অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_15

0
505

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_15

নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা আর কিছু বললো না। ও বুঝে গেছে, এই ছেলেটার সাথে ও কথাতে পেরে উঠবে না। তিতিক্ষাকে চুপ করে থাকতে দেখে নক্ষত্র মুচকি হাসলো। আর যাওয়ার আগে তিতিক্ষাকে মৃদু একটা ধাক্কা মেরে রুমের দিকে এগোলো।

পলক ওর গার্লফ্রেন্ড সারার সাথে কথা বলছে; একটা নিরিবিলি জায়গাতে বসে। ও নিজের মতো প্রেমালাপে ব্যস্ত। অদ্রি আর পাতা ধীর পায়ে পলকের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পলকের কথাগুলো নিখুঁতভাবে ভিডিও করলো। পলক সারার সাথে কথা বলায় এতটাই বিভোর যে, ওর পেছনে দাঁড়িয়ে অদ্রি আর পাতা ওর জন্যই আইক্কা ওয়ালা বাঁশ রেডি করছে, এতে ওর কোনো ধারণাই নেই। কথা বলা শেষ করে পলক ওর ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। অদ্রি আর পাতা গালে হাত দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটু পরে পলক বামে তাকিয়ে অদ্রি আর পাতাকে দেখে চমকে উঠে চিৎকার করে বললো,

–“ওমা গো! ওই শাকচুন্নিরা তোরা এখানে কি করছিস? ও বাবারে! আর একটু হলেই হার্ট অ্যাটাক করতাম আমি।”

পলকের চিৎকারে অদ্রি আর পাতার কোনো ভাবান্তর হলো না। তারা এখনো গালে হাত দিয়ে পলকের দিকে তাকিয়ে আছে। পলক ওদের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছে না। অদ্রি ফোনটা বের করে ভিডিওটা পলক কে দেখালো আর ভিডিওটা দেখে পলকের পিলে চমকে উঠলো। মনে মনে এই দুটোকে ইচ্ছেমত বকা দিয়ে মুখ কাচুমাচু করে হেসে বললো,

–“বোন তোরা এত রাতে এখানে কি করছিস? যা বাসায় যা। ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”

–“হুম বাসাতেই তো যাবো। এই বাঁশটা
সবাইকে দেখাতে হবে না ” (অদ্রি)

–“বোন হয়ে ভাইয়ের এত বড় ক্ষতি করতে তোদের বুক কাঁপছে না? এমন করে না আমার মিষ্টি বোনরা। কি লাগবে তোদের বল?”

–“কালকে আমাদের শপিং করতে নিয়ে যাবে। আর আমরা যা যা পছন্দ করবো, আমাদের সবটা কিনে দিতে হবে। তা না হলে এই ভিডিওটা বড় মামার কাছে পৌঁছে যাবে।”

কথাটা বলে অদ্রি আর পাতা হনহন করে চলে গেল। আর পলক মাথাতে হাত দিয়ে বসে থাকলো। এরা দু’জন যে কালকে ওর ওয়ালেটের অবস্থা দফারফা করে ছাড়বে; এটা খুব ভালো করে ও বুঝতে পারছে। কালকে মুভি দেখার সময় পলকের জন্য ওরা বকা খেয়েছে। আজকে সেই রাগটা দু’জন মিলে তুললো।

তিতিক্ষা ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আঁচড়ে কাঁটা দিয়ে চুল গুলো উঁচু করে বাঁধল। রুমে এখন আপাতত কেউ নেই। এজন্য ওড়নাটা বেডের উপর রাখলো। আর ওর হাতের টাওয়াল টা চেয়ারের উপর মেলে দিলো। অদ্রি এসে বেডের উপর দুই পা তুলে গালে হাত দিয়ে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,
–“ভাবি মনি তুমি কি ভাইয়ার সাথে খামচা খামচি খেলছিলে?”

তিতিক্ষা অদ্রির কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। অদ্রি হাতের ইশারায় আয়নাতে তিতিক্ষাকে ওর ঘাড়ের দিকে তাকাতে বললো। অদ্রির কথা অনুযায়ী তিতিক্ষা আয়নায় ওর ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। কারণ ওর ঘাড়ে খামচানোর দাগ স্পষ্ট। অদ্রি মিটিমিটি হাসছে। নক্ষত্রের আম্মু তখন ওদের রুমে আসলো। তাই তিতিক্ষাও এই নিয়ে আর কথা বাড়ালো না। এটা নিয়ে যত কথা বাড়াবে, অদ্রি তত মজা নিবে। এরা দুই ভাইবোন দু’জনই খুব দুষ্টু। শুধু ওকে লজ্জা তে ফেলে।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে দু’একবার তাকালো। কিন্তু তিতিক্ষা একবারও তাকায়নি। যদিও এর কোনো কারণ নেই। সে এমনিতেই তাকায়নি আর এখানে বড়রাও আছে। সবাই অনেক কথা বললেও তিতিক্ষা চুপ করে খাচ্ছিল। খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল। আপাতত বড়রা এখানে কেউ নেই। তিতিক্ষা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কেউ কি আমার উপর রেগে আছে?

এই কথাটা শুনে তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না। মিটিমিটি হাসতে হাসতে তিতিক্ষা ওর রুমে চলে গেল। নক্ষত্র কিছুই বুঝলো না। রাতটা প্রায় ১ টা বেজে ১৫ মিনিটে নক্ষত্রের ফোনে একটা মেসেজ আসলো। নক্ষত্র তখন লেপটপে ওর ই-মেইল চেক করছিলো। মেসেজের টোনে ফোনের দিকে তাকালো। ম্যানোপ্যাথি নাম দেখে নক্ষত্র ফোনটা হাতে নিলো। তিতিক্ষার মেসেজ এত রাতে। নক্ষত্র মেসেজাটা সিন করলো। মেসেজ দেখে নক্ষত্র অবাক হলো। মেসেজটি ছিলো,

–“আপনি আপনার রুমে বাইরে। প্লিজ দরজাটা খুলুন।”

নক্ষত্র দ্রুত উঠে ওর রুমের দরজা খুলে দিলো। তিতিক্ষা রুমে ঢুকে গেলো, নক্ষত্র দরজা আটকে দিলো। তিতিক্ষা এখন এভাবে ওর রুমে আসাতে নক্ষত্র অবাকই হলো। তিতিক্ষার চোখে পানি, মুখে ভয়ের ছাপ। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো,

–“তিতিক্ষা কি হয়েছে? কোনো সমস্যা? তুমি ঠিক আছো তো?”

তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আর দুই হাত দিয়ে ওর মুখটা মুছে নিলো। ওর শরীর মৃদু ভাবে কাঁপছে। মনে হচ্ছে এখনই ধপ করে পড়ে যাবে।
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বেডে বসিয়ে ওর সামনে বসলো।
পানি খাইয়ে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে শান্ত করলো। এরপর ওর দুই গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললো,
–“কি হয়েছে? বলো আমাকে?”

তিতিক্ষা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আবার কেঁদে দিলো। তিতিক্ষার চোখে পানি দেখে নক্ষত্রের কলিজাটা যেন কেঁপে উঠলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বুঝলো কিছু একটা তো ওর হয়েছেই। তা না হলে তিতিক্ষা এত রাতে এখানে আসার মত মেয়ে না। তিতিক্ষা ওর মাথা নিচু করে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার কপালে একটা আদর দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়ে নরম সুরে বললো,

–“তোমাকে বলেছি না, তোমার চোখের অশ্রু আমার হৃদকম্পনের কারন। এভাবে কাঁদছো কেন? বলো আমাকে কি হয়েছে?”

তিতিক্ষা ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠলো,

–“আপনাকে নিয়ে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি। প্লিজ! আপনি সাবধানে থাকবেন। আপনাকে নিয়ে আমার খুব ভয় হচ্ছে।”

নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকালো। কেঁদে কেঁদে মুখটা একদম লাল করে ফেলেছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। তিতিক্ষার চোখে অশ্রু থামার নামই নেই। চোখ মোছার সাথে সাথে আবার গাল বেয়ে ঝরে যাচ্ছে অশ্রুবিন্দু। তিতিক্ষা ওর ঠোঁটে কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হলে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। তিতিক্ষা অশ্রুু ভেজা চোখে ওর দিকে তাকালো। এরপর ঝাঁপিয়ে পড়লো নক্ষত্রের বুকে আর ওর গলাতে মুখ লুকিয়ে উচ্চশব্দে কেঁদে দিলো। নক্ষত্রও তিতিক্ষাকে স্বযত্নে জড়িয়ে নিলো ওর বাহুডোরে। তিতিক্ষাও যে নক্ষত্রের শীর্ষ অনুভুতির মায়াজালে মারাত্মক ভাবে আটকে গেছে। এখনকার এই মুহূর্ত টুকু এটাই তার প্রমান। এজন্যই এত রাতে তিতিক্ষা নক্ষত্রের রুমে পর্যন্ত ছুটে এসেছে। শুধু মাত্র নক্ষত্র ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য।

নক্ষত্রের চোখে দিয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু ও দ্রুত সেই অশ্রুটুকু আড়াল করে নিলো।
নক্ষত্র কখনো ভাবেনি তিতিক্ষা এত তারাতাড়ি ওর মায়াজালে আটকে যাবে। নক্ষত্রের বুকটা যেন খুশিতে ছেয়ে গেল। নক্ষত্র মনে মনে বললো,

–“প্রিয়মানুষটাকে নিজের জন্য কাঁদতে দেখাই হলো অনুভূতির শীর্ষবিন্দুর চূড়ান্ত ফলাফল। আজকে এই মুহূর্তটুকু থেকে আমার সব অনুভূতিরা স্বার্থক।”

অতিরিক্ত কান্নার ফলে তিতিক্ষা নক্ষত্রের গায়ে বমি করে দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার মাথার দু’পাশে চেপে ধরলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ছাড়তে চাইলো। কিন্তু সে ছাড়লো না। বরং ওয়াশরুমে গিয়ে নক্ষত্র নিজে হাতে তিতিক্ষার মুখ ধুয়ে দিলো। নক্ষত্র অদ্রিকে ফোন করে তিতিক্ষার একটা ড্রেস নিয়ে এই রুমে আসতে বললো। অদ্রি তিতিক্ষাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। নক্ষত্রের সাথে অদ্রি থাকতে চাইলো। কিন্তু নক্ষত্র ওকে চলে বললো,
–“অনেক রাত হয়েছে। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমি আছি সমস্যা নেই।”

অদ্রি আর কথা বাড়ালো না, সে চলে গেল।
নক্ষত্র তিতিক্ষার ড্রেস বদলে নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে রেখে আসলো। তিতিক্ষার যতটুকু শক্তি ছিলো, বমি করাতে সেইটুকুও যেন চলে গেছে।
নক্ষত্র আলমারি খুলে বেডশীট বের করে বেডে বিছিয়ে দিলো। তিতিক্ষা ড্রেস বদলে আসলে নক্ষত্র গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তিতিক্ষা চুপ করে বেডে শুয়ে আছে। ওর প্রচন্ড মাথা ঘুরছে। নক্ষত্র এসে তিতিক্ষার পাশে শুয়ে ওকে বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। তিতিক্ষা কিছু বললো না। বরং ওর চোখের কোণা বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে নক্ষত্রের বুকে পড়লো। নক্ষত্র বুঝতে পেরে বললো,

–“আমার বউটা যে এত বরপাগল এই তথ্যটা তো জানা ছিলো না।”

তিতিক্ষা চুপ করে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। প্রশান্তিতে তিতিক্ষার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। ভয়, কান্না আর বমির করার জন্য শরীরটা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার কপালে উষ্ণতার পরশ একে দিয়ে শান্ত সুরে মিষ্টি করে বললো,
–“পাগলি বউ আমি শুধু তোমাতেই আবদ্ধ। ভয় পেও না। আমি সর্বক্ষণ তোমার পাশে আছি।”

বেশ কিছুক্ষণ হলো তিতিক্ষা ঘুমিয়ে গেছে। নক্ষত্রের চোখের পাতাতে একটুও ঘুম নেই। নক্ষত্রের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। এখন যদি তিতিক্ষা ওর প্রতি এত দূর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে নক্ষত্রের পক্ষে তিতিক্ষাকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না। আর তিতিক্ষার বাবা বলেছে, তিতিক্ষার অনার্স কমপ্লিট করার পর অনুষ্ঠান করবেন। নক্ষত্র এসব ভেবে তিতিক্ষার আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। এ কেমন অনুভুতি? এটা কেমন ভালবাসা? যেটা প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে মারাত্মক ভাবে একে অপরকে গ্রাস করে নিচ্ছে। কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে একে অপরকে ছেড়ে দূরে সরে থাকাটা।

পরেরদিন সকালে…!!

আজকে নাকি একটা মেলা বসবে। সেই মেলাতেই আজকে ওরা ঘুরতে যাবে। যথাসময়ে পলক, নক্ষত্র, তিতিক্ষা, পাতা আর অদ্রি বেড়িয়ে পড়েছে মেলার উদ্দেশ্যে। সবাই মিলে গল্প করছে আর গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাঁটছে। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর ওরা মেলাতে গিয়ে পৌঁছালো। কোথায় কি বসেছে ওরা ঘুরে ঘুরে দেখছে। অদ্রি আর পাতা পলককে টেনে কসমেটিকসের দোকানে নিয়ে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে টেনে অন্য দিকে নিয়ে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ১০ ডজন চুড়ি কিনে দিলো। আর একটু সামনে এগোতেই নক্ষত্রের একটা শাড়ি খুব পছন্দ হলো। শাড়িটা কালো কালার আর লাল পাড়ের। নক্ষত্র শাড়িটাও কিনে নিলো। তিতিক্ষা না করলেও শুনলো না। মেলা ঘুরে ঘুরে অনেক জিনিসই দেখলো, কিনলো, মেলার খাবার খেলো। অদ্রি আর পাতা প্রথমে পলকের থেকে অনেক কিছু কিনে নিলো। এরপর নক্ষত্রের থেকে নিবে বলে বায়না ধরলো। নক্ষত্র অবাক হওয়ার সুরে বললো,

–“এত কিছু কেনার পরও তোদের হয়নি? আরো কিনে দিতে হবে?

অদ্রি মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,

–“একজন আর্কিট্রেক্টের অনেক টাকা পয়সা৷ কম সে কম প্রতি মাসে ওনারা ১লাখ টাকা আয় করে৷ আর তাছাড়া তোর তো আরো আয়ের সোর্স আছে। তাই বলছি ভাই একদম কিপ্টামি করবি না।”

নক্ষত্র আর কথা বাড়ালো না। কারণ এখন কিছু বললে ওর সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিবে। তিতিক্ষা ওদের ভাই-বোনের ঝগড়া দেখে হাসছে।
পলক সবার আড়ালে সারার জন্য নুপূর কিনে পকেটে নিয়েছে। পলক নুপূরটা পকেটে ঢুকিয়ে তাকাতেই তিতিক্ষা ফিসফিস করে বললো,

–“উহুম! উহুম! স্পেশাল কারো জন্য বুঝি?”

পলকে মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। তিতিক্ষা পলকের কথাতে মুচকি হাসলো। মেলা ঘুরতে ঘুরতে দেখলো এক স্থানে মেয়েদের খেলার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। অনেক মেয়ে সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই জলে ডাঙ্গা খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জলে ডাঙা খেলার আরেক নাম ঘরে বাইরে। একেক জেলাতে একেক নামে পরিচিত আর কি। অদ্রি আর পাতা তিতিক্ষার হাত ধরে টানছে খেলাতে নাম দেওয়ার জন্য। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র যাওয়ার পারমিশন দিলো। তিতিক্ষা ওর হাতের ফোনটা নক্ষত্রের হাতে ধরিয়ে দিলো। পাতা অদ্রি আর তিতিক্ষার খেলার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। সামনে একটা লম্বা রেখা টানা। কেউ একজন জলে বললে লাফিয়ে রেখার ওপাশে যেতে হবে। আর ডাঙ্গা বললে আগের স্থানে৷ পলক নক্ষত্রকে চেয়ার এনে বসতে বললো। আর ও ফোনে কথা বলতে অন্যদিকে চলে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষার ফোনটা নিয়ে ওর বেশ কয়েকটা পিক তুললো। তিতিক্ষারও পিক তুললো। নক্ষত্র ওর ফোনটা আনেনি; চার্জ ছিল না তাই। নক্ষত্র কি মনে করে তিতিক্ষার ফোনে ওর নাম্বারটা ভিজিট করলো। তখনই সেইভ করা পুরো নামটা ভেসে উঠলো। নক্ষত্র হাসবে নাকি কাঁদবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কারণ নক্ষত্রের নাম্বারটা এই ফোনে সেভ করা আছে ‘অর্ধ সোয়ামি’ লিখে।

নক্ষত্র শব্দ করে না হাসলেও মুচকি হাসলো। তিতিক্ষা, অদ্রি আর পাতা তিনজনেই সিরিয়াস ভাবে খেলছে। তিনজনের এ সিরিয়াস ভাব দেখে মনে হচ্ছে, এই প্রতিযোগিতার প্রথম পুরষ্কার ওরা নিয়েই যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পাতা আর অদ্রি দুইজন পরপর আউট হয়ে গেল। এখন শুধু তিতিক্ষা রইলো। যখন আর তিন জন বাকি ছিলো, তখন তিতিক্ষাও আউট হয়ে গেল। তিন জনেরই মন খারাপ। নক্ষত্র তখন ওদের উদ্দেশ্য করে বললো,

–“খেলাতে হার-জিত থাকবেই। এটা নিয়ে মন করে থাকাটা বোকামি।”

ওদের মন ভালো করার জন্য নক্ষত্র ওদের ফুচকা খাওয়ালো। নক্ষত্র ওদের নিয়ে একটা শপিংমলে গেল। বড় মামি, ছোট মামী, ওর আম্মু, আর নানুর জন্য শাড়ি কিনলো। বড় মামা, ছোট মামা, আর পলকের জন্য পাঞ্জাবি কিনে ফেলল। পলক যদিও নিতে চাচ্ছিলো না। নক্ষত্রের তবুও ওর কোনো কথা শোনেনি। এখানে আবার কবে আসবে তার তো ঠিক নেই। তাই সবাইকে ছোটখাটো উপহার দিলো।

অনেক ঘুরাঘুরি শেষে ওরা সবাই বাসায় ফিরে গেল। নক্ষত্র ওর রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তিতিক্ষা ওর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। সবাই দুপুরে খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে। বড় মামা, ছোট মামা বাসায় নেই আর পলক বেরিয়েছে সারার সাথে দেখা করতে। তিতিক্ষা খেয়ে এসে বেডে বসতেই নক্ষত্রের আম্মু রুমে আসলো।
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

–“কালকে আমরা চলে যাবো। তোমার জিনিস পত্র গুছিয়ে নাও। আমাকে যেন আর বলতে না হয়।”

নক্ষত্রের আম্মু এর আগে তিতিক্ষার সাথে এমনভাবে কথা বলেনি। তিতিক্ষা কিছু বলল না, মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। উনি অদ্রিকেও বললো,

–“তুই বসে আছিস কেন? তোকে কি আলাদা ভাবে বলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চলে যাব এখান থেকে। আর এখানে থেকে পাপ বাড়াতে চাচ্ছি না।”

তিতিক্ষা আর অদ্রি অবাক হলো নক্ষত্রের আম্মু এমন ব্যবহারে। নক্ষত্রও তখন ওই রুমেই বসে ছিলো। নক্ষত্রের আম্মু চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে, আবার ফিরে এসে নক্ষত্র কে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“আজকাল একটু বেশিই বড় হয়ে গেছো। এজন্য মনে হয়‌ বাবা মায়ের প্রতি আর ভরসা রাখতে পারছো না।”

উনি কথাটা বলে আর একদন্ডও দাঁড়ালো না। যত দ্রুত সম্ভব রুম ত্যাগ করলো। এদিকে নক্ষত্র, তিতিক্ষা আর পাতা উনার এমন রুড ব্যবহারের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছে না। নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকালো। ওর চোখে পানি ছলছল করছে। কিছু একটা ভেবে নক্ষত্র উচ্চশব্দের ওর আম্মুকে ডাকলো। ওর আম্মু রেগেই আবার রুমে হাজির হলো। নক্ষত্র তখন শান্ত কন্ঠে বললো,

–“পুরোটা কাহিনী তোমার উপস্থাপন করতে হবে না। শুধু তোমার রাগের মেইন পয়েন্টটুকু তুমি আমাকে বলবা।”

নক্ষত্রের আম্মু ঠাস করে নক্ষত্রগুলো একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। কোনো এক কারণে উনি খুব রেগে আছে। নক্ষত্র এই প্রথম ওর আম্মুর হাতে মার খেলো। নক্ষত্রের যা বোঝার এবার ক্লিয়ারলি নক্ষত্র বুঝে গেছে। অদ্রি আর তিতিক্ষা হয়ে অবাক দেখছে। নক্ষত্রকে মার খেতে দেখে তিতিক্ষার চোখে থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নক্ষত্র এখনও নিজেকে স্বাভাবিক করে শান্ত সুরে বলল,

–“আম্মু তুমি যা ভাবছো, সেটা নয়। দৃশ্যমান অংশে অদৃশ্য ভাবে কিছু লুকিয়ে আছে।”

To be continue….!

(গল্পে রেসপন্স বাড়ছে না। যারা গল্প পড়ে কমেন্ট করেন না, তাদের সমস্যাটা জানতে চাই। ছোট্ট একটা কমেন্ট করতে কি সমস্যা আপনাদের? আজকের পর্বে শব্দ সংখ্যা ২১০০+। আশা করি বড় এবং সুন্দর কিছু কমেন্ট পাবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here