অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_22

0
600

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_22

আহান কড়াইয়ে তেল দিয়ে ভয়ে ডিমটা ছাড়তে পারছে না। কয়েকবার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হলো। মামনি তাকে বকেছে, এজন্য সে কিছুতেই মামনির সাহায্য নিবে না। এদিকে ভয়ে প্যানে ডিমটাও দিতে পারছে না। আহান সাতপাঁচ না ভেবে চুল অন রেখেই তিতিক্ষার রুমে দৌড় দিলো। চুলার উপরে প্যানের তেলটা খুব গরম হয়ে গেছে। আহান তিতিক্ষাকে টেনে-হিঁচড়ে রান্নাঘরে নিয়ে আসছে। প্যান অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কারণে প্যানের উপরে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। ওদের গ্যাসের চুলাটা ছিল পুরোটা গ্লাস বডি। প্যান অতিরিক্ত গরম আর গ্যাস আন রাখার জন্য চুলার উপরের কাঁচ গুলো ফেটে গেল। মোটা গ্লাস ফাটার সাথে সাথে চুলাটা ব্লাস্ট হলো। প্যান ছিটকে একটু দূরে গিয়ে পড়লো। তেলে চারপাশটা ছড়িয়ে গেল। এত শব্দে চুলা ব্লাস্ট হতে দেখে তিতিক্ষা আর আহান রান্না ঘরে থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে গেল। মামনি দৌড়ে এসে দেখে চুলার উপরের গ্লাস গুলো খুলে খুলে ছিটকে পড়ছে। গ্লাস গুলো রান্না ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে গেছে। তিতিক্ষা মামনির সাথে আসতে গেলো। মামনি তিতিক্ষা আর আহানকে আসতে নিষেধ করে দিলো। মামনি দৌড়ে গিয়ে সিলিন্ডার অফ করে দিলো। যাতে গ্যাসটা অফ হয়ে যায়। থার্ড কার্ণিশের নিচে গ্যাস সিলিন্ডার ছিলো। রান্নাঘারের দেওয়াল থেকে ফায়ার স্প্রে এনে মামনি স্পে করলো। গ্যাস সিলিন্ডার সেভ জনে ছিলো বলে ব্লাস্ট হয়নি। ফায়ার স্প্রে করায় আগুন নিভে গেল।

আহান ভয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। তিতিক্ষা আহানকে সরিয়ে রান্না ঘরে গেল। একটু অসাবধানতার জন্য মারাত্মক একটা অঘটন ঘটে যাচ্ছিলো। মামনি রেগে আহানকে মারতে যাচ্ছিলো। তিতিক্ষা কোনো রকম ধরে ওর রুমে চলে গেল। রানারঘরের অবস্থা দফারফা হয়ে গেছে। নতুন চুলা আনতে হবে তারপর রান্না হবে। মামনি উনার হাজবেন্ডকে ফোন করে সবটা বললো। উনি দুপুরের খাবার নিয়ে আসবেন। একটু পর বুয়ার সাহায্য নিয়ে মামনি রান্নাঘর পরিষ্কার করে নিলো।

দুপুরের খাবার সেরে তিতিক্ষা একটু রেস্ট নিল। বিকাল চারটার দিকে রেডি হয়ে ওর বুটিক ঘরে‌ গেল। কার কি প্রয়োজন, সেই লিস্টটা নিয়ে নিয়ে শপিংমলে গেল। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বুটিক শপে পৌঁছে দিয়ে বাসায় ফিরলো। সন্ধ্যার পর হালকা নাস্তা সেরে পড়তে বসলো। দুইদিন পর ওর ইনকোর্স পরীক্ষা। ইকোনোমিক্স সাবজেক্টে তিতিক্ষা অনার্স করছে। একটু পর তিতিক্ষার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে নক্ষত্রের নামটা দেখে ওর মুখে হাসি ফুটলো। সে মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করলো। নক্ষত্রের আগে তিতিক্ষায় বলল,

–“উহুম! উহুম! কে বলছেন?”
–“আমি আমার ম্যানোপ্যাথির অর্ধাঙ্গ বলছি।”
–“ওহ! জ্বি বলুন।”
–“আমি কি আমার মনোপ্যাথির সাথে প্রেমালাপ করতে পারি?”
–“উহুম, মোটেও না।”
–“কেন, কেন?”
–“তাকে এখন ফোন দেওয়া যাবে না। সে এখন অনেক বিজি আছে।”
–“ওহ! আপনি অনুগ্রহপূর্বক আমার একটা বার্তা কি ওকে পৌঁছে দিবেন?”
–“হুম! কি বার্তা শুনি?
–“বলবেন, তার অর্ধাঙ্গ তার মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।”
–“হুম! বলতে আমার বয়েই গেছে।”

ফোনের ওপর পাশে নক্ষত্র মিটিমিটি হাসছে। এমন দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি ওদের মধ্যে চলতে থাকলো। দুজনের মুখে প্রশান্তির হাসি। দুজনেই মুচকি মুচকি হাসছে আর কথা বলছে। ব্যস্ততার সময়টুকুকে বিদায় জানিয়ে এই রকম একটু আকটু খুনশুটি ওদের মাঝে চলে। নক্ষত্র ফোন কলেও তিতিক্ষাকে লজ্জাতে ফেলতে মোটেও ভুল করে না। তিতিক্ষাকে লজ্জায় ফেলে সে মুচকি মুচকি হাসে। ওর কথা শুনে তিতিক্ষা লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে ওঠে।

তিতিক্ষার পরীক্ষা যথাসময়ে শুরু হয়েছে। ভালোই পরীক্ষা দিয়েছে। কালকে ওর পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
রেজাল্ট দিতে নাকি একটু দেরী হবে। ফ্রি হয়ে নক্ষত্রের সাথে ভালো খুনশুটি, প্রেমালাপ চলছে ওর। নক্ষত্রের আম্মু সাথে তিতিক্ষার রোজ কথা হয়। নক্ষত্রও নিজের কাজে আজকাল একটু ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। অদ্রি দুই বার এসেছিলো তিতিক্ষার সাথে দেখা করতে।

শরীরে মিষ্টি রোদের আদর খাওয়ার সময়টার সমাপ্ত ঘটেছে। শীতের যাত্রা শেষ। শীতের খোলস ভেঙ্গে,
রুক্ষ আর শুষ্কতাকে বিদায় জানিয়ে, বসন্তের আগমন ঘটেছে। শীতের শেষ, তথা মাঘের মাঝামাঝি থেকেই প্রকৃতিতে বইতে থাকে বসন্তের আগমনী হাওয়া। এ যেন জানান দেয় ঋতুরাজ বসন্তের উপস্থিতি। বন বনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আজকে পহেলা ফাল্গুন। তিতিক্ষাদের ইউনিভার্সিটিতে বেশ বড় করে বসন্ত বরণের অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে। বসন্ত নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠান থাকবে একের পর এক।

তিতিক্ষা সকাল বেলা বেশ দেরী করেই ঘুম থেকে উঠলো। আশে পাশে বসন্তে গানের ধ্বনি ভেসে আসছে। সে উঠে, ফ্রেশ হয়ে, ব্রেকফাস্ট সেরে বসে আছে। নবিন সকাল সকাল বন্ধুদের নিয়ে বের হয়েছে। বিভা সকালে উঠে বান্ধবীদের সাথে কোথাও গেছে। তনুকা ডাক্তার মানুষ। তার খুব ব্যস্ত সময় কাটছে। আলাদা ভাবে বসন্ত বরণের আয়োজনে মেতে উঠার সময় তার নেই। তিতিক্ষা বেলকুণিতে বসে ছিলো। তিতিক্ষার আম্মু তিতিক্ষাকে ফোন দিয়ে বললো,

–“আম্মু সাজুগুজু করে ঘুরতে বের হবে না?”
–” না, আম্মু। বিভা নেই বাসায়। একা একা আর কোথায় যাবো?”
–“আচ্ছা, শোনো! তোমার মামনি এখন তোমাকে একটা প্যাকেট দিবে। তার মধ্যে যেগুলো থাকবে, সেগুলো পড়ে সুন্দর করে রেডি হয়ে নাও। আমি ঠিক এক ঘণ্টা পর তোকে ফোন দিবো।”

তিতিক্ষার আম্মু কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলো। তখনই মামনি এসে তিতিক্ষার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। তিতিক্ষা প্যাকেটটা খুলে অবাকই হলো। মুচকি হেসে ওর আম্মুর কথামতো রেডি হয়ে নিল। কোথাও যাবে না, ওর আম্মুকে খুশি করতেই সে সাজলো। বাসন্তী রঙের লং কামিজ, গোলাপি চুরিদার সাথে মেচিং ওড়না। হাতের একমুঠো গোলাপি চুড়ি, কপালে ছোট্ট একটা টিপ, চোখে টানা করে কাজল, ঠোঁটে চ্যাপষ্টিক। চুল গুলোকে ছেড়ে দিলো। রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর নিজেরই লজ্জা লাগছে। তিতিক্ষার আম্মু ওকে ভিডিও কল দিলো। ওর আব্বু আম্মু দু’জনেই ওর সাথে কথা বললো। ফোনটা কেটে রাখতেই দরজাতে নক পড়লো। তিতিক্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। নক্ষত্র ওর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। নক্ষত্র সত্যিই এসেছে, নাকি তিতিক্ষা ভুল দেখছে? নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,

–“আসবো?”

তিতিক্ষা হতভম্ব হয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন? এখানে নক্ষত্র? কেমনে কি? নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। তিতিক্ষার উত্তরের আশায় আর না দাঁড়িয়ে, সে রুমে প্রবেশ করলো। বাসন্তী রংয়ের পাঞ্জাবী, ব্ল্যাক জিন্স, ব্ল্যাক ওয়াচ, ব্ল্যাক সানগ্লাস। এই ছেলেটা আর কত রুপ নিয়ে হাজির হবে, কে জানে! তিতিক্ষা ড্যাব ড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার নাকটা আলতো করে টেনে দিলো। নক্ষত্র ওর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বললো,

–“বর পছন্দ হয়েছে? পেট টানটান আছে তো? ভাল করে দেখে নাও।”

তিতিক্ষা কথাটা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। ইস! এই ছেলেটা ওকে লজ্জা দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। পেট টানটান হওয়ার কথাটা আর কতবার ওকে শুনতে হবে, কে জানে! তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। নক্ষত্র বললো,

–“চলো! আমাদের বের হতে হবে।”

তিতিক্ষা আরেক দফ অবাক হলো। কোথায় যাবে? কোথাও যাওয়া জন্য নক্ষত্র ওকে নিতে এসেছে? আচ্ছা! এর জন্যই তাহলে ওর আম্মু ওকে সাজতে বলেছে। তার মানে সবাই জানত আজকের নক্ষত্র আসবে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেল। ওকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না। মামনি নক্ষত্রকে বসতে বললো। নক্ষত্র আজকে আর বসলো না। মামনির থেকে বিদায় নিয়ে সে তিতিক্ষাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওরা গাড়িতে গিয়ে বসলো। নক্ষত্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। তিতিক্ষা অভিমানি গলায় বললো,

–“আপনি আসবেন আমাকে বললেন না কেন?

নক্ষত্র মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,

–“বলে আসলে তো কেউ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাতো না।”

ইস! এই ছেলে আসলেই বড্ড ফাজিল। তিতিক্ষা চুপ করে গেল। কিই বা আর বলবে? বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিতিক্ষা বললো,

–“আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”

নক্ষত্র মুচকি হেসে। ড্রাইভ করতে করতে তিতিক্ষার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,

–“আমরা এখন যাচ্ছি আপনার শ্বশুড়বাড়ি।”

তিতিক্ষা চোখ বড় বড় নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। ওরা নক্ষত্রদের বাসায় যাচ্ছে কথাটা শুনে তিতিক্ষার ভয়ও লাগছে, আবার ভালোও লাগছে।

তিতিক্ষার চুল গুলো অবাধ্য বাতাসে উড়ছে। নক্ষত্র মিটিমিটি হাসছে। তিতিক্ষা বাইরে দিকে নজর দিলো। রাস্তাতে মেয়েরা বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পড়ে বের হয়েছে। ছেলেরা পাঞ্জাবী। ছোট বাচ্চারাও আজকে বসন্ত বরণের আয়োজনে উপস্থিত হয়েছে। ছোট মেয়েরা কেউ কেউ শাড়ি পড়েছে। মাথায় তাদের ফুলের ক্রাউন। চারদিকে বসন্তের গান শোনা যাচ্ছে । ফুলের দোকান গুলোতে ভিড় জমেছে। রাস্তায় আলাপনা দেওয়া হয়েছে। হরেক রকমের রং দিয়ে আলাপনার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তিতিক্ষা বাইরে দিকে তাকিয়ে এসব দেখছিলো। হঠাৎ করে নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত টেনে ওর আঙ্গুলের ভাজে আঙুল গুঁজে দিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র এমন ভাব করছে যেন সে কিছুই করেনি। নক্ষত্র মিটিমিটি হেসে বললো,

–“আগের তুলনায় একটু গোলুমলু হয়েছ। তবে মন্দ লাগছে না।”

তিতিক্ষা লজ্জা পেলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার একটা হাত একহাতে ধরে আছে। আর এক হাতে ড্রাইভ করছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার লজ্জাটাকে আর একটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বললো,

–“তোমার লজ্জা মাখা গোলুমলু গাল দু’টো আমার হৃদয় হরণের অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে আমার হৃদয়টাকে আর হরণ করো না। সে পূর্বেই মারাত্মক ভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে।”

তিতিক্ষা আর নক্ষত্রের দিকে তাকালো না। এই ছেলেটা ভারী দুষ্টু। এতদিন পর দেখা হলো। আর সে বার বার ওকে লজ্জা দিচ্ছে। যথাসময়ে নক্ষত্র ওদের বাসায় পৌঁছে গেল। মেইন গেট দিয়ে ওরা ঢুকে গেল। এপাশে বড় ফুলের বাগান। আর অন্য পাশে বাগানের মাঝখানে সাদা রংয়ের একটা দোলনা। তার একটু দূরে পানির ফোয়ারা; অনবরত পানি পড়ছে। সুন্দর পরিষ্কার পরিছন্ন আর পরিপাটি করে সব সাজানো। বাগানের ফুলের ঘ্রাণে চারপাশটা আরো মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। বাসার ঠিক দরজার সামনে গাড়িটা থামলো।

নক্ষত্র গাড়ি থেকে নেমে একটা ছেলের দিকে গাড়ির চাবিটা ছুঁড়ে দিলো। ছেলেটা হেসে চাবিটা ক্যাচ ধরে নিলো। নক্ষত্র ছেলেটাকে গাড়িটা পার্ক করতে বললো। নক্ষত্রদের বাগানে কোনো কিছুর আয়োজন চলছে। অনেকজন সেখানে সাজানোর কাছে লেগে গেছে। নজরকাড়া সৌন্দর্য নিয়ে বাগানটা সাজানো হচ্ছে।

দু’জনেই একই সাথে বাসায় ঢুকলো। ওদের বাসাটা তিনতলা। পুরোটাই ওরা ব্যবহার করে। বিশাল এড়িয়া নিয়ে বাসাটা তৈরী। তিতিক্ষাকে দেখে নক্ষত্রের আম্মু জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করলো। ড্রয়িংরুমে আরো অনেকজন মহিলা বসে ছিলো। এক একজনের সাজ মাথা ঘুরে যাওয়ার মত। উনাদের ড্রেসাআপ দেখে মনে হচ্ছে উনারা হাই সোসাইটি মানুষ। একজন মহিলা নক্ষত্রের আম্মুকে বললো,

–“এই পুতুলটা কে গো মৃধা।”

নক্ষত্রের আম্মু হেসে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র একটু দূরে ফোনে কথা বলছে। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার থুতনি ধরে বললো,

–“এই পুতুলটা হলো আমার রাজকুমারের রাজরাণী।”

নক্ষত্রের আম্মু সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তিতিক্ষা উনাদের সালাম দিয়ে কথা বললো। অদ্রি এসে তিতিক্ষাকে জড়িয়ে ধরলো৷ হাত ধরে টানতে টানতে তিতিক্ষাকে টেনে নিয়ে চলে গেল। নক্ষত্রদের বাসায় মিঃ আবরারের বিজনেস পাটনার এবং তাদের বউরা এসেছে। অদ্রি তিতিক্ষাকে বাগানে আনলো। বাচ্চারা মজা করছে, একটা লম্বা টেবিলের উপর হরেক রংয়ের আবির রাখা। পাশের টেবিলে মিষ্টি, সন্দেশ এসব রাখা। বাচ্চারা খাচ্ছে আর নাচছে। বাচ্চাদের গায়েও বসন্তের পোশাক। বসন্ত কি, ওরা না জানলেও মজা লুফে নিতে ছাড় দিচ্ছে না।

একটু পর আফান, রুহান, সাফওয়ান, মিষ্টি, সোনালী আসলো। মিষ্টি আর সোনালী নক্ষত্রের ফ্রেন্ড। ওরা এসে আরো হইচই শুরু করে দিলো। ওরা তিতিক্ষাকে ঘিরে ধরেছে। তিতিক্ষা মুচকি হেসে ওদের সাথে কথা বললো। মিষ্টি তিতিক্ষাকে দেখে বললো,

–“বুঝলাম! নক্ষত্র কেন তিতিক্ষার জন্য পাগল। এজন্য হারামিটাকে বারো’টা ভাষায় বারো বার প্রোপোজ করেও মন গলাতে পারিনি।”

একথা শুনে তিতিক্ষা হাসলো। সোনালী হাসতে হাসতে হাসতে বললো,

–“জানো, তিতিক্ষা? মিষ্টি যখন নক্ষত্রকে প্রোপোজ করতে নক্ষত্র তখন কি বলতো?”

রুহান সোনালীর মাথায় টোকা মেরে বললো,

–“তিতিক্ষা জানবে কি করে? তুই বলে আমাদের উদ্ধার কর। আর তুই এত হাসিস তোর মুখ ব্যাথা করে না?”

সোনালী রুহানের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিলো। আফান আর সাফওয়ান চুপ করে আছে। কারন মিষ্টি আর সোনালী কথায় কথায় হাসতে হাসতে দুম করে মেরে দেয়। মার থেকে বাঁচার জন্য ওরা কিছুক্ষণের জন্য মুখটাকে রেস্ট দিচ্ছে। মিষ্টি মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,

–“জানো? ফাজিলটাকে আমি প্রোপোজ করলে সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলতো, ওহ! ভালো তো।”

মিষ্টির কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। তিতিক্ষাও হাসলো। আসলে ওরা সবাই খুব ভালো বন্ধু। মিষ্টি মজা করে নক্ষত্রকে প্রোপোজ করতো।
এটা ওর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। একটু পর নক্ষত্র এসে তিতিক্ষাকে বললো,

–“অদ্রি, তিতিক্ষা, আম্মু তোমাদের ডাকছে।”

তিতিক্ষা একবার নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে অদ্রির সাথে চলে গেল। সবাই চেয়ার পেতে বসে আছে।
সোনালী নক্ষত্রকে পিঞ্চ মেরে বললো,

–“নজর কাড়া ফুলকে ফেলে রাখতে নেই। কখন কে এসে তার ঝুলি তুলে নিবে।”

নক্ষত্র সোনালীর কথা শুনে মুচকি হাসলো। বাগানে মেতে রাখা চেয়ারে সেও আরাম করে বসে বললো,

–“ফুলটাকে নক্ষত্রের নামে দলিল করা হয়ে গেছে। নজর কাড়া ফুল বলেই তাকে সবার আগে আমার ঝুলিতে সাজিয়ে রাখার কাজ সমাপ্ত। ”

To be continue…..!!

(গল্পটা অতি শ্রীঘই সমাপ্ত করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here