এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_32

0
980

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_32
🍁🍁

রোদ মুচকি হেসে মেঘকে বুকে জড়িয়ে নেই!রোদের আম্মু আলোর রুমে যায়!আলো উঠে বসার চেষ্টা করছে কিন্তু শরীরের ব্যাথায় উঠতে পারছে না।রোদের আম্মু আলোর হাত ধরে উঠে বসায়! আর আলোর দুই হাত ধরে বলে….!!!

রোদের আম্মুঃ তুই যদি মনে করিস আমি কোনদিন আমি তোর ক্ষতি চাই না।তাহলে এখন তুই টু শব্দ করবি না।আমি এখন এই মুহূর্তে যা বলবো তুই টু শব্দ না করে সেই কাজটাই করবি (আলোর দিকে তাকিয়ে)

আলোঃহুমম!আ আম্মু তুমি শুধু বলো আমাকে ক কি করতে হবে??

রোদের আব্বুঃ আমার রোদকে বিয়ে করতে হবে!প্লিজ তুই না করিস না।

আলো কি বলবে বুঝতে পারছেনা?কারন রোদের বাবা আর মাকে এই দুটো মানুষকে আলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে!আর রোদ একটু রাগী বাট রোদকে রিজেক্টে করার মত সাহস আলোর নাই।
আর সত্যি বলতে আলোও রোদকে ভালবেসে ফেলেছে।বিয়ের কথা শুনে আলো মাথা নিচু করে আছে!নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে রোদের আব্বু আর আম্মু মুচকি হাসলো।রোদের আব্বু মুচকি হেসে আলোর মাথায় হাত রেখে দোয়া করে চলে গেলো!আলোর পুরো শরীর প্রচন্ড ব্যাথা নড়তে গেলেও মনে হচ্ছে জান বের হয়ে যাচ্ছে। আলো রোদের আম্মুকে বললো…!!

আলোঃ আম্মু আমার শরীর এত ব্যাথা কেন?আমার শরীর এত খারাপই বা করছে কেন???

রোদের আম্মুঃ রোদ আর তুই বাসায় আসার সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিলো! তুই রাস্তা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিস! আর তখন সেন্স হারিয়েছিলি তাই তোর কিছু মনে নাই..!!

আলোঃ না! র র রোদ ভাইয়ার ঠিক আছে তো..??

রোদের আম্মুঃ হুমম রোদ ঠিক আছে!(মুচকি হেসে)

আলোঃ আম্মু আমি গোসল দিতে চাই!শরীর কেমন জানি করছে আমার।গোসল দিলে মনে হয় ভালো লাগবে।

আম্মুঃ আচ্ছা চল আমি তোকে সাহায্য করছি..

আলোঃ আচ্ছা..

রোদের আম্মু আলোকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল!রোদ বিয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় যে পান্জাবী পড়ে ছিলো সেটা রোদ এখনো চেন্জ করেনি!রোদের আব্বু রোদকে বললো একেবারে গোসল সেরে নিতে!রোদের মুখটাও শুকিয়ে গেছে। রোদ ওর রুমে চলে গেল।দীদান সব কাজ তারাতারি সেরে ফেলতে বললো কারন আদিল নতুন বউ নিয়ে চলে আসবে আর একটু পর।রোদের দীদান হুজুরের বলা কথা অনুযায়ী জ্বিনের খাওয়া, মিষ্টি, কলা, লবণ, কবুতর সব একটা পুকুরে ফেলে দিলো!কারন জ্বিনে কিছু খেলে সেসব জিনিস স্বাদ গুলো শুধু খায়!লবণ যদি কেউ টেস্ট করতো লবণ তিতা লাগলো,মিষ্টির খেতে স্বাদ লাগলো না, কলাও তাই…!!

আলোকে কেউ সত্যিটা জানাতে চাচ্ছে না কারন এগুলো শুনে আলো আরো ভয় পাবে। স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারবেনা।রোদের আম্মু আলোকে গোসল করিয়ে বেডের উপর বসালো!তারপর মাথায় ওড়না দিয়ে দিলো আর সবাইকে ডাকলো!গোসলের পর আলোর শরীরটা এখন খুব ভাল লাগছে!হুজুর, দীদান,রোদের আব্বু, মেঘ,রোদের আম্মু সবাই রুমে এসে বসলো।একটু পর রোদও আসলো!আলো মাথা নিচু করে বসে আছে! তারপর হুজুর আলোর ঠিকানা,নাম জেনে নিলো রোদেরও নিলো! তারপর বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।কেন জানি আলোর খুব ভয় লাগছে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে! আলোকে ভয় পেতে দেখে রোদের খুব ইচ্ছা করছে আলোকে বলতে…!!

রোদঃ এই পাগলী ভয় পাচ্ছিস কেন?আমি আছি তে তোর পাশে!প্রতিটা মুহূর্ত তোর পাশে থাকার জন্যই তো এই পবিএ বন্ধ আবদ্ধ হতে যাচ্ছি। একদম ভয়
পাবি না!তবে জীবনে কত কতটুকু ভালো রাখতে পারবো তোকে এটা আমার জানা নেই! নিঃস্বার্থ ভাবেই তোকেই আমি এখন যেমন ভালবাসি!তেমনি সারাজীবন আমার বুকের বামপাশে শুধু তুই থাকবি।আজকে কথা দিচ্ছি আমার ভালবাসার কমতি হবে না কখনো তোর।(মনে মনে)

রোদ মনে মনে এসব ভাবছিলো!তখন রোদের আব্বু আলোর পাশে বসে আলোর মাথায় হাত রাখতেই আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো!রোদের আব্বু আলোকে অনেক কথা বলেই বোঝালো। আলোর চোখের পানিও মুছে দিলো।

হুজুর আলোকে কবুল বলতে বললো!রোদের আব্বু আলোর হাত ধরে আশ্বাস দিলো কবুল বলার জন্য! আলো কবুল বলে দিলো!রোদ আলোকে কি বলবো ওর নিজের বুকটাই দুরুদুরু করে কাঁপছে! কি থেকে কি হয়ে গেল?কয়েক ঘন্টার মাঝে ওদের জীবনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।রোদও কবুল বলে দিলো আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।তারপর দীদান সহ সবাই সাক্ষী হয়ে সাইন করলো!আলো পক্ষে সাইন করছে মেঘ আর রোদের আব্বু…..!!

তারপর সবাই রোদ আর আলোর জন্য মোনাজাতে দোয়া করে!তারপর সবাই রোদ আর আলোকে রেখে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।রোদের আম্মু সবাইকে বলে দেয় যাতে এখনকার বিয়ের কথা কেউ না জানে। তারপর বড়রা কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়।রোদ এখনো সোফাতে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে থম মেরে আছে!মেঘ ছলছল চোখে একবার আলোর দিকে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই….!!

আলোঃম ম মেঘ মেঘবাবু!আমার কাছে আসবে না সোনা।(কান্না মাখা সুরে)

আলোর বলতে দেরী কিন্তু মেঘ দৌড়ে আলোর কোলে ঝাপিয়ে পড়তে দেরী করেনা।মেঘের এভাবে ঝাপিয়ে পড়াতে আলো খুব ব্যাথা পায়! কিন্তু কিছু বলে না!আলোর গলা জড়িয়ে ধরে মেঘ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আলো বুঝতে পারছেনা মেঘ কাদছে কেন এভাবে?আলো মনে করছে তখন বিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় মেঘের সাথে যায়নি তাই মনে হয় মেঘ রাগ করছে।আলো মুচকি হেসে মেঘের চোখ মুছে দিয়ে মেঘের কপালে আদর দিয়ে দেয়! আর মেঘের গাল ধরে বলে…!!

আলোঃ আমার মেঘু সোনাকে একদম কান্না করাতে দেখতে ভালো লাগছে না।একদম কাঁদবে না।খুব পঁচা দেখাচ্ছে তোমাকে কাঁদলে…!! (চোখ মুছে দিয়ে)

আলো এই কথাটা বলে মেঘকে কাতুকুতু দিতে থাকে!আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!রোদ বসে বসে শুধু ওদের খুনশুটি দেখছে!এত কষ্ট এত ব্যাথা শরীর নিয়েও আলো দিব্যি হেসে যাচ্ছে! রোদ উঠে টাওয়াল নিয়ে আলোর কাছে যায় আলোর মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে আলোর চুল মুছে দিতে থাকে!ভেজা চুল বেডের উপর থাকাতে বেডশীট টাই ভিজে গেছে!আলোও রোদের এভাবে চুল মুছে দেওয়াতে কিছু বলে না।রোদ যত্ন করে আলোর চুল মুছে দেয়! তারপর টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে পড়ে!

মেঘ আর আলো খুনশুটি মেতে আছে!রোদ একটা ট্রেতে খাবার এনে ওদের সামনে বসে!আলো আর মেঘ কিছু বলতে নিলে রোদ হাতের আঙ্গুল উঠিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে!রোদ এক লোকমা ভাত আগে মেঘের মুখে দেয়!মেঘ মুখে ভাত নিয়ে বসে থাকে!রোদ আলোর মুখেও খাবার তুলে দেয়।আলো আর মেঘ দুজন দুজনের দিকে তাকায় তারপর খেতে শুরু করে! কারন দুজনেরই খুব খুধা লাগছিলো।রোদ মেঘ আর আলোকে খাওয়ানো শেষ করে আলোর হাতে একটা ব্যাথার মেডিসিন দেয়।কারন ওর শরীর অনেক ব্যাথা হবে! আর রাতে সেই ব্যাথার চোটে শরীরে কাপুনি দিয়ে জ্বরও আসতে পারে।

রোদ আলোকে মেডিসিন খাইয়ে সবকিছু নিয়ে চলে গেল!আলো ভেজা চুল তাই এক সাইড করে ছেড়ে রাখলো!আর অনেক লম্বা চুল তাই মেঝেতে গিয়ে আলোর চুল গড়াগড়ি খাচ্ছে! আলোর দেখে মেঘও শুয়ে পড়লো আর দুইজন গল্পে মেতে উঠলো!বেশ কিছুক্ষন গল্প করতে করতে দুইজনেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো!রোদ এসে দেখে দুইজন ঘুমাচ্ছে তাই আর ডাকলো না।রোদ আলোর রুমে জানালা আটকে পর্দা সরিয়ে দিলো!তারপর বাইরে থেকে তালা আটকে দিলো কারন আদিলরা এখনই বউ নিয়ে চলে আসবে। বাইরে চেচাঁমেচি শব্দ যাতে রুমে না আসে আর ওদের ঘুমটা যাতে নষ্ট না হয়! তাই রোদ এমনটা করলো!

রোদ নিচে নেমে বাগানের এক কোণে চেয়ার নিয়ে বসলো!ওর কিছু ভালো লাগছে না। এখানে কেমন জানি দমবন্ধ করা পরিবেশ। রোদ আলোকে নিয়ে যত তারাতারি সম্ভব এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচে! চিৎকার চেচাঁমেচিতে রোদ পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো আদিল ওর বউকে নিয়ে এসেছে!নতুন বউকে গাড়ি থেকে নামানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে!রোদের সবকিছু অসহ্য লাগছে! বার বার আলোর সেই আতনার্দ রোদের মনে পড়ছে!চোখ বন্ধ করলে আলোর কান্না মাখা মুখে রোদের চোখের সামনে ভাসছে!হঠাৎ রোদ ওর কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায়।রোদ ওর আম্মুকে দেখে সৌজন্য মূলক ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে আনে….!!

রোদ ওর চেয়ার থেকে উঠে ওর আম্মু জোর করে বসিয়ে দেয় আর রোদ ঘাসের উপর বসে ওর আম্মুর কোলে মাথা রাখে!সবাই কত আনন্দ করছে মজা করছে বাট শুধু কয়েকজনে মুখে হাসি নেই!রোদের আম্মু রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রোদের কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে! ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই!তাই রোদও কাঁদতে পারছেনা। রোদের আম্মু রোদকে উদ্দেশ্য করে বলে…!!

রোদের আম্মুঃ আব্বু তোর কি খুব মন খারাপ?? আর আমাকে বলা যায় না। (চুল টেনে)

রোদঃ আম্মু আমি শান্তি পাচ্ছি না!কেমন জানি হচ্ছে বুকের ভেতর! খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। নিঃশ্বাস নিতে গেলেও মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। বার বার আলো কান্নামাখা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে!এমন কেন হচ্ছে আমার আম্মু! আলোর তখনকার করা আতনার্দে আমার মনে হচ্ছিলো কেউ কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।আম্মু বলো না আমি শান্তি কেন পাচ্ছি না!আমার এমন হচ্ছে কেন??(চোখের পানি আড়াল করে)

রোদের আম্মুঃআলোকে গ্রাম থেকে এখানে আনার কাজটা তাহলে স্বার্থক হলো। এত ভালবাসিস মুখে স্বীকার করিস না কেন আব্বু? (মুচকি হেসে)

রোদঃ ভালবাসি কথা যদি মুখ ফুটেই বলতে হয় তাহলে এটা কেমন ভালবাসা আম্মু!মুখে হাজার বার ভালবাসি বললেই কি ভালবাসা হয়?তোমার মেয়ে কেন বুঝে না? আমি ওকে পাগলের মত ভালবাসি!তোমার অবুজ মেয়ে কেন বুঝে না?ওকে ভালবাসি বলেই এত শাসন করি।তোমার মেয়ে শুধু আমার রাগটাই বোঝে! আমার ভালবাসাটা বুঝেও না!আমি
সবার মত মুখে এত ভালবাসি ভালবাসি বলতে পারবো না আম্মু।আর আমাকেই বা কেন মুখে ভালবাসার কথা বলতে হবে?ও বুঝে নিতে পারে না কেন শুনি?ও কি জানেনা ভালবাসার কথা মুখে বললেই ভালবাসা হয় না!তোমার মেয়েটা বড্ড বেশিই পঁচা আম্মু! খুব খুব পঁচা তোমার এই দুষ্টু মেয়েটা।আমাকে বার বার শুধু কষ্ট দেয়…!!
আমার ভালবাসাটাও বোঝে না তোমার ফজিল মেয়েটা!
(ওর আম্মু কোলে মাথা দিয়ে অভিমানের সুরে!ধরা গলায়….)

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here