অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_20

0
606

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_20
(নিজে পড়ুন এবং শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।)

রায়হান তনুকার ব্লাউজের পিকটা ইচ্ছেকৃত ভাবে ওর ওয়াল পেপার রাখেনি। সঠিক মাপের ব্লাউজটা হচ্ছিলো না। তখন তনুকা রেগে রায়হানকে পানিশমেন্টন দিয়েছিলো যে, আজকে সারাদিন সে ব্লাউজের পিক ওর ফোনে ওয়ালপেপার রাখবে। যদিও বা এটাকে হাবি নির্যাতনই বলে। তবে আহান আর মেঘ এই দুই বিচ্ছু মিলে ব্যাপারটা যে এভাবে ফাঁস করে দিবে তা তো জানা ছিলো না। অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে এই ঘটনাটার আসল কাহিনী তনুকা নিজে স্বীকার করেছে।

ওরা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করলো। রায়হান, তনুকাও ফ্রেশ হয়ে আসলো। নক্ষত্র ওদের সবাইকে নিয়ে পুরনো নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখাচ্ছে। এমন একটা স্থান ঘুরে না দেখালে এখানে আসাটাই বৃথা হয়ে যাবে। পরী বড়দের সাথে হাঁটতে পারছিলো না। পায়ে তাল মিলাতে গিয়ে দুম করে পড়ে গেল। মেঘ দৌড়ে গিয়ে পরীকে টেনে তুললো। আর পরীর মাথায় ঠুয়া মেরে বললো,
–“দুইটা পায়েও ঠিকমত হাঁটতে পারছিস না। আর দুইটা পা লাগবে তোর?”

কথাটা বলে মেঘ পরীকে কোলে তুলে নিলো। সে নিজেও হাঁটতে পারছে না। রুহান পরীকে নিতে চাইলো পরী গেল না। নক্ষত্র এগিয়ে এসে কোনো কথায় ছাড়াই পরীকে কোলে তুলে নিলো। ছোট্ট পরীটা ব্যাথা পেয়েছে তাই সে কাঁদছে। নক্ষত্র অনেক আদর করে ওকে থামিয়েছে। মেঘের থেকে ছয় বছরে ছোট পরী। মেঘ যেখানে যায় পরীও সেখানে যাওয়ার জন্য খুব বায়না ধরে। এজন্য ওকেও মেঘ সাথে করে এনেছে। মেঘদের বাসার দোতলার ফ্ল্যাটে পরীরা থাকে। পরীর বন্ধু মেঘ আর মেঘের বন্ধু আহান। সেক্ষেত্রে তিনজন তিনজনেরই বন্ধু। নক্ষত্র পরীকে কোলে নিয়ে হাঁটছে; সেই সাথে সবটা ওদের ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে। পরীও কান্না থামিয়ে নক্ষত্রের গলা জড়িয়ে ধরে সবটা দেখছে।

চল্লিশ বিঘা জমির উপর স্থাপিত নুহাশপল্লীর মূল ফটক পেরোলেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসের গালিচা। নুহাশপল্লীর উদ্যানের পূর্বদিকের খেজুর বাগানের পাশে ‘বৃষ্টিবিলাস’ নামে একটি অত্যাধুনিক ঘর রয়েছে। এর ছাদ টিনের তৈরি। মূলত বৃষ্টির শব্দ শুনতেই এতো আয়োজন। তার একটু ভেতরে রয়েছে আরেকটি বাংলো। যার নাম ‘ভূতবিলাস’। পরী নক্ষত্রের গলা জাপটে ধরে মুখ কাচুমাচু করে বললো,

–“আংকেল এখানে কি ভূত থাকে?”

–“উহুম! এটা এই বাংলোর নাম। কেন আংকেল, তোমার কি এখানে এসে ভয় লাগছে?” (নক্ষত্র)

পরী সাহসিদের মত মাথা নাড়ালো। যার মানে সে মোটেও ভয় পাচ্ছে না।
দুই কক্ষের আধুনিক বাংলোটির পেছনে রয়েছে ছোট পুকুর। যার চারিদিক সুন্দর ঘাসে মোড়া ঢাল দিয়ে ঘেরা, এই ঢালের চারিদিকে রয়েছে গাছ-গাছালি। ভূতবিলাসের পাশ দিয়ে একটি নড়বড়ে কাঠের সাঁকো রয়েছে। এর ওপর দিয়ে হেঁটে পুকুরের মাঝখানের ছোট্ট এক টুকরো দ্বীপাকারের ভূখণ্ডে যাওয়া যায়। তিতিক্ষা নক্ষত্র আর পরীকে দেখছে। নক্ষত্র কি সুন্দরভাবে পরীকে আগলে রেখেছে। তিতিক্ষা কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।

সবাই চারপাশে ঘুরছে। নক্ষত্র আরো সামনে গিয়ে ওদের দেখালো প্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছ, ঔষধি গাছের বাগান, হুমায়ুন আহমেদের কটেজ, ট্রিহাউজ, দাবা খেলার এবং নামাজপড়ার কক্ষ, ডিম্বাকৃতির সুইমিংপুল, কাদামাটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্টুডিও। রয়েছে মৎস্যকন্যার মূর্তিসহ একটি পানির রিজার্ভার। এটির পাশে একটি রাক্ষসের মূর্তিও আছে। এছাড়া আছে কনক্রিট দিয়ে তৈরি ডাইনোসারের মূর্তি, প্রাচীন আমলে নির্মিত কিন্তু আধুনিক ঘাট সমৃদ্ধ দিঘাল দীঘি ও লেকের মাঝে বসার জন্য ছোট একটি দ্বীপ। তাছাড়া শালবন, অর্কিড বাগান সহ আরও তিনটি বাংলো।

ওরা ঘুরে ফিরে ওখান থেকে বের হয়ে গেল। শুধু তনুকার গায়ের হলুদের জন্য ওরা এসেছিলো। মেঘ আর পরী সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা ওদের বাসায় চলে গেল। ওদের সাথে আজকে একজন কেয়ার টেকার এসেছিলো। উনিই সারাদিন ওদের দেখে রেখেছিলো। মেঘ ওর দাভাইয়ের সাথে আজকে রাতে সুইজারল্যান্ড যাবো। এজন্য সে বিয়েতে আর আসতে পারবে না। আহানের যেন মন খারাপ না হয়; তাই মেঘ আজকে এসেছিলো। তবে ফোনের ওয়ালপেপার জন্য মেঘ রায়হানকে সরি বলেছে। রায়হানও হেসে মেঘকে জড়িয়ে ধরেছিলো। মেঘ তনুকাকে একটা গোল্ডের রিং উপহার দিয়েছে। এটা মেঘের আর পরীর তরফ থেকে মেঘের বউমনি পাঠিয়েছে।

ওরা সবাই বের হয়ে এবার ‘নক্ষত্র বাড়ি’র দিকে রওনা হলো। ‘নক্ষত্র বাড়ি’ হলো একটা রিসোর্ট। ওখানে সব যাবতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশ পল্লি থেকে ওখানে যাওয়া দুরত্ব প্রায় দেড় ঘন্টা।
নক্ষত্রবাড়িটির প্রতিটি স্থান ব্যবহার করা হয়েছে নান্দনিকভাবে। আঙিনার এক পাশে ছোট্ট ঝরনা, যেখানে পদ্ম আর শাপলা ফুলের মিতালি গড়ে উঠেছে। পুকুরে মাছধরা বা নৌকায় চড়েও ঘোরাও সুযোগ আছে। খেলাধুলার জন্য রয়েছে ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড ইত্যাদির ব্যবস্থা। জোড়া দুটি পুকুরের মাঝে কাঠের সাঁকোতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করার জন্য ঝিলের জলে ফোটা শত শত লাল শাপলা। ওরা রিসোর্টে এসে আরো একটা বার সবাই অবাক হলো এখানকার সৌন্দর্য দেখে। সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলো। যেহেতু এটা রিসোর্ট তাই অন্য সব গেস্টরাও আছে। নক্ষত্র ওদের সবার জন্য এক সাইডের পুরোটাই নিয়েছে। সন্ধ্যার পর তনুকা সহ সব মেয়েদের জন্য মেহেদীর অনুষ্ঠান করা হয়েছে। রায়হানরা চলে গেছে; কালকে বর সেজে আসবে। সারারাতে ওরা আড্ডা দিয়েছে, অনেক মজা করেছে। সাফওয়ানের ফানি গান শুনে এক এক জন হেঁসে লুটোলুটি খেয়েছে।

বিয়ের দিন সকালে___!!

নক্ষত্র, সাফওয়ান আর রুহান খেতে বসেছে। তিতিক্ষারা সব বোনরা মিলে ওপর সাইডে। সাফওয়ান আর রুহান কথা বলতে বলতে থেমে গেল। নক্ষত্র ওর থেমে যাওয়া দেখে ওদের দিকে তাকালে। তখনই একজন এসে ওদের সামনের চেয়ারে বসে গেল। তিনজনের দৃষ্টি সামনের ব্যাক্তির দিকে। নক্ষত্র, রুহান, সাফওয়ান সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে সামনের জনকে জড়িয়ে ধরলো। আফান আজকে এখন এভাবে উপস্থিত হবে ওরা কেউ জানতো না। চারজন ওরা খুব ভাল বন্ধু; যাকে বলে কলিজার বন্ধু। আফান ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তোরা খাচ্ছিস? আমার প্রচন্ড খুধা লেগেছে। কিন্তু আমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না।”

এটা নতুন কিছু না। চারজনের এটা একটা খুব পুরোনো অসুখ। আফানের কথার মানে ওরা তিনজন বুঝলো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আফানের মুখে নক্ষত্র খাবার তুলে ধরলো। এরপর রুহান দিলো। তারপর দিলো সাফওয়ান। তিন বন্ধুর থেকেই পর পর খাচ্ছে আফান। খেতে খেতে আফানের চোখ গেল বাম সাইডের টেবিলে। ওখানে তিতিক্ষারা বসে আছে। সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আফান খাওয়া থামিয়ে বললো,
–“তিতিক্ষা জানো তো? নক্ষত্র খুব ভাল করে খাইয়ে দিতে পারে। আমি কি ওখানে নক্ষত্রকে যেতে বলবো? আই মিন তুমি কি ওর হাতে খাবে?”

তিতিক্ষা মাথা নিচু করে নিলো। আফান নক্ষত্রকে বললো,
–“নক্ষত্র দ্রুত যা। নিরাবতা সম্মত্তির লক্ষণ। তিতিক্ষা তোর হাতে খাবে মেবি।”

নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার দিকে না তাকিয়ে বললো,
–“সে লজ্জায় রাঙা হয়ে মাথা নিচু করে নিয়েছে । আর ভুলেও এদিকে তাকাবে না। একটুপর দৌড়ে পালাবে এখান থেকে।”

রুহান, আফান, সাফওয়ান খাওয়া থামিয়ে তিতিক্ষাদের দিকেই তাকালো। নক্ষত্র বলা কথা একদম ঠিক। ওখানকার মেয়েরা সবাই হাসছে আর তিতিক্ষা উঠে চলে গেল। এবার এরা তিনজন নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র ওদের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো,

–“সে আমার মনোপ্যাথি। আমি ওর চোখের ভাষা, মৌনতা, পরিপূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছি।”

আজকে বিয়ে, তাই অনেক কাজ আছে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। সাফওয়ানকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছে। ও সেটা না করে বাচ্চাদের সাথে নাচানাচি করছে। গান বাজনা, হইচই, আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠেছে রিসোর্টটি। তনুকা ১১ টার দিকে গোসল সেড়ে সাজতে বসে গেছে। পার্লার থেকে দুইজন এসেছে ওকে সাজাতে। অদ্রি, বিভা আর তিতিক্ষা বরের থেকে টাকা হাতানোর জন্য খাবারের প্লেট সাজানোর কাজে লেগে গেছে। নক্ষত্র, নবিনরা একটু ব্যস্ত। মামনি কোন শাড়িটা পড়বে, এটা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। তিতিক্ষার আম্মু আর নক্ষত্রের আম্মু হাঁটছে আর গল্প করছে।

দুপুর একটার দিকে সবাই যে যার কাজ সমাপ্ত করে রেডি হয়ে নিলো। গেস্টরাও চলে এসেছে । একসাইডে খাবারের প্রতিটা আইটেম আছে। আর প্রতিটা আইটেমের সাথে একজন করে ওয়েটার দাঁড়িয়ে। যার যে মেন্যুটা পছন্দ, সে তুলে নিতে পারে। বর-কনের বসার জায়গাটা সুন্দর করে সাজানো। দুপুর ১ঃ৫৬ মিনিটে রায়হানরা এসে এখানে পৌঁছালো। বর এসেছে শুনে ছেলেরা গিয়ে বর নামালো। ওখানে কোনো মেয়ে যায়নি। রায়হান বরের আসনে বসলো। নক্ষত্র আর ওর বন্ধুরা এসে রায়হানের সাথে কথা বললো। আজকে সবাই ব্লেজার পড়েছে যার যার পছন্দমত। একটু পর তনুকাকে এনে রায়হানের পাশে বসানো হলো। আর তখনই শুরু হলো ক্যামেরা ম্যানের অত্যাচার। তনুকার আব্বু কাজিকে নিয়ে আসলো। বড়রা সবাই ওদের সামনে দাঁড়ালো আর ছোটরা সবাই উঠে উনাদের বসার জায়গা করে দিলো। নক্ষত্র এসে তিতিক্ষার পাশে দাঁড়ালো। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে দেখেও চুপ করে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ধীর কন্ঠে বললো,

–“মিসেস নাহিয়ান! এই রুপে আপনি আর কতবার আমাকে ঘায়েল করবেন?”

তিতিক্ষা আড়চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথার প্রতি উত্তরে মাথানিচু করে বললো,

–“আরো শত, শতবার।”

নক্ষত্র আলতো করে তিতিক্ষার হাতের আঙুল টার্চ করে আদুরে সুরে বললো,

–“আমার প্রতি তোমার কি একটুও মায়া দয়া হয় না?

তিতিক্ষা দুষ্টু হেসে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। নক্ষত্রও হেসে দিলো। ওইদিকে সবাই রায়হান তনুকাকে নিয়ে ব্যস্ত। আর এইদিকে নক্ষত্র আর তিতিক্ষা প্রেমালাপে ব্যস্ত। নক্ষত্র আশেপাশে আর একবার চোখ বুলিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,

–“ইস! এমন একটা শুভোক্ষণ আমার যে কবে আসবে?”

এখানে থাকলে এই ছেলে ওকে লজ্জা দিবে। এটা ভেবে তিতিক্ষা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে, নক্ষত্র তখন তিতিক্ষার হাত ধরে ওকে আটকে দিলো। আর আদুরে সুরে বললো,

–“আমি যে মারাত্মকভাবে তোমাতে আসক্ত হয়ে গেছি। তোমাকে ছাড়া এখন আমার নিজেকে শূন্য মনে হয়। ”

তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রের চোখ বলে দিচ্ছে ওর অনুভুতির কথা। রুহান ওর ক্যামেরা নিয়ে নক্ষত্রদের ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে একটা ম্যাঙ্গোবার এগিয়ে দিলে। তিতিক্ষার নক্ষত্র দিকে হাত বাড়াবে এমন সময় রুহান ওর ক্যামেরা ক্লিক করলো। তিতিক্ষা যাওয়ার আগে ওর হাতের আঙ্গুলে জিভ ঠেকালো। আশেপাশে তাকিয়ে ওর নক্ষত্রের শার্টের কলার বরাবর রাখলো। নক্ষত্র বাম দিকে তাকিয়ে ছিলো, তিতিক্ষা স্পর্শে চমকে উঠেছে। এই প্রথম তিতিক্ষা নিজে থেকে ওকে টার্চ করেছে। তবে এভাবে টার্চ করার মানে নক্ষত্র বুঝতে পারেনি।
নক্ষত্র কিছু বলার আগে তিতিক্ষা বললো,
–“একটু বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে তাই।”

তিতিক্ষা আর এক মুহূর্ত ওখানে দাঁড়ায়নি। দ্রুত পায়ে সে অন্য দিকে চলে গেছে। তখন রুহান হাসতে হাসতে এসে নক্ষত্রের পাশে দাঁড়ালো। এইদিকে যথাযথ নিয়মকানুন মেনে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। সবাই মোনাজাতে ওদের জন্য দোয়া করলো। এরপর বরের খাওয়া দাওয়ার পর্বও চুকে গেল। খাওয়া শেষ করতেই তনুকার এটো হাত রায়হানের এটো হাতের এক ধরে গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে তিতিক্ষা বেঁধে দিলো। রায়হানের বুঝতে বাকি নেই এখন ওর সাথে কি হতে যাচ্ছে? তনুকা নিজেই বললো,
–“তারাতাড়ি পনেরো হাজার টাকা ফেলো।”

রায়হান তনুকার দিকে তাকালো। কোথায় বরকে বাঁচাবে তা না করে আরো ফাসাচ্ছে। তিতিক্ষা, বিভা, অদ্রি সহ আরো কয়েকজন মিটিমিটি হাসছে। নক্ষত্ররা ওদের এক সাইডে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছে। তনুকা নিজে থেকে তিতিক্ষাদের টাকা আদায় করতে সাহায্য করার কথা না। নিশ্চয়ই এখানে রহস্য আছে। রায়হান তনুকার দিকে মুখ কাচুমাচু করলো তাও তনুকা শুনলো না। ১৫ হাজার নিয়েই রায়হানকে ছাড়লো। বিভা আচানক ভাবে তিতিক্ষাকে ধাক্কা মারলো। নক্ষত্র পাশে থাকায়
তিতিক্ষার নক্ষত্রের বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। ওর নাকে খুব লেগেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ধরে নিলো। বিভা ইচ্ছা করেই এমন করেছে। বিভা এদের নক্ষত্র আর তিতিক্ষার হাত বেঁধে দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার নাকে হাত বুলিয়ে বললো,
–“খুব ব্যাথা পেয়েছো? পানি আনবো?”

তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে না বললো। তবে ওর খুব লেগেছে নাকে সাথে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে। বিভা নক্ষত্রকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“ডক্টর দিলে ১৫ হাজার। আর আর্কিট্রেক্ট এর পালা।”

নক্ষত্র তিতিক্ষা চোখে পানি মুছে দিতে দিতে বললো,

–“রায়হান ভাই চাঁদ নিয়ে যাচ্ছে। তাই ১৫ হাজার দিলো। আমার চাঁদ আমাকে দিলে আমিও..।”

নক্ষত্রের কথা শুনে বিভা বললো,

–“না না ভাইয়া! আমি জানি আপনি খুব টাউট। এখন কোনো যুক্তি দেখাবেন না। আমরা কিছুতেই শুনবো না।”

নক্ষত্রও তিতিক্ষাকে আস্তে করে বললো ওর পকেট থেকে নিয়ে ওদের দিতে। তিতিক্ষা অনেক সাহস করে নক্ষত্র প্যান্টের বাম পকেটে হাত ঢুকালো। তিতিক্ষা লজ্জা নক্ষত্রের দিকে তাকাচ্ছে না। বিভারা তর্ক করছে এটা নিয়ে। তিতিক্ষার শাড়ির আঁচলের জন্য কেউ দেখতে পায়নি, নক্ষত্রের পকেটে হাত ঢুকিয়েছে। নক্ষত্র স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যত টাকা ছিলো তিতিক্ষা এক মুঠো করে বের করলো। তিতিক্ষা বিভা দিকে এক মুঠো টাকা এগিয়ে দিলো। বিভা টাকা গুলো নিয়ে গুনছে। তিতিক্ষার নক্ষত্রের দিকে ভুলেও আর তাকায়নি। নক্ষত্রের বাম পকেটে তখন ৮ হাজার তিনশ বিশ টাকা ছিলো। ৮ হাজার পেয়ে বিভা নক্ষত্র আর তিতিক্ষার হাত খুলে দিলো। বিভা হাসতে হাসতে বললো,

–“আমার দুই জিজুই অনেএএক ভালো।”

বিভার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। তনুকা আর রায়হানের বিদায় দেওয়ার সময় কান্না কাটির পালা। রায়হানরা তনুকাকে নিয়ে চলে গেল। সবাই কাঁদছে।তনুকা বাড়ির বড় মেয়ে। এজন্য আদরও একটু বেশি। তিতিক্ষাও আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বার বার বোনদের খুনশুটির কথা মনে পড়ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে এসে দাঁড়ালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। আর বললো,

–“আমাদের বিয়ের দিনেও কি এভাবে কাঁদবে? উহুম আমি কাঁদতেই দিবো না।

তিতিক্ষা ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো,
–“কেন?

নক্ষত্র মুচকি হেসে শান্ত সুরে বললো,

–“কারণ তুমি কাঁদলে আমার নিজেকে অপরাধী ফিল করবো। বার বার মনে হবে যে আমি সবার থেকে তোমাকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

To be continue……!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here