তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________70

0
85

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________70

কেটে গেছে আরো দুই’টা দিন……….
এই দুই দিনে তৃপ্তি সমানে কল করে গেছে নিদ্র, আমেনা আর ফরহাদের ফোনে । কিন্তু কারো ফোনেই কল যাচ্ছে না । তৃপ্তি বুঝতে পারছে না কি করবে ৷ কেদে কেটে অবস্থা শেষ । বজলুরের কাছে জিজ্ঞেস করলে, তিনিও বলেন অনেক বার কল করেছেন । কিন্তু কারো ফোনে কল যাচ্ছে না । সালমারও একই কথা । শেষে সামিয়ার থেকে রাহুলের নাম্বার নিলো তৃপ্তি । সামিয়া অনেক বার প্রশ্ন করেছিল কেন সে রাহুলের নাম্বার নিলো । কিন্তু তৃপ্তি সামিয়াকে কিছু বলেনি । নিজ রুমে বসে রাহুলের ফোনে কল করলো তৃপ্তি । সকাল ৬টা বাজে সবে । রাহুল ঘুমে ছিল । ফোনের শব্দ কানে লাগতে ঘুম ভেঙে যায় ওর । ফোন হাতে নিয়ে অচেনা নাম্বার দেখে বিরক্ত হয় । পরক্ষনে আবার কি মনে করে যেন তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলো । রাহুল ফোন কানে ধরতেই তৃপ্তি রাহুলকে সালাম দিয়ে বললো ৷

:+কেমন আছেন ভাইয়া ।(তৃপ্তি)

অচেনা নাম্বারে মেয়েলি কন্ঠ শুনে রাহুল শোয়া থেকে উঠে বসলো । রাহুল কিছু বলার আগে তৃপ্তি আবার বলে উঠলো ।

:+ভাইয়া আমি তৃপ্তি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির নাম শুনে রাহুল ফোস করে নিশ্বাস ছাড়লো । এরপর শান্ত কন্ঠে বললো ।

:+কেন কল করেছো ।(রাহুল)

রাহুলের কথা শুনে তৃপ্তির খারাপ লাগলো ৷ কিন্তু সে তা প্রকাশ না করে বললো ।

:+ভাইয়া বড় আম্মুর ফোনে কল যাচ্ছে না । বড় আব্বুর ফোনেও কল যাচ্ছে না । আজ দুই দিন ধরে ট্রাই করছি । বার বার বন্ধ বলছে । আর নিদ্র ভাইয়ার ফোন,,,,,।(তৃপ্তি)

:+হেই স্টপ স্টপ ।(রাহুল)

তৃপ্তির কথা শুনে চেচিয়ে উঠে রাহুল । এপাসে কেপে উঠে তৃপ্তি । রাহুল একটু থেকে বলতে শুরু করলো ।

:+তুমি মাত্র আজ দুই দিন ধরে ফোন করার চেষ্টা করছো । আর আমরা গত তিন মাস ধরে তোমার সাথে একটু কথা বলার ট্রাই করছি । বাট তোমার ফোন অফ । যত বারই কল করেছি । ততবারই ফোন অফ পেয়েছি । তোমার বড় আব্বু না যানে কত বার ফোন করেছেন তোমাকে । বাট ইউ । তোমার ফোন অফ । সামিয়ার কাছ থেকে যানতে পেরেছি তুমি নতুন সিম নাম্বার নিয়েছো । ওই সিমের নাম্বার আমি সামিয়ার কাছে চেয়েছি । কিন্তু কি হলো । সামিয়া আমাকে সোজা না করে দিলো । তাও আবার হুমকি দিলো । তোমার নাম্বার দ্বিতীয় বার চাইলে, আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিবে । তুমি নাকি ওকে নাম্বার দিতে নিষেধ করেছো । তাই সাহস করে আর চাওয়া হয়নি । তোমার আব্বুর কাছে অনেক বার কল করেছি । কিন্তু যতবারই কল করেছি । ততবারই উনি বিজি ছিলেন । কোন না কোন ফাংশনে ছিলেন তিনি । পরে কথা বলবেন বলে কল কেটে দিতেন । পরে হয়তো ফাংশন শেষে তিনি ভুলে যেতেন । তোমাদের বাড়িতে যাবো ভেবে ছিলাম । কিন্তু কোন পরিচয়ে যাবো বুঝতে পারিনি আমরা । বাদ দাও এসব । এখন বলো এতোদিন পর কল করে কি যানতে চাচ্ছো । উনারে বেচে আছে, নাকি মরে গেছে । আরে উনারে এখনো বেচে আছে । তবে না থাকার মতো । এভাবে চলতে থাকলে হয়তো বেশি দিন বাচবে না ।(রাহুল)

এক দোমে পুরো কথা গুলো বলে থামলো রাহুল । ফোনের এপাসে তৃপ্তির চোখ দু’টো দিয়ে অঝর ধরায় পানি পড়তে লাগলো । অজানা ভয় এসে হানা দিলো তৃপ্তির মনে । তৃপ্তি কাপা কাপা গলায় বললো ।

:+কি কি হ হয়েছে বড় আম্মু আর আব্বুর ৷(তৃপ্তি)

:+কি হয়নি তাই বলো । শুধু একটু ভুল ৷ একটু ভুলের জন্য আজ তোমরা দুইজন দুই খানে । আর মধ্যে খানে পরে । দু’জন মানুষ জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাচ্ছেন ৷ আসলে ভুল’টা আমাদেরই । শালার বন্ধু নামের কল্ক আমরা । সেদিন যদি পার্টিতে ড্রিংকস(মদ) না রাখতাম, তাহলে আজ এমন হতো না । নিদ্রও আমাদের সাথে থাকতো ৷ আর তুমিও হয়তো এখানে থাকতে ।(রাহুল)

রাহুলের শেষের কথা শুনে চেচিয়ে উঠলো তৃপ্তি ।

:+মানে,,,কি বলছেন ভাইয়া আপনি । নিদ্র ভাইয়া কোথায় ৷ আর,,,,,,,,।(তৃপ্তি)

:+হেই স্টপ । অনেক নাটক করেছো । এবার খানতো দাও ।(রাহুল)

তৃপ্তিকে থামিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো রাহুল । কেপে উঠলো তৃপ্তি । সে বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে । তৃপ্তি এবার পুরো কেদে দিয়ে বললো ।

:+প্লিজ ভাইয়া, আমাকে একটু ক্লিয়ার করে বলবেন, আসলে কি হয়েছে । আমার মন’টা কেমন যেন করছে ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কান্না ভেজা কন্ঠ রাহুলের মায়া হলো । রাহুল শান্ত কন্ঠে বলতে শুরু করলো ।

:+সেদিন তুমি বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর, নিদ্রও বাসা ছেরে চলে যায় । আমরা কেও যানতাম না তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে । কিন্তু এক সাপ্তাহ পর । সুমি যখন আংকেল আর আন্টিকে কল করে দেশে ফিরিয়ে আনলো । তখন আমরা সব যানতে পারি । এর সাপ্তাহ খানিক আগে যখন তোমরা বাসা থেকে চলে গিয়েছিলে, তখন গেটের দারোয়ানকে আমরা জিজ্ঞেস করে ছিলাম, যে নিদ্র বাসায় আছে কি-না । দারোয়ান আমাদের বললো । নিদ্র কোথাও বেড়াতে গেছে । অনেক বার ফোন করেছি আমরা নিদ্রকে, কিন্তু ওর ফোন অফ । সাপ্তাহ খানিক পর, সুমির থেকে দু’টো কাজ আর নিদ্রর ফোন পাই আমরা ৷ সুমি বললো, কাগজ দু’টো আর নিদ্রর ফোন না-কি নিদ্রর রুমে পেয়েছে ও ৷ কাগজ গুলো পড়ে আমরা বুঝতে পারি । যে নিদ্র আর তোমার মধ্যে কিছু হয়েছে । যার জন্য তুমি বাসা থেকে চলে গেছ । আর নিদ্রও বাড়ি থেকে চলে গেছে । আজ তিন মাস ধরে ওকে খুঁজছি আমরা ৷ কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না । অনলাইন, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির সব স্টুডেন্টদের কাছে নিদ্রর পিক দিয়ে দিয়েছি । কিন্তু কেও আজ প্রর্যন্ত খোজ এনে দিতে পারলো না । পুলিশ রিপোর্ট প্রর্যন্ত করেছেন আংকেল । পুলিশ রাও কোনো খোজ পাচ্ছে না ।(রাহুল)

:+হোয়াট । উনাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে । কি বলছেন আপনি সব ।(তৃপ্তি)

চেচিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে গেল তৃপ্তি । মাথার উপরে যেন গোটা আকাশ’টা ভেঙে পরেছে । রাহুল গম্ভীর কণ্ঠে বললো ।

:+আমি ঠিকই বলছি । আজ তিন মাস হয়ে গেছে, নিদ্র বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে । এখনো আমরা কেও ওর কোনো খোজ পাইনি । টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে । ছেলেটার কিছু হয়েছে কি না কে যানে । চারদিকে তো আর শত্রুর অভাব নেই । রাখছি এখন । আর তোমার কাছে একটা রিকুয়েষ্ট করছি । যা হয়েছে ভুলে যাও । ওটা একটা এক্সিডেন ছিল ।(রাহুল)

এই বলে রাহুল কল কেটে দিলো । এদিকে তৃপ্তি ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেল । যখন চোখ দু’টো খুললো, তখন সালমাকে নিজের পাসে বসা দেখলো তৃপ্তি । তৃপ্তির চোখ খোলা দেখে সালমা বিচলিত হয়ে পড়েন ।

:+কি হয়েছে তোর মা । ফ্লোরে অঙ্গেন হয়ে পরে ছিলি কেন ।(সালমা)

সালমার কথা শুনে তৃপ্তির রাহুলের কথা গুলো মনে পরে গেল । হাও মাও করে সালমাকে জরিয়ে ধরে কেদে উঠলো তৃপ্তি । সালমা আচমকা মেয়ের কান্না দেখে থতমতো খেয়ে গেল । দুই হাতে মেয়েকে আগলে ধরলেন তিনি । মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলেন ।

:+কি হয়েছে তোর মা । এমন করে কাদছিস কেন ।(সালমা)

সালমার কথা শুনে তৃপ্তি আরো জোরে কেদে উঠলো । সালমা কিছু বুঝতে পারছেন না । মেয়ের কান্না দেখে তিনি নিজেও কেদে দিলেন । অনেক’টা সময় পর তৃপ্তি শান্ত হলো । শান্ত হয়ে সে আর দেরি করলো না । সালমাকে ছেরে দিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াসরুমে চলে গেল । সালমা শুধু মেয়ের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো । মেয়েটার কি হয়েছে তিনি বুজতে পারছেন না ।

———————————————–

সকাল ৮টা বাজে……………
গায়ে কালো বোরখা আর হিজাব,নিকাব পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো তৃপ্তি । হাতে তার বড় একটা লাগেজ । তৃপ্তি নিচ তলায় নামতেই ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা বজলুর আর সালমা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তৃপ্তির দিকে । তৃপ্তি লাগেজ’টা এক পাসে রেখে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলো । সালমা কিছু বলার আগেই তৃপ্তি বলে উঠলো ।

:+আমি ঢাকা যাবো আম্মু, আর এখনি ।(তৃপ্তি)

:+কি বলছিস তুই এসব ৷ তুই না বললি আর কখনো ঢাকা যাবি না ।(সালমা)

সালমার কথার উওরে তৃপ্তি কিছু না বলে, প্রথমে বজলুরের পাস থেকে গাড়ির চাবির গোছা হাতে নিলো । এরপর চাবির গোছা থেকে গাড়ির চাবি’টা খুলতে খুলতে তৃপ্তি বললো ।

:+আমি তখন বলেছি ঢাকা যাবো না । এখন বলছি যাবো । মানে এখনি যাবো ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি গাড়ির চাবি নিয়ে লাগজের কাছে আসলো । এরপর লাগেজ’টা টেনে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো । সালমা আর বজলুর তাড়াতাড়ি মেয়ের পিছনে আসলো । তৃপ্তি গাড়ির পিছনের দরজা খুলে, লাগেজ’টা কোন মতে তুললো পিছনে । এরপর দরজা লাগিয়ে দিলো । সালমা এসে মেয়ের হাত শক্ত করে ধরলো । তৃপ্তি সালমার দিকে তাকালো । সালমা চোখ গরম করে বললো ।

:+তোকে স্বাধীনতা দিয়েছি বলে অনেক বেরে গেছিস । আগে আমার কথার উপরে একটা কথা বলতি না । কিন্তু ঢাকা থেকে আসর পর তুই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছিস । বাড়ির সকল মানুষকে এরিয়ে চলিস তুই । ঠিক মতো কথা বলিস না । আর এখন আবার ঢাকা ফিরে যেতে চাচ্ছিস । আমি তোকে কোথাও যেতে দেবো না । এই বাড়ি থেকে তুই এক পাও আর বেরোতে পারবি না ।(সালমা)

তৃপ্তি ঝারা মেরে সালমার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো । এরপর সালমার দিকে তৃপ্তি আঙুল তুলে বললো ।

:+আমাকে বাধা দিয়ো না আম্মু । পরিনাম ভালো হবে না । আমি চাই না তোমাকে কষ্ট দিতে । আমার মাথা এখন ঠিক নেই । পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি । প্লিজ আমাকে যেতে দাও ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি গাড়ির দিকে ঘুড়লো । সালমা আবার টান মেরে মেয়েকে নিজের দিকে ঘোরালো । এদিকে বজলুরের ইমার্জেন্সি একটা কল আসছে । উনি ফোনে কথা বলতে বেস্ত হয়ে গেছেন । সালমা আবার তৃপ্তিকে চোখ লাল করে বললো ।

:+তুই আমাকে বলছিস পরিনাম ভালো হবে না । এতো বড় হয়ে গেছিস তুই ।(সালমা)

:+আম্মু আমি তোমার ছোট করতে চাই না । কষ্ট দিতে চাই না । প্লিজ আমার হাত ছারো ।(তৃপ্তি)

:+ছারবো না কি করবি তুই ।(সালমা)

তৃপ্তি আর কোনো উপায় পেলো না । সে সালমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো । এরপর তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে, গাড়ি স্টাড দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল । সালমা হতভম্ব হয়ে মাটিতে বসে রইলো । হুস আসতেই তাড়াতাড়ি গেটের কাছে আসলো সালমা । গাড়ি’টা এখনো একটু দেখা যাচ্ছে । ঠুকরে কেদে উঠলেন তিনি । মেয়ে উনার হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে । উনি ডেড় বুঝতে পারছেন ।

———————————————–

বিকেল ৫টা ছুই ছুই……….
এমন সময় পাচ তলা বাড়ির গেট দিয়ে গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করালো তৃপ্তি । গাড়ি থেকে নেমে দারোয়ানকে লাগজে’টা নিয়ে আসতে বলে, বাড়ির ভিতরের দিকে হুর মুড়িয়ে ঢুকলো সে । ভিতরে এসে সামনের সোফার উপর বসে থাকা দুই মানবীকে চোখে পড়লো তৃপ্তির । দুই জন কেমন যেন এই তিন মাসে শুকিয়ে গেছে । তৃপ্তি ধির পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল । চোখ দু’টো দিয়ে বাধ ভেঙে পানি গড়িয়ে পড়ছে তৃপ্তির । ফরহাদ চমকে উঠলেন হঠাৎ তৃপ্তিকে দেখে । আমেনা চোখ বুজে ফরহাদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ছিলেন । কারো পায়ের শব্দ পেয়ে তিনি চোখ খুলে সামনে তাকালেন । তৃপ্তিকে দেখে তেতে উঠলো আমেনা । উনার পুরো গায়ে যেন কেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে । ফরহাদের শার্টের কলার চেপে ধরে আমেনা রেগে চিৎকার করে উঠলো ।

:+ফরহাদ এই মেয়ে এখানে কেন । এই মেয়েকে এখনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলো । এই মেয়ে যদি আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকে, তাহলে আমি একে খুন করবো । তুমি একে বেরিয়ে যেতে বলছো না কেন ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে তৃপ্তি হাও মাও করে কেদে আমেনার পা জরিয়ে ধরলো ।

:+আমি আর কোথাও যাবো না । তোমরা এবার মারো কাটো । যা ইচ্ছে আমাকে করো । আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না ।(তৃপ্তি)

আমেনা পা ঝাড়া মেরে তৃপ্তিকে নিজের পা থেকে ছাড়িয়ে নিলেন । এরপর তিনি দাড়িয়ে সেখান থেকে সরে এসে বললেন ।

:+একদম আমাকে ছুবি না তুই । আমার ছেলে টাকে আমার থেকে দুর করেছিস । এখন আবার কি জন্য এসেছিস তুই । আমরা মরে গেছি কিনা তা দেখার জন্য ।(আমেনা)

আমেনার কথা গুলো তৃপ্তির বুকে তীরের মতো গিয়ে লাগলো । আরো জোরে কেদে উঠলো তৃপ্তি । ফরহাদ আমেনাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন ।

:+প্লিজ আনু শান্ত হও । মেয়ে’টা এতো দুর প্রর্যন্ত যার্নি করে এসেছে,,,,,,,।(ফরহাদ)

ফরহাদকে থামিয়ে দিয়ে চেচিয়ে উঠলো আমেনা ।

:+একদম এই মেয়ের পক্ষে কথা বলবে না তুমি । আমি এই মেয়ের পক্ষে কোনো সুপারিশ শুনতে চাই না ।(আমেনা)

:+ঠিক আছে, আমি কিছু বলবো না । প্লিজ তুমি শান্ত হও । নাহলে তোমার পেসার বেরে যাবে । ওকে আমি দেখছি । প্লিজ তুমি রুমে যাও ।(ফরহাদ)

:+দেখছি না । এই মেয়ে আমার বাড়িতে থাকতে পারবে না । এটা আমার সাফ কথা ।(আমেনা)

এই বলে আমেনা চলে গেল । তৃপ্তি এখনো মেঝেতে বসে কেদে যাচ্ছে । ফরহাদ তৃপ্তির পাসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ।

:+কাদিস না । দেখি এখানে উঠে বস ।(ফরহাদ)

এই বলে ফরহাদ তৃপ্তিকে তুলে সোফার উপরে বসালো । তৃপ্তি এখনো ফুফিয়ে কেদে যাচ্ছে । দারোয়ান লাগেজ ভিতরে রেখে চলে গেছে । সুমি নিচ তালায় নেমে আসলো । এই তিন মাস আমেনাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে সুমি । অনেক বুঝিয়েছে সে আমেনাকে ৷ যে নিদ্র একদিন না এক দিন ফিরে আসবে । প্রতিদিন সন্ধায় আমেনার সাথে কথা বলার জন্য নিচে আসে সুমি । আজও তার জন্য আসলো । কিন্তু আজ তৃপ্তিকে দেখে অবাক হলো সে । সুমি আস্তে করে তৃপ্তির সামনে গিয়ে দাড়ালো । তৃপ্তি চোখ তুলে একবার সুমির দিকে তাকালো । এরপর আবার ঠুকড়ে কেদে উঠলো । সুমি আসতে করে তৃপ্তির পাসে বসলো । ফরহাদ তৃপ্তির লাগেজ’টা নিয়ে উপর তলায় চলে গেল ।

:+ভুল’টা যেমন নিদ্র ভাইয়ার ছিল । ঠিক তেমনি ভুল তোমারও ছিল । একটু বিষয়’টা যাচাই করার চেষ্টা করলে না ।(সুমি)

:+আমি তাকে যাচাই করেছি আপু । কিন্তু সে তো আমাকে ভুল প্রমান করলো । তখন আমি কি করবো বলো । রাগ হচ্ছিল খুব তার উপর । নিজের উপরও হচ্ছিল । তাই তো তাকে ছেরে চলে গেছি । কিন্তু সে বাড়ি থেকে চলে গেল কেন । তার তো বাড়িতে থাকার কথা ।(তৃপ্তি)

সুমির কথা শুনে কাদতে কাদতে বললো তৃপ্তি । সুমি তৃপ্তির হাত ধরে বসা থেকে দাড়িয়ে বললো ।

:+আমার সাথে এসো ।(সুমি)

এই বলে সুমি দোতলায় তৃপ্তিকে নিদ্রর রুমে নিয়ে আসলো । তৃপ্তি রুম’টার ভিতরে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেল । কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি । তিন মাস আগে যেমন ছিল । ঠিক এখনো তেমনই আছে । তৃপ্তি সুমির দিকে তাকালো । সুমি দরজার কাছে এসে বললো ।

:+সেদিনের পর আর কেও এই রুমে আসেনি । আচ্ছা তুমি থাকো । আমি একটু আসছি ।(সুমি)

এই বলে সুমি নিদ্রর রুম থেকে বেরিয়ে গেল । আর তৃপ্তি রুমের মধ্যে দাড়িয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলো । হঠাৎ একটা বোতল চোখে পরলো তৃপ্তির । বোতল’টা মেঝেতে পড়ে আছে, তৃপ্তি সেটা হাতে তুলে নিলো । বোতল’টা ঘুড়িয়ে দেখতে লগলো সে । এমন সময় সুমি আবার ফিরে আসলো । এরপর তৃপ্তির দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিলো । তৃপ্তি অবাক হয়ে কাগজ’টা হাতে নিলো ।

:+এটা তুমি পড়ো । তারপর সব বুঝতে পারবে ।(সুমি)

সুমির কথা শুনে তৃপ্তি কাগজের ভাজ খুলে পড়তে সুরু করলো । নিদ্রর লেখা কাগজ’টা পুরো পড়া শেষ করে হাতের বোতল’টা দেয়ালে ছুড়ে মারলো তৃপ্তি ।

:+হে আল্লাহ’আআআআআ,, এটা কি হলো ৷(তৃপ্তি)

গগন কাঁপানো চিৎকার দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে নেয় তৃপ্তি । সুমি পাস থেকে জাপ্টে জরিয়ে ধরে তৃপ্তিকে । মেয়ে’টার একে তো দুর্বল শরীর । তার উপর এতো পেসার না নিতে পেরে অঙ্গেন হয়ে গেছে । সুমি চিৎকার করে ফরহাদকে ডাকতে লাগলো ।

:+আংকেএএএএল,,,আংকেএএএএল,, তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন ।(সুমি)

ফরহাদ তৃপ্তির চিৎকার শুনেই নিজ রুম থেকে বেরিয়ে আসছে । এখন সুমির চিৎকার শুনে উনি এক প্রকার দৌড়ে আসলেন । আমেনা রুমে ছিলেন ৷ প্রথমে তৃপ্তির চিৎকার, পরে সুমির চিৎকার শুনে । তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না । ফরহাদের পিছু পিছু তিনিও আসলেন । নিদ্রর রুমে এসে সুমি তৃপ্তিকে জরিয়ে ধরে আছে দেখলো ফরহাদ আর আমেনা । উনারা কিছু বলার আগেই সুমি বললো ।

:+আংকেল ও চিৎকার দিয়ে অঙ্গেন হয়ে গেছে । আসলে আমার ভুল হয়েছে । কাগজ’টা ওর হাতে এখন দেওয়া ঠিক হয়নি । আমি দিয়ে ভুল করে ফেলছি । ওকে ধরুন আংকেল রুমে নিয়ে শোয়াতে হবে ।(সুমি)

সুমির কথা শুনে ফরহাদ কিছু বললো না । উনি আর সুমি মিলে তৃপ্তিকে নিদ্রর রুম থেকে বের করে নিয়ে আসলো । এরপর তৃপ্তি আগে যেই রুমে থাকতো, সেই রুমে তৃপ্তিকে নিয়ে আসলো ফরহাদ আর সুমি । বেডের উপর শুয়িয়ে দিয়ে ফরহাদ এক পাসে বসলো । সুমি বেডের আরেক পাসে গিয়ে বসলো । আমেনা ফরহাদের কাছে এসে বললো ।

:+তুমি রুম থেকে যাও । আমি দেখছি ।(আমেনা)

ফরহাদ কিছু না বলে উঠে চলে গেল । আমেনা তৃপ্তির মাথার পাসে বসলেন ৷ এরপর সুমির সাহায্যে তৃপ্তির গা থেকে বোরখা, হিজাব, নিকাব খুললেন তিনি । সে গুলো হাত থেকে সাইডে রেখে তৃপ্তির মুখের দিকে তাকালেন আমেনা । কলিজা’টা মোচড় দিয়ে উঠলো উনার । মেয়ে’টার চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে । চোখ পাতা দু’টো যেন কালো মেঘে ঢেকে আছে । ঠোঁট দু’টো শুকিয়ে আছে । দেখে মনে হচ্ছে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না । আমেনা তৃপ্তির বাম হাত’টা নিজের হাতে নিয়ে পালস চেক করলো । এরপর দুই চোখের পাতা টেনে দেখলেন তিনি । আমেনা সুমির দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+তোমার আংকেলকে ডেকে আনো । তাড়াতাড়ি যাও ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে সুমি চলে গেল । এদিকে আমেনা কান পারলো তৃপ্তির পেটে । কিছু একটা অনুভব করার চেষ্টা করছেন তিনি । ফরহাদ রুমে আসতেই আমেনা বললো ।

:+তাড়াতাড়ি ডক্টরকে কল করে আসতে বলো ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে ফরহাদ চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলেন ।

:+কি হয়েছে,, সিরিয়াস কিছু । হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ।(ফরহাদ)

আমেনা শত দুঃখের মাঝেও মুচকি হাসলেন । ফরহাদ অবাক হয়ে তাকালো আমেনার দিকে । আজ গোটা তিন মাস পর আমেনার মুখে হাসি দেখছেন তিনি । ফরহাদ কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল । সুমি এসে বসলো আমেনার সামনে ।

:+আন্টি কি হয়ে ওর । বেশি সিরিয়াস কিছু নাকি । আমারই ভুল হয়েছে । কাগজ’টা ওকে এখন দেওয়ার উচিত হয়নি আমার ।(সুমি)

আমেনা মুচকি হেসে বলে উঠলেন ।

:+সিরিয়াস কিছু না । তবে আমার কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছে । ডক্টর আসলে সেটা ক্লিয়ার হবে ।(আমেনা)

সুমি কিছু বুঝলো না আমেনা মুচকি হাসছে কেন । সে চুপচাপ বসে রইলো । এদিকে ফরহাদ বাসা থেকে বেরিয়ে আসলেন ডক্টর নিতে । কারন উনার ফোন হারিয়ে গেছে দুই মাস আগে । ফোন আর কেনা হয়ে উঠেনি উনার । আমেনার ফোন বন্ধ হয়ে আছে । সেটা দিয়েও আর কল করা হলো না । তাই তিনি নিজে ডক্টর নিতে আসলেন । ডক্টর নিয়ে বাড়িতে আবার ফিরে আসলেন ফারহাদ ৷ আমেনা এক মনে বসে কিছু ভাবছিল । ফরহাদ ডক্টর নিয়ে আসতেই তিনি ডক্টরকে বললেন ।

:+ডক্টর দেখুন তো ওকে । আর,,,,,,।(আমেনা)

আমেনা বলতে গিয়েও থেকে গেল । এরপর ফরহাদ আর সুমির দিকে তাকিয়ে আমেনা বললো ৷

:+তোমরা বাহিরে যাও । আমি না ডাকা প্রর্যন্ত আসবে না ।(আমেনা)

ফরহাদ আর সুমি রুম থেকে বেরিয়ে গেল । আমেনা ডক্টরকে বললো ।

:+আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ও প্রেগন্যান্ট । একটু দেখুন তো ।(আমেনা)

ডক্টর আমেনার কথা শুনে তৃপ্তির দিকে একবার তাকালো । এরপর নিজের যা টেস্ট করার তিনি করলেন । আমেনা এক পাসে চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলেন । ডক্টর একটা ইনজেকশনে ঔষধ নিয়ে তৃপ্তির হাতে পুস করে দিয়ে বললেন ।

:+আপনি খুব ইন্টেলিজেন্ট ম্যাডাম । ঠিকই ধরেছেন । ও প্রেগন্যান্ট । মেয়ে’টা মনে হয় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছে না । একটু ভালো খাওয়া দাওয়া করান । অনেক দুর্বল ওর শরীর । ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিলাম । অনেক’টা সময় প্রর্যন্ত ঘুমবে । তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে । আমি এখন আসছি ।(ডক্টর)

এই বলে ডক্টর বসা থেকে উঠে দাড়ালো । আমেনা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ডক্টের কথা শুনে । ডক্টর নিজের জিনিস পত্র নিয়ে তৃপ্তির রুম থেকে বেরিয়ে গেল । আমেনা আস্তে করে তৃপ্তির মাথার পাসে বসলো । ফারহাদ ডক্টরকে বেরিয়ে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে । ডক্টর ফারহাদকে সব’টা যানায় । ফরহাদ চমকে উঠে ডক্টরের কথা শুনে । সুমিও চমকায় । পরক্ষনে সুমি খুশি হয়ে তৃপ্তির রুমে প্রবেশ করলো ।

————————————————

রাত প্রায় ১২টা বাজে………………
তৃপ্তি ঘুমে বিভোর হয়ে আছে । এখনো ওর ঘুম ভাঙেনি । আমেনা তৃপ্তির পাসে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । ফরহাদ নিজ রুমে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন । তৃপ্তি ঘুমের মধ্যে আড়মোড়া দিয়ে, আমেনার দিকে ফিরে আমেনাকে জরিয়ে ধরলো । এরপর আমেনার বুকে মুখ গুজে এক পা তুলে দিলো আমেনার গায়ের উপর । আমেনা মুচকি হেসে আগলে নিলেন তৃপ্তিকে । প্রথমে তৃপ্তিকে হঠাৎ দেখে উনার প্রছন্ড রাগ হয়েছে । কিন্তু এখন উনার সব রাগ হাওয়া হয়ে গেছে । মেয়েটার কপালে অধর জোরা ছুয়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন তিনি । মেয়ে’টা কম কষ্ট পায়নি, তিনি বেশ বুঝতে পারছেন । বজলুর ফোন করেছিল তৃপ্তির ফোনে । আমেনা সুধু ফোন’টা ধরে বলেছে,”তৃপ্তি ঠিক মতোই উনাদের কাছে আসছে “। বজলুর আরো কয়েক’টা প্রশ্ন করে ছিল আমেনাকে । কিন্তু আমেনা আর কোনো কথার উওর দেয় নি ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here