-‘এলোকেশী কন্যা’-
[৩৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
ওরা পৌঁছাল প্রায় বারো’টা নাগাদ। ওদের দেখে আকাশ বিশ্রী একটা গালি দিয়ে গিয়েও থেমে গেল। বিশেষ করে আলো আর নিতুকে দেখে।
কালকে থেকে কাজ করতে করতে ওর জান শেষ,
আর হতচ্ছাড়া বন্ধুগুলো এতক্ষণে আসল।কেন একটু তাড়াতাড়ি আসা যেতো না? বাড়িটা বড় উঠান ওয়ালা! তার একপাশে একদল বাচ্চারা কোরআন তেলাওয়াত করছে। সুমধুর সেই সুর! বাচ্চাগুলো হয়তো কোনো মাদ্রাসার ছাত্র।তাদের কোরআন তেলাওয়াতের শুদ্ধ উচ্চারণে’ই বোঝা যাচ্ছে। তার একটুদূরে রান্না-বান্নার কাজ চলছে। বাবুর্চিগণ ব্যস্ততার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন,যেন হাফ ছাড়ারও সময় নেই। আশেপাশের তিনটা গ্রামের মানুষের খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা আজ দুপুরে এখানে নিমন্ত্রিত।আর পাশের বড় মাঠে প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে একবারে প্রায় পাঁচ’শজন খেয়ে উঠতে পারবে। তাছাড়া দান-খয়রাত, দোয়া- মহফিল এবং কবর জিয়ারত করা কালকে হয়ে গেছে। আজ শুধু মানুষ খাওয়ানো হবে। বন্ধুদের সাথে কথা বলে আকাশ হালকা পাতলা আপ্যায়নের ব্যবস্থা করল। অনেকে দাঁড়িয়ে রোদদের দেখছে। ঢাকা শহরের মানুষ বলে কথা। আকাশের আব্বু আম্মুসহ চাচারাও এসে কথা বললেন।রোদ’রাও বিনয়ীভাবে সালাম দিয়ে খবরা-খবর জানল। একটুপরেই খাওয়ানো শুরু হবে নয়তো রাত হয়ে যেতে পারে। রাত হলে তো আরেক সমস্যা।তাতে আবার গ্রাম! তাছাড়াও অনেক মানুষের ব্যাপার! আকাশ বন্ধুদের সঙ্গে কথার বলার মাঝে বাইরে থেকে ডাকল পড়ল। আকাশের বাবা খুব রেগে চেচাঁমেচি করছেন।এতগুলো মানুষ খাবে অথচ খাওয়ানো মানুষরা এখনো আসে নি। এভাবে দু’একটা কথার মাঝে অনেকে জড়ো হয়ে গেল।
বাইরে এতজনের চেচাঁমেচি শুনে রোদ’রাও বের হয়ে ঘটনা শুনল। এতগুলো মানুষ, কীভাবে কী করবেন?এচিন্তায় আকাশের বাবার প্রেসার বেড়ে গেল। যে এই দায়িত্ব নিয়েছিলেন উনি লাপাত্তা! আজ বুঝি মান-সন্মান শেষ। আকাশ সবাইকে শান্ত হতে বলাতে ধমক খেয়ে চুপ থাকল। রোদ আর রোহান আকাশের বাবার পাশে বসল৷ উনি কিছু বলার আগে রোদ বলে উঠল,
”আংকেল, আমরা নয়জন আছি।আশেপাশের
দশ বারোজন ছেলেকে ডাকুন আর এই বাড়ির কয়েকজন।”
রোদের কথা শুনে আকাশকে রোদকে টেনে দ্রুত মোড়ের দিকে গেল। হাতে সময় নেই, আগে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। নয়তো সব শেষ! মোড়ের চা’য়ের দোকানটা বখাটেদের আস্তানা।
আশা করা যায়, খাওয়াতে ওরা ভালোই পারবে ওরা। আকাশ ওদেরকে বুঝিয়ে কাজে লাগানোর কথা বলল। আর বোঝানোর ক্ষেত্রে রোদ বেশ পটু। রোদকে টেনে নিয়ে যাওয়া দেখে আকাশের বাবা খুব বিরক্ত হলেন, বকলেনও। এখন বন্ধুর সাথে গলাগলি করার সময়। অপদার্থ একটা!
কাজের কথা হচ্ছিল অর্কমাটা ছেলেটাকে টেনে নিয়ে চলে গেল। এটা আর মানুষ হবে না। রোদ চা’য়ের দোকানে ঢুকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সালাম দিলো। ক্যারাম খেলা, আড্ডা দেওয়া,চা খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই ওর দিকে তাকাল। রোদ তখন মুচকি হেসে বলল,
“আপনারা আমাকে সাহায্য করতে পারবেন? চা, সিগারেটের, বিল আমি দিবো।”
একথা শুনে একজন রোদের আগা-মাথা পরখ করে নিলো। অন্যজন আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“কী করতে হইব?”
“খাওয়াতে হবে। শেখ বাড়িতে আপনাদের জন্য যে আয়োজন করা হয়েছে, তার জন্য’ই। আর আমার কেন জানি মনে হয়েছে, গ্রামের মানুষের কদর গ্রামের মানুষই বোঝে। অর্থাৎ আপনাদের
গ্রামের মানুষদের অাপ্যায়ন আপনারাই ভালো করতে পারবেন। তাছাড়া আমরা তো একদিনের অতিথি, কাউকে চিনিও না জানিও না। হয়তো
তেমনভাবে খাওয়াতেও পারব না।এজন্য সাহায্য চাচ্ছি! তাছাড়া এত সুন্দর গ্রামের সন্মান বজায় রাখা আপনাদের’ই দায়িত্ব, তাই না?”
“তা ঠিক।”
“গরমে এই কাম করুম না।” (অন্যজন)
” কাজ শেষে আমি আপনাদের খুশি করব।”
রোদের এ-ইঙ্গিত বুঝতে কারো সময় লাগল না।
টাকার কাছে সবাই কাবু। রোদ গল্প করতে করতে ওদের চা, সিগারেট খাওয়াল। ফ্রি হয়ে গল্পও করল। নিরংহকার দেখে রোদকে ওরা বেশ পছন্দ করল। বসেই তো থাকবে কাজটা করলে সমস্যা কী? তাছাড়া সবাই গ্রামের চেনা-জানা মানুষ।প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে সবাই রাজি হয়ে গেল।
রোদের টেকনিকটাও কাজে লাগল। লোক পাচ্ছে না, একথা সে প্রকাশ করল না। নয়তো এদেরও রাজি করানো যেতো না। ভাবত, ঠেলায় পড়েই এসেছে। এখানে আছে তেরোজন, রোদরা বন্ধুরা নয়জন, বাড়ি থেকে সাতজন। তাহলে হবে মোট ঊনত্রিশ জন। রোদ ওদেরকে ছয়জনকে যোগাড় করতে বলল। পঁয়ত্রিশজন পেলে ভালো হতো।
কারণ গ্রামের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, বাড়ির সব মানুষ। এতজনকে খাওয়ানো তুচ্ছ ব্যাপার না।কাল ঘাম ছুটে যাবে! ছেলেগুলো একে অপরের বন্ধুদের কল দিয়ে ডাকল। এবং আশ্বস্তও করল আরো ছেলে পাওয়া যাবে। বখাটে হলেও সবাই বেশ মিশুক। রোদের সঙ্গে অল্পতেই মিশে গেছে।
একটুপরে ছয়জন না আসল এগারোজন।এখন হলো চল্লিশ জন। রোদ সবাইকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসল। আর আকাশকে আড়ালে ডেকে বলল,
“ছেলেগুলোকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা কর। নয়তো খুধা পেলে গায়েব হয়ে যাবে।”
রোদের কথামতো আকাশ আগে ছেলেগুলোকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করল। রোদ ভুল কিছু বলে নি। এরা কামচোর! অবশেষে সমস্যার সমাধান হলো; সবাই হাফ ছেড়েও বাঁচল। নয়তো কী যে হতো!ছেলেগুলো খেয়ে ঝটপটকাজে লেগে গেল। ততক্ষণে গ্রামের লোকেরা আসতে শুরু করেছে। রোদ প্রতিটা টেবিলে খাওয়ানোর লোক নির্ধারণ করে দিলো, নতুবা ঝামেলার সৃষ্টি হবে। একবার হট্টগোল হলে পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ওদের দায়িত্ব হবে যার যার টেবিলে নজর রাখা। যাতে খেতে কারো সমস্যা না হয়। তারপর শুরু হলো; খাওয়ানোর যুদ্ধ। বন্ধুরাও খাবারের গামলা তুলে কাজে লেগে গেল। না পরোয়া করল গরম আর না ভিড়। রোদ আশেপাশে মেঘদের খুঁজে পেলো না। দু’জনে কোথায়, কে জানে! রোহানের হাতে ভাতের গামলা আর রোদের হাতে ডালের।একটু পর, রোহান এসে ডালের গামলা রোদকে দিয়ে ভাতেরটা নিলো। মানুষ ডাল কম খায় আর যা কম খায় তা চায় কম। ফলে দেওয়ার কষ্টও কম হবে। ওর এই যুক্তি দেখে রোদ আর কথা বাড়াল না। নয়তো এখানেই রাত হবে। সব কয়টাকে সে ভালো করেই চিনে। সময় যত অতিবাহিত হতে লাগল মানুষের ভিড়ও তত বাড়তে লাগল।তিন ব্যাচ উঠার পর, রোদ শোভনকে বলল নিতুদের ডাকতে। অনেক সময় পেরিয়ে গেছি ওরাও খেয়ে নিক। শোভন মুখে মাংস পুরে বলল,
“নিতু কে?”
“তোর শশুড়ের মেয়ে।”
এবার শোভনের ওর বউয়ের কথা মনে পড়ল।
তাই তো! ওর বউ কোথায়? সে তো ভুলেই গেছে ওর বউ আছে। আর নিতুর পুরো নাম ‘মুনিয়া ইসলাম নিতু।’ কেউ মুনিয়া ডাকে; কেউ নিতু!
এজন্য শোভনেরও মাঝে মাঝে গুলিয়ে যাচ্ছে।
নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তাই হয়তো। শোভনের
হাসি দেখে রোদ বিরক্ত হয়ে ভাতের গামলা নিয়ে চলে গেল। ওর এক একটা বন্ধু এক এক গুনের অধিকারী। হাজারবার বলেও এরা শুধরাবে না।
আলো মেঘ এবং নিতুসহ আকাশের বোন’রাও এসে বসল। আকাশ তখন হন্তদন্ত হয়ে এসে রোদকে বলল,
“মেঘদের রুমে খেতে দে ভাই, এত ভিড়ে খেতে পারবে না।”
”ওদের সব পরিবেশেই মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে। কাছের বলে এত খাতিরের দরকার নেই, কাজে যা!”
আকাশ এত বলেও রোদকে রাজি করাতে পারল না। অগত্যা সে স্থান ত্যাগ করল।এখানে সবাই নিমন্ত্রণিত। তাহলে ওরা কেন আলাদা খাবে?
তাছাড়া সব জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।এই গুন আয়ত্ত করা আবশ্যক । তাছাড়া এই নিয়ে সমালোচনা হতে পারে।এটা গ্রাম, ভুললে চলবে না। এদিকে আলো চুপ করে বসে রোদকে দেখছে। হাসি মুখে রোদ মানুষদের খাবার দিচ্ছে। ওর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে।
নাকেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।ওর চুলের গোড়া থেকে ঘাম ঝরে ঘাড় বেয়ে সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সে বাহু দিয়ে ঘামার্ত মুখটা মুছছে। পান্জাবিটা ভিজে ওর সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি’টা দেখা যাচ্ছে। তবে ব্যস্ত রোদকে দেখতে বেশ লাগছে! হঠাৎ আলোর মনটা খারাপ হয়ে গেল। রোদকে সে এখন অবধি কিছু খেতে দেখে নি। তখন নাস্তা করার আগেই চেচাঁমেচি শুনে বেরিয়ে এসেছিল। তারপর তার দেখায় নেই।
মাঝ-রাস্তায় একটা স্যান্ডুইচ খেয়েছিল। এখন বাজে দুই’টা সাতচল্লিশ! রোদ না খেয়ে থাকতে পারে না; ওর সমস্যা হয়। অথচ আজ যেন তার খেয়ালই নেই। আলো রোদের খাওয়া নিয়ে বসে ভাবতে থাকল।
এতকিছুর মধ্যে একবারও ওর মনে হলো না যে,’ রোদকে মেয়েরা দেখছে, হাসাহাসি করছে, নজর রাখছে, ওর হিংসা হচ্ছে, রোদকে লুকিয়ে রাখতে মন চাচ্ছে। সচরাচর গল্প আর মুভিতে যেমনটা দেখা যায়। এসব কোনো ভাবনায় ওর মস্তিষ্কে আসল না। কারণ এসব বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীদের ভাবনা। শুধু রোদের না, যারা যারা কাজ করছে সবার’ই একই অবস্থা! তার মানে এই না সুদর্শন শুধু রোদ’ই। তাছাড়া কাজ করলে ঘামবেই আর ঘামলে পরণের পোশাকটা ভিজে শরীরের সঙ্গে লেপ্টাবে’ও। এটা নিয়ে অহেতুক ন্যাকামির কিছু নেই। তবে এই ঘাম বুকে বসে ঠান্ডা লাগার ভয় আছে। কী আর করার! সবাই ততক্ষণে খেতে শুরু করেছে।আলো নিজে খাচ্ছে আর মেঘকেও খাওয়াচ্ছে। রোহান ওদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে। রোদ ফোনে কথা বলে ওর বরাদ্দকৃত টেবিলে গিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“কারো ভাত আর লাগবে?”
ওর কথার প্রত্যুত্তরে সম্পর্কে ভাবি হয় উনি হেসে বললেন,
“না ভাই, একটার অত্যাচারেই রাইতে ঘুমাইতে হারি না।”
একথা শুনে রোদ হতবাক! উনার কথাটা প্রথমে কেউ ধরতে পারে নি। পরে বুঝে সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। আলো বুঝেছে যে রোদ ‘কেউ ভাত নিবে নাকি’ জিজ্ঞাসা করেছে! কিন্তু ওই ভাবিটা ‘ভাত ও আর, এই দু’টো শব্দকে একসাথে জুড়ে দিয়েছে। রোদ সরল মনে স্বাভাবিকভাবে জানতে চেয়েছিল অথচ ভাবি উল্টো ধরে বসে থাকল।
উনার জবাবে রোদ কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো।এমন শব্দ সে কখনো উচ্চারণ না। ভাবির উপরে কেন জানি আকাশের খুব রাগ হলো। তাই সে এগিয়ে এসে বলল,
“ভাবি, মজা তার সাথেই করা উচিত, যার সাথে মজা করার সম্পর্ক জায়েজ।”
“রাগো ক্যারে?”
“আপ…।”
অবস্থা বেগতিক দেখে রোদ ইশারায় আকাশকে থামিয়ে দিলো। দু’টো শব্দের জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। রোদ ভাবে নি কথাটা উনি এভাবে ধরবে। তাই পরিবেশ ঠান্ডা করতে রোদ’ই মুচকি হেসে বলল,
”কেউ আর ভাত নিবেন?”
ওর একথা শুনে সবাই একদফা হেসে খেতে শুরু করল। মেয়েরা কতরকম ভাবে যে কথা প্যাচাতে পারে ;এটা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ! এজন্য’ই ভেবে চিন্তে কথা বলা অাবশ্যক। এই খাওয়ানো চলল, রাত আট’টা অবধি। সবার শেষে খেলো ওরা বন্ধুরা। খাবারের গন্ধে ওদের ক্ষুধা হারিয়ে গিয়েছিল। যদিও আলো সবাইকে একগ্লাস করে
শরবত খাইয়েছিল।রোদকে তো একা দেওয়া যায় না, তাই সবার জন্য’ই করেছিল। ওদের এখন বেহাল দশা! তাই মেয়েরাই ওদেরকে খাবার বেড়ে দিলো। রাতেই ওদের ফোরার কথা থাকলেও তা আর সম্ভব হলো না। আকাশের বাবা বিকেলে সবার জন্য পোশাক কিনে এনেছেন। ছেলেগুলো আজ অনেক করেছে। নয়জন বন্ধু গোসল সেরে কলপাড়ে কাপড় ফেলে এসেছে। কারো ধোয়ার ধৈর্য্য নেই! তারা একে অপরকে বলেও ছিল,’ভাই ধুয়ে দিস।’ কিন্তু নয়জন’ই উধাও। আলো হাত ধুতে গিয়ে কাপড়গুলো দেখে আকাশের আম্মুকে খুঁজে বের করল। উনার থেকে ডিটারজেন নিয়ে নয়জনের পোশাক ধুতে শুরু করল। সবগুলোর পোশাকে ডাল আর মাংসের ঝোলের দাগ।এটা না ঘষে তুললে দাগ থেকে যাবে। রোহান পানি নিতে এসে আলোর কাজ দেখে হতবাক।মেয়েটা পাগল নাকি? বন্ধুর বউ কাপড় ধুয়ে দিচ্ছে, ছিঃ! লজ্জাজনক একটা ব্যাপার। কলপাড়ে অন্ধকার হওয়াতে কেউ ওকে খেয়ালও করে নি। রোহান হাতের জগটা রেখে বলল,
”পাহাড়ি ফুল সাইড দাও আমি পানি তুলে দিচ্ছি।”
“না, না, আমি পারব ভাইয়া।”
রোহান শুনল না। সে কল চাপতে থাকল আর আলো কাপড়গুলো ধুতে লাগল। কল চেপে এত পানি তুলতে আলোর কষ্টও হচ্ছিল।যাক রোহান আসাতে ভালোই হয়েছে। দু’জনে টুকটাক গল্পও করছে। আকাশ পা ধুতে গিয়ে ওদের দেখে সেও এগিয়ে আসল। আলোর কাজ দেখে আকাশও অবাক। ওদের জিন্সপ্যান্ট গুলো পানিতে ভিজে ভারী হয়ে গেছে। আলো প্যান্টগুলো বালতির পানিতে ধুয়ে টেনে আর তুলতে পারছে না।খুব ভারী! আকাশ দ্রুত নিয়ে ওকে সাহায্য করল। তারপর তিনজনে মিলে সব কাপড় ধুয়ে উঠানে বাঁধা রশিতে মেলে দিলো। তখন মেঘের ডাক শুনে আলো দ্রুত পায়ে সেদিকে গেল। আকাশ আর রোহান একে অপরের দিকে তাকাল। আজ দুই বন্ধুরই আলোর প্রতি সন্মান’টা বেড়ে গেল।
ওরা ওর কাজে যতটা না অবাক হয়েছে তারচেয়ে শতগুনে খুশি হয়েছে। রোহান বলল,
“যে যেমন সঙ্গী’ও পায় তেমন।”
“তা ঠিক।”
তারপর ওরা’ও চলে গেল ওদের রুমে। ব্যাচেলার
বন্ধুরা এক রুমেই থাকবে। কী আর করার ওদের বউ নেই!
রোদ একবার আলোকে খুঁজতে এসে ওদের দেখে সরে গিয়েছিল। এবং আলো আর বন্ধুদের প্রতি ওর গর্ব’ও হলো।সত্যি বলতে, সু-সম্পর্ক গড়তে পবিত্র মন’ই যথেষ্ট। সব জায়গায় লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে নেই। আলো পারত, রোদেরগুলো ধুয়েই সরে যেতে। অথচ সে তা করে নি। ওর কষ্ট হবে জেনেও সব কাপড় ধুয়ে দিয়েছে। কারণ সে জানে, সর্বদা হাত চিৎ নয় উপুর করাও জানতে হয়। তবে’ই না সম্পর্কের শেকল মজবুত হয়।
To be continue……!!