#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_29
সেদিন তিতিক্ষা বাসা থেকে বের হওয়ার পর বিভা তিতিক্ষাকে ফলো করেছিলো। বিভার মনে তিতিক্ষার জন্য রাগের সৃষ্টি হয়েছে। তিতিক্ষা আর নক্ষত্রের জন্য ওর ভাই নবিনকে বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে। নিজের আপন ভাইয়ের থেকে কাজিন কখনোই বড় হয় না। ও মনে করে, সব দোষ তিতিক্ষার। ওর জন্যই ওর ভাই বাসা ছাড়া। তিতিক্ষাকে নক্ষত্রের সাথে দেখে বিভা এসে তিতিক্ষার আম্মু আর মামনিকে সবটা বলেছে। গাড়ির পেছনের সিটে বসা থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টে যাওয়া অবধি সবটা৷ ব্যাপারটা মাখো মাখো করতে বিভা নিখুঁতভাবে আরো জোড়াতালিও দিয়েছে। যার কারণে তিতিক্ষার আম্মু আর মামনি প্রচন্ড রেগে গেছে। আর রাগের বশে উনারা তিতিক্ষাকে বাজে কথা বলতেও ছাড়েনি। বিভা ওর মনের ক্ষোভ মিটাতে এমন করেছে। কিন্তু এই ব্যাপারটা এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, কে জানতো! তবে কাঠখড় পুড়িয়ে লাভ হলো, সে তিতিক্ষাকে মার খাওয়াতে পেরেছে।
নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। উনার এবার টনক নড়লো যে, উনি মেয়ের রাগ ছেলের উপর চাপিয়ে বড্ড ভুল করেছেন। এনগেজমেন্ট ভেঙে না দিলে হয়তো এত কিছু ঘটতো না। নক্ষত্র ওর আম্মুকে চুপ করে থাকতে দেখে আর কথা বাড়ালো না। তিতিক্ষাকে মেঝে থেকে তুলে দাঁড় করালো। এখানে থেকে আর কি হবে? সবাইকে নিয়েই তো ভাল থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু হলো আর কই। কারো অভিযোগের কারণ ওরা আর হতে চাচ্ছে না। মিঃ আবরার নক্ষত্রকে বললো,
–“নক্ষত্র আব্বু, আমার এমন করো না। এভাবে রাগের মাথায় বাসা থেকে যেও না। একটু সময় দাও, সবটা ঠিক হয়ে যাবে। ”
নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকালো। তিতিক্ষা ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র ওর
আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আব্বু বিশাল অট্টালিকাতে অস্বত্বি নিয়ে থাকার চেয়ে, কুড়ে ঘরে শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে থাকাটাই শ্রেয়। তুমি চিন্তা করো না। তোমার ছেলে তার বউয়ের দায়িত্ব নিতে সক্ষম। আল্লাহ আমাকে সেই সার্মথ্য দান করেছে। ইনশাল্লাহ! আমি তিতিক্ষার প্রতি আমার দায়িত্বটা সঠিক ভাবে পালন করতে পারবো।”
মিঃ আবরার আর কিছু বললো না। সব সময় অজুহাত দেখিয়ে ছেলে-মেয়েকে বেঁধে রাখতে নেই। পৃথিবীর বুকে সবাইকে নিজের শক্তি, সাহস, বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা দিয়ে চলতে দেওয়া উচিত। এক বার মুখ থুবকে পড়ে যাতে পরের বার ইচ্ছে শক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। যদিও নক্ষত্র মুখ থুবড়ে পড়ার মত ছেলে না। আজকে সে শুধু পরিস্থিতির স্বীকার। অনেক কাহিনী তো হলো। ওরাও এবার ভালো থাকুক। নক্ষত্রের ওর আম্মুর দিকে তাকালো। এরপর তিতিক্ষাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো। নক্ষত্রের আম্মু গম্ভীর কন্ঠে বললো,
–“যেতে হলে তুমি যাও। আমার ছেলের বউ কোথাও যাবে না। তুমি খুব বড় হয়ে গেছো, তাই না? আমাদেরকে এখন দায়িত্ব কি, এটা শিখাচ্ছো? দু’জনের কেউ বাসার বাইরে পা রাখলে, এর ফল ভালো হবে না।”
নক্ষত্রের আম্মু কথাটা বলে উনার রুমে চলে গেলো। নক্ষত্র কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে গেল। ওর আম্মুর কথার মানে বুঝতে ওর সময় লাগলো না। নক্ষত্র আর মিঃ আবরার এটাই চেয়েছিলো। নক্ষত্রের ফাঁদে ওর আম্মু পা দিয়েছে। বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওর আম্মুকেও বাগে আনলো। মিঃ আবরার আর নক্ষত্র দু’জন দু’জনার দিকে তাকালো। দু’জনের ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। যার মানে বাবা ছেলে বাদে কেউ বুঝলো না।
তিতিক্ষা ছলছল চোখে নক্ষত্রের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা ব্যান্ডেজ রক্ত ভিজে লাল হয়ে গেছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো,
–“তোমার পায়ে রক্ত বের হচ্ছে। প্লিজ তুমি থামো।”
নক্ষত্রের ঠোঁটে মুচকি হাসি। তিতিক্ষার মুখ দেখে মনে হচ্ছে নক্ষত্রের বদলে ও নিজে কষ্ট পাচ্ছে।
আফান দ্রুত পায়ে এসে নক্ষত্রকে সোফাতে বসিয়ে দিলো। মিঃ আবরার ফাস্ট এইডের বক্স নিয়ে আসলো। আফান নক্ষত্রের পা নতুন করে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। রুহান কাবিন নামার কাগজটা নক্ষত্রের হাতে দিয়ে, নক্ষত্রকে ইশারা করলে তিতিক্ষাকে নিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য। মিঃ আবরারও ইশারাতে তাই বললো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতটা শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে গেল।
তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু মামনি বাসায় গিয়ে কেউ কোন কথা বললো না। একটু পর তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু উনাদের বাসাতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে গেলো। যে ছেলের সাথে তিতিক্ষার আকদ্ হওয়ার কথা ছিলো, তাকে মেসেজ করে না করে দিয়ে ফোনটা বন্ধ রাখলো। মামনিও আর আটকালো না। কি বলেই বা আটকাবে? তিতিক্ষা না ফেরাতে আহান আর তনুকা মনে মনে খুশিই হলো।
নবিনকে সকালে তাড়াহুড়ো করে বের হতে দেখে অদ্রি কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পায়নি। তখন নবিনের মুখে স্পষ্ট রাগ ছিলো। কারো প্রতি সে খুব রেগে ছিলো। নবিন ইচ্ছে করেই অদ্রিকে কিছু বলেনি। ওকে বললে টেনশন করবে, কান্নাকাটি করবে। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে, অদ্রিকে সাবধানে থাকতে বলে দ্রুত বের হয়ে গিয়েছিলো। নবিন কেবল অদ্রিদের ওখান থেকে ফিরলো। এতক্ষণ সে ওখানেই ছিলো। তিতিক্ষার আব্বু-আম্মুকে তিতিক্ষাকে ছাড়া যেতে দেখেছে। এরপর হাসি হাসি মুখ নিয়ে বাসায় ফিরেছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস রেখেই নক্ষত্রের কাছে গিয়েছিলো। ওর আশা ভরসা, ভালবাসা, বিশ্বাস, অনুভূতির সবকিছুর জয় হলো। নবিন এসব ঘটনা এখন অদ্রিকে সবটা জানালো । অদ্রি সবটা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বলো,
–“সব আপনার জন্য। আমি বলেছিলাম আপনাকে এসব না করতে। আমার পাপ কাজের সাথে নিজেকে না জড়াতে। আমার জন্য ভাইয়া আর ভাবিমণি এতটা কষ্ট পাচ্ছে। সব আমার দোষ। আমার জন্যই এত অশান্তি সৃষ্টি। ”
নবিন অদ্রির চোখ মুছে ওকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলে। অদ্রি নবিনের শার্ট আকড়ে ধরে কাঁদতে থাকলো। অদ্রির পেটের বাচ্চা নবিনের না। অদ্রি ওর একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিল। কেউ একজন অদ্রির জুসে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। অদ্রি অবচেতন হয়ে গেলে, ওকে অন্ধকার স্টোর রুমে নিয়ে গিয়ে রেপ করে। সকালবেলা নিজেকে এমন বিধস্ত অবস্থায় দেখে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কে করছে বা কারা করেছে অদ্রি জানে না। কারণ সে সময় কড়া মেডিসিনের প্রভাবে সে পুরোপুরি অবচেতন।এখানকার কাউকে তো ভালো মতো চেনেই না। এখন কাকেই বা দোষ দিবে। লজ্জা আর ভয়ে সে নিজের ফ্রেন্ডকেও জানায় নি। সেদিনের পার্টিতে তো অনেকজন ছেলে ছিলো। তাঁরা তো ড্রিংক্সও করছিলো। কে ওর সাথে এমন জঘন্য কাজটা করলো? চোর ধরতে পারলে না হয় তাকে শাস্তি দিবে। কিন্তু চোর না ধরতে পারলে তাকে কিভাবে কি করবে? অদ্রি তো জানে না সে কে, এজন্য আর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সবটা হজম করে নিতে হয়েছে। অদ্রির মত মেয়েদের সাথে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা গুলো অপ্রকাশিতই রয়ে যায়। শুধুমাত্র চক্ষুলজ্জা, অপমান, অসহায়ত্ব আর কলঙ্কিত ট্যাগ লাগার ভয়ে।
তনুকার বিয়ের দিনে অদ্রি জানতে পারে ও প্রেগনেন্ট। একটা নিরিবিলি জায়গাতে সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে অদ্রি কান্নাতে ভেঙে পড়েছিলো, আর নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছিলো। নবিন সিগারেট খেতে ওখানেই গিয়েছিলো। তখনই অদ্রির সব কথা শুনে ফেলে। নবিন অদ্রির থেকে পুরো কাহিনীটা শুনে। আর বলে সে অদ্রিকে সাহায্য করবে৷ কারণ নবিনের মনে করে, যে নিজ ইচ্ছায় রেপ হয়, তাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী করা তো দূর সাপোর্ট করারও প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যে পরিস্থিতির স্বীকার হয়, তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।
এটা ভেবেই নবিন অদ্রির পাশে দাঁড়িয়েছিলো। অদ্রির বয়স কম, ওর ভবিষ্যত বলে কিছু আছে। বেবিটা ছিলো এক মাসের। তাই নবিন এবোর্শন করাতে অদ্রিকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো। এবোর্শন করতে অভিভাবকের সাক্ষর লাগে৷ তাছাড়া ডক্টর এবোর্শন করাতে রাজি হচ্ছিলো না।
নবিন অদ্রির হাজবেন্ড হয়ে সাক্ষরটা করেছিলো।
আর ওখানে গিয়ে কোন প্রতিবেশী ওদের দেখে অদ্রিদের বাসায় জানিয়ে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই তো এসব সমস্যার উৎপত্তি হলো।
আমাদের সমাজে নবিনের মত বিবেকবান ছেলের বড্ড অভাব। অদ্রির উপকার করলো বলে ওকে এত কিছুর সম্মুখীন হতে হলো। বাড়ি ছাড়া হলো, সবার কাছে খারাপ প্রমাণিত হলো, বোনের কষ্টের কারণ হলো। তবুও হার মেনে অদ্রির হাত ছাড়লো না। আসল কথাটা জানলে হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না। সবাই খারাপ ভাবে অদ্রির দিকেই আঙুল তুলবে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। পিছন ফিরে সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে আর জল ঘোলা করার মানেই হয় না। পরিস্থিতি তো সব সময় এক থাকে না। আল্লাহ ভরসা! একদিন পরিস্থিতি বদলে সবটা ঠিক হয়ে যেতেও পারে। তবে এতকিছুর পরেও, নবিনের মনে অদ্রির জন্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে৷ যে অনুভূতি কোনদিন নিঃশেষ হওয়ার মতো না।
নক্ষত্র রুমে ঢুকে তিতিক্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এতটা শক্ত করে ধরলো, যেন সে তিতিক্ষাকে ওর বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে পারলে শান্ত হতো। আচ্ছা! প্রিয় মানুষটা কেন বুকের বা পাশটাতে লুকিয়ে রাখা যায় না? কেন নিজের শরীরের প্রতিটা রক্ত বিন্দুর সাথে মিশিয়ে নেওয়া যায় না? কেন মনের গহীনে বন্দী করে সবার থেকে আড়াল করা যায় না? কেন অদৃশ্য ভাবে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে রাখা যায়? অদৃশ্য ভাবে সবার থেকে আড়াল করতে পারলে ওকে তো এত কষ্ট পেতে কখনোই দিতো না।
নক্ষত্র এতটা কল্পনা করেনি যে, তার মনোপ্যাথি তার জন্য এতটা ত্যাগ স্বীকার করবে। লজ্জায় নতজানু হওয়া মেয়েটা প্রতিবাদী হয়ে উঠবে। ওর প্রতি অসীম বিশ্বাস নিয়ে এতটা পথ ছুটে আসবে। বাবা-মা শারীরিক, মানসিক অত্যাচার করার পরেও, হার না মেনে আত্মাবিশ্বাসী হয়ে ওকেই বেছে নিবে। যেখানে অন্য কেউ হলে এতদিনে হার মেনে যেতো। ওদের সব অনুভূতিরা চূর্ণ বিচূর্ন হয়ে নিঃশেষ হয়ে যেত।
আমাদের দেশে তো এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। মেয়ে প্রেম করছে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। ছেলে ভালো হোক বা মন্দ দেখার সময় নেই। নিজের পছন্দ মতো কারো সাথে বিয়ে ঠিক করে৷ মেয়ে যখন বিয়ে করতে রাজি না। তখন তাকে ইচ্ছে মত পিটিয়ে, বাবা-মা কসম দিয়ে মেয়েটার পথ আটকে দেয়। যাতে সে পালাতে না পারে। তারপর মেয়ের অমতে বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘরে পাঠিয়ে বাবা-মা তাদের দায়িত্ব পালন করে। মেয়েটা যখন এসবের স্বীকার হয়ে সবটা মেনে নেয়, তখন ভালবাসার মানুষটা তাকে অতি ভালবাসার অধিকার নিয়ে ছলনাময়ী, বে*, নিষ্ঠুর, পাষাণ, বারো*, একটাতে হয় না, লোভী বলে তাদের মন মতো ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। এটাই হয়ে আসছে, আর এটা হচ্ছে আরেকটা বাস্তবতা।
নক্ষত্র আর তিতিক্ষার মতো শত শত ছেলে-মেয়ের ভাগ্য এত ভালো নয়। সবার ভালবাসাতে পূর্ণতা আসে না। এই গল্পে ওরা এক না হলে আমাকে তো ইচ্ছেমত ধুয়ে দিবেন। যা মুখে আসে তাই বলে চলে যাবেন। আমারও মাঝে মাঝে আপনাদের বলতে ইচ্ছে করে,
–“বাস্তবতা সুমধুর নয়। বাস্তবতার হলো নিষ্ঠুর মায়াজাল। কারো জীবন এত সুন্দর করে সাজানো হয় না। বাস্তবের এই পরিস্থিতির সমাপ্ত এত সহজে হয় না। বাস্তবে এই পরিস্থিতির সমাপ্ত হয় সারাটা জীবন দহনে দগ্ধ হতে হতে। এটা শুধু গল্পে তুলে ধরেছি। তাই মানতে পারছেন না। এমনটা বাস্তবেও ঘটে আর কারো না কারো সাথে প্রতিনিয়ত ঘটছেও। তাদের কি বলবেন? তাদের কিভাবে শান্তনা দিবেন? কিছু বাক্য দিয়ে একটা গল্প তৈরী করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই আপনারা মানতে পারছেন না। তাহলে সেই সব জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকার মানুষের কি অবস্থা? একটা বার ভেবে দেখেছেন? আমাদের ব্যবহারে আমরা বুঝিয়ে দেই, আমরা সবাই সুখের মাঝে সুখ খুঁজে নিতে সক্ষম। কিন্তু কষ্টের মাঝে কারো কষ্টের ভাগ নিতে আমরা বড্ড বেশি অক্ষম।
তিতিক্ষা এখনো নক্ষত্রের বুকে আবদ্ধ হয়ে আছে। মার খেয়ে শরীরটা ব্যাথাতে নড়ানো যাচ্ছে না। তবুও নক্ষত্রের এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকাতে ঠিক কতটা শান্তি পাচ্ছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পাচ্ছে না। নক্ষত্র তিতিক্ষার কপালে আলতো ভাবে একটা আদর দিলো। তিতিক্ষার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইডের বক্স বের করলো৷ তিতিক্ষা কপালের কাটা স্থানে এখনো কিছু লাগায়নি। নক্ষত্র অতি যত্নে কপালের রক্ত পরিষ্কার করে দিয়ে কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। ঠোঁটেও নাজেহাল অবস্থা। নক্ষত্রের হাত কাঁপছে। তিতিক্ষার শরীরে বেল্টের মার গুলো দেখে নক্ষত্র চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে৷ তিতিক্ষা একদৃষ্টিতে নক্ষত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র মাথা নিচু করে মারের দাগ গুলোতে এন্টিসেপটিক ক্রিম লাগাতে লাগাতে ধরা গলায় বললো,
–“ইস! এভাবে কেউ মারে? ব্যাথা করছে খুব? অনেক কষ্ট হচ্ছে, তাই না?”
তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। নক্ষত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ক্রিম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সে জানে তিতিক্ষা এটাই বলবে। তিতিক্ষার চোখে পানি ছলছল করছে। এই ছেলেটার জন্য আজকে বাবা-মায়ের অবাধ্য মেয়ে হলো। বাবা-মায়ের জেদের কাছে ওর অনুভূতিগুলো মাটিতে চাপা পড়ে যাচ্ছিলো। বাবা-মা ওর ভাঊল করতে গিয়ে, ওর প্রাণটাই কেড়ে নিচ্ছিলো। কোথাও তো বলা নেই, বাবা-মা ভুল করলে স্বীকার করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাহলে তারা কেন ভুল স্বীকার করে না? বরং তারা ভাবে ভুল হলে ভুল হোক। তবুও কিছুতেই আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে নড়চড় হবো না। যেমনটা তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু করলো। মেয়েকে মেরে ফেলবে তাও ভুল স্বীকার করবে না। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
–“আজকে আমাদের অনুভূতির গুলো পরিপূর্ণ ভাবে স্বার্থক হলো।”
নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকালো। গলায় স্বরটাকে গম্ভীর করে বললো,
–“তুমি তো মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্তে নিজেকে লিপ্ত করলে। এজন্য পরে আবার আফসোস করবে না তো?”
তিতিক্ষা ভ্রু কুচকে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। হঠাৎ এমন কথা কেন? তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথার মানে বুঝতে পারলো না। তিতিক্ষা ভয়ার্ত গলায় বললো,
–“কি ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম?”
নক্ষত্র দুষ্টু হেসে তিতিক্ষার কানে কানে মৃদুভাবে আদুরে কন্ঠে বললো,
–“নক্ষত্র নামক নেশাতে পরিপূর্ণ ভাবে নিজের অস্তিত্বকে ডুবানোর ভুল।?”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা লজ্জা পেলো। কথাটা শুনে সে সাথে সাথে মাথা নিচু করে নিলো। তিতিক্ষার ঠোঁটের কোণে লজ্জামাখা হাসি। ইস! এই ছেলেটা ওকে আবার লজ্জাতে ফেলার বুদ্ধি আটছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার লজ্জামাখা মুখ দেখে হো হো করে হেসে দিলো।
To be continue….!!