অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_28

0
490

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_28

আজকে তিতিক্ষার আকদ হবে। এজন্য বাসায় তোড়জোড় চলছে। কালকে তিতিক্ষা মার খেয়ে এখনো মেঝেতেই শুয়ে আছে। তিতিক্ষার একটাই চাওয়া, সেটা হলো মৃত্যু। আল্লাহকে বার বার ডাকছে, যেন ওকে মৃত্যু দান করে। এই দহন আর সহ্য করতে পারছে না। তিতিক্ষার আব্বু বাসায় নেই। ওর আম্মু, বিভা আর মামনি রান্না ঘরে। আহান চুপিচুপি এসে অতি কষ্টে তিতিক্ষার রুমের লক খুলে রুমে প্রবেশ করলো। তিতিক্ষাকে দেখে আহান কেঁদে দিলো। তার তিতু আপুর এই অবস্থা সে মানতে পারছে না। আহান তিতিক্ষাকে দ্রুত উঠতে বললো। তিতিক্ষা নিচে গিয়ে দেখলো নবিন দাঁড়িয়ে আছে। নবিন তিতিক্ষাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা ওদের জন্য ভালো হবে না।

কালকে এতকিছু হওয়ার পর আহান চুপিচুপি নবিনকে ফোন করেছিলো। কাঁদতে কাঁদতে নবিনকে সব ঘটনা জানিয়েছে। নবিনই আহানকে দরজা খুলে দেওয়ার বুদ্ধিটা দিয়েছে। তবে আহানকে বার বার বলে দিয়েছে, যা করবে সাবধানে করতে। যাতে কেউ জানতে না পারে। তিতিক্ষা চলে যাওয়ার পর আহান চোখ মুছে নিলো। সাবধানে রুমের লক আটকে দিয়ে মামনিকে বলে ব্যাট নিয়ে খেলতে চলে গেল। আহান যে তিতিক্ষাকে যেতে সাহায্য করেছে; এটা যাতে কেউ বুঝতে না পারে, তাই আহান আগেই খেলার নাম করে বের হয়ে গেল।

নবিন বোনের এই অবস্থা দেখে তিতিক্ষার হাত ধরে কেঁদে দিলো। তিতিক্ষাও খুব করে কাঁদছে। দু’ভাই বোন কেউই কথা বলতে পারছে না। নবিন তিতিক্ষার মাথাটা ওর বুকের রেখে বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তিতিক্ষা থরথর করে কাঁপছে। কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। কোনরকম কাঁন্না থামিয়ে তিতিক্ষা হেচকি তুলে কেঁদে বললো,

–“ভাইয়া তোমার পায়ে পড়ি। আমাকে নক্ষত্রের বাসা অবধি পৌঁছে দাও। আমাকে দয়া করো ভাইয়া। ভাইয়া! ভাইয়া আমি আর জীবনেও তোমার কাছে কিছু চাইবো না। আমার প্রতি একটু দয়া করো ভাইয়া।”

বোনের এমন আকুতি শুনে নবিনের কলিজা কেঁপে উঠছে। নবিন তিতিক্ষার চোখ মুছে বললো,

–“সোনা বোন আমার! তুই আমার কাছে থাক। আমার কাছে থাকলে তোকে কেউ খুঁজে পাবে না। নক্ষত্রের কাছে গেলে তোকে খুঁজতে সবাই ওখানেই যাবে। লক্ষী বোন আমার আমার কথাটা শুন।”

তিতিক্ষা শুনলো না। সে নক্ষত্রের কাছেই যাবে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বাসায় একবার এসেছে। এজন্য ভালোভাবে কিছুই চিনে না। তিতিক্ষার আবদারে নবিন রাজি হলো। নবিন তিতিক্ষাকে পানি খাইয়ে একটু শান্ত করে নক্ষত্রের বাসার গেট অবধি পৌঁছে দিলো। তিতিক্ষা নবিনের হাত ধরে কৃতজ্ঞতা জানালো। এরপর দৌড়ে চলে গেল নক্ষত্রের বাসার দিকে। দারোয়ান তিতিক্ষাকে ভালো করেই চেনে, তাই আটকালো না। বিনা বাক্যে গেট খুলে দিলো। তিতিক্ষা বাসার ভেতর দৌড়ে ঢুকে গেলো। ঢুকতে গিয়ে দরজার সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেলো। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে যাওয়ার জন্যই ধাক্কাটা খেয়েছে। নক্ষত্রের আম্মু তখন পানি খাচ্ছিলো। পাগলের মত কাউকে ছুটে আসতে দেখে, সেদিকে তাকালো।

তিতিক্ষা পাগলের মত নক্ষত্রকে ডাকছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ডাকতে ডাকতে ওখানেই বসে পড়লে। আর আত্ননার্দ করে বললো,

–“নাহিয়ান ! নাহিয়ান ! নাহিয়ান আমার ডাক শুনতে পাচ্ছো? আমার আত্মনার্দ কি তোমার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না। নাহিয়ান কোথায় তুমি? আমার ডাকে সাড়া দাও। প্লিজ! নাহিয়ান তোমার পায়ে পড়ি, তুমি আমার সামনে এসো। আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখো না। আল্লাহর দোহাই লাগে, আমার ডাকে সাড়া দাও। প্লিজ এসো! আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিও না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। নাহিয়ান! প্লিজ আমার ডাকে সাড়া দাও।”

এত ডাকার পরেও নক্ষত্র ওর ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তিতিক্ষার মনে ভয় ঢুকে গেলো, ‘তাহলে কি নক্ষত্রও ওকে ফিরিয়ে দিবো?’ সে কি তবে নক্ষত্রকে চিরতরে
হারিয়ে ফেললো? এখানেই কি তবে ওদের একসাথে পথচলার সমাপ্ত ঘটবে?

সেদিন নক্ষত্র তিতিক্ষার বাসায় থেকে ফেরার পথে অশ্রুসিদ্ধ ঝাঁপসা চোখে ড্রাইভ করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে। মাথা, পা-হাতে ইনজুরি হয়েছে। সে এখনো হসপিটালে আছে। সাফওয়ান আর নক্ষত্রের আম্মু কেবল ফিরেছে হসপিটাল থেকে। নক্ষত্রের এক্সিডেন্টের কথা শুনে নক্ষত্রের আম্মু ছুটে গিয়েছিলো। যতই হোক মা তো। সাফওয়ান এসেছে নক্ষত্রের ড্রেস নেওয়ার জন্য। ড্রয়িংরুম থেকে কারো চিৎকার শুনে সাফওয়ান দৌড়ে আসে।

তিতিক্ষাকে দেখে সাফওয়ান খুব অবাক হলো। তবে
তিতিক্ষার কান্না করা দেখে সাফওয়ানের বুঝতে বাকি রইলো না যে মারাত্মক কিছু ঘটেছে। সাফওয়ান আর দেরী না করে রুহানকে ফোন দিয়ে নক্ষত্রকে ফোনটা দিতে বললো। তিতিক্ষার কথা নক্ষত্রকে সবটা বললো। ফোনেও নক্ষত্র শুনতে পাচ্ছে, তিতিক্ষা ভাঙা গলায় ওর নাম ধরে ডাকছে। সাফওয়ানের কথা আর তিতিক্ষার আত্মনার্দ শুনে, নক্ষত্রকে আর এক মুহূর্তও হসপিটালে কেউ ধরে রাখতে পারলো না। রুহান আর আফান নক্ষত্রের সাথে গেল। আর মিঃ আবরার ফর্মালিটিস পূরণ করে আসছে। নক্ষত্রের আম্মু ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই তিতিক্ষাকে দেখছে। তিতিক্ষার শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট৷ ফর্সা শরীর বেল্টের মারের জন্য কালশিটে পড়ে গেছে। ঠোঁটে কেটে ফুলে আছে, কপালে আঘাতে দাগ। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে এখনো শব্দ করে কাঁদছে।

তিতিক্ষাকে রুমে না পেয়ে ওদের বাসাতে চেচাঁমেচি লেগে গেলো। তিতিক্ষার আম্মু আর মামনি এই মেয়েকে পেলে শেষ করে ফেলবে। মেয়েটা যে এত বেহায়া হয়ে যাবে, উনারা ভাবতেও পারেনি। তিতিক্ষার আব্বুর মাথা কাজ করছে না। আজকে ছেলে পক্ষ আকদ্ করতে আসবে। উনারা এখন কি জবাব দিবে? তিতিক্ষার এমন কাজে রাগে উনার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। উনাদের মনে হচ্ছে, জন্মের পর পরই কেন ওকে মেরে ফেললো না? মারলে তো আজকে এই দিন দেখতে হতে না। এমন মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।

বাসার দরজার কাছে গাড়ি এসে থামতেই নক্ষত্র দ্রুত নামতে গেল। পায়ের টান লাগতেই ওর চোখ মুখ খিঁচে গেল। রুহান, আফান দ্রুত ওকে ধরে বললো,

–“ভাই এমন করিস না! আমরা তো বাসাতে এসে পড়েছি, আর ছটফট করিস না ভাই। তুই ব্যাথা পাবি। সেলাই কেটে যাবে।”

নক্ষত্র এখন কারো কথা শোনার অবস্থায় নেই। নক্ষত্র খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাসায় ঢুকলো। তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে নক্ষত্র শিউরে উঠলো। নক্ষত্র ধীর পায়ে তিতিক্ষার সামনে এসে দাঁড়ালো। নক্ষত্রের আম্মু তখনও একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার সামনে সোজাসুজি বসতেই তিতিক্ষা কান্নাভেজা চোখে মুখ তুলে তাকালো। নক্ষত্রকে দেখে তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এতক্ষণ ওর দু’চোখ তো আকুল হয়ে এই মানুষটাকেই খুঁজছিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে মুখ লুকিয়ে শব্দ করে কাঁদছে। নক্ষত্রও তিতিক্ষাকে ওর বুকে আবদ্ধ করে নিলো। ওরা এখন ভয় বা চক্ষুলজ্জার কথা চিন্তা করার পরিস্থিতিতে নেই। তিতিক্ষার এখন মনে হচ্ছে, সে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ একটা স্থানে নিজেকে আড়াল করতে পেরেছে। কেউ আর ওকে নক্ষত্রের থেকে আর আলাদা করতে পারবে না। আর কেউ ওকে কষ্টও দিতে পারবে না।

তিতিক্ষার কান্না দেখে রুহান, আফান, সাফওয়ানের চোখেও পানি এসে গেছে। নক্ষত্র ঠোঁট কামড়ে ওর কান্না আটনোর চেষ্টা করছে। তবুও বেহায়া অশ্রু ওর গাল বেয়ে অঝরে ঝরে যাচ্ছে। তিতিক্ষা কাঁপছে; নক্ষত্র খুব ভালো করে টের পাচ্ছে। নক্ষত্র কি বলবে? সে কোনো কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। তিতিক্ষা কাঁদতে কাঁদতে সেন্স হারিয়ে ফেললো।

নক্ষত্র তিতিক্ষাকে পাগলের মত ডাকছে। তিতিক্ষার কোনো হুশ নেই। আফান, রুহান, সাফওয়ান দৌড়ে আসলো৷ নক্ষত্র তিতিক্ষার মাথাটা ওর কোলে তুলে নিয়ে ব্যাকুল হয়ে ডাকছে। রুহান পানি নিয়ে আসলো। মুখে পানির ছিটা দেওয়ার পরও তিতিক্ষার সেন্স ফিরছে না। অজানা ভয়ে সবারই বুক কাঁপছে। নক্ষত্র স্তব্ধ হয়ে তিতিক্ষার মুখ পানে চেয়ে আছে। আফান কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার ধাপ প্রয়োগ করলো। এরপর তিতিক্ষার সেন্স ফিরে আসলো। তখনই তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু নক্ষত্রের ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো। ওদের দেখে ভয়ে তিতিক্ষা নক্ষত্রের শার্ট আঁকড়ে ধরলো। উনারা এসেই চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে দিলো। মিঃ আবরার এসে সবাইকে থামালো। তিতিক্ষার আব্বু তিতিক্ষার দিকে তেড়ে আসতে গেলে রুহান আর আফান উনাকে থামালো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ধরে উঠে বসালো। কারো কিছু বলার আগে, নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“তিতিক্ষা তোমার আব্বু-আম্মু তোমাকে নিতে এসেছে। তুমি কি উনাদের সাথে ফিরে যাবে?”

তিতিক্ষা করুণ দৃষ্টিতে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র আবারও একই প্রশ্ন করলো। নক্ষত্রের এমন কথা শুনে তিতিক্ষার আব্বু শান্ত হলো। যাক মেয়েকে তাহলে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে। নক্ষত্রের একথা শুনে তিতিক্ষা নক্ষত্রের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–“আমাকে তোমার কাছে একটু ঠাঁই দাও৷ প্লিজ! আমাকে ফিরিয়ে দিও না। আমি মরে যাবো।”

নক্ষত্র দ্রুত ওর পায়ে থেকে তিতিক্ষার হাত সরিয়ে নিলো। নক্ষত্র আলতো করে তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। তিতিক্ষার দুই গাল হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,

–“তুমি কি উনাদের সাথে ফিরতে চাও? তুমি যা বলবে, তাই হবে। তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে, আমি বিনাবাক্যেতে তাই মেনে নিবো। তুমি কি উনারদের সাথে ফিরতে চাও, বলো আমাকে? ”

তিতিক্ষা ওর আব্বু-আম্মুর দিকে তাকালো। উনারা ওকে ভষ্ম করে দেওয়ার চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষা নক্ষত্র শার্ট আঁকড়ে ধরে বললো,

–“আমাকে তোমার সাথে থাকতে চাই। আমার শুধু তোমাকেই চাই। আমি ফিরতে চাই না, কিছুতেই না।”

তিতিক্ষার আম্মু তিতিক্ষার মারতে আসলো। সাফওয়ান উনাকে আটকালো৷ মামনি ফট করে বলে উঠলো,

–“অসভ্য, বেয়াদব মেয়ে! এখানে এসে ঢং শুরু করেছিস? এই বেয়াদবটার জন্য এত ভালবাসা উতলে পড়ছে। পর পরই হয়! এখন কাছে টানলেও, ওদের স্বার্থসিদ্ধি হয়ে গেলে, দাপট দেখিয়ে তোকে ছুঁড়ে ফেলতে এদের একটুও সময় লাগবে না। তাই বলছি, ভালোই ভালোই ফিরে চল।”

নক্ষত্রের আম্মু কিছু বলতে গেলে, মিঃ আবরার উনাকে থামিয়ে দিলো। নক্ষত্র রুহানকে ডেকে কিছু একটা বলে ওর রুমে পাঠালো। রুহান একটা কাগজ এনে নক্ষত্রের হাতে দিলো। নক্ষত্রের শরীরের সাথে তিতিক্ষা ভয়ে লেপ্টে বসে আছে। নক্ষত্র হাঁটু গেড়ে বসার জন্য ওর পায়ের ব্যান্ডেজ থেকে রক্ত ঝরছে। আফান কিছু বলতে যাবে, তার আগে নক্ষত্র তিতিক্ষার আব্বু-আম্মুর দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বললো,

–“এটা আমাদের বিয়ের কাবিন নামা। কাবিন নামা শব্দের মানে বুঝেন তো? এটা আমাদের পবিত্র বন্ধনের শেকল। আমাদের বিয়ের জলজ্যান্ত প্রমান।”

নক্ষত্রের কথা শুনে, সাফওয়ানরা বাদে সবাই চমকে উঠলো। তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু কাবিন নামা দেখে থমকে গেলো। নক্ষত্র যে এভাবে উনাদের প্যাচে ফেলবে, উনারা ভাবতেও পারেনি। তিতিক্ষার আব্বু গিয়ে কাবিন নামাটা চেক করলো। উনার হাত থেকে কাবিন নামাটা নিয়ে তিতিক্ষার আম্মু আর মামনিও দেখলো। উনাদের মুখের আর কোনো কথা নেই। উনারা তিতিক্ষার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টির মানে তোকে পেলে টুকরো টুকরো করবো। নক্ষত্র ওর কন্ঠের স্বর আগের চেয়েও কঠিন করে বললো,

–“তিতিক্ষা শুধু আপনাদের মেয়েই না, ও আমার অর্ধাঙ্গিনীও। এখন আমি আপনাদের বলছি! তিতিক্ষা আপনাদের সাথে যাবে না, মানে যাবে না। এতদিন আপনাদের খারাপ ব্যবহার অনেক সহ্য করেছি। তিতিক্ষার গায়ে যাতে ফুলের টোকা না পড়ে। তাই আমি আপনাদের অপমান মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু আপনারা অমানুষের মত ওর গায়ে হাত তুলেছেন। তিতিক্ষা আমার বিয়ে করা বউ। ও আমার সাথে থাকতে চাই। আমাদের বিয়ে হওয়ার পরও আমি ওকে একবারও বলিনি, আমার কাছে চলে আসতে। আপনাদের জেদের বশে তিতিক্ষা আজকে আমার কাছে নিজে থেকে এসেছে। আর নিজে থেকে যেহেতু এসেই পড়েছে, আমি ওকে আর ফিরতে দিবো না। এবার আপনারা যে যা পারেন, করে নিন। কিছুতেই আমি তিতিক্ষার হাত ছাড়ছি না। আপনাদের ক্ষমতা থাকে তো, ওকে আমার কাছে থেকে আলাদা করে দেখান। আপনাদের চৌদ্দ না, আটচল্লিশ গুষ্ঠী এসেও যদি তিতিক্ষাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে আমি নাহিয়ান আবরার কথা দিচ্ছি। এই পৃথিবীতে আমার কোনো অস্তিত্বই রাখবো না। অহংকার, দাপট, বেয়াদবীর কথা বললেন না? হ্যা আমি এখন আপনাদের দাপট দেখাচ্ছি। আমিও দেখতে চাই আপনাদের দম কতো, আপনারা কত নিচে নামতে পারেন, আপনাদের কত জেদ, কত দাম্ভিকতা; আমিও এর শেষটা দেখতে চাই। আপনারা জেদের বশে আমাদের আলাদা করতে চাচ্ছিলেন না? ওকে আমি আমার বাবা-মা সহ, আপনাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি। আপনারা আমাদের দু’জনকে আলাদা করে দেখান। আমি দেখি আপনারা কে কতটা দাপট নিয়ে চলেন।”

নক্ষত্র আগুন ঝরা কন্ঠে শুনে সবাই থমকে গেলো। তিতিক্ষার আব্বু আম্মু ভাবতেও পারেনি, নক্ষত্র ওদের মুখ এভাবে লাগাম লাগিয়ে দিবে। নক্ষত্রের আব্বু-আম্মুও ছেলের এমন কথা শুনে দমে গেল। ছেলের এমন রাগ উনারাও এর আগে দেখেনি। উনারা শুধু তিতিক্ষার জন্য নক্ষত্রের আরেক রুপে দেখলো। মামনিও আর কথা বাড়ালো না। কিছু বলার মুখ তো নাই, আর কিই বা বলবে।
তিতিক্ষার আব্বু যাওয়ার আগে বলে গেলো,

–“তুই আজ থেকে আমার কাছে মৃত। আমি তোকে ত্যাজ্য করলাম।”

কথাটা বলে উনি চলে গেল। তিতিক্ষা কেঁদে কেঁদে চিৎকার করে বললো,

–“আমি তোমাদের কাছে মৃত হলেও, আমার মোনাজাতে তোমরা ছিলে, আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি থাকবেও। আব্বু আমাকে মাফ করে দাও। আব্বু! আমি পারলাম না তোমাদের ভালো মেয়ে হয়ে থাকতে। পারলাম না আমি তোমাদের অন্যায় আবদার মেনে নিতে।”

উনারা চলে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে জড়িয়ে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। কারো মুখে কোন কথা নেই। সাজানো গুছানো সম্পর্কগুলোর ভীত নড়ে গেলো। এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। তাহলে কেন হলো? প্রেম করে এসব ঝামেলার সম্মুখীন হবে না বলে নক্ষত্র শুরু থেকেই সবটা সুন্দর ভাবে সাজাতে চেয়েছিলো। তাহলে কেন ওদের এমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতিতে এসে দাঁড় করালো। প্রেমের গল্প গুলোর সমাপ্ত হয় এমন নিষ্ঠুর ভাবে। যত্নে গড়া ভালবাসার শত শত কলি গুলো ঝরে যায় এমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতির কারণে। তাহলে ওরটা কেন এমন হলো? নক্ষত্র বেকার নয়, খারাপ ছেলে নয়, নেশা গ্রস্ত নয়, বাজে কোনো কাজে লিপ্ত নয়। তবুও আজকে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আবার প্রমান হলো, নিয়তিতে লিখা থাকলে, সাজানো গোছানো সহজলভ্য জিনিসটা পেতে হলেও যুদ্ধের ময়দানে নামতে হয়।”

নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ওর বুক থেকে সরালো। তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। মাথা নাড়িয়ে কাঁদতে নিষেধ করলো। নক্ষত্র অনেক কষ্টে উঠে ওর আম্মুর সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে বললো,

–“মা মায়ের জায়গায়। বউ বউয়ের জায়গায়। একটা ছেলেকে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য মা-বউ, দু’জনকেই দরকার। তোমরা মায়েরা কেন ছেলের বউকে প্রতিদ্বন্দী ভাবো? কেন ভাবো? কেন? বলবে আমাকে? ওর কি দোষ ছিলো, বলো আমাকে?
তোমার মেয়ের জন্য আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে? আমি কি করেছি? তুমি আমার দিকে কেন আঙ্গুল তুলছো? আমি তো অদ্রিকে বলিনি নবিনের সাথে সম্পর্কে জড়াতে। তাহলে তোমরা আমাকে কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করালে? ভালো করে চিন্তা করে দেখো তো, আমাদের দোষটা কোথায়? কেন এই জঘন্য পরিস্থিতিতে আমাদের দাঁড় করালে? নবিনদের ব্যাপারটা ভাল মত মিটমাট করা যেতো। বলো যেতো না করা? ওরা ভুল করে ফেলেছে, দুই পরিবার বসেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তো সমাধান করা যেতো৷ তা তো করলেই না, বরং দুই পারিবার মিলে দ্বন্দ লাগিয়ে দিলে। শেষে তুমি কি করলে, ওদের দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমাদের এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে দিলে। বলো তুমি কি সঠিক পন্থা অবলম্বন করেছো? তুমি সবার প্রথমে আমাকে এই আগুনে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছো। দেখো এখন আমরা দু’জনেই নিখুঁত ভাবে দগ্ধ হচ্ছি।”

সবাই নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্রের আম্মুও অবাক চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র একটু দম নিয়ে চোখ মুছে, ধরা গলায় আবার বললো,

–“আম্মু! একটাবার আমার কথাগুলো ভেবে দেখো তো। আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে, এখন ওকে দূরে সরালে আমার গায়ে কাপুরুষ, বেইমান, জানোয়ারের ট্যাগ লাগতো। কাপুরুষ, বেইমানের ট্যাগ নিয়ে আমি কিভাবে বাঁচতাম? আমারও তো বিবেক বলে কিছু আছে। বিয়ের পর বউকে দূরে সরিয়ে দেওয়া কি কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতো? বলো আম্মু তুমিই বলো? আজকে আমার বিবেকের কথা শুনতে গিয়ে এখন তো আমি তোমার কাছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম খারাপ ছেলে হয়ে গেলাম। আমার জায়গা তুমি নিজেকে দাঁড় করাও। বলো আম্মু! আমার জায়গা তুমি থাকলে তুমি কি করতে? তোমার কাছে আমি যখন খারাপ যখন হয়েই গেছি। আমি এই অপরাধবোধ নিয়ে আর বাঁচতে চাই না। আমাকে বিষ এনে দাও। তুমি বলছো, তোমার কথা না শুনলে তুমি মারা যাবে। তুমি কেন মরবে? মরবো তো আমি! আমিই তো সব সমস্যার মূল। তোমাদের দু’জনের ভালোর জন্য, আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা দেখছি না। আমি বাঁচলে তোমাদের দু’জনইকেই আমার চাই। কিন্তু সেটা তো কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমিই নিজেকে শেষ করবো। আমি না থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সব কষ্টের সমাপ্তি ঘটবে।”

নক্ষত্রের আম্মু, নক্ষত্রের কথার উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। ছেলের এমন কথা শুন উনি যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

To be continue…..!!

(গল্পটা নিয়ে যার যার নিজস্ব মতামত পোষণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি জানতে চাই গল্পটা তোমাদের কেমন লাগছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here