যদি নিজেদের মধ্যে মানিয়ে নিতো । তাহলে আর এই দেশে মারামারি হতো না । পুরতো না হিন্দুদের মন্দির । ভাঙতো তা না মুসলিমদের মসজিদ । সবাই ভাই ভাই হয়ে সমাজের মাঝে ঘুরে বেরাতো । না থাকতো কোনো রক্তা রক্তি, না থাকতো মারামরি । সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতো । কিন্তু এই সমাজের কিছু নিকৃষ্ট মানুষের জন্য । আজ এই সমাজ দূষিত । তৃপ্তির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জুই চলে গেল । নীলা আর সুমি বসে গল্প করতে লাগলো তৃপ্তির সাথে । এদিকে নিদ্রকে নিয়ে ওর সব বন্ধুরা মেতে আছে । বেচারা নিদ্র চুপচাপ বসে আছে বেঞ্জের উপর । তার পকেট খালি করছে ওর সব বন্ধুরা । আর রাস্তা দিয়ে যে যাচ্ছে, তাকেও ডেকে ডেকে এটা সেটা দিচ্ছি ফ্রীতে । যেন দান করছে ওরা সবাইকে ।

:+ভাই,, দান দেওয়া শেষ হলে । এবার লিস্ট দে । আমি বাসায় যাবো । ১১টা বেজে আসছে ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে সবাই থমকে দাড়িয়ে গেল । এরপর নিদ্রর দিকে ঘুরে তাকালো সবাই । নিদ্র ভেবাচেকা খেয়ে গেল । এমন ভাবে ওর দিকে তাকানোর কি হলো । জেক একটু এগিয়ে এসে নিদ্রকে বললো ।

:+তুই এক কাজ কর । তুই বাসায় চলে যা । আমরা কাল সকালে তোকে লিস্ট পাঠিয়ে দেবো ।(জেক)

নিদ্র শুকনো ঢোক গিললো । সুজন দুই পা এগিয়ে এসে বললো ।

:+দান করা ভালো । তোর বিয়ে উপলক্ষে দান করলে পূর্ণ হবে । সবাই তোদের দোয়া করবে । অতএব তুই বাসায় চলে যা । আর আমরা দান করি ।(সুজন)

এই বলে সুজন একজন রিকশা ওয়ালাকে ডেকে, বড় এক পেকেট মেগি নুডলস্ তার হাতে দিয়ে বললো ।

:+দোয়া করবেন চাচা । আমাদের বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে, সে এটা আপনাকে দিয়েছে ।(সুজন)

সুজনের কথা শুনে নিদ্র দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো । আর এক সেকেন্ডও সেখানে বসলো না সে । বাসায় এসে ধিরে ধিরে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো নিদ্র । রুমের সামনে আসতেই, নীলা আর সুমি এসে দারালো তার সামনে । নিদ্র তো ভেবেছিল এরা এতোখনে চলে গেছে । কিন্তু এদের এখানে দেখে মাথায় হাত দিলো সে । এদের মেনেচ করবে কি দিয়ে । তার পকেট তো ফাকা । নীলা নিদ্রর দিকে হাত বারিয়ে বলে উঠলো ।

:+১০ হাজারের এক টাকাও কম নেবো না । আমার সমস্ত কসমেটিক দিয়ে অনেক কষ্টে সাজিয়েছি । অতএব টাকা কম নেওয়ার প্রশ্ন আসে না ।(নীলা)

:+আমার কাছে এখন টাকা নেই । কাল এসে নিয়ে যাস ।(নিদ্র)

নিদ্র সোজা সাপ্টা বলে উঠলো । নীলা মুখ বাকিয়ে বললো ।

:+এমন ধান্দা বাজি আমার সাথে চলবে না । কাল আবার বলবে পরসু ।(নীলা)

:+আরে ভাইয়া দিয়ে দিন না । এমন করছেন কেন । আমাদের ছোট বোন হিসেবে মনে করে দিয়ে দিন ।(সুমি)

নিদ্রর দুই আঙুল দিয়ে কপাল ঢলে বললো ।

:+এতো টাকা কি মানুষ সাথে নিয়ে ঘুরে ।(নিদ্র)

:+হুম,,তাহলে এতোখনে বিষায়’টা বুঝলাম । ঠিক আছে রুমে এসে দাও ।(নীলা)

এই বলে নীলা রুমে ঢুকে পড়লো । সাথে সুমিও । নিদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ছেরে রুমে প্রবেশ করলো । এরপর নিজের বেডের দিকে এক পলক তাকালে । দেখলো তৃপ্তি এইয়া লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে । নিদ্র মুচকি হেসে কাবাডের কাছে গেল । তারপর কাবাড খুলে ৮ হাজার টাকা পেলো । সেই ৮ হাজার টাকা দিয়ে, কোনে মতে নীলা আর সুমিকে বিদায় করলো সে । এরপর রুমের দরজা লাগিয়ে বেডের কাছে আসলো নিদ্র । তৃপ্তি বেড থেকে নেমে আসলো নিদ্রকে সালাম করতে । আমেনা শিখিয়ে দিয়েছে তৃপ্তিকে । তৃপ্তি সালাম করার আগেই, নিদ্র তৃপ্তির দুই বাহুতে ধরে বললো ।

:+তোর স্থান সব সময় আমার এখানে ।(নিদ্র)

এই বলে নিদ্র তৃপ্তিকে নিজের বুকে টেনে নিলো । তৃপ্তিও নিদ্রকে জরিয়ে ধরলো ।

:+কখনো ছেরে যাবে না’তো আমায় । আমি যদি কখনো তোমায় ভুল বুঝি । তাহলে তুমি আমার ভুল ভেঙে দিও । তবুও কখনো দুরে চলে যেও না । বিশ্বাস করো থাকতে পারবো না তোমাকে ছারা । এই তিন’টা মাস অনেক কষ্ট হয়েছে আমার । প্রতেক’টা রাত তোমার কথা ভেবে কেদেছি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে নিদ্র মুচকি হাসলো । এরপর তৃপ্তিকে নিজের থেকে ছারিয়ে বললো ।

:+আর কোথাও যাবো না মাই জান । এবার আপনি ভুল বুঝেন, আর যা ইচ্ছে মনে করেন । আপনাকে আর ছারছি না । এখন চুপ করে বেডের উপর বসে থাকেন । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ।(নিদ্র)

এই বলে নিদ্র তৃপ্তিকে বেডের উপর বসিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল । ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের লাইট অফ করে, ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো নিদ্র । এরপর বেডের উপর উঠে বসলো । তৃপ্তি ঠোঁট ফুলিয়ে বলে উঠলো ।

:+লাইট অফ করলে কেন । আমাকে দেখবে না । কতো সুন্দর করে সাজিয়েছে নীলা আপু । আর আমি ফ্রেশ হবো । এই গুলো পড়ে কি করে ঘুমবো ।(তৃপ্তি)

নিদ্র আস্তে করে তৃপ্তির ডান হাত’টা নিজের হাতে নিলো । এরপর নিজের ঠোঁট জোরা তাতে ছুয়িয়ে দিলো । তৃপ্তি থমথমি খেয়ে হাত টান দিয়ে সরিয়ে নিতে চাইল । কিন্তু নিদ্র ছারলো না । তৃপ্তি কিছু বলতে নিলো, কিন্তু তার আগেই নিদ্র বলে উঠলো ।

:+আমার বৌ এমনি’তেই অনেক সুন্দর । তার সাজা মুখ’টা দেখলে, আমি পাগল হয়ে যাবো । তাই লাইট অফ করে দিয়েছি । এতো তাড়াতাড়ি পাগল হতে চাই না আমি । আর ফ্রেশ পরে হবি । এখন চুপচাপ শুয়ে পর । আমি আমার বাবুর কাছে তার মাম্মামের নামে নালিশ করবো । অনেক জ্বালিয়েছে আমাকে সে ।(নিদ্র)

এই বলে নিদ্র তৃপ্তিকে শুয়িয়ে দিলো । এরপর তৃপ্তির পেটে কাছে মুখ নিয়ে নালিশ করতে লাগলো । তৃপ্তি খিল খিল করে হেসে উঠছে নিদ্রর কথা শুনে ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here