-‘এলোকেশীে কন্যা’-
[০৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
মেঘকে এভাবে ছুটতে দেখে রোদ দ্রুত হাঁটু গেড়ে বসে ওকে বুকে জাপটে ধরল। অকস্মাৎ মুখ থুবড়ে পড়লে মেঘ পুনরায় পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেতো। তখন ব্যাপারটা হিতে বিপরীত হতো। মেঘ নামার জন্য খুব ছোটাছুটি করলেও রোদ ওকে কিছুতেই ছাড়ল না। আলো ততক্ষণে দৌড়ে ওদের চোখের আড়াল হয়ে গেছে। রোদ কোনোমতে মেঘকে শান্ত করিয়ে ওই মহিলার কাছে গিয়ে ভদ্রতাসূচক হেসে জিজ্ঞাসা করল,
“ওখানে কী হয়েছে? আর আপনার কথা শুনে মেয়েটা এভাবে দৌড়ে চলে গেল কেন?”
“ওই ছামনের পাহালে মুন নামের একখান মাইয়ার কল্লাকাটা লাছ পাওয়া গেচে। মুনে হয়, ওই অমানুচ জুঙ্গিলা ওলে এবা করচে।”
কথাটা বলে মহিলাটা ভয়ার্ত চোখে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। রোদকে কিছু বলার সুযোগটুকুও দিলো না। জঙ্গি নিয়ে এখানকার সবার মনে একটা আতঙ্ক আছে। এজন্য উনি আর কথা বাড়ালেন না। রোদ মূল ঘটনা জেনে মেঘকে নিয়ে রিসোর্টের দিকে পা বাড়াল।
এই নির্দয় বন্য জঙ্গিদের কবলে আর কতজন প্রাণ হারাবে, কে জানে? তাছাড়া প্রশাসনের দিক থেকেও এখন অবধি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। কিন্তু কেন? এর কারণ এখনো অজ্ঞাত। এখানকার স্থানীয় পাহাড়ি মানুষগুলোও জঙ্গিদের ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে দিন কাটাচ্ছে। উনাদের এই ভয়ের সমাপ্তি কবে হবে কারো জানা নেই।
রোদকে আলোর বাড়ির দিকে যেতে না দেখে মেঘ ছলছল চোখে তাকিয়ে অভিমানী সুরে বলল,
“দাভাই, আমরা মিষ্টির কাছে যাব না? মিষ্টি এভাবে দৌড়ে চলে গেলে কেন?”
“ওর একটা জরুরী কাজ মনে পড়েছে তাই এভাবে দৌড়ে গেল। আমরা নাহয় পরে তোমার মিষ্টির সঙ্গে দেখা করতে যাব!”
মেঘ কিছুটা মুখ ভার করে ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,”আচ্ছা।”
রোদ মৃদু হেসে টুকটাক কথা বলতে বলতে মেঘকে নিয়ে রিসোর্টে প্রবেশ করল। রোদ মূলত ইচ্ছে করেই আলোর পিছু গেল না। কারণ মুনের গলা কাটা লাশ দেখলে মেঘ খুব ভয় পেতো। রোদ নিষেধ করলে মেঘ উঁকিঝুঁকি মেরে আগে লাশই দেখত। তাছাড়া নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি বাচ্চাদের ঝোঁকটা কেন জানি একটু বেশিই থাকে। আর মেঘ তো আরো এক ধাপ এগিয়ে। দাভাই কেন নিষেধ করলে? দেখলে কী হবে? কেন দেখব না? এসব ভেবে সে কৌতুহল বশত আগে লাশ পরীক্ষা করতে যেতো।
যেখানে গলা কাটা লাশ দেখে বড়রাও থমকে যায়। সেখানে মেঘ তো নিতান্ত একটা বাচ্চা। মূলত এজন্যই রোদ ওকে নিয়ে রিসোর্টে ফিরে এসেছে। তবে আলোর জন্য ওর কেন জানি খুব চিন্তা হচ্ছে। রোদ মুনকে চিনে না। সেদিন রোদের জ্ঞান ফেরার পর সে মুনকে দেখেনি। মুন ততক্ষণে ওকে পাগল ভেবে ভয়ে পালিয়েছিল। আলোর সঙ্গে মুনের কী সম্পর্ক? রোদ তাও জানে না। আলোর এভাবে ছুটে যাওয়া দেখে, রোদ মুনকে আলোর নিকট আত্মীয় ভেবে নিলো। ওর কাছের কেউ নাহলে তো এভাবে ছুটে যেতো না।
রোদ রুমে ফিরে মেঘকে বসিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওষুধ খাইয়ে নিজেও খেলো। গত রাতে রোদ ওয়েটারকে একটা ফোনের ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিল, কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই।
অফিসের কোনো খবর নিতে পারে নি। ওদিকে কী হচ্ছে কে জানে! মেঘ এখনো মুখ ভার করে বিছানায় চুপটি করে বসে আছে। ওর অবুজ মনে বড্ড অভিমান জমেছে। আলো কেন ওকে বলে গেল না? একটু বলে গেলে কী হতো? কালকে রাতে মেঘ আলোকে ওর পছন্দের চিপ্স, চকলেট, কিন্টার জয়, কোকাকোলা, ডোরা কেক দিলো। আর আজ আলো ওকে না বলেই দৌড়ে চলে গেল। এই নিয়েই মেঘের অবুজ মনটা খুব খারাপ। রোদ সামনের সোফায় বসে নিশ্চুপ হয়ে মেঘকে দেখছে। মাত্র একটা দিনের ব্যবধানে মেঘের মুখটা অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চঞ্চল বাচ্চাটা ভয়ে মিইয়ে গেছে। ওর মাথায়, হাতে, পায়ে, সাদা ব্যান্ডেজ। মন খারাপের ছাপ স্পষ্ট ওর ফর্সা গলুমলু মুখটাতে। মেঘের এমন নিস্তব্ধতা
দেখে রোদ উঠে মেঘকে কোলে নিয়ে পুরো রুম পায়চারী করতে লাগল। মেঘ রোদের গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলাচ্ছে। এভাবে থাকতে থাকতে মেঘ ধীরে ধীরে ঘুমে তলিয়ে গেল। রোদ মেঘকে শুইয়ে কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে পাশে একটা কোলবালিশ দিলো। তারপর মেঘের দিকে একবার তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিচে গেল
আলো প্রাণপণে দৌড়ে মুনদের বাড়িতে প্রবেশ করল। বাড়ি ভর্তি মানুষে গিজগিজ করছে। মুনের মা উঠানে বসে বিলাপ করে কাঁদছেন। তবে মুনের লাশ কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আলো কাঁদতে কাঁদতে এই ঘর ও ঘর খুঁজে মুনকে পেলো না। আলোর দাদী আলোকে এভাবে ছুটতে দেখে জোর করে থামিয়ে বললেন,
“মুনরে কব্বর দিতে নিয়া গেছে। ওর কল্লা বস্তা সিলাই করা সূচ দিয়া কোনোমতে আঁটকায়া কব্বর দিবে।”
কথাটা বলে দাদী আঁচলে মুখ ঢেকে শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন। আলো একথা শুনে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। কালকে রাতে সে মুনকে দাদীর কাছে রেখে গিয়েছিল। মুন রাতে বাইরে কেন গিয়েছিল? আর কে বা ওর এই অবস্থা করেছে? জঙ্গিরা তো বৃষ্টির দিনে এদিকে আসে না। তাহলে?
এসব প্রশ্নই আলোর মনে হানা দিলো। উত্তর না পেয়ে সে হাঁটুতে মুখ গুজেঁ নিরবে কাঁদতে লাগল। মুন ওর দুই বছরের ছোট। সে খুব চঞ্চল আর সরল মনের একটা মেয়ে। মুনরা এখানকার আদিবাসী। ছোট থেকেই আলোর কোনো বান্ধবী নেই, মুনই ছিল ওর বোনরুপী বান্ধবী। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দু’জনের একসঙ্গে বড় হয়ে ওঠা, চলাফেরা, খুনশুটি নিয়ে ওদের দিন গুলো কাটছিল। কিন্তু আজ মুন ওকে একা রেখে নিষ্ঠুরের মতো চলে গেল।
একটুপরে প্রতিবেশীদের কানাঘুসাতে শোনা গেল, মৃত মুনকে বিবস্ত্র অবস্থায় কলা বাগানে পাওয়া গেছে। আর ওর কাটা মাথাটা একটুদূরে আলাদা ভাবে পড়ে ছিল। আলো এসব সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে ওর বাড়িতে চলে গেল। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শব্দ করে কাঁদতে লাগল।চোখ বন্ধ করলেই মুনের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা জ্বলজ্বল করে ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বার বার কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে মুনের বলা,’আলোবু’ ডাকটা। মুন ছিল, শ্যামবর্ণের নাক বোঁচা ছোট চোখের পাহাড়ি একটা মেয়ে। সে প্রায় আলোর হাতটা ওর কোলে নিয়ে আক্ষেপের সুরে বলত,’আলোবু তোমাল ছামী তোমালে মেলা ভালোবাছবে। তুমি কত্ত ফছসা (ফর্সা)। দেখতেও মাছাল্লাহ কত্ত সুন্দল।’
প্রায় একথা শুনে আলো একদিন ভাবলেশহীন ভাবে ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল,”ফর্সা হলে স্বামী নামক মানুষটা বেশি ভালোবাসে? একথা আদৌ কী সত্য?”
মুন খিলখিল করে হেসে উত্তরে বলেছিল,”হুম, তুমি তো জানো আলোবু সুন্দল জিনিছের দাম ছব ছময় বেশি। আল তোমাল মতো সুন্দল ফুল তো ছবাই পেতে চায়।”
মুনের একথা শুনে আলো চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। গ্রাম, শহর, দেশ, বিদেশ, সব জায়গায় মানুষ কেন জানি সাদা চামড়াকে একটু বেশিই প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর
এই মনোভাব হয়তো কেউ চাইলেও কখনো পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ সমাজের এক একজন মানুষ ভিন্ন মতের অধিকারী। কেউ কেউ তো গায়ের রং নিয়ে প্রতিবাদী ভাষণ দিয়ে নিজেও খুঁজে সাদা চামড়ার মানুষ। দিন শেষে ভালো মানুষের মুখোশ ছেড়ে সবাই নিজের রুপেই ফিরে আসে। এজন্যই হয়তো শ্যামবর্ণ মায়াবতীরা মনের কোণে আক্ষেপ লুকিয়ে রাখে। প্রতিনিয়ত এসব দেখে নিজেদের তুচ্ছ ভাবতে শুরু করে। সাদা চামড়ার মানুষের পাশে দাঁড়াতে কুণ্ঠাবোধ করে।
আলো বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলো। সে চোখ মুছে দেখে দাদী ওর পাশে মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আলো উঠে বসে কিছু বলার আগেই দাদী চিন্তিত সুরে বললেন,
“কইল রাইতে বাড়িতে..।”
উনি কথা শেষ করার আগে আলো উত্তর দিলো,”বৃষ্টির জন্য ফিরতে পারি নি। আর সন্ধ্যা হওয়াতে আমার ভালোর জন্যই উনি আসতে নিষেধ করেছিলেন।”
দাদী জহুরি চোখে আলোকে পরখ করে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“ওই পোলা তোরে বিরক্ত করেনি তো? আলো সত্যি কইরা ক আমারে!”
“না, উনারা যথেষ্ট ভালো মানুষ দাদীমা।”
তখন হঠাৎ বাইরে হৈচৈ শুনে আলো দাদীকে নিয়ে দ্রুত পায়ে বাইরে বের হলো। অনেক মানুষ জটলা করে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝতে না পেরে দাদী আলোকে নিয়ে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেলে। স্থানীয় মকবুল নামের একটা ছেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। দু’একজন যা পারছে তাই দিয়েই ওকে মারছে। আলো মকবুলকে অবস্থায় দেখে চমকে উঠল। তাৎক্ষণিক আজগুবি সব চিন্তা এসে ওর মাথায় ভর করল। সব চিন্তাকে মনের বিরুদ্ধে বিদায় দিয়ে সে মকবুলের দিকের তাকাল। ততক্ষণে মার খেয়ে মকবুলের রক্তারক্তি অবস্থা। মকবুলকে এভাবে মারতে দেখে দাদী পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করলেন। এবং উনার থেকে জানা গেল , ‘মকবুল মুনকে খুন করেছে। আর ওর রুম থেকে রক্তমাখা বড় রামদা পাওয়া গেছে।’
একথা শুনে আলো হতভম্ব হয়ে এক পা পিছিয়ে গেল। ওর জানামতে মুন আর মকবুল একে অপরকে খুব ভালোবাসত। তাহলে খুন করবে কেন? আলো আর কিছু ভাবতে না পেরে মাথা ধরে ওখানেই বসে পড়ল। প্রিয় মানুষটাকে এভাবে মারা যায়? তার মৃত্যুর ছটফটানি সহ্য করা যায়? আচ্ছা, মুনের রক্তাক্ত শরীর দেখে মকবুলের হৃদয় কাঁপে নি? বিবেকে কী একবারও বাঁধে নি? মুনের আঁকুতি মকবুলের কানে পৌঁছায় নি? এসব প্রশ্ন আলোর পুরো মস্তিষ্কে জুড়ে কিলবিল করছে। ওর পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। আলো মুনের পরিণতি দেখে বিরবির করে উচ্চারণ করল,” দরকার নেই আমার এমন ভালোবাসার। আমি ব বা বাসব না কাউকে ভালো। ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষ দু’টোই নিষ্ঠুর। আমি ভুলেও ভালোবাসার পুষ্প ফুটাব না আমার হৃদয়ে, ফুটাব না! কখনো ফুটাব না!”
কথাটা আওড়াতে আওড়াতে আলো ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
দুপুরের কড়া রোদকে উপেক্ষা করে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে রোদের উত্তাপ কমে আবহাওয়া শীতল হয়ে উঠেছে। ঘন মেঘ জানান দিচ্ছে বৃষ্টির আগমনি বার্তা। মৃদু বাতাসের গতি বাড়তে বাড়তে ঝড়ো বাতাস শুরু হলো। রাস্তার ধূলো-বালি বাতাসের তোড়ে অবাধ্য হয়ে উড়তে শুরু করল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা মাটির বুকে আছড়ে পড়তে শুরু করল। বৃষ্টির কারণে উড়ন্ত ধূলো গুলো পুনরায় রাস্তায় শান্ত হয়ে পড়ে রইল। ততক্ষণে
বৃষ্টি যেন প্রচন্ড আক্ষেপে পদবলয় পরে ঝমঝম শব্দ করে নৃত্য করতে ব্যগ্র।
রোদ দ্রুত জানালার থাই গ্লাস লাগিয়ে ওখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। থাই গ্লাস দিয়ে অাবছা ভাবে বৃষ্টির নৃত্য দেখা যাচ্ছে। আকাশে আরো ঘন মেঘ এসে ভীড় করেছে। এখন মধ্য দুপুর। অথচ কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে মনে হচ্ছে ঠিক সন্ধ্যা বেলা। রোদ প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে বাইরে দৃষ্টি রেখে আনমনে অনেক কথায় ভাবছে। তবে সব কথার সঠিক উত্তর মিলছে না। ওর এখনো অজানা, জঙ্গিরা ওদের কেন মারে নি? কেনই বা তারা মেঘকে বলি না দিয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছিল? ওরাই বা হুট করে কোথায় চলে গেছে? এমন নানান ভাবনা এসে রোদের মনে উঁকি দিচ্ছে। আদৌ এসব উত্তর খুঁজে পাবে কী না তাও জানে না। জীবনে ঘটে যাওয়ার অনেক ঘটনারই সঠিক উত্তর সহজে মিলে না। কিছু কিছু উত্তর না চাইলেও গোপন থেকে যায়।
রোদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে মেঘ চুপটি করে ওর পাশে দাঁড়িয় আছে। রোদ মেঘকে দেখে মুচকি হাসলে মেঘ ওর দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দিলো। অর্থাৎ কোলে নাও। রোদ ওকে কোলে নিলে মেঘ আদুরে ভাবে ওর গলা জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ কাঁধে ভেজা কিছু অনুভব হতেই রোদ অস্থির হয়ে বলল,
“মেঘ কী হয়েছে? কষ্ট হচ্ছে, কাঁদছ কেন সোনা? আমাকে বলো, এই মেঘ!”
কথাটা বলে রোদ মেঘকে বুককে সরাতে চাইলে মেঘ আরো শক্ত করে ওর গলা আঁকড়ে ধরল। ওকে হঠাৎ কাঁদতে দেখে রোদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। সে আদুরে সুরে মেঘকে থামতে বলছে, বার বার জিজ্ঞাসা করছে কী হয়েছে? কিন্তু মেঘ কিচ্ছু বলছে না। রোদ নিজেকে শান্ত রেখে বিছানায় বসে আলতো করে মেঘের পিঠে হাত বুলাচ্ছে। তখন মেঘ রোদের কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“দাভাই, আম্মু যাব। তুমি এখনই আম্মুকে আমার কাছে আসতে বলো। আমি আম্মুর জন্য কষ্ট পাচ্ছি দাভাই।”
কথাটা বলে মেঘ ফুঁপিয়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল। মেঘের কথা শুনে কষ্টের তীর এসে যেন রোদের বুকে গিয়ে বিঁধল। সে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ থম মেরে নিরুত্তর হয়ে বসে রইল। তারপর মেঘের মতো রোদও পরপর কয়েকবার মনে মনে আওড়ালো,”আম্মু! কই তুমি আম্মু!”
To be continue…..!!