অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_27

0
588

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_27

নক্ষত্রের ঘুম ভেঙে যায়। টিপটিপ করে চোখ খুলে দেখে তিতিক্ষা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র বুঝতে পারে, সে এখনো তিতিক্ষার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নক্ষত্র দ্রুত উঠে বসলো৷ তিতিক্ষা নক্ষত্রকে দেখে মুচকি হাসলো। ঘুম থেকে উঠার ফলে নক্ষত্রের চোখ ফুলে আছে। তবে ওকে দেখতে এখন একটু ফ্রেশ লাগছে। পানির বোতলটা নিয়ে নক্ষত্র ওর চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো। শান্ত দৃষ্টিতে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“আমাকে ডাকোনি কেন? এতক্ষণ এভাবে বসে ছিলে, এখন নিশ্চয়ই পায়ে ব্যাথা করছে, তাই না?”

তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। তবে ওর পায়ে খুব ঝি ঝি লাগছে। এজন্য তিতিক্ষা ওভাবেই বসে থাকলো। নক্ষত্র নিচু হয়ে তিতিক্ষার পায়ে হাত দিতে গেলো। তিতিক্ষার সাথে সাথে নক্ষত্রের হাতটা ধরে নিলো। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝালো পায়ে হাত না দিতে। নক্ষত্র আর কিছু বললো না। কি বা বলবে, ওর জন্যই তো এখন তিতিক্ষা কষ্ট পাচ্ছে। আচ্ছা! ঘুরে ফিরে সবার কষ্টের কারণ নক্ষত্রই হচ্ছে কেন? নক্ষত্রকে চুপ করে থাকতে দেখে তিতিক্ষা বললো,

–“আমার খুব খুদা লাগছে। কেউ যদি আমাকে খেতে নিয়ে যেতো, তাহলে আমি কিছু খাওয়ার সুযোগ পেতাম। এতক্ষন তো কেউ আমার কোলে মাথা রেখে খুব আরামে ঘুমালো। আমার কোলে ঘুমানোর জন্য এখন আমার ট্রিট চাই।”

নক্ষত্র তিতিক্ষার কথা শুনে মুচকি হাসলো। আজকে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নতুন রুপে দেখছে। নক্ষত্রের কাছে মোটেও মন্দ লাগছে না। কেন জানি তিতিক্ষার এমন রুপ নক্ষত্রকে এনার্জির যোগান দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, সব ঠিক করার জন্য একবার চেষ্টা করে দেখতে। এই পাগলিটাকে যে সে কিছুতেই হারাতে পারবে না। তিতিক্ষার পায়ে ঝি ঝি ছুটলে, দু’জনে সামনের সিটে গিয়ে বসলো। নক্ষত্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের কপালে হাত দিয়ে আর একবার চেক দেখলো। এখন আর জ্বর নেই। দুপুরে আর একবার মেডিসিন খাইয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ আর জ্বর আসবে না। নক্ষত্র নিজে থেকে মেডিসিন নিবে না। এজন্য তিতিক্ষা চালাকি করে ওর খাওয়ার কথা বললো। যাতে সুযোগ বুঝে নক্ষত্রকেও মেডিসিনটা খাইয়ে দিতে পারে। তিতিক্ষা জানালার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“কারো শার্টের বোতাম খোলা৷ অনুগ্রহপূর্বক সে যেন শার্টের বোতাম আটকে নেয়।”

নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা যে ওর
উপরে অভিমান করে এমন ভাবে কথা বলছে, নক্ষত্র সেটা খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে। ঘুম থেকে উঠার পর পরই নক্ষত্র খেয়াল করেছে ওর শার্টের বোতাম খোলা। তবুও ইচ্ছা করে লাগায় নি। নক্ষত্র সামনের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,

–“যে আমার শার্টের বোতাম খুলেছে। সে যেন লাগিয়ে দেয়। সে না লাগালে এভাবেই থাকুক। আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।”

তিতিক্ষা আর কথা না বাড়িয়ে শার্টের বোতাম আটকে দিলো। নক্ষত্রের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা গেল। তিতিক্ষা বাইরে তাকালো।
নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতের আঙ্গুলে আঙুল রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,

–“আমাদের দু’জনের পথ যতই আলাদা হোক। আমাদের আত্মার মিল অদৃশ্য ভাবে অনেক আগেই হয়ে গেছে। আমি আমার বউয়ের দায়িত্ব নিতে সর্বদা প্রস্তুত। শুধু তোমার আসার অপেক্ষা।”

তিতিক্ষার ছলছলে চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার হাতটা শক্ত করে ধরলো। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দু’জনে খেয়ে নিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। এরপর ওখানে থেকে বের হয়ে নক্ষত্র তিতিক্ষার বাসার সামনে নামিয়ে দিলো। তিতিক্ষা বাসার গেটে ঢুকার পর নক্ষত্র চলে গেল। নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষার এখন ভালো লাগছে৷ মনে একটু জোর পাচ্ছে। সে জানে, যত যাই হোক নক্ষত্র ওর হাত ছাড়বে না, যতোক্ষণ না তিতিক্ষা নক্ষত্রকে নিজে থেকে ফিরিয়ে দেয়। আর তিতিক্ষার প্রাণ থাকা অবধি সে কিছুতেই নক্ষত্রের হাত ছাড়বে না। এটা ওর নিজের কাছে নিজের ওয়াদা।

তিতিক্ষা বাসায় ঢুকতেই, ওর আম্মু ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তিতিক্ষা গালে হাত দিয়ে ওর আম্মুর দিকে তাকাতেই‌ উনি পরপর আরো তিনটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। উনি উনার সর্বশক্তি দিয়ে তিতিক্ষাকে থাপ্পড়টা মেরেছে। যার কারনে তিতিক্ষা ছিটকে গিয়ে সোফার কোণাতে ধাক্কা লেগে দেওয়ালে বারি খেলো। আচানক ভাবে প্রচন্ড জোরে আঘাত পাওয়ার কারণে তিতিক্ষা ‘ও মা গো’ বলে সাথে সাথে সেন্স হারিয়ে ফেললো। সোফার কাঠের হাতলে লেগে কপাল কেটে টপটপ করে রক্ত ঝরছে। বিভা, আহান, মামনি দৌড়ে গেল তিতিক্ষার কাছে। চোখে মুখে পানির ছিটা দেওয়া পর ধীরে ধীরে তিতিক্ষার সেন্স ফিরলো। তিতিক্ষা ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে। নড়াচড়া শক্তিটুকুও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। বিভা তিতিক্ষাকে উঠে বসালো। বিভা তিতিক্ষার কপাল চেপে ধরে কাঁদছে। আহানও তিতিক্ষার রক্ত দেখে কাঁদছে। তখনই দরজায় দাঁড়িয়ে নক্ষত্র ধরা গলায় বলে উঠলো,

–“তি তিতিক্ষা।”

তিতিক্ষা ওর ফোনটা নক্ষত্রের গাড়িতে ফেলে এসেছিলো। নক্ষত্র ফোনটা দিতে এসে এই ঘটনার সম্মুখীন হলো। নক্ষত্র আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিতিক্ষার কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার কাছে আসতে গেলে তিতিক্ষার আম্মু নক্ষত্রকে সরিয়ে দিলো। মামনি তো রাগে গজগজ করছে। বিভা তিতিক্ষার কপালে ব্যান্ডেজ করতে গেলে মামনি এসে বিভার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। নক্ষত্র অবাক হয়ে দেখছে, আর বোঝার চেষ্টা করছে এসব কি হচ্ছে! এই মানুষগুলোর এমন রুপ নক্ষত্র মানতে পারছে না। তিতিক্ষাকে এভাবে আঘাত করতেও এদের বুক কাঁপলো না! নক্ষত্রের নিজেকে জ্ঞান শূন্য মানব বলে মনে হচ্ছে। তিতিক্ষার রক্ত দেখে ওর মস্তিষ্কে কাজ করছে না। নক্ষত্র আবার তিতিক্ষার কাছে আসতে গেলে মামনি পথ আটকে নক্ষত্রকে বললো,

–“নবিন তোমার বোনকে প্রেগনেন্ট করেছে। এজন্য তুমি এখন তিতিক্ষার পেছনে উঠে পড়ে লেগেছো? প্রতিশোধ নেওয়া জন্য এসব ছলাকলা শুরু করেছো? এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার পরও ওকে নিয়ে গাড়িতে ঘুরে এখানে ওখানে যাচ্ছে। ভেবেছো, তোমার মতলব আমরা বুঝবো না। ছিঃ! তোমার কাছে আমরা এসব আশা করিনি। তুমি এসব নোংরা চিন্তা নিয়ে বোনের প্রতিশোধের খেলায় মেতেছো।”

মামনির কথা শুনে নক্ষত্রের মাথাতে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। যার গায়ে খারাপ স্পর্শ লাগতে দিবে না বলে সবার অজান্তে বিয়ে করেছে। আজকে কিনা ওর নামে এমন নোংরা অভিযোগ। নক্ষত্রের মনে হচ্ছে এখনই ধপ করে মাটিতে পড়ে যাবে। তিতিক্ষার আম্মু আরো তিক্ততা নিয়ে বললো,

–“আমি ভেবেছিলাম, তোমরা ভদ্র ঘরের ভদ্র মানুষ। কিন্তু এখন দেখছি তোমরা এক একজন একেক রুপের মানুষ । গিরগিটিরও মনে হয় এত রুপ ধরতে পারে না। ভালো করে বলে দিচ্ছি, তুমি তিতিক্ষার আশে পাশে আর আসবে না। তোমাকে জামাই হিসেবে আমি আর কখনই মেনে নিবো না। তুমি তোমার পথ বেছে নাও। আমার মেয়েকে মুক্তি দাও। লজ্জা থাকলে এই বাসাতে আর পা দিবে না। ”

নক্ষত্র মাথা নিচু করে আছে। নাহিয়ান আবরার তার ভালবাসার মানুষটার জন্য আজকে মাথা নিচু করে আছে। যে ছেলে সামান্য কটু কথা শুনলে দফারফা করে দিতো। আজকে সে ছেলে চুপ করে সব সহ্য করছে, যাতে ও চলে যাওয়ার পর উনারা তিতিক্ষাকে আর না মারে। খারাপ ভাবে ওর মনোপ্যাথির রক্ত না ঝড়ায়। নক্ষত্রের চোখ লাল হয়ে আছে। এই প্রথম নক্ষত্র কারো কাছে এভাবে অপমানিত হচ্ছে। সে আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারছে না। নক্ষত্র ঢোক গিলে, তিতিক্ষার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো,

–“আমাদের দোষটা কোথায়, আমাকে একটু বলবেন? আমরা কি করেছি? আমাদেরকে কেন শাস্তি পেতে হচ্ছে?”

মামনি দাঁতে দাঁত চেপে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে
বললো,

–“সেটা তোমার আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করো। আমরা আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না। তোমাকে যতটুকু বলা হলো, তুমি ততটুকু করবা। এবার তুমি এখান থেকে যাও।”

নক্ষত্র একবার তিতিক্ষার দিকে তাকালো। কপালে রক্তের স্রোত আর কান্না ভেজা চোখে তিতিক্ষা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষার এমন অবস্থা দেখে নক্ষত্রের বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। নক্ষত্রের দৃষ্টির বলে দিচ্ছে, সে ব্যর্থ। নক্ষত্র আর দাঁড়ালো না। এক প্রকার দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। তিতিক্ষা অসহায় দৃষ্টিতে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রকে চলে যেতে দেখে তিতিক্ষা উঠে দাঁড়ালো নক্ষত্রকে আটকানোর জন্য। তিতিক্ষার আম্মু তিতিক্ষার চুলের মুঠি ধরলো। মামনি ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। তিতিক্ষার আম্মু ওর গাল চেপে ধরে বললো,

–“ওর বোনের মত তুইও পেট বাধাবি? এজন্য ওর প্রতি তোর এত ভালবাসা উতলে পড়ছে? আমাদের মান সন্মান খাওয়ার জন্য তুই উঠে পড়ে লেগেছিস। ওই বেয়াদব ছেলের পেছনে তোর ঘুরতে হবে কেন? তোকে কিছু বলা হয় না এজন্য তুই সাপের পাঁচ পা দেখেছিস। ওর বোনের মত তুইও কলঙ্কিত হবি? কলঙ্কিত হয়ে ঘুরে বেড়ানোর শখ জেগেছে তোর?
বেয়াদব মেয়ে তোকে মেরে পুঁতে দিবো। তাও তোকে ওই বাসার বউ হতে দিবো না। ওর বেয়াদবটা জন্য তুইও থার্ড ক্লাস হয়ে গেছিস।”

তিতিক্ষা ওর আম্মুর ভাষা শুনে অবাক হলো। এই মানুষ গুলো এতটা পরিবর্তন হলো কিভাবে? আজকে এদের এতটা অচেনা লাগছে কেন?
তিতিক্ষা ওর গাল থেকে, ওর আম্মুর হাত সরিয়ে দিলো। তিতিক্ষাও কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–“নক্ষত্রের আম্মু ঠিকই বলেছে, তোমরা লেইম মেন্টালিটির মানুষ। জেদের বশে তোমরা অমানুষে পরিণত হয়েছো। ওই ছেলেটা তোমাদের জন্য কত কিছু করেছে। আর আজকে তাকে এত কথা শুনালে, এত অপমান করলে। তোমরা কি মানুষ? ও ভদ্র ঘরের ছেলে, ওর শরীরে ভদ্র পরিবারের রক্ত আছে। এজন্য টু শব্দ করেনি। মুখ বুঝে সব সহ্য করে চলে গেল। তোমরাই হলে অভদ্র, অমানুষ, থার্ড ক্লাস। এজন্য তোমাদের ব্যবহার এতো নিচু মনের। আর পেট বাঁধানোর কথা বললে না? হ্যাঁ বাধাবো! আমিও দেখি তোমরা কি করো। কিসের এত অহংকার, কিসের জেদ তোমাদের? তোমাদের অহংকারের পতন দরকার। আমিও এবার এর শেষটা দেখতে চাই। দেখি তোমরা আর কত নিচে নামতে পারো।”

মামনি তিতিক্ষাকে থাপ্পড় মারলো। তিতিক্ষার দাঁতের সাথে লেগে ওর ঠোঁট কেটে গেলো। তিতিক্ষা মার খেয়েও দমলো না। মামনি ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

–“দরকার হলে তোকে বেশ্যা গিরি করতে পাঠাবো। তাও ওই ছেলের কাছে যেতে দিবো না। দেখি তুই কি করিস। আমরাও দেখবো তোর এত জেদ কতক্ষণ থাকে। কত ভালবাসা জমিয়েছিস ওই রাস্কেল বেয়াদবটার জন্য। ”

তিতিক্ষা আর সহ্য করতে পারছে না। হিংস্র বাঘিনীর মত সেইও এবার গর্জে উঠে, মামনির দিকে তাকিয়ে বললো,

–“তোমার প্রয়োজন হলে তুমি বেশ্যাগিরি করতে যাও। আমার বেশ্যাগিরি করার প্রয়োজন পড়বে না। তোমার ছেলের মত বিয়ের আগে নাহিয়ান কোনো মেয়ের পেট বাঁধায়নি । তাহলে তোমার বিবেকে বাঁধছে না তাকে নিয়ে এসব বলতে। আমাকে এসব নোংরা কথা বলতে তোমার বুক কাঁপছে না? তোমরা না আমার মা? নিজের ছেলে দোষ করেছে। আর আঙ্গুল তুলছো অন্য ছেলের দিকে। আমি ধিক্কার জানাই তোমাদের বিবেককে। ধিক্কার জানাই তোমাদের নোংরা মানসিকতায়।”

তিতিক্ষার আম্মু আর মামনির এখন ইচ্ছে হচ্ছে তিতিক্ষাকে জীবন্ত দাফন করতে। এই মেয়ের বড্ড তেজ বেড়েছে। মামনি বিভা আর আহানকে রুমে দরজা আটকে রেখেছে। মামনির মন চাচ্ছে এই মেয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতে। তিতিক্ষা ওর চোখের পানিতে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। প্রচন্ড ব্যাথায় মাথা ঝিমঝিম করছে। তিতিক্ষা ওর চোখ মুছে ওর আম্মু আর মামনির দিকে কড়া ভাবে বললে তাকিয়ে বললো,

–“নক্ষত্রকে বেয়াদব বললে, কেন বললে? আজকে তোমার মেয়ের সাথে ঘুরতে দেখেছো, তাই? তাহলে একটা স্পষ্ট কথা শুনে নাও। সে যদি আমার সাথে সঙ্গমেও লিপ্ত হয়, তাহলে সেটাও বৈধ ভাবে গণ্য করা হবে। তার প্রতিটা স্পর্শ আমার জন্য বৈধ। কারণ আমরা দু’জন বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ। আমাদের বিয়ে অনেক আগে হয়ে গেছে। তাই খবরদার! ওকে নিয়ে তোমরা নোংরা কথা উচ্চারণ করবে না। মা হয়ে তোমরা যদি মেয়েকে নোংরা কথা বলতো পারে, তাহলে আমিও মেয়ে হয়ে আর তোমাদের ছেড়ে কথা বলবো না। আমিও ভুলে যাবো তোমরা আমার মা। আমি বিবাহিত, তোমরা শুনতে পেয়েছো? ওই রাস্কেলটাই আমার স্বামী।”

তিতিক্ষার কথা শুনে তিতিক্ষার আম্মু আর মামনির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে? কথাটা যেন উনাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতে লাগলো। তিতিক্ষার আম্মু সোফাতে বসে পড়লো। মামনি মেঝে বসে আহাজারিতে ভেঙ্গে পড়লো। আজকে তিতিক্ষার এমন ধারালো কথা শুনে ওনারাও খুব অবাক হয়েছে। উনারা তিতিক্ষাকে আর কিছু বলার খুঁজে পেলো না।

তিতিক্ষার ওর ফোনটা নিয়ে দেওয়াল ধরে ধরে ওর রুমে গেল। দরজা আটকে দিয়ে সেখানেই বসে পড়লো।্যআর কত কাঁদলে সব ঠিক হবে? আর কত কষ্ট পাওয়া বাকি আছে? নক্ষত্র চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেছে। এটা দেখে তিতিক্ষার পাগল হয়ে গেছে। নক্ষত্রের চোখে পানি তিতিক্ষা সহ্য করতে পারেনি। আজকে তিতিক্ষার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে৷ একটা মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, তার কাছে দুইটা অপশন খোলা থাকে। প্রথমটা হলো, তাকে লাশ হতে হবে। সেটা জীবন্ত অথবা মৃত। দ্বিতীয় অপশন, রুখে দাঁড়াতে হবে৷ নিজের আত্মরক্ষার স্বার্থে অপর ব্যাক্তিকে প্রতিঘাত করতে হবে। তিতিক্ষা দ্বিতীয় অপশন বেছে নিয়েছে। এদের অত্যাচার আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এদের জেদের বশে ভাল-মন্দ বোঝার বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এজন্যই আজকে তিতিক্ষা বাঘিনীর রুপ ধারণ করেছে। এছাড়া ওর কাছে আর কোন পথ খোলা নেই। ভালবাসার মানুষটাকে পাশে পাওয়ার জন্য ভদ্র, শান্ত-শিষ্ট মেয়েটা রুখে দাঁড়াতে শিখে গেছে। যত যাই হয়ে যাক। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে হারাতে দিবে না। এজন্য যা করা দরকার, ও করবে।

তিতিক্ষার কান্না থামছে না। নক্ষত্রের চিন্তা ওর মাথায় ঘুর ঘুর করছে। নক্ষত্র ঠিক আছে তো? ওর কিছু করে বসবে না তো? নক্ষত্র আজকে খুব কষ্ট পেয়েছে। এটা ভেবেই তিতিক্ষার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ফোন দিলো। কল যাচ্ছে না বার বার সুইচ অফ বলছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের সাথে কথা বলতে না পেরে আবার কান্না ভেঙে পড়লো।

সন্ধ্যার দিকে তিতিক্ষার আব্বু বাসায় আসলো। মামনির থেকে এসব কাহিনী শুনে উনি আরো রেগে গেছে। তিতিক্ষার রুমে গিয়ে ওদের বিয়ের প্রমান দেখাতে বললো। তিতিক্ষার কাছে কোনো প্রমান নেই, তাই দেখাতেও পারলো না। তিতিক্ষাল আব্বু-আম্মু, তিতিক্ষার কথা বিশ্বাস করলো না। মিথ্যা বলার জন্য তিতিক্ষাকে আরেক দফা মারলো। এমন বেয়াদব মেয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। তিতিক্ষা মার খেয়ে রুমের মেঝেতেই পড়ে রইলো। তিতিক্ষার আব্বু তিতিক্ষাকে রুমে আটকে রেখে ওর ফোনটা কেড়ে নিয়ে চলে গেল, যাতে তিতিক্ষা কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। ওই বেয়াদব ছেলেটা তিতিক্ষার মাথাটা ভালো মতোই খেয়েছে। তাই তিতিক্ষার আব্বু আর দেরী না করে, কালকেই তিতিক্ষার বিয়ে আয়োজন করতে লাগলো।

To be continue…..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here